পারিবারিক শিষ্টাচার ও আমাদের যুব সমাজ

মানব সভ্যতার আদিম এবং প্রাচীনতম সংগঠন হ”েছ পরিবার । পরিবার হচ্ছে একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক; কিন্তু এ ক্ষুদ্রতম এককের ওপরই নির্ভর করে একটি জাতির সভ্যতা। পরিবারের ভালো-মন্দ রাষ্ট্রকেও আলোড়িত করে। পরিবার হচ্ছে মানুষ তৈরির কারখানা। পরিবারেই মানবশিশুর জন্ম হয়, পরিবারেই বিকশিত হয় এবং ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়। পরিবারেই ভালো মানুষের জন্ম হয়, আবার খারাপ মানুষের জন্ম হয়। পরিবারেই রাষ্ট্রনায়কদের জন্ম হয়, আবার সভ্যতা ধ্বংসকারী নরপিচাশের জন্ম হয়। পরিবার নামক এই সংগঠনটি মানব সভ্যতার শুরুতে ছিল এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে ,তবে তার আঙ্গীক বা কাঠামোর পরিবর্তন হ”েছ এবং ভবিষ্যতে হবে । পরিবার ভালো-মন্দের পার্থক্য, গড়ে দেয় , ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, শালীনতা, বিনয় ই পারিবারিক শিষ্টাচার।

শিষ্টাচার — মানুষের আচার-আচরণ, কথা, বার্তা, কার্যকলাপ, ভাববিনিময় ইত্যাদি সুন্দররূপে, ভদ্ররূপে প্রকাশিত হওয়াই শিষ্টাচার। শিষ্টাচার হল মানুষের চরিত্রের অলংকার। যেসব গুণাবলি মানুষের চরিত্রকে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও গৌরাম্বিত করে তুলে তার মধ্যে শিষ্টাচার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সত্য কথন, পরোপকার, ক্ষমা, দয়া-দানশীলতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা, ক্ষমা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, শালীনতা, বিনয়, ভদ্রতা ইত্যাদি বিশ্বজনীন গুণাবলি নিজের মধ্যে ধারণ, অনুশীলন এবং এর বিপরীত বিষয়গুলো বর্জন করাই হচ্ছে শিষ্টাচার।

শিষ্টাচারের অভ্যাস বা কৌশল রপ্ত করার প্রাথমিক ও প্রধান শিক্ষালয় হল পরিবার। একজন শিশু কিছু বুঝতে শিখলেই সে মা-বাবা, ভাইবোন এবং নিকটাত্মীয়ের কথা, বার্তা ও আচার-আচরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করে। সংসারে যদি মা-বাবার মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয়, ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগে থাকে, তাহলে শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে ভবিষ্যতে নেতিবাচক মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পক্ষান্তরে মা-বাবা বা সংসারের অন্য বড়দের সৌহার্দ্যপূর্ণ সহঅবস্থান ও ভালোবাসা পূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশু পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়, একজন সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। নৈতিক শিক্ষা পারিবারিক শিক্ষার একটি বড় দিক। নৈতিক শিক্ষা শিশুর মধ্যে সৎ গুণাবলির সঞ্চার করে। আর এ সৎ গুণ তার ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করে তোলে।

শিশুরা যা দেখে তাতেই প্রশ্ন করে। অনেক সময় বড়রা বিরক্ত হয়ে ছোটদের ধমক দিয়ে থাকে; কিন্তু এটি ঠিক নয়। এতে শিশুর শেখার বা জানার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। কারণ শিশুরা প্রশ্নই করে নতুন কিছু জানার জন্য। তাকে ধমক বা শাসন না করে বিষয়বস্তু বুঝিয়ে বলুন। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করুন। পাশাপাশি এ শিষ্টাচার শেখাতে হবে, বড়দের জরুরি কোনো কথা বলার সময় যেন অহেতুক প্রশ্ন না করে বা বিরক্ত না করে।অনেকে প্রাইভেসির নামে সন্তানকে দূরে সরিয়ে রাখে, আবার অনেকে সন্তানকে ভালোবাসে বলে নিজের প্রাইভেসি নষ্ট করে। সন্তানকে শেখাতে হবে কারও রুমে ঢুকতে হলে তার অনুমতি নিয়ে ছালাম দিয়ে রুমে ঢুকতে হবে।

পরিবারের বড়দের যথাযথ সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ-ভালোবাসা দিতে হবে। কারও মতামতকে উপেক্ষা না করে ধৈর্যসহকারে শুনতে এবং গুরুত্ব দিতে হবে। তার মতামতও যুক্তিসঙ্গত এবং ফলপ্রসূ হতে পারে।
ছোট বলে পাত্তা না দিলে একসময় তার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি তাকে গুরুত্ব দিলে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং বড়দের প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকবে। আজকের শিশু আগামী দিনের যুবক , শিশু বয়সে শিষ্টাচারের শিক্ষা না পেলে যৌবন বয়সে তার ভিতরে এ অভ্যাস গড়ে উঠবে না। পরিবারে ছোট-বড় সবার মাঝে পারস্পরিক সালাম বিনিময়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা-মা, কারও বাবা-মা না থাকলে স্ত্রীকে বলে বের হোন। ছোটরা অবশ্যই বড় কাউকে না বলে বাইরে যাবে না। বাসায় ফেরার পর সবাইকে ছালাম দিন এবং খোঁজখবর নিন। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ হবে অন্যের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে ।
জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ততা থাকতেই পারে। ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, অন্ততপক্ষে দিনে একবার পরিবারের সঙ্গে খাওয়া প্রয়োজন।খাবার টেবিলে বয়োজ্যেষ্ঠদের খাবার উঠিয়ে দিন বা সাধাসাধি করুন। এতে মনে তিনি সুখ পাবেন। ভাববে বৃদ্ধ হলেও তারা সংসারে অপাঙক্তেয় নয়। তাদের স্বাস্থ্যের নিয়মিত খোঁজখবর নিতে হবে। এতে তারা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাববে।পারিবারিক কোনো বিষয়ে সবাই মিলে একমতে পৌঁছাতে চেষ্টা করুন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করুন। পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ কেন্দ্রিক যে জীবন গড়ে উঠে তা কিন্তু সাধারণত সুখ-শান্তি দিয়েই শুরু হয়।
এ সুখ-শান্তি বজায় রাখতে হলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর-পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। একজনের কাজ কর্মে অন্যজনকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে হবে।স্ত্রী সংসারের কাজ করতে করতে অস্থির যাবে আর স্বামী সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে হুকুম দিয়ে যাবে এটি ঠিক নয়। গৃহস্থালি কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করায় অগৌরবের কিছু নেই। এটি শুধু কাজ নয়, এটি স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। নিজের আত্মীয়স্বজন বা অন্যদের সামনে তাকে হেয় করা উচিত নয়।
পরিবারের কোনো আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এলে অনেকে উটকো ঝামেলা মনে করেন। মেহমান এলে তাদের সাদরে গ্রহণ করুন এবং যথাসম্ভব আপ্যায়নের ব্যবস্থা করুন। হাসিমুখে কথা বলুন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখুন। তাদের সঙ্গে বিনয়ীভাবে কথা বলুন এবং বিপদে-আপদে সহযোগিতা করুন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন। মেহমান এবং প্রতিবেশীর মাধ্যমেই কিন্তু আপনার পরিবারের ইমেজ বাইরে প্রচারিত হয়।

