কর্মসংস্থান তৈরিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

কর্মসংস্থান তৈরিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

| আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ১৪:৩১ | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২০, ১৪:২১

করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্পে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঋণের ফলে এক লাখ নারীসহ কমপক্ষে আড়াই লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে আর বেসরকারি বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরসি টেমবোন বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীটি দারিদ্র্য নিরসন ও জনমিতির সুবিধার সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য অর্জনকে গভীরভাবে বিপদে ফেলেছে। এই প্রকল্পগুলি ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি বাড়ানোর সাথে সাথে আরও বেশি উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে জনগণ ও অর্থনীতিকে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।

৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ থেকে মূলধন নিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ (পিআরইডি) প্রকল্পর আওতায় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগ হবে। যেটা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়ার পার্কে হবে। যা প্রায় ১.৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। যার মধ্যে সফটওয়্যার পার্কে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ শতাংশ চাকরি নারীদের জন্য।

এ ছাড়া অর্থনীতি ও ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা বিষয়ক প্রকল্পে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যার ফলে সরকারী খাতের আইটি বিনিয়োগে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ লাখ তরুণকে আইটির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি নারীদের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করবে, ডিজিটাল এবং বিপর্যয়কর প্রযুক্তিতে এক লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেবে, এবং একটি ডিজিটাল নেতৃত্বের একাডেমী এবং শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র স্থাপন করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় আইটি সংস্থাগুলিকে প্রচার করতে সহায়তা করবে। মহামারী থেকে দুর্বলতাগুলি হ্রাস করতে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে, প্রকল্পটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং কৌশলগত শিল্পকে ডিজিটালাইজ করতে সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংক আজ এই দুটি প্রকল্প ঋণ ছাড়াও বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থায়নটি বাংলাদেশ, নারী, যুবক এবং অভিবাসী শ্রমিকসহ নাগরিকদের জন্য বৃহত্তর কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করবে বলে জানান বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে!

সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ পঙ্গু হন স্ট্রোকের কারণে। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্ট্রোক। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪ জনে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়লে স্ট্রোক রোগে আক্রান্তের হার ও মৃত্যু কমে আসবে।  

আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের আতা এলাহী খান মিলনায়তনে আয়োজিত বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের এক কর্মশালায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।সেখানে বক্তারা আরও বলেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসাসেবা। এজন্য হাসপাতালগুলোতে স্ট্রোক ইউনিট চালুর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় হাসপাতালেও স্ট্রোকের আলাদা কোনো ইউনিট নেই। যার ফলে রোগীরা সময়মত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ সময়মতো সেবা পেলে পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাঁচতেন সাধারণ মানুষ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে মায়ের মত। এখানে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না।  তবে এ হাসপাতালে স্ট্রোক ইউনিট নেই এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি।  ‍

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ক্যাথল্যাব চালু হয়েছে। এখান থেকে সাধারণ মানুষ বিশ্বমানের সেবা পাবেন।

কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালুর ফলে এনজিওগ্রাম পরীক্ষার পর রোগীদের নামমাত্র ফি নিয়ে রিং পরানো, পেস-মেকার স্থাপন, হার্টের ভাল্ব রিপেয়ারিংসহ প্রয়োজনে বাইপাস সার্জারি করা যাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ সেবা পাওয়ার ফলে রোগীদের ভোগান্তি ও খরচ অনেক কমে যাবে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনের প্রশংসা করে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, এই হাসপাতালের প্রভূত উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।  ব্রিগেডিয়ার নাসির একজন রোগীবান্ধব চিকিৎসক। অন্য পরিচালকদের যেসব বিষয়ে গুরুত্ব বুঝিয়েও আদায় করা যেত না, সেখানে তিনি এই হাসপাতালে ক্যাথল্যাব চালু করেছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষ সহজেই স্ট্রোকের সেবা পাবেন। তিনি আরও কিছুদিন থাকলে আমাদের এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার অনেক উপকার হতো।  তিনি বিদায় নিতে যাচ্ছেন। নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক এসেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি তিনিও এ হাসপাতালের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, আমি এ হাসপাতালে আরও কিছুদিন আছি। এখানকার কর্মরত চিকিৎসকদের খুব মিস করব। সাধারণ মানুষের সেবায় এ হাসপাতাল বিশেষ অবদান রেখেছে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসীত চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, ঢামেক হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, ঢামেক হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া ও আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফফর হোসাইন। অনুষ্ঠানে স্ট্রোক নিয়ে একটি বুকলেটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

paper.doc-18-8-20

https://chrome.google.com/webstore/detail/grammarly-for-chrome/kbfnbcaeplbcioakkpcpgfkobkghlhen?hl=en

@dyd.gov.bd

Satkhira

“YDOassasuni” 636 “YDOdebhata” debhata@dyd.gov.bd 637 “YDOkalaroa” kalaroa@dyd.gov.bd 638 “YDOkaliganjsat” kaliganjsat@dyd.gov.bd 639 “YDOsatkhirasadar” satkhirasadar@dyd.gov.bd 640 “YDOshyamnagar” shyamnagar@dyd.gov.bd 641 “YDOtala” tala@dyd.gov.bd

পাশা খেলা থেকে ক্যাসিনো

জুয়া খেলার উৎস বা শুরুটা অজানা। নির্দিষ্ট করে বলার উপায় নেই কখন আর কিভাবে এর উদ্ভব। আনুমানিক কয়েক হাজার বছর আগে প্রচলন। ইতিহাসের প্রায় সব সমাজে কোনো-না-কোনো রূপে জুয়ার প্রচলন ছিল। প্রাচীন গ্রিক-রোমান থেকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স এবং বর্তমান বাংলাদেশ সবখানেই জুয়ার প্রচলন দেখা যায়। উপমহাদেশে ‘পাশা’ খেলা হচ্ছে জুয়ার একটি আদিরূপ। আধুনিককালে অনিয়ন্ত্রিত জুয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাসিনোর উৎপত্তি। এখন দেশে দেশে জুয়ার আসরে চলে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা। ওড়ানো হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। তাই বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারো ক্যাসিনো; যেখানে জুয়ার নেশায় মেতে থাকে জুয়াড়িরা। পাশা খেলায় হেরে এমনকি, বউ খোয়ানোর ঘটনা মহাভারতে উল্লেখ আছে। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, পঞ্চপাণ্ডবের একজন, যুধিষ্ঠির কুটিল শকুনীর সাথে পাশা খেলায় হেরে স্ত্রী দ্রৌপদীসহ রাজ্যপাট হারিয়েছিলেন। জুয়ায় হেরে বউ খোয়ানোর ঘটনা কম ঘটেনি। খবরের কাগজে এমন সংবাদ বহু প্রকাশিত হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত কোনো নারী জুয়ায় বাজি ধরে স্বামী খুইয়েছে কি না তা জানা নেই। এমন ঘটনা ঘটলে জুয়ার বেলায় এক ধরনের সমতা বিধান হতো।

প্রাচীন আরবেও জুয়ার প্রচলন ছিল। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি ফররুখ আহমদের কাব্যনাটক ‘নৌফেল ও হাতেম’-এ এ বিষয়ে উল্লেখ পাওয়ায় যায়। ওই কাব্য নাটকের প্রথম অঙ্কে রাজা নৌফেলের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত, রাজ্যে প্রাচীন মেলায় আসা গুপ্তচর ও কয়েকজন দর্শকের জবানিতে সর্বনাশা জুয়ার উল্লেখ আছে। তাতে বলা হয়েছে- ‘জাহান্নামে যাক জুয়া খেলা। সর্বস্বান্ত গরীবেরা/ মারা পড়ে প্রতিদিন আজাজিল জুয়াড়ির চালে/ আসে তবু মৃত্যু আকর্ষণে?’

মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত, জুয়া খেলতে খেলতে অনেকেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে তাদের জীবন সমস্যাপূর্ণ হয়ে ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ ছেড়ে জুয়ায় ডুবে থাকে। টাকা-পয়সা খোয়ানো কিংবা বিপত্তি সত্ত্বেও জুয়া ছাড়তে পারে না অনেকে। ড্রাগের আসক্তির মতো এটি। মানসিক অব্যবস্থার বিভিন্ন ভাগ বা পর্যায়, যেমন ডিএসএম-৫ (ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার) এবং আইসিডি-১০ (ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজ) অনুযায়ী, জুয়া খেলার তাড়নাকে একপ্রকার আসক্তি বলে বিবেচনা করা হয়। ২-৩ শতাংশ মানুষ শুরুতে আনন্দের জন্য জুয়া খেলে। ক্রমে তা অনারোগ্য মানসিক রোগে পরিণত হয়।

২০১৪ সালে এক গবেষণা থেকে জানা যায়, জুয়ার নেশা যখন জুয়াড়ির ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরানন্দের কারণ হয়ে ওঠে তখন তা গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়। জুয়া ঘিরে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সৃষ্ট সমস্যা একজন জুয়াড়ির জীবনে ২৫ বছর বয়সের আগেই শুরু হয়। বিশেষ ধরনের বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়ের জীবনে জুয়া খেলা ঘিরে নানা সমস্যার জন্ম হয়।

বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন জুয়া খেলার বয়স ১৬-২১ বছরের মধ্যে। খরিদ্দারেরা ক্যাসিনো গেমস দিয়ে জুয়া খেলে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতারও প্রয়োজন হয়। বেশির ভাগ গেমস গাণিতিকভাবে এমনভাবে বিন্যাস করা থাকে, যাতে জুয়াড়িদের চেয়ে বাড়িগুলো বেশি সুবিধা পায়। এ সুবিধাকে ‘হাউজ এজ’ বলা হয়। পোকারের মতো খেলাগুলো যেখানে একজন খেলোয়াড় অপর খেলোয়াড়ের সাথে খেলে; সেখানে বাড়িগুলো ‘রেক’ নামে কমিশন নেয়। স্লট মেশিন বা ভিডিও লটারি মেশিন ক্যাসিনোর অন্যতম জনপ্রিয় জুয়া। আধুনিক স্লট মেশিন বাহ্যিকভাবে খুবই আকর্ষণীয়।

জুয়াখেলারআধুনিকরূপহচ্ছেক্যাসিনো।এটিবিভিন্নধরনেরজুয়াখেলারএকটিনির্দিষ্টস্থান; যাকেবাংলায়জুয়ারআড্ডাবাআসরবলাযেতেপারে।সেটিহয়বৃহৎপরিসরে।সাধারণতক্যাসিনোএমনভাবেবানানোহয়, এরসাথেকিংবাপাশাপাশিহোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, আনন্দভ্রমণেরজাহাজএবংঅন্যান্যপর্যটনআকর্ষণথাকে।কিছুক্যাসিনোতেবিনোদনেরব্যবস্থাআছে, যেমনস্ট্যান্ডআপকমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলাইত্যাদি।এরপরিবেশএমনভাবেসাজানোথাকে, যেকেউএকবারগেলেশুধুটাকাওড়াতেমনচাইবে।দুনিয়ারসুপরিচিতসবক্যাসিনোতেমদেরফোয়ারানামে, চলেনগ্ননৃত্যও।ধনীথেকেফকিরহওয়ারসহজউপায়নিয়মিতক্যাসিনোতেযাওয়া।বর্তমানযুগেআমেরিকারলাসভেগাসবামরক্কোরক্যাসাব্লাঙ্কানগরীরসাথেক্যাসিনোকথাটিলেপটেআছে।

ক্যাসিনোইতালিভাষারশব্দ।মূলশব্দক্যাসা, মানেঅর্থঘর।সর্বপ্রথমক্যাসিনোরপ্রচলনইতালিরভেনিসে১৬৩৮সালে।১৭৭৪সালেএটিবন্ধকরেদেয়াহয়েছিল।জার্মানস্প্যানিশভাষায়ক্যাসিনোবাকাসিনোদিয়েঅফিসারমেসবোঝানোহয়।শব্দটিদিয়েছোটভিলা, গ্রীষ্মকালীনঘরকিংবাসামাজিকক্লাবওবোঝানোহয়েথাকে।

উনিশশতকেরদিকেক্যাসিনোবলতেএমনসবভবনকেবোঝানোহতো; যেখানেআনন্দদায়কসবকাজকর্মহতো; যেমননগরেরসামাজিকঅনুষ্ঠানযেখানেনাচ, গান, জুয়াইত্যাদিরব্যবস্থাথাকত।আধুনিকসময়েইতালিতেএকাধিকঅর্থেক্যাসিনোব্যবহারকরাহয়।যেমনপতিতালয় (ক্যাসাচুইসাওবলে, যারঅর্থবন্ধবাড়ি) শব্দপূর্ণপরিবেশ।তারাজুয়ারআসরবোঝাতেভিন্নউচ্চারণেক্যাসিনোবলে।সবক্যাসিনোইজুয়াখেলারকাজেব্যবহারকরাহতোনা।ক্যালিফোর্নিয়ারসান্তাকাতালিনাদ্বীপেরকাতালিনাক্যাসিনোতেকখনোজুয়াখেলাহয়নি।কারণ, যখনএটিনির্মাণকরাহয়, সেসময়ক্যালিফোর্নিয়ায়জুয়াখেলানিষিদ্ধঘোষণাকরাহয়েছিল।ডেনমার্কেরকোপেনহেগেনক্যাসিনোথিয়েটারহিসেবেব্যবহৃতহয়।১৮৪৮সালেরআন্দোলনেরসময়এখনকারগণজমায়েতেরকারণেএটিপরিচিত।এইআন্দোলনডেনমার্ককেএকটিসাংবিধানিকরাজতন্ত্রেপরিণতকরেছে।১৯৩৭সালপর্যন্তএটিডেনিশথিয়েটারনামেসুপরিচিতছিল।ফিনল্যান্ডেরহাংকোক্যাসিনোতেওকখনোজুয়াখেলাহয়না।১৯শতকেরশেষেরদিকেএটিস্পারিসোর্টহিসেবেব্যবহৃতহতো।বর্তমানেএটিরেস্তোরাঁহিসেবেব্যবহৃতহচ্ছে।

আমেরিকায়স্যালুননামেপ্রথমজুয়াবাড়িনির্মিতহয়।চারপ্রধানশহরনিউঅরলিয়েন্স, সেন্টলুইস, শিকাগোএবংসানফ্রান্সিসকোয়এগুলোগড়েতোলাহয়।এসবস্যালুনেআগতব্যক্তিরাপানকরত, আড্ডাদিতএবংপ্রায়ইজুয়াখেলত।১৯৩১সালেসেদেশেরনেভাদায়জুয়াখেলারবৈধতাদেয়াহয়।সেখানেপ্রথমআইনসিদ্ধআমেরিকানক্যাসিনোনির্মিতহয়।১৯৭৬সালেনিউজার্সিআটলান্টিকশহরেজুয়াখেলাঅনুমোদনকরাহয়।এটিবর্তমানেআমেরিকারদ্বিতীয়বৃহৎজুয়াবাড়িশহরআরআধুনিকক্যাসিনোরকথাউঠলেশুরুতেইআসবেলাসভেগাসেরকথা।দুনিয়াজোড়াএরপরিচিতি।

ইদানীংএশিয়ারঅনেকদেশেজুয়াখেলাছড়িয়েপড়েছে।নেপাল, ভারত, চীন, সিঙ্গাপুরমালয়েশিয়াজুয়ারদিকদিয়েএগিয়ে।সববয়সীমানুষেরদেখামিলেএসবক্যাসিনোতে।কোটিকোটিটাকাওড়াতেআরমনোরঞ্জনেক্যাসিনোতেআসেলোকজন।এশিয়ায়সবচেয়েবড়জুয়ারআসরকাঠমান্ডুতেএবংনেপালিক্যাসিনোরবিশ্বজোড়াপরিচিতি।এসবআসরেবেশিজুয়ায়মেতেওঠেপর্যটকেরা।অনেকেএকরাতেইরাজ্যেররাজাবনেযায়, অনেকেহয়ফকির।২৪ঘণ্টাইচলেজুয়ারআসর।জুয়াড়িরামদেরনেশায়বুঁদহয়েথাকে।বিশ্বেযতক্যাসিনোরয়েছে, দ্যভ্যালেন্তিয়ানএরঅন্যতম।চীনেরএইক্যাসিনোজুয়াড়িদেরএকটিপ্রধানআকর্ষণ।প্রতিরাতেচলেসবরোমাঞ্চকরআয়োজন।এটিপাঁচতারকামানেরহোটেল।সমগ্রপৃথিবীথেকেধনকুবেররাভিড়জমায়ক্যাসিনোতে।একডলারথেকেএকহাজারডলারপর্যন্তবাজিধরাযায়এখানে।কেউপাঁচলাখডলারপর্যন্তপ্লেআউটকরেথাকে।

একটিমুসলিমপ্রধানদেশহওয়াসত্ত্বেওজুয়াবাংলাদেশেঅতিপরিচিতশব্দ।যেখানেসেখানে, অলিগলিতেতাকালেএরদেখামেলে।কয়েকদশকআগেওএটিএতখোলামেলাছিলনা।তবেদেশেজুয়ারআসরবসলেওক্যাসিনোরকথাশোনাযায়নি।বাংলাদেশেরমানুষগণমাধ্যমেরসুবাদেক্যাসিনোশব্দেরসাথেবছরতিনেকআগেপরিচিতহয়েছে।দেশেরকেন্দ্রীয়ব্যাংকেররিজার্ভথেকে৮১০কোটিটাকাচুরিরঘটনাআমাদেরমনেআছে।খোয়াযাওয়াওইটাকাফিলিপাইনেরক্যাসিনোতেওঠারব্যাপারেদেশীবিদেশীগণমাধ্যমেখবরবেরোয়।রাখালবালকখ্যাতসেসময়েকেন্দ্রীয়ব্যাংকেরগভর্নরদেশেরটাকারক্ষায়যথাযথরাখালীকরতেব্যর্থহয়েছিলেন।ঢাকাহচ্ছেমসজিদেরনগরীসেইনগরসহদেশেরবিভিন্নস্থানেএবারযাবৎমিলেছে৬০টিরমতোক্যাসিনোরসন্ধান।কিন্তুঢাকারখানদানিঐতিহ্যেরসাথেক্যাসিনোবড়ইবেমানান।তবুমানতেইহচ্ছে, মসজিদেরএইনগরীতেক্যাসিনোরঅস্তিত্বঅবাঞ্চিতবাস্তবতা।এগুলোরপরিচালনারদায়িত্বেছিলেনবর্তমানশাসকদলেরঅনেকমহান(!) নেতা।তাদেরতত্ত্বাবধানেএগুলোচলত।আইনশৃঙ্খলাবাহিনীরচলমানঅভিযানেরকারণেএরমধ্যেকারোকারোনামসাধারণেরকানেএসেপৌঁছেছে।তবেঅভিযানকারীদেরটকঝালমিষ্টিকথাহজমকরতেহয়েছে।জীবনানন্দেরকবিতাবনলতাসেন’-এরভাষায়বলাহয়নি– ‘এতদিনকোথায়ছিলেন?’ বলাহলো, ‘এতদিনকিআঙুলচুষেছে?’ উল্লেখ্য, জুয়াদেশেরপ্রচলিতআইনেদণ্ডনীয়অপরাধ।

জুয়ারআসরআরক্যাসিনোরগ্যাম্বলিংয়েরমধ্যেতফাতআছে।জুয়ারআসরজমাতেসেরকমজাঁকালোকোনোজায়গালাগেনা।গ্রামেসড়কেরপাশে, বড়গাছেরনিচেগামছাপেতেতাসেরমাধ্যমেজুয়াখেলারদৃশ্যঅপরিচিতনয়।প্রচলিতজুয়ারআসররাস্তারধারথেকেঅভিজাতমহলেওবসে।অপরদিকে, ক্যাসিনোহলোউচ্চশ্রেণীরআখড়া।সেখানেযন্ত্রেরমাধ্যমেলাখটাকারবাজিধরাহয়।ঢাকারকয়েকটিক্লাবসহনির্দিষ্টস্থানেজুয়ারআসরবসে, এটিজানাছিলদেশবাসীর।কিন্তুক্যাসিনোনামটিকখনোশোনাযায়নি।সংবাদমাধ্যমেরখবর, পুলিশপাহারায়চলতএসবজুয়ারআসর।রাজধানীরঅনেকক্লাবেরপ্রচলিতজুয়ারআসরকেআধুনিকযন্ত্রপাতিউপকরণেসজ্জিতকরেক্যাসিনোতেরূপান্তরিতকরেছেপ্রধানতএকদলনেপালি।

মদজুয়াসম্পর্কেপবিত্রকুরআনেরনির্দেশহচ্ছে– ‘লোকেরাতোমাকেজিজ্ঞেসকরেমদজুয়াসম্পর্কে।বলো, দুয়েরমধ্যেবড়ধরনেরপাপরয়েছে।কিছুউপকারওরয়েছে।তবেউপকারেরচেয়েগুনাহবেশি( সূরাবাকারা : ২১৯আয়াত)সূরামায়েদার৯০নংআয়াতেবলাহয়েছে– ‘হেবিশ্বাসীরা, মদ, জুয়া, পূজারবেদিভাগ্যনির্ধারণকারীশরহচ্ছেশয়তানেরকাজ; সুতরাংতাতোমরাবর্জনকরো।আশাকরাযায়, এতেতোমরাসফলহতেপারবে।আলকুরআনেকঠোরভাবেবলাহয়েছে, ‘মদজুয়ারমাধ্যমেশয়তানতোমাদেরমধ্যেশত্রুতাবৈরিতাসৃষ্টিকরতেচায়।আরবাধাদিতেচায়আল্লাহরস্মরণসালাতথেকে।তবেকিতোমরাএখনোফিরেআসবেনা?’ ( সূরামায়েদা : আয়াত৯১)সমাজকেমদজুয়ারপঙ্কিলতামুক্তকরতেআল্লাহতায়ালাধীরেধীরেএকটিজাহেলিসমাজথেকেকিভাবেতাদূরহবেসেজন্যপবিত্রকুরআনেনির্দেশনাদিয়েছেন।অথচআমরামুসলিমপ্রধানদেশহয়েওতাবেমালুমভুলেগেছি।ফলেবর্তমানেসমাজেযেনৈতিকতারধসনেমেছে; তাআমাদেরনিজেদেরকাজেরকুফলছাড়াআরকিছুইনয়।জুয়ায়হারজিতযাঘটুকনাকেন, পরিণতিসর্বনেশে।জুয়াখেলেটাকাপয়সা,ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদহারিয়েছেন, এমননজিরভূরিভূরি।মাদকেরমতোজুয়াওযদিসারাদেশেবিষবৃক্ষেরডালপালামেলে, তবেকিআররক্ষাআছে? এরবিধ্বংসীক্ষমতাসর্বপ্লাবীসর্বগ্রাসী।

camirhamza@yahoo.com


বিশ্ববিদ্যালয়, ভিসি ঐতিহ্যসমাচার

বেলা বাড়ছে, তবু বাসায় বসে আছি। স্ত্রীকে বললাম: আমি কিন্তু ছুটিতে।

সে বিস্মিত কণ্ঠে বলে: কিসের ছুটি?
শ্রান্তি বিনোদন!
মানে? 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকেরা কাজ করে করে ক্লান্ত হয়ে যান। সে জন্যই এ ছুটি! সে হেসে ফেলে। বলে: তোমরা তো সারা বছরই শ্রান্তি বিনোদন করো! এ জন্য আবার ছুটি? 

আমি ছোট মুখ করে বসে থাকি। তার কথা পুরোপুরি ভুল নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আমি পড়াই একটি মাত্র সাবজেক্ট বা বিষয়। রুটিনে আছে ক্লাস সপ্তাহে দুদিন, এক ঘণ্টা করে ক্লাস। এ ছাড়া বিভিন্ন মিটিং থাকে, পরীক্ষা কমিটির কাজ থাকে, পরীক্ষা হলে পরিদর্শনে যাই, সারা বছর পরীক্ষার খাতা দেখি। কিন্তু এক সাবজেক্টের শিক্ষক বলে বোঝা যায় না ফুল টাইম চাকরি এটা। তবে এ ছাড়া উপায়ও নেই। আমাদের বিভাগে এত বেশি শিক্ষক এখন যে পড়ানোর জন্য একটার বেশি সাবজেক্ট পাওয়ার সুযোগ নেই তেমন। এমনও হয়েছে কোনো কোনো নতুন শিক্ষক কয়েক মাস পড়ানোর সুযোগই পাননি সাবজেক্টের অভাবে। 

আমার বিভাগের মতো একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগে। এখানে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে যতটা প্রয়োজন থেকে, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে দল ভারী করতে। দল ভারী করা হয় সরকারের প্রতি অনুগত শিক্ষক দল (বিএনপির সময় সাদা, আওয়ামী লীগের সময় নীল) যাতে বিভিন্ন নির্বাচনে জিতে মূলত সেটা নিশ্চিত করার জন্য। এই বিজয়টা খুব প্রয়োজন সরকারের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের অনুগত দল শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে জিতলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার বা সরকারপন্থী কোনো সংগঠন অন্যায় করলে প্রতিবাদ করে না, এমনকি প্রতিবাদী কোনো শিক্ষক সরকারি ছাত্রসংগঠনের হাতে অপদস্থ হলেও কিছু বলে না। সিন্ডিকেট সদস্য বা ডিন হিসেবে জিতলে বরং এসব অন্যায়ে সহায়তা বা সমর্থন প্রদান করে কখনো কখনো। 

অনুগত দল নির্বাচনে জিতলে নির্বিঘ্নে সমমনাদের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে প্রভোস্ট বা আবাসিক শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে পারে। এরা ছাত্রাবাসে সরকারি ছাত্রসংগঠন অরাজকতা কায়েম করলে কিছু বলে না, বিভিন্ন নির্মাণ, মেরামত ও নিয়োগ কাজে চাঁদাবাজি করলে প্রতিবাদ করে না, ভিন্নমত পোষণকারীরা হেনস্তা হলে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। 

ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। তবে সাধারণ চিত্র সব আমলে কমবেশি এটাই। 


নির্বাচনে জেতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেওয়ার প্রবণতা শুরু হয় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর। এরপর ক্রমে ক্রমে তা বেড়ে বর্তমানে ভয়াবহ আকার গ্রহণ করেছে। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এদের একটা সিংহভাগ যে সরকারি দলের প্রতি অনুগত তার প্রমাণ হচ্ছে শিক্ষকদের নির্বাচনে সরকারি দলের প্রায় রাতারাতি সাফল্য। আগের বিএনপি আমলে সাদা দল শিক্ষকদের বিভিন্ন নির্বাচনে বেশি জিতত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার বছরখানেক পর থেকে জিততে থাকে নীল দল, ক্রমেই তা হতে থাকে আরও একচেটিয়া। 

তবে এর মানে এটা নয় যে কোনো শিক্ষকেরই বিবেক বা নিজস্ব বিবেচনাবোধ নেই। কিন্তু নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে সরকারপন্থীদের (কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এমন হন) সংখ্যা এত বেশি থাকে যে নির্বাচনে বিজয়ী হয় বিবেক বা অন্য কিছু না, বিজয়ী হয় সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত উপাচার্য নিয়োগ হন এই অনুগতদের মধ্য থেকে। বিভিন্ন নির্বাচনে কয়েক দফা জিতে এসে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শনে পারদর্শীরা নিয়োগ পান এ পদে। আগে একটা সময় ছিল, যখন এ নিয়োগের সময় উপাচার্যের একাডেমিক এক্সেলেন্স ও ব্যক্তিগত ইমেজ কিছুটা হলেও গুরুত্ব পেত। যে কারণে আওয়ামী লীগ আমলে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী ও বিএনপি আমলে এস এম এ ফায়েজের মতো উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

সাম্প্রতিক কালে উপাচার্য হিসেবে এ ধরনের ব্যক্তিদের নিয়োগের পেছনে দুটো বিষয় মুখ্য ভূমিকা রেখেছে সম্ভবত। এক. প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিরোধী রাজনীতির (ছাত্র আন্দোলনভিত্তিক) প্রতি সরকারের ভীতি বেড়েছে। এ কারণে সেখানে ছাত্রসংগঠন নামধারী একটি পেটোয়া বাহিনী রাখার গুরুত্ব বেড়েছে। এ ধরনের পেটোয়া বাহিনীকে সমর্থন বা প্রশ্রয় দিতে পারে কেবল সরকারের অন্ধ অনুগত একজন উপাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ববিদালয় প্রশাসন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তাই দেখেছি। 

বিগত ১০ বছরে বহু নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে উপাচার্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ ও কম যোগ্য বিভিন্ন শিক্ষকও। দলীয় এসব উপাচার্য কৃতার্থ হয়ে আরও বেশি সরকার অনুগত থেকেছেন, মূল দায়িত্ব পালনে বেপরোয়া শৈথিল্য দেখিয়েছেন। ঢাকায় অবস্থান করে অন্য জেলার ভিসির দায়িত্ব পালন বা কথায় কথায় শিক্ষার্থী বহিষ্কার করার মতো উপাচার্য তাই আমরা সাম্প্রতিক কালেই শুধু দেখতে পাই। এঁদের মধ্যে আবার অঞ্চলভিত্তিক দায়মুক্তি পাওয়ার বিশ্বাস বা অহংকারটা যাঁদের বেশি, তাঁরা কতটা বেপরোয়া ধরনের হতে পারেন, তা আমরা গোপালগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখছি এখন। 

উপাচার্যদের মূল সমস্যা জবাবদিহির। তিনি নিয়োগ পান প্রধানত সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্যর ভিত্তিতে। এই আনুগত্যোর প্রতি তাঁর জবাবদিহি থাকলেই চলে। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভিন্নমতাবলম্বী কোনো প্রবণতা রুখে দেওয়া ও সরকারের অন্ধ গুণগান করে এসব আনুগত্যের প্রমাণ দেওয়া হয়। প্রথম কাজটা কঠিন। এই কঠিন কাজটা করার জন্য তিনি সমমনাদের নিয়ে শিক্ষক প্রশাসন সাজান, মারমুখী অনুগতদের অবাধ প্রশ্রয় প্রদান করেন। বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান, শিক্ষার মান, গবেষণা কার্যক্রম প্রসারে এমনকি দুর্নীতি-নিপীড়ন প্রতিরোধে তিনি নিন্দনীয় ভূমিকা গ্রহণ করলেও তাঁকে কারও কাছে জবাব দিতে হয় না। ফলে কিছু কিছু উপাচার্য হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারী। 


কেন একজন উপাচার্য এসব করেন বা তাঁকে এসব করতে হয়? কারণ, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কী, তাই আমরা ভুলতে বসেছি। বিশ্ববিদ্যলয়ের আসল কাজ শুধু জ্ঞানদান করা নয়, জ্ঞান তৈরি করা (গবেষণা) এবং তা কাজে লাগানোও (গবেষণার প্রায়োগিক ব্যবহার)। 

আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ মূলত প্রথমটি। সেটিও কতটা গৌণভাবে তা প্রথমে উদাহরণ দিয়ে বলেছি। এখানে গবেষণার নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয়, তা নিম্নমানের এবং প্রধানত পদোন্নতির অভিলাষে রচিত। ১৫-২০ বছর আগেও একটা মানসম্মত পিএইচডি আর বিদেশি জার্নালে কিছু লেখাসহ ১৫-২০টি গবেষণা ছাড়া অধ্যাপক হওয়ার কথা ভাবা যেত না। এখন অবস্থা বদলেছে। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বহু বিভাগে অধ্যাপকের সংখ্যা এখন বাকিদের চেয়ে বেশি! 

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন। সরকারের জনসভায় লোক হাজির করা, রাজপথ কাঁপিয়ে সরকারের গুণগান করা এবং সরকারের অপকর্মের কোনো প্রতিবাদ হলে তা কঠোরভাবে দমন করা। অথচ যেকোনো সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার একটি অনন্য ঐতিহ্য ছিল বাংলাদেশের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। এখনো বাম সংগঠনগুলো, সাধারণ ছাত্ররা বা কিছু শিক্ষক তা করে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যস্ত থাকেন তাঁদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে। অনেকে আবার নীরব থাকেন ভোগান্তির ভয়ে।

অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন পরিণত করা হয়েছে সবচেয়ে প্রো-এস্টাবলিমেন্ট প্রতিষ্ঠানে। এটি করা হয়েছে শিক্ষকদের বিভিন্ন পদে বসিয়ে, বিভিন্ন অন্যায়ে দায়মুক্তি দিয়ে, ছাত্রদের অন্যায় ক্ষমতা আর অবৈধ বিত্ত অর্জনের সুযোগ দিয়ে। 

এই প্রক্রিয়ার সিইও হচ্ছেন আজকের উপাচার্যরা! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচাতে হলে এই সিইওদের পাশাপাশি যাঁরা এদের নিয়োগ দেন, তাঁদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। 

আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক

সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছেন গ্রেটা থুনবার্গ

২০১৮ সাল। সুইডেনের পার্লামেন্টে গিয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে এলো মেয়েটা। পরিবেশ বাঁচাতে রাষ্ট্রের কড়া পদক্ষেপ দাবি করল গ্রেটা আর তার সঙ্গীরা। স্কুল পালিয়েই দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তুলল প্রতিবাদ

খবরের কাগজে, শিরোনামে, টিভিতে বারবার দেখা যাচ্ছে একটাই নাম– গ্রেটা থুনবার্গ। কেন একটা ১৮ বছরের মেয়ে রাতারাতি এমন খবর হয়ে উঠল? কেন জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক মঞ্চও অস্বীকার করতে পারল না গ্রেটা নামের সুইডিশ একটা মেয়েকে? গ্রেটা পরিবেশকে বাঁচাতে চেয়েছে। নিজের জন্যেও, আবার অন্য সবার জন্যও। এ পৃথিবীর সবার জন্য একটা সুস্থ পৃথিবীর, সুস্থ পরিবেশের স্বপ্ন দেখছে গ্রেটা।

জাতিসঙ্ঘ ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে গত সোমবার এক ঝাঁক কিশোর কিশোরী পরিবেশের প্রতি রাষ্ট্রের ঔদাসিন্য নিয়ে উগড়ে দিয়েছে তাদের যাবতীয় অভিযোগ। ১৬ জন অভিযোগকারীর মধ্যে মঞ্চে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ।

যারা জাতিসঙ্ঘ সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিবেশ ঔদাসিন্যের অভিযোগ এনেছে, তাদের বয়স ৮ থেকে ১৭-র মধ্যে। মূল অভিযোগ হলো, সদস্য দেশ পরিবেশের সংকট দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং সেই সঙ্গে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

প্রথম আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা পেয়ে খবরে আসা আগস্ট, ২০১৮ সালে। সুইডেনের পার্লামেন্ট গিয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে এল মেয়েটা। পরিবেশ বাঁচাতে রাষ্ট্রের কড়া পদক্ষেপ দাবি করল গ্রেটা আর তার সঙ্গীরা। স্কুল পালিয়েই দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তুলল প্রতিবাদ। ২০১৮ এর জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে হওয়া কনফারেন্স-এ বক্তব্য রাখল থুনবার্গরা। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে একের পর এক স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে ছড়িয়ে গেল প্রতিবাদ। না, কোনো দেশ-কাল-সীমানার গণ্ডি মানল না সেই প্রতিবাদ।

রাষ্ট্রশক্তিরপরিবেশঔদাসিন্যনিয়েমুখখুলতেএতটুকুদ্বিধাকরেনি১৮বছরবয়সেরমেয়েটা।সত্যিবলতে, কাউকেইছেড়েকথাবলতেহয়, এইবোধতৈরিরঅনেকআগেগ্রেটারমধ্যেচলেএসেছেএকটাসুন্দর, সুস্থপৃথিবীরস্বপ্ন।যেখানেপরিবেশকেনিংড়েনিয়েশুধুএকপক্ষেরবেঁচেথাকাসমৃদ্ধহয়না, বরংবেশকিছুটাফিরিয়েদেয়াহয়পরিবেশকেও।ব্যক্তিগতপরিসরেওগ্রেটাবিশ্বাসকরেছেপরিবেশবান্ধবএকযাপনে।আকাশপথেযাতায়াতছেড়েছে, আমিষখাওয়াছেড়েছে।

২০১৯এরমেমাসেটাইমম্যাগাজিনেগ্রেটানির্বাচিতহলোআগামীপ্রজন্মেরনেতাহিসেবে।সারাপৃথিবীতেআরোমানুষজানতেশুরুকরল, এইগ্রহেরইকোনোএকসদ্যআঠেরোয়পড়াপ্রাণদিননেই, রাতনেই, ভেবেচলেছেকীভাবেএকটাসুন্দর, সুস্থপরিবেশউপহারদেবেআগামীপ্রজন্মকে।তৈরিহলোতথ্যচিত্রমেকদ্যওয়র্ল্ডগ্রেটাএগেইন

২০০৩সালেসুইডেনেররাজধানীস্টকহোমেজন্মগ্রেটার।গ্রেটারমাঅপেরাগাইকাম্যালিনাইমান, বাবাঅভিনেতাভ্যানতেথুনবার্গ।২০০৮সালে১১বছরবয়সেপ্রথমজলবায়ুবদলেযাওয়ারকথাজানতেপারেমেয়েটা।অবসন্নহতেহতেখাওয়াদাওয়াছেড়েদিতেথাকে।চিকিৎসকেরাজানালেনঅ্যাস্পারগারসিনড্রোমেভুগছেগ্রেটা।এরপরইঅবসাদজ্বলেউঠলপ্রতিবাদহয়ে।বাকিটাইতিহাস
সূত্র : ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস

আগামী দিনের নেতৃত্ব ও যুবসমাজ

দেশের সামনে এখন অনেক সম্ভাবনা। সামনের দশক আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশবাসী একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সুপ্রতিষ্ঠিত শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, গ্রহণযোগ্য আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা চায়। দুর্নীতি ও অরাজকতার বিরুদ্ধে গোটা জাতি যাতে এক হতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। বিরোধী দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব রয়েছে দেশের নাগরিকসমাজের ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের। এ দেশের যুবসমাজের হাতে থাকবে আগামী দিনের নেতৃত্ব।

কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রশ্নে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে জনাকীর্ণ স্থানে যখন কোনো যুবককে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে, অথচ এ দেশের শত শত লোক দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে। কেউ প্রতিবাদ করে না। সমাজ কতটা অধঃপতিত হলে মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কারণ, রাষ্ট্রশক্তির পক্ষ থেকেই খুনিরা বাধা পাচ্ছে না। বিশ্বজিৎ হত্যার কথাও কেউ ভোলেননি নিশ্চয়ই। সরকারবিরোধী সন্দেহে কুপিয়ে হত্যা করা হলো তাকে। পাশে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ সেটি তাকিয়ে দেখেছে বিনা প্রতিবাদে। এমনকি পুলিশও অদূরে নীরবে দাঁড়িয়ে এই নারকীয়তা প্রত্যক্ষ করেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ চায় সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, কার্যকর সংসদ সর্বক্ষেত্রে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

স্বাধীনতার তিন বছর পরই জরুরি আইন ও একদলীয় শাসন কায়েম হওয়ায় পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সংগঠিত হয় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে এ দেশের ইতিহাস অন্য দিকে মোড় নেয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ চলে যায় সামরিক শাসকের হাতে। অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানও হতে থাকে।

’৮২ তে আবার সামরিক শাসন জারি হয়। শাসনভার চলে যায় নতুন এক জান্তার হাতে। প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ দেশের যুবক, ছাত্র-জনতা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা এক হয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসে। দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিদায় নেয় স্বৈরশাসক। সেদিন এ দেশের যুবসমাজ, সর্বদলীয় ছাত্র-জনতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে গণতন্ত্রের পথ খুলে যায়। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের পুরোটা সময় নানামুখী চাপ সত্ত্বেও ছাত্র-জনতা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিল, উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন পেশাজীবীরাও। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল সাহসী ও অনুপ্রেরণামূলক।

১৯৯১ সালের একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরে আসে গণতন্ত্র। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আসে ক্ষমতায়। ২০০৬ সালের শেষ দিকে সাধারণ নির্বাচন নিয়ে দেশে গভীর সঙ্কট তৈরি হলে ২০০৭ সালে জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে।

তবে২৮বছরপরআবারোনির্বাচনগণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশেরস্বাধীনতানিয়েজাতিগভীরসঙ্কটেপতিতহয়েছে।২০১৪সালেরএকতরফানির্বাচনজাতিকেদেখতেহয়েছে।৩০ডিসেম্বর২০১৮সালেহয়েছেআরেকটিএকতরফা, প্রহসনমূলকনির্বাচন।টিআইবিপ্রণীতরিপোর্টেদেখাগেছে, ৫০টিরমধ্যে৩৩টিতেইআগেররাতেএবং৩০টিকেন্দ্রদখলকরেব্যালটপেপারেক্ষমতাসীনদলেরপ্রার্থীরপক্ষেসিলমেরেবাক্সভরাহয়েছিল।নির্বাচনেরদিনসহিংসতারনিহতহয়েছিল১৯জন।এদিকে, অপহরণ, গুমরাজনৈতিকহত্যাথামছেনা।ব্যক্তিমতপ্রকাশেরস্বাধীনতানিয়েবিরাটসমস্যারয়েছে।

ফলেগণতন্ত্রকেপুনরুদ্ধারকরতেহলেস্বাধীনবিচারব্যবস্থা, সুশাসনপ্রতিষ্ঠারজন্যবর্তমানছাত্রজনতাযুবসমাজকেনব্বইয়েরগণআন্দোলনেরদাবিরকথামনেকরতেহবে।বিগতদ্ইুদশকেবাংলাদেশঅর্থনৈতিকভাবেঅনেকটাস্বাবলম্বীহয়েছে।দেশেরঅভ্যন্তরীণঅবকাঠামোগতঅনেকউন্নয়নহয়েছে।মাথাপিছুআয়গড়আয়ুবেড়েছে।কিন্তুশিক্ষারগুণগতমানমুখথুবড়েপড়েছে।শিক্ষিতবেকারেরসংখ্যাবেড়েইচলেছে।বর্তমানেপ্রায়২৭লাখকর্মক্ষমতরুণতরুণীবেকার।ফলেনানাধরনেরঅপরাধ, খুন, ধর্ষণ, মাদকাসক্তিরদরুণযুবসমাজঅধঃপতিতহচ্ছে।

বিচারহীনতাক্ষমতাশীনদলেরপ্রভাবখাটিয়েসন্ত্রাসীচক্রপ্রকাশ্যেহত্যা, ধর্ষণজবরদখলেমেতেউঠেছে।এভাবেচলতেথাকলেসৎ, যোগ্য, মেধাবীদেশপ্রেমিকনেতৃত্বেরসঙ্কটদেখাদেয়ারসমূহসম্ভাবনারয়েছে।কিন্তুআমরাতবুওহতাশহবোনা, ভেঙেপড়বনা।কারণআমাদেররয়েছেসম্ভাবনাময়তরুণসমাজ।নানাক্ষেত্রেদেশেরতরুণেরাপ্রতিভাআরসম্ভাবনারস্বাক্ষররেখেচলেছে।তাদেরযেনপথবিভ্রাটনাঘটে।তারাযেনদেশপ্রেমেউজ্জীবিতহয়েএগিয়েযায়, সেদিকেসবারখেয়ালরাখাউচিত।এইতরুণদেরথেকেইআগামীদিনেরনেতৃত্বগড়েউঠবে।তাইসৎদক্ষ, দেশপ্রেমিক, ধর্মপ্রাণখোদাভীরুজবাবদিহিতাকরায়প্রস্তুতনেতৃত্বগড়েওঠাচাই।

আমাদেরদেশেসংসদনির্বাচনসহবিভিন্নস্থানীয়নির্বাচনেযেনেতৃত্বউঠেআসে, তাসাধারণতবিভিন্নদলেরছাত্রসংগঠনগুলোথেকেইআসে।ছাত্রসংগঠনগুলোকেযারানেতৃত্বদিচ্ছেনতারাযদিসৎ, ধর্মপ্রাণ, পরমতসহিষ্ণু, মেধাবীদেশপ্রেমিকনাহনতাহলেসন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদসামাজিকঅনাচারবহুগুণেবেড়েযাবে।আমাদেরতরুণদেরবিশালঅংশঅস্থিরতারমধ্যেআছে।তাদেরসঠিকভাবেপরিচালনারঅভাবরয়েছে।এরসাথেযুক্তহচ্ছেমাদকেরপ্রভাব।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীমাদকবিরোধী, সন্ত্রাসবিরোধীযতইঅভিযানপরিচালনাকরুকনাকেন, এতেকিছুদিনদমেথাকলেওপুনরায়অপরাধীচক্রনানাভাবেফিরেআসছে।জন্যআমাদেরদরকারদীর্ঘমেয়াদিপরিকল্পনা।আমাদেরপরিবার, সমাজ, শিক্ষাঙ্গনশিক্ষাব্যবস্থায়মানবিকমূল্যবোধ, ধর্মীয়জ্ঞানখোদাভীরুতাএবংদেশপ্রেমপারস্পরিকভালোবাসারসেতুবন্ধনতৈরিকরতেহবে।পরিবারথেকেযুবকদেরপারস্পরিকশ্রদ্ধাবোধ, নীতিনৈতিকতাদেশপ্রেমেরশিক্ষাদিতেহবে।ছাত্রসংগঠনগুলোকেনেতানির্বাচনেসৎ, আদর্শ, নিষ্ঠাবানমানবিকগুণাবলিসম্পন্নতরুণদেরকেইনেতৃত্বেরআসনেনিয়েআসাউচিত।

E-mail: main706@gmail.com

নীতিনৈতিকতার পরাজয়

নীতি ও নৈতিকতা দু’টি শব্দ ব্যাপক অর্থ বহন করে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজে নীতি ও নৈতিকতা থাকা অত্যাবশ্যক। ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সমাজে আদর্শিকভাবে নীতি আর নৈতিকতা বিলুপ্ত হলে সেসব প্রতিষ্ঠান রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। নৈতিক আদর্শ না থাকলে প্রতিষ্ঠান সমাজ বা রাষ্ট্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। আমরা যে দেশে বসবাস করছি সে দেশের ব্যক্তি-পরিবার-সমাজে কী পরিমাণ নীতিনৈতিকতা লালন পালন করছি- সে বিষয়ে আলোকপাত করতে যাচ্ছি।

আমরা বই-পুস্তকে মনীষীদের লেখায় নৈতিক মূল্যবোধ, চরিত্র, আলোকিত আদর্শের কথা পড়েছি। সে নীতিনৈতিকতা এখন পুস্তকেই শোভা পাচ্ছে। যারা এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের রপ্ত করাবেন তাদের কাছেও ওই সব বিষয় অনুপস্থিত। একজন শিক্ষার্থী নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে পদচারণা করলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে সে শিক্ষা পাচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চরিত্র ধারণ করে পশুর আচরণ নিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করছে। ফলে তার জীবন ধ্বংস, সে সাথে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে করছে কলুষিত। এভাবে সমাজের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা এখন নৈতিকতার পরাজয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে। সমাজের কোনো সেক্টরেই নীতি-আদর্শ-মূল্যবোধের অবস্থান নেই বলা যায়।

দোকান থেকে বাজার, মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেই কোনো ভালোবাসা আর আদর্শিক নৈতিকতা। কে কাকে কী পরিমাণ ঠকিয়ে ধোঁকা দিয়ে মিথ্যা ছলচাতুরীর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়, সেটিই এখন আমাদের অন্যতম চরিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে। একটা পণ্যের কী পরিমাণ ন্যায্যমূল্য সেটি কম-বেশি সব ক্রেতার ধারণা থাকে। দেখা যায়, বিক্রেতা এক শ’ টাকার একটা পণ্যের মূল্য হাঁকাল এক হাজার টাকা। তাহলে এটাকে পণ্যের ন্যায্যমূল্য হিসেবে আখ্যায়িত করবেন, নাকি ডাকাতি বলবেন। এভাবে সব মানুষ কোনো-না-কোনো জায়গায় অনৈতিকভাবে প্রতারণার শিকার। সমাজের কোথাও অথবা কোনো সেক্টরে নীতিনৈতিকতার আদর্শ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে

কার চেয়ে বেশি টাকা আয় করবে- সেটিই এখন আমাদের অন্যতম টার্গেট। বৈধ, অবৈধ, হালাল, হারাম কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না।
মাদক উৎপাদন, মাদক পাচার, বেচা-বিক্রি তো সবারই জানা অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড। একটি সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করতে মাদকই যথেষ্ট। সেটি জানার পরও যারা এসব কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত তাদের কী পরিণতি, আর কী ধরনের বিচার ও শাস্তি- সেটি রাষ্ট্রীয় আইনেই বলা আছে। আমাদের কথা হচ্ছে, এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের পরিচয় দেখলে পাওয়া যায়, তারা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লেবাস ব্যবহার করে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এসব লোক ধর্ম-কর্মে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। ধর্মের আবরণে অবৈধ, অনৈতিক অপকর্ম করাটা, সেটি যেন অভ্যাসে পরিণত। ধর্ম যেখানে নীতিনৈতিকতার প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল, সেখানে উল্টোটা সমাজ দেখছে। যাদের থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ নীতিনৈতিকতা গ্রহণ করার কথা ছিল তাদের কারো কারো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বয়ং ধর্ম পর্যন্ত এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জন্মের অর্ধশত বছর অতিক্রান্ত হলেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সব কিছু আজ কলুষিত। আপন ও দলীয় স্বার্থে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরের ক্ষতি ও ধ্বংস কোনো ব্যাপার নয়। আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার লালসায় সব ধরনের অনৈতিক উচ্ছখল আচার-আচরণ এ জাতির পক্ষে সম্ভব। দেখে দেখে একে অন্যের কাছ থেকে এসব অভ্যাসে গড়ে উঠছে পরিবার ও সমাজ। শিষ্টাচার-ভদ্রতা-নম্রতা, অন্যের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যশীল আচরণ বিলুপ্তির পথে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত এখন অনৈতিকতায় দিশাহারা সমাজ।

সরকারিবেসরকারিব্যক্তিথেকেপরিবাররাষ্ট্রপর্যন্তসবখানেনীতিনৈতিকতারলালনপালনপ্রতিষ্ঠাথাকতেহবে।তানাহলেকোনোঅবস্থায়সুশৃঙ্খলআদর্শিকসমাজআশাকরাযায়না।

লেখক : সংগঠক

মানবজাতির প্রতি কোরআনের ১০০ উপদেশ

মানবজাতির প্রতি কোরআনের ১০০ উপদেশ

কালের কণ্ঠ অনলাইন   

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১০:১২ | পড়া যাবে ১৮ মিনিটে

প্রিন্ট

অ- অ অ+

মানবজাতির প্রতি পবিত্র কোরআনের ১০০টি উপদেশ ধারাবাহিকভাবে ১০ পর্বে প্রকাশিত হয়। আজ সবগুলো পর্ব একসাথে দেওয়া হলো।

১।   সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ করা যাবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কোরো না। এবং জেনেশুনে সত্য গোপন কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪২)

২।  সৎ কাজ নিজে করে অন্যকে করতে বলো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের বিস্মৃত হও…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৪)

৩।   বিবাদে লিপ্ত হয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬০)

৪।   কারো মসজিদে যাওয়ার পথে বাধা দিয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহর (ঘর) মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এর বিনাশসাধনে প্রয়াসী হয়…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)

৫।   কারো অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তা তোমরা অনুসরণ করো; তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি, তার অনুসরণ করব…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭০)

৬।   প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো…।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১)

৭।   অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

৮।   সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘…সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯০)

৯।   আল্লাহর পথে ব্যয় করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

১০।  এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তোমাকে এতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও, তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২০)

১১। ঋতুস্রাবের সময় সহবাস পরিহার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঋতুস্রাবের সময় যৌন সঙ্গম কোরো না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)

১২। শিশুকে দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াও

ইরশাদ হয়েছে, ‘শিশুকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাও।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩০)

১৩। সৎ শাসক নির্বাচন করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎ গুণ দেখে শাসক নির্বাচন করো।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৭)

১৪। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়

ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)

১৫। মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিদান কামনা করে দান বিনষ্ট কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

১৬। অন্যের বিপদে সাহায্য করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রয়োজনে সহযোগিতা করো।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)

১৭। সুদ পরিহার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘সুদ গ্রহণ কোরো না।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

১৮।  অপারগ ব্যক্তির ওপর সদয় হও

ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮০)

১৯।   হিসাব সংরক্ষণ করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘ঋণের বিষয় লিখে রাখো।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮২)

২০।   আমানত রক্ষা করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আমানত রক্ষা করো।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)

২১। পরনিন্দা পরিহার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘কারো গোপন তথ্য অনুসন্ধান কোরো না এবং পরনিন্দা কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)

২২। সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৫)

২৩। আল্লাহ চেষ্টা অনুযায়ী প্রতিদান দেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কারো ওপর বোঝা চাপিয়ে দেন না। সে তা-ই পায় যা তার অর্জন।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

২৪। আল্লাহ বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করেন না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

২৫। সত্যের প্রতি আহ্বানকারী থাকা চাই

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ভেতর এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা ভালো কাজের প্রতি আহ্বান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)

২৬। কোমলভাষী হও

ইরশাদ হয়েছে, ‘রূঢ় ভাষা ব্যবহার কোরো না।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

২৭। সৃষ্টিজগতে আল্লাহর অনুসন্ধান করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

২৮। নারী-পুরুষ সবাই তার কর্মফল পাবে

ইরশাদ হয়েছে, ‘নারী ও পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)

২৯। প্রাপ্তদের উত্তরাধিকারের সম্পদ বুঝিয়ে দাও

ইরশাদ হয়েছে, ‘মৃতের সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের ভেতর বণ্টন করতে হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)

৩০। নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীদেরও সুনির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)

৩১। অনাথের সম্পদ আত্মসাত্ কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘অনাথদের সম্পদ আত্মসাত্ কোরো না।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)

৩২। নিষিদ্ধ নারীকে বিয়ে কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের

বিয়ে কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৩)

৩৩। অন্যায়ভাবে সম্পদ হরণ কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)

৩৪। পুরুষ পরিবারের অভিভাবক হবে

ইরশাদ হয়েছে, ‘পরিবারের অভিভাবকত্ব ও অর্থ ব্যয়

পুরুষের দায়িত্ব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)

৩৫। সদাচারী হও

ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যের প্রতি সদাচারী হও।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

৩৬। কৃপণ হয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘কার্পণ্য কোরো না এবং অন্যকে কার্পণ্য শিক্ষা দিয়ো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৭)

৩৭। বিদ্বেষ পরিহার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘বিদ্বেষী হয়ো না।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৪)

৩৮। ন্যায়বিচার করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করো।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

৩৯। মানুষ হত্যা কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘পরস্পরকে হত্যা কোরো না।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৯২)

৪০। বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পক্ষপাত কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০২)

৪১। সত্যের ওপর অবিচল থাকো

ইরশাদ হয়েছে, ‘ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।’

(সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৫)

৪২। অঙ্গীকার পূর্ণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১)

৪৩। সৎকাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজ ও খোদাভীতির ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)

৪৪। সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে সহযোগিতা কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)

৪৫। সত্যের অনুগামী হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’

(সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)

৪৬।অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও
ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৮)

৪৭। পাপ ও অবৈধ জিনিসের পেছনে শ্রম ব্যয় কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৬২)

৪৮। মাদকদ্রব্য বর্জন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)

৪৯। জুয়া খেলো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)

৫০। পৃথিবীতে ভ্রমণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করে তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১১)

৫১। আধিক্য সত্যের মানদণ্ড নয়

ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কথামতো চলো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে এবং তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’

(সুরা : আনআম, আয়াত : ১১৬)

৫২। সঠিক ওজনে লেনদেন করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ন্যায্য পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ করবে।’

(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫২)৫৩. অহংকার পতনের মূল

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি এই স্থান থেকে নেমে যাও। এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩)

৫৪। নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

৫৫। অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান করো। তবে অপচয় কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

৫৬। অন্যের ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি ক্ষমাপরায়ণ হোন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)

৫৭। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমরা কাফির বাহিনীর মুখোমুখি হবে তখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কোরো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১৫)

৫৮। নিরাপত্তাপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা দাও

ইরশাদ হয়েছে, ‘মুশরিকদের কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দেবেন, যেন সে আল্লাহর বাণী শুনতে পারে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬)

৫৯। আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিকে ভালোবাসেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে রয়েছে এমন মানুষ, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৮)

৬০। আল্লাহঅনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’

(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩)

৬১। অজ্ঞতাবশত ভুল হলে আল্লাহ ক্ষমা করেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে তারা পরে তওবা করলে এবং নিজেদের সংশোধন করলে তাদের প্রতি তাদের প্রতিপালক অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১৯)

৬২। ইসলাম প্রচারে কৌশলী হও

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি আল্লাহর পথে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো। তাদের সঙ্গে উত্তম পন্থায় বিতর্কে লিপ্ত হও। নিশ্চয় তোমার প্রভু পথভ্রষ্টদের সম্পর্কে সবিশেষ অবগত এবং সত্য পথের অনুসারীদের ব্যাপারেও সর্বোত্তম জানেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)

৬৩। কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎপথ অনুসরণ করে সে নিজের কল্যাণের জন্য সৎপথ অনুসরণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ধ্বংসের জন্যই তা করবে। কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। আমি রাসুল প্রেরণ করার পূর্ব পর্যন্ত কাউকে শাস্তি প্রদান করি না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৫)

৬৪। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কোরো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)

৬৫। মা-বাবার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের একজন বা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাদের ‘উফ’ বলো না, তাদের ধমক দিয়ো না; তাদের সঙ্গে বিনম্র ভাষায় কথা বলো।’

(সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)

৬৬। জীবনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)

৬৭। সন্তান হত্যা কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা সন্তান হত্যা কোরো না। তাদের এবং তোমাদের আমিই জীবিকা প্রদান করি। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩১)

৬৮। অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২)

৬৯। না জেনে কোনো কিছুর অনুসরণ করবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয়—এর প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২)

৭০। নম্র ভাষায় কথা বলো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় পাবে।’

(সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৪)

৭১। অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকো

ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুমিন তারা) যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)

৭২। অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! অন্যের ঘরে অনুমতি গ্রহণ বা সালাম প্রদান না করে প্রবেশ কোরো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’

(সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)

৭৩। লজ্জা ও শালীনতার সঙ্গে চলো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম। তারা যা করে আল্লাহ নিশ্চয়ই তা জানেন। এবং আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে; তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে ওইটুকু ব্যতীত যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)

৭৪। মা-বাবার ঘরে প্রবেশের আগেও অনুমতি নাও

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের মালিকাধীন দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনো বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তিন সময় তোমাদের ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নেয়—ফজরের নামাজের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ এবং এশার নামাজের পর। এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৮)

৭৫। বিনম্র হয়ে চলাফেরা করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৩)

৭৬। মানুষের প্রতি দয়া করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি যেমন অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও তেমন অনুগ্রহ করো। পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)

৭৭। সংকটকালেও আল্লাহর পথে অটল থাকো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলো থেকে বিমুখ না করে। তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি আহ্বান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের দলভুক্ত হইয়ো না।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৮৭)

৭৮। সমকামিতা জঘন্যতম অপরাধ

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছো, তোমরাই ডাকাতি করে থাকো, তোমরাই তোমাদের মজলিসে প্রকাশ্যে অপকর্ম করে থাকো। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, আমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি নিয়ে এসো—যদি তুমি সত্যবাদী হও।’

(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৯)

৭৯। সৎ কাজের আদেশ করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে পুত্র! নামাজ আদায় করো, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো। বিপদে ধৈর্য ধারণ করো। এটাই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’

(সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)

৮০। মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’

(সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)

৮১। কণ্ঠস্বর নিচু রাখো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি সংযতভাবে পথ চলো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখো। নিশ্চয়ই গাধার স্বর সর্বাধিক শ্রুতিকটু।’

(সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯)

৮২। নারী অশালীনভাবে নিজেকে প্রদর্শন করবে না

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঘরে অবস্থান করো এবং পূর্ববর্তী জাহেলি (বর্বর) যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)

৮৩। অপরাধ যত বড় হোক আল্লাহ ক্ষমা করবেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! হে আমার বান্দাগণ তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহই ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৩)

৮৪। আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; তোমাদের ওপর শাস্তি আসার আগে, যখন তোমাদের সাহায্য করা হবে না।’

(সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৪)

৮৫। মন্দের বিপরীতে ভালো করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো-মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালোর দ্বারা। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।’

(সুরা হা মিম সাজদা, আয়াত : ৩৪)

৮৬। পরামর্শ করে কাজ করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুমিনরা) পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৩৮)

৮৭। আল্লাহ আপস পছন্দ করেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা ভাইদের ভেতর শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১০)

৮৮। কাউকে উপহাস করো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী নারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে।’

(সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)

৮৯। সন্দেহপ্রবণতা ভালো নয়

ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা অধিক পরিমাণে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু সন্দেহ পাপতুল্য।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

৯০। পরনিন্দা করো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরের অনুপস্থিতিতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণা করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

৯১। সম্মানের ভিত্তি খোদাভীতি

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। অতঃপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে আল্লাহকে অধিক ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব কিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)

৯২। অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার নিকট ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের ঘটনা বিবৃত হয়েছে? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে তিনি বললেন, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইবরাহিম তার নিকট গেল এবং একটি মাংসল গরুর বাছুর ভাজা নিয়ে এলো এবং তাদের সামনে রাখল।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২৪-২৭)

৯৩। দাতব্যকাজে অর্থ ব্যয় করো

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে ব্যয় করো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ৭)

৯৪। বৈরাগ্যবাদ মানুষের সৃষ্টি

ইরশাদ হয়েছে, ‘বৈরাগ্যবাদ এটা তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমি তাদের এই বিধান দিইনি। অথচ তারা এটাও ঠিকমতো পালন করেনি।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭)

৯৫। আলেমদের আল্লাহ মর্যাদা দান করেছেন

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্মুখ অবগত।’

(সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ৫৮)

৯৬। অমুসলিমদের সঙ্গেও উত্তম আচরণ করতে হবে

ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

৯৭। ঋণদাতার জন্য রয়েছে পুরস্কার

ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, ধৈর্যশীল।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ১৭)

৯৮। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো

ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক জানেন যে আপনি জাগরণ করেন কখনো রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক-তৃতীয়াংশ; জাগে তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের একটি দলও। আল্লাহই নির্ধারণ করেন দিন-রাতের পরিমাণ।’ (সুরা : মুজাম্মিল, আয়াত : ২০)

৯৯। ভিক্ষুকদের ধমক দিয়ো না

ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তুমি ভিক্ষুককে ধমক দিয়ো না।’ (সুরা : দুহা, আয়াত : ১০)

১০০। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য

ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়, তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা : ইখলাস)

জেলায় ন্যাশনাল সার্ভস     স  কর্মরত সা  সার্ভ 

সাভিস  ম্যানদের   জেলা প্রশাসন কতৃক    

জেলায় ন্যাশনাল সাভিসে কর্মরত সাভিসম্যান এবং সকল যুব সংগঠনকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিধনের  কার্যকর পদক্ষেপ  গ্রহনের জন্য বলা হলো ।       

সমাজ গঠনে মানবিক মূল্যবোধ

সুস্থ সমাজ গঠনে মানবিক মূল্যবোধের কোনো বিকল্প নেই। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায়ই যেসব অমানবিক বর্বর নিষ্ঠুরতার চিত্র পাওয়া যায়, তা নিন্দা জানানোর ভাষাও থাকে না। সম্প্রতি বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড এমনই একটি ঘটনা, যা সমগ্র জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। মানবরূপী এসব দানবের প্রতি জনমনে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এবারের শিকার পাঁচ বছরের শিশু তুহিন। নজিরবিহীন জঘন্য কায়দায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ কোন জিঘাংসার ফসল? প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ঘটনাটি বাবা-চাচাদের দ্বারা সংঘটিত। অতীতেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য স্বজন হত্যার বহু নজির রয়েছে। কিন্তু নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়ে নিজের শিশুসন্তানকে হত্যা করে বীভৎস কায়দায় শিশুটির বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে কী প্রমাণ করতে চেয়েছে খুনিরা? কোনো মানুষের পক্ষে একটা শিশুকে খুন করে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এ বীভৎস কায়দায় কর্তন করা সম্ভব? বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। পিতার কাছে যদি সন্তানের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয় কোথায়? আবরার কিংবা তুহিন, যারা নৃশংসতার শিকার হলো আমি মনে করি, এ এক বিকৃত মানসিকতা-সম্পন্ন খুনিদের নিষ্ঠুর উলল্গাস। এসবের পরিবর্তন দরকার। দরকার মনুষ্যত্ব জাগ্রত করা। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গঠনটাও আজ বড় জরুরি।

নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ হারানোর হাহাকার আজ চারদিকে। বুয়েটের ছাত্র আবরারকে যারা পিটিয়ে মেরে ফেলল, তারা তো একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। তিন দফায় আবরারকে পেটানো হয়। একজনও এগিয়ে এলো না থামাতে। একজনেরও বিবেক জাগ্রত হলো না। আবরারের হত্যাকারীরা প্রত্যেকেই নটর ডেম কলেজের ছাত্র, মেধাবী। এই খবরটা জেনে আমার ছেলেরও খুব মন খারাপ। কারণ সে নটর ডেমের ছাত্র ছিল। এখান থেকে মানুষ পরিশীলিত জীবনের শিক্ষা পায়। অথচ ছাত্র নামধারী শিক্ষিত এই খুনিদের কারণে আজ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হলো। আমি মনে করি, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শুধু আবরারের বাবা-মা তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন এমনটি নয়, ক্ষতি হয়েছে দেশ-জাতি সবার। এই খুনিরা এতটাই ঘৃণিত হয়েছে যে, জেলখানার কয়েদিরা পর্যন্ত তাদের ধিক্কার দিয়েছে। তাদের পিতা-মাতার অবস্থা আরও করুণ। কীভাবে তারা সমাজে মুখ দেখাবে? প্রত্যেক বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন বোনেন। কারও কারও কাছে বুয়েট স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এখানে ভর্তি করতে পারলে সন্তানটি সুশিক্ষা পাবে, দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে, নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে- এটাই অভিভাবকের প্রত্যাশা। কিন্তু বিপরীতে আজ এ কী চিত্র আমরা দেখলাম! আবরার পরপারে চলে গেছে। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে তার জন্য আফসোস। শোক প্রকাশ করছে। তার বাবা-মার প্রতি সবাই সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবরারের মাকে বুকে টেনে নিয়েছেন। বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন শুরু থেকেই বলে আসছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরারের খুনিদের পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করলে তাদের মর্মবেদনাও অনুভব করা যায়। তাদের চোখের জল ফেলতে হয় লুকিয়ে। তারা আবরারের মায়ের মতো হাহাকার করতে পারছে না। কী এক অসহায় অবস্থায় তাদের দিন কাটে। তাদের স্বপ্নগুলোও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। কেন এই মেধাবী সন্তানগুলো এভাবে বখে গেল, তার কারণ অনুসন্ধান করা এখন সময়ের দাবি।


আমার শিক্ষাজীবনেও র‌্যাগিং দেখেছি। অশ্লীলতায় পূর্ণ কী বর্বর আচরণ ছিল কিছু সংখ্যক র‌্যাগিংবাজের, যা সহ্য করার মতো ছিল না। আমরা বরাবরই এই অশ্লীল সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছি। নোংরামির বিরোধিতা করেছি। নির্মল আনন্দের বিপক্ষে কেউ না; কিন্তু আনন্দের নামে অশ্লীলতা সহ্য করা যায় না। আমার স্বামী মুহসীন হলের ছাত্র ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোমাদের হলে কি টর্চার সেল ছিল?’ উত্তরে ‘না’ পেয়েছি। আমার ছোট ভাই ছিল এসএম হলের ছাত্র। সে সময় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। মারামারি ছিল। আমি রোকেয়া হলের ছাত্রী ছিলাম। ১৯৭৮ সালে হলের সেই মারামারি, চুলোচুলির ঘটনা দেশজুড়ে জানাজানি হয়ে গেল। বাড়িতে গেলে বা কোথাও বেড়াতে গেলে অনেকেই ঠাট্টা করে জিজ্ঞেস করত, দেখি মাথায় কয় গোছা চুল আছে? সে রকম পরিস্থিতিতেও কিন্তু এ রকম পিটিয়ে মেরে ফেলার সংস্কৃতি ছিল না। মানুষের মানবিকতা এভাবে উবে গেল কেন? মানুষ কেন অমানুষ হবে? একজন ছাত্রেরও মনে হলো না যে, ছেলেটি মরে যেতে পারে। শুনতে পাই, গেস্টরুমে তারা আদব-কায়দা শিক্ষা দিত। আদব-কায়দার যদি এই নমুনা হয়, তাহলে এমন আদব-কায়দা শেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নিজেরা সংযত  হলেই ভালো।

হল কর্তৃপক্ষ এখন কী করে? এটি একটি বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তাদের কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই? আমাদের সময় আমরা দেখেছি, মাঝেমধ্যে হাউস টিউটর আপা সন্ধ্যার পরে হোস্টেল কক্ষ ভিজিট করতেন। হলে-রুমে রান্না করা নিষিদ্ধ ছিল; কিন্তু অনেক মেয়েই হলের ডাইনিংয়ের খাবার খেতে পারত না। তারা লুকিয়ে রান্না করত। কেউ হিটারে, কেউ কেরোসিনের চুলায়। হাউস টিউটর আপা রুম ভিজিটে বেরিয়েছেন- এই খবর পেলে সে কী তড়িঘড়ি করে চুলা লুকানো হতো। অনেক সময় গরম চুলা খাটের নিচে লুকাতে গিয়ে কারও কারও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। শিক্ষক যেমন ছাত্রকে সন্তানতুল্য দেখবেন, ছাত্রও শিক্ষককে তেমনি পিতৃতুল্য মর্যাদায় রাখবেন। ছাত্রদের মাঝে শিক্ষকদের প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয় থাকতে হবে। শিক্ষকদের চোখের সামনে দিনের পর দিন এই ঘটনাগুলো ঘটছে। তারা কিছুই করতে পারছেন না, এটি মেনে নেওয়া যায় না। তারা যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারতেন, তাহলে মেধাবী ছাত্র আবরারের যেমন অকালে ঝরে যেতে হতো না, তেমনি আবরারের খুনি যারা এই প্রতিষ্ঠানেরই মেধাবী ছাত্র, তাদের জীবনেও হয়তোবা এই কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা হতো না। আমাদের সমাজব্যবস্থায় মূল্যবোধের ধস নেমেছে। সবার মাঝে যদি মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত থাকত, তাহলে হয়তোবা এই শিক্ষার্থীরা দানবে পরিণত হতো না। হয়তোবা এই ঘটনাটিই ঘটত না। সবার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ- আসুন, আমরা সবাই মিলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত করি। সবার মাঝে সহিষুষ্ণতা, সহনশীলতা ফিরিয়ে আনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যবহার এতটাই বেশি যে, পাশের ঘরে দাদা-দাদি, বাবা-মা কারও কথা মনে থাকে না। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। স্মার্টফোন হাতে পেয়ে সবার মাঝে থেকেও সবাই যেন একা। তাহলে পারিবারিক বন্ধন কার সঙ্গে হবে? সামাজিকতাটা কার জন্য? কেন সারাক্ষণ নেশাগ্রস্তের মতো মোবাইল সেটে চোখ রাখতে হবে? এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসাটা এখন জরুরি। আমাদের পারিবারিক বন্ধন মজবুত করা দরকার। মানবিকতার মূল্যবোধ পরিবার থেকে জাগ্রত না হলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বাঙালি পরিবারের ঐতিহ্য হচ্ছে মায়া-মমতাঘেরা আত্মীয়তার বন্ধন। সেই মায়া-মমতা আজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধারে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানবিক শিক্ষা দিতে হবে। শৈশবে যেমন আদর্শলিপি দিয়ে আমাদের হাতেখড়ি হয়েছে; এখনকার শিশুদের মাঝেও শৈশব থেকেই সেই নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। আমরা বাবা-মায়ের কাছে শিখেছি, মিথ্যা বলা মহাপাপ। সবসময় সত্য কথা বলবে, অন্যের ক্ষতি করবে না। এগুলো এখনও আমাদের মনে গেঁথে আছে।

আমার স্বামী প্রায়ই বলে থাকেন, মান ও হুঁশ এই দুই শব্দের সম্মিলনে হয় মানুষ। মানুষ শব্দের অর্থের মধ্যেই মনুষ্যত্বের বিষয়টি রয়েছে। মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব তৈরি করতে হয়। পশুপাখি সে শুধুই পশুপাখি। গরুকে গরু হতে কেউ বলে না। যার মধ্যে সম্মানবোধ এবং জ্ঞান আছে, সেই মানুষের পক্ষে কোনো অমানবিক আচরণ করা সম্ভব নয়। তাই মানুষকে মানুষ করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, সভা-সেমিনার সর্বত্র সবাই মিলে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে। বর্বর আচরণ ও নির্মমতা-নিষ্ঠুরতা থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। সুস্থ সমাজ গঠনে মানবিক মূল্যবোধের কোনো বিকল্প নেই। সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার সবটুকু অধিকার আছে প্রত্যেক মানুষের। এটা কেউ নিতে পারে না। এটা কোনো রাষ্ট্রীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বিশ্বব্যাপী সর্বত্র এই অধিকার। এটাই মানবাধিকার। এই মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা এখন সময়ের দাবি; আর বিলম্ব নয়।

চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সাবেক সিনিয়র সচিব

অর্থনৈতিক ক্যান্সার পশ্চিমা সভ্যতা

বর্তমানবিশ্বেরসামনেযেসবসঙ্কটতৈরিহয়েছে, তারএকটিহলোঅর্থব্যবস্থাতথাঅর্থেরসংস্থাননিয়ন্ত্রণ।এরশুরুটাহয়েছিলমূলতইউরোপআমেরিকাথেকে।শুনেঅনেকেইঅবাকহতেপারেনযে, বর্তমানবিশ্বেরঅর্থেরউৎসনিয়ন্ত্রণকরছেনমাত্রপাঁচসাতজনলোক।কোনোদেশবাকোনোসরকারনয়।আরএটাইমানবসভ্যতারজন্যসবচেয়েগুরুতরপরিস্থিতিসৃষ্টিকরেছে।এরইতিহাসকিছুটাআমাদেরজানাথাকাউচিত।আমরাএখনআমেরিকানসভ্যসমাজবলতেযাদেরকেবুঝি, তারামূলতইউরোপথেকেযাওয়ালোকজন।তারাছিলেনউদ্যমীমানুষ।বিশালএইউপমহাদেশেসৌভাগ্যেরহাতছানিদেখেতারাঝাঁকেঝাঁকেসেখানেগিয়েহাজিরহয়েছেন।সপ্তদশশতকেরঘটনাএটা।ইউরোপীয়রাসেখানেগিয়েউপনিবেশস্থাপনকরেছিলেন।তারাসেখানেগিয়েদেখেন, ইচ্ছেমতোযাখুশিতাইকরাযাচ্ছে।ছোটবেলায়আমরাগল্পপড়েছিলামহাউমাচল্যান্ডডাজম্যানরিকয়্যারআমেরিকামহাদেশেপাড়িজমানোইউরোপীয়অধিবাসীদেরজন্যএইগল্পছিলসত্যি।

ইউরোপথেকেযারাআমেরিকায়পাড়িজমান, তারাহাজারহাজারএকরভূসম্পত্তিরমালিকহয়েবসেন।কারণতখনসেখানেজমিরকোনোমালিকছিলেননা।যেআগেগিয়েযতখানিজায়গামার্কিংদিয়েনিজেরবলেদাবিকরতেন, সেটাইতারহয়েযেত।সবাইএটামেনেওনিতেন।কারণজমিরঅভাবনেই।কিন্তুহাজারহাজারবিঘাজমিনিয়েবসেথাকলেতোহবেনা, জমিআবাদকরতেহবে।ইউরোপীয়রাএসেদেখেন; জমিপড়েআছেকাজকরারলোকনেই।জঙ্গলেবিশালবিশালআকারেরটার্কিঘুরেবেড়াচ্ছে।তারাসেগুলোমেরেখাওয়াশুরুকরলেন।আরসেকারণেইজুলাইআমেরিকানরাযখনতাদেরস্বাধীনতাদিবসপালনকরেন, সেদিনখাবারেরমেন্যুতেটার্কিহচ্ছেপ্রধানআইটেম।

কিন্তুটার্কিখেয়েআরকতদিনচলাযায়? এরপরশুরুকরাহলোদাসব্যবস্থা।ইউরোপীয়রাবিশেষকরে, আফ্রিকাথেকেআদিবাসীদেরধরেনিয়েগিয়েআমেরিকায়দাসহিসেবেকাজেলাগানোশুরুকরেছিলেন।আমেরিকানসভ্যতারযাত্রাশুরুমূলতএখানথেকেই।এইইউরোপীয়ভূস্বামীরাআমেরিকায়চরমস্বাধীনতাভোগকরতেথাকেন।যেযারমতোচলতেথাকেন।এদেরঅনেকেএমনপ্রতিপত্তিলাভকরেনযে, প্রাইভেটব্যাংকনামদিয়েনিজেইটাকাছাপানোশুরুকরেছেন।আইনশৃঙ্খলারক্ষারজন্যপ্রশাসনওতৈরিহলো।কিন্তুপরিস্থিতিএমনপর্যায়েগেলযে, প্রশাসনকেপর্যন্তশাসনব্যবস্থাপরিচালনারজন্যওইসবপুঁজিপতিরকাছেহাতপাততেহয়েছে।পরবর্তীকালেআরোঅনেকদেশেওএটাঘটেছে।এমনসম্পদশালীঅনেকপরিবারতৈরিহয়, যারাসরকারচালানোরটাকাদিয়েথাকে।সৌদিআরবেরমতোদেশেআলরাজিপরিবার, আলনাসিরপরিবাররয়েছে।বাদশাহসউদ, বর্তমানসৌদিআরবেরক্ষমতাসীনপরিবারেরপ্রতিষ্ঠাতা, তাদেরবাড়িতেএসেথাকতেন।কারণতখনরাজপ্রাসাদতৈরিকরারমতোঅর্থবাদশাহরছিলনা।

যাহোক, ভূস্বামীরাযখনটাকাছাপানোশুরুকরলেন, তখনআমেরিকাররাজনীতিবিদদেরমধ্যেউদ্বেগদেখাদিলো।এরসুদূরপ্রসারীএবংক্ষতিকরদিকগুলোচিন্তাকরেআতঙ্কিতবোধকরলেনতারা।বেশিরভাগআমেরিকানপ্রেসিডেন্টএটাপ্রতিরোধকরতেচাইলেন।কিন্তুতারাতাপারেননি।এইচেষ্টাকরতেগিয়েআমেরিকারতৃতীয়প্রেসিডেন্টটমাসজেফারসনবলেছিলেন : “If the American people ever allow private banks to control the issue of their currency, first by inflation, then by deflation, the banks and corporations that will grow up around them will deprive the people of all property until their children wake up homeless on the continent their Fathers conquered… The issuing power should be taken from the banks and restored to the people, to whom it properly belongs.” (আমেরিকারজনগণযদিতাদেরমুদ্রাইস্যুকরারক্ষমতাবেসরকারিব্যাংকগুলোরহাতেছেড়েদেয়, তাহলেপ্রথমেমুদ্রাস্ফীতিপরেমুদ্রাসঙ্কোচনেরমাধ্যমেব্যাংকগুলোজনগণকেতাদেরসম্পত্তিথেকেএমনভাবেবঞ্চিতকরতেথাকবেযতদিননাতাদেরসন্তানরাএইমহাদেশেগৃহহীনহয়েপড়ে, যেমহাদেশটিকেতাদেরপিতারাজয়করেছিলেনমুদ্রাইস্যুকরারক্ষমতাব্যাংকগুলোরকাছথেকেনিয়েজনগণেরকাছেদিতেহবে, যারাসত্যিকারেরঅধিকারী)জেফারসনএইকথাবললেওতিনিপ্রাইভেটব্যাংকগুলোরকাছথেকেমুদ্রাইস্যুকরারক্ষমতানিতেপারেননি।

জেফারসনেরপরচতুর্থমার্কিনপ্রেসিডেন্টজেমসম্যাডিসনওএকইকথাবলেছেন: “History records that the money changers have used every form of abuse, intrigue, deceit, and violent means possible to maintain their control over governments by controlling money and it’s issuance.” (ইতিহাসেদেখাযায়, মুদ্রাএরইস্যুকরানিয়ন্ত্রণেরমাধ্যমেমুদ্রাব্যবসায়ীরাসরকারকেনিয়ন্ত্রণকরারজন্যসম্ভাব্যসবধরনেরঅপব্যবহার, চক্রান্ত, শঠতা, প্রতারণাহিংসাত্মকউপায়অবলম্বনকরেছে)

কারণমানুষযতকথাইবলুকনাকেন, শেষকথাহলোঅর্থ।আমাদেরদেশেকীহচ্ছে? কিছুমানুষঅবৈধপথেবিপুলবিত্তবৈভবেরঅধিকারীহয়েসবকিছুনিয়ন্ত্রণকরতেযাচ্ছে।এরাম্যাডিসনেরআশঙ্কামতোকোনোঅপকর্মইবাদরাখছেনা।পরিস্থিতিএকধরনেরক্যান্সারেরূপনিয়েছে।প্রধানমন্ত্রীকেসাধুবাদদিই, তিনিদুর্নীতিবিরোধীঅভিযানশুরুকরেছেন।তবেএটাশুধুএকটিক্ষেত্রেসীমিতরাখলেহবেনা।এইক্যাসিনোরমতোকিছুআমাদেরদেশেহচ্ছে, অনেকেরমতোআমিওতাভাবতেপারিনি।নিজেযখনদীর্ঘদিনওয়ার্ল্ডক্লাসটপসিভিলসার্ভেন্টথেকেওঅস্তিত্বেরসংগ্রামকরছিএখন, তখনকিছুতরুণযুবকেরঅল্পসময়েবিপুলঅর্থেরমালিকহওয়াটাআমাদেরজন্যকল্পনাতীতইবটে।

অ্যান্ড্রুজ্যাকসন, আমেরিকারসপ্তমপ্রেসিডেন্ট, ক্ষমতায়এসেবললেন : “If Congress has the right under the Constitution to issue paper money, it was given to be used by themselves, not to be delegated to individuals or corporations” (সংবিধানেরআওতায়কংগ্রেসেরকাছেকাগজেরটাকাইস্যুকরারযেক্ষমতারয়েছেতাশুধুতারইব্যবহারেরজন্য, সেটিকোনোব্যক্তিবাকরপোরেশনেরহাতেঅর্পণেরজন্যনয়)

আব্রাহামলিঙ্কনেরওএকইকথাছিল : The Government should create, issue, and circulate all the currency and credits needed to satisfy the spending power of the Government and the buying power of the consumers. By the adoption of these principles, the taxpayers will be save from immense sums of interest. Money will cease to be master and become the servant of humanity” (সরকারেরব্যয়েরক্ষমতাভোক্তাদেরক্রয়ক্ষমতাপরিতুষ্টকরারজন্যসরকারসবধরনেরমুদ্রাক্রেডিটসৃষ্টি, ইস্যুবিতরণকরবে।এইনীতিমালাগ্রহণকরাহলেকরদাতারাবিপুলঅঙ্কেরসুদথেকেরক্ষাপাবেন।অর্থতখনপ্রভুনাহয়েমানবতারসেবকেপরিণতহবে)

এইউদ্ধৃতিগুলোদিয়েছিমূলতব্যক্তিরহাতেঅর্থনিয়ন্ত্রণেরক্ষমতাযেভয়াবহপরিণতিহতেপারে, তাবুঝানোরজন্য।আমেরিকারসেরাপ্রেসিডেন্টরাপর্যন্তএটাজানতেন।আরআব্রাহামলিঙ্কনযেকথাবলেছেন, তাতেইসলামেরমূল্যবোধেরকথাইচলেআসে।লিঙ্কনতোমুসলমানছিলেননা।কিন্তুমানবিকবিষয়গুলোসবসভ্যতাতেইএক।ইসলামমানবসভ্যতামানবজ্ঞানেরইঅংশ।

কিন্তুএতসবসতর্কবাণীরপরও১৯১৩সালেপ্রেসিডেন্টউড্রোউইলসনফেডারেলরিজার্ভআইনেস্বাক্ষরকরেআমেরিকারমুদ্রাব্যবস্থাকয়েকজনব্যক্তিরনিয়ন্ত্রিতএকটিবেসরকারিপ্রতিষ্ঠানেরহাতেতুলেদেন, যাআজকেফেডারেলরিজার্ভনামেপরিচিত।এটিকোনোকেন্দ্রীয়ব্যাংকনয়যে, সরকারদ্বারাপরিচালিতহচ্ছে।এটাবলতেগেলে, একটিআর্থিকমাফিয়াচক্রপরিচালিতপ্রতিষ্ঠান।আরসেকারণেপরেউইলসনইআক্ষেপকরেবলেছেন, ‘আমিসবচেয়েদুঃখীমানুষ।কারণআমিঅনিচ্ছায়আমারদেশকেধ্বংসকরেছি।

উইলসনেরওইআইনেস্বাক্ষরকরারহয়তোকারণছিল।হয়তোতাকেওঅর্থেরজন্যবেসরকারিখাতেরদ্বারস্থহতেহয়েছিল।আজএইফেডারেলরিজার্ভআমেরিকারসমাজকেনিয়ন্ত্রণকরছে।তারাশুধুডলারছাপিয়েবাজারেছাড়ছেনআরআমাদেরমতোদেশগুলোতারপেছনেছুটছে।যখনমিশিগানেডক্টরেটকরছিলাম, তখনআমারপ্রফেসরবলতেন, ‘কোনোসমস্যানেই।আমরাশুধুনোটপ্রিন্টকরব।ডলারেরবিপরীতেস্বর্ণমজুদকরারকথাছিল।কিন্তুএইনিয়মওবাতিলকরাহলো।আমরাডলারদেখলেপাগলহয়েযাই।কিন্তুসূক্ষ্মবিচারেএইডলারেরকোনোমূল্যইনেই।এটাকাগুজেবাঘমাত্র।এটাইবাস্তবতা।যেকেউএইতথ্যগুলোযাচাইকরেদেখতেপারেন।সারাদুনিয়ায়তারাএইকাগুজেবাঘছড়িয়েদিয়েছেন।সেকারণেইসৌদিআরবকেতারাকব্জায়রাখতেচান।

আজসৌদিআরবযদিবলে, তারাতেলেরমূল্যহিসেবেকাগুজেডলারেরপরিবর্তেসমমূল্যেরসোনাচান, তাহলেআমেরিকারপতনঘটবে।যুক্তরাষ্ট্রএটাকোনোভাবেইসহ্যকরবেনা।কিন্তুআমেরিকানদেরযুদ্ধশক্তিরকাছেবিশ্বহয়েআছেঅসহায়।চীনেরসঙ্গেযুক্তরাষ্ট্রেরবাণিজ্যবিরোধেরসূচনাএখানেই।চীনএখনউদীয়মানঅর্থনৈতিকশক্তি।কারণবাণিজ্যক্ষেত্রেআমেরিকাতারপ্রতিযোগিতামূলকসুবিধাঅনেকআগেইহারিয়েফেলেছে।

আন্তর্জাতিকবাণিজ্যেডকট্রিনঅবকমপিটেটিভঅ্যাডভানটেজবহুলপঠিতএকটিবিষয়।এরমোদ্দাকথাহলো, যেযতকমদামেপণ্যতৈরিকরবে, ক্রেতাতারদিকেঝুঁকবে।একইপণ্যযুক্তরাষ্ট্রচীনযখনতৈরিকরে, সেগুলোরমানেরকিছুটাপার্থক্যথাকলেওদামেরব্যবধানথাকেকয়েকগুণ।চল্লিশপঞ্চাশেরদশকেআমেরিকারজিডিপি৪০থেকে৫০শতাংশআসতপণ্যসামগ্রীবিক্রিথেকে।তাদেরমেনুফ্যাকচারিংখাতসেরামানেরপণ্যতৈরিকরত।কিন্তুপরেতারাজাপানেরকাছেএইপ্রতিযোগিতামূলকসুবিধাহারায়।তাদেরজিডিপিতেমেনুফ্যাকচারিংখাতেরঅবদান১০শতাংশেরওনিচেনেমেএসেছে।অনেকস্বল্পোন্নতদেশেওএরঅবদানআরোবেশি।জাপানচীনদুটোরইউদ্ভাবনীমেধাকঠোরপরিশ্রমীজনবলরয়েছে।দুটিদেশেরকাছেইপরিশ্রমকরাহচ্ছেধর্মীয়অনুশীলনেরমতো।দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধেহেরেজাপানযুদ্ধসরঞ্জামতৈরিথেকেমনোযোগসরিয়েগৃহসামগ্রীতৈরিরদিকেমনোযোগীহয়।১৯৭০এরদশকনাগাদআমেরিকাকেতারাক্ষেত্রেপ্রতিযোগিতামূলকসুবিধায়অনেকপেছনেফেলেদেয়।একইভাবে১৯৯০এরদশকেরপরথেকেচীনেরউত্থানশুরুহয়।একেবলবপ্যারাডাইমচেঞ্জ।

একটিজাতিকিভাবেছোটথেকেবড়হয়।সেইশিক্ষাজাপানচীনেরকাছথেকেআমাদেরনেয়াউচিত।অস্ত্রকেনাএবংসামরিকবাহিনীরপেছনেবিপুলঅঙ্কেরঅর্থব্যয়নাকরেদেশেরসত্যিকারেরউন্নয়নেরজন্যআমাদেরউচিতপ্রশিক্ষিতজনবলতৈরিরপেছনেঅর্থব্যয়করা।আমাদেরবিশালজনগোষ্ঠীআসলেএকটিবিশালসম্পদ।এটাকেলালনকরাউচিত।জাপানচীনেরমতোদেশগুলোমানবসম্পদউন্নয়নেবিনিয়োগকরেছে।ফলেআজতাদেরএইপরিবর্তন।এখনআমেরিকারবেশিরভাগব্র্যান্ডেরপণ্যসামগ্রীতৈরিকরাহয়চীনে।কারণতারাদেখেছেন, চীনেশ্রমিকদেরমানখারাপনয়।অনেকসস্তায়সেখানেভালোমানেরপণ্যতৈরিকরাযাচ্ছে।বিশ্বেরএইপরিবর্তনগুলোমাত্র৭০বছরেরমধ্যেঘটেছে।গত৩০বছরেরমধ্যেআমেরিকাতারপ্রতিযোগিতামূলকসুবিধাহারিয়েফেলেছে।

কিন্তুএকটিক্ষেত্রেআমেরিকাসুবিধাধরেরেখেছেসেটিহলোউদ্ভাবন।সারাবিশ্বথেকেনানাভাবেপ্রলুব্ধকরেমেধাবীমানুষদেরতারানিয়েগেছে।আমেরিকাখুবইকসমোপলিটনএকটিসোসাইটি।সেখানেযদিছয়মিলিয়নমুসলমানথাকে, তাহলেদেখাযাবেদুইমিলিয়নইপিএইচডিডিগ্রিধারী।১০হাজারইহুদিথাকলেতাদের১০হাজারইডক্টরেট।বিশ্বেরআরকোনোদেশেএটানেই।আমেরিকানরাএখনোউদ্ভাবনআবিষ্কারেরক্ষেত্রেএগিয়েআছে।এটাকারণেনয়যে, সাদাচামড়ারমানুষমেধাবী, আরঅন্যরামেধাহীন।তারামেধাপাচারকরেনিয়েযাওয়ারকারণেইএটাহয়েছে।এইউদ্ভাবনেরকারণেতারাযুদ্ধশিল্পেসবাইকেছাড়িয়েযেতেপেরেছে।তাদেরটিকেথাকলেহলেযুদ্ধবাধিয়েইটিকেথাকতেহবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতাচেয়ারম্যান, সোস্যালইসলামীব্যাংকলিমিটেড; সাবেকমুখ্যঅর্থনীতিবিদ, ইসলামীউন্নয়নব্যাংক, জেদ্দা

জরিপ বলছে অধিকাংশ নারী যৌনতায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন অথচ ইসলাম কি বলে

প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৮, ২০১৯, ১২:১৭ অপরাহ্ণ

রাশিদ রিয়াজ : ইদানিং যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং এক্ষেত্রে ভিকটিমদের ক্ষেত্রে যারা কাউন্সিলিং করেন তারা বলছেন অসম্মতিতে যৌনতার সময় নারীরা মারাত্মক ভীতিকর অবস্থায় পড়েন। কারণ এধরনের যৌনতার ক্ষেত্রে শুধু নির্যাতন নয়, অস্বাভাবিক শারীরিক ধকল সইতে হয় নারীকে। পশ্চিমা বিশ্বে ইদানিং ‘রাফ সেক্স’ মারত্মক এক সামাজিক সংকট তৈরি করেছে। যৌনতার সময় পাষণ্ডের মত আচরণ রীতিমত নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বলে অনেক নারীর জন্যে তা মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হচ্ছে। সেক্সডল, বিভিন্ন ধরনের সেক্সটয়ের ব্যবহার মানুষকে রোবটের মত যান্ত্রিকভাবে এতটাই অমানবিক আচরণ করতে বাধ্য করছে যে নারীর পক্ষে এর ধকল সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ইসলামে পুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ইসলামে যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেয়া হয়নি।

সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তা অবশ্যই বুঝবেন। এবং নিজেদের যৌনাচরণকে এমন পশুত্বের পর্যায়ে নামাবেন না যাতে তা প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দি আটলান্টিক নামে মার্কিন একটি ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্ন ছবিতে অভিনয়ের সময় একই ধরনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নারীকে। এধরনের পাশবিকতা যৌনতায় অতিরিক্ত পরিমানে বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে ভীতি প্রবল হয়ে উঠছে। পর্ন ইসলাম তো বটেই আমার জানা নেই অন্য কোনো ধর্ম একে স্বীকৃতি দেয় কি না। বরং পর্ন কখনোই স্বাভাবিক যৌনতা যে নয় তা এখন প্রমাণিত। একই সঙ্গে এধরনের যৌনতা পুরুষের মধ্যেও অস্বস্তি ও বিভ্রান্তিকর বার্তা দেয়। ধর্ষণের মত ঘটনা বেড়ে যাওয়া এবং এধরনের সংকটও সামাজিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে অসম্মতিতে এধরনের রুক্ষ যৌনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সম্মতির কোনো প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে না। আর যতুটুক সম্মতিও আদায় করা হয় তা অনেকটাই জোরপূর্বক বা অর্থের বিনিময়ে হওয়ায় ভুক্তভোগী নারীর আর কিছুই করার থাকছে না। সমীক্ষায় এক চতুর্থাংশ মার্কিন নারী অকপটে স্বীকার করেছেন তারা যৌনতার সময় ভীতিকর অবস্থায় পড়েন।

পুরুষতান্ত্রিকসমাজেঅনেকেবুঝাতেচানযেনারীদেরযৌনচাহিদারকোনমূল্যনাই, বরংএইব্যাপারেপুরুর্ষঅর্থনীতি, সমাজতারআচরণেরচালিকাশক্তিহিসেবেনারীরওপরযৌনতারনামেবর্বরআচরণকরেইক্ষান্তনয়এরনানাবিধউপকরণশিল্পরুপেপণ্যরুপেবাজারেছাড়ছে।ব্যাপারটাএমনযেপুরুষকেযৌনতায়একতরফাঅধিকারদেওয়াহয়েছে, পুরুষযখনইচ্ছাতখনযৌনচাহিদাপূরণকরবেআরনারীতারচাহিদামাফিকচাহিবামাত্রতাপূরণেরজন্যসদাপ্রস্তুতবাধ্যথাকবে।এইধারণারপিছনেকুরআনেরআয়াতএবংহাদিসেরঅসম্পূর্ণপাঠেরবিশালভূমিকারয়েছে।বস্তুতকুরআনেরকিছুআয়াতবাকিছুহাদিসদেখেকোনবিষয়সম্পর্কেইসলামেরশিক্ষাকেপুরোপুরিউপলব্ধিকরাসম্ভবনয়, বরংতাঅনেকক্ষেত্রেইপাঠককেবিভ্রান্তকরতেপারে।কোনবিষয়সম্পর্কেইসলামেরশিক্ষাকেসঠিকভাবেউপলদ্ধিকরতেহলেসেইসংক্রান্তকুরআনেরসবগুলোআয়াতএবংসবগুলোহাদিসকেসামনেরাখতেহবে।মনেরাখবেনইসলামেনারীদেরযৌনচাহিদারঅবশ্যইস্বীকৃতিআছে।

সূরাবাকারার২২৩নম্বরআয়াতেবলাহয়েছে
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ
তোমাদেরস্ত্রীরাহলোতোমাদেরজন্যশস্যক্ষেত্র।অতএবতোমরাতোমাদেরশস্যক্ষেত্রেযেভাবেইচ্ছাগমনকর।

তারমানেকোনোবিচক্ষণ, বুদ্ধিমানকৃষকতারশস্যক্ষেত্রেভুলভাবেব্যবহারকরতেপারেনা।শস্যক্ষেত্রেরপ্রয়োজনমাফিকযত্ননিবিড়পরিচর্যাকরতেবাধ্যসে।তানাহলেআশানুরুপফসলফলবেনাতারশস্যক্ষেত্রে।এক্ষেত্রেনারীরশারীরিকদিকটিকতইনাগুরুত্বদেয়াহয়েছেআয়াতে।অথচহঠাৎকরেএইআয়াতকারোসামনেপেশকরাহলেমনেহতেপারেযেএখানেপুরুষকেযখনইচ্ছাতখনতারস্ত্রীরসাথেযৌনাচারঅবাধঅনুমতিদেওয়াহচ্ছেএমনকিস্ত্রীরসুবিধাঅসুবিধারদিকেওতাকানোরকোনপ্রয়োজনযেননেই।যারাএইধরনেরধারণারপ্রচারণাচালানতারাসাধারণতএইআয়াতটিউল্লেখকরারপরতাদেরধারণারসমর্থনেকিছুহাদিসওউল্লেখকরেন, যেমনকোনস্ত্রীযদিতারস্বামীরবিছানাপরিহারকরেরাতকাটায়তবেফেরেশতারাসকালপর্যন্ততাকেঅভিশাপদিতেথাকে। (মুসলিম, হাদিসেরইংরেজিঅনুবাদ৩৩৬৬)

উপরেউল্লেখিতকুরআনেরআয়াতাএবংএইধরনেরকিছুহাদিসপেশকরেঅনেকইএটাদেখাতেচানইসলামকেবলপুরুষেরযৌনঅধিকারকেপ্রতিষ্ঠাকরেছেএবংনারীকেযৌনযন্ত্রহিসেবেযখনতখনযাচ্ছেতাইহিসেবেব্যবহারেরফ্রিলাইসেন্সদিয়েরেখেছে।সোজাকথায়ইসলামেযৌনঅধিকারযেনএকতরফাভাবেপুরুষের! আসলেইবিষয়টিমোটেইতানয়।

কুসংস্কারেরমূলোচ্ছেদকারিকুরআনের:২২৩আয়াতএক্ষেত্রেবিভ্রান্তিরনিরসনঘটিয়েদেয়।

মদিনারইহুদিদেরমধ্যেএকটাকুসংস্কারছিল, কেউযদিতারস্ত্রীরসাথেপেছনদিকথেকেযোনিপথেসঙ্গমকরততবেবিশ্বাসকরাহতোযেএরফলেট্যারাচোখবিশিষ্টসন্তানেরজন্মহবে।মদিনারআনসাররাইসলামপূর্বযুগেইহুদিদেরদ্বারাযথেষ্টপ্রভাবিতছিল।ফলেআনসারগণওএইকুসংস্কারেআচ্ছন্নছিলেন।মক্কাবাসিদেরভেতরএইকুসংস্কারছিলনা।মক্কারমুহাজিররাহিজরতকরেমদিনায়আসারপর, জনৈকমুহাজিরযখনতারআনসারস্ত্রীরসাথেপেছনদিকথেকেসঙ্গমকরতেগেলেন, তখনএকবিপত্তিদেখাদিল।আনসারস্ত্রীএইপদ্ধতিকেভুলমনেকরেজানিয়েদিলেনরাসূলুল্লাহ (সা🙂 এরঅনুমতিব্যতিতএইকাজতিনিকিছুতেইকরবেননা।ফলেঘটনাটিরাসূলুল্লাহ (সা🙂 পর্যন্তপৌঁছেগেল।প্রসঙ্গেইকুরআনেরআয়াত (:২২৩) নাযিলহয়, যেখানেবুঝানোহচ্ছেসামনেবাপেছনেযেদিকদিয়েইযোনিপথেগমনকরাহোকনাকেন, তাতেকোনসমস্যানেই।শস্যক্ষেত্রেযেদিকদিয়েবাযেভাবেইগমনকরাহোকনাকেনতাতেশস্যউৎপাদনেযেমনকোনসমস্যাহয়না, তেমনিস্বামীতারস্ত্রীরযোনিপথেযেদিকদিয়েইগমনকরুকনাকেনতাতেসন্তানউৎপাদনেকোনসমস্যাহয়নাএবংএরসাথেট্যারাচোখবিশিষ্টসন্তানহবারকোনসম্পর্কনেই।আরোবিস্তারিতজানারজন্যেআমাদেরজন্যেঅনেকতাফসিররয়েছে।

এইআয়াতেরউদ্দেশ্যইহুদিদেরপ্রচারিতএকটিকুসংস্কারদূরকরা।স্ত্রীরসুবিধাঅসুবিধারপ্রতিলক্ষ্যনারেখেযখনতখনঅবাধযৌনাচারেরঅনুমোদননয়।যারামনেকরেনকুরআনেইহুদিখ্রিস্টানদেরকিতাবথেকেধারকরাহয়েছেবামুহাম্মাদ (সা🙂 ) ইহুদিখৃষ্টানদেরথেকেশুনেশুনেকুরআনরচনাকরেছেন, এইআয়াততাদেরজন্যবেশঅস্বস্তিকরবটে! প্রকৃতমুক্তচিন্তারমানুষবরংএইআয়াতেরপ্রশংসাকরেথাকেন।

ফেরেশতাদেরঅভিশাপনিয়েহাদিসটিরবিশ্লেষণ

ফেরেশতাদেরঅভিশাপকরানিয়েহাদিসটাবুখারিতেওএসেছেআরেকটুপূর্ণরুপে

যদিকোনস্বামীতারস্ত্রীকেবিছানায়ডাকে (যেমনসঙ্গমকরারজন্য), আরসেপ্রত্যাখানকরেতাকেরাগান্বিতঅবস্থায়ঘুমাতেবাধ্যকরে, ফেরেশতারাসকালপর্যন্ততাকেঅভিশাপকরতেথাকে। [বুখারি, ইংরেজিঅনুবাদভলি/বুক৫৪/৪৬০]

লক্ষ্যকরলেদেখবেনযে, স্ত্রীস্বামীরডাকেসাড়ানাদেওয়ায়স্বামীরাগান্বিতহয়েকীকরছে? স্ত্রীরওপরজোরজবরদস্তিকরেনিজেরযৌনঅধিকারআদায়করেনিচ্ছে? নাকিঘুমিয়েপড়েছে?

