এতো লেখাপড়া আর শিক্ষা যাচ্ছে কোথায়?

কয়েকমাস আগের একটা ঘটনার কথা অনেকেই ভুলে গেছেন। ঘটনাটি সিলেটের। কোনো এক পেপারে দেখেছিলাম যে, “যৌতুকের জন্য স্ত্রীর জিহ্বা ও পায়ের রগ কর্তন!” কিন্তু এরকম যৌতুক কি শুধু অশিক্ষিতরাই চাচ্ছে? নাকি শিক্ষিতরাও যৌতুক চায় ও নির্যাতন করে। যারা লেখাপড়া করেনি, তারা সরাসরি যৌতুক নেয় আর যারা শিক্ষিত তারা কৌশলে এবং গিফট হিসেবে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে যৌতুক নেয়। অনেকে বলেন যে, যৌতুকের জন্য নাকি তেমন কোনো কড়া আইন নেই। কিন্তু এর জন্য কড়া আইন থাকলেও তার তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না।

স্কুল লেভেলে প্রায় সব শিক্ষার্থীই যৌতুক-বিরোধী রচনা পড়ে। আবার এর কুফল নিয়েও সমাজ বইতে পড়ে। কিন্তু তারা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে বিয়ের পর ঠিকই যৌতুক চায়। দৈনিক সংবাদপত্রগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, প্রায়ই যৌতুকের যেসব খবর পেপারে ছাপা হচ্ছে, তারমধ্যে অধিকাংশ স্বামীই শিক্ষিত। তাহলে এতো যৌতুক-বিরোধী লেখাপড়ার শিক্ষা কোথায় গেলো?

দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যৌতুক নিয়ে অত্যাচারের খবর প্রায়ই পাওয়া যায় কিন্তু শাস্তি পাওয়ার খবর বছরে একটাও চোখে পড়ে না! প্রায়ই খবরে দেখা যায় যে, অমুককে যৌতুকের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কোনো শাস্তির খবর পাওয়া যায় না। তারপর কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যৌতুক-বিরোধী ফিচার বের হয়। বিভিন্ন সংস্থা যৌতুক-বিরোধী গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে এবং আয়োজনে খাওয়া-দাওয়া করে বাসায় চলে যায়। এরপর আর এই গোলটেবিল মিটিং এবং খাওয়া-দাওয়া কোনো কাজে আসে না।

এ তো গেলো শুধু যৌতুকের ক্ষেত্রে আমাদের বইয়ের ব্যাগ ভারি করা শিক্ষার সফল (বাস্তবে বিফল!) উদাহরণ। কেউ যদি নিয়মিত টাউন সার্ভিসে যাওয়া-আসা করে থাকেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, কোট-প্যান্ট-টাই পরা এবং অফিসের ফাইল হাতে অনেক ভদ্রলোক(!) হেলপারকে ভাড়া দেওয়ার সময় তুই করে বলে এবং ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির সময় হেলপারকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালিগালাজ দেয়। যদিও এই গালিগালাজ এখন রাস্তাঘাটে গাড়ির হেলপার থেকে শুরু করে শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা হরহামেশা ব্যবহার করে। তার মানে কি এসব লেখাপড়া জানা চাকরি-বাকরি করা মানুষ কি লেখাপড়া শেষ করে শেষ পর্যন্ত এই গালি-গালাজ শিখলো? এমনকি ক্রিকেট খেলায় কোনো খেলোয়াড় খারাপ খেললে তাকে অনেক দর্শক যেভাবে বকা আর গালিগালাজ দেয় মনে হয় যেন, খেলোয়াড়দেরকে গালি-গালাজ করা দর্শকদের নৈতিক অধিকার। তাহলে সবমিলিয়ে আপনারাই বলুন যে, এতো লেখাপড়া আর শিক্ষা যাচ্ছে কোথায়?