ব্যক্তি জীবনে বিনয়ী ও ভদ্র আচরণে অভ্যস্ত হোন। ভুল করলে ক্ষমা প্রার্থনা করুন- এতে লজ্জার কিছু নেই। প্রশংসা করুন যখন কেউ সেটা প্রাপ্য হয়। কারণ প্রশংসা পেতে সবাই ভালোবাসে। বস্তুনিষ্ঠ বিতর্ক করুন, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। নিজের মধ্যে শিষ্টাচারের গুণাবলি ধারণ করুন এবং তা নিজে ও নিজ পরিবারে অনুশীলন করুন। আমাদের সবার শিষ্টাচারই পরিবার এবং সমাজকে সুখময় ও শান্তিময় করে তুলবে ।
আমাদের পরিবারগুলোতে শিষ্টাচারের বর্তমান অব¯’া :- আমাদের পরিবারগুলো থেকে দিন দিন শিষ্টাচার লোপ পা”েছ। পরিবারের মধ্যে কোন নিয়ন্ত্রন নাই । স্ত্রী ,স্বামীর কথা শোনে না ,স্বামী স্ত্রীর কথা শোনে না । পুত্র বা কন্যা পিতা মাতার কথা শোনে না । কেউ কাউকে মানতে চায় না । ফলে পরিবারে সর্বদা অশানিÍ বিরাজ করে । যার ফলশ্রæতিতে পারিবারিক নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বিভীষিকাময় ও ভয়াবহ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশু এর শিকার হচ্ছে। অনেকেই এটা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের এই প্রিয় দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিবারে, শিশু ও অন্য ছেলেমেয়েদের ওপর পড়ছে।যেসব পরিবারের সন্তানেরা এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বড় হয়, তারা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সন্তানেরা তাদের মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এবং শরীরে আঘাত করে। কারণ, তারা এটা পরিবার থেকে শিখেছে এবং এটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ও সভ্যতাবিবর্জিত। ভবিষ্যতে এসব সন্তান তাদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেও অশান্তি এবং এই প্রকার আচরণ করবে। কিন্তু যদি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধাবোধ থাকত, তাহলে এসব পরিবারের সন্তানদের মধ্যেও ভালো আচরণ গড়ে উঠত। তারা পরিবার ও সমাজের সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করত, যেটা একটা ভালো ও উন্নত রাষ্ট্রের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করত।

পারিবারিক শিষ্টাচার রক্ষায় যুব সমাজের করনীয় :- পারিবারিক বন্ধন, শৃঙ্খলা সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখার জন্য পারিবারিক শিষ্টাচারের গুরত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নাই । শিষ্টাচার জিনিসটি আসলে হঠাৎ করে মানুষ আয়ত্ত করতে পারে না। এর জন্য দরকার হয় দীর্ঘদিনের একটি সুস্থ পরিবেশ ও অভ্যাস। এটা যেমন কেউ মায়ের পেট থেকেও শেখে না আবার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও হঠাৎ করে কেউ শিখতে পারেন না। তবে শিষ্টাচারের অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার শুরুটা হয় পরিবার থেকে। তারপরে কিন্ডারগার্টেনে। এরই ধারাবাহিকতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, পরিশেষে কর্মক্ষেত্রে। তাই যে কোন মূল্যে পারিবারিক শিষ্টাচারকে ধরে রাখতে হবে আর এ ক্ষেত্রে যুব সমাজকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে । যুব সমাজ তাদের সৃজনশীল মেধা ,জ্ঞান দক্ষতা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবার তথা সমাজের অনেক পরিবর্তন সাধন করতে পারে । আমাদের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াশং যুব । বাংলাদেশে বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের আওতায় রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬ শতাংশ যার সিংহ ভাগ হলো যুব, যাদের বয়স ১৮-৩৫ বছর। সুতারং আমাদের প্রতিটি পরিবারে রয়েছে এক বা একাধিক যুব/যুব নারী যারা পরিবর্তনের রুপকার । প্রতিটি পরিবারে যেন সত্য কথন, পরোপকার, ক্ষমা, দয়া-দানশীলতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা, ক্ষমা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, শালীনতা, বিনয়, ভদ্রতা ইত্যাদি বিশ্বজনীন গুণাবলী বিদ্যামান থাকে সে বিষয়ে পরিবারের প্রতিটি যুব সদস্যকে অগ্রীন ভূমিকা পালন করতে হবে । একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, পারিবারিক শিষ্টাচারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার । আর মানব সভ্যতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য জীবনের প্রতিটি স্তরে শিষ্টাচারের গুরত্ব অপরিসীম । যে সমাজে বা রাষ্ট্রে শিষ্টাচারের ঘাটতি রয়েছে সে সমাজ বা রাষ্ট্র ততবেশী বিশৃঙ্খল । একটা আদর্শ কল্যানমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে শিষ্টাচার ।
পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও ¯ি’তিশীলতা বজায় রাখার জন্য সকল স্তরে শিষ্টাচারের প্রচলন অব্যাহত রাখতে হবে । তা না হলে পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও ¯ি’তিশীলতা বজায় রাখা কঠিন । কারন শুধু আইন দিয়ে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নহে । মানুষ যদি আইন মানতে না চায় , তবে তাকে জোর করে বেশিক্ষন আইন মানতে বাধ্য করা যায় না । আইন মানার জন্য তার নিজের ভিতর থেকে উপলদ্ধির সৃষ্টি হতে হবে, আর সে উপলদ্ধির সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা , প্রয়োজন পারিবারিক শিষ্টাচার ।
অতএব পারিবারিক নির্যাতনের মতো সভ্যতাবিবর্জিত কাজ থেকে সবাইকে সরে আসতে হবে। আমাদের দেশকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দিতে হলে অবশ্যই পরিবারের শান্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