এইহাদিসেনারীরস্বামীরডাকেসাড়ানাদেওয়ারকারণেস্ত্রীরসমালোচনাকরাহলেওপুরুষকেকিন্তুজোরজবরদস্তিকরেনিজঅধিকারআদায়েউৎসাহিতকরাহচ্ছেনা।আবারস্ত্রীযদিঅসুস্থতাবাঅন্যকোনসঙ্গতকারণেযৌনাচারহতেবিরতথাকতেচান, তবেতিনিকিছুতেইএইসমালোচনারযোগ্যহবেননা, কেননাইসলামেরএকটিসর্বস্বীকৃতনীতিহচ্ছে: আল্লাহকারোওপরতারসাধ্যেরঅতিরিক্তবোঝাচাপাননা।

আল্লাহকাউকেতারসাধ্যাতীতকোনকাজেরভারদেননা [:২৮৬]

আমিকাউকেতারসাধ্যাতীতদায়িত্বঅর্পনকরিনা। [২৩:৬২]

আসলেইসলামনারীপুরুষউভয়কেইসতর্ককরেছে।

ইসলামস্ত্রীদেরকেস্বামীরযৌনচাহিদারব্যাপারেসতর্কথাকতেবলেছে, কিন্তুস্বামীকেনিজচাহিদাআদায়েরব্যাপারেউগ্রহবারকোনঅনুমতিযেমনদেয়নিতেমনিস্বামীকেওস্ত্রীরযৌনচাহিদারপ্রতিযত্মবানহবারনির্দেশদিয়েছে।ইসলামস্ত্রীকেবলেছেযদিরান্নারতঅবস্থায়ওস্বামীযৌনপ্রয়োজনেডাকেতবেসেযেনসাড়াদেয়, অন্যদিকেপুরুষকেবলেছেসেযেনতারস্ত্রীরসাথেভালোআচরণকরে, স্ত্রীরকাছেসেতারআচরণেভালোহতেনাপারলেকিছুতেইপূর্ণঈমানদারবাভালোলোকহতেপারবেনা।এইকথাজানারপরওকোনপুরুষকিস্ত্রীরসুবিধারপ্রতিকোনরূপলক্ষ্যনারেখেইযখনতখনতাকেযৌনপ্রয়োজনেডাকবে? ইসলামপুরুষকেএব্যাপারেওসাবধানকরেদিয়েছেযেনিজেরযৌনচাহিদাপূরণকরতেগিয়েস্ত্রীরযৌনচাহিদারকথাকেসেযেনভুলেনাযায়।

আসলেএকশ্রেণীরপুরুষনিজেধর্ষকামী, যান্ত্রিকমনোভাবথেকেযৌনতাকেশুধুমাত্রভোগেরবস্তুহিসেবেদেখতেযেয়েনারীরওপরএমনঅসংযত, অন্যায়ভাবেপাশবিকআচরণকরছে।বিশেষকরেযৌনতারসময়সংবেদনকেতীব্রকরতেনারীকেচড়মারা, শরীরেআঘাতকরা, থুথুছিটানো, জান্তবআচরণআনন্দকেদূরেঠেলেদিচ্ছে।অনেকেরধারণাযৌনতায়এধরনেররুক্ষআচরণতাকেআরোঅধিকমাত্রায়উত্তেজককামুককরেতোলে।কিন্তুসীমাছাড়িয়েযাওয়ারকারণেতাএকধরনেরমানসিকবৈকল্যেরদিকেনারীকেনিয়েযাচ্ছে।যৌনতাসম্পর্কেসঠিকরুচিআগ্রহনারীহারিয়েফেলছে।এটিতারজন্যেরীতিমতভয়েরকারণহয়েদাঁড়াচ্ছে।আরপুরুষযৌনতায়এধরনেরআচরণতারপক্ষথেকেসম্ভবহচ্ছেবিভ্রান্তহওয়ারকারণে, পর্নগ্রাফিদেখেবাতারযৌনচিন্তায়বৈকল্যঘটেবাতথাকথিতরোবটিকসেক্সঅপসংস্কৃতিনিজেরভালবাসারমানুষবাঅন্যকারোওপরেপ্রয়োগকরেসেতারধর্ষকামীমনোভাবেরচূড়ান্তবহিঃপ্রকাশঘটায়।ফলেযৌনতারএধরনেরঅপব্যবহারসম্পর্কেউৎসাহসূচককোনোসম্মতিথাকছেনাবাএরকোনোপ্রয়োজনওমনেকরাহয়না।অনুমতিনেয়াছাড়ানারীরওপরএধরনেরআচরণকরারক্ষেত্রেধরেইনেয়াহচ্ছেএমনজান্তবআচরণেসেসন্তষ্টথাকছে।আদতেতানারীরকাছেঅপ্রত্যাশিতএবংতারকাছেযৌনতাসম্পর্কেনেতিবাচকঅনুভূতিতৈরিকরছে।এবংএকধরনেরভীতিতাকেতাড়াকরেফিরছে।

যৌনবিশারদরাবলছেন, সবচেয়েভালজিনিসহচ্ছেসঙ্গীরসঙ্গেতারসঙ্গেকিকরাহবেসেবিষয়েকথাবলা, আনন্দেরসঙ্গেভীতিহীনভাবেসেতাগ্রহণকরছেকিনাতাযাচাইকরেনেয়াতানাহলেএমনঅপ্রত্যাশিতআচরণপারস্পরিকসম্পর্কথেকেযোজনযোজনদূরেঠেলেদিতেপারে।কারণএধরনেরআচরণেরসময়নারীরাজানেওনাকিভাবেসাড়াদিতেহবে, ফলেবিষয়টিএকতরফাজান্তববিরক্তিকরমুহুর্তেরসমষ্টিতেপরিণতহয়।তারমনমানসপুরোপুরিএধরনেরআচরণেবিরুদ্ধেঅবস্থাননেয়।বরংএটাইভালতাকেজিজ্ঞেসকরা, কিসেপছন্দকরে, রাজিকিনাএবংতাহলেসম্মতিরসঙ্গেপাল্টাসহযোগিতারদরজাখুলেযেতেপারে।কারণযৌনতারপূর্বশর্তইহচ্ছেউভয়ইএতেপ্রশান্তিলাভকরবেন, পারস্পরিকবোঝাপড়ারমধ্যেদিয়েঅভিজ্ঞতাসঞ্চয়করবেন।এজন্যেসঙ্গীরমনেরভাবজানাতারঅধিকারএবংতাতেসদয়সম্মতিসন্মানজনকআচরণএকান্তইপ্রয়োজন।

Gf

মনিষা gfdm gcJb nfkjgNDvfW gfdY

বিপদ বেশি, সহায় কম

কথায় বলে, ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।আমাদের জীবনে বিপদ আছে পদে পদে; কিন্তু বিপদের বন্ধু কি আছে? দেশের কোনো নাগরিক বিপদে পড়লে সাহায্য চাইবে রাষ্ট্রের কাছে; রাষ্ট্রই ব্যবস্থা রাখবে উদ্ধারেরএটাই তো স্বাভাবিক। সে ব্যবস্থা আছেও। কিন্তু কতটা কার্যকর? দেশের মানুষ কি বিপদে পড়লে রাষ্ট্রযন্ত্রের শরণাপন্ন হয়? সাহায্য পায়? পেলেও কতটা? কোনো পরিসংখ্যান আছে কি না জানা নেই। কালের কণ্ঠ চেষ্টা করেছে নিজস্ব আয়োজনে দেশব্যাপী জরিপ অনুসন্ধান চালিয়ে এবিষয়ক তথ্যউপাত্ত বের করার। এর ভিত্তিতে যে ধারণাচিত্র পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো

ঘটনাটা বগুড়ায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যান, আহত মা হন চিরতরে পঙ্গু। অসহায় দুই বোন তখন হাই স্কুলে পড়ে। মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয় অনেক টাকা। যৌথ পরিবারে চাচারা দুই বোনের পড়ালেখা আর চালাতে চান না। জানান, যৌথ সম্পত্তিতে তাদের বাবার যে অংশ ছিল, তা এরই মধ্যে তাদের মায়ের চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে গেছে। তাদের আর কিছু নেই। কিন্তু যেকোনো মূল্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়ে অসুস্থ মাকে নানার আশ্রয়ে রেখে একপর্যায়ে বগুড়ার জলেশ্বরীতলার বাড়ি ছাড়ে দুই বোন। ঢাকায় এসে দূরসম্পর্কের এক চাচার বাসায় ওঠে, যিনি ঢাকায় এলে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এক রাতে সেই বাসায় ধর্ষণের শিকার হয় বড় বোন। পরদিনই সেই বাসা ছেড়ে গার্মেন্টকর্মীদের একটা মেসে ওঠে দুই বোন। বড় বোন খিলগাঁওয়ের একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন, ছোট বোন কলেজে ভর্তি হন। ধর্ষিত হওয়ার মতো বিপদে পড়েও আইনের আশ্রয় নেননি মেয়েটি।

২. রাজধানীর বাড্ডা এলাকার মাদানী সড়কে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করতেন ৬০ বছর বয়সী এক নারী। গত বছর একদিন জায়গাটির ওপর কুনজর পড়ে এলাকার এক উঠতি মাস্তানের, যে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। প্রথমে চাঁদা দাবি, তারপর উচ্ছেদের জন্য নানা অত্যাচার। তার পরও বৃদ্ধা জায়গাটি না ছাড়লে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ইয়াবা বিক্রির ধুয়া তুলে দলবল নিয়ে হামলা চালায়, বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে সব কিছু ভেঙে দিয়ে চলে যায়।

বিপদগ্রস্ত এই নারীও কারো কাছে উদ্ধার পেতে যাননি।

৩. একটি ওষুধ কম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি সারা দিন কাজ শেষে বাসায় ফিরতে রাত ১২টা বেজে যায়। গত জানুয়ারিতে এক রাতে খিলগাঁওয়ে তাঁর মহল্লার নিরাপত্তা গেট বন্ধ হয়ে গেছে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকার জন্য মোটরসাইকেলের হর্ন বাজাতে থাকলে এক অপরিচিত যুবক এসে ধমক লাগায়, ‘দেখছেন না, আমরা লিডারের সঙ্গে কথা বলছি। আপনি বাইক স্টার্ট রেখে আবার হর্ন বাজাচ্ছেন!’ কথা বলতে বলতেই যুবকটি বাইক বন্ধ করে চাবি নিয়ে চলে যায়। তারপর অনেক ঘটনা। সেই লিডার, যিনি একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক, তাঁর কাছে মাফ চেয়ে, ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে দুই দিন পর বাইকটি ফেরত পাওয়া যায়। এই অপমান, হয়রানি ও অর্থদণ্ডের পরও ওই বিক্রয় প্রতিনিধি কারো কাছে বিচার চাওয়ার চিন্তাও করেননি।

এই ঘটনাগুলো কালের কণ্ঠ থেকে একটি জরিপ অনুসন্ধান পরিচালনাকালে পাওয়া অনেক ঘটনার কয়েকটি মাত্র। ‘আকস্মিক সমস্যায়/বিপদে পড়ে মানুষ প্রথম কার কাছে সাহায্য চায় : বিচারের জন্য কার কাছে যায়’—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই জরিপ অনুসন্ধানটি চালানো হয়। এতে যে তথ্যগুলো প্রকট হয়ে উঠে এসেছে, তা হলো—আকস্মিক সমস্যা/বিপদে পড়ার আশঙ্কায় থাকেন দেশের ৮০.২ শতাংশ মানুষ; আর নিজেরা বিপদে পড়েছেন বলে তথ্য দিয়েছেন ৬০.৭ শতাংশ মানুষ। বিপদে পড়ে সাহায্য পেতে প্রথম কার কাছে যান, সে প্রশ্নে পাওয়া গেছে—২২.৭ শতাংশ মানুষ সাহায্যের জন্য প্রথম যান জনপ্রতিনিধির কাছে; ১৭.৮ শতাংশ যান সমাজের মুরব্বিদের কাছে; ১৩.৬ শতাংশ যান পুলিশের কাছে। বাকি ৪৫.৯ শতাংশ মানুষ অন্যান্য সহায়কের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন (ছক দেখুন)। জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা হলো—বিপদে পড়েও সহজে উদ্ধার বা সাহায্য পাননি ৬১.৮ শতাংশ মানুষ।

জরিপে যে চিত্রটি আরো আশঙ্কাজনক বলে উঠে এসেছে, সেটি হলো—দেশের নাগরিকদের বিপদ-আপদে ভরসাস্থল হিসেবে রাষ্ট্র যে প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, সেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রথম সাহায্যের জন্য যান না ৮৬.৪ শতাংশ মানুষ, কারণ পুলিশের প্রতি আস্থা নেই তাঁদের অথচ এখনো ৪০.১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কাঙ্ক্ষিত সাহায্যটি পুলিশের কাছ থেকেই পাওয়া উচিত। অবশ্য তথ্য প্রদানকারীদের একটি অংশ তাঁদের ঘটনা পুলিশ-সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় পুলিশের কাছে যাননি বলে জানিয়েছেন। 

জনপ্রতিনিধি, মুরব্বি বা অন্যদের কাছে সাহায্য চাওয়ার পরও যাঁরা সমাধান পাননি, তাঁরা দ্বিতীয় চেষ্টা হিসেবেও পুলিশের সহযোগিতা চান না। দ্বিতীয় পদক্ষেপে পুলিশের সহায়তা চান মাত্র ১১.৯ শতাংশ। আবার যাঁরা পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাহায্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি টিআইবি পরিচালিত এক জরিপে পুলিশের কাছে মানুষের সাহায্য চাওয়ার হার আরো কম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন— বিশিষ্ট গবেষক আফসান চৌধুরী।

অন্যদিকে কোনো অন্যায়-অবিচারের শিকার হলে ন্যায়বিচার পেতে মানুষ সবচেয়ে বেশি যান গ্রাম/গোষ্ঠীর মুরব্বিদের কাছে—৪৬.১ শতাংশ। এর পরই থানা পুলিশের কাছে যান ২১.১ শতাংশ; সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চান ১৪.৭ শতাংশ আর গ্রাম আদালতে যান ৮.৭ শতাংশ। আদালত তথা জজকোর্ট-হাইকোর্টে ন্যায়বিচারের জন্য যান মাত্র ৬.৮ শতাংশ মানুষ।

জরিপ অনুসন্ধানে ন্যায়বিচার পেতে কী করা উচিত—এই প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি—৪৮.৬ শতাংশ মানুষ চেয়েছেন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। এরপরই ২২ শতাংশ মানুষ ভরসা চেয়েছেন স্বাধীন ও উপযুক্ত বিচারব্যবস্থায়।

দেশের ৯৬৮ জন মানুষের সরাসরি সাক্ষাৎকারে দেওয়া তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে এই ধারণা পাওয়া গেছে। গত প্রায় দুই মাস ধরে কালের কণ্ঠ’র সারা দেশের ৫৯ জন প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি এই জরিপকাজে অংশ নেন। ব্যক্তিপর্যায়ের তথ্য কখনো প্রকাশ করা হবে না—প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে ঘটনা-সংশ্লিষ্টদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।

বিপদে পড়ে এবং ন্যায়বিচার পেতে কেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুলিশ প্রশাসন কিংবা আইন-আদালতের আশ্রয় নেন না মানুষ, তার কারণ অনুসন্ধানও ছিল আমাদের জরিপের বিষয়। বগুড়ার যে ঘটনাটি শুরুতেই বলা হয়েছে, সেই নারী গার্মেন্টকর্মী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বেঁচে থাকাটাই আমাদের সংগ্রাম। পুলিশের কাছে গেলে যে টাকা লাগবে, তা তো ছিল না। আর পুলিশ যে ব্যবস্থা নেবে তারই বা নিশ্চয়তা কী? তার চেয়ে নিজের দুঃখ নিজের মধ্যেই থাক।’

পিঠা বিক্রেতা নারীর বক্তব্য—‘যারা মাস্তানি করল, তারাই তো থানা পুলিশের লোক। আমরা গেলে কি পুলিশ আমাদের কথা শুনত?’

আর ওষুধ কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির বক্তব্য—‘পুলিশই তো ওদের পোষে। না হলে তারা এত সাহস পায় কোথায়? পুলিশের কাছে গেলে আরো বেশি ঝামেলা হতে পারে, তাই যাইনি।’

এ বিষয়ে জরিপের তথ্য কী বলছে? বিপদে পড়েও পুলিশের সহায়তা না চাওয়ার কারণ হিসেবে ২৬ শতাংশ বলেছেন আস্থা নেই। হয়রানির ভয়ের কথা বলেছেন ২৫.২ শতাংশ। প্রয়োজন পড়েনি বলেছেন ২৪.১ শতাংশ। ঘুষের ভয়ের কথা বলেছেন ১৪.৬ শতাংশ। মাধ্যম বা দালাল না থাকার কথা বলেছেন ১০ শতাংশ। আর ন্যায়বিচার পেতে আইনের আশ্রয় কেন নিতে চান না মানুষ, সে বিষয়ে অনেকে খোলাসা করে কিছু বলতে না চাওয়ায় জরিপে সংখ্যাগত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এ বিষয়ে বিশিষ্ট গবেষক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘সার্বিকভাবে আমাদের বিচারব্যবস্থার সামাজিক বিশ্লেষণ করলে তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একটা হলো দীর্ঘসূত্রতা; আরেকটি ব্যয়বহুলতা; অন্যটা ফলাফলের অনিশ্চয়তা। এসব কারণে মানুষ আইন-আদালতে না গিয়ে সামাজিক ব্যবস্থা তথা সালিসি ব্যবস্থাকেই প্রাধান্য দেয়। সালিসি ব্যবস্থায় ব্যয় কম, ফলাফলটাও নিশ্চিত।

ওদিকে বিপদে পড়েও পুলিশের কাছে না যাওয়ার বিষয়টিকে পুলিশের প্রতি আস্থাহীনতার প্রকাশ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের প্রশ্ন, নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের, তাদের ওপরই যদি আস্থা না থাকে তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?

নাগরিক আন্দোলনের নেতা, বিশিষ্ট গবেষক-বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদের মতে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হওয়ার কারণেই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রাষ্ট্রের হয়ে, জনগণের হয়ে কাজ করার বদলে সরকারি দলের সহযোগী হয়ে কাজ করছে। এ কারণে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি খুবই গুরুতর। আরো দুটি কারণ আছে। প্রথমত—আইনি জটিলতা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পুলিশের জেরার মুখে নিজের ক্ষতির প্রমাণ কিভাবে দেবে, তা নিয়ে ভীতির মধ্যে থাকে। আরো যদি বিপদগ্রস্ত হতে হয়, তাঁকেই যদি ফাঁসিয়ে দেয় পুলিশ—এই ভয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত—পুলিশেরই একটা শ্রেণি বিপদগ্রস্তকে সাহায্য না করে তার কাছ থেকে উল্টো সুবিধা আদায় করতে চায়; নিজেরাও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ফলে উপকার পাওয়ার চেয়ে আরো বেশি ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ের মধ্যে থাকে বিপদগ্রস্তরা।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, ‘সার্বিকভাবে বিষয়টি খুবই অস্বস্তিকর। বিপদে সহায়তা পাওয়া, নিরাপত্তা পাওয়া মানুষের নাগরিক অধিকার। কিছু বিপদ হয়তো আকস্মিক ঘটে যাচ্ছে, আবার কিছু বিপদ আছে পরিবেশগত—মাস্তানতন্ত্র, ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়, যা বিপদ তৈরি করে। যে পরিবেশ বিপদ তৈরি করে সেখানে মানুষ পুলিশকে বিপদ তৈরির সহায়ক মনে করছে অথবা পুলিশকে অসহায় মনে করছে। ভাবছে, এরা হয়তো জিম্মি, কিছুই করতে পারবে না। সে কারণে পুলিশের কাছে যেতে আস্থা পাচ্ছেন না। এমন না যে, পুলিশের কারিগরি দক্ষতার ঘাটতি আছে। আবার পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলোও জনবান্ধব নয়। একজন নারী বিপদে পড়লে যে পুলিশের আশ্রয় নেবেন, থানাগুলো তো অতটা নারীবান্ধব নয়। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেও মানুষ উৎসাহবোধ করে না। আরেকটা হচ্ছে—সেবার মানসিকতার ঘাটতি। ওখানে গিয়ে ফলাফল পাওয়া সম্পর্কেও আস্থাহীনতা আছে। কিন্তু পুলিশের সেবার চাহিদাটা মানুষের কাছে প্রকট আকারে আছে।’

পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। এই আস্থা ফিরিয়ে আনার করণীয় সম্পর্কে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব প্রথমত পুলিশ বিভাগকেই নিতে হবে। পুলিশের মনোভাবগত পরিবর্তন আনতে হবে। বিপদগ্রস্তকে আরো বিপদে ফেললে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত—রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। হয়রানি যাতে না করতে পারে তার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। পুলিশ হয়রানি করলে, কোনো অপরাধে জড়ালে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাটা অত্যন্ত জরুরি। বিপদ সৃষ্টির পরিবেশগত কারণটা সার্বিক সুশাসনের বিষয়। আইনের শাসন কতটা জোরদার, তার প্রতিফলন থাকতে হয়। পুলিশ যে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নয়, সহায়ক নয়—এ বিষয়টি পুলিশেরই পরিষ্কার করা দরকার। পুলিশ যদি ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকে; সহায়ক হয়ে যায়; ক্ষমতাবলয়ের সঙ্গে জড়িয়ে যায়; অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, তাহলে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়। সবাই হয়তো নয়, কিন্তু এই জায়গায় একটা সংস্কার দরকার। দুই নম্বর হচ্ছে—পুলিশি প্রক্রিয়াগত জটিলতা, ব্যয়বহুলতা দূর করে নিরাপত্তা সেবাটাকে জনবান্ধব, নারীবান্ধব করার ক্ষেত্রে অনেক সংস্কারের প্রয়োজন আছে। নাগরিকদের নিজেদের সচেতনতাও জরুরি। কখন কী করতে হবে, অনেকেই জানে না। নাগরিক সেবার ৯৯৯-কে আরো কার্যকর করাও জরুরি।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, পুলিশ চেষ্টা করছে মানুষের আস্থা অর্জনের। এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও তিনি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় নেই। শান্তিতে আছেন; নিরাপদে আছেন।

মন্তব্য

ছয় বছরে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে

দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধির কারণে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনেবলাহয়, দারিদ্র্যবিমোচনের৯০শতাংশইগ্রামেহয়েছে।শহরেদারিদ্র্যকমেছেসীমিতহারে।এছাড়াঅতিদারিদ্র্যজনগোষ্ঠীরমধ্যেশহরেরলোকেরসংখ্যাএকইরয়েগেছে।ফলেজাতীয়দারিদ্র্যবিমোচনেধীরগতি।জোরালোঅর্থনৈতিকপ্রবৃদ্ধিবাংলাদেশেরদারিদ্র্যকমাচ্ছে।তবেতুলনামূলককমগতিতে।

কৃষিনয়, গ্রামঅঞ্চলেদারিদ্র্যকমাতেশিল্পসেবাখাতঅবদানরেখেছে।আলোচ্যসময়কালেকৃষিপ্রবৃদ্ধিধীরছিলএবংসবচেয়েকমদারিদ্র্যবিমোচনেঅবদানরেখেছে।

শহরাঞ্চলেম্যানুফ্যাকচারিংবাউৎপাদনখাতবিশেষততৈরিপোশাকখাতদারিদ্র্যকমাতেশীর্ষস্থানীয়ভূমিকারেখেছে।এদিকে, উৎপাদনখাতেকর্মসংস্থানেরধীরগতিরকারণেসুবিধাপেতেপারতোএমনপরিবারঅংশচিহ্নিতহয়েছে।অন্যদিকে, সেবাখাতেআত্মকর্মসংস্থানেনিহতদেরমধ্যেদারিদ্র্যেরহারবেড়েছে।যানগরদারিদ্র্যকমানোরক্ষেত্রেবাধাসৃষ্টিকরেছে।

অনুষ্ঠানেপ্রধানঅতিথিছিলেনঅর্থমন্ত্রীমুস্তফাকামাল।তিনিবলেন, সরকারেরঅন্যতমশত্রুদারিদ্র্যতা।দারিদ্র্যবিমোচনেপ্রধানমন্ত্রীরনেতৃত্বেদেশসঠিকভাবেএগিয়েযাচ্ছে।২০৩০সালেরমধ্যেআমরাক্ষুধামুক্তদারিদ্র্যমুক্তবাংলাদেশগড়েতুলবো।সময়দরিদ্রমানুষখুঁজেপাওয়াযাবেনা।

মানবকণ্ঠ/এএম

নিউজ ডেস্ক : সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স ও হলি আর্টিজানের পর জোরালো পদক্ষেপ নেয়ায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ৬ ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। ভোরের কাগজ

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এন্ড পিস প্রকাশিত গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স বা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে (আইইপি) ৮২ দেশের মধ্যে এখন ৩১তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তুলনামূলক সন্ত্রাসী তৎপরতা কমে আসে। গত বছর বাংলাদেশে মোট ৩১টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, যাতে প্রাণ হারান ৭ জন। ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা কমে প্রায় ৭০ শতাংশ।

এতে বলা হয়, হলি আর্টিজান হামলার পর ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হয়েছিলো। হলি আর্টিজানের হামলায় সাত জাপানি ও ইতালির নাগরিক নিহত হওয়ার পর প্রথম ছয় মাস বাণিজ্য খাতে সেই হামলার বেশ প্রভাব পড়েছিলো, যা দেশটিকে এক প্রান্তে ঠেলে দেয়।

হলি আর্টিজান হামলার ৩ বছরে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমনে নানা পদক্ষেপ নেয়। সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ দারুণভাবে লড়াই চালিয়েছে, যার ফলে সন্ত্রাসবাদের বৈশি^ক সূচকে দেশটির এমন উন্নতি।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে যে আটটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন বিশ^জুড়ে হামলা চালায় তার মধ্যে ৫টি ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোনো হামলা চালায়নি। তাদের মধ্যে বিশে^র সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটও (আইএস) রয়েছে।

বাংলাদেশের বিপরীতে সন্ত্রাসবাদের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা আফগানিস্তানে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাÐ ঘটে। প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে প্রথম স্থানে নাম রয়েছে আফগানিস্তানের। ২০০৮ সালে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলায় যে নিহতের সংখ্যা ছিল তা বিগত সময়ে বেড়েছে প্রায় ৬৩১ শতাংশ। বিশে^র প্রতি বিশটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে ১৬টিই হয় আফগানিস্তানে। এরপর ৭ হাজার ৩৭৯ মৃত্যু নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক। পরে নাইজেরিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান ও সোমালিয়ার অবস্থান। বৈশি^ক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ভারতের অবস্থান এখন সপ্তম।

ক্ষুধা সূচকে ভারতপাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, জনসংখ্যা দিনদিন বড়লেও কমছে কৃষিজমি। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলেছে। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে। ক্ষুধা সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন ৮৮তম অবস্থানে।

সোমবার সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব ক্ষুধা সুচক ২০১৯’এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিলের মহাপরিচালক ডা. শাহ নেওয়াজ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড’এর কান্ট্রি ডিরেক্টর একেএম মুসা, হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর উম্মে হাবিবা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডাইরেক্টর ডা. এসএম মোস্তফিজুর রহমান।

কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর সময়পযোগি পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে নয় এমডিজি’র লক্ষ্য প্রায় সবগুলো অর্জন করেছে। তাইতো বাংলাদেশ ১১৭টি দেশের মধ্যে ক্ষুধা সুচকে ৮৮তম হয়েছে, স্কোর ২৫.৮। যেখানে ২০০০ সালে ছিল ৩৬। এসকল দেশের মধ্যে ৪৭টি দেশের অবস্থা মারাত্মক। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। মোট স্কোর গতবারের ২৬.১ থেকে কমে হয়েছে ২৫.৮। তারপরও বাংলাদেশ বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে, কারণ অন্যদের উন্নতি ঘটছে আরও দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪, নেপাল ৭৩, মিয়ানমার ৬৯ এবং শ্রীলঙ্কা ৬৬তম অবস্থানে রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফলে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে উন্নতির দিকেই রয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু হ্রাসে ভালো করেছে এবং অন্যান্য সুচকে বাংলাদেশ ভালে করবেই। পুষ্টিহীনতা, শিশু খর্বাকার এবং শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে। অর্থনৈতিক বিকাশ, পিতামাতার শিক্ষায় এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাফল্যে, স্যানিটেশন এবং জনতাত্বিক উন্নয়নের ফলে দেশে খর্বাকার শিশু, শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য একটি চেইন, এখানে কৃষক ভোক্তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলো জড়িত।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুকিপুর্ণ দেশ হওয়া সত্তেও খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন লক্ষ্য আধুনিক কৃষি, বানিজ্যিক কৃষি এবং নিরাপদ কৃষি। সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার যে কোন মুল্যে তা করবে। শহরের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। কৃষি যান্ত্রকিকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার হাতে দেশ যত দিন আছে- এদেশ থেকে ক্ষুধা দারিদ্র দুর হবেই। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা।

প্রসঙ্গত. বিশ্বেরবিভিন্নদেশেরমধ্যেকোনটিরজনগণকতটাখাদ্যাভাবঅর্থাৎক্ষুধায়পীড়িত, তাতুলেধরাহয়বিশ্বক্ষুধাসূচকবাগ্লোবালহাঙ্গারইনডেক্সে।এইসূচকেথেকে১০০পয়েন্টেরমাপকাঠিতেদেশগুলোকেফেলেযাচাইকরাহয়কোনদেশটিকতটাক্ষুধাপীড়িত।এইমাপকাঠিতেহচ্ছেসবচেয়েভালোস্কোর, যারঅর্থসেইদেশটিতেক্ষুধানেই, আর১০০হচ্ছেসবচেয়েভয়াবহঅবস্থা।১০এরকমস্কোরহলোক্ষুধাসমস্যাকম।২০থেকে৩৪.স্কোরেরঅর্থতীব্রক্ষুধা, ৩৫থেকে৪৯.অর্থভীতিকরক্ষুধাআর৫০বাতারবেশিস্কোরবলতেবোঝায়চরমভাবেভীতিকরক্ষুধায়পীড়িতদেশকে।

প্রতিটিদেশেরপরিস্থিতিবিচারকরেচারটিমাপকাঠিতেগ্লোবালহাঙ্গারইনডেক্স (জিএইচআই) তৈরিহয়েছে।অপুষ্টি, বছরেরকমবয়সীদেরমধ্যেকমওজনেরশিশু, বছরেরকমবয়সীদেরমধ্যেকমউচ্চতারশিশু, বছরেরকমবয়সীশিশুমৃত্যুএইচারটিমাপকাঠিতেপ্রতিটিদেশেরস্কোরহিসাবকরাহয়েছে১০০পয়েন্টেরভিত্তিতে।

চলতিবছরসহবছরেঅবস্থানেখুবসামান্যতারতম্যহলেওদীর্ঘমেয়াদিচিত্রেফুটেউঠেছেবাংলাদেশেরক্রমোন্নতিরচিত্র।২০০০সালেবাংলাদেশেরস্কোরছিল১০০মধ্যে৩৬., অর্থাৎভীতিকরএরবছরপর, ২০০৫সালেরসূচকেসেইস্কোরকমে৩০.দাঁড়ায়।অর্থাৎবাংলাদেশভীতিকরথেকেতীব্রক্ষুধাপীড়িতদেশেরপর্যায়েচলেআসে।আরওবছরপরঅর্থাৎ২০১০সালেস্কোরসামান্যএকটুকমে৩০.হয়।আরতারপরটানাবছরেরব্যবধানেএবারেরসূচকেবাংলাদেশপেল২৫., যাধারাবাহিকউন্নতিকেইসামনেএনেছে।

রাস্তায় পড়ে থাকা জুতার বাক্সে সাড়ে ১১ লাখ টাকা!

 ইত্তেফাক রিপোর্ট  ০৪:১৪, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাস্তায় পড়েছিল সুন্দর একটা শপিং ব্যাগ। কৌতূহলবশত ব্যাগটি হাতে তুলে নেন লাইব্রেরি ব্যবসায়ী সেন্টু। ব্যাগের ভেতর জুতার একটি বাক্স দেখতে পান তিনি। আর বাক্সটি খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠে তার। বাক্সভর্তি সব ৫০০ টাকার বান্ডিল। ঘটনাটি গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার। রায়েরবাজার হাইস্কুলের সামনে রাস্তায় পড়েছিল ব্যাগটি।

এতগুলো টাকা দেখে প্রথমে কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। তবে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি সেন্টু। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান নিউমার্কেট থানায়। টাকাভর্তি ব্যাগটি জমা দেন থানার ওসির কাছে। গুনে দেখা যায় সেখানে ৫০০ টাকার ২৩টি বান্ডিলে মোট সাড়ে এগারো লাখ টাকা আছে। ওসিও দেরি করেননি করণীয় নির্ধারণে। টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার জন্য ঢাকার সব থানায় বেতার বার্তা দেন তিনি। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে। একপর্যায়ে জানা যায় মো. হারুন অর রশিদ গত ১২ ডিসেম্বর, সাড়ে ১১ লাখ টাকা হারিয়ে গেছে মর্মে হাজারীবাগ থানায় একটি জিডি করেন। তিনি একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী।

এভাবে টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে নিশ্চিত হয়ে গত মঙ্গলবার রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমানের উপস্থিতিতে টাকার প্রকৃত মালিক হারুন অর রশিদকে টাকা বুঝিয়ে দেয় নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

ইত্তেফাক/বিএএফ

 টাকার ব্যাগ

PreviousPauseNext

চীনা নাগরিক হত্যাকাণ্ড

টাকা লুটের জন্যই খুন করে দুই নিরাপত্তাকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক   

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ | পড়া যাবে ৪ মিনিটে

প্রিন্ট

Kalarkhonto-19-12-19

রাজধানীর বনানীতে চীনা নাগরিক গাওজিয়ান হুইকে (৪৭) শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বাড়ির পেছনে পুঁতে রাখার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলেও বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মীদের কেউ পালিয়ে যায়নি। এর মধ্যে তদন্ত এগোচ্ছিল ব্যাবসায়িক বিরোধ এবং ব্যবসার টাকা আত্মসাতের সন্দেহের দিকে। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, এসব নয়, বাড়িটির দুই নিরাপত্তাকর্মীই নগদ টাকা আত্মসাতের লোভে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নির্বিকার জবাব দিয়েছিল।

পুলিশ জানায়, হত্যায় অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে আব্দুর রউফ (২৬) এ কয়দিন পুলিশ ও সাংবাদিকদের নানা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। বাড়ির নিরাপত্তার ঘাটতিসহ কিছু বিষয়ে সন্দেহ থাকায় তাকেসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছিল পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কিছুই জানে না—এমন ভাব দেখায় রউফ। নিহতের টাকা আত্মসাতের তথ্য মেলায় তখন তদন্তে ব্যাবসায়িক বিরোধকেই গুরুত্ব দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনার রাতে বাড়িতে থেকেও অনেক বিষয়ে তথ্য না দেওয়ায় সন্দেহের আওতায় আসে রউফ। তদন্তে ধরা পড়ে রফের সন্দেহজনক যোগাযোগ। তবু জিজ্ঞাসাবাদে সে ছিল স্বাভাবিক। আটকের পর দেখা যায়, তার হাতে রয়েছে কামরের দাগ। পরে ডিবি পুলিশ গত মঙ্গলবার আব্দুর রউফ ও তার সহযোগী নিরাপত্তারক্ষী এনামুল হককে (২৭) গ্রেপ্তার করে। এরপর তারা অকপটে স্বীকার করতে থাকে হত্যার দায়। এভাবেই চীনা নাগরিক গাওজিয়ান হুই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ডিবি।

গ্রেপ্তারকৃত এই দুজনই সুবাস্তু হাউজিং কম্পানির নিরাপত্তাকর্মী। তাদের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত একটি ভাঙা মোবাইল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, বালতি ও লাশ মাটিচাপা দেওয়ার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত কাঠের টুকরা এবং এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে দুজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ।

যেভাবে হত্যাকাণ্ড : তদন্তকারীরা বলেন, বিত্তবানদের জীবনযাপন দেখে হতাশা থেকে দুজন রাতারাতি ধনী হওয়ার মতো কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়। দুজনই ওই ভবনের ছাদে থাকত। একসঙ্গে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজনের বাড়ি নড়াইলে এবং অন্যজনের বাড়ি ঝিনাইদহে। তারা সম্প্রতি একাকী থাকা গাওজিয়ান হুইকে হত্যা করে তাঁর বাসা থেকে টাকা লুট করে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রউফ ও এনামুল।

অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর একবার তারা গাওজিয়ানকে হত্যার জন্য গেলেও বাসার দরজা না খোলায় ফিরে আসে। পরে ৯ ডিসেম্বর এনামুল তার নিজের ব্যবহৃত গামছা সঙ্গে নিয়ে যায়। মাগরিবের আজানের পর তারা গাওজিয়ানের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপে। গাওজিয়ান ইশারায় জানতে চাইছিলেন যে কী বিষয়। তখন এনামুল ‘ওয়াটার ওয়াটার’ বলে বোঝাতে চায় যে তারা পানি খাবে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং এনামুল গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে। রউফ কোমরের দিকে জাপটে ধরে। অল্প সময়ের মধ্যেই গাওজিয়ানের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে গাওজিয়ান রউফের বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কামড়ে দেয়। তারা দু-তিন মিনিটের মধ্যেই গাওজিয়ানের মৃত্যু নিশ্চিত করে। বসার ঘরে টেবিলের ওপরে তাঁর ল্যাপটপ খোলাই ছিল এবং পাশে ছিল একটি ছোট ব্যাগ। রউফ ওই ব্যাগটি খুলে সেখানে থাকা তিনটি ১০০০ টাকার বান্ডিল, কিছু খুচরা টাকা ও মোবাইল নিয়ে নেয়।  এরপর মৃতদেহ রেখে ছাদে চলে যায়।

রাত ১১টার দিকে ভবন একটু সুনসান হলে রউফ পেছনে গিয়ে বালুমাটিতে কাঠের টুকরা দিয়ে গর্ত করে। এরপর নিজে একাই গাওজিয়ানের লাশ লিফটে করে নিচে এনে মাটিচাপা দেয়।

দ্বীন মানতে হবে পূর্ণভাবে

 আমাদের জীবন কিছু সময়ের সমষ্টি। প্রতিনিয়ত তা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। বরফ বিক্রেতার যেমন সময় যত অতিক্রান্ত হয় তার পুঁজি তত নিঃশেষ হয়ে যায়, আমাদের জীবনও ঠিক তেমনি। যত দিন যাচ্ছে, আমাদের হায়াত তত হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মৃত্যুর ব্যাপারে আস্তিক-নাস্তিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই স্বীকার করে, জন্মেছি যেহেতু মৃত্যু একবার আসবেই।

নাস্তিকের কথা বাদ দিলে আমরা যারা মুসলিম তারা সবাই বিশ্বাস করি যে, এ মৃত্যুই শেষ নয়, এরপর আরেকটি জগৎ আছে, যেখানে দুনিয়ার কৃতকর্মের বদলা দেয়া হবে। এখন আমরা দেখি বিশ্বাসীদের জীবনে দ্বীন পালনের অবস্থা কেমন। আমাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দ্বীনের কোনো বিধিবিধানই মান্য করি না। নামাজ-রোজা-জাকাত-হজ বা উপার্জনে হালাল-হারাম কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করি না। মাঝে মধ্যে জুমার নামাজ বা বছরে দু’বার ঈদের নামাজ আদায় করে থাকি। বিধিবিধান পালনের কথা বললে তাদের জবাব হয়, নামাজ না পড়লেও আমাদের ঈমান ঠিক আছে। অথচ কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা মতে, নামাজ আদায় মুসলমান হওয়ার জন্য ন্যূনতম শর্ত। হাদিসের ভাষা হলো- ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলো সে কুফরি করল।’ রাসূল সা: ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে কেউ জামাতে হাজির না হলে মনে করা হতো, সে ঈমানহারা হয়ে গেছে। কুরআনে নামাজ না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ বা পরকাল অবিশ্বাসের ফলশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনÑ সূরা মুদ্দাসসিরে বলা হয়েছে, ‘জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে- কোন জিনিস তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এলো?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামাজি লোকদের মধ্যে গণ্য ছিলাম না।’ সূরা বাকারায় বলা হয়েছেÑ ‘নামাজ নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। কঠিন নয় আল্লাহর সেসব অনুগত বান্দাহদের, যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ভয় রাখে।’

আমাদের সমাজে এমন চরিত্রের লোকের সংখ্যাই বেশি। আরেক দল রয়েছে, যারা ইসলামকে দ্বীন ও দুনিয়া- দু’টি ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। তারা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, তাসবি-তাহলিল, জিকির-আজকার, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, মিলাদ-ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি যেসব কাজে দ্বীনদারির রঙ রয়েছে তাতে মোটামুটি নিষ্ঠাবান। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, লেনদেন, আচার-আচরণ, আত্মীয়স্বজনসহ মানুষের হক আদায়ে তত নিষ্ঠাবান নন। অনেক সময় অর্থনীতি ও রাজনীতির অঙ্গনে ইসলামের দুশমনদের সাথেই তাদের নিবিড় সম্পর্ক। এরা বিশ্বাসগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। তাদের সেøাগান- ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয় বিবেচনা করে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মের প্রভাব তারা অস্বীকার করেন। অথচ আল্লাহ পাক ইসলামকে একমাত্র দ্বীন ও পূর্ণরূপে ইসলামে দাখিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই।

মানবজীবনের ব্যাপ্তি যতখানি, ইসলাম ঠিক ততখানি। ইসলামের দাবি হলো- অংশবিশেষ নয়, সম্পূর্ণটাই মানতে হবে। আমাদের লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, আচার-আচরণ সবক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে এবং তা মেনে চলা নামাজ-রোজার মতোই ফরজ। যেমন- একজন ব্যবসায়ী অবশ্যই সঠিক পরিমাপের সাথে কোনো ধোঁকা-প্রতারণার আশ্রয় নেবে না বা ভেজাল দেবে না বা ফরমালিন মেশাবে না। অর্থাৎ ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা তার হক নষ্ট হয় এমন কিছু করবে না। একজন চাকরিজীবী কেবল সময়মতো অফিসই করবে না, সাথে সাথে সে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে এবং যে কাজ আধা ঘণ্টায় সম্ভব সে কাজে কখনোই এক ঘণ্টা লাগাবে না। আর তা করা হলে সেটা হবে সুস্পষ্ট জুলুম। ঘুষ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না এবং তা হবে জ্বলন্ত আগুন ভক্ষণ করার শামিল। ঘুষদাতা ও গ্রহীতা যে জাহান্নামি, সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অফিস-আদালতে খেয়ানত একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। খেয়ানত প্রসঙ্গে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব প্রদান করি, সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে। আর কর্তব্যকর্মে ফাঁকি দেয়া পূর্ণ মুসলমান কল্পনাও করতে পারে না। কারণ, কর্মস্থলে বিলম্বে উপস্থিতি আর মসজিদে নামাজের জামাতে বিলম্ব দুটোতেই গুনাহ রয়েছে। তবে গুনাহের পরিমাণ কোনটাতে বেশি সেটা বলা মুশকিল। কারণ মানুষকে পূর্ণাঙ্গভাবে আল্লাহর গোলামির মধ্যে নিয়ে আসার জন্যই ফরজ করা হয়েছে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগি। নামাজের জন্যও নামাজ নয়, আবার রোজার জন্যও রোজা নয়। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কেবল আমার গোলামির (ইবাদত) জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ একজন গোলাম তখনই তার মনিবের গোলামি করতে পারে যখন সে তার মনিবকে স্মরণ ও ভয় করে। নামাজ মানুষের মধ্যে আল্লাহর স্মরণ জাগরূক রাখে। মুয়াজ্জিনের আজানধ্বনিতে একজন মুমিনের ঘুম ভাঙে। নামাজের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো- এ আহ্বানে সে ছুটে আসে মসজিদপানে এবং মসজিদে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করে, সে একজন মুসলিম। হাত বেঁধে অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ের সাথে ওয়াদা করে যে- ‘আমরা কেবল তোমারই গোলামি করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ একবার-দু’বার নয়, নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে বারবার মসজিদে এসে তাকে একই প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হয়।

এ মুমিন কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করবে? লজ্জা বলতে তো কিছু আছে। বারবার আল্লাহর গোলামির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বলেই নামাজকে জিকর বলা হয়েছে। এ নামাজের মধ্য দিয়েই বান্দাহ সারাক্ষণ আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহর ভাষায়- ‘তোমরা নামাজ সমাপনান্তে রুজির জন্য বেরিয়ে পড়ো আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো।’ অর্থাৎ আমি যে কাজই করি না কেন; সে কাজে আল্লাহর দেয়া নিয়ম ও বিধিবিধান অনুসরণ করার নামই আল্লাহর স্মরণ। এ স্মরণ সর্বক্ষণ- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শোয়া, বসা ও দণ্ডায়মান অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো।’ মানুষ এ তিন অবস্থার বাইরে থাকতে পারে না। কোনো একটি মুহূর্ত বা কোনো একটি কাজের ব্যাপারে মুমিন ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে পারে না। যখনই সে কোনো বিষয়ে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায়, তখনই সে আল্লাহর গোলামির বাইরে শয়তানের গোলামিতে চলে যায়। আর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শয়তানকে অস্বীকার করে কেবল আমারই আনুগত্য করো।’ নামাজ যেমন মানুষকে বারবার আল্লাহর গোলামির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তেমনি রোজা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে। রোজা মাসব্যাপী এক প্রশিক্ষণ। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সে কেবল আল্লাহরই ভয়ে পানাহারসহ তার রবের নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। দুনিয়ার কেউ দেখে না, দেখেন কেবল আল্লাহ। গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয়ে আল্লাহ অবহিত এ বোধ-উপলব্ধি রোজা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে। তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে রোজা অনন্য, রোজার কোনো বিকল্প নেই। আর যার মধ্যে আল্লাহর স্মরণ ও তাকওয়া আছে, তার দ্বারা আল্লাহর নাফরমানি বা গুনাহের কাজ অসম্ভব। রমজান মাসে বৈধ কাজ আল্লাহ সাময়িকভাবে নিষেধ করেছেন বলে তা থেকে সে বিরত থাকে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন অন্য সময় বা রমজান মাসে কেমন করে তা সে করবে?

আমি আমার কাজটা করার চেষ্টা করেছি: ফজলে হাসান আবেদ

মতিউর রহমান

২৭ এপ্রিল ২০১৬, ০০:২০
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১৯

প্রিন্ট সংস্করণ

  

বাঁ থেকে ডানে (উপবিষ্ট) ফজলে হাসান আবেদের বাবা সিদ্দিক হাসান, মামা নওয়াব জাস্টিস স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কেসিআইই ও চাচা আতিকুল হাসান। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার চার বছর আগে ১৯৬৮ সালে তরুণ ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাক১৯৭২ সালে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাকালে সিলেটের মার্কুলিতে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকপিতৃস্নেহ। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকেসহকর্মীদের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনায় ব্যস্ত। ছবি: ব্র্যাকব্র্যাক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ছবি: ব্র্যাকব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুল পরিদর্শনকালে স্যার আবেদ। ছবি: ব্র্যাকব্র্যাকের কৃষি কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়ে কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন স্যার ফজলে। ছবি: নাসির আলী মামুন২০০৫ সালে ব্র্যাক কর্মসূচি পরিদর্শনকালে মাইক্রোসফট করপোরেশনের কর্ণধার বিল গেটস, তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এবং গ্রাম সংগঠনের নারীদের সঙ্গে। ছবি: ব্র্যাক২০০২ সালে ব্র্যাকের মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও চেরি ব্লেয়ারের সঙ্গে। ছবি: ব্র্যাক২০০৯ সালে তিব্বতি ধর্মীয় নেতা দালাইলামার সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত২০০১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: ব্র্যাক২০১১ সালে কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-তানির কাছ থেকে ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন (ওয়াইজ) পুরস্কার গ্রহণকালে। ফটো: সংগৃহীত২০১০ সালে নাইটহুড উপাধি গ্রহণ। ছবি: সংগৃহীতব্র্যাকের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে (বাঁ থেকে) শাবানা আজমি, ফারুক চৌধুরী, স্যার ফজলে ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: ব্র্যাকব্র্যাক সেন্টারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামব্র্যাক সেন্টারে নিজ দপ্তরে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামআরও ছবি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মতিউর রহমান

প্রশ্ন: আপনি স্কটল্যান্ডে নৌ-স্থাপত্য বিষয়ে পড়তে গেলেন। ওটা বাদ দিয়ে সিএ পাস করলেন। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ালেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সক্রিয় থাকলেন নানাভাবে। সেখান থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক গড়ে তুললেন। পুরো বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

উত্তর: যেসব পরিবর্তন আমার মনের মধ্যে এসেছে, তা ধারাবাহিকভাবেই এসেছে। আর মুক্তিযুদ্ধ তো আমার প্রাণ ছুঁয়ে গেছে বিভিন্নভাবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যে বাংলাদেশকে আমি দেখেছি, সেটা ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি—দরিদ্রতম দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ভাবলাম, আমাদের এত দরিদ্র দেশ, তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি মানুষ ফিরে আসছে। এদের ঘরবাড়ি নেই, টাকাপয়সা নেই, খেতে কোনো শস্য নেই। সাহায্য শুরু করলাম ত্রাণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আমার ধারণা ছিল, ত্রাণ দেওয়া শেষে বছর দুই-তিনেক পর আমি আমার পেশায় ফিরে যাব—ইংল্যান্ড-আমেরিকা বা অন্য কোথাও। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে যে দারিদ্র্য দেখলাম, এত দরিদ্র মানুষকে এভাবে ফেলে রেখে আমি বিদেশে চাকরি করে আরাম-আয়েশে থাকব, এটা কোনো কাজের কথা নয়। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার সারা জীবনে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের কাজে নিয়োজিত থাকব।
২০০৫ সালে ব্র্যাক কর্মসূচি পরিদর্শনকালে মাইক্রোসফট করপোরেশনের কর্ণধার বিল গেটস, তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এবং গ্রাম সংগঠনের নারীদের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ l ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে১৯৭৩ সালের প্রথম দিকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি আর পেছন ফিরে তাকাইনি। আমি ভাবলাম, বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এখন গড়তে হবে। আর গড়তে হলে দারিদ্র্য বিমোচনই প্রথম কাজ হওয়া উচিত। তখন প্রত্যেক নারী ৬ দশমিক ৪ জন শিশুর জন্ম দিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে দারিদ্র্য বিমোচন কখনো সম্ভব হবে না। দারিদ্র্য বিমোচন করতে গেলে জন্ম নিয়ন্ত্রণও করতে হবে। এ কারণে প্রথম থেকেই আমরা স্বাস্থ্য কর্মসূচির পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ শুরু করলাম।
প্রশ্ন: এর আগে মুক্তিযুদ্ধ শেষে আপনারা সুনামগঞ্জে বাড়িঘর তৈরি করে দেওয়া থেকে নানা ত্রাণকাজ শুরু করলেন।
উত্তর: সেখানে আমরা দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ-কার্যক্রম আর ঘরবাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করলাম। মৎস্যজীবীদের নৌকা দেওয়া হলো, বিদেশ থেকে মাছধরা জাল এনে দেওয়া হলো। ত্রাণ-কার্যক্রম তো ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। আসলে উন্নয়ন যখন করতে হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয়। উন্নয়ন করতে হলে শুধু তো বসতবাড়ি গড়ে দিলে হয় না, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হয়। সে কারণে কৃষির উন্নতির কাজ আরম্ভ করলাম, স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাজ শুরু করলাম, জন্মনিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলাম। এসব কাজেই ছিল আমাদের অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশে তখন অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আমরা তাদের নিয়েই কাজ শুরু কলাম। তবে কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে শুধু দরিদ্রদের জন্য কাজ করা যায় না। যেমন আপনি শিশুদের টিকা দেবেন, যাতে তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেওয়া যায়। সেখানে তো শুধু দরিদ্র নয়, সব শিশুকেই টিকা দিতে হবে।
প্রথমে সুনামগঞ্জের শাল্লায় আমাদের কাজ শুরু হলো। এরপর মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে কাজ শুরু করলাম। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের শেষ দিকে রংপুরের রৌমারীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সেখানে শিশুসহ অনেক লোক মারা যেতে থাকল। শাল্লা থেকে গেলাম রৌমারীতে। সেখানে ১৫ হাজার শিশুকে প্রতিদিন দুই বেলা খাইয়ে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখলাম।
সেখানে দেখলাম খর্বকায় শিশু আর পুষ্টিহীন চেহারার অতি রুগ্ণ মা। বাড়িতে শুধু নারী আর শিশুরা আছে, পুরুষেরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে কাজের খোঁজে। একটা উপলব্ধি হলো, পরিবার বা সমাজে আসলে দারিদ্র্য মোকাবিলা করেন প্রধানত নারীরা। যদি তাঁরা দারিদ্র্যকেই ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে এঁদের দিয়েই আমরা উন্নয়নের কাজ আরম্ভ করি না কেন? আমি আগে যখন গ্রামেগঞ্জে বেশি যেতাম, দেখতাম পাঁচ বছরের মেয়েশিশু এক বছরের ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে দেখাশোনা করছে। আর তার বড় ভাইটা বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলছে। এসব দেখে মনে হলো আমাদের মেয়েদেরই আগে তৈরি করতে হবে। আমরা মেয়েদের সংগঠিত করা শুরু করলাম। কারণ, মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই ব্যবস্থাপনা শেখে।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে আপনাকে একটা বড় দায়িত্ব দিয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক সরকার—লিয়াজোঁ কর্মকর্তা হিসেবে সারা দেশে তেল সরবরাহ-ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার।
উত্তর: দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু সেটা আমি বেশি দিন করিনি। সপ্তাহ খানেক করেছিলাম। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওদেরই পরিচয়পত্র নিয়ে প্রথমে ঢাকা থেকে করাচি, পরে সেখান থেকে আফগানিস্তান হয়ে লন্ডনে চলে যাই।
প্রশ্ন: তারপর লন্ডন থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কাজ শুরু করলেন…
উত্তর: লন্ডনে গিয়ে আমরা দুটি সংগঠন করেছিলাম। একটা হলো অ্যাকশন বাংলাদেশ। এর প্রধান কাজ ছিল বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করা। আরেকটা হলো হেল্প বাংলাদেশ। এর কাজ ছিল অর্থ সংগ্রহ করা, যাতে আমাদের মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করা যায়। কাজ করতে করতে একবার সেখানে কিছু মার্সেনারির (ভাড়াটে বিদেশি সৈনিক) সঙ্গে দেখা হলো। তারা ভিয়েতনামে যুদ্ধ করেছে। ওই সৈনিকেরা একটা প্রস্তাব দিল, ‘যদি তোমরা ১৬ হাজার পাউন্ড জোগাড় করতে পারো, তাহলে আমরা তোমাদের জন্য একটা কাজ করতে পারি। গুজরাট উপকূল থেকে মাছ ধরার নৌকা নিয়ে করাচি বন্দরে গিয়ে দু-একটা জাহাজকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারি।’ ১৬ হাজার পাউন্ড আমরা জোগাড় করলাম ঠিকই। কিন্তু ভাবলাম, কাজটি করার আগে সরকারের সঙ্গে একটা পরামর্শ করলে বোধ হয় ভালো হয়। এ জন্য সেপ্টেম্বরের দিকে কলকাতায় গেলাম। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তাঁকে বললাম, কাজটা করতে পারলে কেমন হয়? তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে বললেন, ‘আমার মনে হয়, এটা না করাই ভালো হবে। বরং আপনি টাকাটা আমাদের দিয়ে দিন, আমরা কাজে লাগাব। সত্যি সত্যিই যদি এটা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা করতেন, তাহলে একটা কথা ছিল। আপনি তৃতীয় কোনো বাইরের শক্তি দিয়ে করাবেন, ভবিষ্যতে যদি জানাজানি হয়, তখন ওরা বলবে, লোক ভাড়া করে আক্রমণ করেছে। এর দরকার নেই।’ তাঁর কাছ থেকে হোটেলে ফিরলাম। জিয়াউর রহমান এক দিন আমার হোটেলে এলেন। বললেন, ‘আমার তো অনেক কিছু দরকার। কিন্তু ভারত থেকে সেগুলো পাই না। আমাদের যথেষ্ট গোলাবারুদ নেই। আর ব্যক্তিগতভাবে একটা জিনিসও খুব দরকার। সেটা হলো বাইনোকুলার; শত্রু কোন দিক থেকে আসছে দেখতে পাই না। যদি আমার জন্য এটা পাঠাতে পারেন তাহলে ভালো হয়।’ লন্ডনে ফিরে তাঁর জন্য বাইনোকুলার পাঠিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: আগে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেন। পাশাপাশি শুরু থেকেই শিক্ষা নিয়েও একটা ভাবনা ছিল, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কোনো উন্নয়ন হবে না।
উত্তর: প্রথম দিকে আরম্ভ করেছিলাম বয়স্ক শিক্ষা নিয়ে। আমরা ২০০ গ্রামে কাজ শুরু করেছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২০০ গ্রামে ২০০টি স্কুল করব, আর নারী-পুরুষ উভয়কে শিক্ষিত করে ফেলব। অন্তত যাতে তারা বই পড়তে পারে, স্বাক্ষর করতে পারে, চিঠি লিখতে পারে। ২০০ স্কুল চালু করলাম। বুঝলাম, গরিব মানুষের পক্ষে সারা দিন পরিশ্রম করে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। বেশির ভাগ স্কুল আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমার হাতে ব্রাজিলের শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরির একটা বই এসেছিল। নাম পিডাগজি অব দ্য অপ্রেসড। বইটি থেকে জানলাম, মানুষের উন্নয়ন করতে হলে আগে মানুষকে সচেতন ও উদ্যমী করে তুলতে হবে। আর মানুষকে সংগঠিত করতে না পারলে উন্নয়ন হবে না। তখন সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করলাম। আগের ওই কর্মসূচি থেকে আমরা শিখলাম, আমরা সংগঠন হিসেবে খুব বেশি কিছু করতে পারব না, যদি না তাদের সচেতন করতে পারি। আমরা তোমাদের সবকিছু করে দেব, তা হবে না। বরং মানুষের ভেতরকার আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে দিয়ে জীবনকে বদলে দেওয়ার কাজে তাদের উদ্যমী করে তুলতে হবে। এই বিষয়টা যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি সফল হবে না। এটা হলো ব্র্যাকের সফলতার মূল ভিত্তি।
প্রশ্ন: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে জোর দেওয়া, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্ষুদ্রঋণ—এর প্রতিটাতেই আপনি সম্পৃক্ত আছেন। সব মিলিয়েই আপনার ব্র্যাক। এর মধ্যে কি বলতে পারেন, এই সেক্টরে আমি সবচেয়ে ভালো করলাম, এরপর ওটা?
উত্তর: দেখুন, কতগুলো বিষয়ে বাংলাদেশে আমরা গর্ব বোধ করি। যেমন বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার শ্রীলঙ্কা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। কী করে হলো? সরকার বলবে, আমরা করেছি। কিন্তু আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে ব্র্যাকের বড় অবদান আছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছর প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খাবার স্যালাইন কীভাবে বানাতে হয়—লবণ, গুড় আর আধা সের পানি মিশিয়ে—সেটা আমরা শিখিয়েছি। এরপর এল খাবার স্যালাইনের প্যাকেট। কতটুকু পানি হলে সেটা ঠিক আধা সের পরিমাণ হয়, সেটা তত দিনে নারীরা শিখে ফেলেছে। এখন প্যাকেট স্যালাইন কিনে আধা সের পানি মিশিয়ে সঠিকভাবে স্যালাইন বানাতে পারে। ওই দশ বছর আমরা যদি ওই কাজটা না করতাম, তাহলে সেই চিত্রটার পরিবর্তন হতো না।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে টিকাদানের হার ছিল ৪ শতাংশ। তখন এরশাদ সাহেব ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। ইউনিসেফ দেশে টিকাদানের হার ১৯৯০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মসূচি শুরু করল। প্রেসিডেন্ট স্বাস্থ্যসচিবকে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশ দিলেন। আমার বন্ধু মনযূর-উল-করিম ছিলেন তখন স্বাস্থ্যসচিব। তিনি বললেন, এটা আমরা একা পারব না। আমাদের সঙ্গে তোমরা যোগ দাও। আমরা অর্ধেক বাংলাদেশের দায়িত্ব নিলাম। ওরা নিল বাকি অর্ধেক বাংলাদেশের। আমরা যে অর্ধেক নিলাম, সেখানে আমরা ৮২ শতাংশ কভারেজ দিলাম চার বছরের মধ্যে। আর যে অর্ধেক সরকার নিল, সেটা হলো ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশে এখন টিকাদানের হার ৯৬ শতাংশ। আর ভারতে ৫৭ শতাংশ। সে জন্য সেখানে মৃত্যুহার বেশি।
প্রশ্ন: খাবার স্যালাইন, টিকাদান—এরপরের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য কী?
উত্তর: পানি ও পয়োনিষ্কাশন। সারা বাংলাদেশে এখন মাত্র ৩ শতাংশ লোক খোলা জায়গায় পায়খানা করে। বাংলাদেশের প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে স্যানিটারি ল্যাট্রিন দেওয়া, দিনে অন্তত তিনবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শেখানো, প্রতিটি স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের হাত ধোয়া শেখানো—এগুলো তো আমরা করেছি দশ বছর ধরে। ফলে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। মাতৃমৃত্যুর হার আগে প্রতি লাখে ৮০০ ছিল, এখন সেটা ১৭৫-এ নেমে এসেছে। ১৭৫ থেকে ৩০-এ নিয়ে যেতে হলে কী করতে হবে, এখন আমরা সেটা করছি। এটা করতে হলে প্রতিটা ইউনিয়নে দুজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ লাগবে। এসএসসির পর তিন বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা দিচ্ছি আমরা। ৩০০ জন এরই মধ্যে পাস করেছে। এভাবে আমরা তৈরি করব ১০ হাজার। তাদের মধ্য থেকে যখন প্রত্যেক ইউনিয়নে দুজন করে পাওয়া যাবে, তখন গ্রামের নারীদের ডেলিভারি করাতে আর হাসপাতালে যেতে হবে না।
প্রশ্ন: শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান কোনটি?
উত্তর: এখানে বড় অবদান হলো আমরা প্রায় ৭০ লাখ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েছি। এর মধ্যে ৪০ লাখ মেয়েশিশু। তার মানে ৬৬ শতাংশ মেয়ে। এখন সরকারি হিসাবে ৯৮ ভাগ মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয় আর ৯৬ ভাগ ছেলেশিশু স্কুলে ভর্তি হয়। এই যে ২ শতাংশ বেশি, এটা ব্র্যাকের কারণে। কিন্তু এখন আমাদের বড় কাজ হলো শিক্ষার মান উন্নয়ন। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আমাদের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে একটা ইনস্টিটিউট তৈরি হয়েছে। সরকারের সঙ্গে বসে এখন আমরা পাঠক্রম তৈরি করছি।
প্রশ্ন: কৃষিক্ষেত্রে বড় কাজ কোনটি?
উত্তর: কৃষি সম্প্রসারণে কাজ হয়েছে অনেক। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ও এককভাবে এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক কাজ করেছি। কৃষকদের উচ্চমানের বীজ সরবরাহ করেছি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করতে গিয়েই বীজের বিষয়টা ভাবনায় এসেছিল। প্রায় ৩ লাখ নারী আমাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করছিলেন। আমি কয়েকটি খামারে সবজিচাষি নারীদের সঙ্গে কথা বললাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের আসল সমস্যা কী? অনেকেই বললেন, সমস্যা হলো বীজের। ভালো বীজ নেই। আমরা তখন শাকসবজির বীজ তৈরি করা শুরু করলাম। এরপর আনলাম ভুট্টার বীজ। ভুট্টা কিন্তু আমরাই পরিচয় করিয়েছি বাংলাদেশে।
পোলট্রির খামার করতে গিয়ে দেখলাম, মুরগির মৃত্যুহার কমানোর জন্য ভ্যাকসিন দরকার। তখন এরশাদ সরকারের আমল। সরকারকে বললাম, হয় আপনারা ভ্যাকসিন উৎপাদন করুন, না হলে আমাদের দায়িত্ব দিন, আমরা উৎপাদন করব। সরকার বলল, আমরাই করব। সরকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করল, আর আমরা জেলায় জেলায় সরবরাহ শুরু করলাম। প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে পশুপালন কর্মকর্তা আছেন। তাঁর অফিসে ফ্রিজ আছে। এই ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাঠানো শুরু করলাম। থানার পশুসম্পদ অফিসারের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে ভ্যাকসিনগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। তখন আমরা ১২ জন ফ্রিজ মেরামতকারী নিয়োগ করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিলাম। ফ্রিজ অকার্যকর হলে ফোন করলেই ওরা সেটি ঠিক করে দিয়ে আসে। চল্লিশ হাজার গ্রামে চল্লিশ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভ্যাকসিনেটর তৈরি করলাম।
প্রশ্ন: ব্র্যাক যে ছোট থেকে এত বড় হলো, পরিচালনা-ব্যবস্থাপনা-মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কী উদ্যোগ ছিল?
উত্তর: এগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ একটা পদক্ষেপ ছিল আমাদের। আমরা আমাদের কর্মীদের খুব বিশ্বাস করেছি। তাঁদের দায়িত্ব দিয়েছি, ক্ষমতাও দিয়েছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটা কিন্তু একেবারে গ্রামেই ছিল। কাকে ঋণ দেবে, কাকে দেবে না—তা জানার জন্য কাউকে ঢাকায় আসতে হতো না। কর্মীরা নিজেরাই ঠিক করতেন কাকে ঋণ দেবেন, কাকে দেবেন না। তাতে তাঁরা কাজে যেমন স্বাধীনতা পেয়েছেন, তেমনি আনন্দও পেয়েছেন। মূল ব্যাপার ছিল, যা তিনি করতে চেয়েছেন, তা করার ক্ষমতাও তাঁর হাতে ছিল। সে জন্য ব্র্যাকে কোনো আমলাতন্ত্র গড়ে ওঠেনি। সব সিদ্ধান্ত আবেদ ভাই বা তাঁর চারপাশের চার-পাঁচজন লোক নেবেন, এটা নয়। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে জন্য এটা এত বড় হয়েছে এবং ভিত্তিটা শক্তিশালী হয়েছে। ব্র্যাক থেকে অনেক লোক তৈরি হয়েছেন, যাঁরা ভালো ম্যানেজার হয়েছেন।
প্রশ্ন: সারা বিশ্বের ১২টা দেশে যে আপনারা ব্র্যাক পরিচালনা করছেন, সেখানে কোন ধরনের কাজ করছেন?
উত্তর: সেসব দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রঋণ প্রভৃতি—আমাদের সব কাজই পরিচালনা করছি।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, আপনি ব্র্যাকের সামগ্রিক কাজের পাশাপাশি আবার ব্যাংক করলেন, ইউনিভার্সিটি করলেন—এসবের কী দরকার ছিল?
উত্তর: ব্যাংক গড়ার প্রেক্ষাপটটা বলি। ১৯৯৭ সালে যে সমীক্ষা করেছিলাম, সেখানে তো অতিদরিদ্রদের পেলাম, যারা ঋণ পায় না। সেখানে আরেকটা চিত্র ছিল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ঋণ পান না—তাঁরা দরিদ্রও নন, অতিদরিদ্রও নন, আবার সচ্ছলও নন। দরিদ্র মানুষ ঋণ পেতে পারেন, আবার যাঁরা সচ্ছল, তাঁরাও ঋণ পেতে পারেন। কিন্তু এঁদের কী হবে? সেই চিন্তা থেকেই ব্র্যাক ব্যাংক করতে যাওয়া, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া যায়। এরপর নিয়ে এলাম বিকাশ। বিকাশ ব্যবহার করে তো এখন সবাই দ্রুত টাকা পাঠাচ্ছে। আমার আসল উদ্দেশ্য হলো, বিকাশ শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ঋণ পেতে পারবেন, বিভিন্ন রকমের সঞ্চয়ও রাখতে পারবেন। তাঁদের মোবাইল ফোনের মধ্যেই স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে সেই ঋণ ব্যবহার করতে পারবেন।
ইউনিভার্সিটি করলাম, আমরা যদি কিছু শিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে পারি, যারা দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করতে চায়। তাহলে তো আমাদের মতো মানুষ আরও পাওয়া সম্ভব, যারা সমাজের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে চায়। আর সেটা যদি আমি ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে করতে পারি, আমাদের শিক্ষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে যদি শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে পারি, সিভিল সার্ভেন্টদের ডিগ্রি দিয়ে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় তবে দেশের কিছু লাভ হবে।ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের বাবা সিদ্দিক হাসান (বাঁয়ে বসা), চাচা আতিকুল হাসান (ডানে বসা) এবং তাঁদের (সিদ্দিক হাসান ও আতিকুল হাসান) মামা নওয়াব জাস্টিস স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কেসিআইই (মাঝে বসা)। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকেব্র্যাক প্রতিষ্ঠার চার বছর আগে ১৯৬৮ সালে তরুণ ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাকালে সিলেটের মার্কুলিতে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেপিতৃস্নেহ। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকেসহকর্মীদের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনায় ব্যস্ত। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুল পরিদর্শনকালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাকের কৃষি কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়ে কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: নাসির আলী মামুন২০০৫ সালে ব্র্যাকের কর্মসূচি পরিদর্শনকালে মাইক্রোসফট করপোরেশনের কর্ণধার বিল গেটস, তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এবং গ্রাম সংগঠনের নারীদের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০০২ সালে ব্র্যাকের মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০০৯ সালে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত২০০১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০১১ সালে কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানির কাছ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন (ওয়াইজ)’ পুরস্কার গ্রহণকালে। ছবি: সংগৃহীত২০১০ সালে নাইটহুড উপাধি গ্রহণ। ছবি: সংগৃহীতব্র্যাকের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে (বাম থেকে) শাবানা আজমী, ফারুক চৌধুরী, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক সেন্টারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামব্র্যাক সেন্টারের নিজ দপ্তরে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামআরও ছবি 
প্রশ্ন: এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার প্রিয় মানুষ কে?
উত্তর: আমার প্রিয় মানুষ আমার মা। তারপর আমার ছোট চাচা সায়ীদুল হাসানের দ্বারা খুব প্রভাবিত ছিলাম।
প্রশ্ন: ব্যক্তিত্ব হিসেবে কাকে আদর্শ মনে করেন?
উত্তর: আমার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমাদের মননকে তিনি যেভাবে প্রভাবিত করেছেন, সেটা আর কেউ করতে পারেননি।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় লেখক কে, রবীন্দ্রনাথ না শেক্সপিয়ার? আপনি শেক্সপিয়ারের অনেক কবিতা আবৃত্তি করেন।
উত্তর: মানুষ হিসেবে পছন্দ রবীন্দ্রনাথ, আর লেখক হিসেবে শেক্সপিয়ার।
প্রশ্ন: শিল্পকর্মের অনেক সংগ্রহ আপনার। প্রিয় শিল্পী কে?
উত্তর: শিল্পীদের মধ্যে কামরুল হাসান, মোহাম্মদ কিবরিয়া, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, রশিদ চৌধুরী সবাই আমার বন্ধু। রশিদ চৌধুরীর অনেক প্রদর্শনীর আয়োজন করে দিয়েছি। চিত্রকর্ম বিক্রিতে সহযোগিতা করেছি।
প্রশ্ন: আপনি গান শোনেন সব সময়। শিল্পীদের মধ্যে কে কে বেশি প্রিয়?
উত্তর: রবীন্দ্রসংগীতই বেশি শুনি। ভারতের অনেকের কণ্ঠেই গান শুনতে ভালো লাগে। আমাদের দেশে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শামা রহমান, অদিতি মহসীনের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত খুব ভালো লাগে। লুভা নাহিদ চৌধুরীর গানও খুব প্রিয়। পুরোনোদের মধ্যে কুন্দনলাল সায়গল, পঙ্কজকুমার মল্লিক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ আমার প্রিয় শিল্পী। ছোটবেলায় তো কলের গানে তাঁদের গান শুনতাম।
প্রশ্ন: কার সিনেমা ভালো লাগে?
উত্তর: আমার তো আর্ট ফিল্ম খুব ভালো লাগে। ইতালির ভিক্টরিয় ডি সিকা, মাইকেলেঞ্জেলো অ্যান্টোনিওনি—এঁদের মতো পুরোনো অভিনয়শিল্পীদের ছবি ভালো লাগত। এঁদের ছবি দেখিয়েই আমি আলমগীর কবিরকে প্রভাবিত করেছিলাম। আমাদের সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাও ভালো লাগে, খুব চমৎকার।
প্রশ্ন: মা-বাবা-চাচা বাদ দিয়ে মানুষ হিসেবে আর কাউকে কি দেখেন, যিনি আপনাকে প্রভাবিত করেছেন।
উত্তর: ওভাবে বলতে পারব না। অনেক লেখকের বই পড়ি আমি। এর মধ্যে টলস্টয়ের চিন্তাজগৎ এত ব্যাপক, তাঁর চিন্তা দ্বারা খুব প্রভাবিত হই। তাঁর চিন্তা এত বিস্তৃত, এত গভীর—এগুলো খুব ভালো লাগে।
প্রশ্ন: আপনি নিজেকে পুরোপুরি সফল মনে করেন, নাকি আরও সাফল্যের বাকি আছে? আরও কিছু করতে চান?
উত্তর: নিজেকে আমি খুব বেশি সফল মনে করি, তা নয়। আমি আমার কর্তব্যটা করার চেষ্টা করেছি, এর বেশি কিছু না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ নিয়ে আর কী স্বপ্ন দেখেন?
উত্তর: শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার আরও কমানো। বাংলাদেশের সহজাত সুবিধা হলো, মানুষগুলো বুদ্ধিমান। এদের যদি একটু ভালো শিক্ষার সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে, যেসব দেশের মানুষ এতটা বুদ্ধিমান নয়। আমাদের লোকগুলো বেশি সুযোগ পায়নি কিন্তু তাদের মেধা আছে, বুদ্ধি আছে। এদের একটু সুযোগ দিলে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পরিচিতি পেত।
প্রশ্ন: আমাদের দেশে যা কিছু হয়, তা হয়ে যায় ব্যক্তিপ্রধান। কিন্তু এখানে ব্র্যাক সামনে, ফজলে হাসান আবেদ পেছনে। এই যে আড়ালে থাকা, এটা কি পরিকল্পনা করে হয়েছে, নাকি স্বভাবজাত?
উত্তর: এটা আমার সহজাত অভ্যাসও, আবার কিছুটা পরিকল্পিতও। আমি সব সময় চেয়েছি, লোকে আমার সংস্থাটি চিনবে, আমাকে চেনার তো দরকার নেই। এই সংস্থায় এত লোক কাজ করে, সেখানে একজনকে চিনে লাভ কী? ব্র্যাকে যে এত কাজ হয়েছে, সেটা কি আমার একার কাজ? হাজার হাজার কর্মীর কাজ। কাজেই সেই পরিচিতি তো তাদের প্রাপ্য। আমি নেতা হিসেবে হয়তো একটু বেশি কাজ করেছি। কিন্তু আসলে তো হাজার হাজার কর্মী নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছে বলেই ব্র্যাক এতটা সুনাম অর্জন করেছে।
মতিউর রহমান: আবেদ ভাই, ২৭ এপ্রিল আপনার জন্মদিন। আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। আপনি দীর্ঘজীবী হোন। মানুষের জন্য, দেশের জন্য আপনার কাজ আরও গতিশীল হোক—এই কামনা করি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ফজলে হাসান আবেদ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

ব্র্যাক: বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। তারা বহুমুখী কাজের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। তাদের কাজের পরিধি ব্যাপক। দেশের বাইরে তারা ১২টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের কাজের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো হলো: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা; পানি, পয়োনিষ্কাশন, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, সমন্বিত উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোগ ও বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, আইনি সহায়তা প্রদান প্রভৃতি। উল্লিখিত এসব ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে তাদের কর্মী রয়েছে এক লাখেরও বেশি। এর ৭০ শতাংশের ওপর নারী কর্মী রয়েছেন। এর বাইরে রয়েছে তাদের স্বনামধন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আড়ং।

আরও পড়ুন:

একজন মহান অগ্রপথিক


স্যার ফজলে হাসান আবেদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ এপ্রিল ২০১৬, ০২:০৭
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২৩:৪২

  

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের বাবা সিদ্দিক হাসান (বাঁয়ে বসা), চাচা আতিকুল হাসান (ডানে বসা) এবং তাঁদের (সিদ্দিক হাসান ও আতিকুল হাসান) মামা নওয়াব জাস্টিস স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কেসিআইই (মাঝে বসা)। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকেব্র্যাক প্রতিষ্ঠার চার বছর আগে ১৯৬৮ সালে তরুণ ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাকালে সিলেটের মার্কুলিতে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেপিতৃস্নেহ। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকেসহকর্মীদের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনায় ব্যস্ত। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুল পরিদর্শনকালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাকের কৃষি কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়ে কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: নাসির আলী মামুন২০০৫ সালে ব্র্যাকের কর্মসূচি পরিদর্শনকালে মাইক্রোসফট করপোরেশনের কর্ণধার বিল গেটস, তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এবং গ্রাম সংগঠনের নারীদের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০০২ সালে ব্র্যাকের মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০০৯ সালে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত২০০১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে২০১১ সালে কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানির কাছ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন (ওয়াইজ)’ পুরস্কার গ্রহণকালে। ছবি: সংগৃহীত২০১০ সালে নাইটহুড উপাধি গ্রহণ। ছবি: সংগৃহীতব্র্যাকের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে (বাম থেকে) শাবানা আজমী, ফারুক চৌধুরী, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যেব্র্যাক সেন্টারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামব্র্যাক সেন্টারের নিজ দপ্তরে স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: জিয়া ইসলামআরও ছবি ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তাঁর প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।

শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে এসে ফজলে হাসান আবেদ শেল অয়েল কোম্পানিতে যোগ দেন এবং দ্রুত পদোন্নতি লাভ করে ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শেল অয়েল কোম্পানিতে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময় তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ‘হেলপ’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলে ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত মনপুরা দ্বীপের অধিবাসীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সেখানে তাঁরা ব্যাপক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

একাত্তর সালের ডিসেম্বর মাসে ফজলে হাসান আবেদ সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে ত্রাণকাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা এলাকায় কাজ শুরু করেন। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায়ই তিনি ব্র্যাক গড়ে তোলেন। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে তাঁর দীর্ঘ অভিযাত্রার সূচনা ঘটে। দরিদ্র মানুষ যাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে তিনি তাঁর কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
চার দশকের মধ্যে তিনি তাঁর অভূতপূর্ব নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটান। ব্র্যাক পরিণত হয় বিশ্বের সর্ববৃহত্ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়।
বর্তমানে বিশ্বের ১২টি দেশে ব্র্যাকের লক্ষাধিক কর্মী প্রায় তেরো কোটি মানুষের জীবনে উন্নয়নে নিরলস কাজ কাজ করে যাচ্ছে। ফজলে হাসান আবেদের সুযোগ্য নেতৃত্বই অজস্র প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্র্যাকের অনন্য সাধারণ এই অর্জনকে সম্ভব করে তুলেছে।
বস্তুত প্রতিষ্ঠাতার স্বাপ্নিক দূরদৃষ্টি, অদম্য সাহস এবং গতিশীলতা ব্র্যাকের ক্রম অগ্রযাত্রা, নব নব নিরীক্ষা ও সম্প্রসারণের নিরন্তর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে গেছে। ফলে দেশ-বিদেশে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি।

যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন:
Ø ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হার্ভার্ড ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব)-এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময় তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জেনেভার এনজিও কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ-এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন হেলথ রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গণসাক্ষরতা অভিযান-এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন-এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পভার্টি এলিভিয়েশন-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সার্ক-এর সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পভার্টি এলিভিয়েশন-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৪ এবং ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল মেয়াদে আইন ও সালিশ কেন্দ্র-এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইডিএস)-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), ফিলিপাইন-এর বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), ফিলিপাইন-এর ফাইন্যান্স অ্যান্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অলটারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (ইনাফি)-এর গ্লোবাল চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইউএন কমিশন অন লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব দি পুওর (সিএলইপি)-এর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Ø ২০১০ সালে জাতিসংঘের তদানীন্তন মহাসচিব বান কি মুন স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ‘স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গে’র একজন হিসেবে নিযুক্তি প্রদান করেন।
Ø অশোকা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে ‘গ্লোবাল গ্রেট’ স্বীকৃতিতে ভূষিত করেছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ‘গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
Ø ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউএন সেক্রেটারি জেনারেলস গ্রুপ অব এমিনেন্ট পারসনস ফর লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ (এলডিসি)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
Ø ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইউএন সেক্রেটারি জেনারেলস লিড গ্রুপ অব দি স্কেলিং এবং অশোকা গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রোপ্রেনিওরশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

যেসব পুরস্কার পেয়েছেন:
Ø ২০১৯ সালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কয়েক দশকব্যাপী অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
Ø ২০১৯ সালে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ে অত্যন্ত মর্যাদাসূচক এবং অর্থমূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ইদান প্রাইজ লাভ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। হংকংভিত্তিক ইদান প্রাইজ ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার ঘোষণা করে।
Ø ২০১৮ সালে প্রাকশৈশব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন, ডেনমার্ক প্রদত্ত লেগো পুরস্কার।
Ø ২০১৭ সালে দারিদ্র্যপীড়িত লক্ষ-কোটি মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড।
Ø ২০১৬ সালে গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরাম অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ, ওয়াশিংটন ডিসি প্রদত্ত হোসে এডগারডো ক্যাম্পোস কোলাবোরেটিভ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ।
Ø ২০১৬ সালে জনস্বাস্থ্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পুরস্কার।
Ø খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ লাভ করেন।
Ø ২০১৪ সালে রাশিয়ান চিলড্রেন ফান্ড কর্তৃক লেভ তলস্তয় স্বর্ণপদক এবং স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অর্ডার অব সিভিল মেরিট (অর্ডেন ডেল মেরিটো সিভিল) লাভ করেন।
Ø ২০১৪ সালে নারীর অধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
Ø ২০১৩ সালে ওপেন সোসাইটি প্রাইজ লাভ করেন।
Ø ২০১১ সালে কাতার ফাউন্ডেশন প্রবর্তিত শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ওয়াইজ প্রাইজ লাভ করেন।
Ø ২০১০ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন।
Ø ২০০৯ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ ফোরামের পক্ষ থেকে আন্ট্রপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড লাভ করেন।
Ø ২০০৮ সালে ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ অব এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ লাভ করেন।
Ø ২০০৭ সালে হেনরি আর. ক্রাভিস প্রাইজ ইন লিডারশিপ এবং ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেনশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
Ø ২০০৭ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
Ø ২০০৪ সালে গেটস অ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল হেলথ ও ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন বিষয়ক পুরস্কার মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
Ø ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সেন্টার ফর পাবলিক লিডারশিপ প্রদত্ত গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার লাভ করেন।
Ø ২০০২ সালে দ্য শোয়াব ফাউন্ডেশন সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ প্রতিষ্ঠান থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওর’ স্বীকৃতি লাভ করেন।
Ø ২০০১ সালে সুইডেন থেকে ওলফ পামে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
Ø ১৯৮০ র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।

ব্র্যাককে যেসব পুরস্কার এনে দিয়েছেন:
Ø ২০০৮ সালে মানবিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কনরাড এন হিলটন হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড।
Ø ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার।
Ø ১৯৯২ সালে ইউনিসেফ মরিস পেট অ্যাওয়ার্ড।
Ø ১৯৯০ সালে অ্যালানশন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার।
Ø ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো নোমা পুরস্কার অর্জন।

সম্মানসূচক ডিগ্রি:

Ø ১৯৯৪ কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
Ø ২০০৩ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে ডক্টর ইন এডুকেশন ডিগ্রি।
Ø ২০০৭ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স ডিগ্রি।
Ø ২০০৮ যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
Ø ২০০৯ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লেটার্স ডিগ্রি।
Ø ২০০৯ জাপানের রিক্কিও ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স লাভ।
Ø ২০১০ যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
Ø ২০১২ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি।
Ø ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
Ø ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব দি সাউথ থেকে ডক্টর অব সিভিল লজ ডিগ্রি।
Ø ২০১৬ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ড থেকে ডক্টর অব এডুকেশন ডিগ্রি।


তরুণদের কতটা বুঝতে পারছি আমরা

আমরা ছিলাম এ রকম আর ওরা অন্য রকম। প্রসঙ্গ এলে বলাবলি এমনটাই হয়ে থাকে। নতুন কালের মানুষেরা  আমাদের মতো হয়নি দেখে প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। দুঃখ বাড়ে। হতাশা বাড়ে।

সময় বদলের সঙ্গে মানুষেরও বদল ঘটবে—খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সেই বদলে আমরা কতটুকু সন্তুষ্ট হতে পারি বা মোটেও যদি না পারি, সে দায় অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিতে পারলেই ল্যাঠা চুকে যায় না।

সেই আর এই সময়ের তুলনা করে কী লাভ? কী চমৎকার কেটেছে আমাদের—এই আত্মসুখ প্রকাশ করে তৃপ্ত হই বটে। কিন্তু এখন যাদের তরুণকাল, তারা আমাদের মতো জীবন পায়নি বলে তো হা-হুতাশ করে বলে মনে হয় না। অস্বীকার করা যাবে না, বহু তরুণের জ্ঞানবুদ্ধি, বিবেচনা, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের অবাক করে—বিস্মিত, আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত করে। 

আনন্দ মিললে ভাগে খানিকটা মন্দও জুটবে—নিয়ম। ভালো-মন্দ, আলো-অন্ধকার সবই একটির সঙ্গে অন্যটি ফ্রিতে মেলে। সেই নিয়মে এ সময়ে অজস্র ভালোর দেখা মিললে আনন্দ-উৎসাহ অনুপ্রেরণা জাগে। অসংখ্য মন্দ উদাহরণও নিত্য তেড়ে আসে। আসে অস্বস্তি, হতাশা আর বেদনা ছড়াতে। 

বেদনা, হতাশা, অস্বস্তির বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়াও বেশি হয়। কেন এই বেশি? কেন যা সুখকর নয়, তা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত চর্চা অনুশীলনে উৎসাহ? 

এবার একটু পেছনে তাকানো যাক। আমাদের কৈশোর-যৌবনকাল ছিল ব্যাপক অভিভাবকত্বে সুরক্ষিত। বাড়ির বাইরে বের হতে পারলে মুক্তি-স্বাধীনতার অনুভব ছিল। ছিল জোয়ার-ভাটার নদী, অসীম আকাশ, প্রাণখোলা মাঠ, হাসিমাখা ফসলের খেত, লাফানো ঝাঁপানোর টলটলে পুকুর। অজস্র রকম আনন্দের উপকরণে জীবন ঝলমলে ছিল। তবে উপভোগের সময় সতর্ক থাকতে হতো। মাথায় রাখতে হতো কখন কী অন্যায় হয়ে যায়, কে কখন দেখে ফেলে। 

দুর্দান্ত যারা, তাদেরও অনেক বিষয়ে সামলে চলতে হতো। শিক্ষক, পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, অন্যের অভিভাবকদের বিষয়েও সতর্কতা বজায় রাখতে হতো। সে সতর্কতায় ভয় নয়, ছিল সমীহ। পাড়ার বয়সে বড়রাও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক। ক্লাব, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা—সেই বয়সে এসবের নিয়ন্ত্রণও ছিল। 

পরিবারের বাইরে যাঁদের অভিভাবকত্বের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের বয়সের কারণে মানতে হতো, তা নয়। যোগ্যতাতে তাঁরা ছিলেন সমীহের উপযুক্ত। তখন মানে না বুঝলেও পারস্পরিক সম্মানবোধ কী, তা অজ্ঞাত ছিল না। 

গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার পর যৌবন থেকে সেই অভিভাবকত্ব সরে যায়নি। গৌরবময় রাজনীতি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে নব অধ্যায়ের সূচনা করে দিয়েছিল। নাটক, সিনেমা, সংগীত, সাহিত্য, ক্রীড়া—আত্মার খোরাকের অভাব ছিল না। শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী অসংখ্য পরিচয়ের মর্যাদা জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করেছে। 

টেলিভিশন, দৈনিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক পত্রপত্রিকার প্রতি আগ্রহ ও আকর্ষণ ছিল। এখন রয়েছে অনুযোগ, অভিযোগ আর হতাশা প্রকাশ। বলা হয়ে থাকে, দেখা, শোনা ও পড়ার আগ্রহ কমেছে। পাশাপাশি নতুন নানান মাধ্যমের আবির্ভাব ঘটেছে। সেসবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল পরিমাণ মানুষ দিনরাত হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকছে। আগ্রহ ও আকর্ষণের বিষয় বদলেছে। গায়ের জোরে বলা যাবে না, এই যে হুলুস্থুল ঘাড় গুঁজে থাকা, তা কেবলই মন্দের টানে। 

সময় গড়াচ্ছে। জগৎ–সংসারের খুঁটিনাটি আঙুলডগার ইচ্ছায় নিমেষেই চোখের সামনে হাজির হয়ে যায়। এমন সুযোগ কোনো মানুষ হেলায় হারাতে চায়! মানুষ নতুন বা পুরোনো যা-ই হোক, আকাঙ্ক্ষা-আগ্রহ বা কৌতূহল সর্বদা নতুনের প্রতিই। আমরা দেখতে পাই উৎপাদক ও বিজ্ঞাপন মাধ্যমের অবিরাম চেষ্টা থাকে নিত্যনতুনকে যুক্ত করা। হোক দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় পণ্য, নতুনভাবে উপস্থাপনার চেষ্টা থেমে থাকে না। চেষ্টা মানে সৃজনশীলতা। সৃজনশীলতার মধ্যে থাকে সেই শক্তি, যা উপলব্ধি করতে পারা মানুষকে আনন্দ দান করে, মনে বিস্ময় জাগায়, টিকিয়ে রাখে ভালোবাসা। সমীহ প্রকাশের ইচ্ছাও জাগিয়ে দেয়। 

নতুনদের নিয়ে বহুজনের অনেক রকমের আক্ষেপ রয়েছে। জগতে তাদের আগে যাদের আগমন, সেই অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা আকর্ষণহীন হলে নিশ্চয়ই আগ্রহ নিয়ে তারা তা প্রত্যক্ষ করে থাকে। সে আগ্রহ তাদের জন্য যথেষ্ট অনুপ্রেরণাদায়ক কি না! 

আমাদের চর্চা, অনুশীলনের অধিকাংশ বিষয় সব সময় মন ভালো করা নয়। বিষয় অস্বস্তিকর কিন্তু পাঠক, দর্শক টানার উপাদান রয়েছে ভেবে হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশনা। অন্যদিকে যা সমাজ-সংস্কৃতি, দেশ ও মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য এবং বিশেষ বৃহৎ গোষ্ঠীর কাছে তা আবেদনহীন মনে হলে সামনের হয়ে উঠতে পারে না। গুরুত্ব হারায়। 

ক্রমাগত স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে তা একসময় স্বার্থপরতা হয়ে দাঁড়ায়। সাপ মরবে, লাঠি ভাঙবে না—এমন সুচতুর বুদ্ধির খেলায় লাভ হচ্ছে না। মানুষে মানুষে দূরত্ব, অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। নতুন প্রজন্মকে তো ভরসাস্থল পেতে হবে। না পেলে তাদের আশা-ভরসাকে তো কাগজের নৌকা বানিয়ে তারা অনির্দিষ্ট পথে ভাসিয়ে দেবে না। 

একসময় সংস্কৃতির জোরই দেশ ও মানুষের জোর ছিল। নগদ প্রাপ্তির কালে বাকির খাতায় চলে যায় সংস্কৃতি পালন। এখন জোর বলতে বোঝায় অন্য কিছু। সেই জোরের চর্চা পরিচর্যায় উচ্ছন্নে যাওয়াকে উন্নতি বলে। তেমন উন্নতি লাভের জন্য হুলুস্থুল কাণ্ডে সমগ্র ক্ষেত্রে অভিভাবকত্ব দিশেহারা। নতুন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যে চারপাশ ভুলে আপন আপন ভুবনে নেশাগ্রস্তের মতো ডুবে আছে, তাকে অস্বাভাবিকতা ভাবা যায়। ভাবা হচ্ছে। সেই স্বভাব দোষের হলে নিজেরা যে একেবারেই যে দোষহীন, তার পক্ষে জোরদার যুক্তি কি অভিভাবক শ্রেণির মুঠোতে রয়েছে? 

সবাই আমি বা আমরাতে আটকা পড়ে রয়েছি। কুড়ি-ত্রিশ বছরে যারা নতুন প্রজন্ম পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে, উঠছে, তারা কেউই আমি বা আমাদের মতো নয়। তারা আমাদের মতো হবে, এমন আশা কেন করা? তাদের ভাব, ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ধ্যানধারণা বুঝতে চাওয়ার, নিকটের হওয়ার কতখানি উদ্যোগ চোখে পড়ে? 

অস্বস্তি বা হতাশায় ভোগার চেয়ে নতুনকে বুঝতে চাওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা শুরু হোক। হয়তো অস্বস্তি হতাশার উৎপাদনে ভাটা পড়তে পারে। 

 প্রক্রিয়া খানিকটা ব্যাহত হতে পারে। 

আফজাল হোসেন অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, লেখক ও নির্দেশক


সবার ওপরে ফেসবুক

মতামত প্রকাশ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, দেশ-বিদেশের খবর, বিনোদন, কেনাকাটা—যাপিত জীবনের প্রায় সবকিছুর জন্য তরুণ–তরুণীরা নির্ভর করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর। আর তাঁদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। প্রতি ১০ জনে ৯ জন তরুণ-তরুণীর কাছেই ফেসবুকের জুড়ি নেই।

প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পেশাদার জরিপ সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড পরিচালিত এই জরিপে সারা দেশের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ তরুণ-তরুণীর মতামত নেওয়া হয়েছে।

এবারের জরিপে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীদের ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ বলছেন, ফেসবুক একমেবাদ্বিতীয়ম্‌। তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ৪৬ মিনিট সময় কাটাচ্ছেন ফেসবুকে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এবং তরুণীদের তুলনায় তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বেশি। ২০১৭ সালের জরিপে ৯৪ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণের কাছে ফেসবুক জনপ্রিয় ছিল। 

ফেসবুক তরুণ-তরুণীদের আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাসরুর। বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকের এই আসক্তি আশঙ্কাজনক। তরুণ-তরুণীদের বড় একটা সময় ফেসবুক ব্যবহারের মতো অনুৎপাদনশীল কাজে চলে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের অনেক ইতিবাচক বিষয় আছে, সেগুলো তাঁদের সামনে তুলে ধরতে হবে। 

তারুণ্য জরিপে দেখা যায়, মার্ক জাকারবার্গের অনবদ্য সৃষ্টি ফেসবুকে আস্থা রাখেন ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ইন্টারনেটে নির্ভরশীল তরুণ-তরুণীদের সবাই। তবে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক কম। এই বয়সী ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ-তরুণীর কাছে ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয়। 

শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বেই একাধিপত্য ফেসবুকের। গত মাসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিন মাসে তাদের মাসিক ব্যবহারকারী বেড়ে ২৪৫ কোটিতে পৌঁছেছে। বর্তমানে দৈনিক ১৬২ কোটি মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন।

অবশ্য ফেসবুকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তারা ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশে বিক্রি করে দিচ্ছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাসহ নানান কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম। তবে এ–ও সত্যি, ফেসবুকের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজনের ফেসবুক বন্ধুতালিকায় নানা ধরনের মানুষ থাকেন। সেখানে অন্যদের দেওয়া নানা ধরনের পোস্ট থেকে তরুণ-তরুণীরা মনঃকষ্টে ভোগেন। তাতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে একধরনের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় আসক্তির ফলে তাঁরা বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছেন বলেও তাঁরা মনে করেন।

প্রথম আলোর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশি তরুণদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ইউটিউব। ভিডিও শেয়ারিং এই ওয়েবসাইট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ-তরুণীর কাছে জনপ্রিয়। দুই বছরের ব্যবধানে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৭ সালেও প্রথম আলোর উদ্যোগে এই জরিপ হয়েছিল। ২০১৭ সালে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণীর সামাজিক মাধ্যমের পছন্দের তালিকায় ইউটিউব ছিল।

জরিপে দেখা যায়, ইউটিউব ব্যবহারে তরুণেরা এগিয়ে। তরুণীদের তুলনায় ইউটিউবে অনেক বেশি মজে থাকেন তরুণেরা। প্রায় ৬২ শতাংশ তরুণ জনপ্রিয়তার দৌড়ে ইউটিউবকে এগিয়ে রেখেছেন। তরুণীদের ক্ষেত্রে তা ৩২ শতাংশ। ফেসবুকের মতো ইউটিউব পছন্দের ক্ষেত্রেও ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর আধিক্য বেশি। 

জনপ্রিয়তার মিটারে মেসেজিং অ্যাপ ইমো আছে তৃতীয় স্থানে। ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ-তরুণীর কাছে জনপ্রিয় এই অ্যাপ। তবে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ইমো বেশি জনপ্রিয়। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে এর জনপ্রিয়তা কম। গত দুই বছরে তাঁদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে ইমো। ২০১৭ সালে ইমো জনপ্রিয় ছিল ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। এবার তা নেমে গেছে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশে।

জনপ্রিয়তার বিচারে চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপে মন দেওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশ কম, ১৩ শতাংশের কিছু বেশি। তবে শহর এলাকায় এই মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারের হার বেশি। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, সুরক্ষিত উপায়ে বার্তা আদান–প্রদানের সুবিধাই হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়ার মূল কারণ। বলা হয় হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়। এই ফিচার থাকায় একজন ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। তবে ইদানীং এই দাবির যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও গুগল প্লাসে ঢুঁ মারেন। ছবি শেয়ারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে। মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারেরও একই অবস্থা।

২০১৭ ও ২০১৯ সালের জরিপের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ইউটিউব ছাড়া বাকি সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এ দেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয়তা সামান্য হলেও হারিয়েছে। যেমন ২০১৭ সালের জরিপের তুলনায় এবার ইউটিউবের জনপ্রিয়তা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ফেসবুক যৎসামান্য জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তাও নিম্নগামী। 

কোন মাধ্যমে কত সময়এবারের জরিপে দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন গড়ে ৪৬ মিনিট সময় কাটান ফেসবুকে। এর তুলনায় ইউটিউবে ৫ মিনিট সময় কম দেন তাঁরা। গতবারের তুলনায় সময় কাটানোর এই হার কাছাকাছি, খুব বেশি হেরফের হয়নি এ ক্ষেত্রে। তবে ইমোতে সময় কাটানো বেশ কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সেই প্রভাবই পড়েছে ইমোর জনপ্রিয়তায়। 

জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে ফেসবুকে আকৃষ্ট মোট তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪২ শতাংশের বেশি প্রতিদিন গড়ে আধা ঘণ্টা সময় ফেসবুকে দিচ্ছেন। ৩১ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত সময় দিচ্ছেন ৪৫ শতাংশ। তবে ১ ঘণ্টার বেশি সময় দেওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে।

অন্যদিকে ইউটিউবে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় কাটানো তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬১ শতাংশ। সময় কাটানোর দিক থেকে ফেসবুক-ইউটিউবের তুলনায় ইমো-হোয়াটসঅ্যাপ তাঁদের খুব আকর্ষণ করতে পারছে না। জরিপ অনুযায়ী, তাঁদের ৮০ শতাংশের বেশি এই দুই মেসেজিং অ্যাপে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা সময় কাটান। তরুণ-তরুণীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভালো কিংবা মন্দ, তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বাদ দিয়ে চলা যাবে না, কিন্তু এগুলোর ক্ষতিকর দিক বাদ দিয়ে ইতিবাচক দিকগুলো নিতে হবে। এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে।

আরও সংবাদ

বিষয়:


দিনরাত কাটে ইন্টারনেটে

ইন্টারনেটে কী কী কাজ হয়, সেই হিসাব রাখার চেয়ে কোন কোন কাজ হয় না—সেই হিসাব রাখা বেশি সহজ। অন্তত আঙুল গুণেই তা মনে রাখা সম্ভব। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স লির এই উদ্ভাবন। দিনকে দিন ইন্টারনেটের সঙ্গে মানুষের বাঁধন আরও দৃঢ় হচ্ছে।

বিশ্বজুড়েই ইন্টারনেটের আধিপত্য বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। জন্মদিনের ছবি আপলোড থেকে শুরু করে বাজারসদাই, চাকরির আবেদন, টাকা লেনদেন—সবই এখন সম্ভব ইন্টারনেটে। 

বাংলাদেশের তরুণেরা এখন অবসরে একটা বড় সময় কাটাচ্ছেন ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। টেলিভিশন দেখা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পরই এর অবস্থান। 

প্রথম আলোর উদ্যোগে পেশাদার জরিপ সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের এক জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপে দেখা গেছে, অবসরে সময় কাটানোর উপায় হিসেবে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটিং বা গল্পগুজবে তরুণেরা বেজায় আগ্রহী। ৫৩ শতাংশের বেশি তরুণের কাছে এটি জনপ্রিয়। এ প্রবণতা শহর ও গ্রামাঞ্চল—সবখানে প্রায় একই।

দেশের তরুণেরা গড়ে প্রতিদিন ৮৭ মিনিট বা প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে কাটান। ২০১৭ সালে এটি ছিল ৮০ মিনিট। টেলিভিশন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্পগুজবেও এত সময় দিচ্ছেন না তরুণেরা। এ প্রবণতা শহুরে ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি। এই দুই শ্রেণির তরুণেরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিনিটের বেশি সময় কাটান ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। 

২০১৭ সালের সঙ্গে এবারের জরিপের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্রাউজ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণদের সময় কাটানোর হার আগের চেয়ে বেড়েছে। ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় কাটানোর ক্ষেত্রে তরুণের সংখ্যা গতবারের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। আর দুই ঘণ্টার বেশি সময় কাটানোর ক্ষেত্রে তরুণদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। 

গুণগত জরিপে তরুণেরা বলেছেন, তাঁদের কাছে অবসর কাটানোর সেরা উপায় ইন্টারনেট। বই-পত্রিকা পড়া, টেলিভিশন দেখা বা রেডিও শোনা—কিছুই এর ধারেকাছে নেই। শহুরে তরুণদের কাছে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। কারণ, এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া থেকে শুরু করে পরিবার-পরিজন ও দূরদূরান্তের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যায়।


ইন্টারনেট নয়, ভালো মন্দ নিজের ভেতরে

থম আলোর তারুণ্য জরিপ থেকে দুই দিন আগে জানলাম, দেশে প্রতি চার তরুণের মধ্যে তিনজনই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন প্রায় ৭৮ শতাংশ তরুণ। অথচ কী আশ্চর্য, এই তরুণদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হিসাব–নিকাশের মধ্যে ‘লিংকডইন’–এর নাম কোথাও নেই!