বাংলাদেশের বাজেট ও অতিদারিদ্র্য নিরসন

ফিবছর জাতীয় বাজেট তৈরি করা হয়। বাজেটে অবশ্যই সরকারের আয় ও ব্যয় বরাদ্দের নানা হিসাব-নিকাশ থাকে। তবে একগুচ্ছ মৌলিক লক্ষ্য এবং বিভিন্ন খাতে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে সেই হিসাব-নিকাশ বিন্যাস করা হয়। তাই বাজেটের একটি অংশে দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় লক্ষ্যের আলোকে আসন্ন বছরে প্রয়োজনীয় নীতি ও কৌশলগত পরিবর্তন বা সংযোজন-বিয়োজন নির্দিষ্ট করতে হয়। আর সরকারের রাজস্ব আহরণ এবং বরাদ্দ বিন্যাস সেই আঙ্গিক থেকে বাস্তবতা ও প্রয়োজনের আলোকে সাজাতে হয়। তবে অনেক চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবছরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় থাকে। কিছু প্রকল্প হয়ত আগামী বছর শেষ হয় আবার কিছু হয় না। দেখা যায়, প্রত্যেক বাজেটে বরাদ্দের একটি বড় অংশ চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অব্যাহত বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার ধারাবাহিকতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলোতে আগে ততটা নজর দেওয়া হয়নি। এছাড়া কিছু নতুন বিষয়ও প্রতিবছর সামনে আসতে পারে, আসে। তাই, একদিকে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনুকূল চলমান কর্মকাণ্ড প্রবাহ আরো কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় এবং অপরদিকে সম্ভাবনাময় নতুন বা এ যাবত্ অবহেলিত কিছু জরুরি বিষয়ের ক্ষেত্রে নতুন বা বর্ধিত প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। যখন একটি অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি সাধন করতে থাকে তখন সেই ধারাবাহিকতা আরো সুসংহত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্তমানে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি সাবলীল ও উল্লেখযোগ্য মাত্রায়, সামাজিক বিভিন্ন খাতেও (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য নিরসন) অগ্রগতি অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে অধিক। আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের বাজেটে নীতি-কাঠামোগত বিবেচনা এবং বরাদ্দ-বিন্যাস এমনভাবে হতে হবে যাতে চলমান অর্থনৈতিক-সামাজিক এগিয়ে চলা আরো সুসংহত ও সাবলীল হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নতুন বা এ যাবত্ নজর দেয়া হয়নি বা কম নজর দেয়া হয়েছে এমন সব বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

সাধারণত বাজেট আলোচনায় একদিকে সরকারের অর্থ সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং অপরদিকে প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং মোটা দাগে খাতওয়ারী (যথা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, কৃষি, শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি) বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলো অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় আমি একটু ভিন্ন আলোচনা করতে চাই। বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে বিগত সাত/আট বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সর্বজনবিদিত। আরো দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে দেশটি এখন সচেষ্ট। এই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে। এই কর্মসূচিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। দেশের সকল নাগরিককে ন্যায্যভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আসন্ন বাজেট ১৫ বছরব্যাপী (২০১৬-৩০) এই কর্মসূচির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বছরের বাজেট। কাজেই টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মৌলিক বিষয়গুলো ধারণ করে বাজেট প্রণয়ন করা জরুরি বলে আমি মনে করি। ইতোমধ্যেই টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য করণীয় প্রণয়ন এবং এর বিভিন্ন দিক বাস্তবায়নের দায়-দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি কমিটি কাজ করছে। অর্থায়ন কেমন করে হতে পারে অর্থাত্ অভ্যন্তরীণভাবে কতটুকু অর্থায়ন সম্ভব এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে কী পরিমাণ আহরণ করা যায় তা নিয়েও এই কমিটি কাজ করছে। সুতরাং আশা করা যায় এ পর্যন্ত এই কমিটি যে কাজ করেছে তা আগামী বাজেট প্রণয়নে সহায়ক হচ্ছে।