কর্মসংস্থান : যুব সমাজের প্রত্যাশা এবং বাস্তবতা ।

সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ । দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যামে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমরা অর্জন করি আমাদের বহুল প্রত্যাশিত স্বাধীনাতা । অগ্নিঝরা মার্চ এর সেই দিনগুলি প্রতিটি বাঙ্গালীকে অনুপ্রানিত করে নতুন করে শপথ নিয়ে দেশকে গড়ার ,দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার । আজ সময় এসেছে লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনাতকে অর্থবহ রুপ দেওয়ার । সময় এসেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সেনারবাংলা গড়ার । সেই সেনারবাংলা গড়ার জন্য প্রস্তুত আজকের যুব সমাজ ।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে যুবসমাজের ওপর। এদের আকাঙ্খক্ষা প্রবল। প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। এই যুবসমাজকে এদের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার স্ফুরণ ঘটানোর সুযোগ জাতি হিসেবে যদি আমরা করে দিতে না পারি, তবে এটি হবে আমাদের মানবসম্পদ অপচয়ের শামিল। তাই যেকোনো জাতির জন্য একটি বড় কাজ হচ্ছে, এদের মেধা বিকাশের উপযুক্ত সুযোগ করে দেয়া। একটি সুন্দর ও গর্বিত দেশ উপহার দেয়ার জন্য দেশের মাটি যুব সমাজকেই চায় সবচেয়ে বেশি করে। তাই যুবসমাজের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলা, যাতে এরা নিজেদেরকে যথাযোগ্য ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। দেশের অর্থনীতিকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানোর জন্য নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। একই সাথে তাদেরকে লিখতে, পড়তে, ভাবতে ও বিশ্লেষণ করতে জানতে হবে দেশের বিদ্যমান সমস্যগুলোকে; যাতে এরা সক্ষম হয় এসবের সমাধানসূত্র বের করতে। কারণ একটি দেশের সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করে এই যুবসমাজ নিজেদের কতটুকু যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারল, তার ওপর। ।
কমসংস্থান কোন পথে ———-
ছাত্র জীবন শেষে একজন যুবক চায় তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান ,যার সংগে জড়িত তার রুটি রুজি সামাজিক মান মর্যদা । একজন অভিভাবক ও অপেক্ষায় থাকে তার আদরের সন্তান লেখাপড়া শেষে সে নিজের কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে , সহযোগিতা করবে পরিবারকে ,পাড়া প্রতিবেশীকে ,আতœীয় স্বজনকে সমাজকে ,দেশকে । কিন্ত বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হচ্ছে ?
দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি । চাকরি না পাওয়ার ফলে নিজেদের পরিবারের গলগ্রহ ভাবতে ভাবতে তাঁদের মনে যে হতাশা ও গ্লানি জমে ওঠে, তা দুঃসহ। হতাশা তাঁদের মা-বাবাকেও ছাড়ে না। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ছেলের/মেয়ের বেকারত্ব ,তাদের মা-বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। উচ্চশিক্ষিত বেকারদের নিয়েও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত অনার্স-মাস্টার ডিগ্রিধারী লোকের দরকার আছে কি না, তা কেউ ভেবে দেখে না। প্রতিবছর হাজার হাজার যুবক-যুবতী মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে এসে কোথায় কী কাজ করবেন, সে চিন্তাও কেউ করে বলে মনে হয় না। দরিদ্র মা-বাবার কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আট বছর ধরে অর্নাস ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার জন্য লাখ টাকা ঘুষ দিতে প্রস্তুত, তবু চাকরি মিলছে না—আমার দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের জন্য এহেন করুণ দুর্দশায় আমরা কেন ও কী করে পৌঁছালাম, এর জন্য কারা দায়ী এবং এই দুর্দশা থেকে আমরা কীভাবে উদ্ধার পেতে পারি, তা নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া জরুরি