উদ্বিগ্ন তরুণেরা যদি কাজের খোঁজে নানা সুযোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতেন, দেশ–বিদেশে চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করতেন, তাহলে তো লিংকডইনেই তাঁদের ভিড় করার কথা। কারণ, পেশাজীবীদের জন্য এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আর কাজের সুযোগসন্ধানীদের জন্য ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করার সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম। জরিপ বলছে, তরুণেরা প্রতিদিন গড়ে ৮৭ মিনিট সময় ব্যয় করেন ইন্টারনেটে। প্রতিদিন এই ৮৭ মিনিটের মধ্যে ১০ মিনিটও যদি আত্মোন্নয়নে কাজে লাগানো যেত, তরুণেরা যদি ইন্টারনেটের শক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন দক্ষতা রপ্ত করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই উদ্বিগ্ন তরুণদের নিয়ে আমাদের উদ্বেগ অনেকটা কমত।

বাংলাদেশের আনাচকানাচে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সুফল পৌঁছে যাচ্ছে বেশ দ্রুত। কিন্তু ডিজিটাল সাক্ষরতার (ডিজিটাল লিটারেসি) প্রয়োজনীয়তা বুঝতে আমরা বোধ হয় একটু দেরি করে ফেলেছি (শুধু আমরা বললে ভুল হবে, পুরো পৃথিবীই সময়মতো এর ব্যাপকতাটুকু ধরতে পারেনি)। আশার কথা হলো, এখন সরকারিভাবে মানুষকে ইন্টারনেটের ব্যবহার–আদবকেতা শেখাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কিংবা বেসরকারি সংস্থাগুলোও বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আয়োজন করছে।

এ রকম বেশ কয়েকটি আয়োজনে গিয়ে আমি নিজেও ডিজিটাল সাক্ষরতার কথা বলেছি, আমাদের টেন মিনিট স্কুলে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও বানিয়েছি। কিন্তু দিন শেষে কেন যেন আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই ফুটো কলসের মতো মনে হয়। এক দিকে আমরা হয়তো দুজন মানুষকে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার শেখাচ্ছি, অন্যদিকে আরও দুজন নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছেন, যিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি হয়তো ফেসবুকের একটা ছবি কিংবা অনলাইনের যেকোনো খবর কোনো যাচাই–বাছাই ছাড়াই অকাট্য সত্য বলে ধরে নিচ্ছেন।

ফেসবুক অনেকটা চিনির মতো—আমাদের শরীর–মনে একধরনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। চিনি খাওয়া কিন্তু খারাপ নয়। এর মধ্যে শরীরের জন্য কিছু উপকারী উপাদানও আছে। কিন্তু আপনি যদি খাওয়ার পরিমাণটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে বিপদ। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা বলি বাচ্চাদের হাত থেকে মুঠোফোন কেড়ে নাও, ফেসবুক বন্ধ করে দাও। এটা তো সমাধান নয়। যে শিশুটিকে আপনি ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখছেন, কদিন পর ওর ক্লাস হবে ইন্টারনেটে, ওর অফিস হবে ভার্চ্যুয়াল। অতএব, তাকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখার কোনো উপায় নেই। বরং ওকে এর সঠিক ব্যবহার শেখান।

একটা মানুষের ইউটিউবের হোমপেজ হলো তাঁর প্রতিফলন। আপনার হোমপেজে কী ধরনের ভিডিও আসে? নাচ, গান, খবর, খেলাধুলা? গান হলে কার গান? কোন ভাষার গান? ইউটিউবের হোমপেজ একনজর দেখেই মানুষটির পছন্দ–রুচি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আমরা যদি নিজেরাই একবার নিজেদের হোমপেজের দিকে তাকিয়ে ভাবি, তৃতীয় একজন ব্যক্তি আমার হোমপেজ দেখে আমার সম্পর্কে কী ধারণা পাবে, আমি কি নিজেকে এভাবে অন্যের সামনে তুলে ধরতে চাই? তাহলেই কিন্তু নিজেকে বদলানোর তাগিদটা অনুভব করা যায়। পৃথিবীতে যত কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে, প্রতিটিরই ভালো–মন্দ দিক আছে। দিন শেষে ভালো–মন্দ নিজের ভেতরে; ইন্টারনেট বা ফেসবুকে নয়।

 লেখক: টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা

আরও সংবাদ

বিষয়:

২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০৮


ভালো দিকগুলো দেখার পক্ষে

খুব স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারনেট আমার কাছে অপরিহার্য বিষয়। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দারুণ প্রয়োজনীয়। কথা হচ্ছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আমরা কখন ও কী কাজে ব্যবহার করছি। কাজের সময়ে ব্যবহার করলে এগুলোর বিভিন্ন নেতিবাচক দিকই সামনে আসবে। কেবল সময় কাটানোর জন্য ব্যবহার করলে একসময় এগুলো অভিশাপ হিসেবেই জীবনে প্রভাব ফেলবে। তারপরও সব বিচারে আমি ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক দিকগুলো দেখার পক্ষে। তরুণ–তরুণীরা যেন এগুলো ব্যবহারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেয়, তা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা এর সঙ্গে সময়, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়–আশয় সরাসরি যুক্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে ফেসবুকই আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই তরুণ। ফলে তাদের না বললেও চলে যে ফেসবুক কতটা শক্তিশালী মাধ্যম। এর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। কারণ, ফেসবুক ব্যবহার করে আমরা আনন্দ পাই। অনলাইনে গুজব যেমন দ্রুত ছড়ায়, তেমনই ভালো খবর ছড়াতেও সময় লাগে না। ফেসবুক বা অনলাইন মাধ্যমগুলোকে ভালো খবর ছড়ানোর মতো কাজেই বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে। তরুণ–তরুণীরা অবশ্য এসব প্রতিদিনই করছে। ফেসবুকে রোজ অনেক ভালো কাজের খবর পাই, ছবি ও ভিডিও দেখি। এর পাশাপাশি এফ কমার্স অর্থাৎ ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসাতেও তাদের আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই ভালো কাজ করছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও ফেসবুকের চাহিদা শীর্ষে। ফলে এই খাতেও তারা ভালো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। ডেভেলপাররা যেমন ফেসবুকের জন্যই তৈরি করছে গেমস ও অ্যাপ। আবার ভালোর পক্ষে দাঁড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ফেসবুকের ব্যবহার আমরা সারা বিশ্বে দেখছি। সবই কিন্তু করছে ফেসবুকের তরুণ ব্যবহারকারীরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধার বাইরে আরও হাজারটা সুবিধা আছে। তাই অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে, তাঁদের সন্তানেরা যেন ভালো কাজেই ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহার করে। দেশের বাইরের খান একাডেমির কথাই ধরুন। অনলাইনে কত কিছু শেখাচ্ছে। ফেসবুকও কিন্তু একই রকম কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচিত্র সব বিষয়ে আগ্রহী মানুষেরা মিলে গ্রুপ খুলছে। সেখানে মতবিনিময় হচ্ছে, নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি হচ্ছে। আগ্রহ অনুযায়ী এই গ্রুপগুলোতে যুক্ত হওয়া, আদর্শ ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করা, বিশেষজ্ঞের শরণ নেওয়া—ফেসবুকে সবই কিন্তু সম্ভব। আবার এটাও ঠিক, ফেসবুকে কিছু দেখলেই চোখ বুজে বিশ্বাস করাও বোকামি। এটা গোটা ইন্টারনেটের বেলাতেই প্রযোজ্য। ফেসবুককে খবরের উৎস হিসেবে নেওয়ায় কোনো সমস্যা আমি দেখি না। এটি আর দশটি ওয়েবসাইটের মতোই। তবে খবর পেলে তা যাচাই করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ কারণে এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের স্লোগান ছিল, ‘সত্য–মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’।

ফেসবুক বা ইন্টারনেটে আসক্তি এখন বড় চিন্তার বিষয়। আদতে এই ‘স্ক্রিন টাইম’ তো কেবল ফেসবুককে ঘিরেই নয়। অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখাও স্ক্রিন টাইমের মধ্যে পড়ে। তাই তরুণ–তরুণীদের এ বিষয় অবশ্যই সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের ভূমিকা বেশি। কারণ, একদম ছেলেবেলা থেকে এই অভ্যাস গড়ে উঠছে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ফোন, কম্পিউটার ব্যবহারের নিয়ম করে দিলে সমাধান পাওয়া সম্ভব। আর তরুণ–তরুণীদেরকে নিজেদের ভালোর জন্যই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সৈয়দ আলমাস কবীর, সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) 


টেলিভিশনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে ইন্টারনেট

অবসরে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে গল্পগুজব করেন, এমন তরুণের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে পরিবারকে আগে যে সময় দিতেন, তা গড় হিসাবে কিছুটা কমেছে। অবশ্য অবসর কাটানোর ক্ষেত্রে এখনো তাঁদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ টেলিভিশন। যদিও আগের চেয়ে সেই ঝোঁক কিছুটা কমে আসছে। সেখানে ইন্টারনেটে সময় কাটানোর প্রবণতা অনেক বেড়েছে। অবসরের মাধ্যম হিসেবে এখন টেলিভিশনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে ইন্টারনেট।

দেশের তারুণ্যের ভাবনা জানতে প্রথম আলোর উদ্যোগে পেশাদার জরিপ সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট পরিচালিত জরিপে তরুণ–তরুণীদের অবসর কাটানোর এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এই জরিপে ১৫–৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ জন অংশ নেন।

দুই বছর আগেও এই জরিপ করেছিল প্রথম আলো। ২০১৭ সালের সেই জরিপের সঙ্গে তুলনা করলে এবার তরুণ–তরুণীদের অবসর জগতে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন অবসরে তাঁরা এখন আগের চেয়ে কিছুটা কম ঘুমান। সংবাদপত্র ও পাঠ্যসূচির বাইরের বই পড়া আগের চেয়ে কমেছে।

টেলিভিশন প্রথম পছন্দ হলেও ঝোঁক কমছে

লেখাপড়া, চাকরিসহ নিত্যদিনের কাজের ফাঁকে কিংবা ছুটিতে তরুণ–তরুণীরা নানাভাবে অবসর কাটান। কখনো সময় কাটান সৃষ্টিশীল কাজে, কখনো বিনোদনে। যেমন ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ অবসরে টেলিভিশন দেখার কথা বলেছিলেন। দুই বছরের ব্যবধানে টেলিভিশন দেখার হার কিছুটা কমেছে। এবার ৭৮ দশমিক ২ শতাংশ টেলিভিশনের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোন দেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠান বেশি দেখেন, এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন জরিপে করা হয়নি।

টেলিভিশন দেখার সময়ও কমেছে তাঁদের। আগে দিনে গড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা টিভি দেখার কথা বলেছিলেন তাঁরা। এখন তা কমে ঘণ্টাখানেকে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের দেখা পছন্দের অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নাটক, খবর, সিনেমা ও গান। এর মধ্যে তরুণ–তরুণীদের অর্ধেকের বেশির কাছে জনপ্রিয় হলো নাটক ও খবর। যদিও এ দুটির জনপ্রিয়তা, বিশেষ করে খবরের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমেছে। সেই তুলনায় সিনেমা দেখা, গান শোনা কিছুটা বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি পছন্দ টেলিভিশন হলেও তা আগের চেয়ে কমে আসছে। ইন্টারনেটে সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাট্য সংগঠক ও অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের মান তেমন বাড়েনি। এ কারণে টেলিভিশনের প্রতি তাঁদের আগ্রহ হয়তো কমে আসছে। তবে আগের চেয়ে খবরের জনপ্রিয়তা কমার কারণটি পরিষ্কার নয়। হয়তো তাদের রাজনীতিবিমুখতার কারণে তারা খবর কম দেখতে পারে।’

গল্পগুজব ইন্টারনেটে যত সময়

তবে তরুণ–তরুণীরা অবসরের পুরোটাই টেলিভিশনে কাটান না। পরিবার–পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে ও আড্ডা দিয়ে এবং ইন্টারনেটেও কাটান বড় একটা সময়। জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে তাঁদের ৪৩ শতাংশ বলেছিলেন, অবসরের দ্বিতীয় পছন্দ পরিবারের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটানো। সেখানে এবার ৬০ শতাংশের বেশি পরিবারের সঙ্গে গল্পগুজব করার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ এখন তাঁদের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে অবসর কাটানোর প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। টেলিভিশন দেখা ও গল্পগুজব—এই দুই পছন্দের মধ্যে ব্যবধানও কমে এসেছে। আগে এই দুই পছন্দের মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এবার তা কমে হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

আবার পরিবারের সঙ্গে গল্প বা আড্ডা দিয়ে সময় কাটানো মেয়েদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। আর ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। পরিবারের সঙ্গে গল্প বা আড্ডা দেওয়ার সংখ্যা বাড়লেও তাদের সময় দেওয়ার গড় আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। আগে যেখানে তাঁরা দিনে গড়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় দিতেন, সেখানে এখন তার চেয়ে প্রায় ১৫ মিনিট সময় কম দেন।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এখন তরুণ–তরুণীরা অবসরে সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁরা গড়ে প্রতিদিন ৮৭ মিনিট বা প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে কাটান। ২০১৭ সালে তা ছিল ৮০ মিনিট। এ প্রবণতা শহুরে ও উচ্চশিক্ষিত তরুণ–তরুণীদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি। এই দুই শ্রেণি প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিনিটের বেশি সময় কাটায় ইন্টারনেটে।

শহুরে তরুণ–তরুণীদের মধ্যে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণও জরিপে উঠে এসেছে। ইন্টারনেট এখন তাঁদের তাত্ক্ষণিকভাবে সংবাদ জানার উৎস। বিদেশে থাকা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমও এটি। ইন্টারনেট সংবাদ দেখা, গান শোনা এবং টেলিভিশন দেখারও সুযোগ করে দিয়েছে। আবার কোনো তথ্য তাৎক্ষণিক ও দ্রুত জানতে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে।

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁদের তৃতীয় পছন্দ হলেও অন্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় এটির প্রতি ঝোঁক বেশ বেড়েছে। শীর্ষে থাকা টেলিভিশনের এখন বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সামনে এসেছে ইন্টারনেট। ২০১৭ সালে তাঁদের ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ বলেছিলেন, ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁদের অবসরের পছন্দ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

তবে বেশির ভাগ তরুণ–তরুণী একমত যে বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি সময় ব্যয় করে। যার নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এ জন্য তারা দেশে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, হতাশা, সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি, জালিয়াতি, ধর্ষণ, মাদকাসক্তি এবং ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে দুষছে। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁদের পেশা গড়ার পথে বাধা হিসেবেও কাজ করছে। বয়স্কদের চেয়ে কম বয়সী তরুণ–তরুণীদের ওপর ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব বেশি। যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ভালো–মন্দ দিকগুলো বুঝতে পেরেছেন, তাঁরাই এই মাধ্যমের সুবিধা পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিধি দ্রুতই বাড়ছে। এর ফলে অচিরেই বিনোদন কিংবা সংবাদের উৎস হিসেবে ইন্টারনেট প্রথম স্থান নিয়ে নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তাঁরা দিনে গড়ে দুই ঘণ্টার বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের পুরো জগৎটা তাঁদের বোঝা দরকার, বোঝানো দরকার। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের কী করা উচিত, তা সমাজবিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন।

সংবাদপত্র, ঘুম খেলা

অবসরে ঘুমানো তরুণ–তরুণীদের পঞ্চম পছন্দ। জরিপে তাঁদের ৩৯ শতাংশ বলেছেন, অবসরে ঘুমান। অবশ্য অবসর কাটানোর সময় হিসেবে ঘুমানোর অভ্যাস পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয়। অবসরে তাঁরা দিনে গড়ে সোয়া ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটানোর কথা বলেছেন। গতবারের জরিপ অনুযায়ী, তাঁরা দিনে গড়ে ঘুমাতেন ৬৯ মিনিট। অবসরে ছেলেদের (২৭ দশমিক ৪ শতাংশ) চেয়ে মেয়েরা (৫০ দশমিক ৫ শতাংশ) ঘুমানোর কথা বলেছেন বেশি।

 ২০১৭ সালে তাঁদের ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ বলেছিলেন, অবসরে তাঁরা খেলাধুলা করেন। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে খেলাধুলায় সময় ব্যয় আগের তুলনায় কমেছে। আগে অবসরে দিনে গড়ে ৮০ মিনিট সময় ব্যয় করতেন তাঁরা, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬২ মিনিট।

জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সংবাদপত্র ও বই (পাঠ্যপুস্তকের বাইরের) পড়ে অবসর কাটানোর প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। ২০১৭ সালে তাঁদের প্রতি ১০ জনের তিনজন বলেছিলেন, অবসরে তাঁরা সংবাদপত্র ও বই পড়েন। এবার জরিপে মোটের ওপর তাঁদের প্রায় দুজনের উত্তরে এই অভ্যাসের কথা এসেছে। আগে তাঁরা দিনে গড়ে ৩৪ মিনিট সময় দিতেন সংবাদপত্রে, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ মিনিটে।

তবে তথ্য জানার উৎস হিসেবে ছাপা সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের গুরুত্ব আগের তুলনায় বেড়েছে। সবচেয়ে বেড়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আগে তাঁদের মাত্র ৯ শতাংশ বলেছিলেন, তথ্য জানার উৎস অনলাইন নিউজ পোর্টাল; এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

তরুণ–তরুণীদের অবসরভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, সময় কাটানোর জন্য সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেটে তাঁরা আগের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন, এটি বৈশ্বিক চিত্র থেকে খুব ভিন্ন নয়। গণযোগাযোগ ও আন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগ সব সময় পরস্পরবিচ্ছিন্নও নয়। সবার সঙ্গে টেলিভিশন দেখা যেমন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিপূরক হতে পারে; তেমনি সামাজিক মাধ্যমে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর ছবি দেওয়া বা গল্প শেয়ার করাও কিন্তু আকর্ষণ হতে পারে।

তরুণ–তরুণীদের তথ্য জানার আগ্রহেরও কমতি হয়নি উল্লেখ করে গীতি আরা নাসরিন বলেন, সব মাধ্যমের কাছেই তাঁদের বড় একটি প্রত্যাশিত বিষয় খবর। তথ্য-স্মার্ট থাকতে চান। দ্রুত সেই তথ্য পেতেও চান। সুতরাং বিভিন্ন মাধ্যমে সঠিক তথ্য পাওয়া বা নেতিবাচক তথ্য পাওয়ার মতো যে সমস্যাগুলো তাঁরা শনাক্ত করছেন, সেগুলো অতিক্রম করতে তাঁদের সহায়তা করা, অর্থাৎ তাঁদের মিডিয়া-সাক্ষর করে তোলা এখন একটি জরুরি বিষয়।

অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনের মতে, ডিজিটাল জগতে অতিরিক্ত সময় কাটানো কমিয়ে আনার জন্য আরও দরকার অবসর কাটানোর বিকল্প সুযোগ তৈরি। তাঁরা খেলাধুলা কম করছেন, কিংবা বই কম পড়ছেন, এ বিষয়ে শুধু ইন্টারনেটকে দুষে তো লাভ নেই। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে, ইন্টারনেটেও তাঁরা ই-বই পড়বেন। কিংবা খেলাধুলার সুযোগ ও পরিসর থাকলে হয়তো এত দূর স্ক্রিননির্ভর তাঁরা হবেন না। সুতরাং তরুণ–তরুণীদের যথাযথ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য সামগ্রিকভাবে তাঁদের সুস্থ ও গঠনমূলক অবসর কাটানোর সুযোগ তৈরি করা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।

বছরটি কেমন গেল

মুহম্মদ জাফর ইকবাল : এ বছরটি প্রায় শেষ। অন্যদের কথা জানি না, আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে সামনের বছরটির জন্য অপেক্ষা করছি। এর প্রধান কারণ সামনের বছরটিকে আমরা টুয়েন্টি টুয়েন্টি বলতে পারব (যখন কেউ চোখে নির্ভুল দেখতে পারে সেটাকে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভিশন বলে!)।

সামনের বছরটি নিয়ে আমরা নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা করছি; কিন্তু এই বছরটি কেমন গেছে? আমি একটা ছোট কাগজে বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তালিকা লিখতে গিয়ে দেখি বেশিরভাগই মন খারাপ করা ঘটনা। কে জানে আমাদের মস্তিষ্ক হয়তো আনন্দের ঘটনা সহজেই ভুলে যায়, মন খারাপ করা ঘটনা না চাইলেও মনে থাকে।

যেমনধরাযাকনুসরাতেরঘটনাটি।আমরাগল্পউপন্যাসলেখারসময়বানিয়েবানিয়েনুসরাতেরমতোচরিত্রতৈরিকরি; কিন্তুসত্যিসত্যিযেআমাদেরচারপাশেরমানুষেরমাঝেনুসরাতেরমতোতেজিমেয়েরাথাকেকেজানত?

নুসরাতেরঘটনাটিযেখুববিচ্ছিন্নএকটিঘটনাতাকিন্তুনয়; প্রায়নিয়মিতভাবেআমরাখবরেরকাগজেএরকমখবরপড়ি, যেখানেএকটাছোটমেয়েকেধর্ষণকরেমেরেফেলাহচ্ছে।ধর্ষকখুনিরাপ্রায়সবসময়ইধরাপড়েযায়, তাদেরবিচারহয়, শাস্তিহয়; কিন্তুতারপরওমেয়েদেরওপরনিষ্ঠুরতারঘটনাকমছেনা।আমিগবেষকনই, তারপরওমনেহয়ঘটনাগুলোবাড়ছে,কেনবাড়ছেআমরাজানিনা।

শুধুআমাদেরদেশেবাড়ছেতানয়, আমাদেরপাশেরদেশভারতবর্ষেনারীধর্ষণেরঘটনাগুলোরীতিমতোভয়াবহ, ‘মেডইনইন্ডিয়াবদলেনতুনবাক্যচালুহয়েছে, ‘রেপইনইন্ডিয়া’ (ভারতবর্ষেরঅবস্থাসবদিকদিয়েইভয়াবহ, তবেআমাদেরদেশেসেটানিয়েসমালোচনাকরলেছাত্রলীগএবংদুএকজনমন্ত্রীখুবনাখোশহন, কারণটাকী?)

নুসরাতকেপুড়িয়েমারাহয়েছিল।আগুনেপুড়েমারাযাওয়াখুবকষ্টের।বিএনপিজামায়াতএকসময়একেবারেসাধারণনিরীহমানুষদেরপেট্রলবোমাদিয়েপুড়িয়েমারারব্যাপারেখুববড়এক্সপার্টহয়েছিল, সেজন্যতাদেরমনেরভেতরকখনওকোনোঅনুশোচনাহয়কিনাআমারখুবজানতেইচ্ছাকরে।সেইপুড়েযাওয়ামানুষদেরচিকিৎসাদিতেগিয়েআমাদেরদেশেখুবভালোবার্নইউনিটগড়েউঠেছিল।তাইযখনকেরানীগঞ্জেরপ্লাস্টিককারখানায়আগুনেপুড়েএকজনমারাগেলএবং৩৪জনকেআহতঅবস্থায়হাসপাতালেনেয়াহল, তখনআমিভেবেছিলামতাদেরপ্রায়সবাইহয়তোবেঁচেযাবে।

একেবারেসর্বশেষখবরঅনুযায়ীসবমিলিয়েএখনপর্যন্ত২২জনমারাগেছে।একেবারেসাধারণকমবয়সীশ্রমিক, মৃত্যুএসেতাদেরযন্ত্রণারউপশমকরেগেছে; কিন্তুতাদেরআপনজনদেরহাহাকারেরদায়িত্বকেনেবে? দুর্ঘটনারওপরকারওহাতনেই, কিন্তুঘটনাগুলোতোদুর্ঘটনানয়।খবরেরকাগজেরখবরঅনুযায়ীপ্লাস্টিককারখানারঅনুমোদনপর্যন্তছিলনা! আমরাকখনওরানাপ্লাজারকথাভুলবনা; কিন্তুসেইভয়াবহরানাপ্লাজারঘটনারপরএখনআমাদেরগার্মেন্টইন্ডাস্ট্রিসারাপৃথিবীরমাঝেসবচেয়েনিরাপদইন্ডাস্ট্রিহিসেবেপরিচিতিপেয়েছে।কেরানীগঞ্জেরনিষ্ঠুরঘটনারপরকিএকইধরনেরব্যাপারঘটতেপারেনা? এইদেশকিশ্রমিকদেরজন্যএকটিনিরাপদকর্মক্ষেত্রহতেপারেনা?

যেমৃত্যুগুলোরকথাআমরাসরাসরিজানতেপাই, শুনতেপাইসেগুলোনিয়েআমরাবিচলিতহই।কিন্তুযেমৃত্যুগুলোরকথাআমরাজানতেপাইনা, শুনতেপাইনাসেগুলোনিয়েআমরামাথাঘামাইনা।সেরকমমৃত্যুকিন্তুনিঃশব্দেঘটেযাচ্ছে।এরসবচেয়েবড়কারণহচ্ছেপরিবেশদূষণ।আমরাযারাঢাকাশহরেথাকিতারাসবসময়ইদূষণদেখেবড়হয়েছি।আমরাসেটাপ্রায়মেনেইনিয়েছিলাম, কখনওকল্পনাকরিনিঢাকাশহরেরবায়ুদূষণআসলেসারাপৃথিবীরমাঝেসবচেয়েভয়াবহদূষণ, এখানকারবাতাসপ্রতিদিননাহলেওমাঝেমাঝেইসারাপৃথিবীরসবচেয়েদূষিতবাতাস।

বিষয়টিজানারপরথেকেআমিপ্রতিদিনবাতাসেরখোঁজনিই, শুনেঅবিশ্বাস্যমনেহতেপারে, আমিএখনপর্যন্তএকদিনওবাতাসকেঅস্বাস্থ্যকর’, ‘ভয়ঙ্করঅস্বাস্থ্যকরছাড়াআরকিছুদেখিনি! যারাবাতাসেবেঁচেথাকারচেষ্টাকরে, তারাযদিসড়কদুর্ঘটনাবাঅন্যকিছুতেমারাযেতেনাপারে, ভয়ঙ্কররোগেশোকেভুগেমারাযেতেহবে।হাসপাতালেরবিলদিতেদিতেপরিবারসর্বস্বান্তহয়েযাবে! আগেবায়ুদূষণেরব্যাপারটিনিয়েকাউকেমাথাঘামাতেদেখিনি।

আজকালমাঝেমাঝেইখবরেরকাগজেনিয়েআলোচনাহয়, এমনকিঢাকারআশপাশেকিছুবেআইনিইটভাটাগুঁড়িয়েদেয়াহয়েছেবলেওখবরবেরহয়েছে।ধুলাবালিকমানোরজন্যপানিছিটানোহয়বলেওজেনেছি।একসময়ঢাকাশহরখুবপরিপাটিছিল, আবারএটিএকদিনপরিপাটিশহরহবেসেইআশায়আছি।ইচ্ছাকরলেএবংচেষ্টাকরলেসবইসম্ভব।শুনেছিবড়শহরেরমাঝেরাজশাহীশহরটিনাকিখুবসুন্দরএকটাশহরেপরিণতহয়েছে।নতুনরূপনেয়ারপরদেখতেযাওয়াহয়নি।দেখারজন্যআগ্রহনিয়েঅপেক্ষাকরছি।

সারাবছরনানারকমখারাপখবরেরশিরোনামহয়েযেসংগঠনটিরনামএসেছেসেটিহচ্ছেছাত্রলীগ।লিচুচুরিথেকেশুরুকরেধর্ষণ, খুন, নির্যাতনকিংবাশিক্ষককেপুকুরেফেলেদেয়াতাদেরকর্মকাণ্ডেকীনেই? আমিঅনেকবারবলেছি, আমাদেরঅত্যন্তদক্ষমাননীয়প্রধানমন্ত্রীরবিশালএকটিঅর্জনকেছাত্রলীগেরপুঁচকেএকজনসদস্যকোনোপ্রত্যন্তএলাকায়একটিঅপকর্মকরেমুহূর্তেধূলিসাৎকরেদিতেপারে।

আমারনিজেরচোখেদেখাসবচেয়েহৃদয়বিদারকঘটনাছিল, যখনআমাদেরবিশ্ববিদ্যালয়েছাত্রলীগেরকর্মীরাজয়বাংলাএবংজয়বঙ্গবন্ধুস্লোগানদিয়েশিক্ষকদেরওপরঝাঁপিয়েপড়েছিল।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেছাত্রসংসদনির্বাচনদেয়ারদাবিউঠেছে।ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়েসেইনির্বাচনকরাওহয়েছে।আমিএকেবারেনিশ্চিতহয়েবলতেপারি, যদিসত্যিসত্যিভালোভাবেছাত্রছাত্রীদেরভোটদিতেদেয়াহয়তাহলেএদেশেরবিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেছাত্রলীগেরকোনোনেতানির্বাচিতহয়েআসতেপারবেনা।

দেশেছাত্রলীগযেকীভয়ঙ্করএকটাজায়গায়পৌঁছেগেছেআমরাসেটানিশ্চিতভাবেবুঝতেপেরেছিলাম, যখনবুয়েটেআবরারকেপিটিয়েমেরেফেলাহয়।প্রশাসনতাদেরপক্ষে, পুলিশতাদেরপক্ষেএবংতাদেরকিছুইহবেনাসেব্যাপারেতারাএতনিশ্চিতছিলযে, তারাপালিয়েযাওয়ারওপ্রয়োজনমনেকরেনি।

ছাত্রলীগেরসঙ্গেসঙ্গেবছরখবরেরশিরোনামহয়েছেনভাইসচ্যান্সেলররা।শিক্ষাকিংবাগবেষণায়কোনোমহানঅবদানেরজন্যনয়, নানাধরনেরঅপকর্মেরজন্য।একটিবিশ্ববিদ্যালয়েএকজনভাইসচ্যান্সেলরহচ্ছেনমোগলসম্রাটদেরমতো।তাদেরহাতেসবক্ষমতা।যদিওনানাধরনেরকমিটিরসিদ্ধান্তনিয়েবিশ্ববিদ্যালয়চালানোরকথা; কিন্তুবাস্তবেসবকমিটিথাকেতাদেরহাতেরমুঠোয়।একটিবিশ্ববিদ্যালয়কেমনচলছেসেটিপুরোপুরিনির্ভরকরেসেইবিশ্ববিদ্যালয়েরভাইসচ্যান্সেলরেরওপর।

কাজেইসেইভাইসচ্যান্সেলরমানুষটিযদিনিজেএকজনশিক্ষাবিদকিংবাগবেষকনাহন, তাহলেসেইবিশ্ববিদ্যালয়টিগড়েউঠবেকেমনকরে? দেশেরসবচেয়েবড়দুর্ভাগ্যহচ্ছে, এখানেলবিংকরেভাইসচ্যান্সেলরহওয়াযায়।লবিংভাইসচ্যান্সেলররাযখনছাত্রলীগেরগায়েরজোরনিয়েবিশ্ববিদ্যালয়চালান, সেখানেআমরাকীআশাকরতেপারি? পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয়গুলোদেশেরসবচেয়েবড়সম্পদহয়েউঠতেপারত।সেটিহয়নি, সেটিযেহবেতারকোনোসম্ভাবনাওদেখছিনা।কীদুঃখেরব্যাপার!

আমাদেরদেশেরভাইসচ্যান্সেলররাকিংবাবিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষকরাযেবিষয়গুলোঅনুভবকরতেপারেননা, আমাদেরমহামান্যরাষ্ট্রপতিকিন্তুবিশ্ববিদ্যালয়েরদৈনন্দিনকাজকর্মেরসঙ্গেনাথেকেওসেগুলোবুঝতেপারেন।সমাবর্তনবক্তাহিসেবেআমিবেশকয়েকবারমহামান্যরাষ্ট্রপতিরকাছাকাছিবসেতারনিজেরমুখেবক্তব্যশুনেছি।আনুষ্ঠানিকবক্তব্যেরমাঝখানেতিনিসাধারণতএকেবারেনিজেরমতোকরেকৌতুকেরভঙ্গিতেঅনেককথাবলেন।

আমিএকবারতাকেনিজেরলেখাপড়ানিয়েওকৌতুককরতেশুনেছি।কিন্তুতিনিবিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়েরলেখাপড়ানিয়েযেবক্তব্যদিয়েছেনসেগুলোযুগান্তকারী।আমিদীর্ঘদিনবিশ্ববিদ্যালয়েরভর্তিপরীক্ষাপ্রক্রিয়ারসঙ্গেজড়িতছিলামবলেশুধুটাকারলোভেরকারণেএদেশেরপাবলিকবিশ্ববিদ্যালয়েরঅধ্যাপকরাকিভাবেদেশেরছেলেমেয়েদেরনির্যাতনকরেনসেটাখুবভালোকরেজানি।

সমন্বিতএকটাভর্তিপরীক্ষানিয়েখুবসহজেইএদেশেরছেলেমেয়েদেরঅবিশ্বাস্যএকটাযন্ত্রণাথেকেমুক্তিদেয়াসম্ভব; কিন্তুসেটিকরাহচ্ছেনা।আমাদেরমহামান্যরাষ্ট্রপতিপ্রথমবিষয়টিনিয়েকথাবলেছেন, যদিওএখনপর্যন্তএদেশেরপাবলিকবিশ্ববিদ্যালয়েরক্ষমতাবানভাইসচ্যান্সেলরঅধ্যাপকরাসমন্বিতভর্তিপরীক্ষানিতেরাজিহননি।টাকারলোভএকজনমানুষকেকতনিচেনামাতেপারেসেটিনিজেরচোখেদেখেওবিশ্বাসহতেচায়না।

মহামান্যরাষ্ট্রপতিশুধুযেসমন্বিতভর্তিপরীক্ষারকথাবলেছেনতানয়, তিনিসান্ধ্যকালীনকোর্সেরবিরুদ্ধেওকথাবলেছেন।বিশ্ববিদ্যালয়েরসাধারণছাত্রছাত্রীরাএরবিরুদ্ধে, কারণতারানিজেরচোখেদেখতেপাচ্ছেতাদেরশিক্ষকরানিজেদেরসত্যিকারেরকোর্সগুলোনাপড়িয়েসন্ধ্যাবেলারঅর্থকরীকোর্সগুলোপড়ানোরজন্যজীবনপাতকরছেন।

আমিএকধরনেরকৌতূহলনিয়েশেষপর্যন্তকীহয়সেটাদেখারজন্যঅপেক্ষাকরছি।এরমাঝেইসান্ধ্যকালীনকোর্সেরপক্ষেপত্রপত্রিকায়লেখালেখিশুরুহয়েছেএবংআমারধারণা, নানাধরনেরযুক্তিতর্কদিয়েসেটাশেষপর্যন্তবন্ধকরাহবেনা।বাঘএকবারমানুষেররক্তেরস্বাদপেয়েগেলেঅন্যকিছুমুখেদিতেচায়নাবলেজনশ্রুতিআছে।টাকাটাওসেরকম, একবারকেউটাকারস্বাদপেয়েগেলেসেখানথেকেবেরহওয়াযায়না।

বছরবারোমাসজুড়েইনানাধরনেরঘটনাঘটেছে; কিন্তুআমারকাছেমনেহয়েছেসবচেয়েগুরুত্বপূর্ণদুটিঘটনাঘটেছেএকেবারেবছরেরশেষমাসেরশেষদিকে।একটিহচ্ছেরাজাকারেরতালিকা, আরেকটাহচ্ছেমুক্তিযুদ্ধমঞ্চেরবীরত্বগাথা

ইতিহাসেপাকাপাকিভাবেগেঁথেরাখারজন্যস্বাধীনতাবিরোধীদেরতালিকাএকটিখুবগুরুত্বপূর্ণদলিল।আমরাযারাএকাত্তরদেখেছিতারাজানিএকাত্তরেনানাধরনেরস্বাধীনতাবিরোধীছিল।কেউরাজাকার, কেউআলবদর, কেউআলশামস, কেউশান্তিকমিটিরসদস্য, আবারকেউহয়তোকোনোদলেইনামলেখায়নিকিন্তুতারপরওবড়ধরনেরবিশ্বাসঘাতকযুদ্ধাপরাধী।

নানাধরনেরনামেরমাঝেরাজাকারনামটিসবচেয়েবেশিজনপ্রিয়হয়েছেএবংআজকালযেকোনোস্বাধীনতাবিরোধীমানুষবোঝানোরজন্যরাজাকারশব্দটিব্যবহারকরাহয়।কিন্তুযখনএকটিঐতিহাসিকদলিলতৈরিকরাহবেতখনকিতাদেরঐতিহাসিকপরিচয়দিয়েপরিচিতকরাউচিতনয়? তাদেরমাঝেকেউছিলকাপুরুষ, কেউছিলনৃশংস, অপরাধেরমাত্রাটিওকিতালিকায়উল্লেখথাকতেপারতনা?

কিন্তুরাজাকারেরতালিকারবিষয়গুলোআমাকেকিংবাআমারমতোআরওঅনেককেক্ষুব্ধকরেনি।এতদিনেআমরাসবাইজেনেগেছি, তালিকায়শুধুরাজাকারেরনয়, মুক্তিযোদ্ধাদেরনামওআছে।তালিকাটিঅসম্পূর্ণহতেপারত, যেখানেকোনোরাজাকারেরনামতোলাহয়নিকিংবাতাদেরনামভুলবানানেলেখাহতেপারত, তাদেরগ্রামেরনামেত্রুটিথাকতেপারত।কিন্তুএছাড়াআরঅন্যকিছুকারওকাছেগ্রহণযোগ্যনয়।

যেরাজাকারনয়তারনামভুলেলেখাহয়েথাকলেওআমরাঅত্যন্তক্ষুব্ধহতাম, কারণএদেশেরাজাকারশব্দটিহচ্ছেসবচেয়েখারাপগালি।একজনমানুষকেরাজাকারবলেগালাগালকরারচেয়েবড়কোনোঅপমানহতেপারেনা।সেইঅপমানটিকরাহয়েছেবেশকিছুমুক্তিযোদ্ধাকে, এরচেয়েবড়দুঃখেরব্যাপারআরকীহতেপারে?

আমরাসবাইবুঝতেপারছি, বিষয়টিমোটেওনিরীহএকটুভুলনয়, এটিইচ্ছাকৃতএবংএটিকরাহয়েছেরাজাকারেরতালিকাটিকেপ্রশ্নবিদ্ধকরারজন্য।এরপরথেকেযতবারযতভাবেতালিকাতৈরিকরাহবে, ততবারসবারমনেএকটিপ্রশ্নথেকেযাবেযে, এটাওহয়তোসত্যিকারেরতালিকানয়।সবচেয়েদুঃখেরকথা, তালিকাপ্রকাশিতহওয়ারপরথেকেকেউএতবড়অন্যায়েরদায়নিচ্ছেনা, একেঅন্যকেদোষদিয়েযাচ্ছে।মনেহচ্ছে, আমরাকোনোদিনজানতেপারবনাকেমনকরেএতবড়একটিঅন্যায়করাহলবিজয়েরমাসেদেশেরসবচেয়েসম্মানিতমুক্তিযোদ্ধাদেরনিয়ে!

বছরেরদ্বিতীয়ঘটনাটিওকমহৃদয়বিদারকনয়।আমরাসবাইজানি, আজকালযেকোনোএকজনমানুষেরসর্বনাশকরারসবচেয়েকার্যকরউপায়হচ্ছেমানুষটিকেজামায়াতকিংবাশিবিরহিসেবেপরিচিতকরেদেয়া।সরকারেরবিরুদ্ধেকিংবাপ্রচলিতপদ্ধতিরবিরুদ্ধেকথাবললেওআজকালঝুঁকিটিনিতেহয়।কতসহজেকতসাধারণমানুষকেঅপবাদটিনিতেহচ্ছেতারহিসাবনেই।এভাবেচলতেথাকলেএকটিসময়আসবেযখনযারাসত্যিকারেরজামায়াতশিবিরহয়েআমাদেরমুক্তিযুদ্ধকেপ্রশ্নবিদ্ধকরেযাচ্ছে, তাদেরআরআলাদাকরাযাবেনা।

দেশেকারামুক্তিযুদ্ধকেসবচেয়েবেশিপ্রশ্নবিদ্ধকরেছে? একেবারেকোনোরকমদ্বিধানাকরেবলেদেয়াযায়, সেটিঘটেছেমুক্তিযুদ্ধমঞ্চনামেঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়েরএকটিসংগঠনেরহাতে।নির্বাচিতডাকসুভিপিএবংতারসঙ্গেঅন্যকিছুছাত্রকেনির্দয়ভাবেপিটিয়েছেমুক্তিযুদ্ধমঞ্চেরসদস্যরা।মুক্তিযুদ্ধশব্দটিকেএরচেয়েবড়অবমাননাকরাকিসম্ভব? দেশেরমানুষকিনিজেরঅজান্তেইমুক্তিযুদ্ধশব্দটিকেএখনখুববড়অন্যায়, অনৈতিকনিষ্ঠুরতারসঙ্গেযুক্তহতেদেখছেনা? আমরাকেমনকরেএটিঘটতেদিচ্ছি?

এইঅর্বাচীনতরুণরাকিজানেতারাকেমনকরেএদেশেরসবচেয়েমহানঅবদানটিরকতবড়অসম্মানকরেছে?

.

কেউযেনমনেনাকরে২০১৯সালেবুঝিশুধুখারাপখারাপঘটনাঘটেছে।সেটিমোটেওসত্যিনয়।সবাইকিজানেআমাদেরদেশেরশিশুরাআন্তর্জাতিকরোবটসংক্রান্তপ্রতিযোগিতায়কতগুলোসোনা, রুপাব্রোঞ্জপদকএনেছে?

আমরাআমাদেরএইসোনারশিশুদেরমুখেরদিকেতাকিয়েইসবদুঃখকষ্টগ্লানি

দেশ অগ্রসর হলেও আয়বৈষম্য কমেনি

নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ ও সরকারের উদ্যোগে দারিদ্র্যের হার কমলেও দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর যে দারিদ্র্য ছিল, তা এখন কমেছে ঠিকই কিন্তু দূর হয়নি। ভবিষ্যতেও দূর করা সম্ভব হবে না। বরং ধনীর সঙ্গে দরিদ্রের আয়বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে আয়বৈষম্য কমাতে হবে। দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে ভেবে ঢিলেঢালা অবস্থান না নিয়ে সরকারকে আরো কাজ করতে হবে। দারিদ্র্যের সংজ্ঞায়নে আয়ের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ধারণা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের ‘দারিদ্র্যের অর্থনীতি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।

বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। পাঁচ খণ্ডে বইয়ে ১৫টি অধ্যায় রয়েছে, যাতে দারিদ্র্যের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তুলে ধরেছেন লেখক ড. আকবর আলি খান। দেশ স্বাধীনের পর দারিদ্র্য নিরসনে কুমিল্লা মডেল, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, এনজিও ভূমিকা, ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদের ভূমিকা, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম ও ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। 

পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্জন অসাধারণ। এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে জোর দিতে হবে। অনেকে বলেছেন দেশে সুশাসন নেই, গণতন্ত্র নেই। আমি সবাইকে চ্যালেঞ্জ করছি—বাংলাদেশের সমান প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে এমন দেশ কোথায়, যেখানে বাংলাদেশের চেয়ে সুশাসন অনেক ভালো? বাংলাদেশের অর্জন অনেক সেটাও তো বলতে হবে।’

হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ

C

হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ
দিলাম তোমার চরন তলে হৃদয়-জায়নামাজ ।।

আমি গুনাহগার বেখবর নামাজ পড়ার নাই অবসর
(তব) চরন ছোয়ায় এই পাপিরে কর সরফরাজ।।

তোমার অজুর পানি মোছ আমার পিরান দিয়ে
আমার এ ঘর হোক মসজিদ তোমার পরশ নিয়ে।

যে শয়তানের ফন্দিতে ভাই
খোদায় ডাকার  সময় না পাই
সেই শয়তান যাক দুরে
শুনে তকবীরের আওয়াজ।।

এত জঘন্য অপরাধী পদাসীন হয়ে রাজনৈতিক দলে এত দিন থাকে কিভাবে?

. সাদত হুসাইন

বাংলাদেশে ভয়ংকর সন্ত্রাসী এবং জঘন্য অপরাধীর সংখ্যা প্রচুর। এবং তা যেন বেড়েই চলেছে। দেশের প্রতিটি নগর, শহর, বন্দর, জেলা, উপজেলা, গ্রাম-গঞ্জ, ইউনিয়ন নানা নামের সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা উপদ্রুত। বাহিনীগুলো তাদের কর্তৃত্বাধীন এলাকার জনগণকে সন্ত্রস্ত রাখছে। এলাকার মানুষের সহায়-সম্পদ, মান-সম্মান, শারীরিক নিরাপত্তা কার্যত এদের মতি-মর্জির ওপর নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে এদের চাঁদা দিয়ে প্রকারান্তরে নিরাপত্তা কিনতে হয়। এলাকার প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এদের শাসন করে না; বরং পরোক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সুনজরে থাকতে চেষ্টা করে। এদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজের পদ-পদবি, অবস্থান সুদৃঢ় করতে প্রয়াস পায়। দুর্বৃত্তের দল বিনা বাধায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে তাদের দুষ্কর্ম চালিয়ে জনপদের জনমানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে। ওপরের স্তরের নেতা-নেত্রীরা সব কিছু জেনেও না জানার ভান করেন। আসলে তাঁরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীকে প্রশাসনিক এবং আইনি সমর্থন দিয়ে যান।

অপকর্মের মূল ভূমিকায় থাকে দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী, যারা সন্ত্রাসী হতে পারে, লুটেরা হতে পারে কিংবা হতে পারে দখলদার অথবা প্রতারক। সবাই জানে দেশের আর্থিক খাত থেকে হাজার হাজার, সত্যি বলতে কী লক্ষাধিক কোটি টাকা লুটেরা পরিচালক এবং গ্রাহকরা সরিয়ে নিয়েছে। এ টাকা আর ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী এবং গণদাবির চাপে কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে ঋণখেলাপি লুটেরাদের নাম প্রকাশ করতে শুরু করেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করে, যাতে ঋণখেলাপির বিশদ পরিচয় লোকে না জানতে পারে। তারা শুধু ঋণখেলাপির কম্পানির নাম উল্লেখ করে; কিন্তু কম্পানির মালিকের নামধাম বাধ্য না হলে উল্লেখ করে না। এতদ্সত্ত্বেও যাদের নামধাম প্রকাশ পেয়েছে, তারা নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদ নন। এরা ব্যবসায়ী অথবা সামাজিক পরগাছা। প্রতারণামূলক কাজের মাধ্যমে এরা জীবিকা অর্জন করে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা হাতিয়ে নেয়। আর্থিক অঙ্গনে ও সামাজিক বলয়ে এদের যে পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠা তাতে এ ধরনের ব্যক্তিরা শত শত বা হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ করতে পারে না। একটু পর্যালোচনা করলে বা খোঁজখবর নিলে বোঝা যায় ক্ষমতাধর কোনো রাজনৈতিক শক্তি এদের পেছনে রয়েছে। কাগজে-কলমে ক্ষমতাধর সমর্থনকারী গোষ্ঠীর নামধাম থাকে না। অথচ এরা লুটেরা খেলাপিদের পক্ষ হয়ে দেন-দরবার করেন। ক্ষমতা দেখান। বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কার্যকর সমঝোতা গড়ে তোলেন রাজনীতিবিদরা, দৃষ্টির আড়ালে থাকলেও তাদের অলিখিত প্রভাবকে সম্বল করে দুষ্কৃতকারীরা এগিয়ে যায়।

ধরা না পড়া পর্যন্ত দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ কিংবা প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দকে তাদের দুষ্কর্ম-অর্জিত অর্থের একাংশ নানা অজুহাতে হিসসা হিসেবে দিয়ে যায়। এটি সরাসরি ক্যাশ স্থানান্তর হতে পারে। বিকল্প হিসেবে দামি উপহার-উপঢৌকনও হতে পারে। প্লট, ফ্ল্যাট, রিসোর্ট, গাড়ি, বৃহৎ শেয়ার, এমনকি শিল্প, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আংশিক মালিকানা অপকৌশলের মাধ্যমে উপহার-উপঢৌকন হিসেবে ক্ষমতাধর গোষ্ঠী, বিশেষ করে শীর্ষ স্তরের নেতা-নেত্রীকে প্রদান করা হয়। বাইরের লোক এটি সচরাচর জানতে পারে না। নেতা-নেত্রীরা প্রাপ্ত সম্পদের ব্যবস্থাপনায় অংশ নেন না। তারা অনেকটা সুপ্ত অংশীদার (Spleeping partner) হিসেবে থাকেন। প্রতি মাসে বা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সম্পদ থেকে অর্জিত মুনাফা তাদের হাতে নীরবে পৌঁছে যায়। তারা আনন্দের সঙ্গে তা ভোগ করেন। সামনে কম পরিচিত ব্যবসায়ী, শিল্পপতি; পেছনে প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ।

প্রাক-স্বাধীনতাকালেও কিছু শক্তিমান যুবক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সরাসরি সন্ত্রাসী না হলেও পেশি প্রদর্শন করে প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের সমর্থকদের ভয় দেখাতে চেষ্টা করত। রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্য পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এদের চিনতেন এবং সৌজন্যমূলক আদর-আপ্যায়নের মাধ্যমে এদের খুশি রাখতে চেষ্টা করতেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এদের প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল না। এদের খুশি করার ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বাড়তি তৎপরতা ছিল না। সংগঠনের সমর্থনে হৈ-হুল্লোড়, হাঙ্গামা এমনকি শারীরিক আগ্রাসনে অংশ নিলেও শক্তিমান এই গোষ্ঠী কখনো সংগঠনের পদাসীন কর্মকর্তা (ঙভভরপব ইবধত্বৎ) হওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেনি; শক্তি প্রদর্শন তো নয়ই। তারা বড়জোর সংগঠনের কোনো উপগোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে এবং সে গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করেছে। সে গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়েছে, বিরোধী গোষ্ঠীকে দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছে। সংগঠনের নেতৃত কিন্তু লব্ধ প্রতিষ্ঠ নেতা-নেত্রীর হাতেই ছিল। অর্থসম্পদের দিক থেকে শক্তিমান যুবকরা আহামরি কিছু ছিল না। তারা মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে বসে কখনো নগদে, কখনো বাকিতে আবার কখনো অন্যের পয়সায় চা-নাশতা সহযোগে আড্ডা দিত। সুউচ্চ মানের হোটেলে তাদের যাওয়া-আসা ছিল না। মূল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সামনে যেতে তারা উৎসাহিত বোধ করত না। দলের শক্তিমান বাহিনী  (Musclemen) হিসেবে চলাফেরা করার আনন্দ তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বেশি তাদের কিছু চাহিদা ছিল না।

গত কয়েক দশকে উঁচু পর্যায়ের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। অর্থসম্পদ এবং সস্তা জনপ্রিয়তার প্রতি তাঁদের লোভ-লালসা অনেক বেড়ে গেছে। তাঁবেদারি মোসাহেবি, বৈষয়িক সুবিধা প্রদানের ইচ্ছা ও সক্ষমতাকে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে একনিষ্ঠ এবং নিঃস্বার্থভাবে অনুগত কর্মীকে বাদ দিয়ে সম্পদশালী, চালবাজ সদস্যকে তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকার সংগঠনে পদাসীন  (Office Bearer) করছেন। সত্যি বলতে কি, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি কিংবা বিশেষ কমিটিতেও তাদের স্থান করে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক তাঁবেদার, মোসাহেবের পেছনে এক বা একাধিক বড় নেতা উন্নয়ক (Promoter) হিসেবে কাজ করেন। এসব তাঁবেদার সংগঠনের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়, তারা সততা-নৈতিকতার ধার ধারে না; অনৈতিক, অসামাজিক এবং সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হওয়া তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এরাই হয়ে উঠেন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদাসীন ব্যক্তি রূপে।

পদাসীন হওয়ার পর তাদের অপকর্মের দ্বার খুলে যায়। পদ-পদবি ব্যবহার করে তারা অর্থসম্পদ বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ লক্ষ্যে যেকোনো অনৈতিক, অসামাজিক কাজ করতে তারা দ্বিধান্বিত হয় না। সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা, দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা-ক্ষতি এসবের প্রতি তারা ধার ধারে না। যা করলে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হয় তা-ই তারা করে যায়। কেউ বাধা দিলে তাকে হেনস্তা করতে প্রবৃত্ত হয়। আইন-কানুন, বিধি-বিধান অবলীলাক্রমে তারা এড়িয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে যে জনবল-ধনবলের বদৌলতে যেকোনো অপকর্ম-অপরাধ করে তারা পার পেয়ে যাবে। বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস জয়ী হয়। তারা হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাধারণ প্রশাসনের কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী সবার কাছে উপহার-উপঢৌকন পৌঁছে যায়। প্রয়োজনমতো আর্থিক সমর্থনও পৌঁছে দেওয়া হয়। কখনো চাহিদা মোতাবেক, কখনো না চাইতেই। এরূপ দান-অনুদান, সাহায্য-সমর্থন পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অপরাধী-সন্ত্রাসীর প্রতি কৃতার্থ থাকেন। এদের বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না; বরং পরোক্ষভাবে এদের যাবতীয় অপরাধ-অপকর্মকে সমর্থন-সহযোগিতা দিয়ে যান। রাষ্ট্র, সমাজ এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পদাসীন দুর্বৃত্তরা রাতারাতি ক্ষমতাধর হয়ে উঠে না। তারা সাধারণত নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। সুযোগ পেয়ে দাঁও মেরে প্রথমে কিছুটা সচ্ছলতা অর্জন করে। তারপর ‘গডফাদার’ বা ‘গডমাদার’-এর হাত ধরে ওপরে উঠতে থাকে। গডফাদার, গডমাদার বিনিময়ে যে বৈষয়িক সুবিধা পান, তা নিতান্ত অপ্রতুল নয়। ব্যক্তি বিশেষের কাছে অনুপার্জিত আয়ের  (Unearned income) একটা বড় আনন্দ রয়েছে। ‘ফাদার-মাদার’রা সে আনন্দ অবারিতভাবে উপভোগ করেন। দলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান খাজনা সংগ্রহের (Rent Seeking) সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। বাড়তি আয়ের সুযোগ নেতা-নেত্রীর সঙ্গে দুর্বৃত্ত সদস্যের একধরনের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। দুর্বৃত্ত সদস্য সাধারণ গোছের সমস্যায় পড়লে ‘ফাদার-মাদার’ নেতা-নেত্রীরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাকে সুরক্ষা দেন। এ ধরনের সুরক্ষা দুর্বত্ত সদস্যকে সাহস জোগায়, তাকে অপকর্মে উৎসাহিত করে, তাকে বেপরোয়া করে তোলে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও সাধারণ মানুষ দুর্বত্ত সদস্যের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারে না। তারা নীরবে অভিশাপ দিয়ে অপকর্ম সহ্য করে। অসুবিধা হয়, যখন ক্ষমতাধর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে আদালতে সোপর্দ করে বসে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে তার কীর্তি-কলাপ প্রকাশ করে দেয়। ‘গডফাদার-মাদার’ বুঝতে পারেন এ সময় দুর্বৃত্ত সদস্য থেকে সরে থাকা বাঞ্ছনীয়। দুর্বৃত্ত সদস্যের সঙ্গে মেলবন্ধন তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে সাধারণ সম্পর্কের কথাও তারা অস্বীকার করেন। এককথায় দুর্বৃত্ত সদস্যকে তারা চটজলদি বিসর্জন দেন। সংগঠন থেকে পরিত্যক্ত হলে দুর্বৃত্তের পতন ঘটে। তার প্রভাব ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে। কাছের মানুষরা দূরে সরে যায়; হারিয়ে যায়। দুর্বৃত্ত সদস্যও একসময় প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে ঝোড়ো কাকের অবয়বে বেঁচে থাকে। বেশির ভাগ সময় তার করুণ অন্তর্ধান ঘটে।

আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা যদি অনৈতিক আয় ও সম্পদের লোভ-লালসা পরিহার করে কালোত্তীর্ণ নৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে থাকেন, তবে জঘন্য অপরাধী দলে পদাসীন হওয়া তো দূরের কথা, অনুপ্রবেশই করতে পারবে না। দলের বহির্বৃত্তে অবস্থান করে সময় বিশেষে দলকে নির্দোষ সমর্থন জোগাবে, বিনিময়ে দল থেকে কোনো পদ-পদবি বা বৈষয়িক সুবিধা দাবি করবে না। সন্ত্রাসী-অপরাধীরা তাদের জগতে থাকবে। রাজনৈতিক দলের সংগঠনিক বা নীতিনির্ধারণী বিষয়ে তারা নাক গলাবে না। রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের বেশি কাছে তারা ঘেঁষবে না, তাদের পিঠে হাত রেখে কথা বলবে না। বড়জোর দূর থেকে সালাম দিয়ে কেটে পড়বে।

পদ-পদবি থেকে জঘন্য অপরাধী, সন্ত্রাসী, দখলদার, প্রতারকদের সরিয়ে রাজনৈতিক দলকে কলুষমুক্ত করতে হলে রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিশাল অর্থসম্পদের লোভ-লালসা থেকে রাজনীতিবিদদের সরে আসতে হবে। রাজনৈতিক মূল্যবোধকে কোনোক্রমে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। রাজনীতিবিদদের মূল কাজ দেশ ও জনগণের সেবা। জনগণের ভালোবাসা এবং দেশের কল্যাণ হচ্ছে তাদের বড় সম্পদ। অপরাধীদের দেওয়া অর্থসাহায্য, উপহার-উপঢৌকন রাজনীতিবিদদের চরিত্র নষ্ট করে, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়। পরিণামে সংগঠন এবং রাজনীতিকের সর্বনাশ ডেকে আনে। কোনো অসতর্ক মুহূর্তে অপরাধী, সন্ত্রাসীরা যাতে রাজনীতিবিদদের পকেটে অথবা তার ঘরে পাপের অর্থ-সম্পদ পাঠিয়ে দিতে না পারে সে ব্যাপারে নেতা-নেত্রীকে সাবধান থাকতে হবে। নিজে সৎ হলেই হবে না, অসৎ ব্যক্তি কিংবা জঘন্য অপরাধী যেন সৎ রাজনীতিকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বা নাম ব্যবহার করে অন্যায় সুবিধা না নিতে পারে, অন্যায় অর্থ অর্জন না করতে পারে অথবা সংগঠনে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে সৎ রাজনীতিবিদ তার প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখবেন। ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে বিষধর সাপ ঘরে ঢুকে পড়ে। সে ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে। নিদেনপক্ষে তার প্রতি নিরন্তর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটু কষ্ট হলেও ফাঁকগুলো বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয়।

বঙ্গবন্ধু ও তরুণ প্রজন্ম

হাজার বছরে অনেক মনীষী বাংলার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রসার ঘটিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তাদের অবদান ভোলার নয়; কিন্তু এদের সব অবদানকে বুকে ধারণ করে তিলে তিলে একটি অসামান্য স্বপ্নের বীজ বাঙালির মনে গেঁথে দিয়েছেন খুবই সাফল্যের সঙ্গে কেবল একজনই। সেই স্বপ্নটি হলো, বাঙালির আলাদা একটি রাষ্ট্র হবে। সেই রাষ্ট্রের নায়ক হবেন একজন বাঙালি। এই রাষ্ট্রের ভাষা হবে বাংলা। সেই স্বপ্নের ফেরিওয়ালার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি পরম মমতায় তাঁকে ডাকেন বঙ্গবন্ধু বলে। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা, মানবিকতা, সাধারণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের সব মানুষের স্বপ্নের সম্রাট। আমাদের জাতির পিতা। আমার বড়ই সৌভাগ্য যে, আমি ঐতিহাসিক এই ‘মুজিববর্ষে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছি। সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এই অবস্থানে থেকে আমি ছাত্রছাত্রীর মনে আমার ও আমাদের প্রাণের মানুষ বাঙালির মুক্তির বাতিঘরের ঠিকানা গেঁথে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারছি।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশের ভরসার প্রতীক। স্বপ্নচারী এই তরুণরাই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তাদের অদম্য প্রাণশক্তির বলেই মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই ছিলেন বয়সে তরুণ। বেশিরভাগই গ্রামের ছেলেমেয়ে। প্রায় ৮০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন সরাসরি কৃষকের সন্তান। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের সংখ্যা বিপুল হলেও সরাসরি কৃষিকাজে নিয়োজিত তরুণদের সংখ্যাও কম ছিল না। শহরের ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক ছিল গ্রামবাংলার। এরা সবাই দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়ার এক অবিস্মরণীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। একাত্তরের সেই দিনগুলো ছিল সত্যি হিরণ্ময়। আনন্দ ও বেদনার সেই দিনগুলোতে তরুণদের আত্মবলিদানের সেই দৃশ্য যারা নিজের চোখে দেখেননি, তারা কল্পনাও করতে পারবেন না- স্বদেশের জন্য প্রাণ বিতরণের সে কী অসামান্য প্রতিযোগিতা! ‘হাজার বছরের নিপীড়িত-নিগৃহীত বাঙালির এই জেগে ওঠার উপাখ্যান আসলেই বিস্ময়কর। আর তা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মোহনীয় নেতৃত্বের গুণেই। তরুণরা তাঁর বজ্রকণ্ঠকে পাথেয় করেই বাংলা মায়ের কোলে মাথা রেখেছে। স্বদেশের মাটিকে নিজেদের রক্তে উর্বর করেছে। যেমনটি উর্বর করেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর পবিত্র রক্ত ঢেলে বাংলাদেশের সবুজ মাটি। এমনি এক স্বপ্ন সঞ্চারি নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি পুরো দেশবাসীকে, বিশেষ করে তরুণদের আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দিতেন। আরও বেশি করে গুণমানের শিক্ষা লাভের অনুপ্রেরণা দিতেন। আর সেই স্বপ্নের সমান হওয়ার আহ্বান জানাতেন। ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়েও তিনি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ‘কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিকে দেশ নির্মাণে কাজে লাগাবেন বলেই তিনি এমন দূরদর্শী নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। শোষিত, নির্যাতিত ও লুণ্ঠিত বাংলাদেশের সমাজদেহে সমস্যার অন্ত নেই। এই সমস্যার জটগুলোকে খুলে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে’ (বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪)। এমন করে বলতে তিনিই পারেন, যিনি এক রূপান্তরবাদী নেতা। আর তিনিই সেই নেতা, যিনি তাঁর অনুসারীদের, বিশেষ করে তরুণদের মনে লড়াই করার শক্তির সঞ্চার করতে পারেন। সহনেতা তৈরি করতে পারেন। অনুসারীদের নেতৃত্বের ‘ল্যান্ডস্কেপে’ যথার্থভাবে যুক্ত করতে পারেন। আর জাতির সামনে দীর্ঘমেয়াদি ‘ভিশন’ দাঁড় করাতে পারেন। আমাদের বঙ্গবন্ধু ‘সোনার বাংলা’ গড়ব বলে সেই রকম সুদূরপ্রসারী পথনকশা তৈরি করে দিতে পেরেছিলেন। আর তাই বর্তমান তরুণদের কাছেও তিনি এক অবিস্মরণীয় রাষ্ট্রনায়ক।

আমাদের তরুণদের চোখে বঙ্গবন্ধু কেমন? আমরা সম্প্রতি ১৫২৩ জন তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছর, যাদের ৭৩ শতাংশই শিক্ষার্থী, তাদের প্রশ্ন করেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করলেই কি দৃশ্যপট তাদের মনে পড়ে! কেন এমনটি মনে হয়? কেমন করে তিনি সমসাময়িক সব নেতাকে ছাড়িয়ে এমন অনন্য হতে পেরেছিলেন? আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে কী হিসেবে স্মরণ করবেন? উল্লেখ্য, প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে অন্তত ৬টি অপশন ছিল এবং একটি প্রশ্নের উত্তরে একাধিক অপশন বাছাই করে কিক করার সুযোগ ছিল।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধুর নাম এলেই তাদের মনে প্রথমে আসে ৭ মার্চের ভাষণের কথা। এদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ বলেছেন- তারা মনে করেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং দেশ স্বাধীন হয়েছিল; তাই বঙ্গবন্ধুর কথা মনে এলেই তাদের প্রথমে ওই ঐতিহাসিক ভাষণটির কথা মনে আসে।

৬৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর নাম এলেই তাদের মনে প্রথমে আসে স্বাধীন বাংলাদেশের কথা। এদের মধ্যে ৮১ শতাংশ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু নিঃস্বার্থভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল; তাই তাঁর কথা উঠলেই স্বাধীন বাংলাদেশের কথা মনে আসে। বঙ্গবন্ধুর নাম এলেই আরও যেসব শব্দ বা শব্দগুলোর কথা মনে পড়ে বলে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন সেগুলো হলো :জাতির পিতা (৫৯ শতাংশ), ৬ দফা আন্দোলন (৫৬ শতাংশ) এবং সংগ্রামী দেশপ্রেমিক (৫১ শতাংশ)।

সমসাময়িক অন্য রাজনৈতিক নেতাদের ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু কী করে একক জাতীয় নেতা হলেন?- এ প্রশ্নের জবাবে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে একক জাতীয় নেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর আপসহীন মানসিকতা তাঁকে সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল বলে তিনি পুরো বাঙালি জাতির নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় নিঃস্বার্থভাবে রাজনীতি করেছেন বলে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পেরেছিলেন আর তাই তিনি হয়েছিলেন একক জাতীয় নেতা। বঙ্গবন্ধুর একক জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে আরও যেসব বিষয় উত্তরদাতারা চিহ্নিত করেছেন সেগুলো হলো :বঞ্চিত মানুষের প্রতি বিশেষ মনোযোগ (৬১ শতাংশ), সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝার সক্ষমতা (৬০ শতাংশ) এবং ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা (৫৬ শতাংশ)।

৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে একজন আদর্শ জাতীয় নেতা হিসেবে। ৭১ শতাংশ মনে করেন, বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে তিনি আগামী প্রজন্মের মনে থাকবেন। ৬৫ শতাংশ মনে করেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর আপসহীন ও নিঃস্বার্থ রাজনীতির কারণে আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তরুণদের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে তারা কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে দেখে এবং তাদের ভাবনার কতটা জায়াগাজুড়ে কীভাবে তিনি আছেন, সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি এবং সঙ্গত কারণে আশান্বিতও হয়েছি। তরুণদের ওপর পরিচালিত এই জরিপই বলে দেয় যে, বঙ্গবন্ধুকে দেশের শত্রু বলেছিল ‘তুমি কেউ নও’, সেই বঙ্গবন্ধুই দিন দিন আরও বিরাট, আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। ‘যে স্বপ্নের লাশ পড়েছিল উদোম আকাশের নিচে’, সেই স্বপ্ন আজ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে দানা বাঁধছে আমাদের তরুণদের মনে। জরিপের ফলাফল নিয়ে আবারও খোলাখুলি আলাপে বসেছি আমার তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।

এই শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে, আগামী প্রজন্মের চিন্তায় ও মননে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, কর্ম ও দর্শনকে গেঁথে দিতে আমরা কী করতে পারি। আমি খুবই চমৎকৃত হয়েছি যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে আমাদের আজকের তরুণরাও এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। তারা একটি বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। তা হলো, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে নিছক উদযাপনের মধ্যে আটকে না রেখে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে প্রতিফলিত করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ জন্য কেউ পরামর্শ দিয়েছে স্কুল পর্যায় থেকে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাঁর চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডকে পাঠ্যসূচিতে এমনভাবে নিয়ে আসতে, যাতে করে আগামী প্রজন্মের নাগরিকরা তাদের জীবনে বঙ্গবন্ধুর প্রাসঙ্গিকতাটুকু যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থগুলো পাঠ করা এবং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রুপভিত্তিক পাঠচক্র গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে কেউ কেউ। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে অনেকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তরুণদের নিয়ে সাহিত্য সম্মেলন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করার পরামর্শও এসেছে তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে, আজকের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুকে তরুণদের মনে গেঁথে দেওয়াটাকে কেবল রাষ্ট্রের একক দায় হিসেবে দেখছে না, বরং একটি সামাজিক ও জাতীয় দায়বোধের জায়গা থেকে ভাবছে। নিজেরাও এ জন্য উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তাটি অনুভব করতে পারছে।

কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘স্বদেশকে একটি বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে আমরা উপলব্ধি করিতে চাই। এমন একটি লোক চাই, যিনি আমাদের সমস্ত সমাজের প্রতিমাস্বরূপ হইবেন। তাহাকে অবলম্বন করিয়াই আমরা আমাদের বৃহৎ স্বদেশীয় সমাজকে ভক্তি করিব, সেবা করিব। তাহার সঙ্গে যোগ রাখিলেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের যোগ রক্ষিত হইবে।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘স্বদেশী সমাজ’, ররীন্দ্র রচনাবলি ২য় খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৩৯৩, পৃষ্ঠা ৬৩৪)। নিঃসন্দেহে বাংলার মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগ রেখেছিলেন বলেই এত দ্রুত দেশটি স্বাধীন করা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে ‘আরেক বাংলাদেশ’, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে নিয়ে তাঁরই সুকন্যার হাত ধরে। এই বাংলাদেশে শিশুরা নিশ্চয় খেলবে, মায়েরা হাসবে। তারুণ্যই এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের এই দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সীমানায়। ‘মুজিববর্ষে’ তরুণরা এই অসামান্য নেতৃত্বের নানা অনুপ্রেরণার উৎস সন্ধান করবে, স্বদেশকে জানবে এবং ভালোবাসবে, সেই প্রত্যাশাই করছি। আমি সর্বদা তাদের পাশেই থাকব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
dratiur@gmail.com

বিশ্ব অর্থনীতিতে সুনামি ঢেউয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতিতে রীতিমতো তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে কভিড-১৯। অভূতপূর্ব এক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন খাত। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির রথী-মহারথী সব দেশেরই উৎপাদন খাত এখন পুরোপুরি ধরাশায়ী। ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে পুঁজি, মুদ্রা ও পণ্যবাজার। অর্থনৈতিক এ মহাদুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজ নিজ দেশের আর্থিক খাত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সর্বোপরি নিজ জনগণকে সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে প্রণোদনামূলক নানা পদক্ষেপ। যদিও এ

করোনা সুনামির ঢেউয়ের আঘাত কীভাবে সামাল দেবে বাংলাদেশ, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

৮০টিরও বেশি দেশ এরই মধ্যে আংশিক বা পূর্ণভাবে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। লকডাউনে রয়েছে এর অধিকাংশই। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত চালু থাকলেও বিদেশীদের ঢুকতে দিতে চাচ্ছে না কেউই। বৈশ্বিক পর্যটন, শিল্পোৎপাদন, সেবা ও আর্থিক খাতকে পুরোপুরি তলানিতে এনে ফেলেছে নভেল করোনাভাইরাস।

চলমান মন্দা কাটাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো নানা অর্থনৈতিক প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। এরই মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিকে বাঁচাতে স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ৮৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি প্যাকেজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানায় ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে শুধু ৩০ হাজার কোটি ডলার দেয়া হবে এয়ারলাইনস খাত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে। দুর্যোগকালীন ভাতা হিসেবে নগদ ও করছাড়ের আকারে ৫০ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা পাবে মার্কিন জনগণ। বিকালের মধ্যেই এ প্যাকেজ পরিকল্পনার আয়তন বেড়ে ১ লাখ কোটি ডলারের বেশি হচ্ছে বলে জানান দেশটির অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) স্টিভেন মানিউচিন। পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন না করা গেলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মহীনতার হার বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়াবে বলে শঙ্কিত মার্কিন অর্থমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও গতকাল দেশটির নাগরিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের প্যাকেজ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাজ্যও। দেশটির অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এরই মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৩৩ হাজার কোটি পাউন্ড (৪০ হাজার কোটি ডলার) ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার কোটি ইউরোর (৫ হাজার কোটি ডলার) সহায়তা প্যাকেজ হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইংলিশ চ্যানেলের ওপারের দেশ ফ্রান্সও।

পিছিয়ে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। করোনাভাইরাস আক্রান্ত অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে নীতি ও রাজস্ব সহায়তা নিয়ে নিজ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে কাতার। এরই মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে দেশটি। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় খাতগুলোর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ব্যক্তি খাত বরাদ্দ পেয়েছে ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ২৭৫ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতকে পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য জোগান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাতার কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কম-বেশি সব দেশই এখন রুগ্ণ অর্থনীতিকে বাঁচাতে নানা পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছে। তার পরও পরিস্থিতি কবে নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসবে, সে বিষয়ে সন্দিহান সবাই। আস্থা পাচ্ছেন না বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরাও। বিশ্ববাজারের প্রতিদিনের চিত্র এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্যোগগ্রস্ততারই প্রতিফলন।

চলমান পরিস্থিতি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিটি দিনকে করে তুলেছে নরকসম। গতকালও ফ্রাংকফুর্ট, লন্ডন ও প্যারিসসহ গোটা ইউরোপের শেয়ারবাজার সূচকের পতন হয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। একই মাপের ধসের মধ্য দিয়ে গেছে এশীয় শেয়ারবাজারও। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে দিনব্যাপী লেনদেন শুরু হতে না হতে ডাও জোনস সূচকের পতন ঘটে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

ধস নেমেছে জ্বালানি তেলের বাজারেও। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক দুই বাজার আদর্শ ডব্লিউটিও এবং ব্রেন্টের দাম নেমে এসেছে কয়েক বছরের সর্বনিম্নে, ব্যারেলপ্রতি যথাক্রমে ২৭ ও ২৫ ডলারে। একই দশা মুদ্রাবাজারেরও।

এদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই নানামুখী সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকের রফতানি এখন নিম্নমুখী। ঘাটতি কাটাতে পারছে না রাজস্ব খাত। খেলাপি ঋণের চাপ ও তারল্য সংকটের কারণে আর্থিক খাতের দশাও বেহাল। বিদেশী বিনিয়োগও আসছে না কাঙ্ক্ষিত হারে। কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়লেও বিপণন ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে দুর্বলতা কাটানো যায়নি। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে রেমিট্যান্সের বৃহত্তম উৎস মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও তৈরি হয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা। কারণে-অকারণে অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। এসব সমস্যার মধ্যেই এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস।

এখন পর্যন্ত আক্রান্তের হার কম হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার বড় আঘাত এসেছে অনেক আগেই। পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে দেশের শীর্ষ আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের বাজারগুলো। প্রতিনিয়ত বাতিল হচ্ছে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানি আদেশ। আগে থেকেই বিপর্যস্ত ছিল পুঁজিবাজার। করোনার অভিঘাতে ক্রমাগত রক্তক্ষরণের ধারাবাহিকতায় এখন তা নির্জীব হয়ে পড়েছে পুরোপুরি।

এ পরিস্থিতি কাটানোয় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে সুদহার নামিয়ে এনেছে প্রায় শূন্যে। কমিয়েছে অন্যান্য দেশও। অন্যদিকে বাংলাদেশ এ পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট বা আবছা—কোনো ধারণাও পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এমনিতেই খেলাপি ঋণের ভারে বিপর্যস্ত। এখন করোনার ধাক্কায় অনেক শিল্প খাতই নতুন করে খেলাপির ঝুঁকিতে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব সহায়তার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও নীতিসহায়তা দিতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের মতে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজস্ব ও নীতিসহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে নীতিসুদহার কমিয়েছে। বাংলাদেশেও এ সুদহার (রেপো) ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করতে হবে। সরকার ঘোষিত বাজেট কাঠামো পুনর্গঠন করে কিছু খাতের রাজস্ব কমানোর প্রয়োজন হতে পারে।

অর্থনীতির এ দুর্বিপাক মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংককেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, আইলা বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের পর বিশেষ এলাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ কিংবা ঋণের কিস্তি পরিশোধে তিন-ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সে অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে পারে। করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিতেই সুনামি নিয়ে এসেছে, এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের শিল্প খাতের জন্যও নীতিসহায়তার প্রয়োজন হবে। তবে নীতিসহায়তা ঢালাওভাবে না হয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা খাতের জন্য হলে সেটি মঙ্গল বয়ে আনবে। অন্যথায় সুযোগের অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

তিনি বলেন, সরকারকেও রাজস্ব সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাজস্ব নীতিতেও পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। সবার আগে যেটি প্রয়োজন, সেটি হলো পরিস্থিতির যথাযথ মূল্যায়ন ও ক্ষতি উত্তরণের রূপরেখা প্রণয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তারল্যের জোগান দিতে সক্ষম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগযোগ্য তারল্য ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। দেশের সিংহভাগ ব্যাংকেরই এডি রেশিও নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে।

যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই বিনিয়োগ খরায় ভুগছিল দেশের বেসরকারি খাত। জানুয়ারিতে ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশে। নিম্নমুখী এ ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই দশকের মধ্যেই সর্বনিম্ন। বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগেও এ প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে সক্ষম হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা একটা আকস্মিক ও অভূতপূর্ব ঘটনা। এর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতাও খুব সীমিত। অনেক উন্নত দেশও যেখানে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সমস্যা হওয়ারই কথা। তার পরও একটা চেষ্টা হচ্ছে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার। তবে এ বিষয়টি মূলত ব্যবস্থাপনার। আমদানি-রফতানির বাজার এরই মধ্যে ব্যাহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেটি নিয়ন্ত্রণে, সেটি হলো অভ্যন্তরীণ বাজার। এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই হারানো যাবে না। বৈশ্বিক বাজারের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।

তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়া। প্রভাবটা কম তখনই হবে, যখন কভিড-১৯-এর নিয়ন্ত্রণটা ভালো হবে। যদি ভালো না হয়, তাহলে প্রভাবটা প্রকট হবে। প্রভাব পড়বেই কিন্তু অনেক কিছুই নির্ভর করছে আমাদের সামর্থ্যের ওপর।

ড. কে এ এস মুরশিদ বলেন, আমাদের সক্ষমতা যতটুকু, ততটুকুই আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে আমাদের সক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলেই আমরা লাভবান হব। আমাদের সীমাবদ্ধতা আমরা জানি, কিন্তু এ সীমাবদ্ধতা নিয়েই স্বচ্ছ ও শক্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদেরও। এ নিয়ে এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এখানে বড় বিষয় হলো আমাদের ৪০ লাখ শ্রমিক। যদি দুদিন পর কাজ না থাকে, বন্ধ হয়ে যায়, তখন এরা কীভাবে চলবে? ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে কী হবে তা বলতে পারব না, তবে আমাদের রফতানি খাতে একটা ঝড় বয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজস্ব তাগিদে সম্ভব হবে না।

তবে করোনা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সচিবালয়ে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যে ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্ব বিপদে আছে, সেই ভাইরাস থেকে মুক্ত আছি বলতে পারব না।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সদস্য দেশগুলোকে করোনা মোকাবেলায় সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা যখন অর্থছাড় করবে, তখন আমরাও পাব। তবে আমরা সে অর্থের আশায় বসে থাকব না। নিজস্ব তহবিল দিয়েই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে

অসুস্থ না হলে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

যদি কেউ নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত না হন এবং ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা ও পরিচর্যা না করে থাকেন, তাহলে সেসব মানুষকে মাস্ক না পরার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের এই অঙ্গসংগঠনটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা সোমবার অর্থাৎ ৩০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন।

সংস্থাটির জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডা. মাইক রায়ান সোমবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণহারে মাস্ক পরার কারণে সম্ভাব্য কোনো সুবিধা রয়েছে বলে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, মাস্কটি সঠিকভাবে পরা বা সঠিকভাবে ফিট করার অপব্যবহারের কারণে বিপরীতে কিছু হওয়ারই প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মাস্ক ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে মাইক রায়ান আরও বলেন, এছাড়া আরও একটি বিষয় হলো, বৈশ্বিকভাবে এসব সরঞ্জামের ব্যাপক এক সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী সামনে থেকে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি করছেন, বর্তমানে তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেননা তারা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসছেন। তাদের মাস্ক না থাকার বিষয়টি ভয়াবহ।

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মারিয়া ভ্যান কারকোভ আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমরা তাদের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টিতেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তারা হলেন, সামনে থেকে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মী।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়সেসও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ডা. মারিয়া ভ্যান আরও বলেন, কমিউনিটির মানুষজনকে আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ ততক্ষণ পর্যন্ত করবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি অসুস্থ না হন। কেননা শুধু অসুস্থ হলেই আপনার মাধ্যমে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করবে। আমরা তাদেরকেই মাস্ক পরার সুপারিশ করবো যারা অসুস্থ এবং যারা অসুস্থদের সেবা দিচ্ছেন।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের অভিঘাত এরই মধ্যে দ্রুততর এবং ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের (জিএফসি) চেয়ে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, এমনকি তা ১৯৩০ সালের মহামন্দার চেয়েও। আগের দুটি ঘটনায় পুঁজিবাজারের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি পতন ঘটা, ঋণবাজার রুদ্ধ হওয়া, অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়া, বেকারত্ব হার ১০ শতাংশের ওপরে উন্নীত এবং জিডিপি বার্ষিক ১০ শতাংশ বা তারও বেশি সংকুচিত হয়েছিল। তবে এসব ঘটতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর। একইভাবে বর্তমান সংকটে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী কঠিন সামষ্টিক, অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিণাম (আউটকাম) বাস্তব রূপ লাভ করেছে।  

চলতি মাসের প্রথম দিকে ঠিক ১৫ দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার বিয়ার টেরিটরিতে (সূচকের শীর্ষ অবস্থান ২০ শতাংশ পতন) নিমজ্জিত হয়েছে—এ ধরনের পতন এ-যাবত্কালের সবচেয়ে দ্রুতগতির। এখন বাজারের ৩৫ শতাংশ অধোগতি ঘটেছে, ঋণবাজার অনেকটাই রুদ্ধ হয়েছে এবং ক্রেডিট স্প্রেড (জাংক বন্ডের মতো) ২০০৮ সালের মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। এমনকি গোল্ডম্যান স্যাকস, জেপি মরগান ও মরগান স্ট্যানলির মতো মূলধারার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাক্কলন করে যে যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২৪-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন সতর্ক করেছেন যে বেকারত্ব হার ২০ শতাংশের ওপরে উন্নীত হতে পারে (জিএফসির সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ)।

অন্য কথায়, সামষ্টিক চাহিদার প্রতিটি উপাদানই—ভোগ, মূলধন ব্যয়, রফতানি—নজিরবিহীনভাবে নিম্নমুখী হচ্ছে। অধিকাংশ ভাষ্যকার যদিও এক প্রান্তিকের জন্য উৎপাদন লক্ষণীয় মাত্রায় পতনসহ একটি ভি-আকারের অধোগতি এবং তারপর পরবর্তী সময়ে দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার অনুমান করে আসছেন, তবে এখন এটি পরিষ্কার হওয়া উচিত যে কভিড-১৯ সংকট পুরোপুরিভাবে আরো অনেক কিছুতে গড়াবে। এ মুহূর্তে চলমান বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন দেখতে ভি, ইউ কিংবা এল আকারের নয়; বরং এটি দেখতে অনেকটা আই আকারের। মানে এটি একটি উল্লম্ব রেখা, যা আর্থিক বাজার ও প্রকৃত অর্থনীতির নিম্নগামিতারই প্রতিফলন ঘটায়।

আক্ষরিক অর্থে মহামন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এতটা বন্ধ হয়নি, যতটা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে দেখেছি কিংবা এখনো দেখছি। সর্বোত্তম ঘটনার দৃশ্যপট (বেস্ট কেস সিনারিও) হবে অধোগতির—জিএফসির চেয়েও যা অধিক ভয়াবহ (হ্রাসকৃত বৈশ্বিক সার্বিক উৎপাদনের দিক থেকে); তবে তা হবে স্বল্পমেয়াদি, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিক নাগাদ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজারগুলো তখনই পুনরুদ্ধার হওয়া শুরু করবে, যখন সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাবে।

তবে সর্বোত্তম ঘটনার দৃশ্যপট মনে হয় কিছু শর্ত বা অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত. যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিগুলোকে বিস্তৃতভাবে কভিড-১৯-এর পরীক্ষা, কনট্যাক্ট ট্রেসিং, চিকিৎসা ব্যবস্থা, কোয়ারেন্টিন প্রয়োগ এবং চীনের মতো পূর্ণমাত্রার লকডাউন বাস্তবায়ন চালিয়ে যেতে হবে। আবার যেহেতু করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা উন্নয়ন এবং ব্যাপক মাত্রায় তা উৎপাদনে ১৮ মাস সময় লাগবে, সেহেতু ভাইরাসবিরোধী এবং অন্য চিকিৎসাবিদ্যাগত (থেরাপিউটিক) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কৌশলগুলো বিস্তৃতভাবে প্রয়োগ দরকার হবে।

দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদের (এক মাসের কম সময়ের মধ্যে যারা যা করেছেন, জিএফসির পর তাদের তা করতে সময় লেগেছিল তিন বছর) সংকটকালে অগতানুগতিক পদক্ষেপগুলো নেয়া অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। তার মানে হলো, শূন্য বা ঋণাত্মক সুদহার, সম্প্রসারিত সম্মুখদর্শী নির্দেশনা, কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রেডিট ইজিং (প্রাইভেট অ্যাসেট কেনা), মানি মার্কেট ফান্ড এবং এমনকি বড় করপোরেশনের কমার্শিয়াল পেপার ও করপোরেট বন্ড ফ্যাসিলিটিজের মতো ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে। ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ বিশ্ববাজারে ডলারের বিপুল তারল্য ঘাটতি সামলাতে সংস্থাটির ক্রস-বর্ডার সোয়াপ লাইন সম্প্রসারণ করেছে, তবে অনগদযোগ্য সম্পদ থাকা এখনো সমর্থ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ প্রদানে উৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলোকে আমাদের অধিক সুবিধা জোগানো প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, পরিবারগুলোয় ‘হেলিকপ্টার ড্রপের’ সরাসরি নগদ অর্থ ছাড়সহ সরকারগুলোকে ব্যাপক আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। চলমান অর্থনৈতিক অভিঘাতের সম্প্রসারণশীল আকারের বাস্তবতায় উন্নত অর্থনীতিগুলোর জিডিপির ২-৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বা ততোধিক আর্থিক ঘাটতি (ফিসক্যাল ডিফিসিট) বাড়াতে হবে। ব্যক্তি খাতের পতন ঠেকাতে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারগুলোরই বড় ও যথেষ্ট শক্তিশালী স্থিতিপত্র রয়েছে। 

কিন্তু এসব ঘাটতি ও অর্থায়িত হস্তক্ষেপগুলোকে অবশ্যই পুরোপুরিভাবে নগদীকরণকৃত (মনিটাইজড) হতে হবে। যদি সেগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড সরকারি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয় তাহলে সুদহার লক্ষণীয়ভাবে বাড়বে এবং পুনরুদ্ধারও আরো সহজ ও সুগম হবে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে বামপন্থী ঘরানার আধুনিক আর্থিক তত্ত্ব-সমর্থিত দীর্ঘকাল ধরে প্রস্তাবিত হেলিকপ্টার ড্রপসহ হস্তক্ষেপগুলো মূলধারার হস্তক্ষেপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

দুর্ভাগ্যক্রমে সর্বোত্তম ঘটনার দৃশ্যপট সৃষ্টির জন্য উন্নত দেশগুলোয় জনস্বাস্থ্যগত সাড়া ও পদক্ষেপ মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশ অপ্রতুলতার সমস্যায় পড়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে যেসব আর্থিক নীতি-প্যাকেজ নেয়া হয়েছে, তা সময়মতো পুনরুদ্ধারের পরিস্থিতি তৈরিতে যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় আগের মহামন্দার চেয়ে খারাপ ও গভীরতর নতুন মহামন্দার ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মহামারী না থামা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি ও বাজারগুলোয় পতন অব্যাহত থাকবে। তবে এমনকি মহামারী কমবেশি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ২০২০ সালের শেষ নাগাদ সার্বিক প্রবৃদ্ধি তখনো আগের ধারায় ফিরে আসবে না। সর্বোপরি তখন নতুন মিউটেশনের মাধ্যমে অভিযোজিত হয়ে আরেকটি ভাইরাস মৌসুম শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেকেই যে ধরনের চিকিৎসাবিদ্যাগত হস্তক্ষেপগুলোর (থেরাপিউটিক ইন্টারভেনশন) জন্য প্রহর গুনছেন, সেগুলো আশার তুলনায় কম কার্যকর হতে পারে। কাজেই অর্থনীতিগুলো আবারো সংকুচিত এবং বাজারগুলোর আবারো পতন ঘটবে।

অধিকন্তু, আর্থিক সাড়া বা পদক্ষেপ দেয়ালে আঘাত করলে বিপুল ঘাটতির নগদায়ন উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঘটাবে, বিশেষত যদি ভাইরাসসংক্রান্ত পর্যায়ক্রমিক ঋণাত্মক সরবরাহ অভিঘাত সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে। এবং অনেক দেশ এসব দেনা নিজেদের মুদ্রায় বাস্তবিক অর্থে ধারণ করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে উদীয়মান বাজারের সরকার, করপোরেশন, ব্যাংক ও  পরিবারগুলোকে কে বেইলআউট করবে?

যেকোনোভাবে এমনকি মহামারী ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় যদি নিয়ন্ত্রণে আনাও যায়, তবু বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু ‘সাদা রাজহাঁসের’ (সুনিশ্চিত) ঝুঁকি থেকে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন সামনে আসায় কভিড-১৯-এর সংকট পশ্চিম এবং চীন, রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়াসহ অন্তত চার সংশোধনবাদী শক্তির (যে শক্তিগুলো এরই মধ্যে অপ্রতিসমভাবে ভেতর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করতে সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে) মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে। মার্কিন নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর অনিবার্য সাইবার হামলা বিতর্কিত চূড়ান্ত ফলাফলের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের অভিযোগ ঘিরে অতিমাত্রায় সহিংসতা ও জনবিশৃঙ্খলা তৈরির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।   

একইভাবে আগে যেমনটা বলেছি, বাজারগুলো চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়ন করছে; চীন-আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ত্বরান্বিত হওয়ায় দুটি দেশই কভিড-১৯ মহামারীর মাত্রার জন্য একে অন্যকে দুষবে। বর্তমান সংকট বোধহয় চলমান বলকানাইজেশনকে বেগবান করছে এবং সামনের মাস-বছরগুলোয় বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বিভক্ত ও দুর্বল করবে।

এই ত্রিমুখী ঝুঁকি—বেসামাল মহামারী, অপর্যাপ্ত অর্থনৈতিক নীতি হাতিয়ার ও ভূরাজনৈতিক সাদা রাজহাঁসের ঘটনা (সুনিশ্চিত ও অবশ্যম্ভাবী ঘটনা) বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধারাবাহিক মন্দায় ফেলা এবং আর্থিক বাজারের বিপর্যয়ের জন্য যথেষ্ট হবে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় একটি বলপূর্বক ( যদিও দেরিতে) নীতি সমর্থন বৈশ্বিক অর্থনীতিকে পতনের অতলগহ্বর থেকে টেনে তুলেছিল। আমরা সেদিক থেকে এবার অতটা সৌভাগ্যবান না-ও হতে পারি। 

[স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট]


শিক্ষা

জেনে রাখুন

শিক্ষা সংবাদ

ঘরে থাকার সময়ে অনলাইন কোর্স

তাহমিদা হোসাইন

০৫ এপ্রিল ২০২০, ১১:০৫
আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১১:০৫

প্রিন্ট সংস্করণ

  

প্রতীকী ছবিকরোনাকালে গৃহবন্দী থাকার এই সময়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারেন অনলাইনে কোর্স করে। কোর্সেরা (www.coursera.org) আর এডেক্সের (www.edx.org) মতো ওয়েবসাইটগুলো অনলাইন কোর্স করার জন্য দারুণ জনপ্রিয়। এই ওয়েবসাইটগুলোতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কারিগরি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। জেনে নিই এমন কিছু কোর্সের তথ্য।

নিজেকে জানতে যে কোর্স

প্রকৌশলবিদ্যায় পড়াশোনা করলেও নিজের আগ্রহ থেকে আমি অনলাইনে বেশ কিছু কোর্স সম্পন্ন করেছি। শুরু করেছিলাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য সায়েন্স অব ওয়েল-বিং’ নামের একটি কোর্স করার মাধ্যমে। কোর্সটি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীকেই করতে হয়। অনলাইনে এ পর্যন্ত কোর্সটি পাঁচ লাখ চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সম্পন্ন করেছেন। আপনি যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, নিজের জীবন, নিজের মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব তৈরির গুরুত্ব নিয়েই কোর্সটি সাজানো হয়েছে। এটি চার সপ্তাহের কোর্স।
ঠিকানা: https://bit.ly/39F2R9h

কম্পিউটার বিজ্ঞান

অনলাইনের আরেকটি জনপ্রিয় কোর্স হচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সিএস৫০ ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটার সায়েন্স’। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কোর্সটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরি করা। ১২ সপ্তাহের কোর্সটি অনলাইনে প্রোগ্রামিং ভাষা, কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় আর গাণিতিক চিন্তাভাবনা বিকাশ সম্পর্কে শেখায়।
কোর্সটির ঠিকানা: https://bit.ly/2x4rDT3

ব্যবসায় শিক্ষা

অর্থ সংস্থান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বিপণন, নেতৃত্ব বিষয়ে এডেক্সের ব্যবসাবিষয়ক অনলাইন কোর্সগুলো শুরু করতে পারেন। এমআইটির সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, হোয়ার্টন স্কুলের স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট, রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স শুরু করতে পারেন। কোর্সগুলোর

ঠিকানা: https://bit.ly/2X8wNZ2

ভাষাশিক্ষা যোগাযোগ দক্ষতা

অনলাইনে আপনি ভাষাশিক্ষাসহ যোগাযোগ দক্ষতা, প্রেজেন্টেশন তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করতে পারেন। আইইএলটিএস, টোয়েফেলের মতো ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা থেকে শুরু করে চীনা বা জার্মান ভাষা শেখার সুযোগ মিলছে এডেক্স আর কোর্সেরার মতো অনলাইন পোর্টালে। যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের জন্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিপেয়ারিং টু নেটওয়ার্ক ইন ইংলিশ করতে পারেন। ঠিকানা: https://bit.ly/2UImFo6

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য আর্ট অব পারসুয়েসিভ রাইটিং অ্যান্ড পাবলিক স্পিকিং’ কোর্সের মাধ্যমে ৮ সপ্তাহে দক্ষ বক্তা হয়ে ওঠার কৌশল শিখতে পারছেন।
কোর্সের ঠিকানা: https://bit.ly/3dYcmnI

চাকরির জন্য যেসব দক্ষতা প্রয়োজন সে সম্পর্কেও এডেক্সের মাধ্যমে শিখতে পারবেন। বিজনেস কমিউনিকেশন, টিমওয়ার্ক ও কলাবুরেশন, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও প্রবলেম সলভিং, ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনসহ নানা দক্ষতার বিভিন্ন কোর্স চালু আছে রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির। একেকটি কোর্স তিন সপ্তাহের করে।
 ঠিকানা: https://bit.ly/34bQ3Gv

কারিগরি শিক্ষা

কারিগরি শিক্ষার সুযোগ মিলছে অনলাইন সাইটগুলোতে। গুগল আইটি সাপোর্ট কোর্সটি এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়া গুগল আইটি অটোমেশন, ক্লাউড আর্কিটেকচার, মেশিন লার্নিংসহ বিভিন্ন কোর্স সরাসরি করা যাচ্ছে অনলাইন থেকে।
ঠিকানা: https://bit.ly/2xRS3HC

এ ছাড়া মাইক্রোসফট এক্সেল, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারের ওপর অনলাইনে কোর্স শেখার সুযোগ আছে। ঠিকানা: https://bit.ly/34hccmU

যা খেয়াল রাখতে হবে

প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করলে খুব সহজেই দ্রুত কোর্স সম্পন্ন করা যায়। সব অনলাইন কোর্সের ভাষা ইংরেজি। তাই ইংরেজি ভাষা প্রাথমিকভাবে বোঝার দক্ষতা থাকা বেশ জরুরি। সব অনলাইন কোর্সই বিনা মূল্যে পড়ার জন্য নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। সনদ নিতে চাইলে বাড়তি অর্থ আপনাকে জমা দিতে হবে।

করোনাজনিত পরিস্থিতিতে শিগগিরই যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, সে এক অনিবার্য বাস্তবতা। তবে সে ক্ষেত্রে এক দেশ থেকে অন্য দেশের পার্থক্য হবে শুধু এটুকু যে কোথাও তা অনেক আগেই শুরু হয়ে যাবে আবার কোথাও তা দেখা দেবে একটু পরে। একইভাবে মন্দার পরিধি ও মাত্রার ক্ষেত্রেও থাকবে এই তারতম্য। কোথাও হয়তো তা নিয়ন্ত্রণসীমার মধ্যে থেকে যেতে পারে আবার কোথাও তা নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে চলে গিয়ে সৃষ্টি করতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত মানবিক বিপর্যয়। তবে কোথায় কী ঘটবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে মন্দা-প্রস্তুতির ধরন ও পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশলের ওপর, যেমনটি লক্ষ করা গেছে করোনার চিকিৎসা পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে। উপযুক্ত কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে চীন, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে; অন্যদিকে তা করতে না পারায় চরম মূল্য দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে ইউরোপের অনেক দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রকে। ফলে এরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সর্বসাম্প্রতিক বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ কী করতে পারে, তা নিয়েই এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

করোনাপূর্ব সময়ের বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি প্রধান দুর্বলতা এই যে প্রবৃদ্ধির হারে অনেকখানি এগিয়ে থাকলেও মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে থেকেও দারিদ্র্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় ধপ করে এরা দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয় দুর্বলতা, কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখলেও অপেক্ষাকৃত কম প্রবৃদ্ধি হারের এই খাতে জনসংখ্যার বিরাজমান আধিক্য সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এ খাতে কর্মরতদের একটি বড় অংশই ছদ্মবেকার, করোনার মতো পরিস্থিতিতে একটু চাপে পড়লেই যারা পূর্ণ বেকার হয়ে পড়তে পারে।

এদিকে করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার এরই মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুদান তহবিল বরাদ্দ করেছে, যা মূলত পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদানে ব্যয় করবে। ধারণা করা যায়, ক্রমান্বয়ে অন্যান্য সংগঠিত খাতও সরকারের কাছ থেকে অনুরূপ অনুদান আদায় করে নিতে সক্ষম হবে এবং সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাকেন্দ্রের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ যত নিবিড়, বাংলাদেশের সামাজিক অভিজ্ঞতা বলে, তারা তত বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, করোনাজনিত অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও সহায়তার বেশির ভাগই যাবে বিত্তবান শ্রেণির হাতে, যারা ঝুঁকিতে পড়লেও তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু দারিদ্র্যঝুঁকিতে থাকা ৫০ শতাংশসহ নিম্ন আয়ের অপরাপর যে মানুষ আজ চরম বিপর্যয়ে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কার মুখে রয়েছে, তাদের কী হবে?

নিম্নবিত্তের সাধারণ মানুষের অবস্থা হবে করুণ থেকে করুণতর। এর মূল কারণ, নিম্ন আয় শ্রেণির মানুষ তাদের স্বার্থের প্রশ্নে বিত্তবান শ্রেণির মতো মোটেও সংগঠিত নয়। তৈরি পোশাক থেকে হিমায়িত খাদ্য, ওষুধ থেকে চামড়া, রিয়েল এস্টেট থেকে জনশক্তি রপ্তানি, ব্যাংকিং-বীমা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়, আমলা থেকে আড়তদার, চিকিৎসক থেকে প্রকৌশলী—সবারই নিজ নিজ গোষ্ঠী বা শ্রেণিভিত্তিক সমিতি বা সংগঠন আছে। তারা সবাই জানে কিভাবে চাপ প্রয়োগ করে অথবা ছলে-বলে-কৌশলে কিংবা প্রয়োজনে ব্ল্যাকমেইল করে দাবি বা আর্থিক সুবিধা আদায় করতে হয়। কিন্তু জমিতে খেটে খাওয়া কৃষক, মুটে-মজুর বা রিকশাচালক, ছোট্ট দোকানি অথবা ফুটপাতের বিক্রেতা, মাঝি-জেলে কিংবা পাহারাদার—নিম্ন আয় শ্রেণির এই সাধারণ মানুষের কারোরই কোনো সংগঠন নেই। ফলে তারা মোটামুটি বঞ্চিতই হবে।

উপমহাদেশের অতীত অভিজ্ঞতাও মোটামুটি এ আশঙ্কাকেই সামনে তুলে ধরে। এ অঞ্চলে অতীতে যতবারই বড় ধরনের বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, দাঙ্গাহাঙ্গামা, যুদ্ধবিগ্রহ বা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে ততবারই সুবিধাবাদী শ্রেণির মানুষ তাদের বিত্ত-বৈভব আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বিপরীতে বিত্তহীন বা নিম্নবিত্তের মানুষ নিঃশেষিত হতে হতে মৃত্যু বা চূড়ান্ত মানবেতর জীবনের মুখে নিপতিত হয়েছে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে, যা পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে বিশেষভাবে পরিচিত, শুধু বাংলায়ই ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। তবে তা খাদ্যের অভাবে নয়, পর্যাপ্ত খাদ্য থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্যের অভাবে তা ক্রয় করতে না পারার কারণে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বছরে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদনকারী বর্তমান বাংলাদেশে, যেখানে মানুষের গড় মাথাপিছু আয় প্রায় এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার, সেখানে তেমন পরিস্থিতির আর কখনোই পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। তবে পাশাপাশি এটাও সত্য যে স্বাধীনতা-উত্তর গত ৪৯ বছরের মধ্যে সম্পদের এমন চরম বৈষম্যও এ দেশে আর কখনো দেখা যায়নি।

এ অবস্থায় রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিবেকবান প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রথম প্রস্তাব : করোনাজনিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় খণ্ড খণ্ড ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না নিয়ে একসঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। তা না হলে কম অগ্রাধিকার খাতে অর্থ বরাদ্দ বা ব্যয় হয়ে যাওয়ার পর অধিক জরুরি খাতের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এতে সম্পদের ব্যাপক অপচয় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বিতীয় প্রস্তাব : কৃষি খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করুন। কারণ অর্থনৈতিক মন্দা বা বিপর্যয় দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত এই কৃষিই হবে আমাদের বাঁচার মূল রক্ষাকবচ। অথচ সত্য এই যে কৃষির পক্ষে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করার মতো কোনো সংগঠন কৃষকের নেই, যেমনটি অন্যান্য খাতে রয়েছে। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০৮-০৯-এর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় অনেক শক্তিশালী দেশই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়লেও বস্তুত এই কৃষি খাতের কারণেই বাংলাদেশকে তা খুব একটা কাবু করতে পারেনি। সরকার যেন তার মন্দা মোকাবেলা কর্মসূচিতে কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে।

তৃতীয় প্রস্তাব : ২০২০-২১ অর্থবছরের আসন্ন বাজেটে কৃষক ছাড়াও নিম্ন আয় গোষ্ঠীর অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য যেন জীবিকাসহায়ক ও জীবনধারণমূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। সে ক্ষেত্রে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), সামাজিক বনায়ন ইত্যাদির আওতা সম্প্রসারণ করে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। গ্রামীণ নারীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিআরডিবি, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যাতে উৎসাহব্যঞ্জক মূল্যে কিনে নেয়, তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর গ্রাম ও শহর—সর্বত্র আরো ব্যাপক হারে টিসিবি কর্তৃক ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

চতুর্থত : মন্দা দেখা দিলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়গুলোতে, বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পাবে। এই ঝরে পড়ার হার রোধকল্পে বিদ্যালয়গুলোর জন্য খাদ্য ও শিক্ষা উপকরণের বিতরণ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে তেমনি তা দরিদ্র পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াতেও কাজে আসবে।

পঞ্চমত : সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা ভেবে ঝুঁকি মোকাবেলার সামর্থ্য আছে এমন বিত্তবান শ্রেণির জন্য আর্থিক প্রণোদনা দানের বিষয়টি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে এই বিপদের দিনে স্বল্প আয়ের ও স্বল্পবিত্তের মানুষের আর্থিক সহায়তাদানের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য।

সব মিলিয়ে মূলকথা হচ্ছে, ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে অবস্থিত নিম্ন আয় গোষ্ঠীর অসংগঠিত সাধারণ মানুষকে প্রস্তাবিত সমন্বিত পরিকল্পনার (যদি তা গ্রহণ করা হয়) একেবারে প্রথমেই স্থান দিতে হবে। তা না হলে করোনাজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনা থেকে বলব, দেশে বর্তমানে যে চরম বৈষম্য ও বৈষম্যমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে, আসন্ন মন্দার কালে দরিদ্রের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সে বৈষম্য আরো বেড়ে যাবে, যা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে অর্জিত এই স্বাধীন দেশে কারোরই কাম্য হতে পারে না।

লেখক : পরিচালক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

নাৎসিবাদের আলামত এখন ইসরাইলে

ইউরি অ্যাভনেরি ছিলেন একজন ইসরাইলি লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং দ্য পিস ব্লক কোয়ালিশন ‘গুশ শালুম পিস মুভমেন্টে’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৯৫ বছর বয়সে মারা যান ২০১৮ সালের ৩ জুলাই। তরুণ বয়সে ছিলেন জায়নবাদী ইসরাইলের আধা সামরিক সংগঠন ইরগুনের সদস্য। ইরগুন ১৯৩১-৪৮ সময় পরিধিতে সক্রিয় ছিল ম্যান্ডেটেড ফিলিস্তিনে। দুই মেয়াদে নেসেট সদস্যও ছিলেন। একটি সংবাদ সাময়িকীও প্রকাশ করেন ১৯৫০ থেকে ১৯৯৩ সালে তা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বিষয়ে।

তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলন : ‘প্লিজ ডোন্ট রাইট অ্যাবাউট ইয়াইর গোলান। আরো বলেছিলেন : ‘বামপন্থীদের মতো তার বিরুদ্ধে কিছু লিখলে, তা তার জন্য ক্ষতিকর হবে।’ ইয়াইর গোলান হচ্ছেন ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। ২০১৬ সালেও তিনি ছিলেন ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব জেনারেল স্টাফ। বর্তমানে তিনি ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের একজন নেসেট সদস্য।

বন্ধুর কাছ থেকে এই সতর্ক-পরামর্শ পেয়ে ইউরি অ্যাভনেরি এক অস্বস্তি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ লেখা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু এর কয়েক সপ্তাহ পর তিনি আর চুপ থাকতে পারেননি। তখন তিনি একটি লেখায় উল্লেখ করেন, তিনি ইসরাইলে নাৎসিবাদের নানা আলামত দেখতে পাচ্ছেন। এই লেখায় তিনি ইসরাইলের নাৎসিবাদ-সমতুল্য আচরণ দেখে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন মৃত্যুর দুই বছর আগে। তখনো ইয়াইর গোলান ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ থাকার সময় ইয়াইর গোলান ‘হলোকাস্ট মেমোরিয়েল ডে’-র এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছিলেন ইউনিফর্ম পরে। তার ভাষণটি ছিল আগে থেকে তৈরি করা। একটি সুবিবেচিত ভাষণ। এই ভাষণ নিয়ে তখন বেশ একটা হইচই পড়ে যায়, যা আজো থামেনি। এই ভাষণের পরপর লেখা হয় ডজন ডজন লেখা। এসব কিছু লেখায় তার প্রতি ছিল নিন্দা জ্ঞাপন। আবার কিছু লেখায় তাকে উচ্চ প্রশংসা করা হয়। তখন তার ভাষণে ছিল কিছু সত্য উচ্চারণ : ‘কেউই অনুত্তম বা নিঃস্পৃহ থাকতে পারে না।’ তার ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাক্য ছিল এমন : ‘If there is something that frightens me about the memories of the Holocaust, it is the knowledge of the awful processes which happened in Europe in general, and in Germany in particular, 70, 80, 90 years ago, and finding traces of them here in our midst, today, in 2016.’