আমরা জানি, শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়লেই দারিদ্র্য গ্রহণযোগ্যভাবে কমে না, সামাজিক সূচকেও তেমন উন্নতি হয় না। সেজন্য দ্রুত ও টেকসই দারিদ্র্য নিরসন ও বিভিন্ন খাতে সামাজিক উন্নয়নকে লক্ষ্যভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এসকল ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন নীতি প্রণীত হয়েছে এবং বিধি-ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এগুলোর মধ্যে যতটা সমন্বয় থাকা দরকার সেখানে ঘাটতি রয়েছে। আবার যেহেতু সরকারের রাজস্ব আয় ও বাজেট ঘাটতি মিলে জাতীয় আয়ের ১৭ শতাংশের মতো সরকার ব্যয় করে তাই সব ব্যবস্থা করা সম্ভবও নয়। সে জন্য অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দারিদ্র্য ও বৈষম্য একযোগে দূর করার বিষয়টিকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলা প্রয়োজন, যদি দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ঘটে তাহলে তিনটি জিনিস একই সঙ্গে অর্জিত হয়—১) দারিদ্র্য কমে, ২) বৈষম্য কমে এবং ৩) প্রবৃদ্ধি বাড়ে। টেকসই উন্নয়ন ধারণায় তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলেছি, অনেক দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে এবং দারিদ্র্যের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে বিগত বছরগুলোতে। তবে দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখনও প্রায় দুই কোটি এবং এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষভাবে বঞ্চিত রয়ে গেছে। বঞ্চিত এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী, দলিত ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নারীপ্রধান দরিদ্র পরিবারসমূহ ও নারী কৃষিশ্রমিক এবং হাওর-বাঁওড়-পাহাড়—চরবাসী মানুষ। রয়েছে উপকূলীয় এলাকা এবং দ্বীপাঞ্চলের মানুষ। এসব গোষ্ঠীর দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগের সংকট রয়েছে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমস্যা অনেকাংশে বিভিন্নতর। সুতরাং নীতি, প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচি এমনভাবে বিন্যাস করতে হবে যেন প্রত্যেক গোষ্ঠীর বিশেষ সমস্যাগুলোর সমাধান যথাযথ গুরুত্ব পায়। উদাহরণস্বরূপ— অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলে ব্যাপক লবণাক্ততার কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট; হাওরে বর্ষার সময় বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয় এবং কর্মসংস্থান ও চলাফেরার সংকট দেখা দেয়; এবং দলিত ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আয় ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার সংকট রয়েছে। অন্যান্য গোষ্ঠীরও এরকম বিশেষ বিশেষ সমস্যা রয়েছে। কাজেই এসব গোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ প্রত্যেক গোষ্ঠীর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে চলতি বছরের বাজেট বক্তৃতায় সচেতনতা ও কিছু দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আরো অধিক নজর দেওয়া প্রয়োজন যাতে এসব গোষ্ঠীর নানাবিধ সমস্যা টেকসইভাবে সমাধানে অগ্রগতি দ্রুত দৃশ্যমান হয়। এছাড়া অবশ্যই দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর উপর যাতে বাজেট বিন্যাসের ফলে বোঝা না বাড়ে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

অতিদরিদ্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যভুক্ত করে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গণমুখী কার্যকর স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সকল অতিদরিদ্র গোষ্ঠীর শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভূটানে অবস্থানকালে বলেছেন যে, প্রতিবন্ধীদের বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। খুবই দূরদর্শী বক্তব্য। উপরে উল্লিখিত অন্যান্য গোষ্ঠীর বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। সবশেষে বলতে চাই, বাজেট বিন্যাস যত ভালো ও বাস্তবমুখী হোক, এর বাস্তবায়ন কার্যকর ও যথাসময়ে না হলে পর্যাপ্ত সুফল পাওয়া যায় না। আর দেশের আর্থ-সামাজিক যে প্রশংসিত অগ্রগতি হয়েছে এবং হচ্ছে তা সুসংহত এবং আরো ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: ব্যাপক দুর্নীতি, ধান্দাবাজি ও অপচয়; প্রকল্প বাস্তবায়নে— বিশেষ করে বড় বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বৃদ্ধি; ব্যাংকিং খাতে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা; জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান অভিঘাত— বিশেষ করে হাওর-বাঁওড় ও উপকূলীয় এলাকায় ও দ্বীপাঞ্চলে; এবং সরকারের ভেতরে এবং সরকার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি। প্রত্যেকটি বিষয়ে বাজেটের মাধ্যমে হয়ত তেমন কিছু করা যাবে না। তবে বাজেটে এসব বিষয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক পদক্ষেপ রাখা জরুরি।

অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে ১৩ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি –

অতিরিক্ত ওজনের জন্য বাড়ছে নানা শারীরিক সমস্যা। হার্ট বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত ওজন।

ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকরা জানাচ্ছেন, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলে ফ্যাট কোষ হরমোন ও প্রোটিন তৈরি করে। এই হরমোন ও প্রোটিন রক্তে বাহিত হওয়ার পাশাপাশি সারা শরীরে সঞ্চারিত হয়। যা বিভিন্ন রকম ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

শুধু তাই নয়। ফ্যাট কোষ শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতেও মদত দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে বিশ্বে ১৯০ কোটি মানুষ ওবেসিটির শিকার। এবং এই অতিরিক্ত ওজন তাদের অন্তত ১৩ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

যে ক্যান্সারগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ওবেসিটি, প্যানক্রিয়াটিক (অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার), ইসোফেগাল (খাদ্যনালীর ক্যানসর), লিভার (যকৃত), স্টমাক (পাকস্থলী), কোলন, রেক্টাম, গলব্লাডার, ফুসফুস, কিডনি।

ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষণা অনুযায়ী, এর মধ্যে স্তন ও কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসা ও নিরাময় সবচেয়ে কঠিন প্যানক্রিয়াটিক, ইসোফেগাল ও গল ব্লাডার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
– See more at: http://www.bd-pratidin.com/life/2017/04/22/225366#sthash.ineEOi8D.dpuf

চাই বেকারত্বের অবসান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আমাদের শ্রমশক্তির একটি নূতন জরিপ করিয়াছে। ইহা আগামী ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হইবে। তবে সমপ্রতি জরিপ নিয়া অনুষ্ঠিত কর্মশালা হইতে ইহার প্রধান প্রধান দিক সম্পর্কে কিছুটা হইলেও জানা গিয়াছে। বিবিএসের এই জরিপ মতে, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬০ লক্ষ। আর দেশে ১৫ বত্সরের ঊর্ধ্বে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে বেকার রহিয়াছেন ২৬ লক্ষ মানুষ। কেহ এক ঘণ্টা কাজ করিলে তাহাকে বেকার হিসাবে ধরা হয় নাই এই জরিপে। তবে সব মিলাইয়া বেকার সংখ্যা ৭১ লক্ষ। অন্যদিকে গত বত্সরের প্রতিবেদনে দেশের চার দশমিক তিন শতাংশ বেকার থাকিবার কথা বলা হয়। এই বত্সর তাহা নামিয়া আসিয়াছে চার দশমিক দুই ভাগে। ইহাতে আমাদের সন্তুষ্ট হইবার কথা। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলে ভিন্নকথা। সামান্য কয়েকটা পদের জন্য এখনো হাজার হাজার এমনকি লক্ষাধিক আবেদনপত্র জমা পড়ে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হইতে প্রতি বত্সরই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করিয়া বাহির হইতেছেন, কিন্তু তাহাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান মিলিতেছে না। কর্মবাজারে চাকুরীপ্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি উভয় চাকুরীতে আজ দুর্নীতি ও অনিয়ম বৃদ্ধি পাইয়াছে আশঙ্কাজনকভাবে। বর্তমানে এমন অবস্থা তৈরি হইয়াছে যে, ঘুষ ছাড়া কেহ চাকুরী পাইলে তাহাকে কোনো কোনো মহল সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও চিন্তা-ভাবনা করিতেছেন।

ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। তন্মধ্যে শিক্ষিত বেকার দুই কোটি ২০ লক্ষ। এই শিক্ষিত বেকাররা কতটা মনোকষ্টে দিনযাপন করিতেছেন তাহা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নহে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে একটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। দেশে পরিবারের সংখ্যা সোয়া পাঁচ কোটি। সেই অনুপাতে যে কর্মসংস্থান হয় নাই, তাহা কাহাকেও আর বুঝাইয়া বলিবার দরকার পড়ে না। ১০০ দিনের কর্মসৃজন কিংবা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি আসলে বেকারত্বের প্রারম্ভিক তৃষ্ণাই মিটাইতে পারে নাই। ইহা কোনো স্থায়ী সমাধানও নহে। তাই বর্তমানে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মোট অনুমোদিত পদের বিপরীতে যে কয়েক লক্ষ পদ শূন্য আছে, তাহা সর্বাগ্রে পূরণ করিবার দাবি অন্যায্য নহে। দেশ উন্নতি লাভ করিতেছে বিধায় প্রয়োজনে সেইসব পদের সংখ্যা বাড়ানোও অযৌক্তিক হইবে না। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াইতে জ্বালানি ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূর-পূর্বক শিল্পোন্নয়নসহ সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি সাধন প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সংকট থাকিবার কারণে রাশিয়াসহ বিভিন্ন নূতন নূতন দেশে প্রয়োজন শ্রমশক্তির পরিকল্পিত রপ্তানি।

আমরা যদি মধ্যম-আয়ের দেশে উন্নীত হইতে এবং তারুণ্যের আধিক্যজনিত ডিমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ড সুবিধাকে কাজে লাগাইতে চাই, তাহা হইলে ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করিবার কোনো বিকল্প নাই।

পাঁচটি নয়, আরো ইন্দ্রিয় রয়েছে মানুষের

দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ-এর বাইরে আর কী অনুভূতি থাকতে পারে মানুষের? সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা জানাচ্ছে, এই চেনা ইন্দ্রিয়ের বাইরে রয়েছে এমন কিছু ইন্দ্রিয়-জগৎ, যার সন্ধান আমরা সেভাবে রাখি না।

এমনই এক অনুভূতি হল ‘প্রোপ্রায়েসেপশন’, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘নিজের উপরে দখলদারি’। এই বিশেষ অনুভূতিটি মানুষকে তার দেহের আয়তন এ পরিমাপ সম্পর্কে সচেতন রাখে। যে কোনও সময়-পরিসরে দেহকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।

আর একটি অনুভূতি হল ‘থার্মোসেপশন’। এর দ্বারা মানুষ তার চারপাশের তাপমাত্রাকে টের পায়। এই অনুভবই মানুষকে তার দেহের তাপমাত্রাকে সমমাত্রিক রাখে। এর দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি, কখন লেপমুড়ি দিতে হবে আর কখন ঠান্ডা ঘোলের সরবত খেতে হবে।

আর একটি ইন্দ্রিয়ানুভূতি ‘ইকুইলিব্রিওসেপশন’। এর কাজ দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা। এর কৃপাতেই মানুষ হাঁটা বা দৌড়াপাঁচটি নয়, আরও ইন্দ্রিয় রয়েছে মানুষেরনোর সময়ে পড়ে যায় না। এর বাইরেও রয়েছে ক্ষুধা-তৃষ্ণা, সময় এবং দিক-সংক্রান্ত অনুভূতি। ক্ষুধা-তৃষ্ণার অনুভূতি আমাদের দেহ কখন পুষ্টি চাইছে, তা ব্যক্ত করে। এবং সেভাবে দেখলে, এই অনুভূতিগুলি পঞ্চেন্দ্রিয়ের হিসাবে পড়ে না।