৯ জানুয়ারি /২০১৯ ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে নবগঠিত সংস্থা সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ (সিডিইআর তথা সিডার), ‘কর্মসংস্থান পর্যালোচনা ২০১৭’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে দুটি চিত্র উঠে এসেছে, যাকে খুবই অস্বস্তিকর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ দুটি হলো দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। তাঁরা কর্মবাজারে নেই, শিক্ষায় নেই, প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। এঁদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের তরুণদের নিট নামের একটি সূচক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যার মানে হলো ‘নট ইন এমপ্লয়মেন্ট, এডুকেশন অর ট্রেনিং’।
বাড়ছে শিক্ষার হার। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। প্রতিবছর যতসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষ করে শ্রমবাজারে পা রাখছেন, সেই হারে সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থান। সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা এবং প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতা অর্জিত না হওয়ায় এসব শিক্ষিতরা উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারছেন না। আবার উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর যে কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন তারা। ফলে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। রাষ্ট্র দক্ষ জনসম্পদ গড়তে শিক্ষার পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও এসব শিক্ষিত যুবসমাজ পরিবার ও দেশের কোনো কাজেই আসতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ কাতারে। আর গড় বেকারত্বের তুলনায় শিক্ষিত বেকারের হার এ দেশে দ্বিগুণেরও বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশে সব সময়ই বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের নিচে দেখানো হয়ে থাকে , যা অনেক উন্নত দেশ এর তুলনায় কম । কারণ এ দেশে একজন মানুষ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাঁকে কর্মজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি)বেকারত্বের হার কমিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ দেশে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে শুধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে (ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১২টি অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) ¯স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৫ লাখ ২ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হন ৭১ হাজার ৯০৫ জন। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা প্রায় সাড়ে চার লাখ ছাড়াও রয়েছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থী। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি। প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা এসব শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক থাকছেন বেকার। বাকিদের অধিকাংশের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ কর্তৃক পরিচালিত ‘কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার পর্যালোচনা ২০১৭’ শীর্ষক সমীক্ষা মতে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের (¯স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই তুলনায় কম শিক্ষিতদের বেকারত্বের হার কম। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বেকারত্বের হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্কিলস ফর টুমরোস জবস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের কলেজগুলো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ৭০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকে এবং বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৩ লাখের। কাজ পাচ্ছে না প্রায় আট লাখ কর্মক্ষম মানুষ। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এর মতে, এখানে যত শিক্ষিত, বেকারত্ব তত বেশি। অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিতরা যে কোনো কাজ নির্দ্বিধায় করতে পারে। কিন্তু এমএ-বিএ পাস করে কেউ চায়ের দোকান দেবে না, রিকশাও চালাবে না। আবার শিক্ষিতদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মও সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নিজে কিছু করার মতো দক্ষতাও তৈরি হচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চাকরি সৃষ্টি করলেই হবে না, যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, দেশের শিক্ষা খাত শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। শিল্প যে ধরনের শিক্ষা ও দক্ষতার কর্মী খুঁজছে, তা মিলছে না। ফলে বিদেশ থেকে লোক এনে কাজ করাতে হচ্ছে।

একটি জাতির সাফল্যধারা অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে হলে দেশটির সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- যুবসমাজকে উপযুক্ত শিক্ষা-প্রশিক্ষায় শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলার সহজ সুযোগ সৃষ্টি করা। তাদের সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে হালনাগাদ আধুনিক জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় যথার্থ অর্থেই জ্ঞনবান ও প্রজ্ঞাবান। ভুললে চলবে না, যুবকাল হচ্ছে জীবনের বসন্তকাল। স্বপ্ন দেখা ও আবিষ্কারের কাল। তাই যুবসমাজ পারে সব বাধা ঠেলে জাতিকে উন্নতির র্স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিতে। এরা পারে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে পৌঁছাতে। কারণ, এরা সমাজের লড়াকু শ্রেণী। এরাই পারে লড়াই করে সমাজের যাবতীয় অসঙ্গতি, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও শোষণ দূর করে জাতিসত্তার বিকাশ ঘটাতে। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত একটি পরিবেশ। নইলে এরা ভালো নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে উঠতে পারবে না। ফলে এরা কখনোই কোনো দ্বন্দ্ব-সমস্যা মোকাবেলায় ইতিবাচক সাড়া দিতে সক্ষম হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি পারছি আমাদের যুবসমাজের সামনে সেসব সুযোগ হাজির করতে ? পারছি কি তাদের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে ? বিবেকবান হলে বলতেই হবে, এর জবাব নেতিবাচক। তথ্য-পরিসংখ্যান তো তেমনটিই সমর্থন করে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের আওতায় রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬ শতাংশ যার সিংহ ভাগ হলো যুবক—যাদের বয়স ১৮-৩৫ বছর। তাদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের সংখ্যা (বিবিএ, এম.বি.এডিগ্রিধারী) অনেক—যারা কর্মসংস্থানের অপেক্ষায় দিন গুনছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতে চাকুরির বাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ, আবার সুযোগ সংকীর্ণ। ফলে আতœ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি খোলা আছে তাদের জন্য যারা উদ্যোগকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চায়। কিন্তু পরিবেশ সহায়ক কি? যদি না থাকে তবে তৈরি করতে হবে। এর জন্য সরকারের নির্দেশনায় সরকারি/বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান গুলো সহজ শর্তে তহবিল জোগানোর ব্যবস্থা করবে।কমাতে হবে প্রশাসনিক জটিলতা। পাশাপাশি বাড়াতে হবে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ—আর এ প্রশিক্ষণ প্রদানের বড় কাজটি করেছ সরকারী প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর । পাশাপাশি টি,টি,সি , জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো , টি,এস,সি , সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ।

সম্ভবনার নতুন দিগন্ত
নতুন সহস্রাব্দে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান শ্রমশক্তি বলে মনে করা হ”েছ ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতিহারে আগামী ৫ বছরে ১কোটি ৫০ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসং¯’ান লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন ।
আই,টি খাত – কর্মসং¯’ানের বড় খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আই,টি খাত দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বেসিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হ”েছ। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হ”েছ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের টার্গেট বা লক্ষ্য ছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন রপ্তানি আয় করা। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করা। সফটওয়্যার রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়াসহ, এখাতের উন্নয়নের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে।
আমাদের সফটওয়্যার ১৮০টি দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের সফটওয়্যার আয়ারল্যান্ডের পুলিশ ব্যবহার করে, সিকিউরিটি জন্য আমাদের সফটওয়্যার আছে, মোবাইল অপারেটররা ব্যবহার করছে। এটার গতি অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি।’দিন দিন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিনির্ভর হ”েছ, এ কারণে ২০৩০ সালে আইটি সেক্টরে ২০ লাখ দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আর উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। একটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালিত হবে তখনই, যখন পরিচালনার ভার থাকবে দক্ষ কর্মীর হাতে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা, প্রেষণা, প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ।
আউটসোসিং/ফ্রিল্যানন্সিং – – বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাত গুলোর অন্যতম ফ্রি ল্যানন্সিং । ঘরে রসে আয় করার সহজ রাস্তা ,ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক এই সেক্টরকে তাদের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে ।ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজের একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতের উদ্যোক্তারা ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন। এ খাত থেকেও অর্থ আয়ের নতুন নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।
এন্টারপ্রেনার ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্সিংকেও পুরোপুরি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। এখানে প্রকল্প ভিত্তিতে একের পর এক কাজের সুযোগ থাকে। যেকোনো জায়গায় বসে বিশ্বের যেকোনো কাজ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারের কাজের ওপর ছড়ি ঘোরানোর কেউ থাকে না বলে প্রতি বছর এখাতে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বৈশ্বিক ধারা (ট্রেন্ড) প্রকাশ করেছে ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ লেনদেনের জনপ্রিয় অনলাইন মাধ্যম পেওনিয়ার। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গিগ অর্থনীতির সূচক প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ। সে কারণে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে।২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় বাংলাদেশের ঠিক ওপরে আছে ভারত। বাংলাদেশের পর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রাশিয়া ও ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অবস্থান করছে সার্বিয়া।। এ ক্ষেত্রে অনেকেই সফল হয়েছেন। যেহেতু এ খাতটি বড় হচ্ছে তাই এখাতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে ।