এর মোটমুটি অর্থ দাঁড়ায় : ‘হলোকাস্টের কোনো স্মৃতি যদি আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে থাকে, তবে তা হচ্ছেÑ সেই ভয়ানক প্রক্রিয়ার জ্ঞান, যা সাধারণভাবে ঘটেছিল ইউরোপে এবং বিশেষত জার্মানিতে সেই ৭০, ৮০, ৯০ বছর আগে এবং তার আলামত আজ এই ২০১৬ সালে এসে আমাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।’

২০১৬ সালে ইয়াইর গোলান তার তোলপাড় করা এ বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। সে হিসাবে ৯০ বছর আগে ছিল ১৯২৬ সাল। সেটি ছিল জার্মান প্রজাতন্ত্রের শেষ কয়টি বছরের একটি। আর ৮০ বছর আগে ছিল ১৯৩৬ সাল। এটি ছিল নাৎসিদের ক্ষমতায় আসার তৃতীয় বছর। আর ৭০ বছর আগের বছরটি ছিল ১৯৪৬ সাল, যে সালটি হচ্ছে হিটলারের আত্মহত্যার পরের বছর এবং সেই সাথে নাৎসি রাইখের পরিসমাপ্তির বছর।

বক্তব্যদেয়ারসময়ইউরিঅ্যাভনেরিসেখানেউপস্থিতছিলেন।তিনিউপলব্ধিকরেন, বক্তব্যবিষয়েতারলেখাউচিত।তিনিতারএকলেখায়জানান, ‘একজনশিশুহিসেবেআমিপ্রত্যক্ষকরেছিওয়েমাররিপাবলিকেরশেষবছরগুলো।জার্মানিকেওয়েমাররিপাবলিকবলারকারণএরসংবিধানেররূপদানকরাহয়েছিলওয়েমারশহরে।এটিছিলগেঁটেশিলারেরশহর।একজনরাজনীতিসচেতনবালকহিসেবেআমিদেখেছিনাৎসিদেরক্ষমতায়আরোহণএবংনাৎসিশাসনেরপ্রথমবছরেরপ্রথমঅর্ধেকটাসময়।আমিজানিইয়াইরগোলানকীবিষয়নিয়েকথাবলেছেন।যদিওআমরাভিন্নভিন্নপ্রজন্মেরমানুষ, আমাদেরপ্রেক্ষাপটছিলএকই।আমাদেরউভয়েরপরিবারএসেছিলজার্মানিরপশ্চিমাঞ্চলেরছোট্টএকশহরথেকে।

তিনিবলেন : ‘ইসরাইলেকড়াঐশিকআদেশবাকমান্ডমেন্টরয়েছে : কোনোকিছুকেইহলোকাস্টেরসাথেতুলনাকরাযাবেনা।হলোকাস্টহচ্ছেঅনন্য।এটিঘটেছিলআমাদেরওপর, ইহুদিদেরওপর।কারণআমরাঅনন্য।ধার্মিকইহুদিরাআরোবাড়িয়েবলবে : ‘কারণঈশ্বরআমাদেরবেছেনিয়েছেনÑ বিকজগডহ্যাজচুজেনআস

ইউরিঅ্যাভনেরিবলেন : ‘আমিসেইকমান্ডমেন্টভঙ্গকরেছি।গোলানেরজন্মেরঠিকআগেআমিহিব্রুভাষায়একটিবইপ্রকাশকরি।এরনাম : The Swastikaএতেআমারশৈশবেরস্মৃতিচারণরয়েছেএবংচেষ্টাকরেছিতাথেকেএকটাউপসংহারবাসিদ্ধান্তেপৌঁছাতে।

প্রসঙ্গত, হিটলারেরসহযোগীঅ্যাডলফআইখম্যানছিলেনফাইনালসলিউশনবাস্তবায়নেরঅন্যতমকারিগর।তারবিরুদ্ধেঅভিযোগতিনিছিলেনইহুদিবিতাড়নজার্মানিরকিলিংসেন্টারগুলোরপরিচালনাহলোকাস্টেরমূলে।দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধেরপরআমেরিকানকর্তৃপক্ষআইখম্যানকেগ্রেফতারকরেবন্দিশিবিরেআটকেরাখে।তবেজালকাগজপত্রদেখিয়েতিনিপালতেসক্ষমহন।পালিয়েআর্জেন্টিনায়চলেগিয়েরিকার্ডোক্লিমেন্টনামেপরিবারেরসাথেশান্তিতেইবসবাসকরছিলেন।আরকাজকরছিলেনবুয়েন্সআয়ার্সেরমার্সিডিজবেঞ্চকারখানায়।ইসরাইলেরগোয়েন্দাবাহিনীমোশাদতাকেআর্জেন্টিনাথেকেঅপহরণকরে১৯৬০সালের২০মেইসরাইলেনিয়েআসে।নিয়েঅবশ্যতখননানাপ্রশ্নওঠে।আর্জেন্টিনাঅভিযোগকরে : এরমাধ্যমেইসরাইলজাতিসঙ্ঘেরনিরাপত্তাকাউন্সিলেরস্বীকৃতসার্বভৌমত্বলঙ্ঘনকরেছে।ইসরাইলেআইখম্যানেরবিচারশুরুহয়১৯৬১সালে।তখনহলোকাস্টবিষয়টিসাধারণমানুষেরমধ্যেনতুনকরেআলোচনায়আসে।

হলোকাস্টেরমূলসংগঠকআইখম্যানেরবিচারেরপ্রাক্কালেইউরিঅ্যাভনেরিবিস্মিতহয়েলক্ষকরলেন, তখনকারইসরাইলেরতরুণদেরমাঝেনাৎসিযুগেরসম্পর্কেব্যাপকজ্ঞানঘাটতিরয়েছে।তারবইয়েরমধ্যেআলোকপাতনেইসেসম্পর্কে।যখনহলোকাস্টসঙ্ঘটিতহয়, এরআগেইতিনিইসরাইলেগিয়েবসবাসকরছিলেন।কিন্তুতখনবছরজুড়েতিনিএকটিবিষয়নিয়েভাবিতছিলেন।এমনকিপরবর্তীজীবনেও।তারপ্রশ্নছিল : বিশ্বেরসবচেয়েসংস্কৃতিবানদেশজার্মানিতেকীকরেএমনএকটিহলোকাস্টঘটতেপারল।এটিগেঁটের, বিটোভেনেরকান্টেরজন্মভূমি।সবচেয়েবড়প্রশ্নছিল : কীকরেএরাগণতান্ত্রিকভাবেহিটলারেরমতোএকজনঅসংলগ্নকথাবার্তাবলামানসিকবৈকল্যেরমানুষকেতাদেরনেতানির্বাচিতকরল?

ইউরিঅ্যাভনেরিরলেখাবইটিরশেষঅধ্যায়েরশিরোনাম : ‘ইটক্যানহ্যাপেনহিয়ার!’ তিনিএইশিরোনামটিনিয়েছিলেনআমেরিকানঔপন্যাসিকসিনক্লেয়ারেরবইইটক্যানহ্যাপেনহেয়ারথেকে।বইটিতেবর্ণনাকরেনযুক্তরাষ্ট্রেরনাৎসিদেরওপরনিয়ন্ত্রণপ্রতিষ্ঠারবিষয়টি।সেযাহোক, ইউরিঅ্যাভনেরিঅধ্যায়েআলোচনাকরেননাৎসিদেরমতোইহুদিপার্টিরওসম্ভাবনারয়েছেইসরাইলেক্ষমতায়আসার।তারউপসংহারছিল : ‘নাৎসিপার্টিবিশ্বেরযেকোনোদেশেরক্ষমতায়আসতেপারে।আরপরিস্থিতিঅনুকূলহলেইসরাইলেও।

এইবইটিব্যাপকভাবেএড়িয়েচলেইসরাইলিজনতা।তখনছিলঅভাবিতনির্বাচনীঝড়োহাওয়া।তাছাড়াতখনইসরাইলিরাপ্ররোচিতহচ্ছিলআইখম্যানেরবিচারসংশ্লিষ্টনানাউদঘাটননিয়ে।তখনএকজনসুখ্যাতপেশাজীবীসৈনিকইয়াইরগোলানবললেনসেইএকইবিষয়নিয়ে।এটিতাৎক্ষণিভাবেতৈরিকরাকোনোমন্তব্যছিলনা।বরংএটিছিলসরকারিকোনোঅনুষ্ঠানেএকজনজেনারেলেরসামরিকপোশাকপরিহিতঅবস্থায়দেয়ামন্তব্য, যাআগেথেকেইসুচিন্তিতভাবেতৈরিকরা।তারএইভাষণযেঝড়তোলে, তাএখনোশেষহয়নি।

ইসরাইলিদেররয়েছেএকটিআত্মরক্ষামূলকঅভ্যাস : যখনকোনোঅপ্রচলিতসত্যনিয়েদ্বন্দ্বদেখাদেয়, তখনএরাএরনির্যাসটিইএড়িয়েমেতেওঠেগুরুত্বহীনমাধ্যমিককোনোবিষয়নিয়ে।দেখাযাবেÑ মুদ্রণগণমাধ্যমে, টেলিভিশনেরাজনৈতিকপ্লাটফর্মেপ্রকাশকরাডজনডজনপ্রতিক্রিয়ায়কোনোটিতেইজেনারেলেরএইযুক্তিপূর্ণবক্তব্যনিয়েকোনোবাদানুবাদতোলাহয়নি।বরংএইপ্রশ্নেযেতীব্রবিতর্কচলল, তাহচ্ছেÑ একজনউচ্চপদস্থকোনোসামরিককর্মকর্তাকিএমনমতামতদিতেপারেন, যাসাধারণমানুষকেউদ্বিগ্নকরে? সামরিকপোশাকপরেতিনিকিতাকরতেপারেন? অধিকন্তুএকটিসরকারিঅনুষ্ঠানেতিনিকিধরনেরবক্তব্যদিতেপারেন?

কিন্তুপ্রশ্নটাহওয়াউচিতছিল : একজনসামরিককর্মকর্তারকিতাররাজনৈতিকদৃঢ়বিশ্বাসবাপ্রত্যয়সম্পর্কেচুপথাকাউচিত? কিংবাতিনিকিতাপ্রকাশকরতেপারবেনশুধুকোনোসীমাবদ্ধঅধিবেশনেই? ক্ষুব্ধবেনইয়ামিননেতানিয়াহুরকথামতোতাকিশুধুপ্রকাশকরাযাবেরিলিভেন্টকোনোফোরামে’?

জেনারেলগোলানসেনাবাহিনীরভেতরেএকজনসর্বজনশ্রদ্ধেয়অফিসারছিলেন।তারউজ্জ্বলসম্ভাবনাছিলডেপুটিচিফঅবস্টাফথেকেচিফঅবস্টাফহওয়ার।কিন্তুজেনারেলগোলানেরসেস্বপ্নআরপূরণহলোনা।তবেতিনিঅনন্যএকসাহসেরপরিচয়দিয়েছেন।ইসরাইলেরফিলিস্তিনিনিধনদমনপীড়ননিয়েমহাসত্যটিরপ্রতিইতিনিকৌশলীইঙ্গিতদিয়েছেন।তবেতারইঙ্গিতছিলস্পষ্ট : ইসরাইলফিলিস্তিনিদেরওপরনাৎসিদেরমতোফ্যাসিবাদচালাচ্ছে।বিবেকবানমানুষইশুধুধরনেরসাহসদেখাতেপারেন।

ধরনেরসাহসেরইতিহাসআরোআছে।দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধেরসময়েদ্যপাঞ্চম্যাগাজিনেপ্রকাশিতএকটিলেখাথেকেজানাযায়, তখনজার্মানিতেএকদলজুনিয়রসামরিককর্মকর্তাআয়ারল্যান্ডপ্রশ্নেসরকারিনীতিরবিরোধিতাকরেএকটিবিবৃতিপ্রকাশকরেছিলেন।এসবতরুণসামরিককর্মকর্তারাবলেছিলেন, তারাতাদেররাজনৈতিকপ্রত্যয়েরপ্রতিঅবিচলথেকেএইবিবৃতিদিয়েছেন।জন্যপ্রয়োজনেতারাতাদেরচাকরিজীবনউৎসর্গকরতেপারেন।

১৯২৯সালেশুরুহয়নাৎসিদেরক্ষমতায়আরোহণেরপালা।তখনভয়ানকবিশ্বঅর্থসঙ্কটজার্মানিতেওআঘাতহানে।একটিছোট্টচরমডানপন্থীপার্টিহঠাৎকরেইহয়েওঠেআমলযোগ্যএকরাজনৈতিকশক্তি।সেখানথেকেচারবছরেইএটিহলোসেদেশেরবৃহত্তমরাজনৈতিকদল।আরক্ষমতায়এলোকোয়ালিশনকরে।

ইউরিঅ্যাভনেরিবলেন : ‘জেনারেলগোলানেরবিরুদ্ধেঅভিযোগÑ তিনিইসরাইলকেনাৎসিজার্মানিরসাথেতুলনাকরেছেন।তিনিবলতেচেয়েছেন, ইসরাইলেযদিএমনকোনোঘটনাঘটেযাওয়েমাররিপাবলিককেধ্বংসকরেছিল, তবেইসরাইলওএকদিনএকইভাবেধ্বংসহয়েযাবে।আরএটিছিলএকটিঅর্থপূর্ণতুলনা।১৯১৬সালেরনির্বাচনেরপরথেকেতেমনসবঘটনাইঘটেচলেছে।এসবঘটনারসাথেনাৎসিদেরঘটানোঘটনারভয়ানকমিলরয়েছে।তবেএটিসত্য, প্রক্রিয়াটিপুরোপুরিভিন্ন।জার্মানিরফ্যাসিবাদেরজন্মপ্রথমবিশ্বযুদ্ধেরঅবমাননাকরআত্মসমর্পণ, ১৯২৩২৫সময়পরিধিতেফ্রান্সবেলজিয়ামেরজার্মানিরকয়লাখনিশিল্পএলাকাদখল, ১৯২৯সালেরভয়ানকঅর্থনৈতিকসঙ্কটলাখলাখমানুষেরবেকারত্বেরঘটনাগুলোরসম্মিলিতপ্রভাবথেকে।এখনআমরাইসরাইলিরাসামরিকদিকথেকেএকবিজয়ীজাতি।যাপনকরছিআয়েশিএকজীবন।তবেআমাদেরসামনেসম্পূর্ণভিন্নপ্রকৃতিরবিপজ্জনকএকটাহুমকিঅবশ্যইআছে : এসববিপদেরসৃষ্টিহয়নিআমাদেরপরাজয়সূত্রে, যেমনটিঘটেছিলজার্মানিরবেলায়।অবশ্যআজকেরইসরাইলেরসেকালেরজার্মানিরমধ্যেমিলেরচেয়েঅমিলইবেশি।কিন্তুমিলযেটুকুআছেতারউল্লেখকরারজন্যযথেষ্ট।দখলকরাফিলিস্তিনিভূখণ্ডেফিলিস্তিনিদেরপ্রতিপ্রতিটিক্ষেত্রেইসরাইলেরবৈষম্যনাৎসিজার্মানিরপ্রথমপর্যায়েরসাথেতুলনীয়।অধিকৃতফিলিস্তিনেতাদেরওপরইসরাইলিদেরপরিচালিতদমনপীড়নেরসাথেতুলনাকরাযায়মিউনিখবিট্রেইলেরপরপ্রটেক্টরেটেচেকদেরওপরজার্মানদেরদমনপীড়নেরসাথে।

তিনিস্বীকারকরছেন : ‘ইসরাইলিনেসেটেবৃষ্টিরমতোফ্যাসিবাদীবিলপাসকরাহচ্ছে।আরযেগুলোএরইমধ্যেকার্যকরকরাহয়েছে, তাচরমভাবেমিলেযায়নাৎসিশাসনেরপ্রথমদিকেরাইখস্ট্যাগেগৃহীতআইনগুলোরসাথে।কিছুরাবিশআইনেআহ্বানরয়েছেআরবদোকানগুলোবয়কটের, যেমনটিঘটেছিলতখনকারজার্মানিতে।নিয়মিতফুটবলমাঠেইসরাইলিরাচিৎকারকরেবলে : ‘ডেথটুঅ্যারাবসপার্লামেন্টেরএকজনসদস্যবলেছেন, হাসপাতালেইহুদিআরবনবজাতকদেরআলাদারাখতেহবে।একজনপ্রধানরাব্বিঘোষণাদিয়েছেন : ঈশ্বরগয়িমতথাইহুদিদেরবানিয়েছেনইহুদিদেরসেবাকরারজন্য।শিক্ষাসংস্কৃতিমন্ত্রীব্যস্তসবচরমডানপন্থীআদলেস্কুল, থিয়েটারশিল্পকলাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেবশীভূতকরারকাজে।এটিচলছেকর্তৃত্ববাদীজার্মানির Gleichschaltung-এরআদলে।ইসরাইলেরগৌরবসুপ্রিমকোর্টবিরতিহীনভাবেজাস্টিসমিনিস্টারেরআক্রমণেরশিকারহচ্ছে।গাজাউপত্যকাএখনবিশালএকঘেটো।অবশ্যইসরাইলেএমনএকজনসুজননেইযিনিফ্যাসিবাদীহিটলারফ্যাসিবাদীনেতানিয়াহুরমধ্যেদূরতমতুলনাটুকুকরতেপারেন।ইসরাইলেরপ্রতিটিরাজনৈতিকদলকেবলফ্যাসিবাদীগন্ধইছড়ায়।আজনাৎসিকোনোসরকারবেঁচেথাকলেসেখানেনেতানিয়াহুনিশ্চিতএকটিস্থানপেয়েযেতেন।

ইসরাইলেরবর্তমানসরকারেরএকটিস্লোগানহচ্ছে : ‘রিপ্লেসওল্ডএলিটসঅপরদিকেনাৎসিদেরস্লোগানছিল : ‘রিপ্লেসদাসসিস্টেমযখননাৎসিরাক্ষমতায়এলোতখনসবউচ্চপদস্থসামরিককর্মকর্তারাছিলেননাৎসিবিরোধীদেরগোঁড়াসমর্থক।এমনকিতারাহিটলারবিরোধীঅভ্যুত্থানেরকথাওভাবছিলেন।কিন্তুতাদেররাজনৈতিকনেতাকেএকবছরেরমাথায়ফাঁসিদেয়াহয়।হিটলারতারদলেরবিরোধীদেরনিষ্ক্রিয়করেন।

অতএবযথার্থউচ্চারণ : ইসরাইলিরাআসলেইনাৎসিফ্যাসিবাদেরসতেজক্রীড়াক্ষেত্র।

উপসম্পাদকীয়

করোনা : মহামন্দা ও খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা!

মুজতাহিদ ফারুকী

০৭ এপ্রিল ২০২০, ২১:১৯

তাহিদ ফারুকী –

করোনাভাইরাসেএরইমধ্যেলণ্ডভণ্ডহয়েগেছেপুরোবিশ্ব।২০৫টিদেশঅঞ্চলেছড়িয়েপড়াএইভাইরাসেআক্রান্তেরসংখ্যা১৩লাখছাড়িয়েছে।মৃতেরসংখ্যা৭০হাজারেরকাছাকাছি।উৎপত্তিস্থলচীনছাড়াআরকোনোদেশেইএরতীব্রতাকমেনি।বরংবাড়ছে।এখনপর্যন্তএরকোনোপ্রতিষেধকআবিষ্কারকরাযায়নি।তাইসংক্রমণঠেকানোরএকমাত্রউপায়হলো, মানুষেমানুষেশারীরিকদূরত্বরক্ষাকরা।সেজন্যআক্রান্তদেরযেমনবিচ্ছিন্নকরেরাখাহচ্ছেতেমনিঅন্যসবমানুষকেঘরেঅবস্থানকরতেবলাহয়েছে।বন্ধরয়েছেশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিসআদালত, শিল্পকারখানা, বাজারঘাট, শপিংমল।বন্ধহয়েগেছেবিমানচলাচল, সামাজিকসভাসমাবেশ, ক্রীড়াঅনুষ্ঠান, নৌচলাচল, দেশেরঅভ্যন্তরেরসবযানবাহন।

এরফলেবন্ধহয়েগেছেযাবতীয়অর্থনৈতিককর্মকাণ্ড।বিশ্বেরইতিহাসেঅভূতপূর্বএইপ্রেক্ষাপটেবিশ্বজুড়েএকমহামন্দারআশঙ্কাপ্রবলহয়েউঠেছে।বলাহচ্ছে, প্রথমদ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধবিশ্বেরঅর্থনীতিতেযেসঙ্কটেরমধ্যেঠেলেদিয়েছিল, এবারেরকরোনাভাইরাসেরফলেওঠিকএকইধরনেরসঙ্কটদেখাদেবে।কেউকেউবলছেন, মহামন্দাদেখাদিতেপারেবিশ্বঅর্থনীতিতে।লন্ডনস্কুলঅবইকোনমিকসেরঅর্থনৈতিকইতিহাসেরঅধ্যাপকআলব্রেখটরিচেলডয়চেভেলেকেবলেছেন, দুইবিশ্বযুদ্ধদুনিয়ারঅর্থনীতিকেযেসঙ্কটেফেলেছিল, করোনাভাইরাসেরকারণেসেরকমসঙ্কটদেখাদেবে।রিচেলবলেন, ১৯৩০এরদশকেরশুরুতেযেমহামন্দাদেখাদিয়েছিলএটাতারথেকেওখারাপহতেপারে।

অর্থনৈতিকসঙ্কটেরযেসবআলামতযেমন, চাহিদাকমেযাওয়া, উৎপাদনেঅতিমন্দা, বেকারত্বঅস্বাভাবিকভাবেবেড়েযাওয়া, আর্থিকসঙ্কটএবংতারপরপ্রবলঋণসঙ্কটইত্যাদিবিশ্বকেগ্রাসকরতেযাচ্ছে।কিভাবেএবংকতদিনেএইঅচলাবস্থারঅবসানহবেসেটাওকেউবলতেপারছেনা।জাতিসঙ্ঘবলছে, করোনারসংক্রমণবন্ধহলেওএরপরবিশ্বজুড়েখাদ্যসঙ্কটদেখাদিতেপারে।লকডাউনকতদিনস্থায়ীহবেসেসম্পর্কেকোনোরকমধারণানাথাকায়দেশেদেশেবিত্তবানমানুষসবারআগেখাদ্যমজুদেরদিকেঝুঁকেছে।তারাপ্রয়োজনেরচেয়েওবেশিখাদ্যমজুদকরছে।ফলেবিশ্বজুড়েখাদ্যসরবরাহব্যবস্থাব্যাহতহতেপারে।

বিশ্বখাদ্যকর্মসূচি (ওয়ার্ল্ডফুডপ্রোগ্রাম) একপ্রতিবেদনেবলেছে, গোটাবিশ্বেরকোনোপ্রান্তেইখাদ্যজোগানেরকোনোঅভাবনেই।কিন্তুলকডাউনেরমেয়াদযদিবাড়ানোহয়, আরবিত্তশালীখাদ্যসরবরাহকারীরাযদিআতঙ্কেঅতিরিক্তখাদ্যমজুদকরতেশুরুকরেন, তাহলেঅদূরভবিষ্যতেখাবারপাবেননাদারিদ্র্যসীমারনিচেবসবাসকারীবিশ্বেরবেশিরভাগমানুষ।বিশেষকরেপশ্চিমএশিয়াআফ্রিকারগরিবদেশগুলোএতেপ্রবলসমস্যায়পড়বে।এইপরিস্থিতিযাতেসৃষ্টিনাহয়, সেজন্যসবদেশেরসরকারকেখাদ্যসামগ্রীসরবরাহস্বাভাবিকরাখতেকড়ানজরদারিকরারপরামর্শদিয়েছেসংস্থাটি।খাবারনিয়েযাতেকোনোধরনেরকালোবাজারিনাহয়সেদিকেওনজরদিতেবলাহয়েছে।বিষয়েবিশ্বেরসবদেশেরসমন্বিতপরিকল্পনাতারযথাযথবাস্তবায়নজরুরিবলেমনেকরেনযুক্তরাষ্ট্রেরসাবেকপররাষ্ট্রমন্ত্রীহেনরিকিসিঞ্জার।মার্কিনসংবাদমাধ্যমদ্যওয়ালস্ট্রিটজার্নালেলেখানিবন্ধেতিনিবলেন, করোনাসঙ্কটমোকাবেলায়ব্যর্থহলেএরপ্রভাবেসারাবিশ্বেআগুনজ্বলতেপারে।বাস্তবতাহচ্ছে, করোনারপরেবিশ্বআরকখনোইএকইরকমথাকবেনা।

বাংলাদেশেকরোনাভাইরাসেরপ্রভাবকতটাপড়তেপারেসেবিষয়েওবিশেষজ্ঞরাকথাবলছেন।বলাহচ্ছে, বাংলাদেশেজিডিপিপ্রবৃদ্ধিকমেযেতেপারে।চাকরিহারাতেপারেনঅনেকমানুষ।সাম্প্রতিকসময়েবাংলাদেশেররফতানিআয়এমনিতেইপড়তিরদিকে।জুলাইথেকেফেব্রুয়ারিপর্যন্তপ্রবৃদ্ধিকমেছেচারদশমিকসাতনয়ভাগ।অব্যাহতভাবেকমেছেপোশাকরফতানি।কারণআমাদেরতৈরীপোশাকেরপ্রধানআমদানিকারকহলোইউরোপযুক্তরাষ্ট্র।করোনাভাইরাসেরকারণেপুরোইউরোপআমেরিকারঅবস্থাখুবইনাজুক।বাংলাদেশেরপোশাকরফতানির৬২ভাগযায়ইউরোপেআর১৮ভাগযায়যুক্তরাষ্ট্রে।স্বাভাবিকভাবেইরফতানিতেধসনেমেছে।তৈরীপোশাকশিল্পেরউদ্যোক্তারাজানিয়েছেন, এরইমধ্যেবিপুলপরিমাণক্রয়াদেশবাতিলহয়েছে।রেমিট্যান্সবাপ্রবাসীআয়েরক্ষেত্রেওএকইঅবস্থা।সাম্প্রতিকসময়েবাংলাদেশেরঅর্থনীতিরবেশিরভাগসূচকইনি¤œমুখী।তারমধ্যেওভালোকরছিলরেমিট্যান্স।চলতিঅর্থবছরেরপ্রথমআটমাসে১০৪২কোটিডলারদেশেপাঠিয়েছেনপ্রবাসীরা, যাআগেরবছরেরএকইসময়েরচেয়ে১০ভাগবেশি।এইগতিধরেরাখাএখনকঠিনহয়েযাবেবাংলাদেশেরজন্য।যেসবদেশকরোনাভাইরাসেআক্রান্তসেখানেঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডপ্রায়বন্ধ।সেখানেবসবাসরতবাংলাদেশীশ্রমিকবাব্যবসায়ীরাকর্মচ্যুতহলেদেশেপরিবারেরকাছেআগেরমতোটাকাপাঠাতেপারবেননা।তাইস্বভাবতইরেমিট্যান্সকমতেথাকবে।এরপ্রভাবপড়বেবৈদেশিকমুদ্রাররিজার্ভে।

আমরাজানি, দেশেরঅর্থনীতিরপ্রধানদুটিখাতহলোতৈরীপোশাকরফতানিপ্রবাসীআয়।রফতানিআয়কমেগেলেদেশেরশিল্পকারখানাগুলোতেশ্রমিকদেরআয়কমেযাওয়াবাকর্মসংস্থানেরঅনিশ্চয়তাদেখাদেবে।অন্যদিকেপ্রবাসীরাটাকাপাঠাতেনাপারলেতাদেরপরিবারআরআগেরমতোখরচকরতেপারবেননা।অর্থাৎতাদেরক্রয়ক্ষমতাকমেযাবে।এরনেতিবাচকপ্রভাবপড়বেব্যবসাবাণিজ্যে।কমেযাবেবেচাকেনা।আরচাহিদাকমেগেলেপণ্যপ্রস্তুকারীপ্রতিষ্ঠানগুলোতীরমুখেপড়বে।এশীয়উন্নয়নব্যাংক (এডিবি) এরইমধ্যেবলেছে, করোনাভাইরাসেরকারণেবাংলাদেশেরআর্থিকক্ষতিহতেপারে৩০০কোটিডলারেরমতো।আরচাকরিহারাতেপারেপ্রায়লাখমানুষ।এতেকরেজিডিপিকমেযেতেপারেএকদশমিকএকভাগ।

তবেআমাদেরউদ্বেগেরজায়গাটিকিন্তুখাদ্যসামগ্রীরসম্ভাব্যসঙ্কটনিয়ে।করোনাভাইরাসমহামারীরপ্রকোপেবৈশ্বিকসরবরাহব্যবস্থাভেঙেপড়েছে।অবস্থায়বিশ্বব্যাপীখাদ্যনিরাপত্তাচরমঝুঁকিতেপড়েছে।বিদ্যমানপরিস্থিতিতেবিশ্বেরবিভিন্নপ্রান্তেরভোক্তারাঝুঁকেছেনঅতিরিক্তখাবারমজুদেরদিকে।অনেকদেশওআপৎকালীনপরিস্থিতিসামলেওঠারলক্ষ্যেখাদ্যপণ্যরফতানিবন্ধরাখারপরিকল্পনাকরেছে।একইপথেহাঁটছেভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডেরমতোএশিয়ারশীর্ষচালরফতানিকারকদেশগুলো।ফলেঅঞ্চলথেকেচালেররফতানিহুমকিরমুখেপড়তেপারেবলেমনেকরছেনখাতসংশ্লিষ্টরা।অবস্থাদীর্ঘস্থায়ীহলেঅনেকদেশচরমখাদ্যসঙ্কটেপড়বেবলেসতর্কবার্তাদিয়েছেজাতিসঙ্ঘেরখাদ্যকৃষিসংস্থা (এফএও)এফএওজ্যেষ্ঠঅর্থনীতিবিদডেভিডডাউইবলেন, কোনোকোনোদেশখাদ্যরফতানিবন্ধকরলেবিশ্ববাজারেখাদ্যঘাটতিদেখাদিতেপারে।জানাযাচ্ছে, করোনামহামারীরপ্রভাবেঅভ্যন্তরীণসরবরাহনিশ্চিতকরতেসম্প্রতিভিয়েতনামচালেরনতুনবিক্রয়চুক্তিসাময়িকভাবেবন্ধরেখেছে।শীর্ষচালরফতানিকারকদেশগুলোরতালিকায়ভিয়েতনামেরঅবস্থানতৃতীয়।দেশটিরপ্রধানমন্ত্রীজাতীয়খাদ্যনিরাপত্তানিশ্চিতকরারলক্ষ্যেমধ্যএপ্রিলপর্যন্তচালেররফতানিনিয়ন্ত্রণকরারবিষয়েবাণিজ্যমন্ত্রীকেনির্দেশদিয়েছেন।ভিয়েতনামছাড়াওচালেররফতানিসাময়িকভাবেবন্ধেরঘোষণাদিয়েছেএশিয়ারঅন্যতমশীর্ষচালরফতানিকারকদেশকম্বোডিয়াও।একইআভাসদিয়েছেমিয়ানমারও।

এশিয়াঅঞ্চলেরচালেরবাজারবিশ্লেষকডেভিডডাউইবলেন, এশিয়ারদেশগুলোখুবএকটাসতর্কনাহয়েইচালেররফতানিবন্ধেরসিদ্ধান্তনিচ্ছে।তারাকেবলনিজেদেরজন্যপর্যাপ্তসরবরাহনিশ্চিতকরতেচাইছে।

অন্যদিকেঅনেকদেশআবারমনোনিবেশকরেছেবাড়তিআমদানিরদিকে।ফিলিপাইনএশিয়ারঅন্যতমশীর্ষচালউৎপাদনকারীদেশ।করোনাভাইরাসেরপ্রকোপেখাদ্যসঙ্কটদেখাদিতেপারেএমনআশঙ্কায়দেশটিচালেরআমদানিবাড়াচ্ছে।বর্তমানবিপর্যয়করপরিস্থিতিতেঅভ্যন্তরীণবাজারসামলেনিতেচীনবছররেকর্ডপরিমাণচালকিনতেপারেবলেমনেকরছেনখাতসংশ্লিষ্টরা।বিশ্বজুড়েচালেররফতানিচাহিদাহঠাৎবেড়েযাওয়ায়দামওবাড়ছেলাফিয়েলাফিয়ে।মার্চেথাইল্যান্ডেরশতাংশভাঙাচালেররফতানিমূল্যবেড়েটনপ্রতি৫১০ডলারেউন্নীতহয়েছে, যা২০১৩সালেরপরথেকেসর্বোচ্চরফতানিমূল্য।

বাংলাদেশচালউৎপাদনেস্বয়ম্ভরদেশ।গত১৫মার্চপর্যন্তদেশেখাদ্যশস্যমজুদেরপরিমাণ১৭লাখ৩৯হাজার৪৯৫টন।এরমধ্যেগমআছেতিনলাখ১৯হাজারটন।বাকি১৪লাখ২০হাজারটনচাল।ফলেদেশেখাদ্যসঙ্কটনেই।তেমনসম্ভাবনাওনেইবলেমনেকরছেনসরকার।আমরাআশ্বস্তথাকতেচাইযে, করোনাভাইরাসপরিস্থিতিরপ্রেক্ষাপটেদেশেখাদ্যনিয়েকোনোরকমসঙ্কটদেখাদেবেনা

করোনাউত্তর মহামন্দা বাংলাদেশ

কোভিড-১৯ উত্তর বিশ্ব আর কোনো দিন আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না বলে মার্কিন করোনাভাইরাস বিজ্ঞানী ড. অ্যান্টনি ফৌসি যে মন্তব্য করেছেন তাকে অনেকে সত্য হিসাবে ধরে নিতে শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কর্মকর্তারাও। অতীতেও মহামারী আর অর্থনৈতিক মহামন্দা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু জ্ঞাত ইতিহাসে এবারের মহামারীতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আভাস দেখা যাচ্ছে, তাতে বিশ্ববাসীকে বিরল কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে লক্ষাধিক ব্যক্তি করোনায় মারা গেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এর ক্ষয়ক্ষতির যেভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রকাশ করেছে, তাতে ধারণা করা হয় যে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর দ্বিগুণ হতে পারে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুÑ উভয় ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে উঠে আসছে বিশ্বের জ্ঞানবিজ্ঞান প্রযুক্তি ও সমর শক্তিতে শীর্র্ষ দেশ আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকানদের মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Ad by Valueimpression

সমাজকাঠামোরপ্রতিটিক্ষেত্রেআঘাতএবারেরমহামারীরআঘাতটিএকদিকেদ্রুতসংক্রমণশীলআরবিশ্বব্যাপীবিস্তৃত, অন্যদিকেসমাজকাঠামোরপ্রতিটিক্ষেত্রকেএটিআঘাতকরছে, তছনছকরেদিচ্ছে।সবচেয়েশঙ্কারবিষয়টিহলোÑ পর্যন্তহওয়াগবেষণাপর্যবেক্ষণেবলাহচ্ছে, ভাইরাসটিধরনপ্রকারেপরিবর্তিতহয়েবিধ্বংসীহয়েউঠছেক্রমাগতভাবে।বিশ্ববিখ্যাতইসলামিকস্কলারমুফতিইসমাইলমেন্কবলেছেন, করোনাভাইরাসেরএখনযেবিধ্বংসীঅবস্থাতামহাপ্রলয়প্রক্রিয়ারসূত্রপাতবলেমনেহচ্ছে।তিনিপবিত্রকুরআনেরমহাপ্রলয়সংশ্লিষ্টআয়াতএবংমহানবীসা:-এরবাণীগুলোতুলেএনেতারআশঙ্কারকথাব্যক্তকরেছেন।থিওলজিরবিষয়গুলোকেঅনুমানসর্বস্বঅতিলৌকিকবিষয়হিসেবেঅনেকেচিহ্নিতকরতেচান।কিন্তুএবারেরকরোনাভাইরাসেরপরবিজ্ঞানীদেরআসমানেরদিকেআরধর্মবেত্তাদেরবিজ্ঞানেরদিকেহাতবাড়ানোরযেকথাবিখ্যাতভারতীয়লেখিকাঅরুন্ধতীরায়বলেছেন, তাবেশতাৎপর্যপূর্ণবলেমনেহয়।করোনাভাইরাসেরতাৎক্ষণিকপরিবর্তনটিসম্ভবতএইযেপ্রচলিতবৈশ্বিকব্যবস্থাবাধারণাভেঙেচুরেহয়তোএকনতুনপৃথিবীরসৃষ্টিহচ্ছেঅথবামহাবিলুপ্তিউত্তরনতুনমহাজাগরণেরসময়েরদিকেমানবজাতিএগিয়েযাচ্ছে।মহামারীমহামন্দামহাপ্রলয়মহাজাগরণেরধর্মতাত্ত্বিকবাদর্শনগতবিচারবিশ্লেষণেরক্ষমতাআমাদেরনেই।বিষয়েযারাপ্রভূতজ্ঞানক্ষমতাসংরক্ষণকরেনএইআলোচনাতাদেরজন্যনির্ধারিত।আমিএইলেখায়বৈশ্বিকমহামন্দারপরিপ্রেক্ষিতেবাংলাদেশঅর্থনীতিএবংসমাজকাঠামোযেমহাপ্রতিকূলএকসময়েরমুখোমুখিহতেপারেসেঅবস্থারওপরআলোকপাতকরারচেষ্টাকরব।এইচেষ্টাকোনোভাবেইভীতিছড়ানোরজন্যনয়, বরংএটিযেবৈরীঅবস্থারমুখোমুখিআমরাহতেপারিতারআগামধারণানিয়েব্যাপারেপ্রস্তুতিযতটাসম্ভবনেয়ারজন্য, অন্ততমানসিকভাবেহলেও।

মহামন্দাঅতীতবর্তমানগতএকশতকেরমধ্যেসবচেয়েউল্লেখযোগ্যঅর্থনৈতিকমহামন্দাছিল১৯৩০এরদশকেবিশ্বব্যাপীসংঘটিতমন্দা।এইমন্দাশুরুহয়১৯২৯সালেআরশেষহয়১৯৩০এরদশকেরশেষেরদিকে।এটিছিলবিংশশতাব্দীরদীর্ঘসময়ব্যাপীব্যাপকপ্রভাববিস্তারকারীমন্দা।একবিংশশতাব্দীতেএইমহামন্দাকেবিশ্বঅর্থনীতিরপতনেরউদাহরণহিসেবেব্যবহারকরাহয়।১৯২৯সালেরসেপ্টেম্বরস্টকবাজারেদরপতনেরপরমার্কিনযুক্তরাষ্ট্রেএইমন্দাশুরুহয়।পরে১৯২৯সালের২৯অক্টোবরএইখবরবিশ্বব্যাপীস্টকমার্কেটেছড়িয়েপড়ে।১৯২৯সালথেকে১৯৩২সালেরমধ্যেবিশ্বব্যাপীজিডিপিপ্রায়১৫শতাংশহ্রাসপায়।কিছুঅর্থনীতি১৯৩০এরদশকেরমাঝামাঝিতেআগেরঅবস্থায়এলেওঅনেকদেশেরঅর্থনীতিতেমহামন্দারপ্রভাবদ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধেরশুরুপর্যন্তছিল।

ধনীদরিদ্রসবদেশেইসেইমহামন্দারবিধ্বংসীপ্রভাবছিল।ব্যক্তিগতআয়, কর, মুনাফামুদ্রামূল্যমানেরব্যাপকপতনঘটেএবংআন্তর্জাতিকবাণিজ্যর৫০শতাংশকমেযায়।মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রেবেকারত্বেরহার২৫শতাংশবেড়েযায়এবংকিছুকিছুদেশেবেকারত্বেরহারবেড়েদাঁড়ায়৩৩শতাংশে।পৃথিবীরবিভিন্নশহরেমহামন্দারপ্রভাবছিলতীব্র, বিশেষকরেযেসবশহরভারীশিল্পেরওপরবিশেষভাবেনির্ভরশীলছিল।অনেকদেশেনির্মাণকাজএকরকমবন্ধইছিল।শস্যেরমূল্যশতকরা৬০ভাগেনেমেএসেছিল।কৃষকগ্রামীণএলাকাগুলোক্ষতিগ্রস্তহয়েছিলব্যাপকভাবে।

মহামন্দারদুটিধ্রুপদীতত্ত্বহলোকেইনেসীয়চাহিদাচালিতএবংঅর্থকেন্দ্রিকব্যাখ্যা।চাহিদাচালিততত্ত্বেবলাহয়, বাজারেরওপরআস্থাহারানোরফলেভোগেরপরিমাণবিনিয়োগসংক্রান্তব্যয়কমেযায়।একবারমূল্যহ্রাসপাওয়ারফলেঅনেকমানুষধারণাকরেনতুনভাবেবাজারেবিনিয়োগনাকরেতারাতাদেরক্ষতিপুষিয়েনিতেপারবে।টাকাবিনিয়োগনাকরায়মূল্যহ্রাসপেলেতারালাভবানহয়এবংচাহিদাকমায়স্বল্পমূল্যেঅধিকপণ্যক্রয়করতেপারে।অর্থকেন্দ্রিকব্যাখ্যাকারীরামনেকরেনমহামন্দাসাধারণদরপতনহিসেবেশুরুহয়কিন্তুঅর্থসরবরাহসঙ্কুচিতহতেথাকলেঅর্থনৈতিকপরিস্থিতিখারাপেরদিকেযেতেথাকেএবংএইসাধারণদরপতনমহামন্দাররূপধারণকরে।অতীতেরমহামন্দারযেসববৈশিষ্ট্যতারসবইএবারেরকরোনাউত্তরমহামন্দায়দেখাযেতেপারে।

কিভাবেমন্দারমোকাবেলা?সরকারবৃহদাকারঅর্থনৈতিকনীতিগ্রহণ, টাকারজোগানবৃদ্ধি, সরকারিখরচবৃদ্ধিএবংকরেরপরিমাণকমিয়েমন্দারমোকাবেলাকরারচেষ্টাকরে।বিনিয়োগ, ব্যবসায়িকসংস্থাগতলাভচাকরিরসুযোগএকইসাথেকমেযাওয়ারমতোমন্দারঅনেকবৈশিষ্ট্যআছে, যেগুলোএকইসাথেদেখাদিতেপারে।মূলধারারবেশিরভাগঅর্থনীতিবিদমনেকরেন, অর্থনীতিতেঅপর্যাপ্তগড়চাহিদারকারণেমন্দাদেখাদেয়এবংতারামন্দারসময়সম্প্রসারণমূলকবৃহদাকারঅর্থনৈতিকনীতিগ্রহণেরপক্ষপাতী।অর্থনীতিকেমন্দারকবলথেকেমুক্তকরারনানাকৌশলআছে।নীতিনির্ধারকরাঅর্থনীতিরকোনশাখাঅনুসরণকরছেনতারওপরনির্ভরকরেকৌশলগুলোভিন্নভিন্নহয়।মুদ্রাসরবরাহনিয়ন্ত্রণকরারমাধ্যমেঅর্থনীতিতেপরিবর্তনআনারপ্রক্রিয়ায়বিশ্বাসীরাসম্প্রসারণমূলকমুদ্রানীতিব্যবহারেরপক্ষপাতী।আবারকেইনসেরঅনুসারীঅর্থনীতিবিদরাঅর্থনীতিরবৃদ্ধিতেগতিআনারজন্যসরকারেরব্যয়বৃদ্ধিকরারকথাবলেন।জোগানেরওপরজোরদেনযেসবঅর্থনীতিবিদ, তারাব্যবসায়পুঁজিরবিনিয়োগবাড়ানোরজন্যকরছাড়েরপ্রস্তাবকরেন।অবাধবাণিজ্যনীতিতেবিশ্বাসীঅর্থনীতিবিদরাবাজারেরস্বাভাবিককর্মক্ষমতারওপরসরকারিহস্তক্ষেপনাকরারপরামর্শদেন।

মন্দাএবংরাজনীতিমহামন্দারপরঅনেকদেশরাজনৈতিকবিপ্লবেরসম্মুখীনহয়।ইউরোপল্যাটিনআমেরিকারঅনেকদেশেএকনায়কতন্ত্রস্বৈরাচারীশাসনেরকাছেগণতন্ত্রমুখথুবড়েপড়ে, বিশেষকরে১৯৩৩সালেপ্রতিষ্ঠিতনাৎসিজার্মানি।লিউফাউন্ডল্যান্ডেরকর্তৃত্বেরফলেস্বেচ্ছায়গণতন্ত্রছেড়েদিতেহয়।অর্থনৈতিকপরিস্থিতিরজন্যসাধারণতদেশেরসমসাময়িকপ্রশাসনকেইপ্রশংসাঅথবাদোষেরভাগীহতেহয়।এরফলেএকটিমন্দাঠিককখনশুরুহয়েছে, তানিয়েমতবিরোধসৃষ্টিহয়।কোনোঅর্থনৈতিকসম্প্রসারণযদিএমন

একটিস্তরেপৌঁছায়যেখানেতারপক্ষেটিকেথাকাআরসম্ভবনয়, তাহলেতারফলাফলইহয়অর্থনৈতিকচক্রেরঅধোগতিআরসংক্ষিপ্তএকটিপতনেরদ্বারাসেইপরিস্থিতিসংশোধিতহয়।তাইএইআবর্তেরকোনোনির্দিষ্টপর্যায়েরকারণকেআলাদাকরাখুবএকটাসহজকাজনয়।সাধারণভাবেমনেকরাহয়, মন্দাএবংতারতীব্রতারওপরসরকারেরকাজকর্মেরকিছুপ্রভাবথাকে।অর্থনীতিবিদরাওবলেনযে, সাধারণতমন্দাসম্পূর্ণরূপেএড়ানোসম্ভবনয়এবংতারকারণগুলোওসঠিকভাবেবোঝাযায়না।ফলে, আধুনিকসরকারপ্রশাসনমন্দাপ্রশমিতকরতেকিছুপদক্ষেপনেয়, কিন্তুসেগুলোনিয়েওমতবিরোধথাকে।বেশিরভাগক্ষেত্রেইএইপদক্ষেপগুলোমন্দাআটকানোরক্ষেত্রেব্যর্থহয়এবংএইপদক্ষেপগুলোনেয়ারকারণেমন্দাকমতীব্রঅথবাদীর্ঘায়িতহয়েছেকিনা, তাস্থিরকরাওকঠিনহয়।

করোনারপ্রভাবপরিণতিকরোনাভাইরাসেরপ্রভাবএখনতারউত্থানপর্বঅতিক্রমকরছে।গতডিসেম্বরেচীনেরউহানেএটিরসূচনাঘটারপরএপ্রিলেরমাঝামাঝিনাগাদ১০০দিনপূর্তিতেএটিইউরোপআমেরিকাসহবিশ্বেরব্যাপকসংখ্যকদেশেবিস্তারমানরয়েছে।আরোতিনথেকেছয়মাসএরমহামারীপ্রভাবঅটুটথাকতেপারে।এরমধ্যেসূচনাকালেরদেশগুলোতাদেরকরোনাপ্রভাবকাটিয়েআবারআগেরঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডশুরুবাবিস্তৃতকরায়মনোযোগীহবে।২০২০সালেরশেষনাগাদসময়টিঅর্থনৈতিকসামাজিকপুনরুদ্ধারকাজশুরুতেইচলেযেতেপারে।ফলেনতুনকোনোভাইরাসেরসংক্রমণনাঘটলেওচলমানসালটিবৈশ্বিকঅবস্থারকরোনাউত্তরঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডেরঅধোগতিরসময়হিসাবেইথাকবে।এইসময়েবিশ্বেনির্মাণশিল্পমুখথুবড়েপড়বে, ব্যক্তিগতসক্ষমতাহ্রাসেরকারণেবাজারেরচাহিদাব্যাপকভাবেকমেযাবে, রেমিট্যান্সআয়েধসনামবে, স্বাস্থ্যসেবায়ব্যয়বাড়বে।সামগ্রিকভাবেসমাজেরতথাজনগণেরঅর্থনৈতিকসক্ষমতাকমেযাবে।আইএমএফএখনোআশাবাদীথাকলেও২০২০সালেবিশ্বঅর্থনীতিতেইতিবাচকপ্রবৃদ্ধিহওয়ারধারণাসঠিকহবেবলেমনেহয়না।এইবৈশ্বিকবাস্তবতাসামনেরেখেবাংলাদেশেরঅবস্থাবিশ্লেষণকরতেহবে।

বাংলাদেশেরবাস্তবতাএপ্রিলেরমাঝামাঝিনাগাদবাংলাদেশকরোনাভাইরাসেরদ্রুতসংক্রমণশীলঅবস্থাঅতিক্রমকরছে।মধ্যমার্চথেকেলকডাউনেরযেপ্রক্রিয়াশুরুকরাহয়েছেসেটিচূড়ান্তঅবস্থারদিকেযাচ্ছে।করোনাআক্রান্তেরএখনজ্যামিতিকবিস্তৃতিতথাকমিউনিটিসংক্রমণবাড়ছে।রাজধানীঢাকা, নিকটবর্তীশহরনারায়ণগঞ্জগাজীপুরেএরদ্রুতবিস্তারঘটছে।করোনাপরীক্ষারসুবিধাবিস্তৃতকরারসাথেসাথেআক্রান্তেরসংখ্যাসরকারিহিসাবেলাফিয়েবাড়ছে, একইসাথেবাড়ছেমৃতেরসংখ্যাও।চলমানলকডাউনমেমাসেরশেষপর্যন্তবিস্তৃতহতেপারেবলেধারণাকরাহচ্ছে।

করোনাভাইরাসেবাংলাদেশেমৃত্যুবাক্ষয়ক্ষতিকোনপর্যন্তপৌঁছাতেপারেতানিয়েবেশমতপার্থক্যরয়েছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী. মোমেনবলেছেন, জাতিসঙ্ঘেরফাঁসহওয়াদলিলেবাংলাদেশেমৃতেরসংখ্যা২০লাখেউঠেযেতেপারেবলেযেবক্তব্যতাভুলঅতিরঞ্জিত।আমারওব্যক্তিগতভাবেসেটিইমনেহয়।

প্রভাবহবেঅনেকগভীরতবেকরোনাশিকারেরসংখ্যাবাংলাদেশেযাইহোকনাকেনএরপ্রভাবআগেথেকেবাংলাদেশেরক্রমাবনতিশীলঅর্থনীতিতেঅনেকগভীরহতেপারে।বাংলাদেশেআগামীমাসেবাজেটঘোষণাকরাহবে।বাস্তবভিত্তিককরতেহলেএইবাজেটেরআকারবাবরাদ্দডলারেরহিসাবেহবেসঙ্কুচিত।কারণ২০২০অর্থবছরেররাজস্বআয়েরযে৫০শতাংশলক্ষ্যমাত্রাদাঁড়িয়েছিলতারবিপরীতেমাসেঅর্জিতহয়েছেমাত্রসাড়েশতাংশ।করোনাআক্রান্তশেষার্ধেতাআরোঋণাত্বকহওয়ারআশঙ্কারয়েছে।ব্যাংকিংব্যবস্থাথেকেঅথবাবিদেশীউৎসথেকেঋণনিয়েবাজেটেরপরিকল্পনাবাস্তবায়নেরবাস্তবতাওএখননেই।বিশ্বব্যাপীমন্দারকারণেবিশ্বব্যাংকগ্রুপেরতহবিলঅথবাচীনবাজাপানেরসহায়তাÑ কোনোটাইআগেরমাত্রায়থাকবেনা।এরফলেনতুনঅর্থবছরেবার্ষিকউন্নয়নকর্মসূচিসঙ্কুচিতকরতেইহবে, রাজস্বব্যয়েররাশটেনেধরতেহবে।অথচশিল্পকলকারখানাসচলরাখতেহলেপ্রণোদনাসহায়তাদিতেহবে, মানুষকেক্ষুধাঅনাহারথেকেবাঁচাতেসামাজিকনিরাপত্তাজালবিস্তৃতকরতেহবে, গ্রামথেকেশহরপর্যন্তআবারঅর্থনীতিরচাকাসচলকরতে, কৃষিএবংক্ষেতখামারেউৎপাদনপ্রক্রিয়াঅব্যাহতরেখেসম্ভাব্যখাদ্যসঙ্কটমোকাবেলাকরতেহলেঅর্থেরপ্রবাহবাড়াতেহবে।একদিকেঅর্থেরঅভাবঅন্যদিকেঅর্থব্যয়েরপ্রয়োজনএইদ্বিমুখীচ্যালেঞ্জজয়বাংলাদেশকিভাবেকরবেসেটিইহবেবড়বিষয়।

করোনাভাইরাসেরপ্রভাবসমাজেপড়েছেশ্রেণীনির্বিশেষে।ভাইরাসউত্তরবাস্তবতাহলোনি¤œবিত্তমধ্যবিত্তথেকেশুরুকরেবিত্তশালীপর্যন্তসবারইঅর্থনৈতিকসক্ষমতারঅবনমনঘটছে।নি¤œবিত্তরাসক্ষমতাহারালেরাষ্ট্রেরসামাজিকনিরাপত্তাজালএবংদানখয়রাতেরওপরনির্ভরশীলহয়।সেটিনাথাকলেআকালেবেঘোরেপ্রাণহারায়।মধ্যবিত্তরাঅর্ধাহারঅনাহারেদুঃসময়কাটিয়েআবারঘুরেদাঁড়ানোরচেষ্টাকরে।সমাজেরঅপেক্ষাকৃতসক্ষমরাতাদেরব্যবসাবাশিল্পোদ্যোগকেপ্রাপ্যসহায়তাকাজেলাগিয়েআবারসচলকরারচেষ্টাকরে।এইপ্রক্রিয়ায়প্রতিটিশ্রেণীপরস্পরেরপ্রতিনির্ভরশীল।রাষ্ট্রেরদায়িত্বহয়েদাঁড়াবেসবশ্রেণীরমানুষকেযারযারঅবস্থানথেকেঘুরেদাঁড়ানোরপরিবেশসৃষ্টিএবংপ্রয়োজনীয়সহায়তাদেয়া।

প্রশ্নহলোসেটিকিভাবেসম্ভব? করোনাভাইরাসসংক্রমণেরসময়েরাষ্ট্রকেজনগণেরজীবনবাঁচাতেস্বাস্থ্যসেবাযতটাসম্ভবনিশ্চিতকরতেএবংহতদরিদ্রদেরকাছেখাবারপৌঁছাতেহবে।সরকাররাষ্ট্রেরনিরাপত্তাবাহিনীরসহায়তায়এবংজরুরিঅর্থসম্প্রসারণপদক্ষেপেরমাধ্যমেসেচেষ্টাকরেযাচ্ছে।প্রক্রিয়ারনিয়ন্ত্রণরাজনৈতিকদলেরকাছথেকেদূরেরাখাহলেবাস্তবতারনিরিখেসর্বোচ্চপদক্ষেপসরকারকার্যকরকরতেপারবে।জন্যআন্তর্জাতিকসহায়তাওকাজেলাগাতেহবে।এরপরমহামারীরপ্রকোপকমেআসারসাথেসাথেঘরবন্দীঅবস্থাথেকেমানুষবেরহবে।তখনকারবাস্তবতাহবেব্যাপকবেকারত্বকর্মহীনতা।বিদেশথেকেওলাখলাখপ্রবাসীচাকরিহারাহয়েদেশেফিরেআসবে।বেসরকারিখাতেরঅনেকব্যবসাশিল্পোদ্যোগএরমধ্যেরুগ্নহয়েপ্রায়বন্ধহয়েযেতেপারে।কৃষকখামারিদেরউৎপাদনক্ষতিরকারণেআর্থিকসহায়তানাপেলেসেগুলোকেসচলকরতেপারবেনা।

বাংলাদেশেছোটবড়উদ্যোগেআর্থিকসহায়তাদানেরদুটিকাঠামোরএকটিহলোআনুষ্ঠানিকব্যাংকখাত, আরেকটিএনজিওবাস্বেচ্ছাসেবীখাত।গতএকদশকব্যাপীবৈরীপৃষ্ঠপোষকতারকারণেএনজিওগুলোরসমাজউন্নয়নেঅবদানরাখারসক্ষমতাঅনেকখানিকমেগেছে।করোনাউত্তরমহামন্দাপরিস্থিতিতেগ্রামীণঅর্থনীতিতেসক্ষমতাফেরাতেহলেএনজিওকার্যক্রমেপ্রাণসঞ্চারকরতেহবে।ক্ষেত্রেগ্রামমুখীগ্রোথসেন্টারতৈরিরজন্যআনুষ্ঠানিকব্যাংকখাতকেওকাজেলাগানোযেতেপারে।ব্যাপারেইসলামীব্যাংকগুলোকেবিশেষভাবেসম্পৃক্তকরাযেতেপারেযাদেরউল্লেখযোগ্যসংখ্যকগ্রামীণশাখারয়েছে।দ্বিতীয়চ্যালেঞ্জহবেব্যাংকখাতেবিনিয়োগযোগ্যকার্যকরতহবিলসৃষ্টি।

ব্যাংকগুলোরবর্তমানযেতারল্যপরিস্থিতিতাতেজরুরিকোনোপদক্ষেপনানিলেএটিনিশ্চিতকরাযাবেনা।ধরনেরএকটিমহামন্দাপরিস্থিতিসামালদেয়ারজন্যটাকারসরবরাহবৃদ্ধিকরতেব্যাংকগুলোরবাধ্যতামূলকতহবিলসংরক্ষণহারআরোনমনীয়করাসহপ্রয়োজনীয়পদক্ষেপনিতেহবে।ক্ষেত্রেমুদ্রানীতিরসাধারণব্যাকরণেরচেয়েওরাষ্ট্রেরপ্রয়োজনসঙ্কটউত্তরণকেঅগ্রাধিকারদিতেহবে।

ব্যাংকখাতইমূলযেকোনোসামাজিকশিল্পোদ্যোগেজরুরিঅর্থায়নেরক্ষেত্রেব্যাংকখাতেরসক্ষমতাঅতিজরুরিএকটিবিষয়।আমরাযতইশাকদিয়েমাছঢেকেরাখারচেষ্টাকরিনাকেন, বাস্তবতাহলোব্যাংকগুলোরহিসাবেযেটাকাআছে, সেইটাকাবাস্তবেনেই।আরএইটাকারবড়অংশব্যাংকমালিকরাপরস্পরেরযোগসাজশেনামেবেনামেবেরকরেনিয়েগেছেন।এইঅর্থব্যাংকেরহিসাবেনিয়মিতঋণহিসাবেদেখানোরকারণেশরীরেরভেতরেরক্যান্সারটিবাইরেথেকেদেখাযাচ্ছেনা।আবারপ্রদর্শিতকল্পিতআয়থেকেরাষ্ট্রকেকরপরিশোধকরতেগিয়েব্যাংকস্বাস্থ্যকেআরোসঙ্কটাপন্নকরাহচ্ছে।সংসদেঅর্থমন্ত্রীরতথ্যঅনুুসারেযেপৌনেদুইলাখকোটিটাকাব্যাংকপরিচালকদেরকাছেঋণরয়েছেতাআদায়েবিশেষব্যবস্থানিতেহবে।বিশেষতএরযেঅংশদেশেরবাইরেনিয়েযাওয়াহয়েছেযেভাবেইহোকসেটিকেআবারদেশেরঅর্থনীতিতেফিরিয়েআনতেহবে।এটিসরকারঅথবারাষ্ট্রেরডিপস্টেটচাইলেঅসম্ভবনয়।এইপ্রক্রিয়ায়লুটেরামানসিকতারপরিচালকদেরহাতথেকেব্যাংকেরনিয়ন্ত্রণপেশাদারসৎউদ্যোক্তাদেরহাতেস্থানান্তরকরতেহবে।

কেন্দ্রীয়ব্যাংকেরসম্প্রসারণশীলউদ্যোগেরপাশাপাশিব্যাংকেরতহবিলপুনরুদ্ধারেরএইপদক্ষেপসফলকরাগেলেরাষ্ট্রেরপক্ষেসীমিতসম্পদদিয়েওগ্রামথেকেরাজধানীপর্যন্তআবারঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডচাঙ্গাকরাসম্ভবহবে।

মনেরাখতেহবে, এবারেরচ্যালেঞ্জবাংলাদেশেরজন্যঅনেকবড়এবংবাঁচামরারইস্যু।১৯২৯সালেরমহামন্দাগোটাবিশ্বেএখনকারমতোএতটাসর্বব্যাপীগভীরছিলনা।ফলেএবারবিশ্বেরজন্যচ্যালেঞ্জউত্তরণযেমনকঠিনতেমনিভাবেবাংলাদেশেরজন্যতাআরোকঠিন।চ্যালেঞ্জরাষ্ট্রক্ষমতায়কেথাকলনাথাকলতারচেয়েবড়হলোএটিরাষ্ট্রহিসেবেবাংলাদেশেরসক্ষমভাবেঅস্তিত্বটিকিয়েরাখারচ্যালেঞ্জ।এইচ্যালেঞ্জজয়েরকোনোবিকল্পনেই।
mrkmmb@gmail.com

কষ্টার্জিত প্রবৃদ্ধি করোনায় ভেস্তে যাবে?

সারাবিশ্ব এখন মারাত্মক ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এর মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে এবং ব্যাপকতর আক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা আরোপে বাধ্য হয়ে চলেছে। প্রায় প্রতিটি দেশ এখন পরস্পর থেকে স্ব-আরোপিত যোগাযোগ-বিচ্ছিন্নতা প্রতিপালন করছে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ এখন লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সেলফ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন এবং/অথবা বাধ্যতামূলক ছুটিতে গৃহবন্দি থাকতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের বৃহদাংশও এখন গৃহবন্দি, যদিও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা জনগণকে মানাতে সরকারকে খুবই বেগ পেতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার পর্যায়ে না পৌঁছালেও অর্থনীতিতে যে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে গেছে, সেটিকে আতঙ্কজনক বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ায় অর্থনীতিতে উন্নয়নের যে জোয়ার আমাদের অতি দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মহাসোপানে আরোহণের সুযোগ করে দেওয়ার কথা ছিল, এই চলমান বৈশ্বিক মহামারির আঘাতে ইতোমধ্যেই সে সম্ভাবনা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী এই মহামারির দাপট দ্রুত কমানোর কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। অতএব, মহামারির অর্থনৈতিক অভিঘাতও এক-দুই বছরে হয়তো স্তিমিত হবে না। করোনাভাইরাস মহামারির ছোবলে বিশ্ব অর্থনীতি ১৯২৯-৩৩-এর মহামন্দার চাইতেও ভয়াবহ যে আরেকটি মহামন্দায় ইতোমধ্যেই পতিত হয়েছে, তার ঢেউ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও মহাবিপর্যয়কর সুনামির সৃষ্টি করবেই। সুনামি কথাটা হয়তো এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি খাটে না। কারণ, ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতি যে একটা মহা-সংকোচনের গিরিখাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে তা থেকে কোনো দেশের অর্থনীতিই মহাক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে নিষ্ফৃ্কতি পাবে না। ক্ষতির মাত্রা কমানোর প্রাণপণ প্রয়াসই মৃত্যুর মিছিল থামানোর পর সব দেশের নীতি-প্রণেতাদের অহর্নিশ সাধনায় পরিণত হবে।
ইতোমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অবশ্য তাদের প্রাক্কলনে জানিয়েছে যে, করোনা-পরবর্তী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সামান্য কমলেও তা ৭.৮ শতাংশের মতো হতে পারে, যা পরবর্তী বছরে আবার ৮ শতাংশ অতিক্রম করবে। এত তাড়াতাড়ি এ ধরনের আশাবাদী পূর্বাভাস প্রদানের ভিত্তি কী, সেটি বোঝা গেল না! আমি নিজে এত বেশি উচ্চাশা পোষণ করতে পারছি না। আমার সন্দেহ, অর্থনীতির যে ধস এবং লাইনচ্যুতি ইতোমধ্যেই সংঘটিত হয়ে গেছে, তার ধকল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা সঠিকভাবে বিশ্নেষণ করতে পারেননি। বাংলাদেশের অর্থনীতির সব খাতই চলমান করোনাভাইরাস মহামারির ছোবলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে রপ্তানি খাতের চাহিদায় ধস, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প খাতের উৎপাদন সংকোচন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের টিকে থাকার সংকট, জনশক্তি রপ্তানি বাজার সংকোচন ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস, প্রবাসীদের কর্মসংস্থানে ধস এবং দেশে ফেরার আসন্ন হিড়িক, পর্যটন-হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ে ধস, নির্মাণ খাত ও নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন খাতের ধস, পরিবহন ব্যবস্থার লণ্ডভণ্ড অবস্থা- এগুলো সহজে চোখে পড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কৃষি খাত, ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থা, দোকানপাট-শপিংমল-গ্রামীণ হাট-বাজারের দীর্ঘ অচলাবস্থা, ভোক্তাদের ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারের ধস, ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ সংকোচন, শিক্ষা খাতসহ সেবা খাতের তছনছ অবস্থা- এগুলোর মাধ্যমেও সংকোচনের অভিঘাত অচিরেই দৃশ্যমান হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই অভিঘাতগুলোর সম্মিলিত যোগফল বর্তমান অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে কমপক্ষে ১-১.৫ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ২-৩ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক যা-ই বলুক না কেন।


প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে অর্থনীতির এই মহাবিপর্যয় মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যেগুলোকে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলতেই হবে। পরবর্তী সময়ে ঘোষণা করেছেন কৃষি খাতের প্রণোদনা। ২৫ এপ্রিল ছুটি শেষ হওয়ার পর তখনকার বাস্তবতার নিরিখে অদূর ভবিষ্যতে এগুলোর ফলোআপ হিসেবে আরও অনেক নতুন পদক্ষেপ আসবে নিঃসন্দেহে। পোশাক শিল্প খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, অন্যান্য রপ্তানিকারক শিল্প কারখানা- এগুলো প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজগুলো থেকে উদার সহায়তা পাবে, যা তাদের জন্য স্বস্তিকর হবে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো তাৎক্ষণিক ও স্বল্পমেয়াদি প্রণোদনা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন। বিশেষত, দেশের রপ্তানি খাত যেহেতু আগামী এক-দুই বছর প্রচণ্ড সংকোচনের শিকার হবে, তাই ওদিকে প্রাথমিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হবে। যাতে রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের আসন্ন ছাঁটাই ও বেকারত্ব থেকে রক্ষা করা যায়, তার জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিক পদক্ষেপ বিবেচিত হবে। দেশের চার কোটি দরিদ্র মানুষকে বাঁচানোর ব্যাপারটিও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি বলে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অভিযোগ করছে। অন্যদিকে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন ও জীবিকা এই মহামারির ফলে অচিরেই আরও বেশি কঠিন বিপর্যয়ের গিরিখাতে নিক্ষিপ্ত হতে যাচ্ছে, সেটিও আমাদের দৃষ্টিসীমায় রাখতেই হবে।
আশঙ্কা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে যে ধস নেমেছে, সেটি মোটেও স্বল্পমেয়াদি হবে না। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোতে বাংলাদেশি জনশক্তির চাহিদা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হলে লাখ লাখ প্রবাসীকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এর ফলে শুধু রেমিট্যান্স প্রবাহে যে ধস নামবে, তা নয়। দেশের বেকারত্ব সমস্যাকেও এই চাকরি হারানো প্রবাসীরা মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতাও এর ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে শ্নথ হয়ে যাবে। দেশের রপ্তানি আয়ের সংকোচন এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের সংকোচনের যুগপৎ অভিঘাতে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব মানে কারেন্ট অ্যাকাউন্টে বড়সড় ঘাটতি সৃষ্টি হবে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে আমাদের আমদানি-সক্ষমতায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্রমাবনতিতে। এর পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ে বড়সড় ঘাটতি সৃষ্টি হবে, যার ফলে সরকারের উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতেই হবে। এমনকি, সরকারের পৌনঃপুনিক বা রাজস্ব ব্যয় সংস্থানেও আগামী বছর সংকট সৃষ্টি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
চলমান অনেক প্রকল্পই অর্থায়ন সংকটে স্থবির হয়ে যাবে, এটিও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ সংকুচিত হয়ে যাবে, মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে যাবে। মোদ্দাকথা হলো, দেশের কষ্টার্জিত অর্থনৈতিক গতিশীলতা যাতে লণ্ডভণ্ড না হয়ে যায়, সে জন্য অদূর ভবিষ্যতে আরেকটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন কর্মসূচিকে যুদ্ধকালীন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সহকারে নীতি-প্রণেতাদের সঠিক নির্দেশনায় জাতির সর্বাত্মক মিশনে পরিণত করতে না পারলে অর্থনীতি এই গভীর গিরিখাত থেকে আবারও উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে আসা কঠিন হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমান মহামারির কবলে নিক্ষিপ্ত বিশ্ব অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংকটের গিরিখাতে পড়ার সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উত্তরণের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মার্শাল প্ল্যানের মতো আরেকটি পুনরুদ্ধার-পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ কর্মসূচির প্রয়োজন হবে বলে মত ব্যক্ত করেছেন ইউরোপীয় বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র পূর্ব সীমান্তের মাত্র কয়েকটি অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছিল, কিন্তু এতদসত্ত্বেও যুদ্ধের প্রস্তুতির ডামাডোলে তদানীন্তন বাংলা ১৯৪৩-৪৪ সালে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তরের’ কবলে নিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। আজকের বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে, এখন আমরা ঔপনিবেশিক বিদেশি প্রভুদের খামখেয়ালিপনার অসহায় শিকার হবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের নিজস্ব মার্শাল প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংকটের গিরিখাত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত ফিরতে সক্ষম হবোই ইনশাআল্লাহ, এটাই হোক আজকের প্রার্থনা।
অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি
বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Amrto sen


“আমাদের আবার দেখা হবে,” রানি এলিজাবেথ ১৯৩৯ সালের একটা গানের অনুষঙ্গেই সম্প্রতি এ কথা বললেন। তার এই কথার পিছনে একটা অনুপ্রেরণামূলক প্রণোদন ছিল, এটাই আমরা চাইছিলাম। কিন্তু এই মহামারি শেষ হলে আবার যখন আমাদের দেখা হবে, কেমন পৃথিবী দেখব আমরা? আমরা কি যৌথভাবে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা থেকে নতুন কিছু লাভ করব?

করোনাভাইরাসের আগেও পৃথিবী গুরুতর সব সমস্যায় পূর্ণ ছিল। দেশে দেশে অসাম্য ছিল লাগামছাড়া, দেশগুলির অভ্যন্তরেও তা লক্ষণীয় ছিল। বিশ্বের ধনীতম দেশ আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবার আওতার বাইরে ছিলেন, আকস্মিক অসুস্থতায় কিছু করার ছিল না। অতিমাত্রায় কঠোরতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে দুর্বল মানুষের জন্য কিছু করে উঠতে বাধা দিচ্ছিল। ব্রাজিল থেকে বলিভিয়া, পোল্যান্ড থেকে হাঙ্গেরি— সর্বত্র গণতন্ত্র বিরোধী রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছিল।

এই মহামারির বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করার অভিজ্ঞতা কি মহামারির আগেকার এই সব সমস্যার উপশমে সাহায্য করবে?

একসঙ্গে কাজ করার এই প্রয়োজনবোধ নিশ্চিতভাবে গণ-কর্মকাণ্ডে একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ অধিক মাত্রায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরত্বকে বুঝতে পেরেছিল। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল এবং বিশ্বব্যাঙ্ক ১৯৪৪-’৪৫ এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেরা লিনের সেই ‘উই উইল মিট এগেইন’ গানটি গাওয়ার খুব বেশি দিন পরের ঘটনা নয় এগুলো।

যাই হোক, এই অভিজ্ঞতা থেকে কোনো দেশ কি দীর্ঘমেয়াদি কোনো উন্নতির শিক্ষা লাভ করতে পারে? আমরা কয়েকটির ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে খাদ্যাভাবের কারণে ইংল্যান্ডে যে অপুষ্টির প্রবাহ তৈরি হয়েছিল, যুদ্ধের পরে তা দ্রুত কমে আসে। খাবারের জোগানে বিরাট ধস থেকে ইংল্যান্ড রেশনিং ব্যবস্থার দ্বারা ও সামাজিক স্তরে বাধা-নিষেধ আরোপ করে খাদ্যের সমবণ্টন চালু করে। অপুষ্টির ক্রমাগত প্রবাহে তা কাজে আসে। চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এই বণ্টন কাজে আসে।

এ সবের ফল দাঁড়ায় অসাধারণ। ১৯৪০ এর যুদ্ধের দশকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে সদ্যোজাত ছেলেদের সম্ভাব্য আয়ুসীমা ৬.৫ বছর করে বেড়ে যায়, যা তার আগের দশকে ছিল ১.২ বছর। সদ্যোজাত মেয়েদের ক্ষেত্রে যুদ্ধের দশকে সম্ভাব্য আয়ুসীমা বেড়ে যায় ৭ বছর, যুদ্ধের আগের দশকে যা ১.৫ বছর ছিল। সামাজিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও পিছিয়ে থাকা মানুষের দিকে অধিক মাত্রায় নজর দেওয়ার ফলে যা উঠে আসে, আমরা তাকে ‘কল্যাণকর রাষ্ট্রব্যবস্থা’ বলে থাকি। যুদ্ধের কালে এবং যুদ্ধের পরে সামাজিক ন্যায়ের অন্যতম প্রবক্তা আনেউরি বেভান ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস হাসপাতাল, ম্যানচেস্টারের পার্ক হসপিটালের দ্বারোদ্ঘাটন করেন।

সাম্প্রতিক এই সঙ্কট থেকে কি এমন কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটতে চলেছে? একটা সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হতে গিয়ে যে শিক্ষাটা পাওয়া যায়, তা নির্ভর করে কীভাবে সেই সমস্যার মোকাবিলা করা হল এবং কোন সমস্যাগুলির আশু সমাধান করা হল তার উপর।

এ ক্ষেত্রে রাজনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যার মধ্যে শাসক আর শাসিতের সম্পর্কও বর্তমান। যুদ্ধের সময়ে এক দিকে যদি ইংল্যান্ডে খাদ্যের সুষম বণ্টন আর চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত ঘটে থাকে, তা হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেরই অন্য দিকে বাংলায় ঘটেছিল ১৯৪৩ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ এই মন্বন্তরে মারা যান, ব্রিটিশ সরকার এই দুর্ভিক্ষ আটকানোর জন্য বিশেষ কিছুই করেনি। সাম্প্রতিক মহামারির ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায়ের বিষয়টি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্থান অধিকার করে নেই। আমেরিকায় সাদা মানুষের চাইতে অনেক বেশি মাত্রায় কোভিড-১৯ এর শিকার হচ্ছেন আফ্রিকান আমেরিকানরা। শিকাগোয় এই মহামারিতে যত জন মারা গিয়েছেন, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান, যারা মোট বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশ। ব্রাজিল বা হাঙ্গেরি অথবা ভারতের মতো দেশে অভ্যন্তরীণ বৈষম্য এই যন্ত্রণার দিনেও কিছু কম নয়।

ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষণীয়। অসাম্য এখানে বিপুল। স্বাধীনতার পর থেকে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এখানে দুর্ভিক্ষ ঘটেনি। তা সত্ত্বেও গণ-সমাজের আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলি থেকে আঁচ করা যায় বঞ্চিত মানুষের কথা, বিপন্নকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা— ইত্যাদি ব্যাপারে সরকারি স্তরে বিভিন্ন বাধা প্রদান, সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খর্ব করার কথা।

সচ্ছল মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার অধিকতর সুবন্দোবস্ত এবং তারই পাশাপাশি গরিব মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার একান্ত অভাবের বৈপরীত্য, তার সঙ্গে আধুনিক জাতপাত-ভিত্তিক অসাম্য যুক্ত হয়ে এমন এক অবস্থা হয়ে রয়েছে যে, ভারত এই মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে বিপুলভাবে উপকৃত হতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত এখানে তেমন সাম্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখা যায়নি, বরং হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করে, ট্রেন-বাস বন্ধ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা না ভেবে যা করা হয়েছে, তা অভাবনীয়। দরিদ্রতম এই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজের বাড়ি থেকে শত শত মাইল দূরে রীতিমতো বিপাকে পড়ে রইলেন।

এ কথা সত্য যে, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করতে পারে, কিন্তু এটা প্রয়োগ করতে হলে পরিপূরক ব্যবস্থা প্রয়োজন। লকডাউনের ফলে বিপর্যস্ত মানুষের আয়, খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যদি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অনেক দেশের মতো ভারতেরও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস প্রয়োজন। কিন্তু এই মহামারি থেকে সেদিকে কোনো প্রবণতা কি দেখা দেবে?

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আবার যখন আমাদের দেখা হবে, আমরা সেই ফেলে আসা অসাম্যের পৃথিবীর থেকে খুব দূরে চলে যাব না। এভাবে যাওয়াও হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু এই দুঃসময়ে অনেক দেশেই বিবিধ যন্ত্রণার উপশমের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে খানিক কম অসাম্য-যুক্ত বিশ্বকে গড়ে তোলার এক আদর্শকে লালন করা হচ্ছে। আমরা সঙ্কটের মাঝখানটাও এখনও পার হইনি, এই সময়ে এমন একটা আশা রাখা কি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে?

লেখক: নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালি অর্থনীতিবিদ। সূত্র: আনন্দবাজার


মতামত

সমাজ

মতামত সংবাদ

লকডাউনে কৃষক ও ভুখা মানুষের অর্থনীতি

মাহা মির্জা

২০ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৬
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০, ১৪:২০

  ১২

কিছু অঙ্ক মেলে না। গত এক দশকে হুহু করে বার্ষিক মাথাপিছু আয় বেড়েছে বাংলাদেশের। ২০১০ সালে ছিল ৮২৫ ডলার। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০০ ডলার। বিরাট সাফল্য। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথাপিছু মাসিক আয় ১৩ হাজার টাকার কিছু ওপরে। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারের ভাগে পড়ছে ৫৩ হাজার টাকা (৪ সদস্য ধরে)। মাত্র ২ সপ্তাহের লকডাউনে একটু গরম ভাতের আশায় ময়লা পরিবারগুলোর দীর্ঘ লাইন দেখে ভাবছিলাম, ১০ বছরে মাথাপিছু আয় শতকরা ১০০ ভাগ বেড়ে যাওয়ার এই অঙ্কটা দেখে হাসব না কাঁদব?

এর মধ্যে আবার ১০ বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে এক লাখের বেশি। তিন কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আছে, এমন ধনী বৃদ্ধির তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে (ওয়েলথ এক্স, ২০১৮)। খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের টাকা মেরে বড়লোক হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। কাজেই কোন মাথাগুলোর আয় বেড়েছে জনগণ তা বোঝে।

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৭ কোটি মানুষের অ্যাকাউন্টে গড়ে আছে মাত্র ৬১০ টাকা!

গড় হিসাব বলছে, মাসিক মাথাপিছু আয় ১৩ হাজার টাকা, অথচ ৭ কোটি মানুষের এই হলো সঞ্চয়ের অবস্থা? এই যদি হয় অবস্থা, শুকনা মরিচ দিয়ে ভাত খেলেও তো একটা সপ্তাহ চলতে পারবে না একটা পরিবার। এমনিতেই পশ্চিমা দেশগুলোর মতো এখানে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বলতে কিছু নেই, তার ওপর হদ্দ গরিবের দেশ, এখানে খাদ্যের ব্যবস্থা না করেই ইউরোপ আমেরিকার স্টাইলে লকডাউন ঘোষণা করে দিলাম? আবার নিয়ম করে ১ হাজার ৯০০ ডলার মাথাপিছু আয়ের গালগল্পও চালাচ্ছি। করোনাকালে যে উদোম হয়ে গেল উন্নয়ন।

সরবরাহ লাইন বিপর্যস্ত
লকডাউনে অচল গ্রামগঞ্জের পাইকারি বাজারগুলো। হাজার হাজার পরিবহনশ্রমিক বেকার বসে আছে। পাইকারি বাজার বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকেরা তাঁদের খেত উপচে পড়া সবজিগুলো বেচবেন কোথায়? সরবরাহ চেইন তো ইতিমধ্যেই ধসে পড়েছে।

উত্তরবঙ্গে সবজির দাম নেই, টমেটোর কেজি ৫ টাকা, মরিচের কেজি ৩ টাকা, বেগুনের কেজি ২ টাকা, শসার কেজি ৫০ পয়সা! আবার পাইকারেরা সিন্ডিকেট করে খেত থেকে পানির দরে সবজি কিনছেন, আর খুচরা বাজারে ডাবল দামে বিক্রি করছেন। গতর খাটিয়ে কাজ করা সবল মানুষগুলোও দুর্বল হচ্ছে দিনে দিনে, কোনোমতে শাকপাতা খেয়ে টিকে আছেন, তার ওপর বাজারে সবকিছুর দাম চড়া।

সরকারের কাজটা কী বলুন তো? কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এগুলো ঠিক কাদের জন্য? আবহমানকাল ধরে বাংলার কৃষক অভাগা, ফসলের দাম পান না বুঝলাম, কিন্তু লকডাউন সফল করতে গেলেও তো খাদ্যের সরবরাহ চেইনটি সচল রাখা এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ। গাইবান্ধার চাষি আমিনুল ইসলাম প্রায় কেঁদে ফেলে বলেছিলেন, রাস্তাঘাটে এত চোটপাট, তাহলে ট্রাক পাঠিয়ে আমাদের সবজিগুলো শহর পর্যন্ত নিয়ে যাক সরকার। নইলে তো গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে।

রাষ্ট্রযন্ত্র একটা টইটম্বুর যন্ত্র। এই যন্ত্রে পাইক পেয়াদা আছেন, থানা-পুলিশ, সচিব, উপসচিব, ইউএনও–টিএনওরা আছেন। তাঁদের বেতন দেয় জনগণ। তাঁদের কাজটা কী? লকডাউনের খবরদারির পাশাপাশি পাইকারি বাজারগুলোতে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, এসব স্বাস্থ্যবিধির তদারকি করতে ঠিক কয় গন্ডা প্রশাসনের লোক লাগে? এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ জেলা শহরের পাইকারি বাজারগুলো সচল রাখা (সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করে) এবং চালকদের নিরাপত্তা পোশাক দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ডিম, দুধ, সবজি পরিবহনের কাজে লাগানো। অথচ এক ধাক্কায় সিস্টেমের নাটবল্টুগুলো খুলে পড়ছে কেন? আমরা জানি, উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে এলাকার কৃষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থাকে। আবার পৌরসভার অধীনে ট্রাক এবং অন্যান্য পরিবহনের সুবিধাও থাকে। আমরা এ–ও জানি, জেলায় জেলায় ইউএনও টিএনওদের জন্য ৯৪ লাখ টাকার পাজেরো কিউ-এক্সের বরাদ্দ ঠিকই আছে। আমরা জানতে চাই, নিজ নিজ এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে শস্য সংগ্রহ করা এবং পাইকারি বাজার ও পরিবহনব্যবস্থা সচল রাখতে জেলা শহরের পাজেরোওয়ালারা ঠিক কী কী করছেন?

আমরা পায়রা বন্দর নির্মাণ করছি সোয়া এক লাখ কোটি টাকা খরচ করে। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে আন্দামান ঘুরে রাবনাবাদ চ্যানেলে। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বন্দর হবে এটি। আমি ভাবছিলাম, ইন্দোনেশিয়া থেকে আন্দামান ঘুরে রাবনাবাদ কত দূর? কত হাজার মাইল? আমরা তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট কিনেছি, সেটাকে পাঠানো হয়েছে মহাকাশের কক্ষপথে। যত দূর জানি, পৃথিবী থেকে জিওস্টেশনটির দূরত্ব ৩৫ হাজার কিলোমিটার।

আচ্ছা, ঢাকা থেকে ঠিক কত দূরে কুড়িগ্রাম? নীলফামারী থেকে খুব বেশি দূরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার? ডিমলা থেকে কত দূর আমিন বাজারের আড়ত?

খামারিদের অভিমানে ফেলে দেওয়া দুধ, পোলট্রি খামারগুলোতে পড়ে থাকা ডিম, বীরগঞ্জে কৃষকের ফেলে দেওয়া শসা, গাইবান্ধায় গরুর জন্য জমতে থাকা টমেটো, পটুয়াখালীতে পচতে শুরু করা তরমুজ, কুড়িগ্রামের খেতে পড়ে থাকা মিষ্টিকুমড়া আর লাউগুলো জেলা শহরের পাইকারি বাজারগুলো পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কয়টা ভ্যানগাড়ি লাগে? ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়টা লাগে ট্রাক? কত টাকার তেল পোড়ে? ইন্দোনেশিয়া থেকে আন্দামান হয়ে পায়রা বন্দরে কোটি কোটি টন বিষাক্ত কয়লা বয়ে আনতে যতটুকু তেল পোড়ে, তার চেয়েও বেশি?

সারা দেশের আনাচকানাচে ঘামের ফসল কোলে নিয়ে কৃষক চোখের পানি মুছছেন। আরেক দিকে ঢাকার রাস্তায় মলিন মুখে এদিক-ওদিক ঘুরছেন রিকশাচালক, পার্টসের মেকানিক, ফুটপাতের হকার— সব না খাওয়া। খামারিদের ডিম, দুধ আর কৃষকের সবজিগুলো দুর্যোগকালীন ত্রাণ হিসেবে কিনছে না কেন সরকার? কত টাকা লাগে? বিশ্বের সর্বোচ্চ খরচের রাস্তাগুলো বানাতে জনগণের যত টাকা চুরি হয়ে গেছে ,তার চেয়েও বেশি?

বোরো মৌসুমের ধান গুদামের চাল
বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠজুড়ে বোরো ধান কাটবেন চাষি। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দুই কোটি টন। এই মহাদুর্যোগের দিনে সরকার বাহাদুর ধান কিনবে নিশ্চয়ই? কত লাখ টন? জেনে আশ্চর্য লাগে, সরকার কেনে মাত্র ৫-৬ লাখ টন ধান। চালও কেনে সরকার, ১১ লাখ টন, তবে সেটা সরাসরি রাইস মিলগুলোর কাছ থেকে। সব মিলিয়ে মৌসুমের মোট ধানের ২-৩ ভাগ! আর বাকিটা? বাকিটা মানে বাকি ৯৭ ভাগ? বাকিটা কৃষক বুঝুক। দাম পড়ে গেলে? কৃষক বুঝুক। ফড়িয়া, আড়তদার, মধ্যস্বত্বভোগী? কৃষক বুঝুক। খেতমজুর-সংকট, ধান কেটে কুলোনো যায় না? কৃষক বুঝুক। লিজের টাকা পরিশোধ করে, বাজার থেকে চড়া দামে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে কুলোতে পারে না বর্গাচাষি, প্রতিবছর লস খায়। আমাদের কী?

গুদাম উপচে পড়া ১৭ লাখ টন চাল নিয়ে বসে আছে সরকার। যথারীতি, বোরো মৌসুমে ধান উঠলে কৃষক ধানের দাম পাবেন না। সরকার ন্যায্য দামে ধান কেনার ঘোষণা দেবে এবং একপর্যায়ে ‘সরকারি গুদামে জায়গা নাই’, এই অজুহাতে সরাসরি ধান কেনার পুরো প্রক্রিয়াটাই তামাশায় পরিণত হবে। প্রতিবছর একই যুক্তি, ‘ক্যাপাসিটি’ নাই, গুদাম খালি নাই। সাধারণ বুদ্ধি বলে, বোরো মৌসুমের আগেই চালের গুদামগুলো খালি করা দরকার ছিল। ট্রাক ভরে ভরে সারা দেশের অভুক্ত মানুষের ঘরে চাল-ডাল পৌঁছে দেওয়া জরুরি ছিল। এটা দিনমজুরের দেশ, এখানে লকডাউন সফল করতে গেলেও তো নিম্ন আয়ের ঘরগুলোতে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু এর মধ্যে এক অদ্ভুত বাস্তবতার কথা জানলাম। সরকার চালের গুদাম অর্ধেক খালি করতেও ভয় পায়। কারণ, চালের ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেয়! এর মানে কী দাঁড়াল? বাংলাদেশ রাষ্ট্র দিনের শেষে গুটিকয়েক চাল ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি! বাহ।

আমি ভাবছি, প্রায় ৪৭ লাখ হেক্টর জমির সমস্তটা বোরো ধান কিনে ফেলতে আসলেই কত টাকা লাগে রাষ্ট্রের? ঠিক কত টাকা লাগে সব জেলায় জেলায় ধান-চালের সরকারি গুদাম বানাতে? এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে শুনলাম, ৫ লাখ টন ধান মজুতের জন্য জেলায় জেলায় ‘কমিউনিটি স্টোরেজ’ তৈরি করার একটা প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ঘুরছে। অর্থাৎ কৃষকেরা নিজেদের ধান নিজেরাই ‘স্টোর’ করবেন। অথচ দুই বছর ধরে সেই ফাইল আর নড়ে না! ঋণ করে ঘি খাওয়া মেগা প্রকল্পের প্রস্তাবগুলো ধুমধাম পাস হয়ে যায়, আর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মাটিঘেঁষা প্রকল্প আলোর মুখ দেখে না! গ্রামগঞ্জে কৃষকের ‘স্টোরেজ’ সক্ষমতা বাড়লে ফড়িয়াদের কাছে জিম্মি থাকতে হয় না কৃষককে। প্রতিটা ইউনিয়নে ছোট বড় গুদাম তৈরি করতে কতই বা খরচ হয় বলুন তো? কিন্তু আমরা জানি, এই দেশে মেট্রো হবে, উড়ালসড়ক হবে, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন হবে, কিন্তু কৃষকের জন্য দেশজুড়ে ছোট ছোট গুদাম হবে না। আমরা হাজার কোটি টাকা মেরে খাওয়ার দেশ। ছোট চুরিতে আর পেট ভরে না।

১৭ লাখ টন চাল পড়ে আছে গুদামে। প্রতিদিন ডিম দুধ নষ্ট হচ্ছে খামারে। আগামী কয়েকটা মাসের জন্য ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প নেই। নইলে কারফিউসহ লকডাউন করেও ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল থামানো যাবে না। আর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে অভুক্ত ও অরক্ষিত রেখে এই করোনাকালে আপনারা বাঁচবেন না। তাই বাঁচতে চাইলে মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করুন। তাদের এত দিনের শ্রম ও ঘামের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিন।

শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে করোনাকালের অনিয়ম

প্রফেসর ড. এম এ মান্নান

২৫ এপ্রিল ২০২০, ০৩:৫৩

করোনাভাইরাসেরকারণেদেশেরঅনেকেরএখনবিচ্ছিন্নতারজীবনকাটছে।আরডাক্তারদেরমতে, আমারমতোপ্রবীণদেরঝুঁকিকিছুটাবেশি।তবেবিচ্ছিন্নজীবনআরোবেশিকরেসুযোগএনেদিয়েছেনিজেরভাবনাগুলোপ্রসারিতকরার।করোনাআমারজন্যএইসমাজকেআরোগভীরভাবেদেখারসুযোগকরেদিয়েছে।আমাদেরজাতীয়জীবনেকতটাঅবক্ষয়নেমেএসেছেসেটাআশপাশেতাকালেইবোঝাযায়।করোনামহামারীরমধ্যেযখনদেশেরবিভিন্নস্থানথেকেত্রাণেরপণ্যবিতরণেঅনিয়মআত্মসাতেরঅভিযোগশুনি, তখনসেটাকারোজন্যসুনামবয়েআনেনা।এটাকোনোনতুনপ্রবণতানয়।স্বাধীনতারপরপ্রায়অর্ধশতকপেরোতেচললেওঅনিয়মেরপ্রবণতাযেনক্রমেইতীব্রআকারধারণকরছে।সমাজেরপ্রতিটিস্তরপ্রাইমারিস্কুলথেকেবিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনীতিথেকেপ্রশাসনযন্ত্রেরপ্রতিটিশাখাএমনকোনোখাতনেইযেখানেঅনিয়মনেইবলেশোনাযায়না।আমরাপত্রিকায়দেখছি, প্রধানমন্ত্রীরত্রাণতহবিলথেকেগরিবমানুষেরজন্যযেদানকরাহচ্ছে, সেটাওলুটপাটহচ্ছে।কিন্তুএরজন্যদায়ীকে? আমাদেরশিক্ষাব্যবস্থাইএরজন্যদায়ী।মৌলিকগলদটিরয়েছেএখানেই।আমাদেরশিক্ষাব্যবস্থাথেকেইতোএসবমানুষতৈরিহচ্ছে।এমনদুর্যোগেরসময়আমরাভুয়াহ্যান্ডস্যানিটাইজারতৈরিরখবরদেখছি।যিনিএটিতৈরিকরছেনতিনিএকজনকেমিস্ট।তিনিতোকিছুলেখাপড়াশিখেছেন।সেটাকিসুশিক্ষা?

আসলেআমরাযেশিক্ষাদিচ্ছিতাকুশিক্ষা।যেশিক্ষামানুষকেপরশ্রীকাতরতাশেখায়, যেশিক্ষামানুষকেহিংসাশেখায়, যেশিক্ষামানুষকেতারপ্রতিবেশীরপ্রতিসমবেদনাজানাতেশেখায়না, যেশিক্ষামানুষকেভালোবাসাশেখায়নাসেটাশিক্ষাহতেপারেনা।এইশিক্ষাব্যবস্থাকেপুরোপুরিঢেলেসাজানোরসময়এসেছে।রাষ্ট্রেরভর্তুকিতেকিন্তুএইশিক্ষাব্যবস্থাচলছে।একসময়মুসলিমবিশ্বেরশিক্ষাব্যবস্থারাষ্ট্রেরহাতেছিলনা।ছিলবেসরকারিখাতে।এরঅর্থায়নহতোমূলতওয়াকফেরমাধ্যমে।ফলেসেসময়শিক্ষাব্যবস্থাছিলস্বাধীন।কোনোসরকারেরতাঁবেদারিতারাকরতনা।তখনকারশিক্ষাব্যবস্থাছিলআসলেইপ্রকৃতমানুষগড়ারকারখানা।সরকারেরভর্তুকিতেচলাশিক্ষাখাতকেতোসরকারেরকথাশুনতেহবে।তাতেওসমস্যাছিলনা।কিন্তুসমস্যাহয়েছেভর্তুকিররাজনীতিকীকরণহওয়ায়।

ব্যাপারেআমারবাস্তবঅভিজ্ঞতাহয়েছেনিজজেলাসিরাজগঞ্জেরনিমগাছীতেশিক্ষাবিস্তারেরকিছুকাজকরতেগিয়ে।বিগত১৫বছরেরবেশিসময়ধরেআমিসিরাজগঞ্জেররায়গঞ্জউপজেলায়একটিপ্রাইমারিস্কুলস্থাপনেরমাধ্যমেএইগবেষণাকরি।প্রাথমিকভাবেআমিস্কুলটিইংলিশমিডিয়ামস্কুলকরারকথাভাবি।এলাকায়শিক্ষারঅভাবেযেসামাজিকবিশৃঙ্খলাসৃষ্টিহচ্ছিলসেগুলোদূরকরাছিলআমারউদ্দেশ্য।আইডিবিরমুখ্যঅর্থনীতিবিদেরপদথেকেআগামঅবসরনিয়েদেশেফিরেঅন্যতমউদ্দেশ্যছিল, আমিভেবেছিলামযদিপূর্ণমেয়াদচাকরিকরেতাহলেশেষবয়সেদেশেফিরেযেসবমৌলিকবিষয়গুলোনিয়েভাবছিসেগুলোনিয়েকাজকরারমতোশারীরিকঅবস্থাহয়তোথাকবেনা।আমিদেশেফেরারপরঅনেকনামকরাব্যক্তিআমারকাছেএসেছিলেন।তাদেরঅনেকেচেয়েছিলেনআমাকেতাদেরপ্রতিষ্ঠিতকোনোবিশ্ববিদ্যালয়েরভিসিকরতে।আমিতাদেরশুরুতেইজানিয়েদেই, চাকরিকরারইচ্ছাআমারনেই।আমাকেবিশালঅঙ্কেরবেতনেরপ্রস্তাবদেয়াহলো।বলাহলো, আমিযোগদিলে১০লাখটাকাবেতনঅন্যান্যসুযোগসুবিধাদেয়াহবে।একেরপরএকলোকআসতেথাকে।আমারকাছেআবাসনকোম্পানিরচেয়ারম্যানহওয়ারওপ্রস্তাবআসে।আমাকেসামনেরেখেব্যাংককরারওপ্রস্তাবএলো।কিন্তুধীরেধীরেযখনবিষয়েরগভীরেপ্রবেশকরতেথাকিতখনবুঝতেপারিযে, সবারউদ্দেশ্যএকটিই।যেহেতুআইডিবিতেচাকরিকরছি, বিশ্বেরঅনেকনামকরাব্যক্তিরসাথেআমারপরিচয়যোগাযোগআছে, ফলেআমাকেব্যবহারকরেহয়তোফান্ডজোগাড়করাযাবে।এরপরমানুষকিভাবেকারোসাথেছবিতুলেসেইছবিদেখিয়েইপ্রতারণাকরতেপারেসেইতিক্তঅভিজ্ঞতাওআমারহয়।ফলেআমিসতর্কহয়েযাই।আমারঅভিজ্ঞতাহয়যে, এইসমাজেরঅধঃপতনএটাইহয়েছেযে, এখানেমানুষযাবলেতাকরেনা, আরযাকরেতাকখনোইবলেনা।

এসবদেখেশুনেপড়েসোস্যালইসলামিকব্যাংকেরপ্রতিষ্ঠাতাচেয়ারম্যানেরপদথেকেবিদায়নেয়ারপরআমিএইপ্রাইমারিস্কুলপ্রতিষ্ঠাকরেশিক্ষাব্যবস্থানিয়েগবেষণাকরারউদ্যোগনেই।আমারপরীক্ষাছিলএকেবারেপ্রাথমিকপর্যায়থেকেশিশুদেরশিক্ষাদিয়েসমাজেরজন্যকিছুভালোমানুষতৈরিকরা।যেনতেনভাবেনয়, স্কুলটিকেএলাকারসেরাশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেপরিণতকরারোচেষ্টাকরেছি।এরজন্যওইএলাকারমধ্যেসবচেয়েভালোঅবকাঠামোতৈরিকরাহয়।প্রাথমিকশিক্ষাদেয়ারজন্যবাংলাদেশেব্যক্তিউদ্যোগেতৈরিধরনেরঅবকাঠামোআছেকিনাআমারজানানেই।২০০৪সালেস্কুলটিযাত্রাশুরুকরে।এরইমধ্যে১৫টিবছরপেরিয়েগেছে।আমিস্কুলেরএকাডেমিককাউন্সিলেরচেয়ারম্যানহই।স্কুলকরারপেছনেআমারজমানোটাকাখরচকরি।আমিইংলিশমিডিয়ামস্কুলচালুকরারকয়েকমাসেরমধ্যেসরকারজেলায়জেলায়ইংলিশভার্সনস্কুলকরারঘোষণাদেয়।ফলেসবারপরামর্শেআমিস্কুলটিকেইংলিশভার্সনস্কুলেরূপান্তরেরসিদ্ধান্তনেই।এরপরআসেআর্থিকখরচেরপ্রশ্ন।সেটাওশিক্ষারউন্নয়নেরস্বার্থেমেনেনিলাম।অন্যান্যখাততোবটেইশিক্ষার্থীপরিবহনেরপেছনেওআমাকেভর্তুকিদিতেহয়েছে।আমিইচ্ছাকরেইএবংসচেতনভাবেএটাকরেছি।আমারসার্বিকপ্রচেষ্টায়ওইপ্রত্যন্তএলাকায়ইংলিশভার্সনেরমতোএকটিস্কুলেরশিক্ষার্থীসংখ্যাশতাধিকপেরিয়েযায়।স্কুলটিএলাকায়সুনামকুড়ায়।এখানকারঅনেকশিক্ষার্থীকৃতিত্বেরসাথেবৃত্তিপায়।

শতভাগপাসকরারসুনামঅর্জনকরে।এটিএলাকারসেরাস্কুলেপরিণতহয়।আমারগবেষণারএকটিঅধ্যায়শেষহয়।এরপরশুরুহয়দ্বিতীয়অধ্যায়।তখনআমারআরোকিছুস্বপ্নবিশ্ববিদ্যালয়হাসপাতালবাস্তবায়নকরারদিকেমনোনিবেশকরি।পাশাপাশিএকটিচ্যারিটেবলট্রাস্টওকরি।সঙ্গতকারণেইতখনস্কুলথেকেমনোযোগঅন্যদিকেসরেযায়।এইসুযোগেস্কুলটিতেঅনিয়মশুরুহয়।আমারধারণাছিলশিক্ষাখাতেভর্তুকিদিলেএমনকিছুশিক্ষার্থীবেরিয়েআসবেযারাসমাজেঅবদানরাখতেপারবে।কিন্তুআমিদেখলামস্কুলেরএইভর্তুকিনিয়েযারাএতদিনচলছিল, তারাইএকসময়স্কুলটিকেভাঙারচেষ্টাশুরুকরেছে।স্কুলেরইকিছুশিক্ষকভাবল, বেশভালোতো।এইস্কুলেকাজকরারসুবাদেতাদেরওসুনামহয়েছে।তাদেরডাকেতোছাত্ররাআসছে।তখনকিছুশিক্ষকশিক্ষিকাআলাদাভাবেপ্রতিষ্ঠানখুলেশিক্ষাকেব্যবসারহাতিয়ারেপরিণতকরারচেষ্টাচালায়।

আমাদেরশিক্ষাব্যবস্থানিয়েনিজস্বগবেষণাফলটিতুলেধরারজন্যইমূলতএইলেখা।একেবারেমাঠপর্যায়েরএইপরীক্ষারফলহলোসংক্ষেপে : আমাদেরপ্রচলিতশিক্ষাব্যবস্থাসুসন্তানতৈরিকরতেপারছেনা।এখানেএমনসন্তানতৈরিহচ্ছেযেতারমাকেজঙ্গলেফেলেআসে।এমনশিক্ষার্থীতৈরিকরাহচ্ছেযেশিক্ষককেপ্রহারকরে, দাড়িধরেপুকুরেফেলেদেয়।এমনশিক্ষার্থীতৈরিহচ্ছেযেতারসহপাঠীকেভিন্নমতপোষণকরারকারণেপিটিয়েমেরেফেলে।এমনসন্তানতৈরিহচ্ছেযেদুর্যোগেরসময়ত্রাণচুরিকরছে।এমনমানুষতৈরিহচ্ছেসমাজেরপ্রতি, দেশেরপ্রতিযাদেরদায়বদ্ধতানেই।এমনউদাহরণপশ্চিমাদেশগুলোতেবিরল।মূলতদুটিকারণেএটাহচ্ছে : নৈতিকশিক্ষারঅভাবসরকারিভর্তুকিরঅপব্যবহার।

১৯৬০সালেসিরাজগঞ্জকলেজেঅর্থনীতিবিষয়েলেকচারারহিসেবেযোগদেই।তখনএটাছিলমহকুমা।জেলাছিলপাবনা।গোটাজেলায়একটিমাত্রসরকারিকলেজছিলপাবনাএডওয়ার্ডকলেজ।আজকেরসময়েরসাথেতখনকারসময়েরতুলনাচলেনা।এখনতোব্যাঙেরছাতারমতোকলেজহয়েছে।শিক্ষাখাতেবিপুলভর্তুকিদিচ্ছেসরকার।আমিবলেছিলাম, ভর্তুকিদেয়াউচিতছিলশুধুপ্রাথমিকমাধ্যমিকপর্যায়ে।উচ্চশিক্ষাখাতথেকেভর্তুকিপুরোপুরিতুলেনেয়াদরকার।কারণসরকারিবিশ্ববিদ্যালয়গুলোযেসবগ্রাজুয়েটতৈরিকরছেতাদেরমধ্যথেকেঅমানুষতৈরিহচ্ছে, একটিদুর্নীতিপরায়ণজাতিতৈরিহচ্ছে।ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলাসবাইযেনএকইপথেরপথিক।ভালোমানুষযেকিছুতৈরিহচ্ছেনা, তানয়।হওয়াউচিতছিলউল্টো।বেশিরভাগভালোমানুষেরমধ্যেদুএকজনখারাপমানুষথাকতেইপারে।

আমিভর্তুকিবন্ধেরপক্ষেনই।এমনঅনেকমেধাআছেযেগুলোবিকশিতকরতেভর্তুকিদেয়াপ্রয়োজন।শুধুমেধাথাকলেইচলেনা, সেটাকেবিকশিতকরতেপ্রয়োজনীয়আর্থিকসহায়তারওপ্রয়োজনরয়েছে।কিন্তুযেঅর্থায়নমানুষেরবদলেঅমানুষতৈরিকরছে, সেটাজারিরাখারযৌক্তিকতানিয়েওপ্রশ্নওঠে।তাইমনেকরিশিক্ষাখাতেযেভর্তুকিদেয়াহচ্ছেতাবন্ধঅথবাপুরোপুরিসংস্কার, অথবাসিলেকটিভহওয়াপ্রয়োজন।অথবাঅপরাধীদেরশাস্তিদেয়াদরকার।কারোপয়সায়কেউলেখাপড়াকরলেসেকিকরছেসেটাজানারঅধিকারভর্তুকিদাতাররয়েছে।তাকেমনিটরকরারঅধিকারথাকাউচিত।ভর্তুকিগ্রহীতাকোনোঅসামাজিককাজেজড়িতহলেসেটামেনেনেয়াউচিতনয়।তাইশিক্ষাভর্তুকিঋণদেয়ারআগেএরপরিণতিওবিশ্লেষণকরাউচিত।আরসেকারণেইআমিবলছিযে, শিক্ষাখাতকেবেসরকারিখাতেছেড়েদেয়াগেলেঅনেকবেশিমনিটরিংকরাযেত।সরকারিখাতেথাকারকারণেসরকারশুধুভর্তুকিদিয়েইদায়িত্বপালনকরছে।মনিটরিংকরছেনা।কিন্তুমনিটরিংকরারকোনোধরনেরউপায়অবশ্যইউদ্ভাবনকরতেহবে।ছাত্রদেরসমাজেরমৌলিকনৈতিকমানবিকমূল্যবোধগুলোশিক্ষাদেয়াউচিত।কিন্ডারগার্টেনথেকেবিশ্ববিদ্যালয়পর্যন্তএইশিক্ষাথাকাউচিত।দেশের৯০শতাংশমুসলমানহওয়ায়ইসলামিকমূল্যবোধশিক্ষাকারিকুলামেথাকাউচিত।অন্যধর্মাবলম্বীদেরওনিজনিজধর্মীয়শিক্ষাদিতেহবে।অন্যধর্মনৈতিকতাসম্পর্কেকীবলছেসেশিক্ষাওশিশুদেরদিতেহবে।

এইপ্রায়োগিকপরীক্ষাথেকেআমারহাইপোথিসিসহলো :সরকারপ্রাইমারিস্কুলথেকেবিশ্ববিদ্যালয়পর্যন্তযেভর্তুকিদিচ্ছেতাবহুলাংশেঅপচয়ছাড়াকিছুনয়।আমিজীবনেরএকটিবড়সময়শিক্ষকতাকরেছি।ফলেপ্রাইমারিস্কুলপরিচালনার১৫বছরেরবাস্তবঅভিজ্ঞতাআমাকেওইসিদ্ধান্তেউপনীতহতেসাহায্যকরেছে।ভর্তুকিদিয়েযেশিক্ষাব্যবস্থাপরিচালনাকরাহচ্ছেতাপ্রকৃতমানুষতৈরিকরতেব্যর্থহচ্ছে।আমিএমনএকশিক্ষাব্যবস্থারস্বপ্নদেখিযেশিক্ষাব্যবস্থাধরনেরঅমানুষেরবদলেমানুষতৈরিকরবে।জন্যতাদেরওভারহোলিংকরারব্যবস্থাথাকবে।শিক্ষার্থীকেসনদদেয়াহবেসাময়িক।সার্টিফিকেটবাতিলেরক্ষমতাথাকবেশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।আমরাকিএমনএকটিবিশ্ববিদ্যালয়েরস্বপ্নদেখতেপারিনা, যেখানেশিক্ষার্থীরকর্মজীবনেসামাজিকদায়বদ্ধতারঅঙ্গীকারস্বরূপমানবকল্যাণমূলককর্মকাণ্ডেরজন্যতাকেপুরস্কৃতকরারব্যবস্থাথাকবে? আবারদুর্নীতিগ্রস্তশিক্ষার্থীরডিগ্রিবাতিলেরওব্যবস্থাথাকবে?