পর্যাটন খাত – পর্যটন খাতের তর“ণদের কর্মসং¯’ান দেশে গুর“ত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসং¯’ান বাড়াতে পর্যটন খাতের বিকাশ অত্যন্ত জর“রি। একজন পর্যটকের আগমনে বিভিম্নভাবে ১১ জনের কর্মসং¯’ানের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পর্যটক আগমন মানেই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়া। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্র বাড়ে। অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার প্রবৃত্তি মানুষের চিরন্তন- এই ধারণা থেকেই পর্যটনের উদ্ভব। তাই পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবেই। আমাদের লক্ষ্য হ”েছ, পর্যটকদের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের জাতীয় আয়ের ৬২ ভাগ আসে পর্যটন খাত থেকে। মালদ্বীপের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে ট্যুরিজম খাত থেকে। এশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া পর্যটন শিল্পে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের এ রকম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়, কুমিল্লার ময়নামতিসহ হাজারো প্রাচীন ঐতিহ্যে উজ্জ্বল দেশ বাংলাদেশ । পর্যটন খাতের তর“ণদের কর্মসং¯’ান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ।
ওষুধ শিল্পখাত – ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ আর ওষুধ আমদানিকারক দেশ নয়, রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি উন্নত দেশগুলোর বিখ্যাত সনদ লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ দেশে যা”েছ বাংলাদেশের ওষুধ। এই খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সংশিষ্টরা বলছেন, বিগত চার দশকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিদেশে যা”েছ। বাংলাদেশে একসময় বার্ষিক ৮০ শতাংশ ওষুধ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন আমদানি হয় মাত্র ৩ শতাংশ। একসময় বিদেশি কোম্পানিগুলো এ দেশের ওষুধের বাজারের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত। সেখানে এখন তারা নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ৭ শতাংশ। অদূর ভবিষ্যতে এ হার আরো কমে আসবে বলে মনে করেন আমাদের দেশের সচেতন মহল। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর ওষুধ রফতানি

বাড়ছে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে এ খাত বিকাশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওষুধ শিল্পে তর“ণদের কর্মসং¯’ান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ।
আধুনিক ধারার মৎস চাষ :- মাছ চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুকুর,খাল বিল, জলাশয় , ডোবা নালা যা ছাড়া মাছ চাষ কল্পনা করা যায় না । প্রযুক্তির অগ্রগতির সংগে সংগে এখন পদ্ধতির ও পরিবর্তন হয়েছে । মাছ চাষের জন্য এখন আর পুকুর,খাল বিল, জলাশয় , ডোবা নালার প্রয়োজন হয় না । আধুনিক পদ্ধতিতে ঘরের ভিতর (রাস) এবং বায়োফ্লকে পদ্ধতিতে মাছের চায় করা হ”েছ । জঅঝ (রাস) মূলত ঘরের ভিতরে ট্যাংকের মধ্যে অধিক ঘনত্বে এবং একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়া। যেখানে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত জলাশয় বা পানি নেই, সেখানেও এই পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ খুবই লভজনক কিন্তু এর প্রধান সমস্যা হল অধিক বিনিয়োগ । এই পদ্ধতিতে দেশী শিং, দেশী-বিদেশী মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, টেলাপিয়া, পাংগাস, চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ পানিতে সাস্থ সম্মত মাছ চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে পুকুরের পরিবর্তে একাধিক বিভিন্ন আকৃতির ট্যাংক ব্যাবহার করে মাছ চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় ব্যাবহারের জন্য বিভিন্ন রকম ফিল্টার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এই পদ্ধতি যেখানে খাল বিল বা উন্মুক্ত জলাশয় নাই বিশেষ করে শহরের বেকার যুবকরা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারে ।এখানে বিনিয়োগ একটু বেশী হলে ও ঝুকি কম ।
বর্তমানে দেশের এ বিপুল বেকার যবদের সরকারী ভাবে চাকুরী প্রদান করা সম্ভব নহে কারন সরকারের বর্তমান পদের কয়েক গুন বেকার জনসংখ্যা রয়েছে । তাই বেসরকারী এবং ব্যক্তিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে । আমরা যদি প্রতিটি বেকার যুবকের কর্মসং¯’ানের ব্যব¯’া করতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ মালেশিয়া বা সিংগাপুরের কাতারে সামিল হবে । তবেই না বাসÍবায়ন হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় : আমাদের যুব সমাজ।

সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ । দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যামে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমরা অর্জন করি আমাদের বহুল প্রত্যাশিত স্বাধীনাতা । অগ্নিঝরা মার্চ এর সেই দিনগুলি প্রতিটি বাঙ্গালীকে অনুপ্রানিত করে নতুন করে শপথ নিয়ে দেশকে গড়ার ,দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার । আজ সময় এসেছে লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনাতকে অর্থবহ রুপ দেওয়ার । সময় এসেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সেনারবাংলা গড়ার । সেই সেনারবাংলা গড়ার জন্য প্রস্তুত আজকের যুব সমাজ ।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে যুবসমাজের ওপর। এদের আকাঙ্খক্ষা প্রবল। প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। এই যুবসমাজকে এদের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার স্ফুরণ ঘটানোর সুযোগ জাতি হিসেবে যদি আমরা করে দিতে না পারি, তবে এটি হবে আমাদের মানবসম্পদ অপচয়ের শামিল। তাই যেকোনো জাতির জন্য একটি বড় কাজ হচ্ছে, এদের মেধা বিকাশের উপযুক্ত সুযোগ করে দেয়া। একটি সুন্দর ও গর্বিত দেশ উপহার দেয়ার জন্য দেশের মাটি যুব সমাজকেই চায় সবচেয়ে বেশি করে। তাই যুবসমাজের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলা, যাতে এরা নিজেদেরকে যথাযোগ্য ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। দেশের অর্থনীতিকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানোর জন্য নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। আর এ দক্ষ জন শক্তি গড়ে তোলার ল্ক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতিহারে ঘোষনা ছিল এরুপ “ তারুন্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ” তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ২০২১ সালের মধ্যে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’, একটি দক্ষ ও কর্মঠ যুবসমাজ তৈরি করতে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘কর্মঠ প্রকল্প’ এবং প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিবে আওয়ামী লীগ। কারণ একটি দেশের সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করে এই যুবসমাজ নিজেদের কতটুকু যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারল, তার ওপর। ।
আন্দোলন সংগ্রামে অধিকার আদায়ে আমাদের যুব সমাজ – ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৫২ এর মাতৃভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব স্বপ্নের সূচনা তরুণদের চোখে-মুখেই ধরা দিয়েছে আলোর ঝলকানি হয়ে। মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সৈয়দ নিসার আলী ওরফে তিতুমীর, জ্বলে উঠেছিল এই তারুণ্যের শক্তি নিয়েই; যাদের বঞ্চিত বুকে ফেনিয়ে উঠেছিল উপনিবেশের বেঁধে দেওয়া পুঞ্জীভূত অভিমান। ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান ,৬ দফার আন্দোলন সর্বশেষ ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অজিত আমাদের স্বাধীনাতা ।

বর্তমান সরকারের গৃহীত বাস্তবমুখী পদক্ষেপ সমূহ-

শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি- স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’-এর অধীনে “স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ” শ্রেণীর তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপোযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’-এর অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে তা দূর করতে নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।
বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
তরুণ যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা’ আওয়ামী লীগের দেয়া এই অঙ্গীকারে দেশের তরুণ সমাজে নতুন উদ্দীপনা জেগেছে।বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতে চাকুরির বাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ, আবার সুযোগ সংকীর্ণ। ফলে আতœ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি খোলা আছে তাদের জন্য যারা উদ্যোগকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চায়। তাদের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ আর এ প্রশিক্ষণ প্রদানের বড় কাজটি করেছ সরকারী প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর । পাশাপাশি টি,টি,সি , জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো , সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর ।
আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি

তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক এর মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রণয়ন করা হবে একটি যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’।

ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি – বেকারত্বের করাল গ্রাসে পতিত যুবসমাজকে বের করে নিয়ে আসতে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের যে কাজ অগ্রগায়ণ করা হচ্ছে তার সাতটি পর্ব থেকে ইতিমধ্যে ৩৭ জেলার ১২৮টি উপজেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৫ জন যুবককে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে; যার ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৫০ জন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় নিযুক্ত হয়েছেন আর অস্থায়ী কর্ম শেষে তাদের ৮৩ হাজার ১৪ জন আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন।
সম্ভবনার নতুন দিগন্ত
বেকারমুক্ত শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯০টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি জোনের ভূমি, কলকারখানা, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। ১২টি ইকোনমিক জোনে দেশি-বিদেশি অন্তত ২১টি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে। সেসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এসব জোনে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশ পুরোপুরি বেকারমুক্ত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। জোনগুলোয় গড়ে ওঠা শিল্প বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই সারা দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে মনে করে বেজা। এসব জোনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেজার ধারণা, শুধু মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরেই অন্তত ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
নতুন সহস্রাব্দে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান শ্রমশক্তি বলে মনে করা হচ্ছে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতিহারে আগামী ৫ বছরে ১কোটি ৫০ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন ।

আই,টি খাত – – কর্মসংস্থানের বড় খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আই,টি খাত দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বেসিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হ”েছ। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হ”েছ।
আমাদের সফটওয়্যার ১৮০টি দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের সফটওয়্যার আয়ারল্যান্ডের পুলিশ ব্যবহার করে, সিকিউরিটি জন্য আমাদের সফটওয়্যার আছে, মোবাইল অপারেটররা ব্যবহার করছে। এটার গতি অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি।’দিন দিন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিনির্ভর হ”েছ, এ কারণে ২০৩০ সালে আইটি সেক্টরে ২০ লাখ দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে আমাদের যুবরা আইটি খাতে অনেক সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । একেবারে সংক্ষেপে যাদের কথা না বললে তারা হচ্ছে টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ,জনপ্রিয় ওয়েব সাইট সহ প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ করিম ,খান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান সহ অনেকে ।

আউটসোসিং/ফ্রিল্যানন্সিং – – বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাত গুলোর অন্যতম ফ্রি ল্যানন্সিং । ঘরে রসে আয় করার সহজ রাস্তা ,ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক এই সেক্টরকে তাদের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে ।ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজের একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। এন্টারপ্রেনার ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্সিংকেও পুরোপুরি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গিগ অর্থনীতির সূচক প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ। সে কারণে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে।২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় বাংলাদেশের ঠিক ওপরে আছে ভারত। বাংলাদেশের পর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রাশিয়া ও ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অবস্থান করছে সার্বিয়া।। এ ক্ষেত্রে অনেকেই সফল হয়েছেন। যেহেতু এ খাতটি বড় হচ্ছে তাই এখাতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে ।
পর্যাটন খাত – পর্যটন খাতের তর“ণদের কর্মসং¯’ান দেশে গুর“ত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসং¯’ান বাড়াতে পর্যটন খাতের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। একজন পর্যটকের আগমনে বিভিম্নভাবে ১১ জনের কর্মসং¯’ানের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পর্যটক আগমন মানেই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়া। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়, কুমিল্লার ময়নামতিসহ হাজারো প্রাচীন ঐতিহ্যে উজ্জ্বল দেশ বাংলাদেশ । পর্যটন খাতের তর“ণদের কর্মসং¯’ান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ।
ওষুধ শিল্পখাত — ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ আর ওষুধ আমদানিকারক দেশ নয়, রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি উন্নত দেশগুলোর বিখ্যাত সনদ লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ দেশে যা”েছ বাংলাদেশের ওষুধ। এই খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সংশিষ্টরা বলছেন, বিগত চার দশকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে | বাংলাদেশে একসময় বার্ষিক ৮০ শতাংশ ওষুধ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন আমদানি হয় মাত্র ৩ শতাংশ। ওষুধ শিল্পে তর“ণদের কর্মসং¯’ান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ।
আধুনিক ধারার মৎস চাষ :- মাছ চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুকুর,খাল বিল, জলাশয় , ডোবা নালা যা ছাড়া মাছ চাষ কল্পনা করা যায় না । প্রযুক্তির অগ্রগতির সংগে সংগে এখন পদ্ধতির ও পরিবর্তন হয়েছে । মাছ চাষের জন্য এখন আর পুকুর,খাল বিল, জলাশয় , ডোবা নালার প্রয়োজন হয় না । আধুনিক পদ্ধতিতে ঘরের ভিতর (রাস) এবং বায়োফ্লকে পদ্ধতিতে মাছের চায় করা হ”েছ । জঅঝ (রাস) মূলত ঘরের ভিতরে ট্যাংকের মধ্যে অধিক ঘনত্বে এবং একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়া। যেখানে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত জলাশয় বা পানি নেই, সেখানেও এই পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ খুবই লভজনক কিন্তু এর প্রধান সমস্যা হল অধিক বিনিয়োগ । এই পদ্ধতিতে দেশী শিং, দেশী-বিদেশী মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, ‡Zলাপিয়া, পাংগাস, চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ পানিতে সাস্থ সম্মত মাছ চাষ করা হয়। এই পদ্ধতি যেখানে খাল বিল বা উন্মুক্ত জলাশয় নাই বিশেষ করে শহরের বেকার যুবকরা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারে ।
বর্তমানে দেশের এ বিপুল বেকার যুবদের সরকারী ভাবে চাকুরী প্রদান করা সম্ভব নহে কারন সরকারের বর্তমান পদের কয়েক গুন বেকার জনসংখ্যা রয়েছে । তাই বেসরকারী এবং ব্যক্তিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে । আমরা যদি প্রতিটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যব¯’v করতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ মালেশিয়া বা সিংগাপুরের কাতারে সামিল হবে । তবেই না বাসÍবায়ন হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।
তথ্য সূত্র- সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮,জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশনা সমূহ ।

অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ লাভবান হবে এমন একটি ফর্মুলা বের করতে ভারত সম্মত রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার দেশ অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর। ভারত থেকে আমাদের দেশে ৫৩টি নদী প্রবেশ করেছে। দেশের সাধারণ মানুষ জানে- আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী তো নয়ই, বরং একটা নদীর জীবন রক্ষার নূ্যনতম পানিও উজানের দেশ থেকে পাওয়া যায় না। জানামতে, গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটা চুক্তি হলেও তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে আর তিস্তা নদীর পানি চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চলমান। এমতাবস্থায় ভারত অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর হলে দায়টা বাংলাদেশের ওপর পড়ে। জনগণ জানে না আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের দেশের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর জন্য কী কী পরিকল্পনা বিদ্যমান? আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী নূ্যনতম কত পানি নদীর জীবন রক্ষার জন্য, পরিবেশ রক্ষার জন্য, নৌপথ ব্যবহারের জন্য, কৃষিকাজে সেচের জন্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য, নিজেদের ব্যবহারের জন্য আমরা পেতে পারি? নদীতে পানির প্রাপ্যতার সঙ্গে প্রয়োজনের সমন্বয়ই সমস্যার সমাধান।

ভারত উজানের দেশ হওয়ায় একতরফাভাবে নদীর পানি প্রত্যাহার করেই চলেছে। তারা অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর হওয়ার পরও একতরফা পানি প্রত্যাহার থেকে কোনো সময় সরে আসেনি। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে গঙ্গা নদীর পানি প্রত্যাহারের ফল নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন হচ্ছে না। গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে টালবাহানা করতে আলোচনার প্রয়োজন পড়ছে না। টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে মেঘনা-সুরমা নদীর পানি প্রত্যাহারের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। অ্যাকুইডাক্ট বা কৃত্রিম পানি প্রণালি তৈরি করে মহানন্দার সম্পূর্ণ পানি প্রত্যাহার করে নিতে আলোচনার প্রয়োজন নেই। কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই ভারতজুড়ে নদীর আন্তঃসংযোগ নিয়ে। তবে আলোচনার প্রয়োজন ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখে চীনের বিশাল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মাথাব্যথা না থাকলেও আমরা জানি চীনা উদ্যোগ বিষয়ে আলোচনা না করার অর্থ সাপের লেজে পা দেওয়া।