কাক্সিক্ষতবিশ্ববিদ্যালয়েকোনোশিক্ষার্থীরসারাজীবনেরকর্মকাণ্ডঅর্জনবিবেচনাকরেডিগ্রিদেয়াহবে।এখনস্কুলবিশ্ববিদ্যালয়একটিসার্টিফিকেটধরিয়েদিয়েদাবিকরে, আমরাএইজনশক্তিকেতৈরিকরেছি।বিশ্ববিদ্যালয়যেনপণ্যউৎপাদনেরকারখানা।উৎপাদনেরপরপণ্যেরগায়েযেমনলেবেললাগিয়েদেয়াহয়, তেমনিশিক্ষার্থীরডিগ্রিটাওযেনএকটিলেবেল।কিন্তুকোনোপণ্যউৎপাদনেরপরসেজিনিসটিঠিকমতোচালুরাখতেকিংবাসেটিঠিকমতোকাজকরছেকিনাসেজন্যএকটিসার্ভিসিংসুবিধাদেয়াহয়।আমাদেরবিশ্ববিদ্যালয়কলেজগুলোতাদেরআঙ্গিনাথেকেচলেযাওয়াশিক্ষার্থীকীকরছেতারকোনোখবররাখেনা।কোনোশিক্ষার্থীযদিকর্মজীবনেঅপকর্মদুর্নীতিকরে, তাহলেতারডিগ্রিবাতিলেরকোনোবিধাননেই।যন্ত্রনষ্টহলেআমরামেরামতকরি।খুচরাযন্ত্রাংশপাওয়ানাগেলেবাসার্ভিসিংসুবিধানাথাকলেআমরাওইযন্ত্রটিকিনিনা।অথচআমরামানুষকেজনশক্তিবললেওতারযেসার্ভিসিংবাআপগ্রেডকরাদরকার, সেকথাকেউবলিনা।অথচএটাহওয়াউচিতছিল।

পাশ্চাত্যেঅনেকবিশ্ববিদ্যালয়েকিন্তুএইধ্যানধারণারপ্রতিফলনঘটতেশুরুকরেছে।যেমনঅক্সফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয়বিশ্বেরএমনঅনেকবরেণ্যব্যক্তিকেডক্টরেটডিগ্রিদিয়েছেযারাজীবনসংগ্রামেঅনবদ্যলড়াইকরেপ্রতিষ্ঠাপেয়েছেনএবংযারাএকসময়ছিলেনপ্রতিষ্ঠানেরছাত্র।ধরনেরব্যক্তিত্বকেডেকেনিয়েডিগ্রিদেয়াহয়; কিন্তুগতশতকেএরকমদুজনব্যক্তিত্বকেডিগ্রিপ্রদানেঅস্বীকৃতিজানানোহয়েছে।ক্যামব্রিজবিশ্ববিদ্যালয়ওএকইনীতিঅনুসরণকরছে।তাদেরকোনোছাত্রবিশ্বপর্যায়েকোনোকিছুঅর্জনকরলেতাকেডেকেনিয়েপিএইচডিদেয়াহয়।এইবিষয়গুলোআজোআমাদেরলক্ষ্যেরবাইরেরয়েগেছে।আমেরিকায়একজনএমডিবাডাক্তারহতেগেলেখুবকঠিনশিক্ষাপ্রক্রিয়ারমধ্যদিয়েঅগ্রসরহতেহয়; কিন্তুএরপরওযেডিগ্রিতাকেদেয়াহয়, তাতারসারাজীবনেরজন্যনয়।মাত্র১০বছরেরজন্য।এই১০বছরপরআবারতাকেবোর্ডেরসামনেহাজিরহয়েসমসাময়িকচিকিৎসাবিজ্ঞানসম্পর্কিতজ্ঞানেরপরীক্ষাদিতেহয়।

আমাদেরশিক্ষাব্যবস্থায়বিষয়টাপুরোপুরিঅনুপস্থিত।এমনকিআমাদেরবিশ্ববিদ্যালয়গুলোরকোনোছাত্রছাত্রীযদিবিশ্বপর্যায়েকোনোকৃতিত্বঅর্জনকরে, তবুওবিশ্ববিদ্যালয়গুলোতারকোনোখবররাখেনা।তাইবাংলাদেশেরজন্যচাচ্ছিএমনএকশিক্ষাব্যবস্থা, যেখানেকেউভালোকিছুকরলেতারস্বীকৃতিদেয়াহবে; তেমনিখারাপকিছুকরলেতারশাস্তিতথাডিগ্রিবাতিলেরব্যবস্থাওথাকবে।আমাদেরসমাজেবিপ্লবঘটাতেহলেশিক্ষাব্যবস্থাকেঢেলেসাজাতেহবে।এইঢেলেসাজানোরঅর্থশুধুশিক্ষাকারিকুলামপরিবর্তননয়; সমাজসংস্কৃতিরআলোকেশিক্ষাব্যবস্থাকেবিন্যস্তকরণও।এরঅভাবেইআমরাশিক্ষাব্যবস্থারমাধ্যমেএতদিনেওজবাবদিহিদায়িত্বশীলতাসৃৃষ্টিকরতেপারিনি।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতাচেয়ারম্যান, সোস্যালইসলামীব্যাংকলিমিটেড; সাবেকমুখ্যঅর্থনীতিবিদ, ইসলামিউন্নয়নব্যাংক, জেদ্দা
hmct2004@yahoo.co
m

দায়িত্বশীলতা দায়িত্বহীনতার দ্বান্দ্বিকতা

ইকতেদার আহমেদ

২৭ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৬

দায়িত্বশীলতা ও দায়িত্বহীনতার দ্বান্দ্বিকতা – নয়া দিগন্ত

পৃথিবীরতৃতীয়বৃহত্তমঅর্থনৈতিকশক্তিধরদেশজাপানে১১মার্চ, ২০১১.মাত্রারভূমিকম্পসুনামিআঘাতহানলেপৃথিবীরইলেকট্রনিকটেলিভিশনচ্যানেলেরঅন্যতমবিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকেপ্রভৃতিপ্রকৃতিরশক্তিকতপ্রবলহতেপারেসেটিরওপরবারবারআলোকপাতকরতেথাকে।এটিকিআসলেপ্রকৃতিরশক্তিনাকিপ্রকৃতিকেযিনিনিয়ন্ত্রণকরছেনতাঁরশক্তি।অবিশ্বাসীরাবলবেন, এটিপ্রকৃতিরশক্তিআরবিশ্বাসীরাবলবেনএটিপ্রকৃতিকেযিনিনিয়ন্ত্রণকরছেনতাঁরশক্তি।পৃথিবীতেবিচরণকারীমানুষেরকর্মফলএবংপ্রকৃতিরভারসাম্যরক্ষারজন্যইপ্রকৃতিরনিয়ন্ত্রণকারীমাঝেমাঝেবিভিন্নধরনেরদুর্যোগদিয়েমানুষকেপরীক্ষাকরেন।পৃথিবীরশ্রেষ্ঠজীবখ্যাতমানুষপ্রকৃতিরনিয়ন্ত্রকেরঅপারক্ষমতারঅতিসামান্যতমেরক্রিয়াকলাপেরকাছেযেকতঅসহায়তাঅবিশ্বাসীদেরহতবাকবিস্মিতকরলেওহয়তোতাদেরবিশ্বাসেচিড়ধরাতেপারেনি।এতেআক্ষেপকরারকিছুইনেই।পৃথিবীতেআগমনেরআগেওমানুষেরসত্তালুপ্তঅবস্থায়ছিলএবংপৃথিবীথেকেবিদায়েরপরওপুনর্জীবিতনাহওয়াপর্যন্তঅনন্তকালসত্তালুপ্তঅবস্থায়থাকবে।উভয়লুপ্তসত্তারমাঝখানেরক্ষণিকসমমুহূর্তহচ্ছেমানুষেরজীবন।জীবনপরিপক্বজ্ঞানসমৃদ্ধমানুষেরজন্যদায়িত্বদিয়েআবদ্ধ।

দায়িত্বঅর্থপরিচালন, তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ, কর্তব্যপ্রভৃতি।দায়িত্বব্যক্তিবস্তুএবংজীবনির্জীবউভয়েরক্ষেত্রেপ্রযোজ্য।দায়িত্বপালনকারীকেদায়িত্বশীলবলাহয়।দায়িত্বশীলেরবিপরীতশব্দহচ্ছেদায়িত্বহীন।আল্লাহপাক, সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর, ভগবানযেনামেতাঁকেডাকাহোকনাকেন, তিনিযেস্রষ্টাতাতারুণ্যেরউদ্দামতায়কারোকারোমাঝেসংশয়সৃষ্টিকরলেওবার্ধক্যেরক্ষয়িষ্ণুতায়রক্তপ্রবাহশীতলতরহতেথাকলেস্রষ্টারঅস্তিত্বএদেরঅনেকেরমধ্যথেকেবিতর্কেরঊর্ধ্বেচলেযায়।এমনঅনেকব্যক্তিআছেনযাদেরনিকটস্রষ্টারঅস্তিত্বপ্রশ্নবিদ্ধ, তারাকিকখনোতাদেরচক্ষুকেপ্রসারিতকরেসৃষ্টিকর্তারসৃষ্টিরদিকেতাকিয়েচিন্তাকরেদেখেছেনপ্রতিটিসৃষ্টিবস্তুগতবাঅবস্তুগত, কঠিনবাতরল, বায়বীয়বাঅবায়বীয়নিজনিজদায়িত্বসৃষ্টিরপ্রথমথেকেঅদ্যাবধিবিরামহীনভাবেকোনোধরনেরব্যত্যয়ব্যতিরেকেসঠিকভাবেপালনকরেযাচ্ছে।উপরোল্লেখিতসৃষ্টিগুলোরসঠিকভাবেদায়িত্বপালনেরকারণেইপৃথিবীতেপ্রাণেরআগমনঘটেছে, যারমধ্যেমানুষনামকপ্রাণীওঅন্তর্ভুক্ত।অন্যান্যপ্রাণীরসাথেমানুষেরপার্থক্যমানুষেরমৌলিকগুণদুটি।যথাপশুত্ববিচারশক্তি।অপরদিকেঅন্যসবপ্রাণীরমৌলিকগুণএকটিআরতাহচ্ছেপশুত্ব।

উপরোল্লেখিতসৃষ্টিগুলোরদায়িত্ববিষয়েআলোকপাতকরলেআমাদেরধারণাস্পষ্টতরহবে।যেমনÑ সূর্যনামকনক্ষত্রকেকেন্দ্রকরেআমাদেরপৃথিবীসহআরওকিছুগ্রহআবর্তিতহচ্ছে।পৃথিবীরগতিদুটি।একটিআহ্নিকগতিযারমাধ্যমেপৃথিবীনিজঅক্ষেরওপরপ্রতি২৪ঘণ্টায়একবারআবর্তিতহচ্ছে, অপরটিবার্ষিকগতিযারকারণেপৃথিবীবছরেএকবারসূর্যকেআবর্তনকরছে।আহ্নিকগতিরকারণেআমরাদিবারাত্রিপাচ্ছি।বার্ষিকগতিরকারণেবছরেরসূত্রপাতহচ্ছে।পৃথিবীরএকমাত্রউপগ্রহহচ্ছেচন্দ্র, যাগড়েপ্রতি৩০দিনেএকবারপৃথিবীকেপ্রদক্ষিণকরছেএবংএরমাধ্যমেআমরাবছরে১২বারপ্রদক্ষিণপাচ্ছি; যারফলেএকটিবছরকে১২টিমাসেবিভক্তকরাহয়েছে।চন্দ্রেরওপরসূর্যকিরণেরতারতম্যেরকারণেঅমাবস্যাপূর্ণিমারআবির্ভাব।আবারচন্দ্রপৃথিবীরআকর্ষণেরকারণেজোয়ারভাটারসৃষ্টিসূর্য, পৃথিবীচন্দ্রনিজনিজদায়িত্বপালনেরক্ষেত্রেকখনোকোনোরূপব্যত্যয়ঘটিয়েছেবাঅনিয়মকরেছেতাকেউকিকখনোপ্রত্যক্ষকরেছে?

অনুরূপভাবেপ্রকৃতিগতকারণেমানুষেরজীবনসমৃদ্ধঅপরাপরসবসৃষ্টিরজীবনধারণেরজন্যঅপরিহার্যপানিরতিনটিরূপরয়েছে।যথাতরল, কঠিনবায়বীয়তরলপানিনানাবিধব্যবহারেরকারণেদূষিতহচ্ছে।তরলপানিবায়বীয়আকারধারণকরেসম্পূর্ণদূষণমুক্তহয়েআকাশেঘনীভূতআকারেমেঘেরজন্মদিচ্ছে।মেঘথেকেবৃষ্টিনেমেএকদিকেবৃক্ষরাজিতরুলতাকেসজীবকরছে, অপরদিকেখালবিল, নদীনালায়পানিরপ্রবাহবাড়িয়েজলজপ্রাণীরজীবনধারণসহজতরকরছে।বায়বীয়পানিপাহাড়েরচূড়ায়শীতলতারসংস্পর্শেকঠিনআকারধারণকরেবরফেরূপান্তরিতহয়েরোদেরতাপেধীরেধীরেগলেনদীনালা, খালবিলেরমাধ্যমেভূভাগেরওপরদিয়েপ্রবাহিতহয়েপৃথিবীরসববর্জ্যনিয়েসাগরেফেলছে।সাগরেরপানিরবৈশিষ্ট্যহচ্ছেএটিলবণাক্ত।যেকারণেসাধারণব্যবহারসাধারণকৃষিকাজেরউপযোগীনয়।

অনেকেপ্রশ্নকরেথাকেনসাগরেরপানিলবণাক্তকেন? প্রশ্নেরউত্তরঅনেকেরইজানানেই।সাগরবেষ্টিতজেলাকক্সবাজারেআমারজেলাজজহিসেবেপদায়নহলেযোগদানেরপ্রথমদিনবিকেলেকনিষ্ঠসহকর্মীরাআমাকেবালিআবৃতসাগরতীরেনিয়েযায়।কনিষ্ঠসহকর্মীদেরদুজনছিলেনঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়েরআইনবিভাগেচাকরিতেআমারঅনুজ।তারাউভয়েমেধাবুদ্ধিদীপ্ততায়সাধারণেরচেয়েউচ্চমানের।আমিসাগরতীরেহাঁটাহাঁটিরসময়তাদেরকাছেপ্রশ্নরাখলামসাগরেরপানিলবণাক্তকেন? তারাকেউইদীর্ঘক্ষণচিন্তাকরেযখনপ্রশ্নটিরউত্তরদিতেপারলনা, তখনআমিতাদেরবললাম, পৃথিবীরবিভিন্নধরনেরবর্জ্যনদীখালদিয়েবাহিতহয়েসাগরেপতিতহওয়ারপরক্ষণেইপানিরলবণাক্ততারকারণেদূষণমুক্তহয়েসামুদ্রিকপ্রাণীরঅস্তিত্বকেকোনোরূপবিপন্নেরমুখেফেলেনাদিয়েভূভাগেরপ্রাণীউদ্ভিদএবংজলজপ্রাণীউদ্ভিদেরজীবনধারণেরভারসাম্যরক্ষাকরেচলছে।

কথাটিআজআরকারওঅজানানয়যে, মানুষসহজগতেরপ্রাণিকুলেরজীবনধারণেরজন্যঅপরিহার্যহচ্ছেঅক্সিজেন।অক্সিজেনব্যতিরেকেক্ষণিকেরব্যবধানেপ্রাণিকুলেরঅস্তিত্ববিপন্নেরমুখেপড়বে।মানুষসহঅপরাপরপ্রাণিকুলঅক্সিজেনগ্রহণকরছেআরকার্বনডাইঅক্সাইডত্যাগকরছে।অপরদিকেবৃক্ষরাজিতরুলতাকার্বনডাইঅক্সাইডগ্রহণকরছেআরঅক্সিজেনত্যাগকরছে।এভাবেবায়ুমণ্ডলেঅক্সিজেনকার্বনডাইঅক্সাইডেরভারসাম্যরক্ষিতহচ্ছে।

সৃষ্টিকর্তাতাঁরবস্তুগতঅবস্তুগত, তরলকঠিনএবংবায়বীয়অবায়বীয়সৃষ্টিগুলোকেযেদায়িত্বদিয়েছেনদায়িত্বগুলোনিজনিজঅবস্থানথেকেপরিপূর্ণতারসাথেপালিতহওয়ারকারণেইপ্রকৃতিরপ্রতিটিক্ষেত্রেশৃঙ্খলারক্ষিতহচ্ছে।

সৃষ্টিকর্তাপ্রতিটিমানুষকেইধরাতেকিছুনির্দিষ্টদায়িত্বসম্পন্নকরারজন্যপাঠিয়েছেন।পৃথিবীতেপ্রতিটিমানুষেরবিচরণক্ষণস্থায়ী।যেকোনোরাষ্ট্রেরকর্ণধারথেকেশুরুকরেকরণিকপর্যন্তসবারনির্ধারিতদায়িত্বরয়েছে।নির্ধারিতদায়িত্বযারাসফলতারসাথেপালনকরেনতারাসার্থকনন্দিত।জনগণেরহৃদয়েতারাশ্রদ্ধাভাজনহিসেবেচিরভাস্বরহয়েথাকেন।আরদায়িত্বপালনেযারাবিফলতারাব্যর্থনিন্দিত

প্রাণিকুলেরমধ্যেক্ষেত্রবিশেষেনৈতিকতারমানদণ্ডেমানুষঅপরাপরপ্রাণীকেলজ্জায়ফেলেদিচ্ছে।অপরাপরপ্রাণীরমধ্যেকখনোএমনটিপরিলক্ষিতহয়নিযে, কোনোপ্রাপ্তবয়স্কপ্রাণীঅপ্রাপ্তবয়স্কপ্রাণীরওপরজৈবিকচাহিদাচরিতার্থেরমানসেঝাঁপিয়েপড়েছে।কিন্তুসৃষ্টিরসেরাজীবমানুষেরমধ্যেপ্রবণতাকেন? এটাকোনধরনেরনৈতিকতাদায়িত্ববোধ?

প্রাণিকুলেরমধ্যেষড়রিপুযথাকাম, ক্রোধ, মোহ, লোভ, মদমাৎসর্যমানুষেরওপরযেভাবেক্রিয়াশীলঅপরাপরপ্রাণীরওপরসেভাবেক্রিয়াশীলনাহওয়ায়মানুষতারদায়িত্বপালনেপ্রতিনিয়তব্যর্থতারবেড়াজালেআবদ্ধহচ্ছে।আরকারণেআজপৃথিবীরসর্বত্রহানাহানি, অত্যাচারনিপীড়নেরপ্রসারঘটছে, সবলদুর্বলেরওপরআঘাতহানছে, ধনীরাগরিবদেরশোষণকরছে, দারিদ্র্যবিমোচনেরনামেপ্রহসনচলছে, ঋণগ্রহীতাস্বাবলম্বীনাহয়েসুদেরকশাঘাতেপিষ্টহয়েঘরেরচালাহারাচ্ছে, অন্যায়ন্যায়েরওপরপ্রাধান্যপাচ্ছে, দুর্নীতিনীতিকেগ্রাসকরছে, বিলাসিতাসাধারণজীবনমানকেম্লানকরেদিচ্ছে, ভূরিভোজনক্ষুধারসাথেতামাশাকরছে, সততাঅসততারকাছেমারখাচ্ছে, শ্রমিকমেহনতিমানুষেরঅধিকারক্ষুণœ হচ্ছে, চোরসাধুসেজেবড়গলায়কথাবলছে, মিথ্যাসত্যকেআড়ালকরছে, পাপপুণ্যকেঅতিক্রমকরছে, ধনীদরিদ্রেরবৈষম্যবৃদ্ধিপাচ্ছে, আইনবিধিবিধানলঙ্ঘিতহচ্ছে, কনিষ্ঠজ্যেষ্ঠেরঅধিকারক্ষুণœ করছে, অযোগ্যযোগ্যেরঅগ্রেস্থানপাচ্ছে, ব্যক্তিস্বার্থজনস্বার্থকেঅবদমিতকরছে, বিবেকহীনবিবেকবানেরওপরঠাঁইকরেনিচ্ছে, মানবিকমূল্যবোধভূলুণ্ঠিতহচ্ছে, মানসিকযাতনাকেউপহাসকরাহচ্ছে, বিপর্যয়আনন্দেরখোরাকহচ্ছে, নির্লজ্জবেহায়াভদ্রসম্ভ্রান্তেরচলারপথকেকণ্টকাকীর্ণকরছে, কলঙ্কেরকালিমাখ্যাতিরব্যাঘাতনাহয়েআনন্দেরকারণহচ্ছে, অপরেরসাফল্যেঈর্ষান্বিতহয়েনিজেকেওইসাফল্যেরজন্যযৌক্তিকভাবছে, পদধারীদেরবিভিন্নমুখীঅন্যায়ন্যায়বিচারপ্রাপ্তিতেবঞ্চিতকরছে, ধোঁকাবাজদ্বারাসহজসরলপ্রতারিতহচ্ছে, অন্যায়ভাবেউপরেরসিঁড়িতেআরোহণেবিবেকবাধাহিসেবেদাঁড়াচ্ছেনা, ঘুষখোরেরদৌরাত্ম্যেন্যায়নিষ্ঠকোণঠাসাহয়েপড়ছে, মঙ্গলঅমঙ্গলেরকাছেপরাভূতহচ্ছে, কল্যাণঅকল্যাণেরকাছেহারমানছে, ভুখানাঙ্গানিরন্নেরহাহাকারপ্রতিনিয়তউপেক্ষিতহচ্ছেএবংডুবন্তনৈতিকতাখড়কুটোকেঅবলম্বনকরেটিকেথাকারচেষ্টাকরছে।তারপরওবলতেদ্বিধানেই, ক্ষয়িষ্ণুদায়িত্বশীলতাএতসবপ্রতিকূলতারমাঝেওনিভুনিভুপ্রদীপথেকেদ্যুতিছড়িয়েস্বঅবস্থানেঅটুটথাকারসংগ্রামেঅবিচলরয়েছে।আরএইদায়িত্বশীলতাদায়িত্বহীনতারদ্বান্দ্বিকতারমাঝথেকেইআমাদেরঅন্যান্যদেশেরজাতীয়জীবনেরপ্রতিটিপর্যায়েসঠিকনেতৃত্বকেখুঁজেবেরকরেসামাজিকন্যায়বিচারপ্রতিষ্ঠারমাধ্যমেপৃথিবীরসবঅংশেরমানুষকেনিজনিজসুখীসমৃদ্ধশালীদেশগঠনেব্রতীহতেহবে।

লেখক : সাবেকজজ, সংবিধান, রাজনৈতিকঅর্থনৈতিকবিশ্লেষক

E-mail: iktederahmed@yahoo.com

prothomalo
দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হলে আমরা কী করব

০১ মে ২০২০, ১১:০০
আপডেট: ০১ মে ২০২০, ১১:০৪

প্রিন্ট সংস্করণ

  

প্রথম আলো ফাইল ছবি।করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশকেও লকডাউনে যেতে হয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে গেছে। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি একটি দীর্ঘমেয়াদি মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে আছে। এসব ঘটনায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে একটি বড় ধরনের ধাক্কা পড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) উভয় সংস্থাই বর্তমান অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে বেশ ‘আশাবাদী’। প্রকৃতপক্ষে এই মহামারির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঠিক কতখানি ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করছে এই সংকটের স্থায়িত্ব ও ব্যাপ্তির ওপর; এবং সরকার কতটা সফলভাবে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারে তার ওপর।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, তাদের অনেকেই ‘দিন আনে দিন খায়’। এই স্থবিরতা সেই সব মানুষের ওপরও বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যাদের আয় দারিদ্র্যসীমার সামান্য বেশি। কিন্তু অর্থনৈতিক ভিত্তি ভঙ্গুর হওয়ায় এই জনগোষ্ঠী ‘অসহায়’। তারা যেকোনো দুর্যোগে বা অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়তে পারে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আছে। তাদের আয় ভীষণ অস্থিতিশীল। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সংকটের কতখানি প্রভাব পড়বে, তা নিরূপণ করতে হলে দরিদ্র ও অসহায় উভয় জনগোষ্ঠীকেই বিবেচনায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)
সাম্প্রতিক হিসাব অনুসারে এ দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এই হিসাবে সংখ্যাটি প্রায় এখন ৩ কোটি ৪০ লাখ। তবে সানেম-এর হিসাব অনুসারে যদি দারিদ্র্যের আয়সীমা মাত্র সোয়া এক শতাংশ গুণ বাড়ানো হয়, তাহলে আরও তিন কোটি ষাট লাখ মানুষকে পাওয়া যাবে, যারা সরকারি হিসাবে দরিদ্র নয়, তবে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেকোনো বিপর্যয়ে এই অসহায় জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এদের দরিদ্র হওয়ার আশঙ্কা অনেক
বেশি থাকে।
বিবিএসের সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে সানেমের চলমান গবেষণার প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, এ রকম অর্থনৈতিক সংকটে পরিবারের আয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাবে। এর অর্থ, নতুন করে আরও ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হবে। এখানে আমরা ধরে নিয়েছি যে তিন মাসের লকডাউনের ফলে পরিবারের আয় ন্যূনতম এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে। তবে সানেমের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল নির্দেশ করছে, চলমান সংকটের কারণে দেড় দশকজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, তা নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, এটা আমাদের হিসাবের ৪০ দশমিক ৯ শতাংশের চেয়েও কম।
এখানে বলা প্রয়োজন, আয়ের ওপর আকস্মিক নেতিবাচক প্রভাব অর্থনৈতিক কাজের ধরন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। আমাদের অর্থনৈতিক মডেলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এ দেশে নতুন যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, তাদের একটি বড় অংশ নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে। যেমন ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু লালনপালন ও মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে ৪৩ শতাংশ; তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প উৎপাদনে ১৬ শতাংশ, খুচরা ব্যবসায় ১১ শতাংশ, যোগাযোগব্যবস্থায় ১০ শতাংশ ও নির্মাণ খাতে ৭ শতাংশ।
আমাদের আরও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সংকটের প্রভাব অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন হবে। সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, চলমান সংকটের কারণে সারা দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে, আর ৪০টি জেলায় তা এই হারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রাঙামাটিতে আরও ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। আরও যেসব জেলায় দারিদ্র্যের হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে (যেসব জেলায় নতুন করে ২০.৪ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্য হতে পারে), সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলাগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, কক্সবাজার, নীলফামারী, নড়াইল, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, চুয়াডাঙ্গা, শেরপুর, বরগুনা ও শরীয়তপুর।
আমাদের অর্থনৈতিক মডেলের প্রাথমিক হিসাবে উল্লিখিত জেলাগুলোর বিপরীতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলায় চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে। কিন্তু যেহেতু শুরু থেকেই এসব জেলায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ অপেক্ষাকৃত বেশি, তাই প্রকৃতপক্ষে এসব জেলায় আমাদের অনুমিত আয় কমার হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে। অধিকন্তু এসব জেলায় ক্ষুদ্র পর্যায়ের যেসব অর্থনৈতিক কার্যক্রম এই লকডাউনে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার প্রভাব উল্লিখিত হিসাবের চেয়েও বেশি হতে পারে।
সরকার করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলার উদ্দেশ্যে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এগুলোর সাফল্য তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত, কার্যকরভাবে দরিদ্র ও ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা এবং তাদের সহায়তা প্রদানের ধরন ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা। দ্বিতীয়ত, প্রকৃত অর্থে যেসব অর্থনৈতিক খাত এবং দরিদ্র ও ‘অসহায়’ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এই সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, একটি ‘তদারকি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করা, যার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।

ড. সেলিম রায়হান সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক
ড. সায়মা হক বিদিশা সানেমের গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক
মাহতাব উদ্দিন সানেমের রিসার্চ ফেলো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক
মো. তুহিন আহমেদ সানেমের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট
মো. জোনায়েদ সানেমের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট

যাকাত বিষয়ক ১৫টি জিজ্ঞাসা যা আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবেই (সম্পূরক প্রশ্ন- ১০,১১,১২)

7 August 2013 at 03:11

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
প্রিয় পাঠক, যাকাত জিজ্ঞাসা আগের পর্বে* বোন Tahmina Bappy জানতে চেয়েছেন,

সম্পূরক প্রশ্ন ১০:- কোনো বাক্তি যদি ঋণগ্রস্ত থাকে তবে তার জন্যও কি যাকাত ফরজ?

উত্তরযদিও ঋনগ্রস্থ অবস্থায় কোন ব্যাক্তির উপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হবে কি হবেনা এব্যাপারে  ইসলামী শরীয়া আইনে বিশেষজ্ঞ আলেমগনের মধ্যে ভীন্নভীন্ন (বিপরীতমুখি) মতামত লক্ষ্য করা যায় কিন্তু আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অধিকাংশ আলেমগনের মতামত এবং কোরআন হাদীসের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষনচিন্তা আমাদেরকে এব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌছুতে সাহায্য করে যে, কোন ব্যাক্তির উপর যাকাত ফরজ হবার জন্য তাকে সম্পূর্ণভাবে ঋনমুক্ত (অভাবের ঋন স্বভাবের ঋন নয়, ঋনসংক্রান্ত আরো বিস্তাতির জানার জন্যে পরের প্রশ্নে খেয়াল রাখতে বিনীত অনুরোধ রাখব।) হওয়া কিংবা মালিকানাধীন সমুদয় সম্পদথেকে কৃত ঋনের পরিমান বিয়োগ করে যা অতিরিক্ত থাকবে তা যদি নিসাব পরিমান হয় তবেই কেবলমাত্র তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অন্যথায় নয়।

* বিষয়টাকে আরেক্টু সহজভাবে যদি একটা উদাহরন দিয়ে বলি, ধরুন আমাদের কোন একজন মুসলিম বোন তাওসিফা আফনান লাবীবা। উনি ব্যাক্তিগতভাবে ব্যবহৃত (সোনা রুপার) গহনা + ব্যাংক ডিপোজিট + নগদ অর্থ + অন্যান্য সম্পদ মিলিয়ে মোট ৬লক্ষ (৬০০০০০) টাকার মালিক। একইসাথে তিনি কারো কাছ থেকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ২.৫ লক্ষ (২,৫০০০০০) টাকা ঋন নিয়েছেন। এমতাবস্থায়ও কি তাঁর উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ হবে?

উত্তর হচ্ছে, এমতাবস্তায় ডেফিনিটলি তাকে যাকাত দিতে হবে। কারন উনার মালিকানাধীন যাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদ (৬লক্ষ টাকা) থেকে কৃত ঋনের টাকা (২.৫ লক্ষ) বিয়োগ করলেও উনার কাছে যা (৩.৫ লক্ষ টাকা) অবশিষ্ট থাকে তা আলাদাভাবেই যাকাতযোগ্য (নিসাব সমতুল্য)। সুতরাং তাঁকে ঋনবাদে অবশিষ্ট ৩.৫লক্ষ টাকার উপর .% হারে ৮৭৫০টাকা/সমমূল্যে যাকাত দিতে হবে।

* কিন্তু যদি এমন হয় যে উনি (বোন লাবীবা) ইতোমধ্যে ৫.৮ লক্ষ (৫৮০০০০০ টাকা কিংবা আরো বেশী) ঋন করে ফেলেছেন। তার মানে এই মুহুর্তে কৃত ঋনের টাকা পরিশোধ করলে উনার হাতে অবশিষ্ট থাকবে কেবলমাত্র বিশ হাজার (২০০০০) টাকা কিংবা তার চেয়েও কম। তবে কি তাকে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর হচ্ছে, না। এমতাবস্থায় তাকে কিছুতেই যাকাত দিতে হবে না। কেননা কৃত ঋন পরিশোধ করা তার জন্যে ইসলামী শরীয়া ওয়াজিব করে দিয়েছে।

*হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বুখারী শরীফের এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি আত্মসাতের মনোভাব নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋন গ্রহন করল আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেবেন। নাউযুবিল্লাহ।

* আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ঋন (কারন এটা হাক্কুল ইবাদ মানুষের সাথে মানুষের হক্ব) ব্যাতীত শহীদের অন্য যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেবেন।

* সত্যিকারার্থেই যিনি (অনাকাঙ্খিতভাবে) অভাবগ্রস্থ, আপাদমস্তক ঋনে জর্জরিত হয়ে গেছেন আল্লাহ তার জন্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ঋনপরিশোধ করা আবশ্যক করে দিয়েছেন। এমনকি এমতাবস্থায় (ঋনগ্রস্থ হয়ে) যদি সে মারা যায় পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে ঋন পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ওসিয়তও কার্যকর হবেনা।

* ইরশাদ হচ্ছে, এমনকি এই ওসিয়ত পূর্ণ কর ঋন পরিশোধের পর। সূরা নিসা-১১)

[আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঋনমুক্ত পরিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন।]

* প্রিয় ভাই Shiblee Mehdi  জানতে চেয়েছিলেন, “ঋণের বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই, আশা করি আপনার পরের লেখায় এ বিষয়টি আলোচনা করবেন। ছোট বেলাতেও দেখতাম যিনি ঋণ নিতেন তিনি আসলেই সমস্যাগ্রস্থ। নিজের সহায় সম্বলে টান পড়ার পরেই ঋণ নিয়ে থাকতো। কিন্তু আজকাল ঋণ (আমি আসলে লোন/loan কেই বুঝাচ্ছি) একদম স্বচ্ছল মানুষরাও নেয়। অনেক সময় নিজের থাকার পরেও লোন নিয়ে থাকে অনেকেই। যাই হোক, আমার প্রশ্ন অনেকটা এমন যে:

সম্পূরক প্রশ্ন ১১:- ধরে নিলাম একজনের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি এমন অংক লোন নিয়েছেন যেটা আগামী ১০ বছরে শোধ করবে কিস্তিতে কিস্তিতে। যেহেতু সে আগামী ১০ বছরের কিস্তিতে শোধ দেবে এবং যেহেতু তার নিসাব পরিমান সম্পদ আছে এবং তার বর্তমান অবস্থাও অনেক স্বচ্ছল, তারপরেও কি তার উপর যাকাত ফরজ হবে না শুধুমাত্র এই জন্য যে তার উপর অনেক লোন আছে যা কিনা সে ১০ বছর ধরে কিস্তিতে শোধ দেব?

উত্তর প্রিয় Shiblee Mehdi ভাই, সালাম জানবেন। আশাকরি (প্রকৃতই অভাবগ্রস্থ অনন্যোপায় হয়ে কৃত) ঋনাক্রান্ত ব্যাক্তির যাকাত দিতে হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর (উপরোক্ত প্রশ্নের আলোচনায়) পেয়েছেন। আপনার প্রশ্নের পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনার সুবিধার্থে (ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলাম) প্রশ্নটাকে যদি আমরা একটু সহজভাবে (কিছুটা) পরিবর্তন পরিবর্ধন করে নেই ঠিক এভাবে,

আজকাল আমরা অনেকেই (ব্যাংক, বীমা, সমিতি অথবা অর্থলগ্নীকারী এনজিও ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে বিভীন্ন ভাবে) বিভীন্নপ্রয়োজনে ঋণ নিয়ে থাকি। আমি আসলে এখানে ঋন বলতে বিভীন্ন ব্যাংক, বীমা, সমিতি থেকে উত্তোলিত লোন/loan, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদিকেই বুঝাচ্ছি,  যা সাধারনত (বেশীরভাগক্ষেত্রেই) সুন্দর সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে  উচ্চাভীলাষ থেকেই অনেক স্বচ্ছল মানুষও নিয়ে থাকে।

এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে নিসাব পরিমান সম্পদের অধিকারি হওয়া সত্বেও কোন ব্যাক্তি যদি অধিক স্বচ্ছলতা অর্জনের প্রত্যাশায় নির্দিষ্ঠ কিংবা দীর্ঘসময়ের জন্য কোন লোন/loan নিয়ে (স্বভাবজাত) ঋনগ্রস্থ হয় তবে কি তার উপরেও যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবেনা?

উত্তর:  এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই আমি আপনাদের (সেই সকল মুসলিম ভাই-বোন যারা স্বেচ্ছায় স্বত:প্রনোদিত হয়ে লাভ অথবা লোভের বশবর্তী হয়ে জেনে বুঝে আমাদের দেশে প্রচলিত ব্যাংক, বীমা, সমিতি, ক্ষুদ্র ঋনদানকারী বিভীন্ন এনজিওপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভীন্ন শর্তে ক্রেডিট কার্ড, হাউজলোন, কার লোন,  ইত্যাদিসহ অন্যান্যভাবে ঋন (লোন/loan) নিয়ে থাকি)তাদের প্রতি একটি প্রশ্ন রেখে আলোচনা শুরু করতে চাই___ “আমি কি নিশ্চিত? এই সকল ঋন/লোন দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতই ইসলামী অর্থব্যাবস্থার (বাইয়’রিবা সংক্রান্ত) মুলনীতিগুলো মেনে আমার সাথে ঋনকার্যক্রমে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে?” ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, না (ইনক্লুডেড মোস্ট অব ছো কল্ড ইসলামী ব্যাংকিং ইনস্টিটিউটসআল্লাহ খুব ভাল জানেন।

* সুতরাং এধরনের (স্বভাব/লোভজাত সৌখিন) ঋনগ্রস্থদের জন্য আলাদাভাবে নিসাবপরিমান সম্পদের মালিক হয়েও যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা তেকে মুক্ত থাকার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুল সঃ ইরশাদ করেছেন: (কৃপনতা ও লোভজনিত কলাকৌশলের কারনে) যে সম্পদের সাথে (অদেয়) যাকাতের সংমিশ্রন ঘটে তা তার মূল সম্পদকে (দুনিয়া ও আখেরাতে) ধ্বংস করে দেবে। –বুখারী

* এছাড়াও আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে কারীমে এরশাদ করেন : তোমরা (মানুষেরা) সম্পদ বৃদ্ধির আশায় যে সুদ ভিত্তিক লেনদেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহর নিকট কোনভাবেই লাভজনক নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে যাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, (তাই বৃদ্ধি পায়) ফলত জাকাত প্রদানকারীগণ (আল্লাহ কাছ থেকে) তার মুনাফাকে দ্বিগুণ করে বাড়ীয়ে নেয়। সূরা রুম-৩৯

*সূরা মোহাম্মাদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা তো এমন লোক যাদেরকে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী খরচ করতে (যাকাত দিতে) আহ্বান জানানো সত্বেও কিছুলোক (বিভীন্নউপায়ে) কৃপণতা অবলম্বন করছে। (সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখার উদ্যেশ্যে যারা) কৃপণতার আশ্রয় নেবে তাদের পরিণাম তারা নিজেরাই (চূড়ান্তভাবে) ক্ষতিগ্রস্থ। সূরা মুহাম্মদ-৩৮

*ইসলামে যাকাত বিধান এর মূলনীতিই হচ্ছে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, সম্পদ যেন কেবল তাদের মধ্যেই (বিভীন্ন কৌশলি উপায়ে, চক্রাকারে) আবর্তন না করে। সূরা হাশর-৭”

* সূরা তাওবায় ইরশাদ হচ্ছে, হে নবী, আপনি তাদের সম্পদ থেকে (হিসেব করে) যাকাত বের করে নিন। তাদেরকে পবিত্র পরিশুদ্ধ করুন। সূরা তাওবা-১০৩

* আল্লাহর রাসূল সঃ থেকে মা আয়েশা রাঃ বর্ননা করেন, আমি রাসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যে সম্পদের সাথে (অনাদায়কৃত) যাকাত এর (দ্রব্য-টাকা-পয়সা-মূল্য) সংমিশ্রন ঘটে তা ব্যাক্তির পুরো সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়। — বোখারী

* এমনকি কোনভাবে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক (হোক সে ঋনগ্রস্থ) তার উপর ওয়াজিবকৃত সম্পদে যাকাত আদৌ রহিত হবে কিনা তার মাসআলায় উপরিউক্ত মূলনীতিসহ আরো কিছু তথ্যও যুক্তির ভিত্তিতে একদল আলেম (সম্পদের বর্তমান অধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়ে) এভাবে মতামত ব্যাক্ত করেছেন যে, তার (লোভ এবং লাভের আশায় যিনি ঋননিয়েছেন) উপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হবেনা।

এই মুহুর্তে ব্যাক্তির অধিকারে যে পরিমান সম্পদ আছে (নিসাবতুল্য হলে) তা থেকে যাকাত বের করে দিতে হবে।

কারন এটা সম্পদের উপর দরিদ্রের হক্ব। ব্যাক্তির কাছে নয়।

* ঋন হচ্ছে ব্যাক্তির উপর ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের যিম্মায় আবশ্যক। পক্ষান্তরে যাকাত হচ্ছে সম্পদের উপর দারিদ্রদের হ্ক্ব।

* ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সাম্যভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে স্পিরিচ্যুয়াল ডেভেলপমেন্টের দৃষ্টকোনথেকে আমল করলে জীবন বাচানোর তাগিদে একান্ত নিরোপায় হয়ে নেয়া ঋন ছাড়া অন্য  (লাভ এবং লোভ প্রত্যাশায় নেয়া) যে কোন ঋনের (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা বিলাস কিংবা লাভজনক বিনিয়োগে ব্যবহৃত) উপর যাকাত দেয়া গুড মুসলিমের আবশ্যিক কর্তব্য।

যারা আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থার নীতিতে বিশ্বাস করে (কর্ম সম্পাদন করবে) তার প্রতিদান দানে আল্লাহই যথেষ্ট। সূরা তালাক্ব-৩

সম্পূরক প্রশ্ন ১২:- বোন Farjana Islam Roshni জানতে চেয়েছিলেন, amar kisu relatives ase tader jonno jante chassilam, jader bari korar moto kisu jomi ase akono sell koreni ba bari banabe kobe sei jomi te tao janena tader jonno jakat kemon hobe ar sona 7.5 vorir niche hole ki jakat dea lagbe abar sei sona pora o hoina amon kisu hole ki kora uchit?

উত্তরপ্রিয় বোন, ক) * ইসলামে যাকাত ব্যাবস্থার মূলনীতিই হল কোন সম্পদ যেন ধনীদের কাছে (বিভীন্নভাবে) কুক্ষিগত না থেকে ধনীগরীব নির্বিশেষে সবাই (সম্পদের চলমান প্রবাহে) উপকৃত হয়। পাশাপাশি নিজের কস্টার্জিত সম্পদে একান্তু নিজের মৌলিক প্রয়োজনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা তার উপর জুলুম এর নীতি অবলম্বন করে তাকে বঞ্চিত করেন না। এটাই আল্লাহ’র সুবিচার।

সুতরাং যে জমি নিজের ব্যবহারের প্রয়োজনে কাজে লাগছেনা এমনকি আদৌ কাজে লাগবে কিনা তাও নিশ্চিত নয় এমনভাবে জমি কিংবা অন্য কিছুর উপর মোটা অংকের টাকা/সম্পদ অকেজো/কুক্ষিগত রাখা যাকাতের সামাজিক মূলনীতির সাথে কিছুতেই যায় না।
* (এমন অব্যবহৃত জমির উপর একটা হাদীসে এসেছে, যে জমি নিজেও আবাদ করবেনা অন্যকেও আবাদ করতে দেয়া হবেনা রাস্ট্রের শাষনকর্তা যেন তা লোকের কাছ থেকে গ্রহন করে নিয়ে যে তাতে আবাদ করে লাভবান হবে এমন কাউকে দিয়ে দেয়।)


* পাশাপাশি আরেকটা মূলনীতি হচ্ছে কোন (নিসাব পরিমান) সম্পদ যদি প্রবৃদ্ধমান হয় তবে তার মূল্যের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।

* আমরা খুব ভাল করেই জানি, আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের পরম আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এটাই যে দেশের যে কোন স্থানে জমি ক্রয় করে রাখলে তা দিনে দিনে দাম বাড়তেই থাকে।

এমতাবস্থায় আপনার ঐ আত্মীয়ের জন্য তাকওয়ার নীতি হবে জমির (লাভজনক ব্যবহারের) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া। আপাততকালীন বর্তমান বাজারমূল্যে হিসাব করে ২.৫% হারে যাকাত দিয়ে দেয়া। তোমরা তোমাদের সম্পদ থেকে যা কিছু (যাকাতসাদাকাহ বাবদ) খরচ করে থাক আল্লাহ তার যথার্থ প্রতিদান তোমাদেরকে দেবেন। সূরা বাক্কারা-২৭২

খ) এককভাবে স্বর্ণ ৭.৫ ভরি হলে সরাসরি যাকাত দিতে হবে। তার চেয়ে কম হলে অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে (যেমন স্বর্ণ+ব্যাংকে গচ্ছিত/নগদ টাকা+অন্য সম্পদ) যদি সমুদয় সম্পদে নিসাব (স্বর্ণের নিসাবে সর্বনিম্ন ২.৮ লাখ টাকা/ রৌপ‌্যের নিসাবে সর্বনিম্ন ৩৮হাজার টাকা) পরিমান হয় তবে তার উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।

* আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা একজন মহিলা তার মেয়েকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল, মেয়ের হাতে স্বর্ণের দুটি ভারি মোটা বালা ছিল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত দাও? মেয়ে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এগুলোর দ্বারা দুটি আগুনের চুড়ি বানিয়ে তোমার হাতে পড়িয়ে দিবেন? মেয়েটি কথা শুনে বালা দুটি খুলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে বলল : এগুলো আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।

* অন্য এক হাদীসে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন তখন আমার হাতে কয়েকটি রূপার আংটি ছিল, তখন তিনি বললেন, এগুলো কি? আমি বললাম, আপনার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য এগুলো তৈরি করেছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত প্রদান কর? আমি বললাম না, তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। –আবু দাউদ

যাকাত বিষয়ক ১৫টি জিজ্ঞাসা যা আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবেই (সম্পূরক প্রশ্ন- ১০,১১,১২)

7 August 2013 at 03:11

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
প্রিয় পাঠক, যাকাত জিজ্ঞাসা আগের পর্বে* বোন Tahmina Bappy জানতে চেয়েছেন,

সম্পূরক প্রশ্ন ১০:- কোনো বাক্তি যদি ঋণগ্রস্ত থাকে তবে তার জন্যও কি যাকাত ফরজ?

উত্তরযদিও ঋনগ্রস্থ অবস্থায় কোন ব্যাক্তির উপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হবে কি হবেনা এব্যাপারে  ইসলামী শরীয়া আইনে বিশেষজ্ঞ আলেমগনের মধ্যে ভীন্নভীন্ন (বিপরীতমুখি) মতামত লক্ষ্য করা যায় কিন্তু আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অধিকাংশ আলেমগনের মতামত এবং কোরআন হাদীসের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষনচিন্তা আমাদেরকে এব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌছুতে সাহায্য করে যে, কোন ব্যাক্তির উপর যাকাত ফরজ হবার জন্য তাকে সম্পূর্ণভাবে ঋনমুক্ত (অভাবের ঋন স্বভাবের ঋন নয়, ঋনসংক্রান্ত আরো বিস্তাতির জানার জন্যে পরের প্রশ্নে খেয়াল রাখতে বিনীত অনুরোধ রাখব।) হওয়া কিংবা মালিকানাধীন সমুদয় সম্পদথেকে কৃত ঋনের পরিমান বিয়োগ করে যা অতিরিক্ত থাকবে তা যদি নিসাব পরিমান হয় তবেই কেবলমাত্র তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অন্যথায় নয়।

* বিষয়টাকে আরেক্টু সহজভাবে যদি একটা উদাহরন দিয়ে বলি, ধরুন আমাদের কোন একজন মুসলিম বোন তাওসিফা আফনান লাবীবা। উনি ব্যাক্তিগতভাবে ব্যবহৃত (সোনা রুপার) গহনা + ব্যাংক ডিপোজিট + নগদ অর্থ + অন্যান্য সম্পদ মিলিয়ে মোট ৬লক্ষ (৬০০০০০) টাকার মালিক। একইসাথে তিনি কারো কাছ থেকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ২.৫ লক্ষ (২,৫০০০০০) টাকা ঋন নিয়েছেন। এমতাবস্থায়ও কি তাঁর উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ হবে?

উত্তর হচ্ছে, এমতাবস্তায় ডেফিনিটলি তাকে যাকাত দিতে হবে। কারন উনার মালিকানাধীন যাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদ (৬লক্ষ টাকা) থেকে কৃত ঋনের টাকা (২.৫ লক্ষ) বিয়োগ করলেও উনার কাছে যা (৩.৫ লক্ষ টাকা) অবশিষ্ট থাকে তা আলাদাভাবেই যাকাতযোগ্য (নিসাব সমতুল্য)। সুতরাং তাঁকে ঋনবাদে অবশিষ্ট ৩.৫লক্ষ টাকার উপর .% হারে ৮৭৫০টাকা/সমমূল্যে যাকাত দিতে হবে।

* কিন্তু যদি এমন হয় যে উনি (বোন লাবীবা) ইতোমধ্যে ৫.৮ লক্ষ (৫৮০০০০০ টাকা কিংবা আরো বেশী) ঋন করে ফেলেছেন। তার মানে এই মুহুর্তে কৃত ঋনের টাকা পরিশোধ করলে উনার হাতে অবশিষ্ট থাকবে কেবলমাত্র বিশ হাজার (২০০০০) টাকা কিংবা তার চেয়েও কম। তবে কি তাকে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর হচ্ছে, না। এমতাবস্থায় তাকে কিছুতেই যাকাত দিতে হবে না। কেননা কৃত ঋন পরিশোধ করা তার জন্যে ইসলামী শরীয়া ওয়াজিব করে দিয়েছে।

*হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বুখারী শরীফের এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি আত্মসাতের মনোভাব নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋন গ্রহন করল আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেবেন। নাউযুবিল্লাহ।

* আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ঋন (কারন এটা হাক্কুল ইবাদ মানুষের সাথে মানুষের হক্ব) ব্যাতীত শহীদের অন্য যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেবেন।

* সত্যিকারার্থেই যিনি (অনাকাঙ্খিতভাবে) অভাবগ্রস্থ, আপাদমস্তক ঋনে জর্জরিত হয়ে গেছেন আল্লাহ তার জন্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ঋনপরিশোধ করা আবশ্যক করে দিয়েছেন। এমনকি এমতাবস্থায় (ঋনগ্রস্থ হয়ে) যদি সে মারা যায় পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে ঋন পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ওসিয়তও কার্যকর হবেনা।

* ইরশাদ হচ্ছে, এমনকি এই ওসিয়ত পূর্ণ কর ঋন পরিশোধের পর। সূরা নিসা-১১)

[আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঋনমুক্ত পরিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন।]

* প্রিয় ভাই Shiblee Mehdi  জানতে চেয়েছিলেন, “ঋণের বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই, আশা করি আপনার পরের লেখায় এ বিষয়টি আলোচনা করবেন। ছোট বেলাতেও দেখতাম যিনি ঋণ নিতেন তিনি আসলেই সমস্যাগ্রস্থ। নিজের সহায় সম্বলে টান পড়ার পরেই ঋণ নিয়ে থাকতো। কিন্তু আজকাল ঋণ (আমি আসলে লোন/loan কেই বুঝাচ্ছি) একদম স্বচ্ছল মানুষরাও নেয়। অনেক সময় নিজের থাকার পরেও লোন নিয়ে থাকে অনেকেই। যাই হোক, আমার প্রশ্ন অনেকটা এমন যে:

সম্পূরক প্রশ্ন ১১:- ধরে নিলাম একজনের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি এমন অংক লোন নিয়েছেন যেটা আগামী ১০ বছরে শোধ করবে কিস্তিতে কিস্তিতে। যেহেতু সে আগামী ১০ বছরের কিস্তিতে শোধ দেবে এবং যেহেতু তার নিসাব পরিমান সম্পদ আছে এবং তার বর্তমান অবস্থাও অনেক স্বচ্ছল, তারপরেও কি তার উপর যাকাত ফরজ হবে না শুধুমাত্র এই জন্য যে তার উপর অনেক লোন আছে যা কিনা সে ১০ বছর ধরে কিস্তিতে শোধ দেব?

উত্তর প্রিয় Shiblee Mehdi ভাই, সালাম জানবেন। আশাকরি (প্রকৃতই অভাবগ্রস্থ অনন্যোপায় হয়ে কৃত) ঋনাক্রান্ত ব্যাক্তির যাকাত দিতে হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর (উপরোক্ত প্রশ্নের আলোচনায়) পেয়েছেন। আপনার প্রশ্নের পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনার সুবিধার্থে (ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলাম) প্রশ্নটাকে যদি আমরা একটু সহজভাবে (কিছুটা) পরিবর্তন পরিবর্ধন করে নেই ঠিক এভাবে,

আজকাল আমরা অনেকেই (ব্যাংক, বীমা, সমিতি অথবা অর্থলগ্নীকারী এনজিও ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে বিভীন্ন ভাবে) বিভীন্নপ্রয়োজনে ঋণ নিয়ে থাকি। আমি আসলে এখানে ঋন বলতে বিভীন্ন ব্যাংক, বীমা, সমিতি থেকে উত্তোলিত লোন/loan, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদিকেই বুঝাচ্ছি,  যা সাধারনত (বেশীরভাগক্ষেত্রেই) সুন্দর সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে  উচ্চাভীলাষ থেকেই অনেক স্বচ্ছল মানুষও নিয়ে থাকে।

এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে নিসাব পরিমান সম্পদের অধিকারি হওয়া সত্বেও কোন ব্যাক্তি যদি অধিক স্বচ্ছলতা অর্জনের প্রত্যাশায় নির্দিষ্ঠ কিংবা দীর্ঘসময়ের জন্য কোন লোন/loan নিয়ে (স্বভাবজাত) ঋনগ্রস্থ হয় তবে কি তার উপরেও যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবেনা?

উত্তর:  এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই আমি আপনাদের (সেই সকল মুসলিম ভাই-বোন যারা স্বেচ্ছায় স্বত:প্রনোদিত হয়ে লাভ অথবা লোভের বশবর্তী হয়ে জেনে বুঝে আমাদের দেশে প্রচলিত ব্যাংক, বীমা, সমিতি, ক্ষুদ্র ঋনদানকারী বিভীন্ন এনজিওপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভীন্ন শর্তে ক্রেডিট কার্ড, হাউজলোন, কার লোন,  ইত্যাদিসহ অন্যান্যভাবে ঋন (লোন/loan) নিয়ে থাকি)তাদের প্রতি একটি প্রশ্ন রেখে আলোচনা শুরু করতে চাই___ “আমি কি নিশ্চিত? এই সকল ঋন/লোন দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতই ইসলামী অর্থব্যাবস্থার (বাইয়’রিবা সংক্রান্ত) মুলনীতিগুলো মেনে আমার সাথে ঋনকার্যক্রমে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে?” ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, না (ইনক্লুডেড মোস্ট অব ছো কল্ড ইসলামী ব্যাংকিং ইনস্টিটিউটসআল্লাহ খুব ভাল জানেন।

* সুতরাং এধরনের (স্বভাব/লোভজাত সৌখিন) ঋনগ্রস্থদের জন্য আলাদাভাবে নিসাবপরিমান সম্পদের মালিক হয়েও যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা তেকে মুক্ত থাকার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুল সঃ ইরশাদ করেছেন: (কৃপনতা ও লোভজনিত কলাকৌশলের কারনে) যে সম্পদের সাথে (অদেয়) যাকাতের সংমিশ্রন ঘটে তা তার মূল সম্পদকে (দুনিয়া ও আখেরাতে) ধ্বংস করে দেবে। –বুখারী

* এছাড়াও আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে কারীমে এরশাদ করেন : তোমরা (মানুষেরা) সম্পদ বৃদ্ধির আশায় যে সুদ ভিত্তিক লেনদেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহর নিকট কোনভাবেই লাভজনক নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে যাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, (তাই বৃদ্ধি পায়) ফলত জাকাত প্রদানকারীগণ (আল্লাহ কাছ থেকে) তার মুনাফাকে দ্বিগুণ করে বাড়ীয়ে নেয়। সূরা রুম-৩৯

*সূরা মোহাম্মাদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা তো এমন লোক যাদেরকে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী খরচ করতে (যাকাত দিতে) আহ্বান জানানো সত্বেও কিছুলোক (বিভীন্নউপায়ে) কৃপণতা অবলম্বন করছে। (সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখার উদ্যেশ্যে যারা) কৃপণতার আশ্রয় নেবে তাদের পরিণাম তারা নিজেরাই (চূড়ান্তভাবে) ক্ষতিগ্রস্থ। সূরা মুহাম্মদ-৩৮

*ইসলামে যাকাত বিধান এর মূলনীতিই হচ্ছে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, সম্পদ যেন কেবল তাদের মধ্যেই (বিভীন্ন কৌশলি উপায়ে, চক্রাকারে) আবর্তন না করে। সূরা হাশর-৭”

* সূরা তাওবায় ইরশাদ হচ্ছে, হে নবী, আপনি তাদের সম্পদ থেকে (হিসেব করে) যাকাত বের করে নিন। তাদেরকে পবিত্র পরিশুদ্ধ করুন। সূরা তাওবা-১০৩

* আল্লাহর রাসূল সঃ থেকে মা আয়েশা রাঃ বর্ননা করেন, আমি রাসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যে সম্পদের সাথে (অনাদায়কৃত) যাকাত এর (দ্রব্য-টাকা-পয়সা-মূল্য) সংমিশ্রন ঘটে তা ব্যাক্তির পুরো সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়। — বোখারী

* এমনকি কোনভাবে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক (হোক সে ঋনগ্রস্থ) তার উপর ওয়াজিবকৃত সম্পদে যাকাত আদৌ রহিত হবে কিনা তার মাসআলায় উপরিউক্ত মূলনীতিসহ আরো কিছু তথ্যও যুক্তির ভিত্তিতে একদল আলেম (সম্পদের বর্তমান অধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়ে) এভাবে মতামত ব্যাক্ত করেছেন যে, তার (লোভ এবং লাভের আশায় যিনি ঋননিয়েছেন) উপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হবেনা।

এই মুহুর্তে ব্যাক্তির অধিকারে যে পরিমান সম্পদ আছে (নিসাবতুল্য হলে) তা থেকে যাকাত বের করে দিতে হবে।

কারন এটা সম্পদের উপর দরিদ্রের হক্ব। ব্যাক্তির কাছে নয়।

* ঋন হচ্ছে ব্যাক্তির উপর ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের যিম্মায় আবশ্যক। পক্ষান্তরে যাকাত হচ্ছে সম্পদের উপর দারিদ্রদের হ্ক্ব।

* ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সাম্যভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে স্পিরিচ্যুয়াল ডেভেলপমেন্টের দৃষ্টকোনথেকে আমল করলে জীবন বাচানোর তাগিদে একান্ত নিরোপায় হয়ে নেয়া ঋন ছাড়া অন্য  (লাভ এবং লোভ প্রত্যাশায় নেয়া) যে কোন ঋনের (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা বিলাস কিংবা লাভজনক বিনিয়োগে ব্যবহৃত) উপর যাকাত দেয়া গুড মুসলিমের আবশ্যিক কর্তব্য।

যারা আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থার নীতিতে বিশ্বাস করে (কর্ম সম্পাদন করবে) তার প্রতিদান দানে আল্লাহই যথেষ্ট। সূরা তালাক্ব-৩

সম্পূরক প্রশ্ন ১২:- বোন Farjana Islam Roshni জানতে চেয়েছিলেন, amar kisu relatives ase tader jonno jante chassilam, jader bari korar moto kisu jomi ase akono sell koreni ba bari banabe kobe sei jomi te tao janena tader jonno jakat kemon hobe ar sona 7.5 vorir niche hole ki jakat dea lagbe abar sei sona pora o hoina amon kisu hole ki kora uchit?

উত্তরপ্রিয় বোন, ক) * ইসলামে যাকাত ব্যাবস্থার মূলনীতিই হল কোন সম্পদ যেন ধনীদের কাছে (বিভীন্নভাবে) কুক্ষিগত না থেকে ধনীগরীব নির্বিশেষে সবাই (সম্পদের চলমান প্রবাহে) উপকৃত হয়। পাশাপাশি নিজের কস্টার্জিত সম্পদে একান্তু নিজের মৌলিক প্রয়োজনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা তার উপর জুলুম এর নীতি অবলম্বন করে তাকে বঞ্চিত করেন না। এটাই আল্লাহ’র সুবিচার।

সুতরাং যে জমি নিজের ব্যবহারের প্রয়োজনে কাজে লাগছেনা এমনকি আদৌ কাজে লাগবে কিনা তাও নিশ্চিত নয় এমনভাবে জমি কিংবা অন্য কিছুর উপর মোটা অংকের টাকা/সম্পদ অকেজো/কুক্ষিগত রাখা যাকাতের সামাজিক মূলনীতির সাথে কিছুতেই যায় না।
* (এমন অব্যবহৃত জমির উপর একটা হাদীসে এসেছে, যে জমি নিজেও আবাদ করবেনা অন্যকেও আবাদ করতে দেয়া হবেনা রাস্ট্রের শাষনকর্তা যেন তা লোকের কাছ থেকে গ্রহন করে নিয়ে যে তাতে আবাদ করে লাভবান হবে এমন কাউকে দিয়ে দেয়।)


* পাশাপাশি আরেকটা মূলনীতি হচ্ছে কোন (নিসাব পরিমান) সম্পদ যদি প্রবৃদ্ধমান হয় তবে তার মূল্যের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।

* আমরা খুব ভাল করেই জানি, আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের পরম আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এটাই যে দেশের যে কোন স্থানে জমি ক্রয় করে রাখলে তা দিনে দিনে দাম বাড়তেই থাকে।

এমতাবস্থায় আপনার ঐ আত্মীয়ের জন্য তাকওয়ার নীতি হবে জমির (লাভজনক ব্যবহারের) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া। আপাততকালীন বর্তমান বাজারমূল্যে হিসাব করে ২.৫% হারে যাকাত দিয়ে দেয়া। তোমরা তোমাদের সম্পদ থেকে যা কিছু (যাকাতসাদাকাহ বাবদ) খরচ করে থাক আল্লাহ তার যথার্থ প্রতিদান তোমাদেরকে দেবেন। সূরা বাক্কারা-২৭২

খ) এককভাবে স্বর্ণ ৭.৫ ভরি হলে সরাসরি যাকাত দিতে হবে। তার চেয়ে কম হলে অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে (যেমন স্বর্ণ+ব্যাংকে গচ্ছিত/নগদ টাকা+অন্য সম্পদ) যদি সমুদয় সম্পদে নিসাব (স্বর্ণের নিসাবে সর্বনিম্ন ২.৮ লাখ টাকা/ রৌপ‌্যের নিসাবে সর্বনিম্ন ৩৮হাজার টাকা) পরিমান হয় তবে তার উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।

* আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা একজন মহিলা তার মেয়েকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল, মেয়ের হাতে স্বর্ণের দুটি ভারি মোটা বালা ছিল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত দাও? মেয়ে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এগুলোর দ্বারা দুটি আগুনের চুড়ি বানিয়ে তোমার হাতে পড়িয়ে দিবেন? মেয়েটি কথা শুনে বালা দুটি খুলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে বলল : এগুলো আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।

* অন্য এক হাদীসে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন তখন আমার হাতে কয়েকটি রূপার আংটি ছিল, তখন তিনি বললেন, এগুলো কি? আমি বললাম, আপনার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য এগুলো তৈরি করেছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত প্রদান কর? আমি বললাম না, তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। –আবু দাউদ

সতর্ক করল ওয়ার্ল্ড ভিশন

দারিদ্রের বিরুদ্ধে ৩০ বছরের অগ্রগতি উল্টে যাবে করোনায়

ফাইল ছবি

চীনের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ লাখ ২৭ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের। 

এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর বিষয়ে বিশ্ব নেতারা এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দারিদ্রের বিরুদ্ধে ৩০ বছরের অগ্রগতি উল্টে যাবে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেছে, শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যাবে। ১৯৯০ সাল থেকে শিশু মৃত্যুর যে হার কমানো সম্ভব হয়েছিল, তা আবারও বাড়তে শুরু করবে। মানবিক সহায়তা প্রদান ঠিক মতো করা না গেলে অনেক খারাপ ইতিহাসের সাক্ষী হতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রধান অ্যান্ড্র মোরলে বলেন, আমরা এখনই এর ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারছি না। তবে বহু দেশ চরম বেকায়দায় পড়বে। ৭০ বছরের ইতিহাসে প্রত্যেক দেশে জরুরি সহায়তা প্রদানের কথা ভাবা হচ্ছে। সে কারণে যারা এই মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এবং পরিস্থিতি উত্তরণে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে, কেবল তাদেরই সাহায্য করার ব্যাপারে ভাবছি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমরা সহায়তা দেব। অন্তত ৭০টি দেশে এই সহায়তা পৌঁছে দেবে আমাদের ৩৭ হাজার স্টাফ এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীরা।


আমেরিকার অর্থনীতির মৃত্যুযাত্রা

গত সপ্তাহেই আমেরিকায় বেকারত্ব ৭০ লাখে পৌঁছেছে। আমরা একটা অর্থনীতির মৃত্যুদৃশ্য দেখছি। আমেরিকার ইতিহাসের এর কাছাকাছিও কোনো নজির নেই। কারণ, সরকারের যা করার ছিল, তা করা হয়নি। নজিরবিহীন সংকটে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দরকার। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্ট এমন এক প্রণোদনা বিল পাস করেছেন, দরকারের তুলনায় তা খুবই সামান্য। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের এটাই প্রথম কারণ।

আসুন একটা ছোট অঙ্ক কষা যাক। বার্ষিক ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন অর্থনীতি। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই হলো ক্ষুদ্র ব্যবসা। ব্যবসাকে মদদ দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে? মাত্র ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এটা হলো সমগ্র অর্থনীতির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রণোদনার যে ভাগটুকু ব্যবসায় মদদ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তা দিয়ে অর্থনীতি মাত্র এক সপ্তাহ চলতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বৃহত্তম সংকটে মাত্র এক সপ্তাহের নিদান? সংকটটা এখানেই।

অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে আছে এক সপ্তাহের অনেক বেশি দিন ধরে। স্বাভাবিকতা ফিরতেও লাগবে কয়েক মাস। তত দিনে অনেক ব্যবসা মার খাবে। ছোট ব্যবসায়ীরাই বেশি। দ্বিতীয়ত, এই প্রণোদনা আস্থা ফেরানোর মতো দ্রুত, ব্যাপক ও সরল ছিল না। তাই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীরা ভাবছেন, কীভাবে শুরু করবেন, কার কাছে হাত পাতবেন। শতবর্ষ আগে কেইনস দেখিয়ে গিয়েছিলেন, মন্দা কাটানোর মূল চাবি হলো আস্থা। সব ঠিক হয়ে যাবে মনে করলে আমরা টাকা মজুত করে কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ে যাব না—মন্দার দুষ্টচক্র তখন ঘুরতে পারবে না। কিন্তু যে সামান্য সহায়তা আছে, কীভাবে তা পাব, তা–ও যদি বুঝতে না পারি…তাহলে সব ভরসাই গেল। দুষ্টচক্র কাজ করা শুরু করবে। এবং এটাই ঘটছে। কেন দুই সপ্তাহেই এক কোটি লোক বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাল? কারণ, অর্থনীতিকে চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট মদদ ছিল না। ফলে মানুষ বিপর্যয় আর গোলকধাঁধায় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা হারাচ্ছে। নিয়োগদাতারা কর্মী ছাঁটাই করছেন। সবার হয়তো তা করা লাগত না, কিন্তু ভরসার অভাবে তাঁরা আর কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না।

এর মধ্যে সংবাদমাধ্যম জোর গলায় বলে যাচ্ছে, প্রত্যেক আমেরিকান ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক পাচ্ছে। সত্য কিন্তু খুবই আলাদা। এর জন্য অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। বাস্তবে ৯০ ভাগ আমেরিকান কিছু পেলেও বাকি ১০ ভাগ সামান্যই পাবে। ব্যবসায়ীদের দিক থেকে আরেকটা অঙ্ক কষা যাক। ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ পরিবার। সবাইকে সমান ভাগ করে দিলে প্রতিটি পরিবার বার্ষিক দেড় লাখ ডলার সৃষ্টি করে। আসলে তো আমেরিকানরা অত ধনী না। মাঝামাঝি আয় বার্ষিক ৬০ হাজার ডলার। কারণ, ধনীরা অর্থনীতির বাকি অর্ধেকের মালিক। ৬০ হাজার ডলার বার্ষিক হলে সপ্তাহে ১ হাজার ১০০ ডলার। এর অর্থ, বহুলবন্দিত অর্থনৈতিক প্রণোদনা আসলে গড়পড়তা মার্কিনিদের এক সপ্তাহের আয়ের সমান। সুতরাং প্রণোদনা এতই ছোট যে তা এক সপ্তাহের ব্যবসা চালানোর মতো। সাধারণ মানুষের বেলায়ও তা এক সপ্তাহের জোগানের বেশি নয়। কিন্তু সেই এক সপ্তাহ তো পার হয়ে গেছে।

এখান থেকেই আসে তৃতীয় প্রশ্নটা। আরও কয়েক সপ্তাহের আগে প্রণোদনার টাকা হাতে আসছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের বেশি। এবং যেসব শর্ত ধরা হয়েছে, অনেকের জন্য এটা অর্থহীন। কে জানে, কীভাবে ওই সব শর্ত পূরণ করে কত দিনে বরাদ্দটা মিলবে? প্রণোদনার ধরনও খুবই অস্পষ্ট। তত দিনে মানুষ ভরসা হারিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হবে। আতঙ্কিতরাই বেকারের খাতায় নাম লেখাচ্ছে।

করোনাভাইরাস আধুনিক অর্থনীতিবিনাশী ঘটনা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—কিছুই এর সমতুল্য নয়। সমাজের ২৫ ভাগ লোক হঠাৎ স্থায়ীভাবে কঠিন বেকারত্বে পতিত হলে কয়েক প্রজন্ম লাগে আগের অবস্থায় ফিরতে। অর্থনীতি ধ্বংস হলে সমাজও থাকবে না, গণতন্ত্রও উবে যাবে। উবে যাবে পরিবার, সম্পর্ক, সজ্জনতা ও আশা। অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাকি সব বিপর্যয়ের জননী।

আর সবই হবে সরকার পর্যাপ্ত সাহায্য করেনি বলে। টাকা নেই কথাটা ঠিক নয়। অর্থ এক সামাজিক রূপকথা। সরকার চাইলে যত দিন দরকার তত দিন অর্থনীতিকে সাহায্য করতে পারে, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত আয় দুটিই নিশ্চিত করতে পারে। প্রতি মাসেই চেক দিতে পারে মানুষকে। এর অর্থ এই নয় যে আমরা আর কারও কাছ থেকে ‘ধার’ করছি। আমরা আমাদেরই ধার দিচ্ছি। অর্থাৎ, সংকট ফুরিয়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আক্ষরিকভাবেই এই ঋণ মওকুফ করে দিতে পারে। সন্দেহ হলে চিন্তা করে দেখুন, সরকারি টাকার মালিক আসলে কে? উত্তর হলো, কেউ না। সরকার নিজের কাছ থেকে ধার নেয় যেহেতু, সেহেতু তা মওকুফও করে দিতে পারে।

না, মুদ্রাস্ফীতি হবে না। বরং যা বলা হলো তা করা না হলে মজুরি কমবে, দ্রব্যমূল্যও পড়ে যাবে। বিষয়টাকে একটা গর্ত ভরাট করার মতো ভাবুন। করোনাভাইরাস অর্থনীতির বুকের ওপর বিরাট গর্ত করেছে। হয় সরকার এটা ভরাট করবে, সুই–সুতা ধার করবে এবং কর্মসংস্থানে থাকা মানুষেরা সেলাই করবে। নাহলে কাপড়ের ছিদ্রের মতো এটা বড় হতেই থাকবে। যখন ছিদ্রটা জোড়া লাগানো হবে, তখন ধারটা সঙ্গে সঙ্গে কাল্পনিক বলে মনে হবে। যে সম্পদ আমরা আগামীর থেকে ধার করব আজকে চলার জন্য, সেটা জরুরি, জীবনদায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। এটা ছাড়া তো আমাদের কোনো আগামীই থাকবে না।

টাকা গণসামগ্রী, এখনই এর ব্যবহার ব্যাপক ও নাটকীয়ভাবে বাড়ানো উচিত। কোনো কোনো সময় আসে, যখন সমাজকে বড় আকারের ঋণ করতে হয়, যার অর্থ আসলে বিরাট আকারের বিনিয়োগ। যদি তা না করে, তাহলে জীবন বলতে যা বুঝি, তা ফেটে পড়বে।

মিডিয়াম.কম থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

Why Moral Education need for our socity.

আমরা পৃথিবীর মানুষ আজ ভালো নেই। করোনাভাইরাসের কারণে যাবতীয় হিসাব নিকাশ উল্টে যেতে বসেছে। মানুষ আজ ঘরবন্দী। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লকডাউনে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হলেও ঘরে ধরে রাখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাচ্ছে না। উল্টো আমরা দেখছি ত্রাণ চুরি, দুর্নীতি, অনিয়ম। কিন্তু কেন? অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু সমস্যা আরও গভীরে। আমাদের উপলব্ধিতে ঘাটতি রয়েছে। সত্যিকার অর্থে মানুষ শুধু নিজের জন্য বাঁচে না; তাকে বাঁচতে হয় অন্যের জন্যও। কিন্তু এই সহজ ও সাধারণ সত্যের সাথে আমরা কতটা পরিচিত?

ক’জন মানুষকে জীবনে মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সদাচরণের চর্চা করতে হয়। এই চর্চার পরিবেশ সমাজে কতটা বিদ্যমান। বিষয়টি এভাবে বলতে হবে যে, একজন শিশু একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু তাকে বড় হতে প্রয়োজন পড়ে একটি সমাজের। শিশু পরিবার থেকে ক্রমশ সামাজিক নানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। সেই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথা স্কুল, কলেজ, বিশ্বাবিদ্যালয়, ক্লাব, সংঘ ইত্যাদিতে নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের চর্চার ব্যবস্থা থাকা চাই।

বাংলাদেশের সমাজিক জীবনে এই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের ঘাটতি দেখছি আমরা। অতীত বলে এই সমাজের মানুষের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মানবিকতার দৃষ্টান্ত। তাছাড়া বাংলাদেশ তথা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। অতিথিপরায়নতাও এই সমাজের ঐতিহ্য। কিন্তু এখন যেন সব বদলে গেছে। মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করছে না। অপরকে ঠকিয়ে নিজে জেতা যে জেতা নয় বরং দীর্ঘদিনের জন্য হেরে যাওয়া- এটা বুঝতে পারছে না মানুষ। মানুষের এই চিন্তা ও আচরনের নেতিবাচক পরিবর্তনের পেছনের কারণ জানা জরুরি। 

অন্য অনেক কারণ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু আমার বিবেচনায় মূল সমস্যা আসলে আমাদের মানুষ তৈরির যে কারখানা রয়েছে গলদ মূলত সেখানেই। মানুষ তৈরির কারখানা মূলত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। মানবসন্তান বা শিশু জন্মের পরপরই কিন্তু পরিপূর্ণ মানুষ নয়। তাকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য একটি দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়। এই যে বেড়ে ওঠা কিংবা মানুষ হয়ে ওঠার সময়টাতেই তার মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের ধারণা এবং চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত না করা গেলে, সে বড় হয়ে উঠবে ঠিকই কিন্তু মানুষ হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। মানুষের মত দেখতে হলেও মানুষ সম্পর্কে এই কথাটি আজকাল খুব বেশি শুনতে পাওয়া যায় ‘মানুষ আর মানুষ নেই, অমানুষ হয়ে গেছে’। এ কথাটিই প্রমাণ করে যে, আমাদের সন্তানেরা বড় হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কতটা মানবিক হয়ে বেড়ে উঠছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এজন্য আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ-ব্যবস্থাপনা, কলাকৌশল ও মূল্যায়ন ব্যবস্থায় সংস্কার অপরিহার্য। কেননা আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে এখন আর নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের না আছে পরিবেশ, না আছে চর্চা। এখন বিদ্যালয়গুলোতে মূলত যা চর্চা করানো হয়; তা হলো পরীক্ষাকেন্দ্রিক মূল্যায়নে অধিক নম্বর তোলার কৌশল চর্চা। মোট কথা বেশি নম্বর পেতে হবে, তা যেকোনো উপায়েই হোক। এখন আর শিখনটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; যতটা পরীক্ষায় অধিক নম্বর প্রাপ্তির বিষয়টি গুরুত্ব পায়। 

শিক্ষার মূল দর্শন হলো মনুষত্বের বিকাশ ও অপরাপর মানবের কল্যানকর বিষয়ের অন্বেষণ এবং আবিষ্কার। আবিষ্কার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেই সকল অবিষ্কারের ব্যবহার এবং এর প্রভাব কতটা অপরাপর মানবের জন্য কতটুকু কল্যাণকর সেই দিকটি উপেক্ষিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর এমনটি হচ্ছে কেন? এর প্রধান কারণ হলো শিশুর বেড়ে ওঠার সময়কাল থেকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের ধারণা প্রদানের অভাব এবং ব্যক্তি জীবনে এগুলোর চর্চা না থাকা। ফলে শিশু থেকে পরিণত বয়সে এসেও তার মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব থেকে যাচ্ছে। সুস্থ ও সুন্দর মানবিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে সহায়ক বিষয়গুলো যুক্ত করার পাশাপাশি সেগুলোর চর্চার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা সম্ভব শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ-ব্যবস্থাপনা ও কৌশল এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে। আর এটা শুরু করার এখনই সময়।

মতামত

উলামায়ে কেরাম ও শাসকদের দরবার

হামিদ মীর

০৪ মে ২০২০, ২১:২৩

উলামায়ে কেরাম ও শাসকদের দরবার – নয়া দিগন্ত

একশক্তিধরশাসকতারসময়েরএকজনবিখ্যাতআলেমেদ্বীনকেতারসরকারেরচিফজাস্টিসবানাতেচাইলেন; কিন্তুওইআলেমতাপ্রত্যাখ্যানকরেন।ফলেতাকেকারাগারেপাঠানোহয়।ওইআলেমেদ্বীনহচ্ছেনইমামআবুহানিফারহ:আরতাকেকারাগারেপাঠানোশাসকেরনামআলমানসুর, যিনিআব্বাসীযুগেরদ্বিতীয়খলিফাছিলেন।ইমামআবুহানিফারহ: শাসকেরদরবারথেকেদূরেথাকারচেষ্টাকরছিলেন।আলমানসুরযখনতাকেচিফজাস্টিসেরপদপ্রস্তাবকরলেন, তখনআবুহানিফারহ: বললেন, নিজেকেপদেরযোগ্যমনেকরিনা।

কথাশুনেখলিফারেগেযান।কারণওইসময়চিফজাস্টিসেরপদমর্যাদাছিলখলিফারনায়েবপর্যায়ের।খলিফাঔদ্ধত্যপূর্ণকণ্ঠেবললেন, তুমিমিথ্যাবলছ।এটাশুনেইমামআবুহানিফারহ: খলিফাকেবললেন, যদিমিথ্যাবাদীহই, তাহলেতোবাস্তবিকইআমিপদেরযোগ্যনই।এরপরইমামআবুহানিফারহ:কেকারাগারেপাঠানোহয়এবংতারছাত্রইমামআবুইউসুফরহ:কেচিফজাস্টিসবানানোহয়।কারাগারেইমামআবুহানিফারহ:-এরওপরনির্যাতনকরাহতো, যাতেতিনিখলিফারনির্দেশমেনেনেন; কিন্তুতিনিতৎকালীনশাসকেরইচ্ছারসামনেমাথানতকরতেঅস্বীকারকরেন।একদিনকারাগারথেকেইতারলাশবেরহয়।বাগদাদেতারনামাজেজানাজায়বহুসংখ্যকমানুষঅংশগ্রহণকরেন।আলমানসুরইমামজাফরসাদেকরহ:কেওজোরজবরদস্তিমূলকতারআনুগত্যকরতেবাধ্যকরেছিলেন।তাকেওগ্রেফতারকরাহয়।কিছুবর্ণনামোতাবেক, আলমানসুরেরনির্দেশক্রমেইমামজাফরসাদেকরহ:কেবিষদেয়াহয়েছিল।ওইযুগেআরোএকজনআলেমেদ্বীনইমামমালেকবিনআনাসরহ: আলমানসুরেরবাধ্যকরণকেমেনেনিতেঅস্বীকারকরেন।মদিনারগভর্নরযখননির্দেশদিলেন, খলিফারআনুগত্যেরশপথগ্রহণকরাসবারওপরওয়াজিব, তখনইমামমালেকরহ: ফতওয়াদিলেন, খলিফারআনুগত্যেজোরপূর্বকবাধ্যকরাজায়েজনয়।ফতওয়াইমামমালেকরহ:-এরঅপরাধহিসেবেগণ্যহলো।সুতরাংঁতাকেগ্রেফতারকরেমদিনায়প্রকাশ্যেবেত্রাঘাতকরাহয়।

যেযুগেইমামআবুহানিফারহ:, ইমামজাফরসাদেকরহ: ইমামমালেকরহ: অত্যাচারীশাসকেরসামনেহককথাবলেছেন, ওইসময়ইএমনকিছুআলেমওছিলেন, যারাতোষামোদেরকারণেখলিফারপছন্দেরব্যক্তিহয়েযান।সমকালীনশাসকেরতোষামোদকারীদরবারিআলেমদেরআজকেউচেনেনা।যদিকারোনামঅমরহয়েথাকে, তাহলেঅত্যাচারীশাসকেরসামনেতারকথাঅমান্যকরারকারণেকারাবন্দীবেত্রাঘাতখাওয়াআলেমদেরনামঅমরহয়েআছে।ওইউলামায়েহকেরধারাকেযারাএগিয়েনিয়েগেছেন, তাদেরমধ্যেইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:শামিলছিলেন।তিনিআব্বাসীখলিফাআলমামুনেরশাসনামলেকিছুদরবারিআলেমেরউপস্থাপিতদর্শনগুলোকেপ্রত্যাখ্যানকরেন।এরমধ্যেএকটিদর্শনএটাওছিলযে, কুরআনপরবর্তীকালেসৃষ্টহওয়াবস্তুগুলোরঅন্তর্ভুক্ত।কিছুআলেমনিজেদেরগুরুত্ববাড়ানোরজন্যদাবিকরেছিলেন,আল্লাহরজ্ঞানমাখলুকবাসৃষ্ট, যাপরবর্তীতেজন্মলাভকরেছে।কিন্তুইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:-এরঅভিমতছিল, কুরআনআল্লাহরজ্ঞান।আরযেমনেকরবেযে, এটাপরবর্তীতেজন্মলাভকরেছে, সেকুফরিকরবে।

আলমামুনদর্শনকেঅস্বীকারকরাকেতারঅবমাননাভাবলেনএবংআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেকারাগারেনিক্ষেপকরলেন।কিছুদিনপরআলমামুনআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেআবারদরবারেতলবকরেন।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: তারসঙ্গীমুহাম্মদবিননুহরহ:কেযখনবেড়িপরিয়েখলিফারকাছেনিয়েযাওয়াহচ্ছিল, তখনখলিফারএককর্মচারীকান্নারতঅবস্থায়ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেবললেন, আজযদিআপনিকুরআনসৃষ্টদর্শনকেমেনেনানেন, তাহলেখলিফানিজহাতেআপনাদেরদুজনেরগর্দানউড়িয়েদেবেন।কথাশুনেআহমদইবনেহাম্বলরহ: দোয়াকরলেন, ওগোমোরপরওয়ারদেগার, যদিতোমারকুরআনঅমাখলুকঅনাদিকালামহয়েথাকে, তাহলেআমাদেরদুজনকেমামুনেরসাথেএকত্রহওয়াথেকেরক্ষাকরো।

আমরাওযেনতাকেনাদেখি, তিনিওযেনআমাদেরদুজনকেনাদেখেন।ওইরাতেইআলমামুনেরমৃত্যুহয়।এরপরতারভাইমুতাসিমবিল্লাহখলিফাহন।তারশাসনামলেমুহাম্মদবিননুহরহ: ইন্তেকালকরলেন।মুতাসিমইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেতারদরবারেতলবকরেদরবারিআলেমদেরসাথেতারবাহাসকরালেন।দরবারিআলেমরাইমামআহমদবিনহাম্বলরহ:-এরযুক্তিদলিলেরসামনেকুপোকাতহয়েগেলেতারাখলিফাকেবললেন, বেয়াদবশুধুআমাদেরনয়, আপনাকেওকাফেরসাব্যস্তকরছে।খলিফাইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:-এরকাপড়খুলেফেলারনির্দেশদেনএবংতারসামনেতাকেবেত্রাঘাতকরাহলো।উপর্যুপরিবেত্রাঘাতেইবনেহাম্বলরহ:-এরদৃঢ়তাস্থিরতামুতাসিমবিল্লাহকেঅস্থিরকরেদিয়েছিল।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: লাগাতারবেত্রাঘাতেএকপর্যায়েঅজ্ঞানহয়েযান।আশঙ্কাছিল, তারজীবনচলেযায়কিনা।জন্যতাকেঅজ্ঞানঅবস্থায়ছেড়েদেয়াহলো।ঘটনাটিছিলরমজানমাসের।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: রোজাছিলেন।তাকেঅর্ধমৃতঅবস্থায়ইসহাকইবনেইবরাহিমেরঘরেনেয়াহয়।জ্ঞানফিরেআসারপরতাকেবলাহলো, আপনারশরীরথেকেরক্তঝরছে।রোজাভেঙেফেলুন।কিন্তুইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: জোহরেরনামাজআদায়করলেনএবংবললেন, হজরতউমরফারুকরা:আহতঅবস্থায়নামাজআদায়করেছেন।আহমদইবনেহাম্বলরহ: সন্ধ্যায়ইফতারকরলেন।অতঃপরওইজল্লøাদদেরক্ষমাকরেদিলেন, যারাবেত্রাঘাতকরেছিল।তবেওইসবপথহারাআলেমকেক্ষমাকরলেননা, যারাইসলামেরনামেবিভ্রান্তিছড়ায়।তারনামাজেজানাজায়কয়েকলাখমানুষশরিকহনএবংতারজানাজাদেখেকয়েকহাজারখ্রিষ্টানমুসলমানহয়েযায়।জানাজাহয়েছিল১২রবিউলআওয়াল

মতামত

উলামায়ে কেরাম ও শাসকদের দরবার

হামিদ মীর

০৪ মে ২০২০, ২১:২৩

উলামায়ে কেরাম ও শাসকদের দরবার – নয়া দিগন্ত

একশক্তিধরশাসকতারসময়েরএকজনবিখ্যাতআলেমেদ্বীনকেতারসরকারেরচিফজাস্টিসবানাতেচাইলেন; কিন্তুওইআলেমতাপ্রত্যাখ্যানকরেন।ফলেতাকেকারাগারেপাঠানোহয়।ওইআলেমেদ্বীনহচ্ছেনইমামআবুহানিফারহ:আরতাকেকারাগারেপাঠানোশাসকেরনামআলমানসুর, যিনিআব্বাসীযুগেরদ্বিতীয়খলিফাছিলেন।ইমামআবুহানিফারহ: শাসকেরদরবারথেকেদূরেথাকারচেষ্টাকরছিলেন।আলমানসুরযখনতাকেচিফজাস্টিসেরপদপ্রস্তাবকরলেন, তখনআবুহানিফারহ: বললেন, নিজেকেপদেরযোগ্যমনেকরিনা।

কথাশুনেখলিফারেগেযান।কারণওইসময়চিফজাস্টিসেরপদমর্যাদাছিলখলিফারনায়েবপর্যায়ের।খলিফাঔদ্ধত্যপূর্ণকণ্ঠেবললেন, তুমিমিথ্যাবলছ।এটাশুনেইমামআবুহানিফারহ: খলিফাকেবললেন, যদিমিথ্যাবাদীহই, তাহলেতোবাস্তবিকইআমিপদেরযোগ্যনই।এরপরইমামআবুহানিফারহ:কেকারাগারেপাঠানোহয়এবংতারছাত্রইমামআবুইউসুফরহ:কেচিফজাস্টিসবানানোহয়।কারাগারেইমামআবুহানিফারহ:-এরওপরনির্যাতনকরাহতো, যাতেতিনিখলিফারনির্দেশমেনেনেন; কিন্তুতিনিতৎকালীনশাসকেরইচ্ছারসামনেমাথানতকরতেঅস্বীকারকরেন।একদিনকারাগারথেকেইতারলাশবেরহয়।বাগদাদেতারনামাজেজানাজায়বহুসংখ্যকমানুষঅংশগ্রহণকরেন।আলমানসুরইমামজাফরসাদেকরহ:কেওজোরজবরদস্তিমূলকতারআনুগত্যকরতেবাধ্যকরেছিলেন।তাকেওগ্রেফতারকরাহয়।কিছুবর্ণনামোতাবেক, আলমানসুরেরনির্দেশক্রমেইমামজাফরসাদেকরহ:কেবিষদেয়াহয়েছিল।ওইযুগেআরোএকজনআলেমেদ্বীনইমামমালেকবিনআনাসরহ: আলমানসুরেরবাধ্যকরণকেমেনেনিতেঅস্বীকারকরেন।মদিনারগভর্নরযখননির্দেশদিলেন, খলিফারআনুগত্যেরশপথগ্রহণকরাসবারওপরওয়াজিব, তখনইমামমালেকরহ: ফতওয়াদিলেন, খলিফারআনুগত্যেজোরপূর্বকবাধ্যকরাজায়েজনয়।ফতওয়াইমামমালেকরহ:-এরঅপরাধহিসেবেগণ্যহলো।সুতরাংঁতাকেগ্রেফতারকরেমদিনায়প্রকাশ্যেবেত্রাঘাতকরাহয়।

যেযুগেইমামআবুহানিফারহ:, ইমামজাফরসাদেকরহ: ইমামমালেকরহ: অত্যাচারীশাসকেরসামনেহককথাবলেছেন, ওইসময়ইএমনকিছুআলেমওছিলেন, যারাতোষামোদেরকারণেখলিফারপছন্দেরব্যক্তিহয়েযান।সমকালীনশাসকেরতোষামোদকারীদরবারিআলেমদেরআজকেউচেনেনা।যদিকারোনামঅমরহয়েথাকে, তাহলেঅত্যাচারীশাসকেরসামনেতারকথাঅমান্যকরারকারণেকারাবন্দীবেত্রাঘাতখাওয়াআলেমদেরনামঅমরহয়েআছে।ওইউলামায়েহকেরধারাকেযারাএগিয়েনিয়েগেছেন, তাদেরমধ্যেইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:শামিলছিলেন।তিনিআব্বাসীখলিফাআলমামুনেরশাসনামলেকিছুদরবারিআলেমেরউপস্থাপিতদর্শনগুলোকেপ্রত্যাখ্যানকরেন।এরমধ্যেএকটিদর্শনএটাওছিলযে, কুরআনপরবর্তীকালেসৃষ্টহওয়াবস্তুগুলোরঅন্তর্ভুক্ত।কিছুআলেমনিজেদেরগুরুত্ববাড়ানোরজন্যদাবিকরেছিলেন, আল্লাহরজ্ঞানমাখলুকবাসৃষ্ট, যাপরবর্তীতেজন্মলাভকরেছে।কিন্তুইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:-এরঅভিমতছিল, কুরআনআল্লাহরজ্ঞান।আরযেমনেকরবেযে, এটাপরবর্তীতেজন্মলাভকরেছে, সেকুফরিকরবে।

আলমামুনদর্শনকেঅস্বীকারকরাকেতারঅবমাননাভাবলেনএবংআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেকারাগারেনিক্ষেপকরলেন।কিছুদিনপরআলমামুনআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেআবারদরবারেতলবকরেন।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: তারসঙ্গীমুহাম্মদবিননুহরহ:কেযখনবেড়িপরিয়েখলিফারকাছেনিয়েযাওয়াহচ্ছিল, তখনখলিফারএককর্মচারীকান্নারতঅবস্থায়ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেবললেন, আজযদিআপনিকুরআনসৃষ্টদর্শনকেমেনেনানেন, তাহলেখলিফানিজহাতেআপনাদেরদুজনেরগর্দানউড়িয়েদেবেন।কথাশুনেআহমদইবনেহাম্বলরহ: দোয়াকরলেন, ওগোমোরপরওয়ারদেগার, যদিতোমারকুরআনঅমাখলুকঅনাদিকালামহয়েথাকে, তাহলেআমাদেরদুজনকেমামুনেরসাথেএকত্রহওয়াথেকেরক্ষাকরো।

আমরাওযেনতাকেনাদেখি, তিনিওযেনআমাদেরদুজনকেনাদেখেন।ওইরাতেইআলমামুনেরমৃত্যুহয়।এরপরতারভাইমুতাসিমবিল্লাহখলিফাহন।তারশাসনামলেমুহাম্মদবিননুহরহ: ইন্তেকালকরলেন।মুতাসিমইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:কেতারদরবারেতলবকরেদরবারিআলেমদেরসাথেতারবাহাসকরালেন।দরবারিআলেমরাইমামআহমদবিনহাম্বলরহ:-এরযুক্তিদলিলেরসামনেকুপোকাতহয়েগেলেতারাখলিফাকেবললেন, বেয়াদবশুধুআমাদেরনয়, আপনাকেওকাফেরসাব্যস্তকরছে।খলিফাইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ:-এরকাপড়খুলেফেলারনির্দেশদেনএবংতারসামনেতাকেবেত্রাঘাতকরাহলো।উপর্যুপরিবেত্রাঘাতেইবনেহাম্বলরহ:-এরদৃঢ়তাস্থিরতামুতাসিমবিল্লাহকেঅস্থিরকরেদিয়েছিল।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: লাগাতারবেত্রাঘাতেএকপর্যায়েঅজ্ঞানহয়েযান।আশঙ্কাছিল, তারজীবনচলেযায়কিনা।জন্যতাকেঅজ্ঞানঅবস্থায়ছেড়েদেয়াহলো।ঘটনাটিছিলরমজানমাসের।ইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: রোজাছিলেন।তাকেঅর্ধমৃতঅবস্থায়ইসহাকইবনেইবরাহিমেরঘরেনেয়াহয়।জ্ঞানফিরেআসারপরতাকেবলাহলো, আপনারশরীরথেকেরক্তঝরছে।রোজাভেঙেফেলুন।কিন্তুইমামআহমদইবনেহাম্বলরহ: জোহরেরনামাজআদায়করলেনএবংবললেন, হজরতউমরফারুকরা:আহতঅবস্থায়নামাজআদায়করেছেন।আহমদইবনেহাম্বলরহ: সন্ধ্যায়ইফতারকরলেন।অতঃপরওইজল্লøাদদেরক্ষমাকরেদিলেন, যারাবেত্রাঘাতকরেছিল।তবেওইসবপথহারাআলেমকেক্ষমাকরলেননা, যারাইসলামেরনামেবিভ্রান্তিছড়ায়।তারনামাজেজানাজায়কয়েকলাখমানুষশরিকহনএবংতারজানাজাদেখেকয়েকহাজারখ্রিষ্টানমুসলমানহয়েযায়।জানাজাহয়েছিল১২রবিউলআওয়াল

২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন হবে .%

বণিক বার্তা ডেস্ক

মে ১৫, ২০২০

১৯৩০ সালের মহামন্দার পর চলতি বছর সবচেয়ে বড় সংকোচনের মুখে পড়তে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। খবর এপি।

জাতিসংঘের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিড-১৯-এর সংক্রমণ এবং এর প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অভাবনীয় সংকোচন ঘটবে। আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন কমবে প্রায় ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের, মুছে যাবে গত চার বছরের প্রায় সব অর্জন। অথচ এর আগে জানুয়ারিতে দেয়া জাতিসংঘের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু এর পরই শুরু হয়ে যায় বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, যা পাল্টে দেয় পুরো প্রেক্ষাপট।