অভিন্ন নদী নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অভিন্ন নদী গঙ্গায় ফারাক্কা নির্মাণকালে ভারত-পাকিস্তান যে আলোচনা হয়, সেখানে পানির চাহিদা নিয়ে এক প্রকার ছেলেখেলা করা হয়। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প সম্পর্কে ভারত সরকারকে অবহিত করে এবং দুই হাজার কিউসেক পানির চাহিদার কথা জানায়। দুই দেশের মধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক বসে নয়াদিল্লিতে ১৯৬০ সালের জুন মাসে। ততদিনে ওয়াপদা চালু হয়ে গিয়েছে। পানি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পানি বিদ্যুৎ অথরিটি কাজ করছে। সেই বৈঠকে তখনকার পানি চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে তিন হাজার কিউসেকে। বিশেষজ্ঞরা এভাবেই ধারাবাহিকভাবে পানির চাহিদা বাড়িয়ে যান। ১৯৬৮ সালের মে মাসে নয়াদিল্লির সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এপ্রিল মাসের জন্য চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার কিউসেক। আমাদের বর্তমান প্রস্তুতিও এমন পর্যায়ে আছে কি-না ভেবে দেখা জরুরি।

ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের পাশাপাশি আমাদের ‘আশু সমস্যার আশু সমাধান’-এর নীতি নদীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে একনেক সভায় বলেছেন, এখন থেকে নদীতে আর স্লুইসগেট নির্মাণ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। নদীমাতৃক এই দেশটার প্রাণ নদীগুলোতে স্লুইসগেট নির্মাণ করে নদীর জীবন সংকটাপন্ন করে তোলা হয়েছে, তা অনুধাবন করে এমন নির্দেশ প্রদান করার জন্য। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেই ছোট স্লুইসগেটগুলোরও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়নি। প্রয়োজনের তুলনায় ছোট ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সবুজ বিপ্লব, গোলাপি বিপ্লব, স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভরাট ও দখল, দূষণ, যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদি নানাবিধ কারণও নদী ধ্বংসে কম ভূমিকা রাখেনি।

সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের অভিন্ন নদীগুলোর জীবন রক্ষায় কী কী উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন তার একটা রূপরেখা তৈরি করে রাখতে পারে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে কেউই চায় না বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অতীতের মতো গঙ্গার পানি নিয়ে আলোচনার সময় যা করেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করুক। তাই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমরা যাতে চাহিদার যৌক্তিকতা যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারি তার প্রস্তুতি রাখা জরুরি। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, উজানের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের নদীগুলো গভীরতা হারিয়ে ফেলেছে, নদীর ধারণক্ষমতা কমে গেছে। প্লাবনভূমির কথা ভুলে গিয়ে নদীর মূল প্রবাহভূমি দখল ও ভরাটের মহাযজ্ঞ দেশব্যাপী চলেছে। তাই ইহকালে করার কোনো সম্ভাবনা নেই জেনেও ভারত যেহেতু অভিন্ন নদী সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর, তাই আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে তারা যদি পানি দিয়ে দেয় তাহলে দেশের অবস্থা কী হবে তা অনুমান করতেও ভয় হয়। সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু ভেবে দেখা প্রয়োজন। যদিও যে একটা মাত্র নদীর পানি চুক্তি হয়েছে, সেখানেও বাংলাদেশকে অনৈতিকভাবে কম পানি সরবরাহ করে বঞ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের নদীতে চাহিদামতো পানি না পাওয়ার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, দেশের নিম্ন বদ্বীপে প্রায় ২০ লাখ টন পলি জমা হচ্ছে আর উচ্চ বদ্বীপে গাছ মরে যাচ্ছে ও নদী গভীরতা হারাচ্ছে। পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে, মরুকরণের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ও নৌচলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, জনস্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং পানির মান কমে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গও এমন প্রভাবের বাইরে নেই। তাই দেশের সাধারণ মানুষের ভাবনায় আসতেই পারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলে গেছেন তা কথার কথা মাত্র। বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা থাকলে এমন রসিকতা তিনি করতেন বলে মনে হয় না। তবে এই রসিকতা আমাদের আন্তরিক করে তুলতে পারে। আমরা নিজেদের চাহিদার ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারি। সোচ্চার হওয়ার জন্য, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে গতিশীল ও দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তত্ত্বাবধানে নদী-সংশ্নিষ্ট ১৫টি মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে নদীর সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণের একটা সুপারিশমালা তৈরি করতে পারে। এই সুপারিশের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করতে পারে দেশের সব বিশেষজ্ঞকে সমন্বয় করে। এখানে আমাদের ভুল পরিকল্পনাগুলোকে চিহ্নিত করে তারও সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের আরও মনে রাখা দরকার, উজানের দেশ ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করেই চলেছে। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা পেতে ভারতের সঙ্গে ৪০ বছরের ওপর সময় ধরে আলোচনা চলছে। ইতিবাচক ফল এখনও কিছু হয়নি। ভারত নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতানৈক্যের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশকে ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত রেখেছে। পাশাপাশি গজলডোবায় তিস্তা নদীর বাঁধই শুধু নয়, এ বাঁধের মাধ্যমে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ ভাঙন ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গজলডোবা বাঁধের ভাটিতে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এক কিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় এলাকায় সুপরিকল্পিতভাবে ৫টি স্পার নির্মাণ করেছে। বিশ্বের অনেক নদী অভিন্ন। এক নয়, একাধিক দেশ নিয়ে প্রবাহিত। এ দেশগুলো সম্মিলিতভাবে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছে। অথচ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তিস্তা নদীর মতো করেই আমাদের অন্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। বর্তমানে তারা হয়তো এভাবেই অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষই লাভবান হবে এমন একটা সমাধানসূত্র বের করতে সম্মত হয়েছে। এভাবেই অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে তারা বদ্ধপরিকর। আমাদের তিস্তা নদীর পাশাপাশি তিস্তা সেচ প্রকল্পও এখন হুমকির মুখে। ৫৩টি নদীর সবগুলোরই কমবেশি একই অবস্থা। মহাজোট সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। দেশে প্রবাহিত সব অভিন্ন নদীকে বাঁচাতে মহাজোট সরকার এই সুসম্পর্ককে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকভাবে ব্যবহার করবে, এটাই কাম্য। যত তাড়াতাড়ি সব নদী নিয়ে আলোচনা শুরু করা হবে, ততই মঙ্গল। আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে নূ্যনতম পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা না গেলে দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