জাতিসংঘের প্রধান অর্থনীতিবিদ এলিয়ট হ্যারিস বলেন, জানুয়ারির পর থেকেই বৈশ্বিক অর্থনীতির চিত্র আমূলে পাল্টে গেছে। মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর আরোপিত বহুবিস্তৃত বিধিনিষেধ এবং বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তায় ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে বৈশ্বিক অর্থনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। সত্যি বলতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা ভয়াবহ মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি। মূলত ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আর কখনই দেখা যায়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৯০ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের লকডাউনের আওতায় রয়েছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সরবরাহ শৃঙ্খল, কমে গেছে ভোক্তা চাহিদা এবং চাকরি হারাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। তবে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যদি দ্বিতীয় ধাপে ফের ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয়। একই সঙ্গে লকডাউন পদক্ষেপ যদি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কার্যকর থাকে, তাহলে এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন ৪ দশমিক ৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাস বলছে, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু এক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী বছর উন্নত দেশগুলোয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নতুন সংক্রমণের ধাক্কা এবং তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত প্রলম্বিত লকডাউন।

এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সংকোচন হতে পারে ১৫ শতাংশ। এর মূলে রয়েছে বিশ্বব্যাপী চাহিদার পতন ও বাধাগ্রস্ত সরবরাহ শৃঙ্খল। ফলে সার্বিকভাবে এ বৈশ্বিক মহামারী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাশপাাশি দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধি করছে। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করতে হতে পারে ৩ কোটি ৪৩ লাখ মানুষকে, যার ৫৬ শতাংশই আফ্রিকাবাসী।


স্মার্ট জাতি গঠনে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষা

. মুনাজ আহমেদ নূর

১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ | পড়া যাবে মিনিটে

প্রিন্ট

অ- অ অ+

বিশ্বের অনেক দেশই এখন স্মার্ট সিটির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও হাতে নেওয়া হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এই সিটির প্রকল্প। এই স্মার্ট সিটির প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দাদের আবশ্যিকভাবেই স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সে জন্য প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের শিক্ষায়। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে আসতে হবে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায়। প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়াও স্মার্ট সিটি গঠন করা যাবে, তবে সেটা টেকসই হবে না। কারণ ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে থাকা মানুষ কোনো না কোনো সময় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বা সেটি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠবে না কখনো।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা খারাপ অবস্থায় না থাকলেও এটা দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের উপযোগী। তৃতীয় ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী হয়ে এটা এখনো গড়ে ওঠেনি। যদি চতুর্দশ শতকের জার্মান ক্লাসরুমগুলো দেখি তাহলে দেখব, একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা তাঁর সামনে বসে লেকচার শুনছে এবং পরে তা মুখস্থ করছে। আমাদের আজকের ক্লাসরুমগুলোরও একই অবস্থা। এর থেকে আমরা এখনো বেরোতে পারিনি। প্রযুক্তিগত কিছু সংযোজন হলেও শিক্ষাদান পদ্ধতিতে খুব একটা পরিবর্তন এখনো আসেনি। আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ এই শিক্ষাব্যবস্থাকেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি করা। কিভাবে সেটি করা যাবে, তা-ই নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। গভীর মনোযোগ দিতে হবে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষায় রূপান্তরে।

১৯৮৯ সালে ইউনেসকো একটি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় চারটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো জানার জন্য শিক্ষা বা শিখন, দ্বিতীয়টি হলো কাজের জন্য শিক্ষা বা শিখন, তৃতীয়টি হচ্ছে মিলেমিশে বসবাস করার জন্য শিক্ষা বা শিখন এবং চতুর্থটি হচ্ছে উত্কর্ষ সাধন, বিকাশ ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা অর্জনের জন্য শিক্ষা বা শিখন।

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ইউনেসকোর প্রথম দুটি উদ্দেশ্য থাকলেও মিলেমিশে বসবাস বা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা অর্জনের জন্য যে শিক্ষা বা শিখন তা অনেকটাই অনুপস্থিত। প্রকৃত নাগরিক গড়তে, মানবিক স্মার্ট মানুষ গড়তে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দিকে জোর দিতে হবে। অথচ সেটিই এখনো পারছি না আমরা।

বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় ইনস্ট্রাকটিজম, কনস্ট্রাকটিজম ও কানেকটিভিজম—এই তিন ধরনের ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আমাদের কনস্ট্রাকটিজমে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এটাকে আমরা বলছি প্রজেক্ট, প্রবলেম ও এক্সপিরিয়েন্স বেইসড লার্নিং।

আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান পৃথিবীতে যে জ্ঞান আছে, সেই জ্ঞানকে প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে নতুন করে উৎপাদনের চেষ্টা করতে পারি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সমাজে চলার নিয়ম, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং অন্যের কাছে তা স্থানান্তর করতে শিখবে। এই পদ্ধতিকেই আমরা বলছি জ্ঞানের পুনরুৎপাদন বা কনস্ট্রাকটিজম। এখানে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে করতে শেখে। শিক্ষক এখানে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন।

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে জ্ঞানের স্থানান্তর। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্য জ্ঞানের স্থানান্তর অত্যাবশ্যক, তবে জ্ঞানের পুনরুৎপাদন করতে পারলে শিখন অনেক সহজ হয়ে যায়। অনেক দেশই এরই মধ্যে এই পদ্ধতিগুলোকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও আমরা এখনো এর থেকে দূরে আছি। ইনস্ট্রাকটিজম পদ্ধতিতে শিক্ষক ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লেকচার প্রদান করেন; এখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শেখে।

আর কানেকটিভিজম হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ বা প্রদান। এই নেটওয়ার্কটা ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ক হতে পারে, আবার ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কও হতে পারে।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ইনস্ট্রাকটিজমনির্ভর। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। আমরা সবাই এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছি। এখানে কোলাবরেশন, পার্সোনালাইজ লার্নিং ও ডিফারেনশিয়েটেড লার্নিংয়ের সুযোগ নেই। এটা অনেক পুরনো পদ্ধতি। এই পদ্ধতি দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের পরীক্ষিত কোনো বিকল্প পদ্ধতির দিকে যেতে হবে। আর সেই পদ্ধতি হতে পারে স্মার্ট শিক্ষা। তার জন্য প্রয়োজন হবে স্মার্ট ক্লাসরুম।

এখন মৌলিক শিক্ষাকে যদি স্মার্ট করতে হয় তাহলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কলা ও গণিতের শিক্ষাটাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেওয়া যেতে পারে। সেটা রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কিংবা প্রগ্রামিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ জন শিক্ষার্থীকে যদি একজন শিক্ষকের মাধ্যমে একটি ক্লাসরুমে শিক্ষা প্রদান করা হয় তাহলে তার শিক্ষার মান এক রকম। তাকে যদি মাস্টারিং পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হয় তাহলে সে একটু বেশি শিখেছে। তারপর ওয়ান টু ওয়ান বা টিউটরিং পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হলে সেখানে ফল আরো ভালো হয়। আমাদের ক্লাসরুমগুলো স্মার্ট করতে হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে আমরা ওয়ান টু ওয়ান, মাস্টারিং ও টিউটরিয়াল লার্নিং টেকনোলজির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারব।

আমাদের শিক্ষার্থীদের টেকনোলজির মাধ্যমে ডিফারেনশিয়েটেড লার্নিং দেওয়া হলে ফল অনেক ভালো হবে। শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং তারা শিখতে ভালোবাসবে। ব্লন্ডেড লার্নিংয়ের মাধ্যমে এটা প্রদান করা যেতে পারে। এখানে ফেস টু ফেসও থাকবে আবার অনলাইনও থাকবে। এই ব্লন্ডেড লার্নিং দিতে হবে ফ্লিপড ক্লাসরুমের মাধ্যমে, যেখানে ভিডিও লেকচার বা শিক্ষক যা পড়াতে চান, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসার আগেই কোর্স শিক্ষক তাদের দিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে আসার আগে এগুলো দেখে আসবে। ক্লাসরুমে এসে সমস্যা সমাধান, কোলাবরেশন ও এনগেজমেন্ট করবে। তারপর বাসায় গিয়ে সেই রিফ্লেকশন করবে সে আসলে কতটুকু শিখল। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিতে আমরা এখনো এই ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আসতে পারিনি।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষায় পরিণত করতে নিচের প্রস্তাবটি কাজে লাগানো যেতে পারে :

স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউডনির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হবে না। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে—প্রথমত স্কুল ইন ক্লাউড, দ্বিতীয়ত কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।

আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আবার আমাদের শিক্ষার্থীরা যেকোনো দুর্যোগকালে এই ক্লাউড ব্যবহার করে ঘরে বসে ক্লাস করতে পারবে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে সারা দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে কিছুটা সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বা ক্লাস থেকে দূরে রয়েছে। যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। আর যদি আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে চাই অথবা আমাদের সমাজকে স্মার্ট করতে চাই তাহলে শুধু তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করলে হবে না। আমরা সমাজে কিভাবে মিলেমিশে বসবাস করব, কিভাবে উত্কর্ষ সাধন ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ তৈরি করব, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

২০২১ সালেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অসম্ভবের আশঙ্কা আইএমএফ প্রধানের

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি পুনরুদ্ধারে পূর্বানুমানের চেয়েও অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। গতকাল সোমবার (১৮ মে) এক সাক্ষাৎকারে এ আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

ক্রিস্টালিনা বলেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক জিডিপি সংকোচনের হার তিন শতাংশ পূর্বাভাস পুনর্বিবেচনা করছে আইএমএফ। সেক্ষেত্রে পূর্বাভাস সংশোধিত হলে ২০২১ সালে আংশিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হওয়ার ধারণাও পরিবর্তিত হবে।

তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্ব থেকে পাওয়া তথ্য পূর্বানুমানের চেয়েও বাজে পূর্বাভাস দিচ্ছে। ফলে অবশ্যই এই সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে আরও বেশি সময় লেগে যাবে। আইএমএফ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময়কালে ঋণের উচ্চমাত্রা, বর্ধিত ঘাটতি, বেকারত্ব, দেউলিয়াত্ব, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং বৈষম্যের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছে।

উল্লেখ্য, আগামী জুনে বৈশ্বিক অর্থনীতির নতুন পূর্বাভাস প্রকাশ করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।


বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত ফিতরা

. ইকবাল কবির মোহন   

২৩ মে, ২০২০ ০০:০০ | পড়া যাবে ৪ মিনিটে

প্রিন্ট

অ- অ অ+

জাকাতের আর্থসামাজিক গুরুত্ব

জাকাত গরিবের হক হিসেবে আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। জাকাত দেওয়া ফরজ। জাকাত না দিলে বা তা অস্বীকার করলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। আর জাকাত দিলে মানুষ শুধু তার সম্পদের পবিত্রতা ও বৃদ্ধিই অর্জন করবে না, এতে তার পরকালীন মুক্তির পথও সুগম হবে। এ ছাড়া জাকাত সামাজিক জীবন ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে। জাকাত ধনীদের পরিশুদ্ধ করে। জাকাত দারিদ্র্য দূর করে। জাকাত উৎপাদন বৃদ্ধি করে। জাকাত গরিব, দুঃখী ও অভাবী মানুষের মধ্যে বণ্টিত হলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে এসব লোকের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা পূরণের জন্য বৃদ্ধি পায় উৎপাদন ও জোগান। এতে চাহিদা, উৎপাদন ও মুনাফাও বেড়ে যায়। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়। বেড়ে যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। জাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে। ফলে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীভূত হয়। জাকাত ধনীদের সম্পদকে গরিবদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। ফলে সম্পদ শুধু ধনীদের হাতেই আটকে থাকে না। জাকাত সমাজে শান্তি আনয়ন করে। জাকাতের ওপর অর্থনীতির যে ভিত তৈরি হয় তাতে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে যায়। সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে সম্পদ বণ্টিত হওয়ার ফলে সমাজে থাকে না কোনো বিরোধ। এতে সমাজে আসে শান্তি ও নিরাপত্তা। একটি স্থিতিশীল সমাজ ও টেকসই অর্থনীতি পরিগঠনে তাই জাকাতের ভূমিকা অনন্য।

ফিতরার পরিচয়

ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা সাহেবে নিসাবের তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। যিনি সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক থাকবেন, তিনিই সাহেবে নিসাব।

ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায়। অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনেও ফিতরা দেওয়া যায়। বেশির ভাগ সাহাবায়ে কেরাম খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন। ইবনে খুদামা (রা.) আবু মিজলাজের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-কে বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন প্রাচুর্য দিয়েছেন আর গম যেহেতু খেজুরের চেয়ে উত্তম, তবু আপনি খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করছেন কেন? জবাবে তিনি বলেছেন, সাহাবিরা যে পথে চলেছেন, আমিও সেই পথে চলতে পছন্দ করি। তখন খেজুর অপেক্ষা গম ও আটার দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও সাহাবিরা খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় পছন্দ করতেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.)-এর জামানায় আমরা ফিতরা দিতাম এক সা খাদ্যবস্তু। এক সা বলতে প্রায় সাড়ে তিন কেজি খাদ্যবস্তু বোঝায়। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব বা কিশমিশ বা মোনাক্কা, পনির ও খেজুর। মহানবী (সা.)-এর জামানায় মদিনায় গমের প্রচলন কম ছিল। পরবর্তী সময়ে গমের প্রচলন হলে হজরত মুয়াবিয়া ও উমর (রা.)-এর নির্দেশে গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের বিধান চালু করা হয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সদকাতুল ফিতর যেকোনো খাদ্যবস্তু এক সা বলে মত দিয়েছেন। ইমাম মালিক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সদকাতুল ফিতর যেকোনো খাদ্যবস্তু এক সা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁরা অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করাকে উত্তম বলে মত দিয়েছেন। অন্য ইমামরাও বস্তুগুলোর মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতরা আদায় করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘যা দ্বারা আদায় করলে গরিবের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা।’

ফকিহদের মতে, যেখানে যা প্রধান খাদ্য, ফিতরা তার দ্বারা আদায় করা শ্রেয়। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে মুজতাহিদ ইমামরা বলেছেন এভাবে, যেসব খাদ্যবস্তু সহজে সংরক্ষণযোগ্য, বিনিময়যোগ্য এবং যার বাজারমূল্য স্থিতিশীল, সেসব খাদ্যবস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়।

এখানে উল্লেখ্য, উল্লিখিত খাদ্যবস্তু বিভিন্ন দামের রয়েছে। তাই উত্তম হলো সেই খাদ্যবস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করা উচিত, যেটি সর্বোচ্চ মূল্যের। ধনীদের সর্বোচ্চ এবং সাধারণ লোকদের মাঝামাঝি মূল্যের খাদ্যবস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা শ্রেয়।

লেখক : সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

সলামে সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি

শাহ্ আব্দুল হান্নান

২১ মে ২০২০, ২১:৩২

ইসলামে সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি – ছবি : নয়া দিগন্ত

ইসলামেসম্পদবণ্টনেরনীতিমালামহাগ্রন্থআলকুরআনেইদেয়াআছে।আলকুরআনেরসূরাহাশরেবলাহয়েছে, ‘কাইলাইয়াকুনাদুলাতানবাইনালআগনিয়ায়েমিনকুম’ (যেনসম্পদকেবলধনীদেরমধ্যেআবর্তিতনাহয়)আল্লাহরএইঘোষণারপরিপ্রেক্ষিতহচ্ছেমদিনায়ইহুদিবনিনজিরগোত্রেরসাথেদ্বন্দ্বেরপরতারামদিনাত্যাগকরেচলেযায়এবংতাদেরপরিত্যক্তমালসম্পদইসলামীরাষ্ট্রেরঅধিকারভুক্তহয়।ইসলামেরপরিভাষায়এইসম্পদকেফাইবলেঅর্থাৎযেসম্পদইসলামীরাষ্ট্রবিনাযুদ্ধেহস্তগতকরেছে।বনিনজিরথেকেপাওয়াএইফাইসম্পদবণ্টনেরব্যাপারেআল্লাহতায়ালাবলেন, এটাহচ্ছেআল্লাহতায়ালারজন্য, রাসূলেরজন্য, নিকটবর্তীআত্মীয়স্বজনেরজন্য, ইয়াতিমমিসকিনেরজন্যএবংসম্বলহীনপথিকদেরজন্য; যেনসম্পদতোমাদেরমধ্যেযারাবিত্তবানকেবলতাদেরমধ্যেইআবর্তিতনাহয়।’ (সূরাহাশরআয়াতনং)এখানেলিল্লাহ (আল্লাহরজন্য) বলতেবুঝায়রাষ্ট্রেরসবকাজকর্মেরজন্য।এইলিল্লাহখাতথেকেরাষ্ট্রেরযাকিছুকরাদরকারতাকরতেপারবে।

আয়াতেইসলামেরবণ্টননীতিস্পষ্টভাবেদেয়াহয়েছে।ইসলামীরাষ্ট্রেরবণ্টননীতিরভিত্তিহচ্ছেআয়াত।এখনপ্রশ্নহচ্ছেরাষ্ট্রবণ্টনেরক্ষেত্রেকীকীকরবে? প্রথমতরাষ্ট্ররাষ্ট্রীয়সম্পদদ্বারাঅসহায়দেরব্যবস্থাকরবে, তাদেরভাতাদেবে।দেশেঅনেকবেকারথাকে।আমাদেরদেশেঅনেকবেকাররয়েছে।তাদেরকর্মসংস্থাননাহলেএইসম্পদথেকেবেকারভাতাদিতেহবে।

Ad by Valueimpression

এইআয়াতেরদাবিযে, শ্রমিকদেরমজুরিআরোভালোহবেযাতেব্যাপকবণ্টনহয়।বর্তমানেশ্রমিকদেরবেতনঅনেককম।কিন্তুসম্পদবণ্টনেরনীতিরদাবিযে, লাভকমহলেওশ্রমিকদেরমজুরিউন্নতমানেরদিতেহবে।ব্যাপারেরসূলেরনির্দেশআছে, তিনিবলেছেনযে, তোমরাযাখাও, শ্রমিকদেরতাখাওয়াবে, তোমরাযাপরোতাপরতেদেবে।থেকেবুঝাযায়, রাসূলএটাইচাইতেনযে, শ্রমিকদেরজীবনধারণেরমানযেনউন্নতহয়।শ্রমিকমালিকেরসম্পদভিন্নহতেপারে, কিন্তুজীবনধারণেরমানশ্রমিকদেরন্যায্যভালোহতেহবে, এটিইরাসূলেরশিক্ষা।সুতরাংশ্রমিকদেরঅধিকারবাড়াতেহবে, তাহলেঅতিধনীকমহবেএবংসম্পদেরপার্থক্যকমেআসবে।এইআয়াতেরএটাওদাবিযে, মুনাফাখোরিচলবেনা।মালেরঅতিরিক্তদামনেয়াযাবেনা।মজুতদারিকরাযাবেনা।রাষ্ট্রএইসববিষয়দেখবে।বর্তমানেযেসম্পদেরবৈষম্যআছেতাকমিয়েআনাএইআয়াতেরদাবি।নানাভাবেসরকারকেব্যবসায়নিয়ন্ত্রণকরতেহবে, যাতেসম্পদকিছুলোকেরহাতেপুঞ্জীভূতনাহয়।ব্যবসারদিকেদেখভালঅনেকবেশিকরতেহবে।বর্তমানবৈষম্যকমানোরজন্যসরকারআগেরআয়েরওহিসাবনিতেপারেযে, তাবৈধভাবেকরাহয়েছিলকিনা।যদিদেখাযায়কিছুব্যবসায়ীরসম্পদঅবৈধভাবেকরাহয়েছে, মুনাফাখোরিকরাহয়েছেতাহলেসরকারবাজেয়াপ্তকরতেপারবে।এটাঅবশ্যবারবারকরতেহবেনা।যখননতুনকরেএইআয়াতেরআলোকেকোনোরাষ্ট্রসম্পদপূর্ণবণ্টনেরচিন্তাকরেতখনএকবারইতাকরতেহবে।বারবারকরতেহবেনা।

শেষেআমিবলবযে, ইসলামীঅর্থনীতিরতিনচারটিপ্রধানমূলনীতিরমধ্যেএকটিহচ্ছেসুদনিষিদ্ধকরা, একটিহচ্ছেজাকাতপ্রবর্তনকরা, একটিহচ্ছেকল্যাণরাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠাকরা, যেরাষ্ট্রেঅসহায়দেরদায়িত্বসরকারনেয়, একটিহচ্ছেসম্পদেরপূর্ণবণ্টনকরা।যেটাএইআয়াতেরদাবি।যেটাআমরাউপরেকয়েকবারউল্লেখকরেছি।আশাকরি, ইসলামীসংগঠনগুলোসূরাহাশরেরএইনীতিউপলব্ধিকরবেএবংবাস্তবায়নেরচিন্তাকরবে।আমিযাবলেছি, সমাধানতানাহতেপারে।সমাধানঅন্যকিছুহতেপারে।আমিইসলামীচিন্তাবিদঅর্থনীতিবিদদেরঅনুরোধকরিযেনতারাএইবিষয়নিয়েগভীরভাবেচিন্তাকরেনএবংমুসলিমবিশ্বেসবদেশেএটাকেকার্যকরকরারচেষ্টাকরেন।

লেখক : সাবেকসচিববাংলাদেশসরকার

মাদকের টাকা না পেয়ে গলায় ফাঁস

 প্রকাশ৯ ঘণ্টা আগে   

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রতীকী ছবি

মাদকদ্রব্যকেনারটাকানাপেয়েবাবারওপরঅভিমানকরেআত্মহত্যাকরেছেসোহানহোসেন (১৭) নামেএককিশোর।শুক্রবারঈশ্বরদীপৌরএলাকারস্কুলপাড়ায়ঘটনাঘটে।সোহানহোসেনওইএলাকারবাবুহোসেনেরছেলে।

নিহতেরপরিবারজানায়, সোহানেরমাবিদেশরয়েছেন।তিনবছরধরেস্কুলপাড়াএলাকায়বাবাভাইভাবিদেরসঙ্গেভাড়াবাসায়বসবাসকরেসোহান।শুক্রবারসকালেবাবাবাবুহোসেনেরকাছেমাদকদ্রব্যকেনারজন্যকয়েকশটাকাচায়সে।বাবাটাকানাদেয়ায়সোহানঘরেরমধ্যেআঁড়ারসঙ্গেগলায়ফাঁসদিয়েআত্মহত্যাকরে।খবরপেয়েপুলিশসোহানেরমরদেহউদ্ধারকরে।পরেস্থানীয়পৌরসভারকাউন্সিলরগণ্যমান্যব্যক্তিদেরমাধ্যমেলাশময়নাতদন্তছাড়াইদাফনকরারঅনুমতিনেয়পরিবারেরলোকজন।

ঈশ্বরদীথানারওসিবাহাউদ্দীনফারুকীজানান, ঘটনায়থানায়একটিঅপমৃত্যু (ইউডি) মামলাদায়েরকরাহয়েছে।

দেশে প্রতি তরুণে একজনের বেশি কর্মহীন: আইএলও

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৭, ২০২০

শ্রমবাজারের ওপর কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ তরুণ কর্মজীবীদের বিষয়ে উদ্বেগজনক চিত্র প্রকাশ করেছে।

আইএলও জানিয়েছে, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি ছয় জনে একজন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আর যারা এখনো কাজ করছেন তাদের কর্মঘণ্টা ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। 

‘আইএলও মনিটর : কভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ এর চতুর্থ সংস্করণের তথ্য অনুযায়ী, মহামারী দুনিয়ার তরুণদের প্রতি বৈষম্যমূলকভাবে আঘাত হানছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ধারাবাহিকভাবে ও দ্রুতগতিতে বাড়ছে, আর এক্ষেত্রে তরুণদের চেয়ে তরুণীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

চলমান মহামারীতে তরুণরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনভাবে- একদিকে তারা কাজ হারাচ্ছেন অন্যদিকে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। এটা আবার তাদের চাকরির বাজারে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বর্তমানে অন্য যে কোনো বয়সভিত্তিক গ্রুপের চেয়ে বেশি। দুনিয়াজুড়ে এখন প্রায় ২৭ কোটি তরুণ কর্মহীন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত।

আইএলও’র মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, কভিড-১৯ জনিত অর্থনৈতিক সংকট অন্য যে কোনো বয়সের কর্মজীবীদের চেয়ে তরুণদের বিশেষত তরুণীদের কঠিনভাবে ও তীব্রগতিতে আঘাত হানছে। আমরা যদি তরুণদের অবস্থার উন্নতির জন্য কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে এ ভাইরাসের রেশ আরো অন্তত এক দশক বয়ে বেড়াতে হবে।

বাংলাদেশে দায়িত্বরত আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুয়োমো পুটিয়ানা এ প্রসঙ্গে বলেন, মহামারী বাংলাদেশে ঝুঁকিতে থাকা তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য সত্যিকার বিপদ বয়ে এনেছে। চাকরির সুযোগ বিপুলহারে হ্রাস পেয়েছে। তরুণদের জন্য ইতিবাচক ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে যথেষ্ট বিনিয়োগ প্রয়োজন। দুঃখজনকভাবে নিম্ন মজুরি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ভুগতে থাকা তরুণী কর্মীরাই মহামারীতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আইএলও মনিটর : কভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক এর চতুর্থ সংস্করণ নিরাপদে কর্মক্ষেত্রগুলো চালু করার জন্য বিশদ ও অব্যাহতভাবে কভিড-১৯ পরীক্ষা ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের পরামর্শ দিয়েছে। যেসব দেশে শক্তিশালী টেস্টিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে সেসব দেশে কর্মঘণ্টা হ্রাস পাওয়ার ঘটনা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে এই টেস্টিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থা সাময়িক হলেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে যেখানে তরুণদের কাজে লাগনো যায়।  

আইএলও মনিটর জানাচ্ছে, ২০২০ সালের প্রথম তিনমাসে দুনিয়াতে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা হারিয়ে গেছে।

জীবন জীবিকার কৃত্রিম দ্বন্দ্ব তৈরি হলো কেন?

বাড়িতে বসে বেসরকারিভাবে করোনা টেস্টে খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। আর সরকারি অর্থসহায়তা হিসেবে এক মাসের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ একজন সামর্থ্যবান রোগীর করোনা টেস্টের খরচ ২ পরিবারের এক মাসের খরচ ধরে নেওয়া হয়েছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে, কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা? এই তুলনার গ্রহণযোগ্যতায় পরে আসছি। তার আগে আসছি জীবন জীবিকার বানানো দ্বন্দ্বের রাজনীতিতে।

এই রাজনীতি আছে জেনেও অনেক অর্থনীতিবিদ একে আড়াল করে রাখেন মানুষের সামনে কৃত্রিমভাবে উভয়সংকট হাজির করতে। এক মাস ধরেই জনগণের সামনে জীবন ও জীবিকার মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। অথচ যথেষ্ট খাদ্য ও অর্থসহায়তা সময়মতো পৌঁছে দিতে পারলে এই সংকটের প্রসঙ্গই আসত না। অবশ্যই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বন্ধ রাখা যাবে না। কিন্তু লকডাউন শিথিলেরও কিছু শর্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল করোনার প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে লকডাউন-পরবর্তী জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম সক্ষমতা অর্জন। কিন্তু সে পথে না গিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু যখন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে, তখন দেখছি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু যৌক্তিক করতে একে উভয়সংকট হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। এই উভয়সংকট তৈরির পালে হাওয়া দিয়েছে যেই মূল্য নির্ধারণের অর্থনৈতিক যুক্তি, তার মূলে গিয়ে একটু দেখা যেতে পারে।

নিওক্ল্যাসিক্যাল অর্থনৈতিক তত্ত্বের প্রবক্তারা জীবন রক্ষার মূল্য খুঁজতে গিয়ে একেকটি দেশে একেক রকম মূল্য পেয়েছেন। এ রকম একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন ব্যবহার করে লকডাউন শিথিলের যুক্তি সম্প্রতি আমাদের নজরে এসেছে। এপ্রিলে প্রচারিত মোবারক এবং বারনেট-হাওয়েল তাঁদের গবেষণাপত্রে (The Benefits and Costs of Social Distancing in Rich and Poor Countries) দেখিয়েছেন যে নিম্ন আয়ের দেশের চেয়ে উচ্চ আয়ের দেশে লকডাউন অধিক লাভজনক। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে মোট জীবন রক্ষার মূল্য বা ভ্যালু অন্য স্ট্যাটিস্টিক্যাল লাইফ (ভিএসএল) এত বেশি যে লকডাউন করে, আর্থিক সহায়তা দিয়ে, প্রণোদনা প্যাকেজ ব্যবহার করেও ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি হবে। কিন্তু বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়ার মতো দেশে ভ্যালু অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল লাইফ এত কম যে সেসব দেশে লকডাউন করলে যেই আর্থিক ক্ষতি হবে, তা সুফলের চেয়ে অনেক বেশি। তাঁরা দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের সুফল মোট জিডিপির ৫৮ শতাংশ কিন্তু বাংলাদেশে তা মাত্র ১৪ শতাংশ।

এই গবেষণায় তাঁরা ভিএসএল নামে ধারণাটি ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, সব জীবন রক্ষার মূল্য সব সমাজে সমান না। কোনো কোনো সমাজ অর্থনৈতিক সুবিধাকে জীবন রক্ষার চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করে, কোনো সমাজ কম করে। একজন মানুষের জীবিত অবস্থায় উৎপাদনক্ষমতা, সম্ভাবনা ও পরিবারের কাছে তার বেঁচে থাকার সামাজিক মূল্য বিবেচনা না করে শুধু একটি অপরিচিত মানুষের মৃত্যুকে সেই সমাজ কীভাবে মূল্যায়ন করে; তা দিয়ে এই মূল্যের গ্রহণযোগ্যতা ঠিক করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সেফটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে না চলা একটি কারখানায় জীবনের ঝুঁকি বেশি জেনেও যদি একজন বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করতে রাজি হন আর একজন আমেরিকান শ্রমিক রাজি না হন, তাহলে বাংলাদেশি শ্রমিকের কাছে জীবন রক্ষার মূল্য কম আর আমেরিকান শ্রমিকের কাছে বেশি। অথচ আসলে যেকোনো শ্রমিকের কাছে জীবন রক্ষা ও জীবিকা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা নিরাপত্তার মান, বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির ব্যর্থতায় ও শ্রমিককে নিরুপায় করে দেওয়ায়। আর তা ছাড়া আমেরিকায় যেই সামাজিক বেষ্টনী রয়েছে তার সুবিধা পেলে একজন শ্রমিকের তো অত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাওয়ারই কথা না। তাহলে সামাজিক নিরাপত্তাসহ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ছাড়া দুটি দেশকে কীভাবে তুলনা করা যায়?

ওপরে বলা বিষয়গুলোর দিকে নজর না দিয়ে শ্রমিক কোথায় অতিঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেন, তা দেখিয়ে যদি বলা হয় সেই সমাজে জীবন রক্ষার মূল্য কম, তাহলে এর মধ্যে দিয়ে আসলে মানুষের জীবনের অবমূল্যায়নের যুক্তিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তকে ‘সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য’ খেতাব দিয়ে সেই সমাজকেও হেয় করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশে স্ট্যাটিস্টিক্যাল লাইফের মূল্য উন্নত দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান) চেয়ে কম হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে গিয়ে এসব দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি হয়। যেহেতু ধনীদের লকডাউনের সামর্থ্য আছে কিন্তু দরিদ্রদের নেই, তাই দরিদ্রদের কাছে জীবন রক্ষার মূল্য কম ধরে নেওয়া হয়েছে।

গবেষকেরা এই সীমাবদ্ধতাকে সততার সঙ্গে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিজেরাই বলেছেন যে এই জীবন রক্ষার মূল্য কম হওয়ার কারণ তাদের প্রয়োজনীয়তা—এটা স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া কিছু নয়। আমি বলতে চাই, এটিকে শুধু প্রয়োজনীয়তা বললে ভুল হবে। দরিদ্রদের কাছে বেছে নেওয়ার মতো কোনো বিকল্প রাখা হয়নি। সঠিক সময়ে মজুরি, খাদ্য ও অর্থসহায়তা দেওয়া হলে তাদের এই কৃত্রিম উভয়সংকটে পড়তে হতো না। এই মুহূর্তে তাঁরা করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে জীবিকাকে বেছে নিতে চেয়েছেন বাধ্য হয়েই। কষ্ট আর অভিমানও প্রকাশ পেয়েছে তাতে। খাবার পৌঁছাতে সরকারের ব্যর্থতাই যে মূলত তাঁদের এই দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা আড়াল হয়ে যায় যদি এটাকে শুধু প্রয়োজন বলা হয়। কাজেই গবেষণার এই সীমাবদ্ধতা এতটাই গভীর উদ্বেগের যে, এ ধরনের চিন্তার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রয়োগ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার আছে।

আজকে করোনার মুখোমুখি হয়ে নিম্নবিত্তের জীবনঝুঁকিকে ক্ষুদ্র করে দেখা হচ্ছে তাদেরই মুখের কথাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি বলে যাচ্ছেন, করোনার আগে ক্ষুধা মারবে, না খেয়ে লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। নিজেদের সুবিধার্থেই ঠিক এই ভাষ্যটিই অর্থনীতিবিদদের কাছে ‘বাস্তবিক’ মনে হলো। অন্য সময় একই মানুষেরাই যা বলেন, তা তাঁদের অবাস্তব মনে হয়। দিনের পর দিন এই দরিদ্ররা যখন বলছেন, জীবনযাপনের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি বাড়াও, ঘরে ঘরে কলের পানি পানযোগ্য করো, বায়ুদূষণ রোধ করো, শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করো, গণপরিবহন জনবান্ধব করো, সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করো, তখন এই দাবি পূরণ কিন্তু ‘বাস্তবিক’ মনে হয়নি। কারণ এতে তাঁদের কাজ বেড়ে যায়। নিজেদের কাজ কমাতে এবার তাঁরা শুনে ফেললেন, ‘করোনার চেয়ে ক্ষুধা বড়, জীবনের চেয়ে জীবিকা বড়’। কাজেই সব খুলে দেওয়াই সমীচীন? তাও এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশে মাত্র ০.১৩ শতাংশ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে ৪ শতাংশ, পর্তুগালে ৬.৫ শতাংশ, রাশিয়ায় ৫.৫ শতাংশ আর ইতালিতে হয়েছে প্রায় ৫.৩ শতাংশ মানুষের। বিশ্বে যারা লকডাউন উঠিয়ে দিচ্ছে বা শিথিল করছে, তারা ন্যূনতম টেস্ট করে, অবস্থা বুঝে, লকডাউন-পরবর্তী জীবনব্যবস্থার সক্ষমতা তৈরি করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে না, বরং জীবন-জীবিকার দ্বন্দ্ব হাজির করে—তুলনার অযোগ্য দেশের পন্থা অযৌক্তিকভাবে অনুসরণ করে।

এবার ফিরে আসি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে। কোন মূল্যকে আমরা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলবো? প্রতিটি ৫-সদস্যের পরিবারে যদি ২.৫ কেজি চালে ১০০ টাকা, ১০০ গ্রাম ডালে ১০ টাকা, ৫০০ গ্রাম আলু ১০ টাকা, ডিম/সব্জিতে ৫০ টাকা, তেল, লবন, পিয়াজ, মসলায় ১০ টাকা, এবং অন্যান্যতে ২০ টাকা খরচ হয়, তাহলে একদিনে একটি পরিবারের নূন্যতম খাবার খরচ ২০০ টাকা হয়। অর্থাৎ এক মাসে একটি পরিবারের ক্যালরি ও পুষ্টিমান বাদ দিয়েও নুন্যতম খাবারের খরচ ৬০০০ টাকা। সরকার যখন অর্থ সহায়তা দেয় তখন অবলীলায় দ্রব্যমূল্য ধরে নেয় বিদ্যমান বাজার মূল্যেরও কম, আর বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিছু বিক্রি করার সময় দ্রব্যমূল্য ধরে “কথিত’” বাজার মূল্য অনুযায়ী।
ন্যূনতম মাসিক খাবার খরচ ৬ হাজার টাকা হওয়া সত্ত্বেও সরকার যখন ২ হাজার ৫০০ টাকা অর্থসহায়তা দিয়েছে, সেটা কি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য? বা করোনা পরীক্ষার জন্য রাতভর লাইন দিয়ে শুয়ে থাকা, বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে শ্রমিকদের বিক্ষোভে বাধ্য করা, অথবা শহরের আনাচকানাচে ত্রাণের অপেক্ষায় কর্মহীন শ্রমিকদের ঘরে বেড়ানো-এগুলো কি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য? মোটেই না। দরিদ্র মানুষের সে রকম সঞ্চয় থাকে না। ন্যূনতম উদারতা নিয়ে হিসাব করলেও বাড়িভাড়া, শিশুখাদ্য, ওষুধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপকরণ যোগ করলে একটি পরিবারের মাসিক খরচ ১৫ হাজার টাকার নিচে হবে না। তাহলে এই বাকি টাকা কোথা থেকে আসে? এই টাকা কোথাও থেকে আসে না। এক বেলা খেয়ে, দুই বেলা না খেয়ে যেই কষ্ট উৎপাদন হয়, সেটুকু এই না দেওয়া টাকার চেয়েও বেশি।

কষ্টকে অর্থনৈতিক মূল্য দিয়ে মাপা হয়নি বা এই কষ্টকে কেউ গ্রহণযোগ্যতাও দেয়নি। তাই এই ২ হাজার ৫০০ টাকার অর্থসহায়তাকে বলতেই হয় সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য সাহায্য। মানুষের জীবনের মূল্য কম না বেশি, তা কখনোই কৃত্রিমভাবে ম্যানুফ্যাকচার করা ‘সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা’ দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে না। এটা একটি আরোপিত মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া। অকার্যকর, অসম বণ্টনের ও বৈষম্য লালনের অর্থনীতিকে যেকোনো মূল্যে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় জিইয়ে রাখার একটি কার্যক্রম।

সবকিছু শিথিলের সিদ্ধান্ত অনৈতিকভাবে মানুষকে অবমূল্যায়ন করে নির্মিত কোনো মডেলের ওপর ভিত্তি করে হতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত হতে হবে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, বাস্তবায়নে সফল হয়েছে এমন এক্সিট মডেল অনুসরণ করে। কেরালা, ভিয়েতনাম, ইতালির ভোইউগানেও শহরের মতো প্রতিটি এলাকায় ব্যাপক আকারে টেস্ট, ট্রেসিং, আইসোলেশন, চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমিয়ে আনতে হবে। যেহেতু ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও ব্যবহারের আগে আপাতমুক্তি অনিশ্চিত, কাজেই সংক্রমণ কমিয়ে এনে ব্যাপক আকারে প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে। তথ্য সরবরাহ এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিলেই তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা অর্থনৈতিক মডেলের অজুহাত দেখিয়ে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলাফল হবে চরম আত্মঘাতী। এর দায় নিতে হবে নীতিনির্ধারকদের আর তাঁদের পেছনে অনৈতিক জ্ঞান সরবরাহকারী অর্থনীতিবিদদের। সমাজ এর দায় গ্রহণ করবে না।

মোশাহিদা সুলতানা: সহযোগী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Daily samokal-29-5-20

কোন একটি জাতির বা রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব যে অপরিহার্য তা নিয়ে আমরা অনেক প্রবাদ শুনেছি। গ্রিক দার্শনিক এবং চিনিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ডিওজেনেস বলে গেছেন যে প্রতিটা রাষ্ট্রের মুল ভিত্তি হচ্ছে সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ডিওজেনেসের কথার সাথে আর দুটো জিনিস যোগ করতে চাই আর তা হল শিক্ষার মান ও প্রকৃতি। একটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং এর পণ্য বাজারের মধ্যে রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। যে দেশের শিক্ষার মান যত উন্নত হবে সে দেশের উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবাও তত বেশী উন্নত মানের হবে। উন্নত মানের পণ্য মানে বিশ্ব বাণিজ্যে সে দেশের আধিপত্য।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল একটা দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত হবার পথে। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কমেছে দারিদ্র্যতার হার এবং সংখ্যা দুটোই। উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদনে এবং উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য যা অপরিহার্য তা হল দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি। ব্যবহারিক এবং গুণগত শিক্ষা ছাড়া দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির আর কোন বিকল্প পথ নেই। নিজস্ব দক্ষ জনশক্তির অভাব উন্নয়ন প্রকল্প প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন এবং রক্ষনাবেক্ষনকে করে তোলে ব্যয়বহুল। আর ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প মানে স্বল্প সংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্প। স্বল্প সংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্প মানে উন্নয়নের শ্লথ গতি। সুতরাং উন্নয়নের গতিকে বেগবান করতে হলে আমাদের দরকার দক্ষ জনশক্তি।

বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক সংখ্যাত্মক উন্নয়ন ঘটেছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায়ে বেড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং একই সাথে বেড়েছে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে বের হওয়া স্নাতকের সংখ্যা। তবে এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, তা হল যে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে বের হওয়া স্নাতকদের কর্মদক্ষতা নিয়ে। তারা কি পারছে কর্ম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা বা নৈপুণ্যতা সরবরাহ করতে? উত্তর সম্ভবত হবে ”না” তারা অনেকটাই পারছে না! তারা হোঁচট খাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন যে কী কারণে নবীন স্নাতকরা কর্ম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা বা নৈপুণ্যতা সরবরাহ করতে পারছে না। এর জন্য কি আমাদের নবীন স্নাতকরা দায়ী না সমস্যা অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে?

আমরা যখন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য দেই তখন দেখতে পাই যে এটা অতি মাত্রায় তাত্ত্বিক এবং কর্ম জীবনের সাথে অনেকটাই সম্পর্কহীন। আমরা এও জানি যে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নশীল দেশ এবং আমাদের অনেক অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের ক্ষেত্রে । তবে একই সঙ্গে আমরাদের এটাও ভাবতে হবে যে সব কিছু কিন্তু সব সময় অর্থনৈতিক শক্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক শক্তির পাশাপাশি কর্ম সম্পাদনে আমাদের দরকার হয় আত্মশক্তি, ইচ্ছাশক্তি এবং প্রেরণা বা মোটিভেশন। সুতরাং আমরা শুধুমাত্র অতিরিক্ত বাজেট দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বা এর উন্নয়ন সাধন করতে পারব না। আবার শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বা এর উন্নয়ন সাধন কিন্তু রাতারাতিও করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের শুরু করতে হবে এখনই।

আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি এবং বেসরকারি এই দুই খাতে বিভক্ত। আজকাল দেখা যায় যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানরা তাদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে পাঠায়। সরকারি স্কুলগুলোর সমস্যায় উঠে আসে এভাবে যে সেখানে পড়াশুনা ভালো হয়না। আর বেসরকারি স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে পড়াশুনার চাপের কথা প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে। সরকারী এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু একটা ভীষণ মিল আছে আর তা হলো স্কুল সাফল্য আসে হাউস টিউটর এবং কোচিং এর মাধ্যমে। এভাবে স্কুলের ভূমিকা দিন দিন কমে যাচ্ছে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে। এটা একটা ভীতিকর ব্যাপার গোটা সমাজের জন্য। কারণ মানবসমাজে বসবাসের জন্য এবং অন্যের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার জন্য আমাদের যেসব সামাজিক গুণাবলীর দরকার তার বড় একটা অংশ আমরা শিখি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর এজন্যই ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এবং জাপানের মত উন্নত দেশগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপর খুবই গুরত্ব দেয়া হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধরতে গেলে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পুরোটাই ভীষণভাবে তাত্ত্বিক, গবেষণাহীন এবং শ্রেণিকক্ষ কেন্দ্রিক।

শিক্ষা ব্যবস্থার একটা অংশকে বের করে আনতে হবে শ্রেণি কক্ষ থেকে কর্ম ক্ষেত্রের কাছাকাছি। যেমন ধরি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষকের সাথে দলবদ্ধ হয়ে যেতে পারে সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখতে যেমন হাসপাতাল, সিনেমা হল, লাইব্রেরি এবং বিভিন্ন কোম্পানি। এভাবে ছোট ছোট মনগুলো হয়ে উঠবে কৌতুহলি এবং অনুসন্ধিৎসু। একইভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি করে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচয় করে দেয়া যেতে পারে। অধিকন্তু তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে খণ্ডকালীন কাজের ব্যাপারে। আমাদের সমাজে কাজের সাথে সন্মান এবং পদমর্যাদার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে যা অনেক সময় মানুষকে কর্মবিমুখ করে তোলে। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে শরীরিক শক্তি নির্ভর কর্মে বিমুখতা। তাই বলব কাজ করুন, সুস্থ্য থাকুন, পরিবারে শান্তি আনুন, বেশিদিন বাঁচুন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হওয়া উচিৎ কর্মক্ষেত্রে কর্মের মাধ্যমে শিক্ষাভিত্তিক। এভাবে আমরা আমাদের তাত্ত্বিক শিক্ষাকে অনেকটা ব্যবহারিক শিক্ষায় রূপান্তরিত করতে পারি, যাতে আমাদের নবীন স্নাতকরা কর্মদক্ষতা নিয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করতে পারে।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ রোগী বিদেশে যায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য। এই চিত্র প্রমাণ করে আমাদের চিকিৎসা সেবা খাতের অদক্ষতা এবং গুনগত মানের অবক্ষয়। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রতি বছর দরকার হয় হাজার হাজার বিদেশী ব্যবস্থাপকের। একই চিত্র আমরা দেখতে পাই অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। যে কোন বড় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং ব্যবস্থাপনার সিংহভাগ কর্মে আমাদের বিদেশীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দেশ এবং জাতির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি এবং ব্যবস্থাপক সৃষ্টি করতে না পারে, তাহলে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কোন বিকল্প নেই।

শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ হতে পারে  (১) শিক্ষকদের জীবনব্যাপী শিক্ষার ও অব্যাহত শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা; (২) শিক্ষাবিজ্ঞান বা পেডাগজি প্রশিক্ষণকে সকল পর্যায়ের শিক্ষকতা পেশার জন্য বাধ্যতামূলক অংশ করা; (৩)  ছাত্র এবং শিক্ষকদের জাতীয় রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তির রাজনীতির অবসান ঘটানো; (৪) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মজীবনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন; (৫) সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রেখে কর্মমুখী পাঠ্যক্রম প্রণয়ন; (৬) সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মান তদারকির জন্য একটা কার্যকরী সাধারণ বোর্ড গঠন করা; (৭) সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি চালুকরণ; (৮) বিদেশি ভাষা শিক্ষাকে উৎসাহিতকরণ; (9) প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পড়াশুনার জন্য একটি করে মডেল পাঠাগার স্থাপন।

কর্মক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি পেতে হলে, তার প্রস্তুত কার্যক্রম কিন্তু শুরু করতে হবে সেই শিশুবিদ্যালয় থেকেই। এটা যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝব ততই ভাল। দক্ষ জনশক্তি একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে, এগিয়ে যাব আমরা। এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কি  হতে পারে জাতি হিসেবে আমাদের!

[] ছেলে পুত্রবধূর হাতে মার খেয়ে মায়ের আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট : [২]নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন মা। সোমবার (০১ জুন) বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে সিংড়া উপজেলার মাঝগ্রামে। আত্মহত্যাকারী জুলেখা বেগম (৪৭) একই গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

[৩]মৃত জুলেখার স্বামী শহিদুল ইসলাম জানান, তার ছেলে জুয়েল রানা সম্প্রতি প্রেম করে ফাতেমা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। বাড়িতে অশান্তি লেগেই ছিল। শহিদুল ইসলাম গতকাল রোববার বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় ঝগড়ার একপর্যায়ে তার ছেলে জুয়েল রানা, জুয়েলের ভায়রা সজীব এবং জুয়েলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম মিলে জুলেখা বেগমকে মারধর করেন। ঘটনার পর থেকে জুলেখা না খেয়ে খাকেন। সোমবার সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকার পর বিকেল ৪টার দিকে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জুলেখা।


এত আত্মহত্যা কিপরীক্ষারবিষাক্ত ফল নয়?

মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের তিন–চার ঘণ্টার মধ্যে সাতজন কিশোর–কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, হবিগঞ্জের লাখাই, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এসব মর্মান্তিক খবর সর্বশেষ খবর নয়। আরও খবর হয়তো তৈরি হচ্ছে অথবা সত্যতা যাচাইয়ের অপেক্ষায় আছে। সব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না। আগের বছরগুলোতেও অপ্রত্যাশিত ফলাফলের কষ্টে আত্মহত্যার খবর আসত। কিন্তু এবার যেন মৃত্যুর স্রোতের তোড়টা অনেক বেশি। তবে কি করোনার কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপে কিশোর–কিশোরীরা আগে থেকেই ক্লান্ত ছিল। ভুগছিল মানসিক শূন্যতায়? পরীক্ষার ফলাফলের সামান্য হেরফের তারা আর সহ্য করতে পারেনি অথবা সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব রক্ষার তাগিদে বন্ধুবান্ধব–শিক্ষকদের থেকে দূরে থেকে যে নিঃসঙ্গতার গহ্বরে ডুবে ছিল তারা, সেখানেই তারা তলিয়ে গেছে।

বছর কয়েক আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কলকাতার একজন শিশুমন বিশেষজ্ঞ সময়িতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘যে শিশু তার বাড়ির পরিবেশ নিয়ে খুশি, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায় আনন্দে, মোটের ওপরে যার একটা “সুইট হোম” আছে, তার যদি কখনো পরীক্ষায় খারাপ ফল হয়, সেটা সে সহ্য করে নিতে পারে। কিন্তু যেসব বাড়ির বা স্কুলের পরিবেশটাতেই গন্ডগোল বা যারা ইলেকট্রনিক মিডিয়া-টিভি ইত্যাদি বেশি দেখে, এ রকম শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়।’ তবে কি করোনাবন্দী তিন মাসে শিশু–কিশোরেরা তাদের ‘সুইট হোম’ হারিয়ে স্নায়ুচাপে ভুগছিল?

নাকি করোনাজনিত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পাস না করলে আর তাদের খরচ বহনের ‘সৌখিনতা’ চালানো সম্ভব হবে না। অথবা মেয়েদের বেলায় বলা হয়েছিল, জিপিএ–৫ পেলে পালব, না পেলে পাঠাব শ্বশুরবাড়ি। প্রাপ্ত সাতটি মৃত্যুসংবাদের ছয়জনই মেয়ে। মৃত দুজনের আবার প্রায় জিপিএ–৫ অল্পের জন্য ফসকে গেছে। ফল বেরোনোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যখন মৃত্যুর খবরগুলো আসছিল, তখন একজন মনোবিজ্ঞানীকে ফোন করলে তিনি জানান, ‘এখন সমাজটাই এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভালো চাকরি, ভাল বেতন—এগুলোই শিশুদের বা তাদের মা–বাবাদের লক্ষ্য হয়ে উঠছে। তাই ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার্থীরা সব সময়ই একটা চাপের মধ্যে থাকে। আবার বাবা–মায়েরাও নিজেদের অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো সন্তানদের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চায়। যেটা আমরা করতে পারিনি, সেটা যেন ওরা করে দেখায়। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।’ তবে কিশোরীদের হার কেন বেশি? এ প্রশ্নের কোনো জুতসই উত্তর আমাদের কাছে নেই।

এর আগের বছরের পরিসংখ্যানগুলো ঘাটলে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে কিশোরীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ছবি খুবই পরিষ্কার। ২০১৭ সালে সারা দেশে যে ২১৩টি শিশু বা কিশোর বয়সী আত্মহত্যা করে, তাদের মধ্যে ৫৩ জন ছেলেশিশু এবং ১৬০ জন মেয়েশিশু। অর্থাৎ ২০১৭ সালে আত্মহত্যার শিকার শিশুদের ২৫ শতাংশ ছেলে এবং ৭৫ শতাংশ মেয়ে। আর তাদের ৬৮ শতাংশেরই বয়স ১৩ থেকে ১৮-এর মধ্যে।

গত তিন বছরে এসএসসি পরীক্ষার পর ১৫০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে আর ৩ হাজার ৭৫০ জনের কিছু বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ৪০০ জন আবার দ্বিতীয়বার চেষ্টা করেছিল। এগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর। বলা বাহুল্য, আত্মহত্যার খবর প্রচার পেলেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার খবর তেমন জানা হয় না। অপ্রকাশিত কষ্টগুলো জানার কোনো উপায় নেই।

আত্মহত্যা নিয়ে যারা রাত–দিন গবেষণা করেন, তাঁদের তথ্য বলছে, প্রতি ২৫টি আত্মহত্যার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত একজন মারা যায়। তাহলে যে সাতজনের নাম–ঠিকানাসহ খবর রাষ্ট্র হয়েছে, সেই সাতকে ২৫ দিয়ে গুণ করলে যে সংখ্যা আসে, সেটা ১৭৫। প্রথম দফায় বেঁচে যাওয়া অনেকেই দ্বিতীয়, তৃতীয়, আবার চেষ্টা করতে পারে। কারণ, ভাগ্যগুণে প্রথম দফায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতি সমাজ-পরিবার আরও নির্মম, নির্দয় হয়ে ওঠে। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পৃথিবীব্যাপী কাজ করে সুইসাইড অ্যাওয়ারনেস ভয়েস অব এডুকেশন, সংক্ষেপে এসএভিএ বা সেভ। এই সংস্থা জানাচ্ছে, ১০০ জন নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবলে তাদের মধ্যে গড়ে ২৫ জন শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে। সেই হিসাবে আত্মহত্যার চেষ্টায় বেঁচে যাওয়া আর আত্মহত্যার কথা ভাবাদের সংখ্যা নিয়ে শঙ্কার কারণ আছে বইকি।

আমাদের দেশে সংখ্যা আর শঙ্কা নিয়ে কখনো কেউ একমত হতে পারে না। শঙ্কার ভিত্তি রচনা করে সংখ্যা। আর আমাদের সব সংখ্যায় থাকে গড়মিল আর গোঁজামিলের রাজত্ব। তারপরও প্রশ্ন আসে, এই সংখ্যা রাখবে কোন মন্ত্রণালয়? রেখেই–বা কী করবে? যে মরার সে মরবে, যে বাঁচার সে বাঁচবে—এ রকম দায়সারা অবস্থানই তো আমাদের নীতি।

ভারত-পাকিস্তান প্রভৃতি রাষ্ট্র কিন্তু শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তত্ত্বতালাশ রাখে। দেশগুলো এটাকে সমস্যা বলে স্বীকার করে সমাধানের পথ খুঁজছে। ভাবছে, এটা হ্রাসের জন্য কী করা যায়। আমরা হয়তো নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। ইন্ডিয়ার তথ্য বলছে, সে দেশে প্রতি ৫৫ মিনিটে একজন ছাত্র বা ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এদের একটা বড় অংশই পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া, উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া অথবা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ খুঁজে না পাওয়া—এসব নানা দৃশ্যমান বা অদৃশ্য কারণে চাপের মধ্যে ঘুরতে থাকে। এসবের কোনো একটা পর্যায়ে ব্যর্থ হলেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।

স্কুল, বাড়ি, বন্ধুমহল, প্রতিবেশী—চাপ আসে নানা জায়গা থেকেই। অনেক আগে বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের করা এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিশোরী বলে জানা গেছে। তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না করাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার কারণে কেন বাড়ছে আত্মহত্যা? এ প্রশ্নের জবাব অভিভাবকেরা জানেন। আগে বহুবার তাঁদের দিলে একটু রহম আনার জন্য কাকুতি–মিনতি করে লেখা হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মনের পাটাতন বদলেছে বলে মনে হয় না।

যাদের নিয়ে এই লেখা, সেই কিশোর–কিশোরী জাদুমণিদের জন্য নিজের কয়েকজন ঘুরে দাঁড়ানো মানুষের অভিজ্ঞতা নিবেদন করলাম।

এক.
আমার এই বন্ধু তাঁর নাম উহ্য রাখতে বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘…২০০০ সালের কথা। পরীক্ষায় ফেল মেরেছিলাম। আমার বন্ধুরা অনেকেই স্টার মার্ক পেয়েছিল। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের অনেক বিদ্রূপ শুনেছিলাম। আমিও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। আম্মা আমাকে মানসিকভাবে শক্ত রেখেছিলেন। বাস্তবতা হচ্ছে, আজ আমি সেই সব বিদ্রূপকারী ও আমার স্টার মার্ক পাওয়া বন্ধুদের চেয়ে সমাজে অনেক ভালো অবস্থানে আছি। অহমিকা করছি না, তবুও মাফ চাইছি এটা অন্যভাবে নেবেন না দয়া করে। আমি যেটা বলতে চাই, এসএসসি বা এইচএসসি বা নামডাকের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারাটাই জীবনের সফলতা নয়। জীবন অনেক বড়, এটার অনেক রং, অনেক বাঁক। কোথায় কোন সাফল্য লুকিয়ে আছে কেউ বলতে পারে না। মা–বাবাকে বলব, সমাজের অসুস্থ প্রতিযোগীদের দিকে না তাকিয়ে নিজের সন্তানের দিকে তাকান। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা দিন। তাদের জীবনটাও অকৃত্রিম সফলতায় আলোকিত হবে…।’

দুই.
আমাদের সিনিয়র বন্ধু বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম সংকলক বিশিষ্ট লেখক এবং অধ্যাপক আফসান চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘… আমি ভাগ্যবান ছিলাম। আমার পরীক্ষা ভালো হয়নি। অঙ্ক খারাপ হয়েছিল। কিন্তু আমার মা–বাবা খুব চেষ্টা করেন আমার মন ঠিক রাখতে …।’

তিন.
বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন আরও মজার খবর, ‘… আমি এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ পাই যখন আমার স্কুলের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ সবাই প্রথম বিভাগ পায়। আমার কেন জানি না কোনো কষ্ট হয়নি। আমার এক স্বল্প ঘনিষ্ঠ সহপাঠী (প্রথম বিভাগ পাওয়া) আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল, তাতেও আমার কান্না পায়নি। কান্না না পেলেও কষ্টটা পেলাম পরে, যখন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ভর্তির ফরম দিল না। পরে অনেক প্রথম ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করার পর দ্বিতীয় দফায় যখন ফরম ছাড়ে তখন ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। মমতাজ স‌্যার (বাংলা), রণজিত স‌্যার (ইংরেজি) ভাইভা বোর্ডে ছিলেন। আমার সঙ্গের প্রথম বিভাগের ৫০ জন এইচএসসিতে ঝড়ে বা ঝরে পড়ে। শেষমেশ বিশ্ববিদ‌্যালয় সমাপ্ত হলো সময়মতো সম্মানজনকভাবে চারজনের। সেই আমি স্কুলে কিন্তু আগাগোড়া পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত “প্রথমই” ছিলাম। জীবনে প্রথমের মোহ সেই যে কাটল, আর ফিরে আসে না।’

চার.
দেশের বিশিষ্ট বেতারকর্মী সুলেখক হাসান মীর জানিয়েছেন, ‘… প্রথম হতে পারা ভালো, তারচেয়েও ভালো—ভালো হতে পারা। যাঁরা পরীক্ষায় প্রথম হন না কিংবা প্রথম বিভাগও পাননি, পরে জীবনের পরীক্ষায় তাঁদের অনেকেই ভালো করেছেন, সফল হয়েছেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জ্ঞানার্জন এবং সেই সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা ভালো ফল করা, কেবল জিপিএ-৫ পাওয়া নয়। এই ফাইভধারীদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে।’

আত্মহত্যা কোনো কিছুর জবাব নয়। পুনশ্চ, লেখা শেষ করতে না করতে খবর এল, ২০২০ সালে ৩১ মে এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর মোট ১২ শিক্ষার্থী (নয়জন মেয়ে, তিনজন ছেলে) আত্মহত্যা করেছে এবং একজন চেষ্টা চালিয়েছে। হা খোদা।

লেখক: গবেষক
nayeem5508@gmail.com

Kalar khanto-2-6-20

বিনিয়োগ কর্মসংস্থান বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ

অর্থপাচার ঠেকানোর চাপ বাড়ছে
জোরালো হচ্ছে কালো টাকা বিনিয়োগে আনার দাবি
ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী করার সুপারিশ বিশ্লেষকদের

ফারুক মেহেদী   

২ জুন, ২০২০ ০০:০০ | পড়া যাবে ৭ মিনিটে

প্রিন্ট

অ- অ অ+

করোনায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত। সরকারের আয় না থাকলেও অর্থনীতি পুনর্গঠন করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখাই হবে সামনের দিনগুলোতে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

একদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরিয়ে ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন, অর্থপাচার রোধ, কালো টাকাকে বিপুল হারে অর্থনীতির মূলধারায় যুক্ত করে সরকারের অর্থের সংস্থান করা; অন্যদিকে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করতে ঘোষিত প্রণোদনার কার্যকর বাস্তবায়ন। এসব কাজ সমন্বিতভাবে সরকার করতে পারলে শত নেতিবাচক অবস্থার মধ্যেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক, উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকরা। তাঁরা জানান, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উন্নত-অনুন্নত সব দেশই তাদের সক্ষমতার পুরোটা ঢেলে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বাংলাদেশকেও টিকে থাকতে হলে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতি নিয়ে সারা বিশ্বের বিস্ময় আছে। কিন্তু করোনাকালের সংকটে দেশটি কিভাবে তার অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা সচল রাখে, সেটা এখন একটা চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা তলানিতে এসে ঠেকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের আগামী দিনের প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ থেকে নেমে ২ থেকে ৩ শতাংশে চলে আসবে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের নিজস্ব বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে চাপ তৈরি হচ্ছে। যদিও সরকার এরই মধ্যে প্রায় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে এ প্রণোদনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নও সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য সরকারের বিপুল অর্থের প্রয়োজন। রাজস্ব আয় থেকে সরকারের বিপুল অর্থের সংস্থান কঠিন হয়ে উঠছে। তাই জোর আলোচনা শুরু হয়েছে অর্থনীতিতে থাকা কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়কে বিনা প্রশ্নে বৈধতা দেওয়ার।

জানা যায়, সরকার ২০১৩ সালে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯-এর বিবিবিবিবি ধারায় যেভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, সেটা বিনিয়োগবান্ধব নয়; বরং হয়রানিমূলক ছিল। এর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিনা প্রশ্নে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয় আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় বিপুল অঙ্কের টাকা অর্থনীতিতে চলে আসে। পরে এ সুযোগ তুলে দেওয়ায় টাকা পাচার হতে থাকে বিদেশে। এখন আলোচনা হচ্ছে, বিনা প্রশ্নে কালো টাকা আবাসন, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে সরকারের হাতে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো, যা অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার বিনিয়োগ করবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্ব এক নতুন বাস্তবতার মধ্যে যাচ্ছে। দেশে সরকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সরকারকে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজস্ব যেহেতু আসবে না; তাই কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় সহজ শর্তে, বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগ করতে দেওয়া উচিত। টাকা বিনিয়োগ না হলে, আর কড়াকড়ি থাকলে তা পাচার হয়ে যাবে। সরকারের হাতে বিপুল অঙ্কের টাকার প্রবাহ বাড়াতে হলে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের কড়াকড়িও শিথিল করতে হবে। আমি মনে করি, কড়াকড়ি একেবারে উঠিয়ে দেওয়া উচিত। মানুষ বিনিয়োগের সুযোগ না পেলেই টাকা অবৈধ কর্মকাণ্ডে চলে যায় কিংবা মানি লন্ডারিং হয়। আশা করি, সরকার বিষয়গুলো এবার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে।’

পাশাপাশি হুন্ডি বন্ধ করে বৈধ পথে বিদেশি আয় দেশে আনার আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। এরই মধ্যে সরকার বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে। সামনে এ প্রণোদনার হার আরো বাড়িয়ে প্রবাসীদের উৎসাহিত করার কথাও উঠছে বিভিন্ন মহলে।

জানা যায়, শুধু হুন্ডিই নয়, জাল-জালিয়াতি করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারের ঘটনাও বাংলাদেশে রীতিতে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি বা জিএফআইয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত আগের ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের পর তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয়, গড়ে বছরে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। জিএফআই মনে করে, বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের ১৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে। অনেক আলোচনা ও বিতর্কের পরও এ অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না; বরং বাড়ছে। এমনকি বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফিরিয়েও আনা যাচ্ছে না। এখন করোনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ প্রণোদনায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপের পাশাপাশি পাচারের সংস্কৃতি বন্ধের বিষয়টিও জোরালো আলোচনায় রয়েছে। পাচার বন্ধ করলে যেমন সরকারের হাতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে, তেমনি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ালেও সরকার তথা অর্থনীতি লাভবান হবে। পাচারের সঙ্গে যুক্ত বন্ডের অপব্যবহারের বিষয়টিও। রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারে সরকার বন্ড সুবিধা দিলেও এর অপব্যবহার হচ্ছে অহরহ। এ অপব্যবহারের ফলে বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। যেহেতু সরকারের সামনে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, তাই বন্ডের অপব্যবহার রোধ করে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব অর্থনীতিতে ফেরানোর কথা উঠছে জোরেশোরে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেভাবেই বলেন না কেন, অর্থনীতিতে টাকা লাগবে। বিনিয়োগ লাগবে। অর্থনীতিতে টাকা ঢোকাতে হবে।’ তিনি বলছিলেন, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বিদেশে যারা ভালো অবস্থায় আছে, যাদের কেউ ওখানে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত, কেউ বা দেশে থেকে কোনো না কোনোভাবে টাকা নিয়ে বসবাস করছেন। এসব টাকা দেশে ফেরানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে সরকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করতে পারে। কারণ আইনি ব্যবস্থায় টাকা ফিরিয়ে আনা কঠিন। ওই পথে গেলে তা আর বাস্তবায়ন হবে না। তাদের উৎসাহিত করে দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। সরকারকে এসব ব্যাপারে আরো উদার হতে হবে। জটিলতা কমাতে হবে। মানুষের হাতে টাকা আসার কার্যক্রম সরকারকে নিতে হবে। অর্থনীতি যাতে বসে না যায়, বিনিয়োগ যেন থমকে না যায়। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আমলাতন্ত্র কমাতে হবে। বিনিয়োগকে অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। না হলে মানুষ কাজ পাবে না। সরকারকে তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা দীর্ঘ সময়ে অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়।

সর্বোপরি ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনীতির রক্ত প্রবাহ হিসেবে পরিচিত হলেও এ খাতের দুর্বল ভিত্তি শক্ত করাও সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ খাতকে শক্তিশালী করার কথা বলা হচ্ছে সর্বমহল থেকেই। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে এ খাত চরম নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ঋণখেলাপি, পরিচালকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির অভাব ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় এ ব্যাংকিং খাতই সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার একটি বড় অংশ জোগান দিয়েছে। সরকারের দুঃসময়ে ব্যাংকিং খাতই অর্থের প্রবাহ ধরে রাখে। তাই আগামী দিনে অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে, তখনো ব্যাংকিং খাত বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য এ খাতকে শক্তিশালী করা, খেলাপি ঋণ আদায়, দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি উঠেছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা গেলে করোনার ক্ষতিতেও অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়।

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে নারীদের আরো বেশি কাজে সম্পৃক্ত করা, তাদের গৃহস্থালী কাজকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আওতায় আনাও সরকারের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। চলমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে বেশি বেশি কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করার চাপ আছে সরকারের সামনে। সরকারের সামনে বিভিন্ন খাতকে চাঙ্গা করার চ্যালেঞ্জও আছে। শিল্প ও সেবা খাত চাঙ্গা না থাকলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্মসংস্থান তৈরিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

| আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ১৪:৩১ | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২০, ১৪:২১

করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্পে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

শনিবার বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঋণের ফলে এক লাখ নারীসহ কমপক্ষে আড়াই লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে আর বেসরকারি বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরসি টেমবোন বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীটি দারিদ্র্য নিরসন ও জনমিতির সুবিধার সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য অর্জনকে গভীরভাবে বিপদে ফেলেছে। এই প্রকল্পগুলি ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি বাড়ানোর সাথে সাথে আরও বেশি উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে জনগণ ও অর্থনীতিকে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।

৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ থেকে মূলধন নিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ (পিআরইডি) প্রকল্পর আওতায় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগ হবে। যেটা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়ার পার্কে হবে। যা প্রায় ১.৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। যার মধ্যে সফটওয়্যার পার্কে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ শতাংশ চাকরি নারীদের জন্য।

এ ছাড়া অর্থনীতি ও ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা বিষয়ক প্রকল্পে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যার ফলে সরকারী খাতের আইটি বিনিয়োগে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ লাখ তরুণকে আইটির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি নারীদের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করবে, ডিজিটাল এবং বিপর্যয়কর প্রযুক্তিতে এক লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেবে, এবং একটি ডিজিটাল নেতৃত্বের একাডেমী এবং শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র স্থাপন করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় আইটি সংস্থাগুলিকে প্রচার করতে সহায়তা করবে। মহামারী থেকে দুর্বলতাগুলি হ্রাস করতে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে, প্রকল্পটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং কৌশলগত শিল্পকে ডিজিটালাইজ করতে সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংক আজ এই দুটি প্রকল্প ঋণ ছাড়াও বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থায়নটি বাংলাদেশ, নারী, যুবক এবং অভিবাসী শ্রমিকসহ নাগরিকদের জন্য বৃহত্তর কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করবে বলে জানান বিশ্বব্যাংক।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/জেআর/ইএস)

কাজ হারানোর ঝুঁকিতে ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

| আপডেট : ১৮ জুন ২০২০, ২২:৩৭ | প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২০, ১৯:৩৫

করোনা মহামারীর প্রভাবে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক কর্মহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, যারা অস্থায়ী কিংবা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ‘এসডিজি’র নতুন চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এই সংলাপের আয়োজন করে।

এসডিজি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল প্রতিবেদন উপস্থান করেন। ২০১৬-১৭ শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্ত পর্যালোচনা এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকের এ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম গ্রহণের তাগিদ দিয়ে বক্তারা বলেন, ‘মহামারীর কারণে সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি কাঠামোকে বিশেষভাবে সন্নিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দেশের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দিতে হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) বলেন, ‘চলমান সংকট থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সরকার একটি স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রম হাতে নেবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রমেই দেশের ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারটি বিবেচনায় থাকবে।’

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উন্নয়নকর্মী, বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, যুব প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বাজেট বিশ্লেষণ : ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিতে

কর্মসংস্থানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

Smokal-20-6-20

মনে হচ্ছে কভিড-১৯ পরিস্থিতি সহজে আমাদের ছাড়ছে না। করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এখনও বাড়ছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিও তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে সময় নিচ্ছে। সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, সেটি অর্জন করতে হলে স্বাস্থ্যসেবাকে ঠিক রেখে আমাদের আর্থিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি সচল রাখার কোনো বিকল্প নেই। এই করোনা মহামারির মধ্যে দেশে কৃষি খাত স্বাভাবিক ছিল। এটি আমাদের জিডিপির জন্য ইতিবাচক। তবে প্রবৃদ্ধির বাকি পথ অর্জন করতে হবে শিল্প ও সেবা খাতের মাধ্যমে।
করোনার কারণে দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ করছে। এই খাতের অনেক কর্মী কাজ হারিয়েছেন। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি বড় খাত হচ্ছে অপ্রতিষ্ঠানিক খাত। বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ করছে এ খাতে। নির্মাণকর্মী, রিকশাচালক, রেস্তোরাঁ কর্মী, ফুটপাতের বিক্রেতাসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। ফলে ভোক্তা ব্যয়ও কমেছে। ভোক্তা ব্যয় অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি করে। কিছু মানুষ এই চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন ও বিপণন কাজে যুক্ত হন। তারা যে আয় করেন, সেটা আবার ভোগে ব্যয় হয়, চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু আয় কমে গেলে চাহিদায় প্রভাব পড়বে, সেটি স্বাভাবিক।
তবে এত কিছুর পরও আশার বাণী শোনাতে চাই যে, বর্তমানে খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এ বছর কৃষির উৎপাদন ভালো হয়েছে। এই কারোনাকালেও কৃষক মাঠে কাজ করেছেন এবং ভালো ফসল ফলিয়েছেন। এর ফলে তাদের হাতে অর্থ আসছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের কোম্পানি হিসেবে এ ক্ষেত্রে প্রাণ ভালো করছে। আমাদের আরএফএলের ব্যবসাও এখন আস্তে আস্তে ভালোর দিকে এগোচ্ছে। এখন কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আর্থিক কমকাণ্ড সচল হচ্ছে।
রপ্তানি খাতেও আমাদের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। যারা আগে আমাদের ক্রেতা ছিল না, তারাও চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশে থেকে পণ্য কেনার কথা ভাবছে। তারা এখন বিকল্প বাজারের কথা ভাবছে। বাংলাদেশ এ সুযোগটি নিতে পারে। আমার মনে হয়, রপ্তানি বাজারে আমরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারব। পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতেও রপ্তানি আয় বাড়বে। সুতরাং আমাদের রপ্তানি খাত যদি পুরো ফিরতে পারে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং সরকার যদি উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে তবে আগের জায়গায় ফিরে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
করোনা মহামারির মধ্যেও সরকার আর্থিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি খুবই সময়োপযোগী। সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়াটা জরুরি। প্রকৃত ব্যক্তিরা যেন এই প্যাকেজের আওতায় আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা খাত ও ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তারা যেন সহায়তা পায়। যেমন- দেশের ২৫ লাখের মতো দোকান মালিক রয়েছেন, যারা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সচল রাখেন, তাদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকিং খাত এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বেসরকারি খাতকে যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা ব্যাংকনির্ভর। ব্যাংক খাত এমন একটি খাত, যেটি সমস্যায় পড়লে দেশের পুরো ব্যবসায়িক পরিস্থিতি খারাপ হবে। কোনো অবস্থায় ব্যাংক খাতকে বিপাকে ফেলা যাবে না। তাই সরকারকে এই খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা দেখছি, করোনা-পরবর্তী ইউরোপ ও আমেরিকা কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বের হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে নিচ্ছে। আমাদের সরকারকে এখন কর্মসংস্থান তৈরিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, মানুষ কাজে ফিরলে তাদের হাতে টাকা আসবে। এ জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নতুন নতুন পণ্যে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। সরকার কৃষি খাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি আরও বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মানুষের হাতে নগদ টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই আমরা করোনা মহামারি জয় করে অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে পারব।
লেখক :চেয়ারম্যান ও সিইও, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

বাংলাদেশ

‘কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব’

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব’

 প্রকাশ: ৩২ মিনিট আগে     আপডেট: ১৪ মিনিট আগে   

অনলাইন ডেস্ক

উদ্যোক্তাতৈরিরমাধ্যমেআত্মকর্মসংস্থানেব্যবস্থাকরেচলমানকরোনামহামারিরকারণেসৃষ্টিহওয়াকর্মসংস্থানেরসংকটনিরাসনসম্ভব।সম্প্রতিবাংলাদেশআওয়ামীলীগেরগবেষণাপ্রতিষ্ঠানসেন্টারফররিসার্চঅ্যান্ডইনফরমেশন (সিআরআই) একগবেষণারফলাফলথেকেএইতথ্যজানায়পলিসিব্রিফে।সেখানেআরওবলাহয়েছে, আগামীবছরেরমধ্যেচলতিসমস্যাকাটিয়েঘুরেদাঁড়ানোসম্ভব।বাংলাদেশঅ্যাটওয়ার্ক: জবক্রিয়েশনঅ্যান্ডইনক্লুসিভগ্রোথইনদ্যএরাঅফকোভিড১৯শিরোনামেরগবেষণাপ্রবন্ধেকথাজানানোহয়।সিআরআইএরজন্যযৌথভাবেগবেষণাটিকরেছেনইমরানআহমেদসৈয়দমফিজকামাল।

গবেষণারপূণাঙ্গপ্রতিবেদনঅল্পকিছুদিনেরমধ্যেইপ্রকাশকরাহবেবলেজানিয়েছেগবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি।পাঠকেরউদ্দেশ্যেগবেষণাটিরসারসংক্ষেপসম্পূর্ণতুলেধরাহলো:

কোভিড১৯মহামারিবাংলাদেশেরমানুষেরস্বাস্থ্যনিরাপত্তাবিপর্যস্তকরেচলেছে।বাধ্যতামূলকছুটিরকারণেঅর্থনীতিরগতিনিম্নমুখী।স্বল্পআয়েরএবংশ্রমঘনপ্রতিষ্ঠানেচাকরিরসঙ্গেযুক্তরাসবচেয়েবেশিক্ষতিগ্রস্ত।সবচাকরিরবড়অংশইঅপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে।উল্লেখযোগ্যসংখ্যকরয়েছেক্ষুদ্রমাঝারিশিল্পেযুক্ত।বলাযায়, সবখাতেরকর্মজীবীউদ্যোক্তাসবচেয়েবেশিআক্রান্ত।কর্মীরাঅস্থায়ী।অর্থনীতিস্বাভাবিকহতেশুরুকরলেতাদেরকাজেরসুযোগসৃষ্টিহবে।অবশ্য, স্থায়ীধরনেরপ্রতিষ্ঠানেনিয়োজিতদেরএকটিঅংশওচাকরিহারাবে।সিআরআইয়েরহিসেবে, চাকরিচ্যুতিরস্থায়ীপ্রভাবপড়বেআনুমানিক৬০লাখলোকেরওপর, যাবেকারত্বেরহারপ্রায়দ্বিগুণকরবে।মোটপ্রায়কোটি৪০লোকএরযন্ত্রণাভোগকরবে।

বর্ধিতবেকারত্বমৌলিকপ্রয়োজনযথাযথমেটাতেনাপারারকারণেদরিদ্রজনগোষ্ঠীতেনতুনএকটিধারাযুক্তকরবে, যাদেরনব্যদরিদ্রহিসেবেঅভিহিতকরাযায়।কোভিড১৯সংশ্লিষ্টঅর্থনৈতিকবিশৃঙ্খলারকারণেউপার্জনহারিয়েতারাদারিদ্রসীমারনিচেচলেএসেছে।নব্যদরিদ্রেরসংখ্যাদাঁড়াবেআনুমানিককোটি৮০লাখগ্রামেকোটি৭০লাখশহরেকোটি১০লাখ।এভাবেনব্যদরিদ্রেরহারদাঁড়াবে২২.শতাংশ।বিদ্যমান১৮.শতাংশদরিদ্রেরসঙ্গেতারাযুক্তহবে, মোটদরিদ্র্যহারদাঁড়াবে৪১.শতাংশ।

বাংলাদেশেরনীতিনির্ধারকরাআর্থিকমুদ্রাপ্রণোদনারসমন্বয়েএকটিপ্যাকেজইতিমধ্যেঘোষণাকরেছে, যারপরিমাণলাখকোটিটাকারবেশিজিডিপির.শতাংশ।কিন্তুআমাদেরমনেরাখতেহবে, কর্মসংস্থানবিহীনপুনরুদ্ধারগতএকদশকেঅর্জিতআর্থসামাজিকঅগ্রগতিকেচরমঝুঁকিতেফেলতেপারে, বিশেষকরেআমাদেরদেশেস্বাভাবিকসময়েইযখনতরুণদেরমধ্যেবেকারত্বেরহারউচ্চমাত্রায়।অবস্থায়কমদক্ষমানুষেরজন্যআয়তুলনামূলককমহলেওকর্মসংস্থানসৃষ্টিরলক্ষ্যসামনেরেখেআরওকিছুখাতভিত্তিকপ্রণোদনাবাজেটবরাদ্দপ্রয়োজন, অন্তর্ভুক্তিমূলকবাসবারজন্যউন্নয়নপ্রবৃদ্ধিরজন্যযাঅপরিহার্য।

নীতিনির্ধারকদেরকাছেকর্মসংস্থানসৃষ্টিরজন্যকিছুপদক্ষেপেরসুপারিশএখানেতুলেধরাহলো:

. শ্রমঘনউপখাতগুলোতবাড়তিপ্রণোদনারব্যবস্থাকরা, যাথেকেবাংলাদেশঅভ্যন্তরীণচাহিদাপূরণবাড়তিপণ্যরফতানিকরতেপারে।কৃষি, গবাদিপশুমৎস্যউপখাতসহ, কর্মসংস্থানেরসবচেয়েবড়খাতযেখানেশ্রমদানেরউপযোগীমানুষের৪১শতাংশনিয়োজিত।জিডিপিতেখাতেরঅবদান১৩.শতাংশ।তদুপরি, অভ্যন্তরীণচাহিদাপূরণকরেবাড়তিপণ্যরফতানিরসুযোগরয়েছে।উচ্চকর্মস্থানসৃষ্টিরঅন্যান্যসংশ্লিষ্টখাতহচ্ছেতৈরিপোশাক, চিকিৎসাসংক্রান্তপণ্যসরঞ্জামউৎপাদন, খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহনলজিস্টিক, খুচরাব্যবসা, নির্মাণ, ওষুধস্বাস্থ্যসেবা।

. শ্রমঘনঅবকাঠামোপ্রকল্পসমুহেরকাজযতদ্রুতসম্ভবশুরু।

. এমএসএমইএরমতোঅপ্রাতিষ্ঠানিকখাতেযাদেরব্যাংকঋণসুবিধাপাওয়ারসুযোগনেই, তাদেরঅর্থায়নেরজরুরিব্যবস্থাগ্রহণ।সরকারব্যাংকগুলোরপাশাপাশিপিকেএসএফএরমাধ্যমেক্ষতিগ্রস্তব্যবসায়সহায়তাদিতেপারে।কাজেএমএফআইপার্টনারদেরমাধ্যমেবিদ্যমানএসএমইগ্রহীতাদেরপাশেদাঁড়ানোসম্ভব।ডিজিটালআর্থিকসেবা, আনুষ্ঠানিকব্যাংকিংব্যবস্থাঋণপ্রদানেরক্ষেত্রেঝুঁকিভাগাভাগিকরেনেওয়া, সবেরমধ্যেএকটিসমন্বিতকৌশলউদ্ভাবনকরাচাই।

.স্বাস্থ্যকর্মীদেরপ্রশিক্ষণপ্রবাসথেকেফিরেআসাকর্মীদেরদক্ষতাবৃদ্ধিরজন্যদক্ষতাউন্নয়নকর্মসূচিরপ্রতিবাড়তিনজরদান।

. অঞ্চলভিত্তিকঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডকর্মসংস্থানবাড়ানোরজন্যআমারগ্রাম, আমারশহরউদ্যোগকেফাস্টট্র্যাকঅন্তর্ভুক্তকরা।

প্রাসঙ্গিকবিষয়াদি:

কোভিড১৯মহামারিবাংলাদেশেশতশতমানুষেরপ্রাণসংহারকরেছে।এরবাইরেওঅর্থনৈতিক, সামাজিকমানবিকসংকটদেখাদিয়েছে।কোভিড১৯ভাইরাসেরবিস্তৃতিরোধেরজন্যবাজারসীমান্তবন্ধকরা, চলাচলসীমিতরাখাসামাজিকদূরত্ববজায়রেখেচলাচলেরপদক্ষেপনেওয়াহয়েছে।এরআশুপ্রধানতনেতিবাচকপ্রভাবপড়েছেশ্রমঘনকর্মসংস্থানে।শিল্পকারখানা, কৃষিখামার, খুচরাব্যবসা, পর্যটন, পরিবহনবাজারচেইনসবখাতসবচেয়েবেশিক্ষতিগ্রস্তহয়েছে।

অনানুষ্ঠানিকখাতবিশেষভাবেনিম্নমুখী।বেঁচেথাকারজন্যকোটিশ্রমশক্তির৮৪শতাংশএখনওকৃষি, দিনচুক্তিভিত্তিকনির্মাণকাজ, পরিবহন, কিংবাশহরেররাজপথেফুটপাতেহকারেরমতোকোনোনাকোনোধরনেরঅনানুষ্ঠানিকখাতকিংবাস্বল্পআয়েরশ্রমেরসঙ্গেযুক্ত।

. সবচাকরিরসঙ্গেযুক্তরাস্বল্পদক্ষতার, নিম্নআয়ের।খাতওয়ারিকর্মসংস্থানেরয়েছেঅসমতা।খাতেরশ্রমিকউদ্যোক্তারাএসেছেনকমআয়েরপরিবারথেকে।তাদেরনগদঅর্থেরপ্রবাহকম।স্বাস্থ্যবীমাবানিরাপত্তাবলতেকিছুনেই।

খাদ্যমজুদলজিস্টিকব্যবস্থায়বিঘ্নসৃষ্টিহওয়ায়খাদ্যঘাটতিদেখাদিয়েছে।দামেওরয়েছেওঠানামা।তদুপরি, তরুণযুবকশ্রমশক্তির (৩৫বছরেরকমবয়স্করাই৪৩শতাংশ) মধ্যেসঞ্চয়েরপ্রবণতাউল্লেখযোগ্যভাবেকম।

. এরসঙ্গেযুক্তহয়েছেক্রয়ক্ষমতাকমেযাওয়া, খাদ্যঅন্যান্যনিত্যপ্রয়োজনীয়প্রাপ্যতারসুযোগকমেযাওয়া।সুবিধাবঞ্চিতজনগোষ্ঠীসঞ্চয়ভাঙিয়েচলবেকিংবাআয়েরউৎসবহুমুখীকরবেএটাওকার্যকরবিকল্পনয়।এভাবেবেশিদিনচলাতাদেরপক্ষেসম্ভবনয়।সঙ্গতকারণেইঅনেকেরজন্যবেঁচেথাকাখাদ্যনিরাপত্তাঝুঁকিরমুখে।

কোভিড১৯মহামারিকেবলকর্মসংস্থানউপার্জনকমিয়েদেয়নি, সার্বিকঅর্থনীতিতেওবিরূপপ্রভাবফেলেছে।বিশ্বব্যাংকেরপ্রাক্কলনহচ্ছেচলতিঅর্থবছর (২০১৯২০) আগামীঅর্থবছর (২০২০২১) অর্থনৈতিকপ্রবৃদ্ধিঘটবেশতাংশ।

. গতমার্চ, ২০২০, এশীয়উন্নয়নব্যাংকবাএডিবিরএকসমীক্ষায়দেখানোহয়েছেজিডিপিপ্রবৃদ্ধি.শতাংশেনেমেযেতেপারে (সবচেয়েখারাপঅবস্থাতৈরিহলে)এরঅর্থহচ্ছ, কোভিড১৯অর্থনীতিথেকেপ্রায়বিলিয়নডলারহাওয়াকরেদিতেপারে।রফতানিউন্নয়নব্যুরোরমূল্যায়নেবলাহয়েছে, ২০২০অর্থবছরেরফতানিআয়পূর্ববর্তীবছরথেকেবিলিয়নডলারকমহতেপারে (অর্থাৎ২০শতাংশপর্যন্তনেতিবাচকপ্রবৃদ্ধি।প্রবাসীদেরপ্রেরিতঅর্থ, যাগ্রামীণপরিবারগুলোতেভোগেরচাহিদাবৃদ্ধিতেগুরুত্বপূর্ণভূমিকারাখে২০২০সালেরমার্চমাসেকমেছে১২শতাংশএবংএপ্রিলে৩০শতাংশ।আগামীমাসগুলোতেপ্রবাহআরওকমতেপারে।বিশ্বব্যাংকেরপূর্বাভাস, ২০২০সালেরেমিট্যান্সপ্রবাহ২২শতাংশকমবে।

নিবন্ধেবিভিন্নখাতেকোভিড১৯মহামারিরপ্রভাবআলোচনাকরাহয়েছে।যেমন, চাকরিহারানোবাবেকারত্ব।যেসবউপাদানচাকরিসৃষ্টিতেসহায়তাকরেতারপ্রতিওআলোকপাতকরাহয়েছে।কর্মসংস্থানপ্রশ্নেসরকারেরযেসবউদ্যোগরয়েছেতাওপর্যালোচনাকরাহয়েছে।সবশেষেরয়েছেঅর্থনৈতিকপুনরুদ্ধারেরজন্যসক্রিয়ানীতিনির্ধারকদেরজন্যকিছুসুপারিশ।২০২০২১অর্থবছরেরজন্যওকরণীয়আমরাতুলেধরেছি।

কাজহারানোরযন্ত্রণা:

বাংলাদেশেরপ্রেক্ষাপটেকোভিড১৯মহামারিদুইধরনেরচাকরিচ্যুতিঘটিয়েছেলকডাউনেরপ্রভাবেসাময়িকচাকরিহারানোএবংস্থায়ীভাবেচাকরিহারানো।বিভিন্নসূত্রেরহিসাবথেকেঅনুমানলকডাউনেরদুইমাসেসাময়িকচাকরিহারানোলোকসংখ্যাকোটি২০লাখথেকেকোটি৭০লাখ।সংখ্যাচারটিপ্রধানখাতবন্ধথাকারতথ্যেরওপরভিত্তিকরেপ্রণীতহয়েছে৭০লাখক্ষুদ্রকুটিরশিল্পবাএসএমইশ্রমিক, ৫০লাখপরিবহনশ্রমিক (রিকশাচালকসিএনজিঅটোরিকশাচালকসহ), ৩০লাখনির্মাণশ্রমিক৩০লাখম্যানুফ্যাকচারিংবাশিল্পশ্রমিক (এমএসএমইম্যানুফ্যাকচারিংসহ)

. লাইটক্যাসলকনসালটিংফার্মেরমতে, কৃষিখাতেআরওকোটিলোকউপার্জনেরসুযোগথেকেবঞ্চিতহয়েছে।

. সবযুক্তকরলেকাজহারানোলোকেরসংখ্যাপ্রায়আড়াইকোটিদাঁড়াবে।

অনেকচাকরিহারানোরঘটনাঘটেছেসরকারআরোপিতবিধিনিষেধেরকারণে (নিবন্ধেমাসেরহিসাবদেখানোহয়েছে)চাকরিহারানোসাময়িক।

. বেশিরভাগরিকশাচালক, বাসট্রাকশ্রমিকসিএনজিচালকঅর্থনীতিরস্বাভাবিককার্যক্রমশুরুরসঙ্গেসঙ্গেধীরেধীরেকাজেফিরবে।অনেকদিনমজুরফসলকাটারমৌসুমেকাজফিরেপাবে।নির্মাণশিল্পসম্পর্কেওএকইকথা।পোশাককারখানাখোলারকারণেঅনেকেরবেকারত্বঘুচেযাবে।

তবেবাণিজ্যউৎপাদনখাতেএড়ানোরঅযোগ্যঅধোগতিরকারণেঅনেকলেঅফস্থায়ীরূপনেবে।সবচাকরিজীবিকারওপরকোভিড১৯মহামারিরপ্রভাবনির্ধারণেপ্রধানউপাদানহবে।বাংলাদেশহেলথওয়াচব্র্যাকবিশ্ববিদ্যালয়েরটেলিফোনভিত্তিকএকসার্ভেতেদেখাযায়, রফতানিআদেশব্যাপকহারেবাতিলএবংভবিষ্যৎরফতানিসম্ভাবনায়অনিশ্চয়তারকারণেঅন্তত৪৭শতাংশপোশাকশ্রমিক (যেসংখ্যাদাঁড়াবে২৩লাখ) তৈরিপোশাকশিল্পেরশ্রমিকচাকরিহারাতেপারে।

. কয়েকটিনির্বাচিতখাতেকর্মসংস্থান:

১৫লাখরিকশাশ্রমিক

৩৬লাখপোশাকশ্রমিক

৫২লাখপরিবহনশ্রমিক

২৬লাখনির্মাণশ্রমিক

২৪লাখহকার

স্থায়ীচাকরিহারোনারঅভিঘাত : বিভিন্নসূত্রথেকেপাওয়াহিসেব

সূত্রবেকার (মিলিয়ন) ক্ষতিগ্রস্তদেরওপরআর্থিকপ্রভাব

                                  (মিলিয়ন)

বিশ্বব্যাংক২৮

এডিবি১৬

পিআরআই১২৫৮

সিআরআই২৪

সিপিডি     –                   ৫৬

পিপিআরসি / বিআইজিডি৭০

নিউজইন্টারভিউস৫০

বাংলাদেশেনতুনবেকারসংখ্যানিয়েসিআরআইহিসাব (কোভিড১৯কালেচাকরিহারানো) মিলিয়ন, যামোটশ্রমশক্তির১০শতাংশ।প্রতিপরিবারেগড়েজনধরলেপ্রায়২৪মিলিয়নবাদুইকোটি৪০লাখলোককোভিড১৯এরকারণেদীর্ঘসময়েরজন্যআর্থিকক্ষতিরসম্মুখীনহয়েছে।

. দারিদ্র্যপরিস্থিতি: ‘নব্যদরিদ্র

জীবনযাত্রা, আয়দারিদ্র্যপরস্পরসম্পর্কযুক্ত।২০১০সালথেকেবাংলাদেশেদারিদ্র্যহারধারাবাহিকভাবেকমছে, বছরে.শতাংশকরে।জীবিকাহারানোতারপ্রভাবেআয়কমেযাওয়ারকারণেকরোনামহামারিদরিদ্রমানুষেরসংজ্ঞায়একটিউপধারাযুক্তকরেছে– ‘নব্যদরিদ্র

কোভিড১৯এরপ্রভাবেদারিদ্র্যচিত্রবিভিন্নসূত্রেপাওয়াহিসাব

৪১.৩৯.৩৩.

পিপিআরসি/বিআইজিডিপিআরআইবিআইডিএস

পিপিআরসি/বিআইজিডিএরএকসার্ভেতে (১৭এপ্রিল, ২০২০) দেখানোহয়েছে, দরিদ্রঅতিদরিদ্রজনগোষ্ঠীরউপার্জনবিপুলভাবেকমেগেছে।তাৎক্ষণিকহিসাবেদেখাযায়, শহরেরবাসিন্দাদেরআয়গড়ে৮২শতাংশকমেগেছে (২০২০সালেরফেব্রুয়ারিতেমাসিকআয়েরসঙ্গেতুলনা)গ্রামেরউত্তরদাতারাবলেছেন, আয়কমেছে৭৯শতাংশ।. কোভিড১৯এরপ্রভাবেযেঅর্থনৈতিকবিপর্যয়দেখাদিয়েছেতারকারণেনব্যদরিদ্রদাঁড়াবে৩৮মিলিয়ন২৭মিলিয়নগ্রামেএবং১১মিলিয়নশহরে।অতএব, নতুননব্যদারিদ্র্যহারদাঁড়াবে২২.শতাংশ।বিদ্যমানদারিদ্র্যহার১৮.শতাংশ।মোটদরিদ্র্যহারলাফিয়েদাঁড়ায়৪১.শতাংশ।পিআরআইভোগপ্রবণতাথেকেদারিদ্র্যচিত্রতৈরিকরেছে।ভোগব্যয়কমেযাওয়ারহিসাবথেকেবলাযায়মোটদরিদ্রদাঁড়াবে৩৪.৪৫.শতাংশ।১০. পিআরআইয়েরপ্রাক্কলনঅনুযায়ীমোটনতুনদরিদ্রদাঁড়াবে১২.মিলিয়ন২৬মিলিয়নেরমধ্যে।বিআইডিএসএরহিসাবেনতুনদরিদ্রদাঁড়াবে২৪মিলিয়ন (১৮মিলিয়নশহরে১৫.মিলিয়নগ্রামে) নব্যদারিদ্র্যহারবেড়েদাঁড়াতেপারে৩৩.শতাংশ।

১১. এমএসএমইএরগুরুত্বঅনানুষ্ঠানিকখাত:

অনানুষ্ঠানিকঅর্থনীতিরসঙ্গেপ্রায়কোটি১০লাখকর্মীজড়িত, যারমধ্যেকৃষিখাতেযুক্তদেরওধরাহয়।বাংলাদেশেএমএসএমই (মাইক্রো, ক্ষুদ্রমাঝারিপ্রতিষ্ঠান) খাতঅনানুষ্ঠানিকখাতেরমধ্যেপার্থক্যটানাওকঠিন।একটিকেআরেকটিরভেতরেওফেলাচলে।বাংলাদেশেপ্রায়এককোটিএমএসএমইপ্রায়এককোটি৮০লাখলোকেরকর্মসংস্থানকরছে।

১২. ২০১৫সালেএডিবিরএকবিশ্লেষণেবলাহয়, জিডিপিতেএমএসএমইএরঅবদান২৫শতাংশেরমতো।মোটউৎপাদনের৪০শতাংশআসেখাতথেকে।

১৩. এসএমইফাউন্ডেশনএরহিসাবঅনুযায়ীবেসরকারিখাতেরপ্রতিতিনটিচাকরিরক্ষেত্রেএমএসএমইএরঅবদানদুটি।লাইটক্যাসলপার্টনারসদেখিয়েছে, কৃষিতেমোটকর্মসংস্থানের৭০৮০শতাংশসৃষ্টিকরছেএমএসএমইখাত।

১৪. গ্রাফঅনানুষ্ঠানিকখাতেকর্মসংস্থানেরচিত্র

৪৮.৩৪.১৬.

শিল্পসেবাকৃষি

কর্মসংস্থানপ্রবৃদ্ধি : খাতওয়ারিচিত্র

কর্মসংস্থানেবিভিন্নখাতেরঅবদানঅনুসারেজিডিপিতেঅবদাননাওহতেপারে।কর্মসংস্থানেসর্বোচ্চপাঁচটিখাতের (কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, বাণিজ্য, পরিবহনলজিস্টিকএবংনির্মাণ) অবদান৮৪শতাংশ, কিন্তুজিডিপিতেতাদেরঅবদান৭০শতাংশ।

১৫. পশুপালনমৎসউপখাতসহকৃষিখাতমোটকর্মসংস্থানে৪১শতাংশঅবদানরাখে, কিন্তুজিডিপিতেঅবদানমাত্র১৩.শতাংশ।আনুপাতিকঅবদানবিবেচনায়রেখেআমরাবলতেপারি, জিডিপিতেকৃষিখাতেরঅবদানশতাংশবাড়লেকর্মসংস্থানবাড়েশতাংশ।

১৬. থেকেআমরাদেখতেপাইস্বল্পউৎপাদনশীলতাস্বল্পআয়েরসম্পর্ক।খাতঅভ্যন্তরীণচাহিদামিটিয়েরফতানিআয়েরওসুযোগসৃষ্টিকরতেপারে।

কৃষিখাতমোটকর্মসংস্থানে৪১শতাংশঅবদানরাখে, কিন্তুজিডিপিতেঅবদানমাত্র১৩.শতাংশ

উচ্চউৎপাদনশীলম্যানুফাকচারিংথেকেআসেজিডিপিরপ্রায়একচতুর্থাংশ।মোটকর্মসংস্থানেখাতেরঅবদান১৪শতাংশ, কিন্তুএটাওমনেরাখতেহবেকর্মসংস্থানেখাতেরগুণিতকঅবদানরয়েছে।অর্থনীতিবিদজায়েদিসাত্তারেরএকনিবন্ধেবলাহয়েছেতৈরিপোশাকশিল্প, নিটিং, ফার্নিচার, খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতহাল্কাপ্রকৌশলএরমতোম্যানুফ্যাকচারিংখাতচাকরিররয়েছেগুণিতকপ্রভাব।আসন্নবিশ্বমন্দারকারণেরফতানিমুখীতৈরিপোশাকশিল্পবিশেষভাবেঝুঁকিরমুখেরয়েছে।

বাণিজ্য (পাইকারিখুচরা), পরিবহনলজিস্টিকএবংনির্মাণেরমতোখাতঅভ্যন্তরীণচাহিদারদ্বারাপরিচালিতহয়।কর্মসংস্থানজিডিপিতেরয়েছেসবখাতেরভারসাম্যপূর্ণঅবদান।

অন্যযেসবখাতেরউল্লেখকরতেহয়সেগুলোহচ্ছেশিক্ষা, স্বাস্থ্যসরকারিখাতবাপাবলিকসেক্টর।বর্তমানপ্রেক্ষাপটেস্বাস্থ্যসেবাবিশেষগুরুত্বপূর্ণ।শিক্ষাখাতশ্রমঘন।সরকারিখাতেতাৎক্ষণিকভাবেকর্মসংস্থানসৃষ্টিহতেপারে।পুঁজিঘনসরকারিঅবকাঠামোপ্রকল্পগুলোতেওউল্লেখযোগ্যসংখ্যকস্বল্পমজুরিরকর্মীনিয়োগহতেপারে।

জিডিপিরঅনুপাতেখাতওয়ারিকর্মসংস্থানেরহিস্যা:

খাতকর্মসংস্থানেহিস্যাজিডিপিতেহিস্যা

কৃষি৪১%                         ১৪%

ম্যানুফ্যাকচারিং

প্রসেসিং১৪%                      ২৪%

পাইকারি

খুচরাব্যবসা১৪ %                   ১৩%

পরিবহন

লজিস্টিক%                   ১১%

নির্মাণ%                    %

শিক্ষা%                 %

গৃহকর্ম%                 %

অতিথিসেবা%                %

সরকারিখাত%          %

স্বাস্থ্যএমএফআই%      %

ডাক, টেলিকমপ্রযুক্তি%     %

আর্থিকখাত%%

এনার্জি%             %

রিয়েলএস্টেট%       %

অন্যান্যসেবা%        ১০%

সূত্র: ন্যাশনালঅ্যাকাউন্ট২০২০, বিবিএসলেবারফোর্সসার্ভে২০১৬১৭, বিবিএস; সিআরআইবিশ্লেষণ

#নোট: সারণীরহিসাবরাউন্ডফিগারে।

##নোট: কর্মসংস্থানেরতথ্যউপাত্ত২০১৭১৮অর্থবছরের, জিডিপিতথ্যউপাত্ত২০১৯২০অর্থবছরেরসরকারিপদক্ষেপতারবিশ্লেষণমূল্যায়ন।

করোনাসমস্যাবাকোভিড১৯মোকাবিলায়বাংলাদেশসরকারইতিমধ্যেইস্বল্পমেয়াদিকিছুপদক্ষেপগ্রহণকরেছে।সরকারেরঅর্থনৈতিকপ্রণোদনাসাধারণভাবেভালসাড়াফেলতেপেরেছে।কারণএটাযথেষ্টসমন্বিতঅন্তর্ভুক্তিমূলকএবংএরলক্ষ্যঅর্থনীতিরসবগুরুত্বপূর্ণশাখারপুনর্গঠনসক্রিয়করারজন্যঅতিপ্রয়োজনীয়অর্থেরজোগানদান।বিশেষভাবেনীতিনির্ধারকরাএকসঙ্গেআর্থিকমুদ্রাপ্রণোদনারব্যবস্থাকরেছে।অর্থেরপরিমাণলাখকোটিটাকারবেশি (জিডিপির.%)এরউদ্দেশ্যস্পষ্টঅপরিহার্যভোগেরসামগ্রীরসংস্থানেরজন্যশিল্পসেবাখাতেরকর্মীরাযেনবেতনএবংস্বল্পআয়েরপরিবারগুলোনূন্যতমউপার্জনবাখাদ্যসরবরাহপায়।

চাকরিসংশ্লিষ্টযেসবপ্রণোদনাপ্যাকেজ (পর্যন্তঘোষিত) ঘোষণাকরাহয়েছেতারমূলদিকসমূহএখানেতুলেধরাহলো:

# বাণিজ্যিকব্যাংকেরমাধ্যমেশিল্পসেবাখাতে৩০হাজারকোটিটাকাচলতিমূলধনজোগান।ঋণেরসুদহারহবেশতাংশ, যারঅর্ধেকদেবেঋণগ্রহীতাএবংবাকিঅর্ধেকভর্তুকিহিসেবেদেবেবাংলাদেশসরকার।

# এমএসএমইখাতে২০হাজারকোটিটাকাচলতিমূলধনজোগান।ঋণগ্রহীতাসুদদেবেশতাংশ, বাকিশতাংশসরকারদেবেভর্তুকিহিসেবে।

# কৃষিখাতেভর্তুকিহাজার৫০০কোটিটাকা।

# কৃষিপণ্যেরব্যবসারজন্যবাণিজ্যিকব্যাংকেরমাধ্যমেহাজারকোটিটাকারচলতিমূলধনজোগান।শস্যভিত্তিকশিল্প (যেমনহরটিকালচারপবাদিপশুপালন) এরবাইরেথাকবে।ঋণগ্রহীতাসুদদেবেন% এবংব্যাংকগুলোবাংলাদেশব্যাংকেরমাধ্যমেশতাংশসুদপাবে।

# রফতানিমুখীলিল্পেরকর্মীদেরবেতনপরিশোধেরজন্যহাজারকোটিটাকাজোগান।ঋণেরসুদহারহবেশূন্যশতাংশ।ব্যাংকএকবারেরজন্যশতাংশসার্ভিসচার্জকরতেপারে।

# প্রবাসথেকেআসাকর্মী, বেকারযুবকযুবতীগ্রামীণজনগোষ্ঠীরজন্যহাজারকোটিটাকাসফটঋণপ্রদান।গ্রামীণঅর্থায়নেযুক্তচারটিপ্রতিষ্ঠানঋণবিতরণকরবে।

# সাধারণছুটিরকারণেচাকরিহারানোদেরজন্য৭৬০কোটিটাকাঋণ।

প্রবাসথেকেযেসবকর্মীফিরেএসেছেতাদেরব্যবসাশুরুরজন্য৭০০কোটিটাকাসফটঋণপ্রদান।

# শহরএলাকায়খোলাবাজারেপণ্যবিক্রিরজন্য২৫০কোটিটাকাভর্তুকিপ্রদান।

যেসবগুরুত্বপূর্ণবিষয়বিবেচনাকরতেহবে:

বাংলাদেশেরপ্রেক্ষাপটেপ্রণোদনাপ্যাকেজযথেষ্টবড়আকারেরএবংঅন্যকোথাওধরনেরনজিরওমিলবেনা।তবেনীতিনির্ধারকদেরঅর্থনীতিদ্রুতস্বাভাবিককরাহারানোকর্মসংস্থানফিরিয়েপথঅনুসন্ধানকরতেহবে।রূপালিরেখাহচ্ছে, বাংলাদেশম্যাক্রোইকোনমিক (ঋণহারকম, কমবাজেটঘাটতি, মূল্যস্ফীতিনিয়ন্ত্রণেরাখতেপারা, এবংবৈদেশিকমুদ্রারমজুতভালঅবস্থানেথাকা) স্থিতিশীলতারকারণেস্বল্পমেয়াদেঋণগ্রহণএবংতাউন্নয়নকর্মকাণ্ডব্যবহারকরারমতোসুবিধাজনকঅবস্থানেরয়েছে।ইকোনমিস্টইন্টালিজেন্সইউনিটেরমূল্যায়নঅনুযায়ী৬৬টিউদীয়মানঅর্থনীতিরমধ্যেঅর্থনৈতিকস্থিতিশীলতায়বাংলাদেশেরঅবস্থাননবম।করজিডিপিঅনুপাতেরনিম্নহার (বর্তমানে১০শতাংশেরনিচে) থাকারপরওঅর্জনসম্ভবহয়েছে।নেপাল (১৯%) ভারতের (২২শতাংশ) মতোদেশেরকরআদায়ভালহওয়ারকারণেতাদেরব্যয়েরক্ষমতাউলে­খযোগ্যপরিমাণবেশি।১৭. অগ্রাধিকারেপরিবর্তনএনেবাংলাদেশেবাজেটেব্যয়েরকিছুখাতপুনির্বন্যাসকরেকোভিড১৯এরপরিবর্তিতচাহিদারউপযোগীকরারসুযোগরয়েছে।

গরিবদেরকাছেনগদঅর্থতুলেদেওয়ারপাশাপাশিনিবন্ধেপাঁচটিগুরুত্বপূর্ণকরণীয়তুলেধরাহয়েছে।আমাদেরপুনরুদ্ধারপ্রস্তাবেরফোকাসেরয়েছেআশুকর্মসংস্থানসৃষ্টি।

. শ্রমঘনউপখাতসমূহেবাড়তিপ্রণোদনাপ্রদান, যাথেকেবাংলাদেশঅভ্যন্তরীণচাহিদাপূরণউদ্বৃত্তপণ্যরফতানিকরতেপারে

কৃষি: নিউইয়র্কটাইমসএরমতেবিশ্বব্যাপীখাদ্যসঙ্কটেরশঙ্কারয়েছে।বছরেতীব্রক্ষুধারযন্ত্রণারশিকারসংখ্যাদ্বিগুণহয়ে২৬কোটি৫০লাখেপৌঁছাতেপারে।প্রধানমন্ত্রীশেখহাসিনাবিশ্বব্যাপীখাদ্যসঙ্কটেরকথাবলেছেন।বিষয়টিবিচেনায়রেখেপ্রণোদনাপ্যাকেজেদেশেরখাদ্যচাহিদানিশ্চিতকরারপ্রতিবিশেষনজরদেওয়াহয়েছে।বিশ্বেখাদ্যঘাটতিবাংলাদেশেরজন্যসুযোগসৃষ্টিকরতেপারে।আমরাঅভ্যন্তরীণচাহিদামিটিয়েরফতানিরকথাভাবতেপারি।খাতেরজন্যআরওনির্দিষ্টলক্ষ্যেপ্রণোদনারকথাবিবেচনাকরতেহবে।ডাল, আলু, গম, ধানএবংসবেরপাশাপাশিমাছহাঁসমুরগিরউৎপাদনবাড়াতেবিশেষনজরদিতেহবে।সরকারইতিমধ্যেইখাদ্যমন্ত্রণালয়েরমাধ্যমেধানচালসংগ্রহেরপদক্ষেপগ্রহণকরেছে।খাদ্যনিরাপত্তানিশ্চিতকরারজন্যঅন্যান্যনিত্যপ্রয়োজনীয়খাদ্যদ্রব্যেরক্ষেত্রেধরনেরসংগ্রহকর্মসূচিনিতেহবে।যদিমজুদবালজিস্টিকব্যবস্থাসরকারেরজন্যসমস্যাহয়তাহলেকৃষকরানিজেরাইসাময়িকভাবেসবমজুদকরতেপারেকিংবাবাজারেওতাবিক্রিকরেদিতেপারে।বিশ্বেখাদ্যঘাটতিরপ্রেক্ষাপটেবাড়তিপণ্যরফতানিকরাযায়।কৃষিখাতেকর্মসংস্থাননিবিড়তার (জিডিপিতেশতাংশহিস্যাবাড়লেকর্মস্থানবাড়েশতাংশ) কারণেএরপ্রভাবেস্বল্পআয়েরজনগোষ্ঠীরঅপরিহার্যজীবীকারসুযোগওসৃষ্টিহবে।

বাণিজ্য, পরিবহনলজিস্টিকব্যবস্থা:

খোলাবাজারেবিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচিরআওতায়আগামীমাসেরজন্যচালেরপাশাপাশিদেশব্যাপীআরওনিত্যপ্রয়োজনীয়পণ্যঅন্তর্ভুক্তকরতেহবে।কর্মসূচিরসফলতারজন্যস্বচ্ছউৎস, সরবরাহচেইনেরসুব্যবস্থাএবংঅধিকতরজবাবদিহিতামূলকবণ্টনব্যবস্থাগুরুত্বপূর্ণ।

উৎপাদন, দ্রুতপণ্যসরবরাহস্বাস্থ্যসেবাসবগুরুত্বপূর্ণলজিস্টিকচ্যালেঞ্জেরেসম্মুখীন।শহরএলাকায়প্রতিদিনেরক্রমবর্ধমানচাহিদাপূরণেরজন্যকমার্সগতিপেয়েছে।কিন্তুগ্রামেলজিস্টিকসুবিধাবড়চ্যালেঞ্জথেকেযাচ্ছে।তবেকোভিড১৯এরকারণেসড়করেলপথবিমানজলপথেরতুলনায়কমপ্রভাবিতহয়েছে।

সড়কপথেরমূলদুশ্চিন্তাহচ্ছেচালকসংশ্লিষ্টসহযোগীদেরস্বাস্থ্যসেবানিশ্চিতকরা।অবকাঠামোরনিরাপত্তাওগুরুত্বপূর্ণ।বেসরকারিখাতবর্তমানপরিস্থিতিরওপরনজররাখছে।সরবরাহঅব্যাহতরাখারজন্যতারানতুননতুনকৌশলসামনেআনছে।

বিশ্ববাজারেজ্বালানিতেলেরদামকমছে।এরসঙ্গেসামঞ্জস্যরেখেঅভ্যন্তরীণবাজারেতেলেরদামকমাতেসরকারকেপদক্ষেপনিতেহবে।সরকারেরআরওকরণীয়হচ্ছেগ্রামীণএলাকায়লজিস্টিককোম্পানিগুলোরনেটওয়ার্কসম্প্রসারণেরজন্যকরপ্রণোদনাপ্রদানএবংপরিবহনখাতেরঅংশীদারদেরসঙ্গেঅবকাঠামোরসুরক্ষাচালকদেরস্বাস্থ্যসেবারজন্যসহযোগিতাকরা।ডিজেলেরদামবিশেষভাবেকমাতেহবে।এরফলেসেচএবংবাসট্রাকসেবাখাতস্বস্তিপাবে।

খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত:

বাংলাদেশযেহেতুমূল্যসংযোজনেমনোযোগীহয়েছে, সেকারণেকৃষিখাতেরসুবিধাখাদ্যপ্রক্রিয়াজাতশিল্পেরওপরপড়বে।অপেক্ষাকৃতনতুনখাতটিরজিডিপিতেঅবদান.শতাংশএবংমোটশ্রমশক্তির.শতাংশলোকেরকর্মসংস্থানকরে।শ্রমশক্তির৭০শতাংশকমদক্ষ।বিশ্বেখাদ্যঘাটতিরসম্ভাবনারপ্রেক্ষাপটেআমরাখাদ্যপ্রক্রিয়াজাতশিল্পেরপ্রসারেরবিষয়টিবিবেচনায়নিতেপারি।বিশ্বেশিল্পেরলেনদেনলাখকোটিডলার।আমরাসময়মতোতৎপরহলেথেকেভালহিস্যাপেতেপারি।লক্ষ্যসামনেরেখেপ্যাকেটজাত, শুষ্কটিনজাতখাদ্যরফতানিরজন্যবাড়তিপ্রণোদনারকথাভাবতেহবে।

তৈরিপোশাকশিল্প:

বাংলাদেশেজিডিপিরবড়অবদানরাখাখাতগুলোরএকটিহচ্ছেপোশাকশিল্প।কোভিড১৯পরবর্তীবিশ্বেনিরাপত্তাহচ্ছেবিশেষগুরুত্বপূর্ণ।খাতযেনচিকিৎসানিরাপত্তাসামগ্রীবাজারেনিয়েআসতেপারেসেজন্যপ্রণোদনাদিতেপারে।বিশ্বব্যাপীক্রমবর্ধমানচাহিদামন্দারশঙ্কারমুখেমাস্ক, গ্লোভসপিপিইউৎপাদনেযেতেহবে।ভিনজরিসার্চএরঅনুমান, কোভিড১৯সময়েপিপিইবাজারছিল৫৫বিলিয়নডলার।আগামীবছরেবাজারবেড়ে৯০বিলিয়নডলারেপৌঁছাতেপারে।বিষয়েআইওএম, ইউএনডিপিবিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থারমতোআন্তর্জাতিকবেসরকারিসংস্থারকাছেকারিগরিজ্ঞানপ্রশিক্ষণসহায়তারঅনুরোধকরাযেতেপারে।এতেআন্তর্জাতিকমানবিধিবিধাননিয়মকানুনঅনুসরণসহজহবে।দেশেরঅন্যতমবড়ব্যবসায়িপ্রতিষ্ঠানবেক্সিমকোইতিমধ্যেযুক্তরাষ্ট্রে৬৫লাখপিপিইগাউনসরবরাহেরঅর্ডারবাস্তবায়নকরছে।নজিরঅনুসরণযোগ্য।

১৮. অন্যান্যস্বাস্থ্যসেবাপণ্য:

যথাযথপ্রণোদনাপেলেহাল্কাশিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকমদামেরভেন্টিলেটর, এবংস্বাস্থ্যযত্ন /পরিচ্ছন্নতাপণ্যউৎপাদনেযেতেপারে।

ওষুধশিল্প: দ্রুতবিকাশমানশিল্পকেঅপরিহার্যওষুধউৎপাদনসম্প্রসারণবহুমুখীকরারজন্যস্বল্পব্যয়েরমূলধনজোগানদিতেহবে।২০১৮সালেদেশেরওষুধশিল্পেরবাজারছিল২০হাজার৫০০কোটিটাকার।গতপাঁচবছরেবার্ষিকপ্রবৃদ্ধি১৫.শতাংশ।

১৯. এসকায়েফফার্মাসিউটিক্যালসলিমিটেডবাএসকেএফবিশ্বেপ্রথমপ্রতিষ্ঠান, যারারেমডেসিভিরউৎপাদনশুরুকরেছে, করোনাভাইরাসচিকিৎসায়খুবইকার্যকরহিসেবেস্বীকৃত।

বিদেশিবিনিয়োগ:

বাংলাদেশবিনিয়োগকর্তৃপক্ষবাবিআইডিএএরজন্যভারতভিয়েতনামেরমতোদেশকেঅনুসরণেরউপযুক্তসময়এখনই।বিশ্বেরপ্রধানপ্রধানউৎপাদকরাতাদেরউৎপাদনসুবিধাচীনথেকেঅন্যত্রপুনর্বিন্যস্তকরছে।তাদেরবাংলাদেশেরঅর্থনৈতিকঅঞ্চলেনিয়েআসারজন্যসর্বতোভাবেচেষ্টাকরতেহবে।করোনাউত্তরকালেঅনেকপ্রতিষ্ঠানচীনথেকেসরেযেতেসচেষ্ট।ভিয়েতনামইতিমধ্যেবিনিয়োগেরএকটিঅংশনিয়েনিয়েছে।বাংলাদেশওপারে।আগামীবছরটার্গেটকরেবিশেষভাবেশ্রমঘনশিল্পেরদিকেনজরদিতেহবে।সরকারকেবছরেরমধ্যেতিনটিঅর্থনৈতিকঅঞ্চলেরকাজসম্পূর্ণকরারলক্ষ্যনির্ধারণকরতেহবে।আগামীচারমাসেরমধ্যেপুনরুজ্জীবিতব্র্যান্ডবাংলাদেশধারণাবিশ্বেরসামনেতুলেধরতেহবে।

ওষুধরফতানি —  আয়মিলিয়নডলারে

২০১৪১৫৬৯.২৪,

২০১৫১৬৭২.৬৪

২০১৬১৭৮৯.১৭,

২০১৭১৮১০৩.৪৬

২০১৮১৯১৩০

সূত্র: ইপিবি

স্বাস্থ্যখাতেরসঙ্কটেরবিষয়টিবিবেচনায়রেখেবাজেটেস্বাস্থ্যসেবাখাতকেঅগ্রাধিকারদিতেহবে।বাংলাদেশেসরকারিস্বাস্থ্যব্যয়এশিয়ারসবচেয়েকমদেশগুলোরসারিতে।করোনারপ্রকোপখাতেরউন্নয়নেরপ্রয়োজনীয়তাসামনেএনেছে।বিশেষকরেগ্রামঅঞ্চলে।সেন্টারফরপলিসিডায়লগএবংঅন্যান্যঅগ্রণীগবেষণাসংস্থাবাজেটেস্বাস্থ্যখাতেব্যয়এশিয়ারঅন্যান্যদেশেরসঙ্গেসামঞ্জস্যরেখে.শতাংশথেকেবাড়িয়েশতাংশেনেওয়ারসুপারিশকরেছে।

স্বাস্থ্যখাতেব্যয়তুলনামূলকচিত্রজিডিপিরশতাংশ (২০১৮)

বাংলাদেশ.%, ভারত ...%, শ্রীলঙ্কা...%, মালয়েশিয়া...%, ভিয়েতনাম...%, থাইল্যান্ড...%

# বাংলাদেশেরতথ্য২০১৯সালের।

## ভারতেরহিস্যাবেশিহবে।এখানেরতথ্যকেবলকেন্দ্রীয়সরকারেরব্যয়ের।রাজ্যসরকারেরব্যয়বিবেচনায়আসেনি।

নির্মাণকাজেনিয়োজিতপ্রতি১৫জনেরজনরয়েছেনির্মাণশিল্পে।নির্মাণকাজেরনানাপণ্যসামগ্রীউৎপাদনেস্থানীয়ভাবেআরওঅনেকেরকর্মসংস্থানহয়েথাকে।নির্মাণনির্মাণসামগ্রীউৎপাদনেদক্ষদিনমজুরসহঅদক্ষঅনেকলোকেরকর্মসংস্থানহয়।বেশিরভাগরিইনফোর্সমেন্টকনক্রিটইস্পাত, ইট, নির্মাণবোর্ড, দরজা, টাইলসস্থানীয়ভাবেতৈরিহয়।বেসিন, পাইপবৈদ্যুতিকক্যাবলসহবৈদ্যুতিককাঠেরসামগ্রীরপ্রধানঅংশওদেশেতৈরিহয়।সরকারনির্মাণখাতকেপ্রণোদনাপ্যাকেজেরআনারকথাভাবতেপারে।এরফলেস্থানীয়পণ্যেরসরবরাহবাড়বেএবংদিনমজুরদেরওসুবিধাহবে।প্রণোদনাপাবারজন্যদিনমজুরদেরডিএফএসস্যালারিপেমেন্টশর্তহিসাবেরাখাযেতেপারে।এরফলেস্বচ্ছতানিশ্চিতহবে।ধরনেরপদক্ষেপতৈরিপোষাকশিল্পেসফলভাবেপ্রয়োগকরাসম্ভবহয়েছে।নীতিনির্ধারকদেরযেপ্রধানপ্রধানশিল্পখাতবিবেচনায়নিতেহবেসংখ্যাগতবিশ্লেষণ:

শিল্প / কর্মসংস্থান / আয়অতিরিক্তসুবিধা / কমআয়েরচাকরি / গ্রামীণ / রফতানিবান্ধব

গবাদিপুশপালন

মৎস্য

শস্য

তৈরিপোশাকশিল্প

সুরক্ষাচিকিৎসাসামগ্রীউৎপাদন

খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতকরণ

নির্মাণ

খুচরাব্যবসা

লজিস্টিক

পরিবহন

হাল্কাপ্রকৌশলচিকিৎসাসরঞ্জাম

স্বাস্থ্যসেবা

. সম্ভাব্যদ্রুততমসময়েশ্রমঘনঅবকাঠামোপ্রকল্পগুলোরকাজশুরুকরুন:

পদ্মাবহুমুখীসেতুপ্রকল্প; ঢাকামেট্রোরেলপ্রকল্প; কর্ণফুলীআন্ডারওয়াটারটানেলপ্রকল্পএবংঢাকাএলিভেটেডএক্সপ্রেসওয়েরমতোফাস্টট্রাকেরশ্রমঘনপাবলিকঅবকাঠামোরপ্রকল্পসমূহেরকাজশুরুরজন্যসংশ্লিষ্টমন্ত্রণালয়, যেমনএলজিআরডিএবংসড়কপরিবহনখাতেরবাজেটবাড়াতেহবে।স্থানীয়সরকারেরসংস্থাগুলোরওপরচাপবাড়াতেহবেযাতেসড়কমেরামতসড়কেরবাতিব্যবস্থাপনারকাজসহশহরগ্রামেরঅবকাঠামোরকাজদ্রুতশুরুকরে।

. এমএসএমইএরজন্যজরুরিঅর্থায়ন:

লাইটক্যাসলপার্টনারসএরসার্ভেঅনুযায়ীকোভিড১৯সংকটেরকারণেএমএসএমইসমূহেরঅর্ধেকেরবেশি (৫২%) বন্ধছিল।

২১. সার্ভতেআরওবলাহয়েছে, প্রায়৬৪শতাংশএমএমএমইপ্রতিষ্ঠানকর্মীছাঁটাইকরেছে / কিংবাপরবর্তীতিনমাসেরমধ্যেঅর্ধেকেরবেশিকর্মীছাঁটাইকরবে।রক্ষণশীলহিসাবেওখাতেপ্রায়৪০লাখলোকচাকরিহারাবে।

বাংলাদেশসরকারএমএসএমইখাতেপ্রণোদনাপ্যাকেজহিসেবে২০হাজারকোটিটাকাবরাদ্দরেখেছে।তবেঅর্থবণ্টনকরাহবেব্যাংকেরমাধ্যমে।সীমিতসংখ্যকআর্থিকপ্রতিষ্ঠানওযুক্তকরাহবে।কিন্তুঅনানুষ্ঠানিকখাতেরবেশিরভাগপ্রতিষ্ঠানেরব্যাংকেরসঙ্গেসম্পর্কনেই।অনুষ্ঠানিকখাতেরএমএসএমইসমূহক্ষুদ্রঋণপ্রতিষ্ঠান (এমএফআই) থেকেঋণগ্রহণকরে।ধরনেরবেশিরভাগপ্রতিষ্ঠানেরব্যবসাপুনরায়শুরুরজন্যমূলধনপ্রয়োজন।বাংলাদেশক্ষুদ্রঋণসংস্থাসমূহেরজন্যব্যাংকেরমাধ্যমেহাজারকোটিটাকারপ্রণোদনাপ্যাকেজঘোষণাকরেছে।তবেজামানতবিহীনঋণেরচাহিদাআরওবেশি।পল্লীকর্মসংস্থানফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অংশীদারদেরমাধ্যমেসরকারএমএসএমইসমূহেরজন্যঅতিরিক্তপ্রণোদনাপ্যাকেজঘোষণাকরতেপারে।এরফোকাসেথাকবে:

রেঁস্তোরা, স্থানীয়মুদিদোকান, স্থানীয়ফলেরদোকান, ওয়েল্ডিংশপকুটিরশিল্পেরমতোঅনানুষ্ঠানিকখাতেরপ্রতিষ্ঠান

রিকশাচালক / সিএনজিইলেকট্রিকরিকশামালিকপণ্যপরিবহনকারীসহঅনানুষ্ঠানিকপরিবহনখাত

পশুপালনমৎস।আমরাজানি, কোরবানীরঈদসামনে।গবাদিপশুমোটাতাজাকরণেরএটাবড়সুযোগ।স্থানীয়চাহিদাপূরণেরসুযোগকাজেলাগাতেহবে।

অনানুষ্ঠানিকখাতেরব্যবসাপুনরায়শুরুরজন্যযেপ্রণোদনাপ্যাকেজদেওয়াহবেতারজন্যপ্রচলিতব্যাংকিংসেবারপাশাপাশিমোবাইলফিনান্সিয়ালসার্ভিস (এমএফএস) এজেন্টব্যাংকিং, উভয়ধরনেরডিজিটালফিনান্সিয়ালসার্ভিসেরব্যবহারবাড়াতেহবে।ঋণপ্রভিশনঝুঁকিসরকারকেওবহনকরতেহবে।এরফলেক্ষুদ্রঋণপ্রতিষ্ঠানসমূহযতদ্রুতসম্ভবতহবিলবণ্টনেউৎসাহিতহয়।ক্ষুদ্রঋণনিয়ন্ত্রণকর্তৃপক্ষকে (এমআরএ) অন্ততপরবর্তীদুইবছরেরজন্যসংরক্ষিততহবিলহিসাবেরবিধিবিধানশিথিলকরতেহবে।এরফলেপ্রতিষ্ঠানগুলোআরওনগদঅর্থহাতেপাবে।

. স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদেরপ্রশিক্ষণএবংফিরেআসারেমিট্যান্সকর্মীদেরদক্ষতাবৃদ্ধিরকর্মসূচি:

অধিকসংখ্যকস্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, স্বাস্থ্যযত্নকর্মীতৈরিরজন্যদক্ষতাবৃদ্ধিরজন্যবিদ্যমানবাজেটবাড়াতেহবে।এরদুটিউদ্দেশ্যস্থানীয়চাহিদাপূরণএবংজনশক্তিরফতানিরসুযোগগ্রহণ।আন্তর্জাতিকসীমানাখুলেগেলেচাহিদাবাড়বেবলেইআশাকরাযায়। (জন্যদুবছরেরএকটিকাঠামোতৈরিকরাযেতেপারে)উন্নতঅর্থনীতিরদেশগুলোতেবেশিবয়সীলোকেরকারণেপ্রশিক্ষণপ্রাপ্তসেবিকারচাহিদাইতিমধ্যেইউচ্চমাত্রায়পৌঁছেছে।মহামারীথেকেবিশ্বযতমুক্তিপেতেথাকবে, চাহিদাকেবলবাড়তেথাকবে।প্রবাসথেকেফিরেআসারেমিট্যান্সকর্মীবন্ধহয়েযাওয়াপোশাককর্মীদেরসবখাতেপ্রশিক্ষণপ্রদানেরজন্যঅগ্রাধিকারপ্রদানকরাযায়।

গতকয়েকমাসেবিভিন্নদেশথেকে৩০হাজারকর্মীফিরেএসেছে।আরওউলে­খযোগ্যসংখ্যকআগামীমাসগুলোতেফিরতেপারে।তাদেরপ্রশিক্ষণটেকনিক্যালসমর্থনদেওয়াযেতেপারে।

২২. সবকর্মীদেরপুরানোদেশেরকর্মস্থলেফিরেযাবে, এমনসম্ভাবনাকম।তাদেরদক্ষতাকাজেলাগাতেস্থানীয়ভাবেউপযুক্তপরিবেশসৃষ্টিসময়েরদাবি।

সরকারইতিমধ্যেইবিভিন্নদেশথেকেফিরেআসাকর্মীদেরউপার্জনমূলককাজেযুক্তহওয়ারজন্যঋণেরব্যবস্থাকরেছে।ভর্তুকিযুক্তঋণএবংদক্ষতাবাড়ানোরপ্রশিক্ষণকর্মসুচিকারিগরিসমর্থনস্থানীয়ভাবেনতুনএমএসএমইপ্রতিষ্ঠানগড়েতোলায়সহায়কহবে।

তৈরিপোশাকশিল্পপ্রযুক্তিব্যবহারেস্বচ্ছতাজবাবদিহিতারবড়উদাহরণ।সরকারআর্থিকপ্রণোদনাপেতেপোশাককর্মীদেরমালিকদেরজন্যশ্র্রমিকদেরবেতনডিজিটালফিনান্সিয়ালসার্ভিস (ডিএফএস) ব্যবহারবাধ্যতামূলককরেদিয়েছে।সাম্প্রতিকসার্ভেঅনুযায়ীমেমাসে৮২শতাংশপোশাককর্মীডিজিটালসুবিধাব্যবহারকরেবেতনপেয়েছে।এপ্রিলমাসেহারছিল২৮শতাংশ।ডিএএসসুবিধাব্যবহারেরকীচমৎকারনিদর্শন!

কোভিড১৯যুগেঅনেকধরনেরকাজেরপুনর্বিন্যাসঘটবে।কেবলকাজেরক্ষেত্রেনয়, বিদ্যমানশ্রমসংস্কৃতিতেস্বচ্ছতাজবাবদিহিতাআনারজন্যপ্রযুক্তিগুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরবে।

প্রণোদনাপ্যাকেজেরসুবিধাপেতেপ্রযুক্তিরব্যবহারকেশর্তহিসেবেরাখারজন্যসরকারকেচেষ্টাচালাতেহবে।এরফলেতহবিলেরযথাযথবণ্টনওনিশ্চিতহবে।

. ‘আমারগ্রাম, আমারশহরউদ্যোগকেএলাকাভিত্তিকঅর্থনৈতিককর্মকাণ্ডবাড়ানোকর্মসংস্থানসৃষ্টিরজন্যফাস্টট্র্যাকেঅন্তর্ভুক্তকরা:

সামাজিকদূরত্ববজায়রাখাসতর্কতামূলকজীবনধারারনতুনযুগেআমাদেরযেতেহচ্ছে।এরফলেঅনেকধরনেরসেবাবিকেন্দ্রীকরণস্থানীয়উদ্যোগবাড়ানোরবিপুলসুযোগওকিন্তুসামনেএসেছে।বিকেন্দ্রীকরণএজেন্ডাঅগ্রসরকরেনেওয়াপ্রণোদনাপ্যাকেজেরঅন্যতমলক্ষ্যহতেপারে।অনলাইনডিজিটালখাতঅগ্রাধিকারপাবে, বিশেষকরেগ্রামাঞ্চলে।সেবাখাতডিজিটালাইজকরারএকবড়সুযোগ।এরপরেকর্মসংস্থানবাড়বেএবংবিভিন্নখাতথেকেরাজস্বআয়বেশিহবে।

এরঅংশহিসেবেকৃষিরযন্ত্রায়ণকার্যকরভাবেএগিয়েনেওয়াসম্ভব।অঞ্চলভিত্তিকঅর্থনীতিতেএরবহুমুখীপ্রভাবপড়বে।প্রণোদনাবরাদ্দথেকেকৃষিযন্ত্রপাতিরব্যবহারবাড়ানো (যেমনফসলকাটারযন্ত্র) অন্যান্যকারিগরিসহায়তাদেওয়াযেতেপারে।বছরব্যাপীনগদসহায়তাওপ্রদানকরাসম্ভব।

চুয়াডাঙ্গাজেলারদোয়াপাড়াগ্রামআমারগ্রাম, আমারশহরউদ্যোগেরসুবিধাভোগেরউজ্জ্বলউদাহরণ।

২৩. সীমিতসম্পদসত্ত্বেওজেলাপ্রশাসনঅধিবাসীরাদোয়াপাড়ায়দৃশ্যমানপরিবর্তনআনতেপেরেছে।শঙ্করচন্দ্রইউনিয়নেরসচিবফজলুররহমানজানান, দোয়াপাড়াবাংলাদেশেরআরসবদরিদ্রইউনিয়নেরমতোই।পানিরসুব্যবস্থানেই।যোগাযোগনেটওয়ার্কদুর্বল।সরকারিপরিষেবাঅপ্রতুল।কিন্তুএখনপরিস্থিতিরউলে­খযোগ্যপরিবর্তনঘটেছে।রাস্তারল্যাম্পপোস্টেরাতেবিদ্যুতেরবাতিজ্বলে।এরফলেচলাচলসহজহয়েছে।নিরাপত্তাবেড়েছে।ছাত্রছাত্রীদেরবাইসাইকেলদেওয়াহয়েছে।এরসুবিধাকাজেলাগিয়েতারাসহজেনিরাপদেদূরেরস্কুলেযেতেপারছে।বেলাশেষেনামেবিনোদনকেন্দ্রচালুহয়েছে।গ্রামেরকর্মজীবীরাসেখানেদিনেরশেষেসমবেতহতেপারে।ডিজিটালবাংলাদেশকর্মসূচিরআওতায়গ্রামেফ্রিওয়াইফাইসেবাচালুহয়েছে।গ্রামবাসীদেরজন্যরয়েছেসুপেয়পানিগ্রন্থাগারসুবিধা।দোয়াপাড়াএখনকেবলবিপুলসংখ্যককর্মসংস্থানসৃষ্টিকরেনি, অনেকউদ্যোক্তাতৈরিকরেছে।গ্রামেবসবাসকরেইবাসিন্দারাভোগকরছেশহরেরসুবিধা।

উপসংহার:

পুনরুদ্ধারপরিকল্পনারমূলবিষয়হতেহবেকর্মসংস্থানসৃষ্টিঅন্তর্ভুক্তিমূলকপ্রবৃদ্ধি।চাকরিবিহীনপ্রবৃদ্ধিগতদশকেরঅর্জনকেঝুঁকিতেফেলেদিতেপারে।তদুপরি, যেডেমোগ্রাফিকডিভিডেন্ডেরসুফলআমরাভোগকরছিতাডেমোগ্রাফিকবোঝায়পরিণতহতেপারে।বৈষম্যেরব্যবধানবেড়েযাওয়ারঝুঁকিআগেরযেকোনোসময়েরচেয়েবেশি।ভবিষ্যতেরকর্মক্ষেত্রেস্বাস্থ্যনিরাপত্তাসামাজিকদূরত্বযেহেতুগুরুত্বপূর্ণ, নীতিনির্ধারকদেরঅবশ্যইতরুণ, কমদক্ষসীমিতসামাজিকনিরাপত্তাসুবিধারআওতায়থাকাজনগোষ্ঠীকেবিশেষবিবেচনায়নিতেহবে।

ভিয়েতনামনিউজিল্যান্ডেরমতোদেশইতিমধ্যেঘোষণাকরেছে, তারাভিধরনেরপুনরুদ্ধারেএখনইযেতেচায়না।তাদেরনীতিনির্ধারকরাকর্মসংস্থানসৃষ্টিঅন্তর্ভুক্তিমূলকপ্রবৃদ্ধিকেঅগ্রাধিকারদিয়েছেন।আমরাবাংলাদেশেরজন্যএকইধরনেরদৃষ্টিভঙ্গিঅনুসরণপ্রয়োজনবলেমনেকরি।আমরাআরওপ্রণোদনাপ্যাকেজেরজন্যওকাজকরছি।সংশ্লিষ্টসকলকেসেসবঅবহিতকরাহবে।

তথ্যসূত্র:

.লেবারফোর্সসার্ভে২০১৭, বাংলাদেশপরিসংখ্যানব্যুরো

. লেবারফোর্সসার্ভে, ২০১৭

. সাউথএশিয়াইকোনমিকফোকাসস্প্রিং২০২০, বিশ্বব্যাংক

. লেবারফোর্সসার্ভে২০১৭, বাংলাদেশপরিসংখ্যানব্যুরোএবংপলিসিরিসার্চইনস্টিটিউটেরনিজস্বমূল্যায়ন

. জীবীকারওপরকরোনাভাইরাসেরপ্রভাব : বাংলাদেশেরগ্রামীণস্বল্পআয়েরজনগোষ্ঠী, ১২মে২০২০, লাইটক্যাসলপার্টনারস

. লকডাউনসময়মাসধরেহিসাবকরাহয়েছে

. আরএমজিশ্রমিকদেরজন্যমহামারীরকীঅর্থ What the pandemic means for RMG workers: https://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2020/05/05/what the-pandemic-means-for-rmg

. হাউসহোল্ডআয়ব্যয়সার্ভে, বাংলাদেশপরিসংখ্যানব্যুরো

. ‘লাইভলিহুডস, কোপিংঅ্যান্ডসাপোর্টডিউরিংকোভিড১৯ক্রাইসিস’, ১৬এপ্রিল২০২০, বিআইজিডিঅ্যান্ডপিপিআরসি

১০. 10.“Reaching Out to the Poor and Needy with Direct Cash Support: Dealing with the Last-Mile Delivery Challenge,

April 2020, Policy Research Institute.

১১. Coronavirus shutdown makes 2.4cr new poor in Bangladesh: https://www.newagebd.net/article/105687/coronavirus-shutdown-makes-24cr-new-poor-in-bangladesh-binayak-sen

১২. MSMEs – both a choice and a reality for Bangladesh: https://www.thefinancialexpress.com.bd/views/msmes-both-a-choice-and-a-reality-for-bangladesh-1566055028

১৩. At the core of our potential: https://www.dhakatribune.com/opinion/2018/07/10/at-the-core-of-our-potential

১৪. Impact on Bangladesh’s SME Landscape, based on survey on 4 April, 2020, LightCastle Partners and Sheba.xyz

১৫. Author’s estimates.

১৬. Author’s estimates.

১৭. World Development Indicators database, World Bank

গবেষণারকাজকরাদুইজনেরপরিচয়:

ইমরানআহমদ, উপনির্বাহীপরিচালক, শক্তিফাউন্ডেশনসাবেকরিসার্চফেলো, ম্যাককিন্সগ্লোবাল

বিআইডিএসের গবেষণা

নতুন করে দেড় কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২৫, ২০২০bonik barta

চলতি বছরের শুরুতে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা এসে পড়লে কাজ হারাতে থাকে অনেক মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগারের পথ, বাড়তে থাকে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। বছরের তৃতীয় ও শেষ প্রান্তিকে মানুষের আয় কাঙ্ক্ষিত হারে ফিরে এলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তার পরও বছর শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

‘পভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট টার্ম ইফেকটস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রটেকশন’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গতকাল বিআইডিএসের আয়োজনে ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন-২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড-কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ শীর্ষক ডিজিটাল সেমিনারে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এছাড়া সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০২০ সালের শুরুতে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ১৫ দশমিক ৮ ও গ্রামে ২২ শতাংশ। তবে চলতি বছর শেষে গ্রামে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ এবং শহরে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ হতে পারে।  এক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরে দারিদ্র্যের হার বাড়বে। বছরের শেষে দেশে চরম দারিদ্র্য থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ।

দারিদ্র্যের হারের এ পরিবর্তন হিসাব করতে শ্রমিকের আয় কতটুকু আগের অবস্থায় ফিরে আসছে তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পরিবর্তিত অবস্থাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যদি শ্রমিকের আয় ৫০ শতাংশ এবং শেষ প্রান্তিকে যদি ৫০ শতাংশ আয় উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাহলে  দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। শ্রমিকের আয় এ হারে উদ্ধার না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। কেননা এরই মধ্যে শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, কভিড-১৯-এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি টেকসই নয়। লকডাউনে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি কভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিল তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এ ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে। এ সহায়তা যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারে না। সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্যসহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ এবং বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ।

তিনি আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে আগামী এক দশক গড়ে ৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যেটি স্বাভাবিক সময়ে হয়তো ৬ বা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেই অর্জন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন যেমন কঠিন, তেমনি সামনের আরো শক মোকাবেলা করতে হতে পারে। ফলে এসডিজির দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হতে পারে।  প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্কার ও শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পুনর্গঠন করতে হবে।

অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী বলেন, দারিদ্র্য কতটুকু কমবে বা নিয়ন্ত্রণ হবে সেটি পুরোটাই নির্ভর করছে কত দ্রুত গরিব মানুষের কাছে আয় ট্রান্সফার করতে পারছি তার ওপর। সরকারের ট্রান্সফারটা দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে দরিদ্র মানুষের অবস্থায় পরিবর্তন আনা দুরূহ হবে।

গতকালের সেমিনারে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এসব গবেষণায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটি তথ্য হচ্ছে সাধারণ ছুটি বর্ধিত হোক এটা চেয়েছিল ৭৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও পারছে না ৩২ শতাংশ মানুষ। দেশে বেকারের হার ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে লকডাউনে এমএসএমই খাতে ক্ষতি প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর বন্ধের উপক্রম প্রায় ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, চাইলেই বাংলাদেশে দীর্ঘ লকডাউন করা সম্ভব নয়। এজন্য সীমিত পরিসরে অনেক কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। কেননা কিছু মৃত্যু অবধারিত। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ করোনায় ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছি। আশা করছি, দেশে মৃত্যু আরো কমবে। তবে করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন হোক বা যা কিছু আবিষ্কার হবে, সেখানে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। করোনা মোকাবেলায় প্রথম দিকে কিছুটা প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও এখন সেটি আর নেই। সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল মিলবে আশা করা যায়। যেসব কথা হয়েছে সেগুলোতে আমি যখন ঘোড়ার পিঠে আছি, তখন ঝাঁকুনি তো একটু লাগবেই। ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত গবেষণা হলে সরকার সহায়তা দেবে।

বাড়ছে  বেকার : ‘কোপিং উইথ কভিড-১৯ অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল রেসপন্স: ফাইন্ডিংস ফ্রম এ লার্জ অনলাইন সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ। এছাড়া গবেষক হিসেবে ছিলেন তানভীর মাহমুদ, নাহিয়ান আজাদ শশী, আব্দুর রাজ্জাক সরকার। করোনার আগে মোট বেকার ছিল ১৭ শতাংশ। করোনার কারণে নতুন করে ১৩ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে। ফলে বেকার মানুষের সংখ্যা এখন ৩০ শতাংশ। সেসব পরিবারের সদস্যদের চাকরি আছে এবং একজন সদস্যের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার নিচে সেই পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে একজন সদস্যের আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া একজন সদস্যের আয় ৩০ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

গবেষণায় কভিড পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ সামাজিক নিয়মকানুন পরিপালনের বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। কোনো কোনো শ্রেণীর আয়কারী মানুষ বাইরে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব পালনে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও ৩২ শতাংশ মানুষ তা পারছে না। এ হার উপজেলায় ৩০, বিভাগীয় শহরে ২৯ ও মেট্রোপলিটন শহরে ২৮ শতাংশ। আর সদস্যরা ঘরে থাকার কারণে অশান্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ পরিবারে। এর মধ্যে ৫-৬ শতাংশ শারীরিক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে বসবাস করছে । চট্টগ্রামে প্রায় ২০ শতাংশ,

ঢাকায় ১৩ ও খুলনায় ৮ শতাংশ মানুষের করোনা উপসর্গ রয়েছে। করোনার কারণে ১০ শতাংশ খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আয় উপার্জনকারী সব ধরনের পরিবারে খাদ্য ব্যয় বেড়েছে। তবে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ চেয়েছিল সাধারণ ছুটি আরো চলমান থাকুক।

এমএসএমই শিল্পের ক্ষতি ৯২ হাজার কোটি টাকা: সেমিনারে অ্যাড্রেসিং এমএসএমইএস ডিস্ট্রেস ইন কভি-১৯ ক্রাইসিস: স্টিমুলাস প্যাকেজ অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স শীর্ষক নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৬ শতাংশ এবং শিল্প ইউনিটের প্রায় ৯৬ শতাংশই এই খাতের। এ খাত থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে দুই মাসে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। খাতটির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বল্প সুদে এই খাতের উদ্যোক্তারা এই ঋণ নিতে পারবেন। যদিও এই সুবিধা সবাই নিতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা ৩৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের প্রবেশগম্যতা আছে। এছাড়া ৪৯ শতাংশের ঋণ ও অর্থায়ন হয় বেসরকারি এনজিও কিংবা এমএফআইর মাধ্যমে। ফলে সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ ধরনের সংস্থার সুপারিশ করেছেন তিনি।

বন্ধের উপক্রম ৪১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান: সেমিনারে ‘কভিড-১৯ অ্যান্ড এসএমইএস: আন্ডারস্ট্যান্ডিং দি ইমিডিয়েন ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কোপিং স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. কাজী ইকবাল, নাহিদ ফেরদৌস পবন ও তানভীর মাহমুদ। এতে বলা হয়েছে, লকডাউনে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া, অবিক্রীত পণ্যের  স্তূপ ও উৎপাদিত পণ্যের দাম আটকে থাকায় ৪১ শতাংশের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিপুল ক্ষতির শিকার হলেও কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এ খাতের ৪৮ শতাংশ উদ্যোক্তা।

গবেষণায় আরো দেখানো হয়, চলতি বছরে এসএমই খাতে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত। তাদের ব্যবসা কমবে মাত্র ৩৮ শতাংশ। সব প্রতিষ্ঠানে গত বছর শেষে অবিক্রীত পণ্য ছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, যা চলতি বছরে ১৯ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হতে পারে। প্রতি প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা। করোনার কারণে ৮০ শতাংশ বেতন দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা, যদিও শ্রমিকরা বলছে ৫৫ শতাংশ বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে আগামীতে বেতন পরিশোধ হবে না এমন ধারণা করছে ৬৩ শতাংশ মানুষ।  সরকারের প্রণোদনা পাবে, এমন আশা করছে ৭৪ শতাংশ মানুষ। তবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, ব্যাংকে হিসাব না থাকা কিংবা অন্যান্য যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেকেই হয়তোবা এ প্রণোদনা পাবে না।

ফেসর ইউনূসের মতে

করোনা আমাদের জন্য সুসংবাদ এনে দিয়েছে

মুহাম্মদ ইউনূস  mnabjamin

অনলাইন ২৬ জুন ২০২০, শুক্রবার, :০২ | সর্বশেষ আপডেট: :৩৫

31

করোনা মহামারি পৃথিবীর যে ক্ষতিসাধন করছে এক কথায় তা কল্পনাতীত। এই বিশাল ক্ষতি সত্ত্বেও এই মহামারি মানব জাতির সামনে একটি এমন সুযোগ এনে দিয়েছে তা আরো বেশি কল্পনাতীত।
এই মুহূর্তে মানুষের মাথায় একটি বড় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। করোনার এই ধ্বংস যজ্ঞ থেকে বের হয়ে কীভাবে আবার বিশ্ব অর্থনীতিকে পুণর্গঠন করবো। সৌভাগ্যক্রমে এর উত্তর আমাদের জানা। একটি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হয় সে অভিজ্ঞতা আমাদের ভালোই আছে। যে প্রশ্নটা আমি তুলে ধরতে চাচ্ছি সেটা কিন্তু ভিন্ন। সবার কাছে আমার প্রশ্ন হলো: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে পৃথিবীটা যেখানে ছিল আমরা কী তাকে সে-জায়গাতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাবো? নাকি আমরা একে নতুন ভাবে গড়ে তুলবো? সিদ্ধান্তটা পুরোপুরিই আমাদের হাতে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, করোনা-পূর্ববর্তী পৃথিবীটা আমাদের জন্য মোটেই ভালো ছিল না। পৃথিবী প্রায়ই ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে গিয়েছিল।

করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ না আসা পর্যন্ত পৃথিবীতে কী কী ভয়ানক জিনিষ ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে দুর্ভাবনার অন্ত ছিল না। জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবী মানবজাতির টিকে থাকার জন্য একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে যাবার শেষ সীমায় এসে পৌঁছে গিয়েছিল। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স সৃষ্ট ব্যাপক বেকারত্ব সমাজকে ভয়ংকর হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে সমস্ত সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে মাত্র গোটা কয়েক মানুষের হাতে চলে গিয়েছিল – যার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমরা আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর শেষ ঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা একে অপরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলাম যে, বর্তমান দশকটাই আমাদের জন্য শেষ সুযোগের দশক; এরপর আমাদের সকল প্রচেষ্টারই ফলাফল হবে অতি নগণ্য। তা দিয়ে পৃথিবীকে আর রক্ষা করা যাবে না।
আমরা যে পৃথিবীর বর্ণনা করলাম সেই পৃথিবীতেই ফিরে যেতে চাই? আমাদের কী আর কোনো উপায় নেই?
অবশ্যই আছে। আমরা সে-পৃথিবীতে ফিরে যেতে বাধ্য নই। যাবো কি যাবো না, সেটা আমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এটা চিন্তা করার সুযোগ পাওয়াটাই একটা মহামুক্তি।
করোনাভাইরাস অকস্মাৎ প্রেক্ষাপটটা বদলে দিলো এবং পৃথিবীর ক্যালকুলাস পাল্টে দিলো। এর ফলে এমন এক প্রবল সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল যা আগে কখনো দেখা যায়নি। হঠাৎ করেই আমরা ইচ্ছামতভাবে পুনর্জন্ম লাভের সুযোগ পেয়ে গেলাম। এখন আমরা যে-কোনো দিকেই অগ্রসর হতে পারি। পথ বেছে নেয়ার কি অকল্পনীয় সুযোগ এটা।
অর্থনীতিকে আবারো সচল করার আগে আমাদেরকে একটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে, আর তা হচ্ছে – কোন ধরনের অর্থনীতি আমরা চাই। তবে সবার আগে আমাদের এ বিষয়ে একমত হতে হবে যে, অর্থনীতিটা হচ্ছে একটা ‘উপায়’, একটা কর্মপদ্ধতি। আমরা যে লক্ষ্যগুলো স্থির করি অর্থনীতি সেগুলো অর্জনে সাহায্য করে মাত্র। এটা এমন কোনো মৃত্যুফাঁদ নয় যেটা কোনো ঐশ্বরিক শক্তি আমাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য তৈরী করেছেন। আমাদের এক মুহূর্তের জন্যও ভুললে চলবে না যে, এটা আমাদেরই তৈরী একটি যন্ত্র মাত্র। আমাদেরকে প্রতিনিয়তই এর নকশা তৈরী করতে ও এই নকশা পুনঃসৃষ্টি করে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা আমাদের জন্য সর্বোচ্চ সমষ্টিগত সুখ নিশ্চিত করে।
কখনো যদি আমাদের এমনটা মনে হয় যে এটা আমাদেরকে কাম্য পথে নিয়ে যাচ্ছে না, আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি যে আমাদের ব্যবহার করা হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারে কোথাও কোনো সমস্যা আছে। আমাদের তখন যা করতে হয় তা হলো সমস্যাটা মেরামত করা। আমরা একথা বলে পার পেতে পারি না যে, ‘দুঃখিত, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি না কেননা আমাদের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার এটা করতে দেবে না।‘ সেটা হবে একেবারেই খোঁড়া, অগ্রহণযোগ্য একটা যুক্তি। আমরা যদি শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণের একটা পৃথিবী সৃষ্টি করতে চাই তাহলে আমাদেরকে এজন্য সঠিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরী করতে হবে। আমরা যদি শূন্য বেকারত্বের একটা পৃথিবী গড়তে চাই তাহলেও তা-ই করতে হবে। আমরা যদি এমন একটা পৃথিবী চাই যেখানে সম্পদের কোনো কেন্দ্রীকরণ থাকবে না, তাহলেও সেটাই আমাদেরকে করতে হবে। অর্থাৎ এই সবকিছুর জন্যই দরকার সঠিক হার্ডওয়্যার ও সঠিক সফটওয়্যার। আর এজন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষমতাই আমাদের হাতে। মানুষ যখনই কোনো কিছু করতে মনস্থির করে, তারা তা করে ছাড়ে; পৃথিবীতে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই।
তবে সবচাইতে বড় সুসংবাদটি হচ্ছে, করোনা সংকট আমাদেরকে একেবারে নতুন করে সবকিছু শুরু করার প্রায় সীমাহীন একটা সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। আমরা আমাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারগুলো প্রায় নতুন করে তৈরী করার কাজ শুরু করতে পারি।
করোনা-উত্তর পুনর্গঠনকে হতে হবে সামাজিক সচেতনতা চালিত পুনর্গঠন
শুধু একটি বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য আমাদেরকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে: একটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত যে, আমরা যেখান থেকে এসেছি সেখানে আর ফিরে যেতে চাই না। পুনরুদ্ধারের নামে আগের সেই জ্বলন্ত কড়াইতে ঝাপ দিতে চাই না।

একেপুনরুদ্ধারকর্মসূচি বলাটাই আসলে ঠিক হবে না
আমাদের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করার প্রয়োজনে আমরা একে ‘পুনর্গঠন’ কর্মসূচি নামে অভিহিত করতে পারি। আর এটা সম্ভব করে তুলতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হবে বিভিন্ন ব্যবসা। করোনা-পরবর্তী পুনঃনির্মাণ কর্মসূচির জন্য প্রারম্ভিক সিদ্ধান্ত হতে হবে সমাজ ও পরিবেশগত সচেতনতাকে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রস্থলে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা। সরকারগুলোকে অবশ্যই এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, ব্যয়কৃত প্রতিটি টাকা অন্য সকল বিকল্পের তুলনায় সমাজকে সর্বোচ্চ সামাজিক ও পরিবেশগত সুফল দেবে এটা নিশ্চিত না হয়ে কাউকে একটি টাকাও দেয়া হবে না। পুনর্গঠনের সকল কর্মোদ্যোগকে দেশের এবং সার্বিকভাবে পৃথিবীর জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে সচেতন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়োজিত হতে হবে।
এখনই সময়
আমরা শুরু করবো সামাজিক সচেতনতা চালিত ‘পুনর্গঠন’ প্যাকেজগুলো নিয়ে। আমাদেরকে এখনই – যখন আমরা সংকটের গভীরতম পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি – আমাদের পরিকল্পনাগুলো তৈরী করে নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে – এই সংকট যখন সমাপ্তি পর্বের দিকে আসতে থাকবে তখন পুরনো সব পদ্ধতিগুলোর সুফলভোগীরা আবারো সুফলগুলো লুফে নেবার প্রতিযোগিতায় হুড়মুড় করে এগিয়ে আসবে। নতুন উদ্যোগগুলোকে পথচ্যুত করতে শক্তিশালী যুক্তি দেখানো হবে যে এই কর্মপন্থাগুলো ‘পরীক্ষিত’ নয়। (আমরা যখন প্রস্তাব করেছিলাম যে, অলিম্পিক গেম্সকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে ডিজাইন করা সম্ভব তখন বিরোধীরা একই যুক্তি দেখিয়েছিল। এখন প্যারিস অলিম্পিককে প্রতিটি পদক্ষেপে অধিকতর উৎসাহের সাথে সামাজিক ব্যবসা হিসেবেই ডিজাইন করা হচ্ছে।) আমাদেরকে হুড়োহুড়ি শুরু হবার আগেই তৈরী হয়ে যেতে হবে। আর তা এখনই।
সামাজিক ব্যবসা
এই ব্যাপক পুনর্গঠন পরিকল্পনায় আমি একটি নতুন ধরনের ব্যবসাকে – যাকে আমি সামাজিক ব্যবসা বলি, কেন্দ্রীয় ভুমিকা দেবার প্রস্তাব করছি। এই ব্যবসাটি সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার জন্য। এই ব্যবসা থেকে বিনিয়োগকারী শুধু তাঁর মূল বিনিয়োজিত অর্থটুকুই ফেরত পান, কোনো ব্যক্তিগত মুনাফা বা লভ্যাংশ পান না। বিনিয়োগকারীর মূল বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেবার পর অর্জিত মুনাফা এই ব্যবসাতেই বিনিয়োজিত হয়।
বড় ধরনের পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেবার জন্য সরকারগুলোর কাছে সামাজিক ব্যবসাগুলোকে উৎসাহিত করতে, অগ্রাধিকার দিতে এবং এদেরকে স্থান করে দিতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ থাকবে। একই সময়ে সরকারগুলোর এমনটি প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না যে, সামাজিক ব্যবসাগুলো চাহিদামতো সময় ও মাপে সকল জায়গায় তৈরী হয়ে যাবে। সরকারগুলোকে অবশ্যই তাদের কর্মসূচিগুলো চালু করতে হবে, যেমন প্রচলিত কল্যাণ কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে হতদরিদ্র ও বেকারদের দেখাশোনা করা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, অত্যাবশ্যকীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করা, এবং সেসব ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দেয়া যেখানে সামাজিক ব্যবসার প্রসার ধীর গতিতে হয়।
সামাজিক ব্যবসার প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে সরকারগুলো কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটেল ফান্ড গঠন করতে পারে, বেসরকারী খাত, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ তহবিলগুলোকে সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটেল ফান্ড তৈরী করতে উৎসাহিত করতে পারে, প্রচলিত ব্যবসাগুলোকে নিজেদেরকে সামাজিক ব্যবসায়ে পরিণত হতে বা কোনো সামাজিক ব্যবসাকে অংশীদার করে নিতে উৎসাহিত করতে পারে। এছাড়াও কর্পোরেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ সামাজিক ব্যবসা তৈরী করতে বা সামাজিক ব্যবসা পার্টনারদের সাথে যৌথ উদ্যোগে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করতে পারে।
পুনর্গঠন কর্মসূচির অধীনে সরকারগুলো বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসাকে অর্থায়ন করতে পারে যাতে তারা অন্য কোম্পানী ক্রয় করতে পারে বা কোনো অভাবগ্রস্ত কোম্পানীতে অর্থ লগ্নী করে তাকে সামাজিক ব্যবসায়ে রুপান্তরিত করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামাজিক ব্যবসাগুলোকে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার অনুমোদন দিতে পারে।
পুনর্গঠন প্রক্রিয়া একবার শুরু হয়ে গেলে তখন আরো অনেক সুযোগ তৈরী হবে; সরকারের উচিত হবে যত বেশি সম্ভব সামাজিক ব্যবসাকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা।

সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী কারা?
সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী কারা? এদেরকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে?
এরা সব জায়গাতেই আছে। আমরা এদেরকে দেখতে পাই না কেননা অর্থশাস্ত্রের প্রচলিত পাঠ্য বইগুলোতে এদের অস্তিত্বই স্বীকার করা হয়না। এর ফলে আমাদের চোখও এদেরকে দেখতে অভ্যস্ত নয়। তবে বিশ্বব্যাপী গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণের প্রশংসার কারণে অর্থনীতির কোর্সগুলোতে সম্প্রতি সামাজিক ব্যবসা, সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ, অভিঘাত বিনিয়োগ, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এগুলো সম্পর্কিত আলোচনা মূল তত্ত্বগুলোর পাশাপাশি অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে।

অর্থশাস্ত্র যতদিন মুনাফা সর্বোচ্চকরণের একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হবে ততদিন আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতা-ভিত্তিক একটি পুনর্গঠন কর্মসূচি হিসেবে এর উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারবো না। আমাদের পুরো কর্মকৌশলটাকে হতে হবে অর্থনীতির সম্প্রসারণের সাথে সাথে এর মধ্যে সামাজিক ব্যবসার অনুপাতটাকে বড় করে আনা। সামাজিক ব্যবসার সফলতা তখনই দৃশ্যমান হবে যখন সমগ্র অর্থনীতিতে এর অনুপাতটাই যে শুধু বড় হয়ে আসবে তাই নয়, উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দুই ধরনের ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যাও বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর এটাই সংকেত দেবে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতা-ভিত্তিক অর্থনীতির প্রকৃত যাত্রারম্ভের।
সরকারী নীতি সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদেরকে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করলেই এই উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা এই ঐতিহাসিক সুযোগে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব পালনে প্রবল আগ্রহে এগিয়ে আসবে। সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তারা সমাজে ‘ভাল কাজ করা’ মানুষদের একটা ছোট দল নয়। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইকো-সিস্টেম যার অন্তর্ভূক্ত বিশালায়তন বহুজাতিক কোম্পানীগুলো, বৃহৎ সামাজিক ব্যবসা তহবিলসমূহ, বহু প্রতিভাবান প্রধান নির্বাহী, কর্পোরেট সংস্থাগুলো, ফাউন্ডেশনসমূহ ও ট্রাস্টসমূহ যাদের বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক ব্যবসা অর্থায়ন ও পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সামাজিক ব্যবসার তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতা একবার সরকারী মনোযোগ আকর্ষণ করলে অনেক কট্টর ব্যক্তিগত মুনাফাসন্ধানীও তাদের অনাবিস্কৃত প্রতিভার একটি অংশ সফল সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা হবার কাজে ব্যবহার করতে পারলে এবং জলবায়ু সংকট, বেকারত্ব সমস্যা, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ সমস্যা ইত্যাদির সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভুমিকা রাখার সুযোগ পেলে আনন্দ বোধ করবে।

মানুষ উদ্যোক্তা হয়েই জন্মায়, অন্যের চাকরি করতে নয়
পুনর্গঠন কর্মসূচিকে অবশ্যই নাগরিকদের ও সরকারের ভেতরকার একটি প্রথাগত শ্রম বিভাজনকে ভাঙতে হবে। এটা ধরে নেয়া হয়েছে যে, নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের পরিবারের দেখাশোনা করা ও কর প্রদান করা। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে (এবং সীমিত আকারে অলাভজনক খাতেরও) সকল যৌথ সমস্যার দেখভাল করা, যেমন জলবায়ু, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জল সরবরাহ ইত্যাদি। পুনর্গঠন কর্মসূচিকে এই বিভাজনের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং নাগরিকরা সকলে যাতে নিজে থেকে এগিয়ে এসে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এসকল সমস্যা সমাধানে তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারে সেজন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের প্রকৃত শক্তি হবে তাদের এই উদ্যোগগুলোর আকার নয়, বরং এগুলোর সংখ্যা। ছোট ছোট এসব উদ্যোগের সংখ্যা বিশাল হলে এগুলোর সম্মিলিত শক্তি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্মযজ্ঞে পরিণত হবে। যে সমস্যাটির সমাধানে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তারা এখনই এগিয়ে আসতে পারে তা হলো অর্থনীতির ভেঙ্গে পড়া থেকে সৃষ্ট ব্যাপক বেকারত্ব। সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ধরনের সামজিক ব্যবসা সৃষ্টি করে বেকারদের জন্য কাজ তৈরীতে লেগে পড়তে পারে। এর পাশাপাশি তারা বেকাররা যাতে উদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারে সে বিকল্পও তাদের সামনে খোলা রাখতে পারে যা প্রমাণ করবে যে মানুষ মূলত উদ্যোক্তা হয়েই জন্মায়, চাকরি খোঁজার জন্য নয়। এছাড়া সামাজিক ব্যবসাগুলো সরকারী ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরীর কাজেও নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারে।
সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারীকে যে অপরিহার্যভাবে কোনো ব্যক্তিই হতে হবে তা নয়, সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারী হতে পারে কোন বিনিয়োগ তহবিল, ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট বা কোন সামাজিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনা কোম্পানী। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই বিভিন্ন কোম্পানীর প্রথাগত মালিকদের সাথে কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে কাজ করতে হয় তা খুব ভালো জানে। করোনা-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারের দিক থেকে একটি সঠিক আহ্বান একটি বিপুল, অভূতপূর্ব কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে। এটা পৃথিবীর সামনে তরুণ, মধ্যবয়সী, বয়স্ক নারী-পুরুষদের মধ্য থেকে একেবারে অজানা বিভিন্ন উপায়ে পৃথিবীকে নবজন্মে অনুপ্রাণিত করার নেতৃত্বের একটা চমৎকার পরীক্ষা।

আমাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই
আমরা যদি করোনা-উত্তর একটি সামাজিক ও পরিবশেগত সচেতনতা চালিত পুনর্গঠন কর্মসূচি নিতে ব্যর্থ হই তাহলে করোনার চেয়েও বহুগুণ ভয়াবহ দুর্যোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা নিজের ঘরে লুকিয়ে থেকে করোনাভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু আমরা যদি ক্রমাবনতিশীল বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ব্যর্থ হই তাহলে ক্রুদ্ধ প্রকৃতি ও গণমানুষের রোষ থেকে লুকানোর কোনো জায়গা আমাদের থাকবে না।

কুরআনের ৪টি মোটিভেশনাল শব্দ খুবই উপকারি,ছোট কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক ।পাশাপাশি জীবন পরিবর্তনের বীজ লুকায়িত আছে এতে। ১) ” লা তাহযান ” অতীত নিয়ে কখনো হতাশ হবেন না, অতীতকে দাফন করে ফেলতে হবে মেমোরি থেকে ! ২) ” লা তাখাফ ” ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই দুশ্চিন্তা করবেন না, তা ন্যস্ত করে দিতে হবে মালিকের উপর । তাওয়াক্কুল তু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ৩) ” লা তাগদাব ” জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময় আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে,কখনো রাগ করবেন না! ৪) ” লা তাসখাত ” আল্লাহর কোনো ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না কখনো। মাথা পেতে সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে সাফল্য ! আমাদের জীবনের সমস্যা সমাধানে এর চেয়ে ভালো প্রেসক্রিপশন আর কি হতে পারে !

টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন: ভারত, পাকিস্তানের ওপরে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : July 5, 2020, 12:10 pm

আপডেট সময় : July 5, 2020 at 1:19 pm

নিউজ ডেস্ক : জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জনে ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০-এ বাংলাদেশের এ অবস্থান উঠে এসেছে। প্রথম আলো

গত ৩০ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এসডিজিবিষয়ক একদল বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক নামের একটি সংস্থা। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ সরকারিভাবে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এ প্রতিবেদন কোনো অফিশিয়াল প্রতিবেদন নয়।

টেকসইউন্নয়নপ্রতিবেদন২০২০শীর্ষেরয়েছেসুইডেন।এসডিজির১৭টিলক্ষ্যেরভিত্তিকরেনম্বরেরভিত্তিতে্যাঙ্কিংকরাহয়েছে।ক্ষেত্রেসুইডেনেরপ্রাপ্তনম্বর৮৩দশমিক৭২।আরবাংলাদেশ৬৩দশমিক৫১নম্বরনিয়েআছে্যাঙ্কিংয়ে১০৯এ।ভারত৬১দশমিক৯২নম্বরনিয়ে্যাঙ্কিংয়েরয়েছে১১৭তে।

[] বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্নতার বার্তা সালমানের (ভিডিও)  ইরাক সিরিয়ায় মার্কিনিদের যুগ শেষ এবার আফগানিস্তানের পালা বললেন খামেনেয়ীর উপদেষ্টা বেলায়েতি  [] সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত না করতে সংবাদপত্রের মালিকদের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহবান

তালিকায়পাকিস্তানআছে্যাঙ্কিংয়ে১৩৪এ।এসডিজির১৭টিলক্ষ্যঅর্জনেগৃহীতপদক্ষেপেরভিত্তিতেদেশটিরপ্রাপ্তনম্বর৫৬দশমিক১৭।আরআফগানিস্তানরয়েছে্যাঙ্কিংয়ে১৩৯তমঅবস্থানে।এসডিজিরলক্ষ্যঅর্জনেগৃহীতপদক্ষেপেরভিত্তিতেদেশটিরপ্রাপ্তনম্বর৫৪দশমিক২২।

প্রতিবেদনেবাংলাদেশপ্রসঙ্গেবলাহয়েছে, ১৭টিলক্ষ্যেরমধ্যে৪টিতেবাংলাদেশসঠিকপথেইঅগ্রসরহচ্ছে।ছয়টিতেঅল্পকিছুউন্নতিকরেছে।তিনটিলক্ষ্যেরক্ষেত্রেস্থবিরঅবস্থায়রয়েছে।আরদুটিতেঅবনতিঘটেছে।বাকিদুটিরবিষয়েকোনোহালনাগাদতথ্যমেলেনিবলেপ্রতিবেদনেউল্লেখকরাহয়।

প্রতিবেদনেসর্বশেষঅবস্থানেরয়েছেসেন্ট্রালআফ্রিকানরিপাবলিক।

কাশ : রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
আপলোড : ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০৭

প্রিন্ট ভার্সন

 প্রিন্ট করুন 

নতুন উদ্যোক্তাতেই বেকার সমস্যার সমাধান

চাকরি প্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁক বাড়ছে তরুণ প্রজন্মের, চীন-আমেরিকার মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ

মানিক মুনতাসির

Currently 0/5

1

2

3

4

5

গড় রেটিং: 0/5 (0 টি ভোট গৃহিত হয়েছে)

করোনাকাল উত্তরণ শেষে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে এখন থেকেই। কেননা বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলমান মহামারীতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও কঠিন সময় পার করবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সংকুচিত হয়ে এসেছে কর্মক্ষেত্র। মানুষের চাহিদার অনুপাতে সম্পদের সরবরাহ কমে গেছে। এরই মধ্যে সব ধরনের শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে। প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। খোদ ব্যাংক ব্যবসায়ও মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা মহামারী কেটে গেলেও এ সময়ের মধ্যে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। মানুষের আয় ইতিমধ্যেই কমে গেছে ৭০ ভাগ। একইভাবে চাকরির বাজার অব্যাহতভাবে সংকুচিত হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের চাকরি প্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তার প্রতি ঝোঁক বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এখন চাকরিজীবী হওয়ার চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাস হয়তো কখনোই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না। এর রেশ অন্তত আরও পাঁচ বছর থাকতে পারে। ফলে অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ই-কমার্সের আওতা আরও বাড়বে। সামনের দিনগুলোতে লাভজনকের চেয়ে টেকসই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়বে। এদিকে চীন ও আমেরিকার মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে চীন থেকে আমেরিকা, জাপান, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বিরাট সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য যেসব কোম্পানি চীন থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছে সেসব কোম্পানির সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগও করছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ফলে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে সামনের দিনগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। অন্যদিকে নতুন নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে। এতে তরুণ উদ্যোক্তারাই এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ২১ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েই কর্মবাজারে প্রবেশের যোগ্য হন ১৬ লাখ। আর সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে প্রতিবছর কর্মসংস্থান হয় ৬ থেকে ৭ লাখ লোকের। সে হিসাবে প্রতিবছর অন্তত ১৪ লাখ বেকার তৈরি হয়। বর্তমানে অন্তত দেড় কোটি মানুষ কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রায় সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের বহু শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক শিল্প মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে খরচ কমাচ্ছেন। এ জন্য তারা কর্মী ছাঁটাইও করছেন। তাই, করোনা-পরবর্তীতে দেশে বেকারের তালিকা কতটা লম্বা হবে তা হয়তো এখনই বলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে আশার কথা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে বিশ্ব আবার ব্যস্ত হয়ে উঠবে। নতুন করে শিল্প-কারখানার চাকা ঘুরবে। নতুন নতুন পণ্যের বাজার প্রসারিত হবে। মানুষের নতুন নতুন চাহিদার সৃষ্টি হবে। যা আবার কর্মক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এতে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে। নতুন করে উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগও সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

যারা ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ প্রশিক্ষণের আওতা আরও বাড়বে। তাদের স্থানীয়ভাবে ব্যাংক ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে। প্রত্যেকেই যেন একেকজন উদ্যোক্তা হতে পারেন সে সুযোগ তৈরি করতে পারলে বেকার সমস্যার সমাধানে এটা অনেকটাই কাজে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে এদের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজে লাগানো হবে। এদিকে নতুন বাজেটে বিদেশফেরত শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবকদের ব্যবসা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সরকার বিতরণ করবে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় উপযুক্ত উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।জানা গেছে, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিশেষ তহবিল রয়েছে। করোনার প্রভাবে সাময়িক কর্মহীনতা দূরীকরণের জন্য পোশাক ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার দুটি স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে ১৭৭টি ক্লাস্টার করে এসএমই খাতের উন্নয়নে কাজ করা হবে।

এ ছাড়া স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ৪ লাখ ২৮ হাজার প্রশিক্ষিত হয়েছে। যুব অধিদফতরের ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’র মাধ্যমে ২ লাখ ২৭ হাজার জনের অস্থায়ী কর্মসংস্থান করা হয়েছে করোনা মহামারী শুরুর আগে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) নানাভাবে বেকার তরুণদের প্রশিক্ষিত করার কাজ করছে। দক্ষ লোক তৈরির জন্য কয়েকটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে দেশে আরও ১২টি আইটি পার্ক ও ৮টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এদিকে ২০২০ সালের মধ্যে ২৪ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটির এ লক্ষ্যে ‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।

দরকারি ১০ দক্ষতা

২৯ এপ্রিল ২০১৮, ২০:০৪
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:৩৬

প্রিন্ট সংস্করণ

  

মানুষের দক্ষতা সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। কারিগরি ও মানবিক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতার নানান বিষয় ও প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে পারি। এর বাইরে বেশ কিছু দক্ষতা আছে, যা নিজে থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। সারা পৃথিবীতেই চাকরির ক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘সফট স্কিল’ গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, সফট স্কিল বলতে সাধারণত এই মানবিক দক্ষতাগুলোকেই বোঝানো হয়। কারিগরি দিক দিয়ে আপনি যতই দক্ষ হন না কেন, মানবিক দক্ষতা না থাকলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কঠিন। ১০টি প্রয়োজনীয় মানবিক দক্ষতার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি প্রোগ্রামের চেয়ারপারসন, বিজনেস কমিউনিকেশন পরামর্শক ও সহকারী অধ্যাপক সাইফ নোমান খান

.. যোগাযোগ দক্ষতা

পড়াশোনার বিষয়টা যা-ই হোক, যে ক্ষেত্রেই আপনি ক্যারিয়ার গড়েন না কেন, আপনার মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা থাকা জরুরি। ভাষাগত দক্ষতা, ইতিবাচক শারীরিক ভাবভঙ্গি, লেখার দক্ষতা, গল্প বলার দক্ষতা, রসবোধ, শোনার আগ্রহ, পাবলিক স্পিকিং, সাক্ষাৎকার গ্রহণসহ ই–মেইল লেখা, নিজের বক্তব্য তুলে ধরার যোগ্যতা আয়ত্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই এসব দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। চর্চার মাধ্যমে দুর্বলতা দূর করতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে টেড টকস: দ্য অফিশিয়াল টেড গাইড টু পাবলিক স্পিকিং বইটি পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, বাংলা ও ইংরেজি, দুটো ভাষাতেই আপনাকে দক্ষ হতে হবে।

. নেতৃত্ব বিকাশ

যেকোনো ক্যারিয়ারেই নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ থাকা এখন বিশেষ যোগ্যতা। আপনি ম্যানেজার হতে চান কিংবা দক্ষ কর্মী, আপনার মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণ থাকতে হবে। দল গঠনের সক্ষমতা, নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি করা, পরামর্শ দেওয়া-নেওয়া, সংঘাত নিরসনের কৌশল জানা, কূটনীতি, মতামত দেওয়া ও নেওয়া, তত্ত্বাবধান করাসহ দূর থেকেই দলকে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে। টম র‍্যাথের স্ট্রেন্থস ফাইন্ডার . বইটি পড়ে জানতে পারবেন, কোন ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলি আপনার মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন বিজনেস কেস কম্পিটিশন, হ্যাকাথন আরও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নিজের নেতৃত্ব বিকাশের সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। সংগঠনে কাজের মধ্য দিয়েও নেতৃত্বের গুণ বিকাশ করা যায়।

পেশাগত দক্ষতা. পেশাগত দক্ষতা

পেশাগত দক্ষতা বলতে প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, পরিকল্পনা করা, মিটিং পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কোথায় কী হচ্ছে, গবেষণা করার আগ্রহ, ব্যবসায় রীতিনীতি সম্পর্কে জানা, প্রশিক্ষণ নেওয়া ও দেওয়া এবং গ্রাহকসেবার নানা দিক সম্পর্কে জানা—এসবই বোঝায়। পেশাগত দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষে কর্মজীবনে পা রাখলে ভয় কিংবা জড়তা তেমন থাকে না। চার্লস দুহিগের দ্য পাওয়ার অব হ্যাবিট: হোয়াই উই ডু হোয়াট উই ডু ইন লাইফ অ্যান্ড বিজনেস বইটি পড়লে জড়তা কাটানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানা যাবে।

. ব্যক্তিগত দক্ষতা
আপনি কতটা ইতিবাচক মানুষ কিংবা নেতিবাচক পরিবেশে নিজেকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিগত দক্ষতা বলতে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ, ব্যক্তি সচেতনতা, আবেগের নিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ, আপনি কতটা সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ—এসবই বোঝায়। আপনি কেমন মানুষ, আগে তা খুঁজে বের করতে হবে, তারপর কোথায় কোথায় দুর্বলতা তা বের করে নিজেকে শোধরাতে হবে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স . বইটি পড়লে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ কীভাবে, কতটা সৃজনশীল উপায়ে বিকাশ করা যায়, তা জানতে পারবেন।

. নিজেকে উপস্থাপন

নিজেকে অন্যের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাও একটি দক্ষতা। এমন নয় যে আপনি যা নন, তা অন্যের সামনে দেখাতে হবে। বরং আপনার শক্তির জায়গাগুলোকে কাজে লাগিয়েই নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা শিখতে হবে। অন্যের সামনে নিজের ‘ব্র্যান্ডিং’ করতে হবে।

. ইতিবাচক চিন্তা করা শিখতে হবে

আপনি কীভাবে চিন্তা করেন—এ থেকেই বোঝা যায় আপনি কতটা দক্ষ। নিজের চিন্তাশক্তি বিকাশের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড্যানিয়েল কাহনেম্যানের থিংকিংফাস্ট অ্যান্ড স্লো বইটি পড়তে পারেন। সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক চিন্তা করা শিখতে হবে এবং তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

. সৃজনশীলতা উদ্ভাবন

জীবনে আপনি কতটা সফল হবেন, তা নির্ভর করে আপনার সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার ওপর। সৃজনশীলতার সঙ্গে নিজের বুদ্ধিমত্তার নান্দনিকতার সম্পর্ক যুক্ত। উদ্ভাবনী দক্ষতা বিকাশের জন্য আপনি অভিজ্ঞ কোনো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। যে ভাবনাগুলো আপনাকে আলোড়িত করছে, সেগুলো শুধু মাথার ভেতর না রেখে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। তাহলেই আপনার শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানতে পারবেন।

. সংবেদনশীলতা

আপনার সংবেদনশীলতা আপনার আজীবনের শক্তি। কোনো কারণে ব্যর্থ হলে কত দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক হতে পারেন কিংবা ব্যর্থতার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কতটা ইতিবাচক, এসব গুণই সংবেদনশীলতা। আপনি নিজের অনুভূতিকে কতটা ইতিবাচক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তা আপনাকে চর্চার মাধ্যমে শিখতে হবে।

 . সমস্যা সমাধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ

আমরা সমস্যা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে সমাধান নিয়ে ভাবনার সুযোগই পাই না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য গণিত ও যুক্তির বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগের চেয়ে যুক্তি ও বাস্তবতার দিকে খেয়াল রাখতে শিখতে হবে।

১০. শেখার আগ্রহ

সবচেয়ে বড় সফট স্কিল হচ্ছে শেখার আগ্রহ থাকা এবং শিখে তা প্রয়োগের চেষ্টা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়ে অহংকারবোধ করি, নিজে থেকে কিছু শিখতে চাই না, যা একটি ফাঁদ। আপনি নিজেকে জ্ঞানী ভাবা শুরু করলেই শেখার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। শিখতে না পারলে ক্যারিয়ার বা জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। আপনার চেয়ে বয়সে বড় কিংবা ছোট সবার কাছে যেতে হবে শেখার জন্য। কে আপনাকে কোন বিষয়টি শেখাবে, তা কিন্তু আপনি জানেন না। আপনার মন যদি নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত না থাকে, তাহলে আপনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন না।

আরও সংবাদ

বিষয়:

স্বপ্ন নিয়েজেনে নিন

আজ বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২০

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ

মোঃ আব্দুল কাদের খান   

১৫ জুলাই, ২০২০ ২০:৫৫ | পড়া যাবে ৬ মিনিটে

প্রিন্ট

মানবসভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিনটি শিল্পবিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ। প্রথম শিল্প বিপ্লবটি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুত ও ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিল্পবিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। তবে আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব। এ নিয়েই এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এটিকে এখন বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। ডিজিটাল বিপ্লবকে কেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বলা হচ্ছে, সেটি নিয়ে আলোচনার জন্য সারা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ ও বিশ্লেষকেরা এক জায়গায় হয়েছিলেন ২০১৬ সালের ২৩ জুন সুইজারল্যান্ডের শহর দাভোসে। সেখানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। ডব্লিউইএফ-এর এ সম্মেলনে পর থেকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারনা গুরুত্ব পেতে থাকে।   

ডাব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে বলেছেন, “আমরা চাই বা না চাই, এত দিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা যেভাবে চলেছে সেটা বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়া। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট অব থিংস, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, রোবোটিকস, জৈবপ্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছে বলে তিনি মনে করেন।

চতুর্থ এই শিল্পবিপ্লব সারা বিশ্বের মানুষের জীবনমান কী প্রভাব ফেলবে, সেটি নিয়ে দুই ধরনের মত পাওয়া যাচ্ছে। একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এর ফলে সব মানুষেরই আয়ের পরিমাণ ও জীবনমান বাড়বে। বিশ্বের পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়াতেও ডিজিটাল প্রযুক্তি আনবে ব্যাপক পরিবর্তন। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য পাঠানোর খরচ অনেক কমে আসবে, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। তবে আরেক দল অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডিজিটাল বিপ্লব বিশ্বের অসাম্য ও দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে মানুষের দ্বারা সম্পন্ন অনেক কাজ রোবট ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সম্পন্ন করা হবে, এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে তা সমস্যা তৈরি করবে। এ ছাড়া শ্রমবাজারে অল্প কর্মদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা ও বাজার কমে যাবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেশি করে সমস্যায় ফেলবে।

উন্নতদেশের কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশ

জার্মানিতে ১৯৬৯ সালে কারিগরি শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। জার্মানিতে প্রচলিত রয়েছে ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এখানে একই সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুলে অধ্যয়ন করে এবং একটি সত্যিকারের কম্পানিতে কাজ করে বাস্তব জ্ঞান লাভ করে। এখানে কারিগরি স্কুলে প্রধানত তত্ত্বীয় অংশ, যা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য দরকার সেটা শিখানো হয়, আর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং কাজের সুযোগ মেলে কম্পানিতে।

জাপানে আগে ভোকেশনাল শিক্ষা ছিল মূলত লো গ্রেডের শিক্ষার্থী এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির কাজের ধরন ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় কারিগরি শিক্ষা অনেক বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধুমাত্র স্কুল পাস করা শিক্ষার্থীরাই কারিগরি শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে এমন নয়; বরং গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে যারা কর্মক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ দেখাতে পারছেন না, তারাও কারিগরি প্রশিক্ষণের দিকে সমানভাবে আগ্রহী হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে ভোকেশনাল শিক্ষার সুত্রপাত হয় ১৯৬০ সালের দিকে। ২০১৯ সালে ভোকেশনাল শিক্ষায় গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ৮৫% তাদের গ্রাজুয়েশনের ছয় মাসের মধ্যে নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে চাকুরি শুরু করে, যা অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে ভোকেশনাল শিক্ষায় আরো উদ্বুদ্ধ করেছে। মালয়েশিয়াতে চালু রয়েছে ভোকেশনাল শিক্ষাব্যবস্থা যা ইউনেসকোর টিভিইটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চীন কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে খুবই তৎপর দেশগুলোর একটি। ২০১১ সালে চীনে ২১ হাজার ৮৭০ টি ভোকেশনাল সেকেন্ডারি স্কুল ছিল। দিন দিন দেশটির কারিগরি শিক্ষা এবং গবেষণার হার বাড়ছে এবং এর প্রমাণ চীনের পণ্যে সয়লাব হওয়া বাজার দেখে সহজেই বোঝা যায়।

অথচ কারিগরি শিক্ষায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে মাত্র ১৪% শিক্সার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছে। আবার ১৪% যে  কারিগরি  শিক্ষা গ্রহণ করছে তার মান নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার অভাব, শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, কাঁচামাল সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার্থীরা। 

প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তন ও করোনার মতো মহামারী কারণে আগামীতে অনেক পেশা হারিয়ে যেতে পারে, সঙ্গে অবশ্য যোগ হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। স্বভাবতই আমাদের মতো শ্রমনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো বিপদে পড়বে। তাই আমাদের এখন থেকেই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনো  আমারা প্রাখমিক পর্যায়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনো তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত। আমাদের অদক্ষ-স্বল্প দক্ষ শ্রমবাজারকে রূপান্তরিত করে যুগোপযোগী ও কারিগরিভাবে দক্ষ করা, বর্তমানের অর্জনগুলোর  চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নির্ণয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন কর্মসংস্থান সম্ভাবনা আবিষ্কার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল তৈরি, অবকাঠামো তৈরির চ্যালেঞ্জ নেওয়া এবং  একটা কর্মসংস্থানমুখী টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে হবে।

দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রচুর দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হবে। তাই সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিৎ বিনিয়োগ প্রস্তাব বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষার পরিকল্পনা করা। একই সঙ্গে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের বিদেশে পাঠানোর আগে অবশ্যই যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নতুবা করোনার মতো এ ধরনের বিপদে অর্থনীতির ধকল কাটিয়ে ওঠা আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য কষ্টসাধ্য বিষয় হবে। তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, হাইটেক-পার্কসহ সকলে এক হয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বিষয়টি মনে প্রাণে ধারন করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং এ খাতে পর্যায়ক্রমে বাজেট বাড়াতে হবে। অন্যথায় প্রতিযোগীতামূলক এ শ্রম বাজারে টিকে থাকতে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণেও বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।

লেখক : পরামর্শক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)

চাকরির বাজার আগের জায়গায় ফিরবে না! উচ্চশিক্ষিত বেকার দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে?

শরীফুল আলম সুমন   

২৩ জুলাই, ২০২০ ০৭:৫১ | পড়া যাবে ৭ মিনিটে

Kalarkhonto

রয়েছে, তাঁদের আগামী দিনে চাকরি পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

এদিকে গত মার্চ মাস থেকেই একে একে স্থগিত হয়েছে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই বললেই চলে। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।

চাকরির বাজার নিয়ে সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। চাকরির বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে কমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ কম ছিল। গত এপ্রিলে কমেছে ৮৭ শতাংশ। এপ্রিলে পোশাক ও শিক্ষা খাতে ৯৫ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। উত্পাদনমুখী শিল্পে ৯২ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে চাকরি কমেছে ৮১ শতাংশ। তথ্য-প্রযুক্তিকে আগামী দিনের সম্ভাবনা হিসেবে ধরা হলেও সেখানে চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৮২ শতাংশ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৬৪ শতাংশ।

দেশের চাকরির বড় ওয়েব পোর্টাল বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় বিডিজবসে এপ্রিলে প্রায় ৮০ শতাংশ, মে মাসে ৭০ শতাংশ ও জুন মাসে ৫০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে। ২০২০ সালটা খুব বেশি ভালো যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নতুন নিয়োগ তো দিচ্ছেই না; বরং লোকবল কমাচ্ছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুযোগটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

আগামী দিনের চাকরির বাজারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে ই-কমার্স, লজিস্টিক, অ্যাগ্রিকালচার, ফুড প্রডাকশনের মতো কম্পানিতে চাকরির সুযোগ বাড়বে। তবে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছেন। সবাই এসি রুমে টেবিলে বসে চাকরি করতে চান। ব্যাংক বা সরকারি চাকরিতে প্রার্থীদের আগ্রহ থাকলেও সেখানে পদ খুবই কম। আগামী দিনে চাকরি করতে হলে উচ্চশিক্ষিতদের দক্ষতার সঙ্গে মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।’

জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত চার মাসে সরকারি ও বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টারের (ব্যান্সডক) সায়েন্টিফিক অফিসার ও অ্যাকাউন্টস অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ২০ মার্চ। ৩৫ পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন ৫০ হাজার। একই দিনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১১ ক্যাটাগরির মোট ৪৫ পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন ৩৫ হাজার। খাদ্য অধিদপ্তরের এক হাজার ১০০ পদের জন্য আবেদনকারী ছিলেন ১৫ লাখ। মার্চ-এপ্রিলে এ পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা ছিল। দুদকের বিভিন্ন পদের পরীক্ষাও আটকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগও করোনায় আটকে আছে। গত ১৫ ও ১৬ মের ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এতে ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন।

করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুটি বিসিএস ও ১০টি নন-ক্যাডারসহ মোট ১২টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব পরীক্ষার আয়োজনের সুযোগ নেই।

তবে করোনার মধ্যেও ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। এই বিসিএসে উত্তীর্ণদের থেকে নন-ক্যাডার পদের জন্য আবেদন গ্রহণও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও করোনার কারণে ফল প্রকাশ স্থগিত রয়েছে। ফলে অপেক্ষায় আছেন ২০ হাজারের বেশি প্রার্থী। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এ বছরের এপ্রিলের শেষে হওয়ার কথা ছিল। এতে অংশ নিতে আবেদন করেছেন চার লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী।

পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সারা দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে আমাদের পরীক্ষা নিতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে করোনার মধ্যেও আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব সেগুলো আমরা করে যাচ্ছি।’

আগে চাকরিপ্রার্থীরা সব সময় নজর রাখতেন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন চাকরির ওয়েব পোর্টালে। গত চার মাসে সেখানে নতুন কোনো সরকারি বা বেসরকারি বড় চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছিল না। সংবাদপত্রে সবচেয়ে বেশি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয় ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু গত কয়েক মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি ছিল হাতে গোনা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিজিত সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট থাকে। এরপর আবার করোনায় চাকরির পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। নতুন বিজ্ঞাপন নেই। ফলে অনেকেরই চাকরির বয়স ৩০ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দাবি, আগামী তিন বছরের জন্য হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত, যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। যদিও বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরো বেশি।

ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ সমমানের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা সাত লাখ ১৪৮ জন। আর ১০৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৭২৯ জন।

মূলত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন প্রার্থীরা। সেই হিসাবে প্রতিবছর চাকরিতে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করেন উচ্চশিক্ষিত প্রায় সাড়ে সাত লাখ প্রার্থী। চলতি বছর যদি সমসংখ্যক প্রার্থী চাকরিতে না ঢুকতে পারেন তাহলে বছর শেষে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সব পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফাইনাল, মাস্টার্স ফাইনাল, ডিগ্রি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ এবং মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আটকে গেছে। ফলে অনেকেই পড়ালেখা শেষ করে চাকরির প্রত্যাশায় থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষাই শেষ করতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হবে। তাঁদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে।

বলা হচ্ছে আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু এই বিপ্লবের সম্ভাবনা পুরোপুরি বিকশিত হওয়ার আগেই মানবজাতি করোনার কারণে মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ-এর পূর্বাভাস সত্যি হলে ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার পর ২০২০ সাল সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ২০২০ সালের মে মাসের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ৩৩০ কোটি কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৮১ শতাংশই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ যুবক বেকার রয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকেই বেকারত্ব বাড়ছে। মহামারির প্রভাবে যুবকদের প্রতি ছয়জনে একজন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মহামারিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনভাবে। প্রথমত কর্মহীন হচ্ছেন, দ্বিতীয়ত তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে, তৃতীয়ত চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। বাকি ২৭ লাখ বেকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়ে গিয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)র তথ্যানুযায়ী, চলমান কভিড-১৯ অতিমারির ফলে দেশের ১ কোটি ৩ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। ২০২০ সালের ১৮ জুনের ভার্চুয়াল সংলাপে তারা এই তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০২০ সালের ৮ জুন একটি জরিপ প্রকাশ করে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, সাধারণ ছুটির ৬৬ দিনে দেশের তিন কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন মানুষ চাকরি বা উপার্জন হারিয়েছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির আগে দেশে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৪০ লাখ। ছুটির ৬৬ দিনেই ‘নবদরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রাজধানীর ৫০ হাজার ভাড়াটিয়া ঢাকা ছেড়েছেন। (২৫ জুন ২০২০, কালের কণ্ঠ) এতেই বোঝা যাচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দাটা আসলে কত ভয়ানক।

মূলত শিল্পবিপ্লবের ধারণা এই যে, প্রতিটি শিল্পবিপ্লব মানুষের জীবনকে আরো সহজ-সাবলীল করে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবও সেই ধারণাতেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তার সেই গতিতে বিঘ্ন ঘটেছে। এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল উপভোগ করবে এটুকুই প্রত্যাশা। একইসঙ্গে এর সুফল ভোগ করতে হলে নিজেদের তৈরি করতে হবে, পরিবর্তন মেনে নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে নিয়ে যেতে হবে মানুষের দোরগোড়ায়। ভুলে গেলে চলবে না উন্নত বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল ইতোমধ্যেই ভোগ করছে। আমরা সেদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে।

যাদের মেধা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই, তাদের নীতি-নৈতিকতার এমন বেহাল অবস্থার কারণটা কী?

এর উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকের দিনগুলোয়। নিজেদের চেয়ে বড় আকারের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ছোট্ট কোমলমতি শিশুরা যখন স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করে, তাদের চোখে আনন্দের চেয়ে যেন আতঙ্ক থাকে বেশি। আমাদের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের রাতারাতি একই সঙ্গে পড়ালেখায় আইনস্টাইন, চিত্রাঙ্কনে পাবলো পিকাসো, খেলাধুলায় সাকিব আল হাসান, সংগীতে রুনা লায়লা অথবা কিশোর কুমার বানিয়ে ফেলতে চান। শেখার আনন্দের চেয়ে এসব বাচ্চার কাছে সাফল্যের গুরুত্বকে বড় বানিয়ে ফেলেন বাবা-মায়েরা। অথচ আনন্দ নিয়ে শিখলেই যে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই সাফল্য আসে, এই ক্ষুদ্র ধারণা বড় বড় মস্তিষ্কেই ঢুকতে পারে না। সর্বনাশের এই শুরু।

নষ্টের বীজটা এরপর বেড়ে উঠতে শুরু করে যখন সন্তানকে ফার্স্ট-সেকেন্ড বানানোর নেশায় অন্ধ অভিভাবকেরা মৌলিক নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাতে শুরু করেন। কিশোর বয়সে সন্তানদের আচরণগত ভুলত্রুটিগুলো অনেক মা-বাবা তাঁদের ছেলেমানুষি ভেবে এড়িয়ে যান, যদি সেই সন্তানদের পরীক্ষার ফল ভালো হয়। ক্লাসে ভালো ফল একধরনের সাফল্য, কিন্তু একজন ভালো মানুষ হওয়াটাই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। সাফল্য আর সার্থকতার এই পার্থক্য নিরূপণে বেশির ভাগ অভিভাবক আগ্রহী নন। আর এই অবহেলা থেকেই জন্ম হয় বুয়েটের আবরার ফাহাদের খুনিদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকরের খুনির। এই খুনিদের সবাই মেধাবী ছিল, কিন্তু হয়তো আশপাশের সবাই ওদের যেভাবে পরীক্ষায় ভালো করতে বলেছে, জীবনে ভালো মানুষ হতে সেভাবে বলেনি। অবশ্য অনেক সময় চাইলেও শেখানো যায় না। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। যে সন্তান জন্ম থেকে দেখে আসে তার অভিভাবকটি সীমিত আয়ের চাকরি করেও অঢেল ধনসম্পদের মালিক, তার কোমল মন এটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেবে। সে যদি পরবর্তী সময়ে তার সৎ উপার্জন করা অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল আত্মীয়টিকে সম্মান দিতে না শেখে, তবে তার এই নৈতিক মূল্যহীনতার দায়ভার কার ওপর বর্তাবে?

কাঁঠালের বীজ বপন করে ফজলি আমের আশা কতটা যৌক্তিক?
যদিও সব ধরনের শিক্ষার সূচনা পরিবারেই হয়, তবু দোষ শুধু একতরফাভাবে পরিবারের ওপরে চাপিয়ে লাভ নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিকতা আত্মস্থ করতে শিক্ষার্থীদের কতখানি সাহায্য করছে? জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান শুরু হয় তৃতীয় শ্রেণি থেকে, শেষ হয় এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিশুদের দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই মানবিক গুণাবলির বিকাশ হয় এবং নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। কাজেই বাংলাদেশেও নৈতিক শিক্ষা শুরুর সময়কাল দুই বছর এগিয়ে এনে প্রথম শ্রেণিতেই ধার্য করা যায়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ২০১৯ সালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ নম্বরে। বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে সুইডেন আর আইসল্যান্ডের পাঠ্যসূচিতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত নয়। বাকি দেশগুলোয় সাধারণত ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান শুরু হয় প্রথম শ্রেণি থেকেই, চলে জার্মানিতে দ্বাদশ আর বাদবাকি দেশে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। তার মানে তাদের শিশুরা পরিবার থেকেই মানবিক গুণাবলি রপ্ত করে থাকে। অর্থাৎ সবচেয়ে কম দুর্নীতিপ্রবণ দেশগুলোর শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবার থেকেই মানবিক গুণাবলি রপ্ত করে, অনেক শিশুর নৈতিক শিক্ষা পাওয়া শুরু আমাদের দেশের শিশুদের দুই বছর আগে থেকেই। তবে ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষা আজকাল আর অঙ্ক-বিজ্ঞানের পাশে দাঁড়াতে পারে না। কোনো অভিভাবক তাদের বাচ্চা অঙ্ক, বিজ্ঞানে কম নম্বর পেলে যেভাবে শোকসংগীত শুরু করেন, নৈতিক শিক্ষায় তাদের বাচ্চা ভালো নম্বর না পেলে তেমন বিচলিত হন না। এখানেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনটা দরকার। অঙ্ক-বিজ্ঞান-ইংরেজিতে শিশুদের কম নম্বর পাওয়া খুব বেশি ভয়ের ব্যাপার না, সঠিক চর্চায় এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু নৈতিকতা শিক্ষায় শিশুর কম নম্বর পাওয়া অবশ্যই অভিভাবকমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি এবং বাড়তি মনোযোগ প্রাপ্তির দাবি রাখে। প্রাথমিক শিক্ষার কয়েকটি ধাপকে অতিরিক্ত ফলাফলনির্ভর না করে আনন্দদায়ক করলে শিশুদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না।

কেমন হয় যদি প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না থাকে? শিশুরা মনের আনন্দে বিদ্যালয়ে যাবে, খেলাধুলা করবে, একে অপরের সঙ্গে মিশে সমাজবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব বুঝবে, বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায় অংশ নিয়ে মস্তিষ্ককে ধারালো করবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা শিশুদের শৃঙ্খলা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শেখাবেন, শিশুদের মনোজগতে ভালো-মন্দের পার্থক্য করার সামর্থ্যকে স্থায়ী করবেন। তবে মনে রাখা উচিত, নৈতিকতা বোধের উন্মেষ ঘটবে পাঠশালায় আর তার চর্চা হবে পারিবারিক আয়তনে।

জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত শিক্ষাপিয়াসি, এটা বেশ আশার কথা। কিন্তু সেই জাতির প্রতিটি সামাজিক স্তরে নীতিহীনতার এমন নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ দেখা যাওয়া খুবই হতাশাজনক। খাদ্য আর ওষুধে ভেজাল থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিস আর বিআরটিএতে এককালে থাকা দালালের দৌরাত্ম্য, তোষামোদি করে বৈধ-অবৈধ সুবিধা আদায়, টাকার বিনিময়ে টক শোতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজা থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, রিজেন্ট, জেকেজি, পর্দা, বালিশ, জুম, বঁটি কেলেঙ্কারি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নীতিহীনতার আসলে কোনো বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, শ্রেণি, পেশা নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি সর্বজনীন ধারণা। করোনাভাইরাস যদি হয় বৈশ্বিক মহামারি, নীতিহীনতা হলো সামাজিক মহামারি। শরীরের অসুখের মহামারি সারতে কতখানি সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে মনের অসুখের এই মহামারি সারতে যে তার চেয়ে বেশিই সময় লাগবে—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একদম শিশু বয়স থেকেই পাঠশালায় নীতিশিক্ষার শুরু এবং পারিবারিকভাবে নৈতিকতার চর্চা শুরু করলে মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ বছর পরে আমরা একটি সামগ্রিক সুফল দেখতে পাব বলে আশা করা যায়। নীতিহীন মেধাবীর চেয়ে গড়পড়তা মেধার নীতিমান ব্যক্তির সম্মান সমাজে অনেক উঁচুতে হওয়া উচিত। মেধাবী জাতির আগে নীতিমান জাতি গড়ার দিকে আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। নীতিহীন মেধাবীরা দেশ আর সমাজের ক্ষতিই ডেকে আনে, মঙ্গল বয়ে আনে না। ভুলে গেলে চলবে না, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।

আসিফ ইমতিয়াজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন বিভাগের প্রভাষক।

আরও সংবাদ

বিষয়:

ভয়াবহ বেপরোয়া রূপে কিশোর গ্যাং কালচার

ডেস্ক রিপোর্ট : করোনাকালীন নানামুখী চাপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল নজরদারির সুযোগে দেশজুড়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। উদ্ভট সব নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলছে তারা। এরই মধ্যে এদের সংশ্লিষ্টতায় সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা ভয়াবহ ও বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। পাড়া-মহল্লা-বস্তির ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ধনাঢ্য পরিবারের ধনীর দুলাল, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এসব বাহিনীতে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের হাতে হাতে এখন দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি; রয়েছে অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও।

কিশোর অপরাধীদের বেশিরভাগই মাদকসেবী। ‘হামসে বাড়া কন হে’- এ হিরোইজম ভাব দেখাতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনায় যখন তখন অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলে পড়ছে প্রতিপক্ষের ওপর। এ ছাড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি, ইভটিজিং, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। রাত বাড়লেই অভিজাত এলাকায় শুরু হয় এদের একাংশের ডিসকো পোলার মোটর ও কার রেসিং। মুঠোফোনের সহজলভ্যতা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তারা ব্যবহার করছে অস্ত্র হিসেবে। তথ্য ও ছবি আদান-প্রদানের পাশাপাশি পরস্পরকে হামলার নির্দেশ দিচ্ছে অনলাইনে। নিজেদের শক্তি দেখাতে খুন পর্যন্ত করতে দ্বিধা করছে না ভয়ঙ্কর এই অপরাধীরা।

সর্বশেষগতসোমবারনারায়ণগঞ্জেরবন্দরেরইস্পাহানীঘাটএলাকায়স্থানীয়দুইকিশোরগ্যাংয়েরমধ্যেসংঘর্ষেপ্রাণহারায়দুইস্কুলছাত্র।ঘটনারদিনবিকালেএকপক্ষেরধাওয়াখেয়েপ্রাণবাঁচাতেশীতলক্ষ্যানদীতেঝাঁপদেয়স্থানীয়কদমরসুলকলেজেরদ্বাদশশ্রেণিরমানবিকবিভাগেরছাত্রনিহাদ (১৮) বিএমইউনিয়নউচ্চবিদ্যালয়েরনবমশ্রেণিরছাত্রজিসান (১৫)মধ্যরাতেইশীতলক্ষ্যায়মেলেতাদেরলাশ।নিহাতেরচাচাকমলখানবলেন, কিশোরগ্যাংয়েরদুইগ্রুপেরসংঘর্ষেরকারণেতারভাতিজাসহদুইছাত্রেরপ্রাণগেল।ঘটনায়জড়িতদেরবিচারদাবিকরেনতিনি।

[] কালীগঞ্জে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার  [] বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা  [] সরকারি অর্থসহায়তার তালিকায় স্বজনদের নাম, নবীগঞ্জ পৌরকাউন্সিলর বরখাস্ত

গত১৫মার্চএকঅনুষ্ঠানেনারায়ণগঞ্জেরপুলিশসুপার (এসপি) জায়েদুলআলমবলেন, প্রাণঘাতীকরোনাভাইরাসেরচেয়েভয়ঙ্করমাদককিশোরগ্যাং।প্রত্যেককিশোরেরবাবামাআছে।প্রতিটিঘরথেকেবাবামাসন্তানদেরনিয়ন্ত্রণকরলেকিশোরগ্যাংয়েরসৃষ্টিহতোনা।মাবাবারউচিতসন্তানকখনকোথায়যায়, কীকরে, কারসঙ্গেমেশেসবখোঁজখবররাখা।কিন্তুবর্তমানসমাজেরমাবাবাতাদেরসন্তানেরখোঁজখবররাখেননা, যারকারণেকিশোরগ্যাংবৃদ্ধিপাচ্ছে।

সড়কেএকপথযাত্রীকেঅস্ত্রদিয়েমারধরকরেরক্তাক্তজখম, চুরিহুমকিরঅভিযোগেগতআগস্টসহযোগীনাজমুলসহআলোচিতসমালোচিতবাংলাদেশিটিকটকারইয়াসিনআরাফাতঅপুওরফেটিকটকঅপুওরফেঅপুভাইকেগ্রেপ্তারকরেউত্তরাপূর্বথানাপুলিশ।মারধরেরঘটনায়সেগ্রেপ্তারহলেওটিকটকঅপুরবিরুদ্ধেকিশোরগ্যাংতৈরিরপ্রচেষ্টাখুঁজেপেয়েছেপুলিশ।

মূলতপশ্চিমাবিশ্বেরসঙ্গেতালমিলিয়েবাংলাদেশেকিশোরগ্যাংকালচারেরগোড়াপত্তনহয়অনেকআগেই।দলেদলেভাগহয়েমহল্লাকেন্দ্রিকএবংভার্চুয়ালজগতেউদ্ভটসবনামেআত্মপ্রকাশঘটতেথাকেএকএকটিগ্রুপের।এইকালচারভয়াবহতাপ্রকাশ্যেআসেরাজধানীরউত্তরায়গড়েওঠাএকাধিককিশোরগ্যাংয়েরমধ্যেআধিপত্যবিস্তারনিয়েবিরোধেরজেরেট্রাস্টস্কুলঅ্যান্ডকলেজেরনবমশ্রেণিরছাত্রআদনানকবীরখুনেরপর।২০১৭সালেরজানুয়ারিহত্যাকাজড়িতউত্তরাকেন্দ্রিকডিসকোবয়েজবিগবসনামেকিশোরগ্যাংয়েরদলনেতাসহআটজনগ্রেপ্তারেরপরতাদেরতথ্যেটনকনড়েপ্রশাসনের।লাগাতারঅভিযানেঢাকায়গজিয়েওঠাঅর্ধশতাধিককিশোরগ্যাংয়েরশতাধিকসদস্যকেগ্রেপ্তারকরাহয়।এরপরগ্যাংসদস্যরাকিছুটাদমলেনিষ্ক্রিয়হয়েপড়েনআইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীরসদস্যরা।কিন্তুতলেতলেঠিকইসক্রিয়থাকেভয়ঙ্করকিশোরগ্যাংয়েরসদস্যরা।

গতসেপ্টেম্বররাজধানীরমোহাম্মদপুরেরসাতমসজিদহাউজিংয়েরপাইওনিয়ারগলিতেকিশোরগ্যাংআতঙ্কগ্রুপেরহাতেখুনহয়ফিল্মঝিরঝিরগ্রুপেরসদস্যস্কুলছাত্রমহসিন (১৬)তাকেবাঁচাতেগিয়েআহতহয়সহপাঠীসাব্বির (১৭) রাকিব (১৭)আবারনড়েচড়েবসেপ্রশাসন।এইখুনেরদুইদিনপরকিশোরগ্যাংকালচারপ্রতিরোধেরাজধানীরহাতিরঝিলথানারবিভিন্নএলাকায়ব্লকরেইডদিয়ে১১২কিশোরকেআটককরেপুলিশ।জব্দকরাহয়ছয়টিমোটরসাইকেল।এখনআবারপুরনোচিত্রফিরেছে।

অপরাধবিশেষজ্ঞরাবলছেন, সমাজেবিরাজমানঅস্থিরতায়কিশোরতরুণদেরমধ্যেদ্বন্দ্ববাড়ছে।আরদ্বন্দ্বথেকেইঝরছেরক্ত।সামাজিকশিক্ষানাথাকায়কিশোররাধরনেরঅপরাধেজড়াচ্ছে।রাজনৈতিকনেতাদেরপ্রশ্রয়েআরওভয়ঙ্করহয়েউঠছেতারা।মূলতসমাজএবংপরিবারবিচ্ছিন্নছিন্নমূলকিশোররাস্বাভাবিকশৈশবনাপেয়েঅপরাধীহয়েউঠছে।এসবখুনাখুনিবন্ধকরতেপরিবারকেআরওসচেতনদায়িত্বশীলএবংআইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীরকর্মতৎপরতাবৃদ্ধিঅপরিসীম।

পুলিশবলছে, কিশোরগ্যাংয়েরঅপতৎপরতাআগেরতুলনায়এখনঅনেকটাইনিয়ন্ত্রণে।সম্প্রতিমাদকসহজলভ্যনাহওয়ায়চুরিছিনতাইয়েনামছেতারা।গোয়েন্দাতথ্যঅনুযায়ী, সারাদেশেইগ্যাংকালচারেরঅস্তিত্বরয়েছে।তবেসবচেয়েবেশিরাজধানীতে।ঢাকায়খুঁজেপাওয়া৬২টিকিশোরগ্যাংয়েরমধ্যেবর্তমানেসক্রিয়৪২টিগ্রুপ।প্রতিটিগ্রুপেরয়েছে১০থেকে১৫জনসদস্য।এদেরঅধিকাংশসদস্যেরইবয়স১৫থেকে১৭বছরেরমধ্যে।মূলতগ্যাংকালচারেরসদস্যরাকিশোরবলেগণ্যহওয়ায়বিধিতেপুলিশতাদেরবিরুদ্ধেকোনোব্যবস্থানিতেপারেনা।কারণ১৮বছরপর্যন্তবয়সেরকেউঅপরাধকরলেতাকেবিধিতেকোনোবিচারকার্যসম্পাদনকরারবিধাননেই।অপরাধকাঘটিয়েফেললেওতাদেরআটককরেশিশুকিশোরসংশোধনাগারেপাঠানোরনিয়ম।সুযোগইকাজেলাগাচ্ছেসমাজেরঅনেকে।তারাইঅর্থক্ষমতারলোভদেখিয়েবিভ্রান্তকিশোরদেরদিয়েনানাঅপরাধমূলককার্যক্রমকরিয়েনিচ্ছে।অথচঢাকারশিশুআদালতেরবিচারিককার্যক্রমেরনথিঅনুযায়ী, গত১৫বছরেরাজধানীতেকিশোরগ্যাংকালচারসিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বে৯০টিরওবেশিখুনেরঘটনাঘটেছে।

ঢাকামহানগরপুলিশেরউপকমিশনার (ডিসিমিডিয়া) ওয়ালিদহোসেনবলেন, সম্প্রতিবেশকয়েকটিকিশোরগ্যাংগ্রুপেরসদস্যকেআইনেরআওতায়এনেসংশোধনেরজন্যব্যবস্থাগ্রহণকরেছি।আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীরলাগাতারঅভিযানেএখনআরআগেরমতোকিশোরগ্যাংয়েরঅপতৎপরতাশোনাযায়না।তারপরওপাড়ামহল্লায়এদেরসহযোগীরাগোপনেকার্যক্রমচালাতেপারেএটাওঅস্বীকারকরাযাচ্ছেনা।তারাযেনসংগঠিতহতেনাপারেসেলক্ষ্যেসামাজিকসচেতনতাসৃষ্টিসহকিশোরগ্যাংয়েরমূলোৎপাটনেপুলিশসচেষ্টরয়েছে।

জানাগেছে, সিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেচলতিবছরের১৭জুলাইকুমিল্লারচানপুরেরাসেদুলইসলামশাওননামেএকতরুণকেকুপিয়েপিটিয়েহত্যাকরেস্থানীয়কয়েকবখাটে।১৫জুলাইরাজধানীরকামরাঙ্গীরচরপূর্বরসুলপুরনম্বরগলিতেসিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেরজেরেছুরিকাঘাতেখুনহয়সজিবনামেএকতরুণ।মেমুন্সীগঞ্জশ্রীনগরেরদেউলভোগগরুরহাটএলাকায়একইদ্বন্দ্বেরজেরেরবিউলনামেএকমাদ্রাসাছাত্রকেকুপিয়েখুনকরাহয়।২৩ফেব্রয়ারিহাতিরঝিলেকিশোরগ্যাংয়েরহাতেখুনহয়হাসনাতশিপননামেএকতরুণ।ঘটনায়ডিএমপিরঅতিরিক্তপুলিশকমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুলবাতেনজানান, হাতিরঝিলেবেগুনবাড়ীমধুবাগএলাকারআধিপত্যবিস্তারনিয়েএখানকারউঠতিবয়সীছেলেদেরমধ্যেদ্বন্দ্বলেগেথাকত।মহল্লাকেন্দ্রিকদ্বন্দ্বেরজেরেখুনহয়েছেশিপন।১৩জানুয়ারিসিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেমৌলভীবাজারেরশ্রীমঙ্গলেভুরভুরিয়াচাবাগানেরভেতরখুনহয়ভিক্টোরিয়াহাইস্কুলেরনবমশ্রেণিরছাত্রইব্রাহিমমিয়ারকি।জানুয়ারিনাটোরসদরউপজেলারহালসাএলাকায়একইদ্বন্দ্বেকুপিয়েখুনকরাহয়আরএসটিইউবিশ্ববিদ্যালয়েরবিবিএশিক্ষার্থীকামরুলকে।

গতবছর২০ডিসেম্বরসিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেরজেরেমুগদায়মান্ডারল্যাটকারগলিবালুরমাঠেছুরিকাঘাতেখুনহয়তরুণমাহিনহোসেন।১৮নভেম্বরমিরপুরেরশাহআলীস্কুলেরপেছনেকিশোরগ্যাংয়েরছুরিকাঘাতেআহতহয়শিক্ষার্থীআরাফাতহোসেনরিফাতমো. শাহেদ।গতসেপ্টেম্বরগাজীপুরেতুইবলেসম্বোধনকরায়কিশোরগ্যাংচক্রেরহাতেখুনহয়নূরুলইসলামনামেএককিশোর।২৮জুলাইযাত্রাবাড়ীরশেখদিএলাকায়সিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেছুরিকাঘাতেখুনহয়তরুণরিফাতহোসেন।জুলাইবান্ধবীরসঙ্গেছবিতোলারজেরেদুইগ্যাংগ্রুপেরদ্বন্দ্বেশুভআহমেদনামেনবমশ্রেণিরএকশিক্ষার্থীকেছুরিকাঘাতেখুনকরাহয়।১৫মেনোয়াখালীরবেগমগঞ্জচৌমুহনীপৌরসভায়খুনহনজুহায়েরহোসেননামেএককলেজছাত্র।১২মার্চসিলেটশহরেরকামারপট্টিগলিতেসিনিয়রজুনিয়রদ্বন্দ্বেরবলিহয়সাব্বিরআহমদনামেএকতরুণ।মার্চরাজধানীরচকবাজারের১৪নম্বরবকশিবাজারসড়কেইমনেরগ্যাংয়েরহাতেখুনহয়বক্সারগ্যাংপ্রধানসিজানওরফেবক্সার।এইসময়অর্থাৎগতএকবছরেবিভিন্নকিশোরগ্যাংয়েরআভ্যন্তরীণদ্বন্দ্বেআহতহওয়ারএইসংখ্যাঅর্ধশতাধিক।

চট্টগ্রামপ্রতিনিধিমো. মহিউদ্দিনজানান, বন্দরনগরীচট্টগ্রামেওছিনতাইচাঁদাবাজিরপাশাপাশিমারামারিখুনোখুনিতেওজড়িয়েপড়ছেকিশোরগ্যাংয়েরসদস্যবখাটেকিশোরতরুণরা।মাদকাসক্তএসবকিশোরকেব্যবহারকরছেনকতিপয়রাজনৈতিকনেতা।সামাজিকনানাঅপকর্মেজড়িতকিশোরযুবাদেরনিজেদেরহাতিয়ারহিসেবেব্যবহারকরছেনতারা।এলাকাভিত্তিকনেতাসন্ত্রাসীদেরছত্রছায়ায়এসববখাটেরউৎপাতেঅতিষ্ঠনগরবাসী।

চট্টগ্রামেপুলিশকমিশনারমো. মাহাবুবররহমানবলেন, কিশোরঅপরাধীদেরগ্রেপ্তারকরারপাশাপাশিতাদেরআচরণসংশোধনেওকাজকরছি।আটককরারপরদেখাগেছে, অনেকেরইসুন্দরশৈশবনেই।আমরাচেষ্টাকরছিতারাযেনঅপরাধজনককাজথেকেফিরেএসেএকটিসুন্দরস্বাভাবিকজীবনপায়।বিডিনিউজ, যুগান্তর

Read More

শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? আমরা কী জন্য জীবনের ২২-২৩টি বছর শিক্ষাঙ্গনে কাটাই? ডিগ্রি লাভের জন্য? বন্ধু তৈরির জন্য? আয়ের পথ আবিষ্কারের জন্য? ইংরেজিতে কথা বলার জন্য? নাকি আমরা শিক্ষিত হই মানুষ হিসেবে নিজের মননকে আবিষ্কারের জন্য? প্রশ্নটি আপনার মনে থাকে কিনা জানি না, তবে তা আমার মনে সর্বদাই থাকে। হয়তোবা আমি শিক্ষক বলেই। প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করি, কী করছি?

শিক্ষার ইতিহাস কী বলে? কেন আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছি? একসময় জ্ঞানার্জনকে চার ভাগে ভাগ করা হতো। এক. ধর্মীয় জ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে আমরা সমাজে মনুষত্ব্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। জেনেছি সৃষ্টিকর্তাকে। বুঝতে চেষ্টা করেছি তার সৃষ্টিকে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছি ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি। দুই. চিকিৎসাজ্ঞান, যা দিয়ে আমরা শিখেছি কী করে মানুষকে রক্ষা করা যায় রোগ-জ্বরা থেকে। তিন. প্রকৌশল জ্ঞান, যা দিয়ে আমরা যন্ত্রের আবিষ্কার করেছি আর মানব জাতিকে কায়িক পরিশ্রম থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পেরেছি। চার. আইন জ্ঞান, যা দিয়ে ‘সামাজিক মানুষ’-কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, শিক্ষা মানবজাতিকে প্রাণী জাতি থেকে আলাদা করে থাকে। আমরা শিক্ষিত হয়েছি মানুষ হওয়ার জন্য। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, ভারত, চীন, মিসর, মায়া, বিভিন্ন জাতি শিক্ষাকে গ্রহণ করেছিল মানুষকে শক্তিশালী করতে। আর তা রাজারা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই শিক্ষক ও শিক্ষাগুরুদের বসিয়েছিলেন রাজসভায়। তাদের মন্ত্রণা রাজারা গ্রহণ করতেন সশ্রদ্ধচিত্তে। সে সময় শিক্ষা ছিল একটি রাজকীয় ব্যাপার। সবাই করতে পারত না। যাদের কিছু করার নেই, তারাই তা গ্রহণ করতেন। তবে কালে দেখা গেল, শিক্ষিত হওয়া শুধু রাজদরবারে হাজির হওয়ার জন্য নয়; কল্পনা করা ও কল্পনাকে লিখে রাখা, আবিষ্কার করা, সমাজের ভালো-মন্দ বিবেচনা করা বা মানুষের এ-জাতীয় প্রবণতা থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক, লেখক অনেকেই। তারা লিখতেন আপন মনে, নিজের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানোর মতো, তবে তা করে অন্যের মনে আনন্দের বা গর্বের জন্ম দেন তারা। সমাজকে ভালো করেন। মানুষকে পশুত্ব থেকে মুক্ত করেন। তাই দেখবেন ভালো মানুষ হতে হলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়াশোনা চর্চা করা জরুরি।

তবে শিক্ষা সে অবস্থায় থাকেনি। একসময় দেখা গেল বিদেশী প্রভুদের ভৃত্যের প্রয়োজন। প্রচুর ভৃত্য। তোতা পাখির কাছাকাছি ভৃত্য। তারা বুঝবে সবকিছু, মনিবকে জানাবে সবকিছু, কিন্তু ভালো-মন্দ চিন্তা করতে পারবে না। আমাদের উপমহাদেশে সেই শিক্ষার আরেক নাম বিএ পাস করার শিক্ষা! এ শিক্ষায় শিক্ষিতদের প্রধান কাজ ছিল শিক্ষা শেষে ঔপনিবেশিক প্রভুদের তৈলমর্দন করা আর দেশের লোকজনকে তাচ্ছিল্য করা। সাধারণ মানুষকে অমানুষ মনে করা। শিক্ষাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেন আমরা শিক্ষা থেকে জ্ঞানকে আলাদা করে দিই। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রভুদের উচ্চতর আসন বসিয়ে তাদের পদলেহন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অনেকেই তা গ্রহণ করতে পারেননি। তাই ইতিহাসের বহু জ্ঞানী জন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রভুভক্ত কুকুর হতে পারেননি। নেতাজি সুভাষ বোস তাদের একজন। মোজাফফর আহমেদ তাদের একজন, সূর্য সেন তাদের একজন। আরো আছেন নাম না জানা হাজার হাজার বাঙালি, যারা শিক্ষিত হয়ে জনগণের চোখ-কান খোলার জন্য চলে এসেছিলেন গ্রামে। নেমেছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। তাদের ধারণা ছিল, চোখ-কান না খুললে এ সমাজ এগোবে না। তাদের ধারণা ভুল ছিল না। ঔপনিবেশিক প্রভুরা দেশ ছাড়লেন বা ছাড়তে বাধ্য হলেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বদলালো না। ঔপনিবেশিক শিক্ষাই রয়ে গেল। ভৃত্য এবার প্রভু হিসেবে আভির্ভূত হলেন। তাদের আচরণে জ্ঞানের লেশমাত্র নেই। তবুও তারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তারা মানুষকে দেখেন শিকার হিসেবে। আসুক আমার কাছে, তাকে সাপের পাঁচ পা দেখিয়েই ছাড়ব। এসব নব্য প্রভুর শক্তি আর সামর্থ্যকে অস্বীকার করার ক্ষমতা মানুষ হারিয়ে ফেলে নিজেও সেই লেজ কাটা শিয়ালের আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সবারই এক লক্ষ্য—আমিও হব। কত টাকা লাগবে? আমাকে প্রভু হতেই হবে। একসময় প্রভুত্ব শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা যেত, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হলো টাকা। আমি যাদের কথা বলছি, তারা আমাদের ছাত্র, সন্তান কিংবা মামা-চাচা। তবে এদের মধ্যেও সবাই অমানুষ হয়নি। এখনো মানুষ রয়েছে। এখানেই মাহাত্ম্য। শিক্ষা কারো কাছে হয় সুশিক্ষা আর কারো কাছে কুশিক্ষা। যশোরের শিশু (বালক) উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর হত্যার ঘটনা আমাকে তা-ই মনে করিয়ে দেয়।

আমরা যারা শিক্ষকতা করি, আমাদের উদ্দেশ্য এখন মানুষ তৈরি করা নয়। মনুষ্যত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা নয়। আমি নিশ্চিত নই, আমরা কি জ্ঞানদান করি, নাকি শিক্ষাদান করি? আমাদের উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা। ব্যক্তির প্রতিষ্ঠায়ই আমার গর্ব হয়। আমার ছাত্র কোটিপতি, তাতেই আমি গর্বিত। কী করে কোটিপতি হলো, তা নিয়ে আমিও এখন প্রশ্ন করি না। করার ক্ষমতাও হারিয়েছি। কেন এমন হলো? কী করে আমরা রাজদরবার থেকে রাস্তায় নেমে এলাম? আমিও কি জৌলুস হারিয়েছি? আমাকে দেখে কি সবাই মনে করে আমার কাজটি সবচেয়ে সহজ? কে শিক্ষক? যার অন্য পেশায় যাওয়ার যোগ্যতা নেই, তিনি? নাকি যে জীবনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অপারগ, তিনি? নাকি যার একমাত্র পুঁজি ২২-২৩ বছরের মুখস্থ বিদ্যা?

এতগুলো প্রশ্ন রাখলাম এই কারণে যে শিক্ষা তথা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনা জরুরি। নচেৎ পতন অনিবার্য। দেশের সর্বোত্তম বিদ্যাপীঠের অবস্থা কী, তা আমরা এতদিনে জানি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে মানুষ গড়ার কারিগর না হয়ে মানুষ বিক্রির কারখানায় রূপান্তর হয়েছে। কিছুদিন আগে এক সম্মেলনে বলেছিলাম, যদি লক্ষ টাকার সরকারি ভর্তুকি নিয়ে পাস করা ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত ভিন দেশে গিয়েই চাকরি করে, তবে আমাদের জনগণের করের টাকা কিন্তু সেই দেশেই চলে যায়। আমরা কেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়কেই ভালো বলি, যখন দেখি সেখান থেকে পাস করে ছাত্ররা বিদেশে চলে যেতে পারে? সেটাই যদি আমাদের গর্বের বিষয় হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জনশক্তি রফতানির কারখানা বলা ভালো। দেশের কাজে যাদের শিক্ষা ব্যবস্থা লাগে না, সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন সরকার ভর্তুকি দেবে? আমি তো মনে করি না। আপনি কী বলেন?

প্রতি বছর দেশে লক্ষ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি হয়। কেন? কারণ নতুন প্রযুক্তি উৎপাদন আমাদের দেশে হয় না। হয় বিদেশে আর সেই আমদানি দিয়ে আমাদের শিল্প-কারখানা কি-ইবা লাভ করতে পারে? গত ৩০ বছরে আমাদের সিংহভাগ যন্ত্রপাতি এসেছে গার্মেন্ট শিল্পে, কিন্তু এ শিল্পের যন্ত্রপাতির কোনো পরিবর্তন আমরা করতে পারিনি। কারণ? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তা নেই। গত ৩০ বছরে গার্মেন্ট শিল্পে আমাদের যে পরিমাণ লাভ হয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, সেই তুলনায় আমরা কি শিক্ষা পাঠক্রমে কিছু চালু করেছি? না। কারণ? আমাদের পাঠক্রম আমার দেশের প্রয়োজনে তৈরি হয় না। পাঠক্রম তৈরি হয় পাস করা যুবকদের বিদেশে রফতানি করার উদ্দেশ্যে। অধুনা আমাদের লক্ষ্য হয়েছে বিদেশী শিক্ষামান সার্টিফিকেট কেনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও নাকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছে ডলার খরচ করে বিদেশী মান সার্টিফিকেট কেনো। বলছে না, দেশের উপকারের স্বার্থে মান উন্নত করো। কভিড-১৯ টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে রাশিয়া সফলতা লাভ করেছে। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি খুব নড়বড়ে? তারা কি বিদেশী শিক্ষামান গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে দৌড়াচ্ছে?

আমাদের উদ্দেশ্য আমাদের ছাত্ররা যেন পাস করে বিদেশে গিয়ে বলতে পারে—এই বই তো আমি আমার দেশেই পড়ে এসেছি। তাই এখানে ভালো করতে পারছি। এ দেশের (বিদেশের) উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারছি। ধন্য আমাদের শিক্ষায়তন!  আমার ৯০ শতাংশ ছাত্র যারা দেশে পড়ে রইল, তাদের জন্য কিছু না করে যারা দেশের বাইরে চলে যাবে, তাদের জন্য করা কি দেশের জন্য মঙ্গলের হল? আমাদের দেশে পড়ে থাকা পাস করা ছাত্ররা যখন দেখে যে তার দ্বারা কিছুই করা সম্ভব নয়, তখন সে আর কী করবে—উঠে পড়ে নৌকায়, ঝাঁপিয়ে পড়ে সমুদ্রে—ভাগ্যে যা হয়। কখনো ধরা পড়ে মাঝসমুদ্রে। ধরা পড়লে বেঁচে যায় আর না পড়লে হয় সলিল সমাধি। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের নামে বিদেশী পাঠক্রম নকল করে কি দেশের কোনো লাভ হবে? সব শেষে আবারো বলি, বিদেশে পাঠানোই যদি আমাদের শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম পাল্টে বলুন এগুলো ‘জনশক্তি রফতানির কারখানা’।

ড. এ. কে. এনামুল হক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয়

লায়লা নাজনীন

জুলাই ১২, ২০২০

একটা সময় ছিল যখন চাকরির পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ -এ একাডেমিক পড়াশোনা এবং রেজাল্টের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। সময়ের সাথে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, সেই সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে চাকরির বাজারেও। এখন ভালো ফলাফলের পাশাপাশি ‘সফ্ট স্কিল’ এরও গুরুত্ব বেড়েছে। এখন অনেক চাকরিদাতাই একাডেমিক রেজাল্টের এক্সট্রা কারিকুলামের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে অনেকেই ভলান্টিয়ারি কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকজনও প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই সময় এসেছে, ‘জব মার্কেট’ অনুযায়ী নিজেদের বদলানোর। নলেজ শেয়ারিং এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর পাশাপাশি মাল্টি টাস্কিংয়ের ও অভ্যাস গড়ে তোলা।

জেনে নেয়া যাক কিছু সফ্ট স্কিল সম্পর্কে, যা ‘জব মার্কেটে’ আপনার প্রোফাইলে ‘ভ্যালু’ যোগ করবে এবং কর্মক্ষেত্রে আপনার গুরুত্ব বাড়াবে-

পজিটিভ এটিটিউট
আপনি যদি কোনো ইন্টারভিউ-য়ে প্রশ্নের উত্তর সঠিক নাও দিতে পারেন, আপনার পজিটিভ এটিটিউট এর কারণে ইন্টারভিউয়ার-এর ভালো নজরে আসতে পারেন এবং চাকরির সুযোগও পেয়ে যেতে পারেন। কারণ বর্তমান সুপারভাইজাররা বিশ্বাস করেন, আপনাকে কাজ শিখিয়ে নেয়া যাবে, যদি আপনার মধ্যে পজিটিভ এটিটিউট থাকে। শুধু ইন্টারভিউ নয়, পজিটিভ এটিটিউট এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে অফিস কলিগ এবং বস এর আস্থাভাজন হতে পারেন। যা পরবর্তীতে প্রমোশন এর ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। যেমন : আপনার বস আপনাকে কোনো কাজের কথা বললে হুট করে না বলে ফেলা যাবে না। ‘আমি চেষ্টা করবো’ মানসিকতাটা থাকতে হবে।

কমিউনিকেশন স্কিলস
সফ্ট স্কিলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিলস। কমিউনিকেশন এর দক্ষতা অনেকের মধ্যে করবে আপনাকে আলাদা। আপনার কাজের মাত্রাকে করবে গতিশীল এবং সহজতর। কোনো কাজ দিলে সেটা ‘টপ টু বটম’ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, পিপল ইন্টারেক্শনের সময়ে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলা, রুচিশীল উপস্থাপন ভঙ্গি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা আপনার কমিউনিকেশন স্কিলকে সমৃদ্ধ করে। কমিউনিকেশন স্কিল শুধু কথা বলা বা শোনার মধ্যেই সীমিত না; আপনি কাউকে চিঠি বা ইমেইল পাঠাবেন- সে বিষয়েও আপনার সম্যকজ্ঞান থাকতে হবে। ইংরেজিতে পরদর্শী হওয়ার পাশাপাশি মাতৃভাষাতেও শুদ্ধ-সুন্দরভাবে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। 

কমার্শিয়াল অ্যাওয়ারনেস
আপনি অর্থনীতি, রাজনীতি এবং টেকনোলজি যে সেক্টর ই কাজ করেন না কেন তা আপনার প্রতিষ্ঠানের উপর একটা  প্রভাব ফেলে। ‘কমার্শিয়াল অ্যাওয়ার’ এর ক্ষেত্রে নিজেকে আপটডেট রাখাটা জরুরি। আপনার প্রতিষ্ঠান যে খাতে, সেই খাতে কী চলছে বা মার্কেট এ আপনার কোম্পানির অবস্থান কোথায়- তা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা জরুরি। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন মার্কেট এ আপনার কোম্পানির প্রতিযোগী কারা, কীভাবে কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট এর চাহিদা পূরণের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনাকে আরও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে, নতুন ধারণা তৈরি করতে, আরও কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে, তাছাড়া দূরদর্শী নেতা হতে সহায়তা করবে। বিভিন্ন  সংবাদপত্র, ব্লগস, পডকাস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে আপনি প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কমার্শিয়াল অ্যাওয়ারনেসের মাধ্যমে আপনি শুধু বাইরেরই নয়, কোম্পানির আভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আর ম্যানেজমেন্ট যখন দেখবে আপনি বিজনেস বুঝে কাজ করছেন তখন আপনার ভ্যালু কোম্পানিতে আরো বাড়বে।

টিম ওয়ার্ক
চাকরির ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেন না কেন, আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনাকে কাস্টমার, ক্লায়েন্ট, কলিগ, সাবর্ডিনেটস, সুপারভাইজার, বস সবার সাথেই টিম ওয়ার্ক করতে হবে। আর এই টিম ওয়ার্ক এর উপরেই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশ ও সফলতা। একটা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক কাজ করেন। একই বাসাতে ভাই-বোনদের মধ্যেই বিবাদ লেগে যায়, কলিগদের সঙ্গেও এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এ বিষয়টা আপনাকে ‘হ্যান্ডল’ করা শিখতে হবে। সহকর্মীর সঙ্গে কীভাবে ‘অ্যাডজাস্ট’ করে কাজ করবেন তাও আপনাকে আয়ত্ব করতে হবে। 

সেলফকনফিডেন্স
সেলফ কনফিডেন্স শুধু কর্মক্ষেত্রেই না, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তবে অহংকারী বা ‘ওভার কনফিডেন্ট’ হওয়া যাবে না। আপনার সহকর্মীদের এবং আপনি যে সংস্থার জন্য কাজ করছেন তার প্রতিও আস্থা রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে কাজ নিয়ে দ্বিধায় ভুগলে হবে না, কাজে-কর্মে কনফিডেন্ট থাকতে হবে। লো কনফিডেন্ট কর্মীকে কোন ম্যানেজমেন্টই পছন্দ করেন না। সবাই আত্মবিশাসে ভরপুর উদ্যমী মানুষ পছন্দ করেন। তাই সেলফ কনফিডেন্স গড়ে তুলতে হবে, নিজের কাজে ফোকাস করতে হবে। কোনো মানুষ ই পারফেক্ট না, কাজ করতে গেলে সবারই কম-বেশি ভুল হয়, চেষ্টা করতে হবে ভুলের মাত্রা কমানো। আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার ঘাটতিগুলো কী কী, তা খুঁজে বের করতে হবে। স্কিল ডেভেলপ করতে হবে, নিজের প্রতি নিজেকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজের ছোট ছোট কাজে সন্তুষ্ট হতে হবে। ভবিষতে আরো ভালো করার প্রবণতা নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন লার্নিং এর আগ্রহ তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে। (চলবে)

লেখক: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, স্টার সিনেপ্লেক্স 

কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষায় চাই সম্মিলিত এবং সুসংহত কর্মকৌশল

জুলাই ২০, ২০২০

.রিজওয়ানুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ শেষে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। উন্নয়ন অর্থনীতি তার গবেষণার প্রধান বিষয়। তিনি কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক সংকটের মতো বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তার রচিত (একক ও যুগ্মভাবে এবং সংকলিত) বইয়ের সংখ্যা ১৪। বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর গবেষণামূলক সাময়িকী ও বিভিন্ন গ্রন্থে তার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণামূলক রচনা প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে কভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শ্রমবাজারের পরিবর্তিত অবস্থা, অর্থনীতিতে প্রভাব, উত্তরণের কর্মকৌশলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

 কভিডের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখছেনভবিষ্যতে আরো কী ধরনের পরিবর্তন যোগ হতে পারে?

কভিডের কারণে সারা পৃথিবীতেই বড় ধরনের সংকট চলছে। কভিডের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, তারই অভিঘাত পড়ছে অর্থনীতির ওপরে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলে কর্মসংস্থানের ওপর তার প্রভাব পড়বে, যা সাধারণ বিষয়। বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকটের মধ্যে আছে। সংকটে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এ অবস্থায় কর্মসংস্থানের বিষয়কে দুই ভাগে ভাগ করে দেখা যেতে পারে। একটা হচ্ছে যে তাত্ক্ষণিক কী অবস্থা হয়েছিল? হয়েছিল বলছি এ কারণে, আমাদের দেশে কভিডের সংকট মোকাবেলা করার জন্য চলতি বছর মার্চের শেষ সপ্তাহেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তারপর এপ্রিল থেকে শুরু করে মে মাসের কিছুটা সময় পর্যন্ত জনজীবন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি এটাকে বলি তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু তারপর যখন অর্থনীতি, জনজীবন পুনরায় চালুর চেষ্টা করা হলো, তখন থেকে ভিন্ন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তখন থেকে আমরা এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা কতদিন চলতে থাকবে, তা বলা মুশকিল। আমি গোটা বিষয়কে এই দুই পর্যায়ে ভাগ করেছি।

 বিভিন্ন গবেষণা বলছে যে তিন মাসের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আমাদের দেশে শ্রমবাজার সম্পর্কে তথ্য খুব কম এবং হালনাগাদ তথ্য বলতে গেলে নেই-ই। শ্রমবাজারের ওপর শেষ জরিপ করা হয় ২০১৬-১৭ সালে। সুতরাং এখন যে ধরনের হিসাব করা হচ্ছে বা বেকারত্বের যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, কে কী বলছেন, সেদিকে বিস্তারিত না গিয়ে আমি এটুকু বলতে পারি যে সবই অনুমান করা হিসাব, বাস্তব জরিপভিত্তিক নয়। সরকারি সংস্থা কোনো সংখ্যা নিয়ে আসছে না, বলছে না যে এটা হয়েছে। অন্যদের মতো আমিও কিছু হিসাব করেছি। আমার হিসাব, এরই মধ্যে যেমনটি উল্লেখ করেছি, দুই পর্যায়ের জন্য আলাদা। আলাদা আলাদাভাবে। এপ্রিল-মে মাসের অবস্থা এখন আর নেই। এখন কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে, শ্রমবাজার কাজ করছে। কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমি এপ্রিলের জন্য হিসাব করেছিলাম যে এক কোটিরও বেশি লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হওয়ার ফলে আগের সে অবস্থাটা নেই। আমরা যদি সবসময় বলতে থাকি যে এক কোটি লোক বেকার হয়েছে, তা বোধহয় ঠিক হবে না। আমি দ্বিতীয় একটা হিসাবও করেছি। ২০১৯-২০ সালের সার্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমি হিসাব করে বের করেছি যে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি  দুই পর্যায়ে দেখতে হবে। প্রথম পর্যায়ে এক কোটির মতো মানুষ কর্মহীন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ বর্তমানে যখন কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে তখন কর্মহীনের সংখ্যাটা অন্য রকম।

 সাধারণ ছুটি তুলে নিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও তার পরও তো অর্থনীতি থমকে থাকছে। আমরা যদি কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি তাহলে এখন যেমন চলছেকর্মসংস্থানের ওপর তার ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে?

সরকারের সদিচ্ছার তো কোনো অভাব নেই। যে কথাটা আপনি বললেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে যেন জীবিকা একেবারে থমকে না যায়। কিন্তু আমরা যতই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আবার চালু করে দিতে চেষ্টা করি, বাস্তবে তা হচ্ছে না। আমরা চাইলেই মানুষ দোকান, রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে না, ভ্রমণে উৎসাহী হচ্ছে না। এই যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে কিন্তু মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও আছে। মানুষের মধ্যে একটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। এটা একটা দিক। অন্য দিক হচ্ছে মানুষের আয়, কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হলে মানুষ কিন্তু অর্থ ব্যয়ে অনাগ্রহী হয়। মানুষ যদি ব্যয় না করে তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। সুতরাং আমি যতই চেষ্টা করি যে দুটোই পাশাপাশি চালিয়ে যাব, তা কিছুটা ব্যাহত হতে বাধ্য। যতদিন এ ধরনের অবস্থা চলতে থাকবে ততদিনই এর প্রতিক্রিয়া ও অভিঘাত শ্রমবাজারে পড়তে থাকবে।

 কভিড পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে শ্রমবাজারের অবস্থা আরো খারাপ হবে?

হতে পারে। ভাইরাসের আক্রমণ এবং এর প্রভাবে স্বাস্থ্যগত যে অবস্থা, তা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। এছাড়া আমাদের গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিও দেখতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং আগামী কয়েক মাস বা বছরখানেকের কথা চিন্তা করতে আমাদের তাকাতে হবে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কী ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছে তার দিকে। আইএমএফ দুটো পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। গত জুনে দেয়া আইএমএফের সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, বিশ্বের উৎপাদনের নেতিবাচক হার হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে এপ্রিলে বলা হয়েছিল ৩ শতাংশ। বিভিন্ন পূর্বাভাস অনুসারে, পুরো বছর ধরেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্থাৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার ধারা চলতে থাকবে। ২০২১ সালের আগে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির ধারা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের অর্থনীতি তো বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমাদের বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আছে। তবে আমরা আবার বৈদেশিক চাহিদার ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুতরাং আমার মনে হয় না, আগামী ছয় মাসে বড় রকমের কোনো উন্নতি আমরা আমাদের অর্থনীতিতে দেখতে পাব।

 অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগে থেকেই আশানুরূপভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছিল না। নতুন করে করোনা পরিস্থিতি যোগ হওয়ায় বিষয়টি কতটা নেতিবাচক অবস্থার দিকে যাবে বলে মনে করেন?

আমাদের দেশে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি হলেও সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে তো না-ই, বরং কমে যাচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, আমাদের দেশে এক ধরনের কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। একেবারেই কর্মসংস্থান হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। আক্ষরিক অর্থে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির অর্থ কিন্তু একেবারেই কর্মসংস্থান হচ্ছে না, তা নয়। তবে তুলনামূলক হারটা কম এবং আরো কমে যাচ্ছে, যা ঘটছিল কভিড-পূর্ববর্তী অবস্থাতেই। অর্থাৎ সাধারণ অবস্থাতেই। এখন যেখানে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমছে, শ্রমবাজারের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে, সেখানে কর্মসংস্থানের অবস্থা, বেকারত্বের হার কিংবা কর্মহীনতার হার অনেকটা খারাপ হবে। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে বেকারত্বের হারে অবস্থার যথাযথ প্রতিফলন ঘটে না। কারণ বেকারত্বের একটা সংজ্ঞা আছে। যেখানে কোনো সামাজিক সুরক্ষা নেই, যেখানে তিন থেকে সাতদিনের বেশি কোনো মানুষ আয় না করে থাকতে পারে না, তাকে কিছু না কিছু করতেই হয়, সেখানে আমাদের শ্রমবাজারের সার্বিক অবস্থার দিকে তাকাতে হবে।

 কভিডের কারণে কৃষি শিল্প  সেবা খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

সৌভাগ্যবশত কৃষি খাতে প্রভাব এতটা নেতিবাচক নয়। যদিও কৃষিপণ্য বাজারজাত করা ইত্যাদিতে সমস্যা হয়েছে, বিশেষ করে যখন সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে সার্বিকভাবে কৃষি এখনো ভালো করছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প ও সেবা খাত। শিল্প খাতের একটা অংশ বৈদেশিক চাহিদার ওপর নির্ভরশীল এবং সে চাহিদা যতদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসবে ততদিন খাতটির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর শিল্প খাতের যে অংশটি অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল, সেটির সম্ভাবনা একটু ভালো কিন্তু একেবারে স্বাভাবিক হচ্ছে না। কারণ সাধারণ জনগণ যদি বাজারে না যায়, তারা পণ্য ক্রয় করবে না; তাদের যদি চাকরির নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে যা অবশ্য প্রয়োজনীয় নয়, তা কেনাকাটায় উৎসাহী হবে না। যখন চাহিদা ব্যাহত হয় তখন উৎপাদন ব্যাহত হতে বাধ্য। সুতরাং শিল্প খাত একটা বড় ঝুঁকির মুখে। সেবা খাতেরও একই রকম অবস্থা। কারণ সেবা খাতের অনেকটাই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া হোটেল, রেস্তোরাঁ, ভ্রমণসংক্রান্ত চাহিদা কমে গেছে। এ খাতগুলোও বেশ উচ্চমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

 আমাদের দেশে তো আনুষ্ঠানিক খাতের চেয়ে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বেশি। আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছিল। কভিড পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীরাও ঝুঁকিমুক্ত নন। এখানেও যদি নিয়ম অনুসরণ করা না হয় তাহলে আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কতটা?

খুব কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন। যখন আমরা আনুষ্ঠানিক খাত শব্দটা ব্যবহার করি তখন কিন্তু এর কিছু বৈশিষ্ট্যের কথাও বলি। যেমন আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মীর কাজের নিরাপত্তা থাকবে, সামাজিক সুরক্ষা থাকবে, স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে তো তথাকথিত আনুষ্ঠানিক খাত।  ‘তথাকথিত’ শব্দটা ব্যবহার করছি কারণ উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের বেশির ভাগই এখানে অনুপস্থিত। শুধু নামেই আনুষ্ঠানিক, প্রকৃতভাবে নয়। যখন কোনো ধরনের সংকট বা অর্থনৈতিক সংকট এখানে আঘাত করে তখন তথাকথিত আনুষ্ঠানিক খাতের প্রকৃত চেহারাটা বেরিয়ে পড়ে, যেটা আমরা দেখছি এখন। সুতরাং এ ধরনের আনুষ্ঠানিক খাতে বেশি জোর দিয়ে লাভ নেই। আগে সত্যিকারের আনুষ্ঠানিক খাত হওয়া চাই।

 উন্নত দেশগুলো কভিড পরিস্থিতিতে বেকারদের জন্য ভাতা বা বিভিন্ন সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করছে। বাংলাদেশে এগুলো চালু হয়নিকবে হবে তাও নিশ্চিত নয়।  অবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় কী?

করণীয় তো অনেক কিছুই আছে। উন্নত দেশগুলোয় বেকারত্ব ভাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। তবে এগুলো কিন্তু মোটাদাগে সরলীকরণ করে দেখা উচিত হবে না। উন্নত দেশগুলোয় বিভিন্ন ধরনের মডেল আমরা দেখতে পাই। চলমান বৈশ্বিক সংকটের সময় আবার সেটি বেরিয়ে আসছে। একটা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধরনের মডেল, যেখানে এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ও বেকারত্ব ভাতা আছে এবং বেকারত্ব ভাতাকে আরো কিছুদিন প্রলম্বিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে ছাঁটাই খুব সহজ। গত ফেব্রুয়ারিতে  আমেরিকায় বেকারত্বের হার যেখানে ৪ শতাংশের নিচে  ছিল, এপ্রিলে তা ১৩ শতাংশ হয়। পরে কিছুটা কমলেও বর্তমানে দুই অংকের ঘরেই রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ রকম উচ্চহার আর দেখা যায়নি। এটা এক ধরনের মডেল, যেখানে আপনি সহজে বেকার হয়ে যান, কিন্তু বেকারত্ব ভাতা আছে; যা দিয়ে কোনো রকমে জীবন চালিয়ে নেয়া যায়। আরেকটা মডেল আছে, যা ইউরোপের অনেক দেশ অনুসরণ করে এবং তারা কিন্তু এটা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বেকারত্বটা বেড়ে না যায়। আমরা যদি ফ্রান্স, জার্মানির বেকারত্ব হারের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই ফেব্রুয়ারির তুলনায় মে মাসে একটু বেড়েছে কিন্তু খুব বেশি বাড়েনি। কেননা তারা প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে এমন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেখানে উদ্যোক্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের ছাঁটাই না করে কাজে রেখে দিতে পারছে। প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের যেন তাদের বেতনের একটা বড় অংশ দিতে পারে এমনভাবেই প্রণোদনাটা দেয়া হচ্ছে। এসব দেশেও বেকারত্ব ভাতা আছে। অনেক দেশ এক বছরের বেকারত্ব ভাতা বাড়িয়ে দেড় বছর করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রণোদনা এমনভাবে দেয়া হচ্ছে যে তাত্ক্ষণিক ছাঁটাই যেন না হয়। এ ধরনের বিভিন্ন মডেল রয়েছে আমাদের সামনে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশকিছু উদাহরণ রয়েছে। এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা আমাদের মতো করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। আমি বলছি না যে অমুক দেশ এটা করেছে সে অনুযায়ী করতে, সেটি সম্ভবও নয়। আমাদের একটু হলেও শিক্ষা হয়েছে। আমরা যদি এ শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই তাহলে বোধহয় অনেক কিছুই করতে পারি। এ প্রসঙ্গে আমি একটু ইতিহাসের দিকেও তাকাব। ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়া বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এক বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। কিন্তু তার আগে এসব দেশে যখন অতি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল, তখন তাদের বলা হতো এশিয়ান টাইগার্স। অথচ ১৯৯৭-৯৮-এর সংকটে দেশগুলোয় দারিদ্র্যের হার, বেকারত্বের হার অনেক বেশি বেড়ে গেল। তার পরে কিন্তু দেশগুলো শিক্ষা গ্রহণ করে কিছু হলেও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা চালু করেছে। সুতরাং আমাদেরও বোধহয় সময় এসেছে শিক্ষা গ্রহণ করে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার।

 ইউরোপে প্রণোদনা দিয়ে কর্মসংস্থান ধরে রাখার কথা আপনি বললেনবাংলাদেশে  গার্মেন্টসহ রফতানি খাতের জন্য প্রণোদনা দেয়া হলেও  কর্মচ্যুতি বা মজুরি কর্তনের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি কি কাজ করছে নাতাহলে তা কীভাবে বণ্টন করা উচিত ছিল?

প্রণোদনা কাজ করছে কি করছে না, এটা তো পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ব্যাপার। আশা করি, কেউ না কেউ এটা করবে। তবে আমি একটি ছোট উদাহরণ নিয়ে বিশ্লেষণে যেতে পারি। যেমন পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্প খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্যাকেজের এ অংশ খুবই সহজ শর্তে মাত্র ২ শতাংশ খরচে ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। প্রথম যখন প্রণোদনার কথা বলা হলো, তখন কি খুব পরিষ্কার ছিল যে এটা ঋণ হবে; এটা শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের জন্য হবে, বেতনের কত অংশ কতদিন ধরে এ টাকা থেকে তাদের দেয়া হবে—এ প্রশ্নগুলো প্রথম থেকে পরিষ্কার ছিল কিনা, এটা আমার জানা নেই। কিন্তু কালক্রমে আমরা জানলাম এটা ঋণ। এটা থেকে কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন প্রদানের কথা। কিন্তু পূর্ণ বেতন নাকি আংশিক, তা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, আমি জানি না সে আলোচনার নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা। একটা হিসাবে আমরা দেখেছি শুধু পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনও যদি দিতে হয় তাহলে তাদের এক মাসের বেতনও ওই প্রণোদনা থেকে দেয়া যাবে না। সেখানে তিন মাসের জন্য দিতে হলে এ টাকা যথেষ্ট  কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন। এর পরে আসে পদ্ধতি—প্রণোদনা কীভাবে দেয়া হবে। কিছুদিন পর জানা গেল এটা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি পাঠানো হবে। খুবই ভালো ব্যবস্থা।  এসব বিষয় আগে থেকে যদি ঠিক করা যেত তাহলে তা আরো মসৃণভাবে বাস্তবায়ন করা যেত। আমি আশা করছি, এটা হয়তো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু অর্থের অংক অপ্রতুল বলে স্বাভাবিকভাবে ছাঁটাই, চাকরিচ্যুতি ইত্যাদি ঘটছে। এখানে আমার আরো একটি প্রশ্ন আছে। আমাদের পোশাক শিল্পের বয়স এখন ৪০ বছরের কাছাকাছি, এত বছর পরেও এ শিল্পকে এতটা কেন সাহায্য করতে হচ্ছে? এ ধরনের আপৎকালীনের জন্য তারা কি তহবিল গঠন করতে পারত না! তারা তো ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট দেখেছে। সুতরাং এ ধরনের ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, যেখানে একটি শিল্প শুধু রফতানির ওপর নির্ভরশীল এবং বৈশ্বিক বাজার মসৃণভাবে চলে না, সেখানে আমাদের তো কিছু ব্যবস্থা আগে থেকেই রাখা উচিত  ছিল। সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়, এ শিল্পের অবস্থা একটু মিশ্র ধরনের।

 প্রণোদনাটা কীভাবে দিলে কর্মসংস্থানকে ধরে রাখতে পারি?

আমরা যদি কাজ বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রণোদনা দিতে চাই, তাহলে খুব পরিষ্কার করে বিষয়টি বলতে হবে যে এ লক্ষ্যে এতদিনের জন্য প্রণোদনা দেয়া হবে। টাকার অংক হিসাব করে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাস্তবায়ন পদ্ধতি থাকতে হবে। এর মানে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলতে হবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দিই। দরিদ্রদের এককালীন আড়াই হাজার টাকা অনুদানের ব্যবস্থা ছিল, যদিও অর্থের পরিমাণ খুবই সামান্য। আমরা একটা হিসাব করে বের করেছিলাম দরিদ্রদের পরিবারপিছু মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা প্রয়োজন। যাই হোক, ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবার যদি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে পায় তাহলে দুই কোটি লোক সুবিধা পাবে যদি পরিবারপ্রতি আমরা চারজন করে সদস্য ধরি। সম্প্রতি সংবাদে দেখলাম এটি বাস্তবায়নের চিত্র খুবই করুণ। বিস্তারিত কথায় আমি আর না-ইবা গেলাম। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও প্রস্তুতির অভাব আছে এবং বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, আমরা তা নিতে পারছি না। যাই হোক, চলমান পরিস্থিতি থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখছি এবং আশা করছি নিকট ভবিষ্যতে এ শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগিয়ে উন্নত কিছু ব্যবস্থা নিতে পারব।

 আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ চলছে। আবার কভিড পরিস্থিতির কারণে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কী ধরনের পদক্ষেপ রাখা উচিত?

প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল। ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে কর্মসংস্থানের কথা উল্লেখ আছে। আমাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। এমনকি লক্ষ্যমাত্রাও নির্দিষ্ট করা আছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, প্রতি বছর ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কিন্তু বাস্তবে তা অর্জিত হয়নি। বিস্তারিত কোনো কর্মকৌশল তাতে উল্লেখ ছিল বলে আমার জানা নেই। সংক্ষেপে রফতানিমুখী শিল্প ইত্যাদি প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের ২০১৬ সালের শিল্পনীতি আছে, যা অত্যন্ত ভালোভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগের কী ব্যবস্থা, তা আমার জানা নেই। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে কভিড পরিস্থিতি সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আগেই আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন সমস্যা ছিল। এখন সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরো প্রকট হবে। এর সঙ্গে আসে বাজেট প্রসঙ্গ। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কী করে। পরিকল্পনা যারা করেন, তাদের কাছে কিন্তু বাস্তবায়নের হাতিয়ারগুলো সেভাবে থাকে না। আমরা অনেকদিন থেকেই বলে আসছি, একটি মাত্র রফতানিমুখী শিল্পের ওপর নির্ভর করে একটা অর্থনীতি বেশিদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এখানে ভঙ্গুরতা থাকতে বাধ্য। বাস্তব অবস্থায় আমরা তা আজ দেখতে পারছি। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নীতিমালা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাজেটেও তা উল্লেখ ছিল। পাঁচ বছরে দেড় কোটি হলে প্রতি বছরে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা। আমি বলছি না, সরকারই শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ ধরনের অর্থনীতিতে সরকার বিশেষ কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে না কিন্তু সরকারের নীতিমালার সাহায্যে অর্থনীতি এমনভাবে চালিত হয়, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ২০২০-২১ সালের বাজেটে কর্মসংস্থানের অংশে গিয়ে আমি লক্ষ করলাম যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওই লক্ষ্যমাত্রার কথা আর উল্লেখ নেই এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বলা আছে যে এত প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে অর্থনীতি আবার চালু হবে, পুনরুজ্জীবিত হবে। অনুমান করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার চালু হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ অনুমান যে সবসময় বাস্তবে খাটবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

 বর্তমানে আমরা যে পর্যায়ে রয়েছি অবস্থায় কভিড নিয়ন্ত্রণ না করে কি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব?

আমি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নই, তবে বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক কিছু উঠে আসছে। আমি কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানি। আমাদের দেশে এখন যে ব্যবস্থাটা চলছে, মনে হয় একদিক থেকে চিন্তা করলে এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ যেখানে দরিদ্র কিংবা সাধারণের জন্য সংকটজনক পরিস্থিতিতে সুরক্ষা দেয়া বা সহায়তার কোনো ব্যবস্থা নেই, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখতে হবে, যাতে সাধারণ লোক কিছু করে খেয়ে বাঁচতে পারে। অনাহারে মারা যাওয়া বা কভিডের আক্রমণে মারা যাওয়ার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সে দ্বন্দ্বের সমাধান হিসেবে আমরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব বলে ঠিক করেছি। তবে এটা চালিয়ে যাওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা একটা বড় প্রশ্ন। আমার কাছে কোনো জবাব নেই। তবে সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও নরওয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পারি। সুইডেন চেষ্টা করেছে সবকিছু স্বাভাবিক রেখে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রেখে অবস্থা কী দাঁড়ায়, তা দেখার। সুইডেন কিন্তু বেশি সফল হয়নি। তাদের জনগণের মৃত্যুর হার, সংক্রমণের হার যেমন উচ্চমাত্রায়, অর্থনীতির অবস্থাও তেমন ভালো নয়। ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিসহ তাদের বেকারত্বের হারও বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখতে চাইলেই যে চালু থাকবে এবং অর্থনীতির অবস্থা স্বাভাবিক থাকবে তা মনে করার বিশেষ কোনো কারণ দেখছি না।

 যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়নে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে চিহ্নিত করতে তথ্যউপাত্তপরিসংখ্যান প্রয়োজন। আমরা কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে ন্যূনতম মজুরি বা প্রকৃত মজুরির আপটুডেট তথ্য পাই না। সঠিক তথ্য ছাড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন বা সুবিধাবঞ্চিতদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।  অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কী?

এককথায় এর জবাব হচ্ছে, আমাদের অনেক কিছুই অনুমানভিত্তিক করতে হবে। বিস্তারিতভাবে বললে, আমাদের কর্মসংস্থানসংক্রান্ত তথ্যের মূল উৎস হচ্ছে শ্রমবাজার জরিপ। ২০১৬-১৭ সালের পর আর এ জরিপ করা হয়নি। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশেও প্রতি তিন মাস পর জরিপ পরিচালনা করা হয়। বছরে চারবার তারা জরিপ কার্যক্রম চালায়। আর আমরা প্রতি বছরে একবারও তা করছি না। শিল্প খাত সম্পর্কে তথ্য কোথায়? ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প জরিপ হয়েছিল ২০১২ সালে। আট বছর আগে। ২০১৯ সালে একটি জরিপ হয়েছে। বিবিএসের ওয়েবসাইটে এক পাতার সংক্ষিপ্ত তথ্য দেখে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। আট বছরের পুরনো তথ্য দিয়ে আমরা যদি পরিকল্পনা বা নীতিমালা প্রণয়ন করতে চাই তাহলে তো কিছুটা অনুমানভিত্তিক করতে হবে। তবে একমাত্র মজুরিসংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য দেখছি। শুধু হালনাগাদ তথ্য হলে হবে না, ভালো এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য চাই। আমরা যদি ভালো এবং হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিই তাহলে এক্ষেত্রে জোর দিতে হবে এবং সম্পদ ব্যয় করতে হবে।

 কভিডের কারণে আমাদের জনশক্তি রফতানি খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

এটি আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিশেষ করে কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় উৎস এটি। সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী গত কয়েক বছরে গড়ে প্রায় সাত লাখ লোক বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছে। কভিড পরিস্থিতিতে এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লে এক ধরনের ভিন্ন অবস্থার সৃষ্টি হবে। রেমিট্যান্স আমাদের বড় শক্তি। যদি বিদেশে কর্মসংস্থানের সংখ্যা কমে যায় তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব রেমিট্যান্সের ওপর কোনো না কোনো সময় পড়তে বাধ্য।  যদিও সরকার চেষ্টা করছে প্রণোদনার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের ধারাটা বজায় রাখতে। কিন্তু ২০২০ সালে কতজন লোক বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে পারছে, এটি একটি বড় প্রশ্ন থেকে যাবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখে মনে হচ্ছে বিদেশ থেকে ফেরত আসার সংখ্যাই বাড়ছে এবং আরো কয়েক মাস তা চলবে। সুতরাং আমি মনে করি, ২০২০ সাল বিদেশে কর্মসংস্থান হারানোর বছর।

 কর্মসংস্থান ধরে রাখতে সরকার স্বল্পমধ্য  দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?

স্বল্পমেয়াদে কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। সার্বিকভাবে বললে, অর্থনীতি একটা সংকটের মধ্যে এবং আমরা সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাস্তব সম্ভাবনার দিকে তাকালে মনে হয়, ২০২০ সালের বাকি সময়টা সংকটের মধ্য দিয়েই কাটবে। সুতরাং আমাদের কিছু কর্মকাণ্ড হাতে নিতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করা, পুনরুজ্জীবিত করা চালিয়ে যেতে হবে, তবে সেখানে আমরা কতটা সফল হব বা সফল হলেই যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে থাকবে, এমনটা মনে না করে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। চাকরি বা কর্মসংস্থান ধরে রাখা—এটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যতটা সম্ভব চাকরিচ্যুতি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কী কী করা যায় সেগুলো আমাদের জানা আছে, নতুন করে কিছু আবিষ্কার করতে হবে না। প্রয়োজন শুধু সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা। দ্বিতীয়ত, জরুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। এখানেও আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, জানা আছে কী করা দরকার। আমরা যদি চাই তা করতে পারি। যেমন কর্মসংস্থান প্রকল্প। আমাদের দেশে প্রচলিত ভাষায় এটাকে বলা হয় পাবলিক ওয়ার্কস প্রোগ্রাম। যদিও এই গণপূর্ত কর্মসূচির নামে অনেক দুর্নাম জড়িত, সব খারাপ জিনিসের মধ্যে সবকিছুই খারাপ নয়। এর মধ্য থেকেও আমরা কিছু ভালো জিনিস বের করতে পারি, যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও এ জরুরি অবস্থা মোকাবেলা সম্ভব। গণপূর্ত কর্মসূচি মানেই কিন্তু শুধু রাস্তাঘাট মেরামত, যা কিনা পরের বছর বর্ষা মৌসুমে ধুয়ে চলে যাবে তা নয়। আমরা অন্যভাবেও চিন্তা করতে পারি, বিশেষ করে জরুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। সরকারের এ ধরনের প্রকল্প কিন্তু এখনো চালু আছে, কিন্তু খুব ছোট আকারে। এগুলোকে আবার বড় করা যায় কিনা, তা দেখতে হবে—এগুলো হচ্ছে স্বল্পমেয়াদের বিষয়। আর মধ্য ও দীর্ঘ—এ দুটোকে আমি একসঙ্গে করব। কারণ যেটাকে আমরা মধ্যমেয়াদের বলব, সেটাই আস্তে আস্তে দীর্ঘমেয়াদে চলবে।

এখানে আমি তিনটি বিষয় বলব। এক. কর্মসংস্থানের জন্য একটি সার্বিক পরিকল্পনা এবং কর্মকৌশল প্রয়োজন। আমরা একটি বাক্যে বলে দিলাম যে এভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে—বিষয়টি কিন্তু এত সরল নয়। দুই. কর্মসংস্থানের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষাকে একীভূত করে একটি সুসংহত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা উচিত, যেখানে বেকারত্ব ভাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে। তিন. সেই কর্মকৌশলে থাকতে হবে পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবায়নের ঘনিষ্ঠ মেলবন্ধনের ব্যবস্থা। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে। আর বাজেট বরাদ্দের সময় দেখতে হবে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা ও কর্মকৌশলকে বাস্তবে রূপ দেয়া যায়। কর্মকৌশল তৈরি করে শেলফে রেখে দিলে বিশেষ কিছু কাজ হবে না; তাকে বাস্তবমুখী করে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

নতুন করে দেড় কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআইডিএসের গবেষণা

জুন ২৫, ২০২০bonik barta

চলতি বছরের শুরুতে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা এসে পড়লে কাজ হারাতে থাকে অনেক মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগারের পথ, বাড়তে থাকে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। বছরের তৃতীয় ও শেষ প্রান্তিকে মানুষের আয় কাঙ্ক্ষিত হারে ফিরে এলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তার পরও বছর শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

‘পভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট টার্ম ইফেকটস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রটেকশন’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গতকাল বিআইডিএসের আয়োজনে ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন-২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড-কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ শীর্ষক ডিজিটাল সেমিনারে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এছাড়া সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০২০ সালের শুরুতে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ১৫ দশমিক ৮ ও গ্রামে ২২ শতাংশ। তবে চলতি বছর শেষে গ্রামে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ এবং শহরে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ হতে পারে।  এক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরে দারিদ্র্যের হার বাড়বে। বছরের শেষে দেশে চরম দারিদ্র্য থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ।

দারিদ্র্যের হারের এ পরিবর্তন হিসাব করতে শ্রমিকের আয় কতটুকু আগের অবস্থায় ফিরে আসছে তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পরিবর্তিত অবস্থাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যদি শ্রমিকের আয় ৫০ শতাংশ এবং শেষ প্রান্তিকে যদি ৫০ শতাংশ আয় উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাহলে  দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। শ্রমিকের আয় এ হারে উদ্ধার না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। কেননা এরই মধ্যে শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, কভিড-১৯-এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি টেকসই নয়। লকডাউনে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি কভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিল তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এ ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে। এ সহায়তা যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারে না। সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্যসহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ এবং বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ।

তিনি আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে আগামী এক দশক গড়ে ৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যেটি স্বাভাবিক সময়ে হয়তো ৬ বা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেই অর্জন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন যেমন কঠিন, তেমনি সামনের আরো শক মোকাবেলা করতে হতে পারে। ফলে এসডিজির দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হতে পারে।  প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্কার ও শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পুনর্গঠন করতে হবে।

অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী বলেন, দারিদ্র্য কতটুকু কমবে বা নিয়ন্ত্রণ হবে সেটি পুরোটাই নির্ভর করছে কত দ্রুত গরিব মানুষের কাছে আয় ট্রান্সফার করতে পারছি তার ওপর। সরকারের ট্রান্সফারটা দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে দরিদ্র মানুষের অবস্থায় পরিবর্তন আনা দুরূহ হবে।

গতকালের সেমিনারে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এসব গবেষণায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটি তথ্য হচ্ছে সাধারণ ছুটি বর্ধিত হোক এটা চেয়েছিল ৭৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও পারছে না ৩২ শতাংশ মানুষ। দেশে বেকারের হার ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে লকডাউনে এমএসএমই খাতে ক্ষতি প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর বন্ধের উপক্রম প্রায় ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, চাইলেই বাংলাদেশে দীর্ঘ লকডাউন করা সম্ভব নয়। এজন্য সীমিত পরিসরে অনেক কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। কেননা কিছু মৃত্যু অবধারিত। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ করোনায় ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছি। আশা করছি, দেশে মৃত্যু আরো কমবে। তবে করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন হোক বা যা কিছু আবিষ্কার হবে, সেখানে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। করোনা মোকাবেলায় প্রথম দিকে কিছুটা প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও এখন সেটি আর নেই। সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল মিলবে আশা করা যায়। যেসব কথা হয়েছে সেগুলোতে আমি যখন ঘোড়ার পিঠে আছি, তখন ঝাঁকুনি তো একটু লাগবেই। ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত গবেষণা হলে সরকার সহায়তা দেবে।

বাড়ছে  বেকার : ‘কোপিং উইথ কভিড-১৯ অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল রেসপন্স: ফাইন্ডিংস ফ্রম এ লার্জ অনলাইন সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ। এছাড়া গবেষক হিসেবে ছিলেন তানভীর মাহমুদ, নাহিয়ান আজাদ শশী, আব্দুর রাজ্জাক সরকার। করোনার আগে মোট বেকার ছিল ১৭ শতাংশ। করোনার কারণে নতুন করে ১৩ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে। ফলে বেকার মানুষের সংখ্যা এখন ৩০ শতাংশ। সেসব পরিবারের সদস্যদের চাকরি আছে এবং একজন সদস্যের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার নিচে সেই পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে একজন সদস্যের আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া একজন সদস্যের আয় ৩০ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

গবেষণায় কভিড পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ সামাজিক নিয়মকানুন পরিপালনের বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। কোনো কোনো শ্রেণীর আয়কারী মানুষ বাইরে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব পালনে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও ৩২ শতাংশ মানুষ তা পারছে না। এ হার উপজেলায় ৩০, বিভাগীয় শহরে ২৯ ও মেট্রোপলিটন শহরে ২৮ শতাংশ। আর সদস্যরা ঘরে থাকার কারণে অশান্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ পরিবারে। এর মধ্যে ৫-৬ শতাংশ শারীরিক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে বসবাস করছে । চট্টগ্রামে প্রায় ২০ শতাংশ,

ঢাকায় ১৩ ও খুলনায় ৮ শতাংশ মানুষের করোনা উপসর্গ রয়েছে। করোনার কারণে ১০ শতাংশ খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আয় উপার্জনকারী সব ধরনের পরিবারে খাদ্য ব্যয় বেড়েছে। তবে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ চেয়েছিল সাধারণ ছুটি আরো চলমান থাকুক।

এমএসএমই শিল্পের ক্ষতি ৯২ হাজার কোটি টাকা: সেমিনারে অ্যাড্রেসিং এমএসএমইএস ডিস্ট্রেস ইন কভি-১৯ ক্রাইসিস: স্টিমুলাস প্যাকেজ অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স শীর্ষক নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৬ শতাংশ এবং শিল্প ইউনিটের প্রায় ৯৬ শতাংশই এই খাতের। এ খাত থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে দুই মাসে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। খাতটির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বল্প সুদে এই খাতের উদ্যোক্তারা এই ঋণ নিতে পারবেন। যদিও এই সুবিধা সবাই নিতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা ৩৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের প্রবেশগম্যতা আছে। এছাড়া ৪৯ শতাংশের ঋণ ও অর্থায়ন হয় বেসরকারি এনজিও কিংবা এমএফআইর মাধ্যমে। ফলে সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ ধরনের সংস্থার সুপারিশ করেছেন তিনি।

বন্ধের উপক্রম ৪১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান: সেমিনারে ‘কভিড-১৯ অ্যান্ড এসএমইএস: আন্ডারস্ট্যান্ডিং দি ইমিডিয়েন ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কোপিং স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. কাজী ইকবাল, নাহিদ ফেরদৌস পবন ও তানভীর মাহমুদ। এতে বলা হয়েছে, লকডাউনে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া, অবিক্রীত পণ্যের  স্তূপ ও উৎপাদিত পণ্যের দাম আটকে থাকায় ৪১ শতাংশের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিপুল ক্ষতির শিকার হলেও কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এ খাতের ৪৮ শতাংশ উদ্যোক্তা।

গবেষণায় আরো দেখানো হয়, চলতি বছরে এসএমই খাতে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত। তাদের ব্যবসা কমবে মাত্র ৩৮ শতাংশ। সব প্রতিষ্ঠানে গত বছর শেষে অবিক্রীত পণ্য ছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, যা চলতি বছরে ১৯ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হতে পারে। প্রতি প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা। করোনার কারণে ৮০ শতাংশ বেতন দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা, যদিও শ্রমিকরা বলছে ৫৫ শতাংশ বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে আগামীতে বেতন পরিশোধ হবে না এমন ধারণা করছে ৬৩ শতাংশ মানুষ।  সরকারের প্রণোদনা পাবে, এমন আশা করছে ৭৪ শতাংশ মানুষ। তবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, ব্যাংকে হিসাব না থাকা কিংবা অন্যান্য যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেকেই হয়তোবা এ প্রণোদনা পাবে না।

ইন্টারনেটঃ ঈমান, আখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা

ইন্টারনেটঃ ঈমান, আখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা
61102
Share
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম আল হামদ | অনুবাদক: আবু শুআইব মুহাম্মাদ সদ্দিীক

ইন্টারনেট তথ্যজগতে একটি বিশাল আন্দোলন নিঃসন্দেহে। তবে এই তথ্যজগতটি ঈমান আখলাক এমনকী বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষার একটি বিশাল ময়দানও বটে। যা শুভ ও কল্যাণকর তাও এখানে পুরোরূপে উন্মুক্ত, যা অশুভ-অকল্যাণকর তাও এখানে নানা ব্যঞ্জনে উপস্থাপিত। যে ইন্টানেট ব্যবহার করে সে তার জিহ্বা নির্বাধভাবে ছেড়ে দিতে পারে, সে তার দৃষ্টি যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুরাতে পারে, সে তার হাত দিয়ে যা চায় তাই লিখতে পারে। তাকে নিবারণকারী কেউ নেই, তাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেই, না আছে কেউ থামিয়ে দেয়ার।

সে যদি ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়, পরিণামের প্রতি দৃষ্টি দেয়, তার প্রতিপালক তাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখে, তবে সে সফলতার সাথে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনে এগুতে সক্ষম হবে। আর যদি সে নিজের লাগাম ছেড়ে দেয়, তার খায়েশ যেদিকে তাড়িত করে সেদিকে ধাবমান হয়, ঈমান ও তাকওয়ার প্রহরী তার হৃদয় থেকে বিতারিত হয়, তাহলে আবর্জনার স্তুপে ঢুকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়, আর এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল অপদস্ততা, শালীনতার মৃত্যু, নিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নাক ঘর্ষণ।

ইন্টারনেট ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু পথ-পদ্ধতি রয়েছে, নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল।

১- ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার
বুদ্ধিমানের কাজ হল ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে অতিরঞ্জিত আকারে বিশ্বাস না করা; কেননা এ-ধরনের অতিবিশ্বাস নিজেকে ফেতনায় নিপতিত করতে পারে, যার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া হয়ত অসম্ভব হয়ে ওঠবে।

যদি কেউ ইন্টারনেটে কোনো কিছু পেশ করতে চায়, অথবা কোনো মন্তব্য ইত্যাদি করতে চায়, তাহলে উচিত হবে প্রথমে বিবেচনা করে দেখা, এর দ্বারা কোনো উপকার হবে কি-না, তাকে সতর্ক হতে হবে এর দ্বারা যেন মুমিনদের কোনো কষ্ট না পৌঁছে, মুমিনদের কোনো ক্ষতি না হয়। অতঃপর মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানোর সকল আকার-প্রকৃতি থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। অহেতুক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। মানুষের অনুভূতি নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হওয়া, একে অপরকে অপবাদ দেওয়ার ডালি খুলে-বসা, একদলকে অন্যদলের উপর চড়াও করে দেওয়া ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

কোনো মন্তব্য অথবা কারো কথা খণ্ডন করতে হলে ইলমনির্ভর, আদব, সদয়ভাব ও শালীন ভাষায় করা জরুরি। কোনো কিছুতে অংশ নিতে চাইলে তা যেন হয় নিজস্ব ও সরাসরি নামে। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভয় হলে উচিত হবে এমন কোনো বিষয় না লেখা যা অবৈধ, অশিষ্ট। যে দিন মানুষের অন্তরাত্মা উন্মুক্ত করে সবকিছু সম্মুখে নিয়ে আসা হবে সেদিন আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি হৃদয়ে সজাক রাখতে হবে।

২- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে থাকা
বুদ্ধিমানের উচিত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে অবস্থান করা; শয়তান মানুষকে গোমরাহ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে সারাক্ষণ। সকল পথ ও পদ্ধতি সে ব্যবহার করে যায় তার কর্মসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শয়তান মানুষের চিরশত্রু, যে শত্রু মানুষকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্য নিয়ে যাপন করে প্রতিটি মুহূর্ত। বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই তার শত্রুর প্রতি আস্থা রাখে না। ফেতনার থাবায় নিজেকে কখনো সঁপে দেবে না। ফেতনায় পড়বে না বলে অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে না; জ্ঞানে, দীন ও ইলমে সে যে পর্যায়েই থাক না কেন।

বুদ্ধিমান ব্যক্তি বরং ফেতনা থেকে অবস্থান করে বহু দূরে। ফেতনার কাছাকাছি যাওয়া থেকে সে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে। এসবের পরে যদি সে কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেতনায় নিপতিত হয়, তবে তা থেকে নিষ্কৃতির জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দেয়। আর যদি সে নিজের উপর অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, নিজের নখর দিয়ে নিজের গোর নির্মাণ করে চলে, তবে তার উপর থেকে আল্লাহর লুতফ-করুণা সরিয়ে নেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে একা।

ইউসুফ আলাইহিসসালাম নিজ থেকে ফেতনায় নিপতিত হন নি, ফেতনাই বরং তার মুখোমুখি হয়েছে, আর তখন তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। ফেতনার বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে আল্লাহ যদি নারীদের ষড়যন্দ্র থেকে তাকে রক্ষা না করতেন তবে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত হয়ে যেতেন। আল্লাহর উপর তাঁর প্রচণ্ড ভরসার কারণেই আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দিয়েছে, ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয়েছেন।

৩- সময় নির্ধারণ ও উদ্দেশ্য নির্ণয়
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার একটি উপায়, সময় নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্টভাবে কীভাবে কি কাজ করতে যাচ্ছে তা নির্ণয় করে নেওয়া, উদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া। এর বিপরীতে অনির্দিষ্টভাবে যদি একটির পর একটি পেইজ ওপেন করে চলে, এক সাইটের পর অপর সাইট ভিজিট করে চলে, তবে অযথা সময় নষ্ট ব্যতীত অন্য কিছু আশা করা যায় না। যদি কোনো উপকার আহরণে সক্ষম হয় তবে তা হবে খুবই ক্ষীণ।

৪- পরিণাম দর্শন
ইন্টারনেটের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত হবে তার কৃতকর্মের পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা। নিজেকে দমন করা, নিজের প্রবৃত্তি-খায়েশের ঘাড়ে লাগাম লাগানো। ইবনুল জাউযি (রা.) বলেন, ‘হে তাকওয়ার দ্বারা সম্মানের আসনে সমাসীন ব্যক্তি, তুমি তাকওয়ার সম্মানকে গুনাহের অপদস্ততার বিনিময়ে বিক্রি করো না। যে জিনিসের প্রতি তোমার খায়েশ জন্মেছে তা বর্জন করে তোমার প্রবৃত্তির তৃষ্ণা মেটাও, যদিও তা কষ্টদায়ক হয়, জ্বালা দেয়।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রবৃত্তিকে দমনের শক্তিতে এমন স্বাদ বয়েছে যা সকল স্বাদকে অতিক্রম করে যায়; তুমি কি দেখো না, যারা প্রবৃত্তিতে আরোপিত তারা কীভাবে অপদস্ত হয়; কেননা তারা পরাজিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিকে দমন করে তার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো; কেননা সে শক্তিমান হওয়ার স্বাক্ষর রাখে, কারণ প্রবৃত্তিকে দমন করায় সে পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়।

৫- যৌন আবেদনময় সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা আবশ্যক
যৌন আবেদন-সুরসুরি সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে দূরে থাকতে হবে। খারাপ ও পর্নো সাইটগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। যেসব ব্লগ-সাইটে ফাহেশ-অশালীন কথাবার্তা বলা হয়, যেসব প্রবন্ধে প্রবৃত্তি উসকিয়ে দেওয়ার বিশয়বস্তু রয়েছে, তা বর্জন করা ঈমান ও আখলাকের দাবি। আবেদনময় চিত্র-ছবি, কামনা-বাসনা উসকিয়ে দেয় এমন ফুটেজ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ; মানুষের মন সৃষ্টিগতভাবে প্রবৃত্তির প্রতি আসক্ত, প্রবৃত্তি যেদিকে টানে সেদিকেই সে চলতে শুরু করে। মানুষের মন বারুদ অথবা প্রেট্রোলতুল্য, যা জ্বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এসব বস্তু প্রজ্জ্বলনকারী বস্তু থেকে যতক্ষণ দূরে থাকে, শান্ত থাকে, জ্বলার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এর অন্যথা হলেই তা জ্বলে উঠে, জ্বলে উঠা স্বাভাবিক।

মানুষের মনও অভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের মন শান্ত-নিরব থাকে। তবে যখন তা উসকিয়ে দেওয়ার মত কোনো কিছুর নিকটবর্তী হয়, দুষ্টপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার মত কোনো শ্রব্য, দৃশ্য, পাঠ্য, অথবা শুঁকার বিষয়ের স্পর্শে আসে তখন তার ঘুমন্ত প্রবৃত্তি দানবের মত জেগে ওঠে, তার ব্যাধিগুলো আন্দোলিত হয়ে ওঠে, তার খায়েশ-আসক্তি বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত হয়ে হাজির হয়। তাই এসব প্রবৃত্তিউদ্দীপক বিষয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

৬- দৃষ্টি অবনত রাখা
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনাকাঙ্খিত চিত্র কখনো কখনো সামনে এসে হাজির হয়। এমতাবস্থায় ব্যক্তি যদি তার দৃষ্টিকে অবনত করে নেয়, তবে সে একদিকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করল অন্যদিকে নিজের হৃদয়কেও তৃপ্তি দিতে সক্ষম হল। চোখ হৃদয়ের আয়না। চোখের লাগাম ছেড়ে দেওয়া অনুশোচনার কারণ, পক্ষান্তরে দৃষ্টি অবনতকরণ, হৃদয়কে করে শান্ত-তৃপ্ত। যখন কেউ তার দৃষ্টিকে লাগাম লাগিয়ে রাখে তখন তার হৃদয়ও কামনা-বাসনার মুখে লাগাম লগিয়ে রাখে। চোখ উন্মুক্ত-স্বাধীন করে দিলে, হৃদয়ও উন্মুক্ত, স্বাধীন হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: “মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।” [সুরা নুর : ৩০]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রা.) এ-আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এ-আয়াতে আল্লাহ তাআলা, দৃষ্টি অবনত করা ও লজ্জাস্থান হেফাযত করাকে আত্মার পরিশুদ্ধির সমধিক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। আর আত্মার পরিশুদ্ধির অর্থ সকলপ্রকার দুষ্ট, অশালীন, জুলুম, শিরক, মিথ্যা ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া।

৭- নিশ্চিত হওয়া
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জন্য এটা জরুরি যে, সে যা বলছে বা শুনছে বা পড়ছে অথবা বর্ণনা করছে তার শুদ্ধতা ভালভাবে যাচাই করে নেয়া, কেননা এটা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, ভারিক্কি ও ইমানের পরিচয়। আর এটা জরুরি এ জন্যও যে, ইন্টারনেটে ভালমন্দ সবই লেখা হয়, সক্ষম-অক্ষম সবাই তাতে লেখে। অনেকেই আবার অপরিচিত নাম বা ছদ্মনামে লেখে। সে কারণেই বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ হবে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই যখন সে কোনো সংবাদ বা অন্য কোনো বিষয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে। নিশ্চিত হওয়ার পর এ সংবাদ বা তথ্যটি প্রচারের উপযোগিতা নিয়ে ভাববে। যদি তা কল্যাণকর হয় তবে প্রচার করবে। অন্যথায় তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। এই ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কারণে কত খারাবিই না সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এমন রয়েছে যারা ইন্টারনেটে যা পায় মহাসত্যের মতো বিশ্বাস করে নেয়। এটা নির্বুদ্ধিতার আলামত; কেনন বুদ্ধিমানের আচরণ হল নিশ্চিত হওয়া, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেয়া। এমনকী কোনো সুপরিচিত ব্যক্তির কথা হলেও তা যাচাই করে দেখা উচিত। অপরিচিত মানুষের কথাবার্তার বেলায় কি অবস্থান নিতে হবে তা বলাই বাহুল্য। মানুষ যা শোনে তাই প্রচার করতে শুরু করা থেকে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যক্তির মিথ্যা বলার জন্য এতটুই যথেষ্ট যে. সে যা শুনে তা বর্ণানা করতে লাগে’ [মুসলিম]

ফেতনা-ফাসাদের সময় এ আদবটি অধিক গুরুত্বসহ পালন করা জরুরি। যে ব্যক্তি নিজের উপকার চায় তার উচিত নিরাপদে থাকার খাতিরে, ভর্ৎসনা থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, এই আদবটি কঠিনভাবে ধরে রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।” [সূরা আননিসা: ৮৩]

শায়খ আল্লামা আব্দুর রহমান আসসুদি এ-আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘ এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদেরকে, তাদের অযাচিত কাজ করার পর একটি দীক্ষা। অর্থাৎ যখন তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মুখোমুখি হবে, সর্বসাধারণের নিরপত্তা সংক্রান্ত কোনো বিষয় হবে, মুমিনদের আনন্দের বা দুঃখের কোনো সংবাদ থাকবে, তবে এ-বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে, এবং সংবাদটি প্রচারে দ্রুততার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বরং বিষয়টিকে রাসূল ও উলুল আমরের কাছে রুজু করতে হবে, উলুল আমর হলেন, জ্ঞানী ও সুচিন্তিত মতামত দিতে পারঙ্গম, নসিহতকারী ও সুভদ্র ব্যক্তি যারা বিষয়ের নিগূঢ়তায় প্রবেশ করতে এবং মুমিনের স্বার্থ কোথায় তা বুঝতে সক্ষম। তারা যদি মনে করেন যে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রচার করলে ফায়দা হবে, মুমিনদের উদ্যমতা বেড়ে যাবে, তাদের আনন্দের কারণ হবে, শত্রুপক্ষের অনুশোচনা বর্ধনের কারণ হবে, তাহলে তা প্রচার করবে, এর অন্যথা হলে তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। অর্থাৎ তারা তাদের সুচিন্তা ও জ্ঞানে তা থেকে সঠিক বিষয়টি উদ্ধার করতে পারবে।

এখানে আমরা আরেকটি আদর্শিক বিধান পাচ্ছি, আর তা হল, কোথাও যদি বাহাস শুরু হয় তবে উচিত হবে এ-বিষয়ে যারা দক্ষ তাদের শরণাপন্ন হওয়া। নিজেকে এগিয়ে না দেয়া. কেননা এটাই নির্ভুলতার জন্য সমধিক উপযোগী পদ্ধতি। কোনো কিছু শোনার সাথে সাথে তা প্রচার করতে লেগে যাওয়া উচিত নয় এ-বিধানটিও আমরা উক্ত আয়াতে খোঁজে পাই। বরং কথা বলার পূর্বে চিন্তাভাবনা করে দেখা, কল্যাণ কোথায় তা ভেবে দেখে প্রচার করবে কি করবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারেও বিধান পাচ্ছি উক্ত আয়াতে।

নিশ্চিত হওয়া ও ভেবে-চিন্তে দেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে শায়খ সুদি অন্য একটি আয়াত উল্লেখ করেন, আয়াতটি হল: “তোমার প্রতি ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বল, ‘ হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।” [সুরা ত্বাহা : ১১৪]

তিনি বলেন, এখানে জ্ঞান অন্বেষণকারীর একটি শিক্ষণীয় আদব রয়েছে, আর তা হল ইলমের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। কোনো বিষয়ে রায় দিতে তাড়াহুড়া না করা। গর্ববোধে নিপতিত না হওয়া। উপকারী ইলম অর্জন যাতে সহজ হয় সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

তিনি আরেকটি আয়াত উল্লেখ করেন: “যখন তোমরা এটা শুনলে তখন কেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করল না এবং বলল না যে, ‘এটাতো সুস্পষ্ট অপবাদ?” [সুরা নুর : ১২]

এ আয়াত উল্লেখপূর্বক তিনি বলেন, এখানে আল্লাহ তাআলা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন যে, যখন মুমিনরা অন্যান্য মুমিন ভাইদের চরিত্রহননকারী কোনো খারাপ সংবাদ শুনবে তখন তাদের ঈমান ও প্রকাশ্য অবস্থা সম্পর্কে যা জানা আছে তার প্রতি নজর দেবে। সমালোচকদের কথায় কান দেবে না। বরং বিরাজমান মূল বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরবে, সমালোচকদের কথা বিশ্বাস না করে তা বরং প্রত্যাখ্যান করবে।

৮- ভেবে -চিন্তে মন্তব্য করা
এ ক্ষেত্রে জ্ঞানী ব্যক্তির উচিত হবে সকল বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। জানা থাকলেই সবকিছু বলে দিতে হবে, কথা এমন নয়। বরং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলা। ছোট বড় সকল বিষয়ে মন্তব্য করা সমুচিন বলে মনে করি না। ঘটে যাওয়া সকল বিষয়েই মন্তব্য করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ মন্তব্যকারী হয়ত বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করে নি। এমনও হতে পারে যে অবস্থা নিরুপনে সে ভুল করছে। তাই ধীরস্থিরতা খুবই জরুরি। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘ তাড়াহুড়াকারীর পাথেয় হল ‘ভুল’। এর বিপরীতে যে ব্যক্তি ভেবে-চিন্তে মন্তব্য করবে, বিবেকের স্বচ্ছতা তাকে সহায়তা দেবে। বক্ষ্যমাণ অভিমতটি তার মস্তিষ্কে পরিপক্কতা পাবে, ভুল কম হবে। বরং এটা হেকমত ও প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে যে মানুষ তার জানা সববিষয় সম্পর্কেই মন্তব্য করে চলবে। চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নেয়া সত্ত্বেও, অথবা অভিমত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও, সকল বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করি না। মানুষের উচিত কিছু অভিমত সঞ্চয় করে রাখা। তবে যদি হেকমত ও মাসলেহাত দাবি করে, অথবা পরিস্থিতির তাকাযা হয় তবে অভিমত ব্যক্ত করা চলে। যে বিষয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে তা যদি বড়দের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তো কেবল পরামর্শের আকারে ব্যক্ত করা বাঞ্ছিনীয়। আরবিতে একটি কবিতা আছে যার অর্থ, ‘কথা বললে মেপে বল; কারণ কথা, বুদ্ধি অথবা দোষ উন্মুক্ত করে দেয়’।

ইবনে হিব্বান বলেছেন, ধীরস্থিরতা অবলম্বনকারীকে কেউ পেছনে ফেলতে পারে না। আর তাড়াহুড়াকারী অন্যদের নাগাল পায় না। একইরূপে যে চুপ থাকে তাকে খুব কমই লজ্জিত হতে হয়, আর যে বলে, সে কমই নিরাপদে থাকে। তাড়াহুড়াকারী জানার পূর্বেই বলে ফেলে, বোঝার পূর্বে জবাব দেয়, অভিজ্ঞতা লাভের পূর্বেই প্রশংসকীর্তনে মত্ত হয়, প্রশংসা করার পর আবার তিরস্কারও করে, চিন্তা করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, আর বদ্ধপরিকর হওয়ার পূর্বেই চলতে শুরু করে। তাড়াহুড়াকারীর সংগী হল লজ্জা। নিরাপদ থাকার বিষয়টি তার থেকে দূরে অবস্থান নেয়। আর আরবরা তাড়াহুড়াকে সকল লজ্জার মা বা উৎস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

উমর ইবনে হাবীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘বলা হত: এমন কোনো তাড়াহুড়াকারী পাওয়া যাবে না যে প্রশংসিত, এমন কোনো রাগী ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে খুশি। এমন কোনো স্বাধীন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে লোভী। এমন কোনো বদান্য ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে হিংসুটে। এমন কোনো খাদক পাওয়া যবে না যে ধনী। এমন কোনো বিরক্তিপ্রকাশক ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার বন্ধুবান্ধব আছে। একারণেই যারা প্রজ্ঞাবান তারা ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার ব্যাপারে বারবার উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে যাওয়া হবে তখন।

৯- উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা
বুদ্ধিমানের উচিত উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা করা, অতিরঞ্জন থেকে বেঁচে থাকা। ছোটকে বড় করে না বলা। কেননা অতিরঞ্জন ও তিলকে তাল করে বলার মাঝে বাস্তবতা হারিয়ে যায়। একটি আরবি প্রবাদে আছে, ‘ উত্তমব্যক্তি, মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি।’

১০- আল্লাহ আপনাকে দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা।
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা। কবি বলেন, ‘ আমার এ চোখ ঐ যুবকের চাইতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখি নি যে নিভৃতে আল্লাহর মাকামকে ভয় করে।’ তাই বুদ্ধিমানের উচিত এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহ নেয়া। সবসময় এ কথা মনে রাখা যে, সকল গায়েব-অদৃশ্য আল্লাহর কাছে দৃশ্যমান। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহকে সমধিক হালকা দ্রষ্টা হিসেবে সাব্যস্ত করা কি করে সম্ভব?! এটা অনুধাবন করা উচিত যে, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করবে আল্লাহ তাকে ঐ বিষয়ের পোশাক পরিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করল, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ, আল্লাহ তা প্রকাশ করবেন। আমল যে ধরনের হবে, প্রতিদানও সে অনুপাতেই হবে। ইরশাদ হয়েছে, “যে মন্দ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।” [সূরা আন নিসা : ১২৩]

এ ব্যাপারে কিছু আলোকিত বাক্য শুনুন, আবু হাযেম সালমা ইবনে দিনার (র.) বলেছেন, ‘ যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক দুরস্ত করে নেয়, তখন আল্লাহও তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে ভালো করে দেন, এর বিপরীতে যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহও তখন তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেন। আর নিশ্চয়ই একজনের চেহারার তুষ্টি অনুসন্ধান সকলের তুষ্টি অনুসন্ধানের তুলনায় সহজ। এর বিপরীতে যদি আপনার ও আল্লাহর মাঝখানকার সম্পর্ক বিগড়ে দেন তবে সবার সাথেই সম্পর্ক বিগড়ে দিলেন। সবাইকেই রাগিয়ে তুললেন’।

মু’তামার ইবনে সুলাঈমান বলেছেন, ‘ কোনো ব্যক্তি যদি সংগোপনে কোনো পাপ করে তবে সে তার লাঞ্ছনা মাথায় নিয়েই সকাল করে’। ইবনুল জাওযি র. বলেন,‘ আল্লাহার ব্যাপারে আপনি দলিল তালাশ করেছেন, অতঃপর পৃথিবীতে যত ধূলিকণা রয়েছে তার থেকেও অধিক পেয়েছেন, আল্লাহর আজব বিষয়ের মধ্যে আপনি দেখেছেন যে, আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট নন মানুষ যদি এমন বিষয় গোপন করে, তাহলে বিলম্বে হলেও আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন। লোকেরা তা নিয়ে কথা বলে। যদিও মানুষ তা দেখে নি।

হয়ত এই পাপকারীকে এমন বিপদে ফেলা হয় যার দ্বারা তার সকল পাপ মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। এ যাবৎ সে যত পাপ গোপন করেছে, এ বিষয়টি তার জবাব হয়ে যায়। এটা এ জন্য ঘটে যাতে মানুষ জানতে পারে যে পাপ ও পদস্খলের প্রতিদান দেয়ার অবশ্যই একজন রয়েছেন। আর তিনি এমন এক সত্তা, কোনো পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা, তার ক্ষমতাকে রহিত করতে পারে না, যার নিকট কোনো আমলই হারিয়ে যায় না। অনুরূপভাবে মানুষ পুণ্যের কাজকেও হয়ত গোপন করে, কিন্তু তা প্রকাশ পেয়ে যায়, মানুষ তা নিয়ে কথা বলে, তারা বরং আরো অতিরিক্ত বলে, এমনকী সে ব্যক্তি তাদের কাছে এমন প্রতীয়মান হয় যে সে যেন আদৌ কোনো পাপ করে নি। মানুষ তার ভাল কাজগুলোই উল্লেখ করে। এ রকম এ জন্য ঘটে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে অবশ্যই একজ প্রতিপালক রয়েছেন যিনি আমলকারীর কোনো আমলকেই বিনষ্ট করেন না।

মানুষের হৃদয় ব্যক্তির অবস্থা জানে, তারা তাকে ভালবাসে অথবা বর্জন করে, তাকে তিরস্কার করে অথবা তার প্রশংসা করে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক যে পর্যায়ের হয় সে অনুযায়ী এগুলো ঘটে। আল্লাহই যথেষ্ট ব্যক্তির সকল উৎকন্ঠা দূর করার ক্ষেত্রে, সকল অশুভ বিষয় তাত্থেকে উঠিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। আর যদি কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে বিগড়ে দেয়, সত্য অনুসরণের বিবেচনা থেকে সরে আসে, তবে তার প্রাপ্য বিষয় উল্টে যাবে। যারা তার প্রশংসা করত তারাই তাকে তিরস্কার করতে শুরু করবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ নিশ্চয় নিভৃতে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক চর্চার প্রভাব রয়েছে যা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে চলে আসে। এমন অনেক মুমিন রয়েছেন যারা নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করেন, অতঃপর সে তার প্রবৃত্তির খায়েশকে ছেড়ে দেয়। কেননা সে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পায়, অথবা তার ছাওয়াবের আশা করে। অথবা আল্লাহকে সম্মান করে তা ছেড়ে দেয়। এ কাজ করে সে যেন সুবাসযুক্ত কাঠ ধুপদানির উপর রেখে দেয়, অতঃপর তা সুগন্ধি ছড়াতে থাকে। মানুষ তা শুঁকে, অবশ্য তাদের জানা থাকে না এ সুগন্ধির উৎস কোথায়।

মানুষ তার প্রবৃত্তির খায়েশ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যতটুকু মুজাহাদ করবে, ততটুকু তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে মহব্বত বাড়বে। বর্জনীয় অথচ লোভ্য-প্রিয় বস্তুকে ছেড়ে থাকার জন্য মানুষ যতটুকু শ্রম দেবে তার সুবাসও তত বাড়বে, আর এ সুবাস দাহ্য কাঠের প্রকৃতি হিসেবে বাড়ে অথবা কমে। অতঃপর আপনি মানুষকে দেখবেন যে ঐ লোকটিকে তারা সম্মান-শ্রদ্ধা করছে, তাদের মুখ থেকে তার প্রশংসা রের হচ্ছে, যদিও তারা জানে না কেন এমন হচ্ছে। তারা তাদের অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে অপারগ।এ সুবাস মৃত্যুর পরও সুগন্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদেরকে মানুষ দীর্ঘকাল স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমন লোকও রয়েছে যাদেরকে এক’শ বছর পর্যন্ত লোকেরা স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমনও ব্যক্তি আছে যাদেরকে অনন্তকাল স্মরণ রাখা হয়।

ঠিক এর উল্টো হল ঐ ব্যক্তি যে সৃষ্টিকুলকে ভয় পায়। যে নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করে না। অতঃপর পাপের সাথে তার স্পকৃক্ততা যতটু থাকে সে অনুপাতেই তাত্থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, মানুষের হৃদয় তাকে ঘৃণা করে। যদি তার পাপ অল্প হয়, মানুষ তার বদনাম করে না বটে, তবে প্রশংসা করে অল্প, হ্যাঁ তার পুণ্যের কারণে মানুষের হৃদয়ে তার সম্মানটুকু বজায় থাকে। আর যদি পাপের সংখ্যা অধিক হয় তাহলে সর্বোচ্চ যা হয় তা হল মানুষ তার ব্যাপারে, প্রশংসা-তিরস্কার কোনোটাই করে না, শুধুই কেবল চুপ থাকে। নিভৃতে যারা পাপ করে তাদের পাপের ফলে দুনিয়া-অখিরাত উভয় জাহানেই কষ্ট-যাতনা বরণ করে নিতে হয়। তাকে যেন বলা হচ্ছে, থাকো, নিজের জন্য তুমি যা পছন্দ করেছ, তাতেই তুমি থাক। অতঃপর সে অনন্তকাল কষ্ট-যাতনাতেই থেকে যায়।

প্রিয় পাঠক, দেখুন, পাপকে প্রাধান্য দিলে পাপ কীভাবে মানুষকে দিকভ্রান্ত করে যাতনার গহ্বরে নিক্ষেপ করে। আবুদ্দারদা রা. বলেন, ‘ নিশ্চয় বান্দা যখন নিভৃতে আল্লাহর অবাধ্য হয়, আল্লাহর মানুষের হৃদয়ে তার ব্যাপারে ঘৃণা ঢেলে দেন, যদিও তারা আঁচ করতে পারে না। তাই আমি যা লিখলাম তা নজর দিয়ে দেখুন, যা উল্লেখ করলাম তা জানুন, আপনারা আপনাদের গোপন ও নিভৃতের মুহূর্তগুলো সম্পর্কে উদাসীন হবেন না; কেননা আমলের নির্ভরতা নিয়তের উপর। আর প্রতিদান দেয়া হয় ইখলাস-ঐকান্তিকতা অনুযায়ী’।

ইমাম ইবনুল জাওযী র. বলেন,‘ যতটুকু আপনারা আল্লাহকে সম্মান করবেন, আল্লাহও আপনাদেরকে ততটুকু সম্মান করবেন। যতটুকু আপনারা আল্লাহর কদর-ইহতেরাম করবেন আল্লাহও আপনাদেরকে ততটুকু কদর ইহতেরাম করবেন’। আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি এমন ব্যক্তি দেখেছি, যারা ইলমচর্চায় জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তবে তিনি সীমালঙ্ঘন করেছেন; ফলে মানুষের কাছে হালকা হয়ে গিয়েছেন। তার বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার ও মুজাহাদা থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার প্রতি ফিরেও তাকাত না। আমি দেখেছি যারা যৌবনে ইবাদত-আরাধনায় লিপ্ত থেকেছে, যদিও ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল, তবু আল্লাহ তার কদর বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষের হৃদয়ে তার কদর বসে গেছে, অতঃপর তার মধ্যে যতটুকু খায়ের-ভালাই আছে তার থেকেও অধিক তাকে প্রশংসা করেছে।

আমি এমন ব্যক্তিকেও দেখেছি যে তার সবকিছু ঠিকঠাক পেত যখন সে সত্যপথে চলার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখাত, আবার যখন সত্য থেকে হেলে পড়ত, আল্লাহর করুণাও তাত্থেকে দূরে সরে যেত। মানুষের পাপের ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত-করুণা ব্যাপক না হলে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মান-ইজ্জত সব হাওয়ায় উড়ে যেত, তবে যা হয় তার অধিকাংশটাই হয় শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে, অথবা শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কমলতা গ্রহণপূর্বক।

১১- যা উপকারী তা পেশ করায় অংশ নেয়া
ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকা যেমন জরুরি, তদ্রপভাবে মুসলমানের উচিত, বরং বলা যায় আবশ্যক, ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো হতে উপকৃত হওয়া। বিশেষ করে ব্যক্তি যদি ইন্টারনেট বিষয়ে জ্ঞান রাখে অথবা এই ময়দানে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তির জন্য, উপকারী কন্ট্রিবিউশন, মন্তব্য, বিশ্বস্ত ইসলামি সাইটগুলো মানুষকে দেখিয়ে দেয়া, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা জরুরি।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তসমূহ

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তসমূহ
quraneralo.com/conditions-of-shahada/
July 16, 2019

লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ | অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

প্রশ্ন:
আমাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর শর্তগুলো বুঝিয়ে বলুন?

উত্তর:
শাইখ হাফেয হিকমী রহ. ‘সুল্লামুল উসূল’ গ্রন্থে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাতটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। ইলম, ইয়াকীন, কবূল, ইনকিয়াদ, সিদক, ইখলাস ও মুহব্বত। নিম্নে সবকটি শর্তের ব্যাখ্যা পেশ করছি:

প্রথম শর্ত, ইলম:
‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমায় দু’টি অংশ রয়েছে: ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় অর্থের ইলম বা যথার্থ জ্ঞান হাসিল করা প্রথম শর্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“অতএব জেনে রেখো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই”। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯]
অপর আয়াতে তিনি বলেন: “তবে তারা ছাড়া যারা জেনে-শুনে সত্য সাক্ষ্য দেয়”। [সূরা আয-যুখরূফ, আয়াত: ৮৬]

এখানে সত্য সাক্ষ্য দ্বারা উদ্দেশ্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আর জেনে-শুনে অর্থ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার সঙ্গে অন্তর দ্বারা তার অর্থের জ্ঞান হাসিল করা। সহীহ গ্রন্থে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে এমতাবস্থায় মারা গেল যে, সে জানে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[1] অতএব, মুসলিম হওয়ার জন্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লার অর্থ জানা জরুরি।

দ্বিতীয় শর্ত, ইয়াকীন:
অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা, শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, আর সন্দেহপূর্ণ জ্ঞানের তো কোনো মূল্যই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]

এ আয়াতে ঈমানের জন্য আল্লাহ সন্দেহ মুক্ত হওয়া শর্তারোপ করেছেন। কারণ, সন্দেহ পোষণকারী মুনাফিক, মুমিন নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, এ দু’টি বাক্যে সন্দেহ পোষণ ব্যতীত কোনো বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে না, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[2]
অপর বর্ণনায় এসেছে: “কোনো বান্দা এ দু’টি সাক্ষ্যসহ, সন্দেহমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাত করবে, আর তাকে জান্নাত থেকে দূরে রাখা হবে, এরূপ হবে না”।[3]

একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুকে নিজের দু’টি জুতাসহ প্রেরণ করে বলেন: “এই দেয়ালের পশ্চাতে যার সাথে তুমি সাক্ষাত করবে, যে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর”।[4] অতএব, জান্নাতে লাভের জন্য সন্দেহ মুক্ত সাক্ষ্য হওয়া জরুরি, অন্যথায় তাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।

তৃতীয় শর্ত, কবুল:
অর্থাৎ কালেমার অর্থ ও দাবিকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিকট অতীত জাতির ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যারা এ বাক্য গ্রহণ করেছে তাদের তিনি মুক্তি দিয়েছেন এবং যারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের থেকে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “(ফিরিশতাদেরকে বলা হবে), ‘একত্র কর যালিম ও তাদের সঙ্গী-সাথীদেরকে এবং যাদের ইবাদাত তারা করত আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে, আর তাদেরকে আগুনের পথে নিয়ে যাও, আর তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ২২-২৪]
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই’, তখন নিশ্চয় তারা অহঙ্কার করত। আর বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির জন্য আমাদের উপাস্যদের ছেড়ে দেব”? [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৫-৩৬]

আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। কারণ, তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহকে অহঙ্কার ভরে ত্যাগ করেছে, আল্লাহর দা‘ঈর ওপর তারা মিথ্যারোপ করেছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি মোতাবেক তারা (অন্য মাবুদদের) প্রত্যাখ্যান ও (একমাত্র আল্লাহকে) গ্রহণ করে নি; বরং তারা বিদ্বেষ ও অহঙ্কার থেকে বলেছে: “সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়! আর তাদের প্রধানরা চলে গেল একথা বলে যে, ‘যাও এবং তোমাদের উপাস্যগুলোর ওপর অবিচল থাক। নিশ্চয় এ বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত’। আমরা তো সর্বশেষ ধর্মে [5] এমন কথা শুনি নি। এটা তো বানোয়াট কথা ছাড়া আর কিছু নয়”। [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৫-৭]

আল্লাহ তাদের মিথ্যারোপ ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন, তিনি বলেছেন,“বরং সে সত্য নিয়ে এসেছিল এবং সে রাসূলদেরকে সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছিল”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৭]
অতঃপর যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহকে মেনে নিয়েছে, তাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “অবশ্য আল্লাহর মনোনীত বান্দারা ছাড়া; তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত রিযিক, নি‘আমত-ভরা জান্নাতে ফলমূল; আর তারা হবে সম্মানিত”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৪০-৪৩]

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত ও ইলমসহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ মুষলধারার বৃষ্টির ন্যায়, যা কোনো জমিনে বর্ষিত হয়েছে। তাতে কিছু উর্বর জমি ছিল, যা পানি গ্রহণ করেছে, ফলে তৃণলতা ও প্রচুর ঘাস জন্মিয়েছে। তাতে কিছু ছিল শক্ত জমি, যা পানি আটকে রেখেছে, আল্লাহ তার দ্বারা মানুষদের উপকৃত করেছেন, ফলে তারা পান করেছে, পশুদের পান করিয়েছে ও সেচ কার্য আঞ্জাম দিয়েছে। আর সে পানি জমির অপর অংশে পতিত হয়েছে, যা ছিল পাথরি জমি, যা না পানি আটকে রাখে এবং না কোনো তৃণলতা জন্মায়।
এটাই তার উদাহরণ যে দীনের ইলম অর্জন করল, আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দ্বারা তিনি তাকে উপকৃত করলেন, ফলে সে জ্ঞানার্জন করল ও অন্যকে শিখাল এবং তার উদাহরণ, যে তার প্রতি মাথা তুলে তাকায়নি ও আল্লাহর হিদায়াত গ্রহণ করে নি, যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে”।[6]

চতুর্থ শর্ত, ইনকিয়াদ:
অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবিকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]
আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করার অর্থ তার তাওহীদকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া, যে মেনে নিল না ও ইহসান প্রদর্শন করল না, সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে নি। এ কথাই আল্লাহ পরবর্তী আয়াতে বলেছেন, “আর যে কুফরী করে, তার কুফরী যেন তোমাকে ব্যথিত না করে; আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তারা যে আমল করত আমি তা তাদেরকে জানিয়ে দেব”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]
একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“তোমাদের কেউ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত বিষয়ের অনুসারী না হবে”। এটাই পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিজেকে সমর্পণ করা।

পশ্চম শর্ত, সিদক তথা কালেমাতে সত্যারোপ করা:
অর্থাৎ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসসহ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমরা তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি, ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী”। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ১-৩]

আর মুনাফিকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেদেরকেই ধোকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি, সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলত”। [সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ৮-১০]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহ ‘আল্লাহু বলেন, “এমন কেউ নেই যে, অন্তরের অন্তস্থল থেকে সত্য সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, তবে আল্লাহ অবশ্যই তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন”।[7]

ষষ্ট শর্ত, ইখলাস:
অর্থাৎ নিষ্ঠা থাকা বা সকল প্রকার শির্ক থেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “বল, ‘আমি আল্লাহরই ইবাদাত করি, তাঁরই জন্য আমার আনুগত্য একনিষ্ঠ করি”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৪]
সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সে ব্যক্তি, যে নিজের অন্তরের অন্তস্থল বা মন থেকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে”।[8]