সবজি আহার স্বাস্থ্যকর

নিরামিষ আহার একটি স্বাস্থ্যকর জীবনরীতি। আমাদের এ অঞ্চলে সবজি খাওয়ার, নিরামিষ খাওয়ার চল ছিল, এখনও আছে।

আমেরিকাতেও এখন ৪০ লাখ লোক নিরামিষাশী। নিরামিষ আহারে বড়ই স্বাস্থ্য সুবিধা, কোলেস্টেরল কম, মোট চর্বি, স্যাচুরেটেড চর্বি ও কম; করোনারি হৃদরোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।

আমিষ বেছে নিন-

মাংসের আমিষে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের এমিনো এসিডই আছে; কিন্তু সবজির আমিষে সব অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড থাকে না। তাই নানা রকমের উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে এমিনো এসিডগুলোর চাহিদা মিটাতে হয়।

নানারকমের এমিনো এসিড পেতে গেলে নিরামিষাশীদের খেতে হয় নানারকম বাদাম, বীজ, শুঁটি, ডাল, শস্য, সয়াবিন। ভাত ও মটরশুঁটি, শিম, ডাল এসব দিয়ে খিচুড়ি খেলে আমিষের চাহিদা পূরণ হল।
সোয়া দিয়ে পরিপূর্ণ করুন : সোয়া দ্রব্য হল প্রোটিনের বিশাল উৎস। মাংসের পরিপূরক বটে। করতে পারেন টফু কাবাব।

এ ছাড়া সোয়া দিয়ে নানা খাবার তৈরি করা যায়। ধোঁকাও তৈরি হয় সোয়া ও ডাল দিয়ে।

সবজি দিয়ে করা যায় নানা প্রিয় রেসিপি : নানারকম রান্না। ভাপে সিদ্ধ সবজি। সরষে, পোস্ত, হলুদ কাঁচা লঙ্কা, জিরা, তেজপাতা দিয়ে নিরামিষ, ধোঁকার ডালনা, সয়াবিনের তরকারি। উচ্ছে ভাজা, শাক ভাজা, থোড়ের চচ্চড়ি, কত যে রেসিপি। খেতে সুস্বাদুও বটে।

হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক

তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ২ ডিগ্রি: বিপর্যয় রোধে সময় মাত্র ৩ বছর!

জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে চলমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির আত্মঘাতী সর্বনাশ থেকে দুনিয়াকে বাাঁচাতে চাইলে মানবজাতির হাতে আর মাত্র তিন বছর সময় আছে। একথা বলেছে বিখ্যাত সাময়িকী নেচার।

পরিবেশ-জলবায়ূ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিষয়ে খ্যাতিমান এই পত্রিকা সম্প্রতি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বরাতে জানায়, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ ইতবাচক হারে কমিয়ে আনার কাজ শুরু করতে এখন আর মাত্র ৩বছর সময় হাতে আছে। এ সময়সীমার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নির্গমণ কমানো না গেলে প্যারিস ঘোষণায় বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ূ পরিবর্তন আর পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নিরীখে আগামী ২০২০ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। নেচারে ছাপা ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের নামী-দামী ৫০ জন বৈজ্ঞানিক স্বাক্ষর করেছেন।

প্রতিবেদনে বৈজ্ঞানিকরা তাদের আশঙ্কার পক্ষে প্রমাণাদিসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতাদের কাছে আর্জি করেছেন যে, তারা যেন এর থেকে মুখ ঘুরিয়ে না রাখেন। এতে আরও বলা হয়, জৈবচক্রের সকল ক্ষেত্রে ধ্বংস সাধনের সূচনা শুরু হয়ে গেছে। আর্কটিক অঞ্চলে সঞ্চিত বরফ ভাণ্ডার উষ্ণতার কারণে হারিয়ে গেছে। আর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে সাগরের প্রবাল প্রাচীরগুলোও বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের উদগীরণ যদি চলমান মাত্রায় থাকে তবে এত পরিমাণে কার্বন তৈরি হবে যে আগামী ৪ থেকে ২৬ বছর সময়কালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।

এরকম পরিস্থিতি হলে তা বিশ্বের মানুষসহ অপরাপর জীবগজতের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত, ১৮৮০ সাল থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সময়ে মানুষের অপরিণামদর্শী নানান কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।

৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস

সংসদে ১৯ কার্যদিবস আলোচনার পর পাস হলো ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে গতকাল কণ্ঠভোটে পাস হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এ বাজেট। আগামীকাল থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে এটা চতুর্থ বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা নবম বাজেট। ১ জুন জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত দিক ছিল নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা। ১৫ শতাংশ অভিন্ন ভ্যাটহার নিয়ে সংসদের ভেতরেই নানা সমালোচনায় পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন অর্থমন্ত্রী। একইভাবে সরে আসেন ব্যাংক আমানতে বর্ধিত আবগারি শুল্ক থেকেও।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বড় রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা ছিল অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে। পাস হওয়া বাজেটেও রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা একই থাকছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সংগ্রহের লক্ষ্য ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩ হজার ১৫২ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চার দশকের মধ্যে এটাই প্রবৃদ্ধির সর্বোচ্চ প্রাক্কলন। চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশিমক ৫ শতাংশে ধরে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকারি দলের ১৫৭ জন ও বিরোধী দলের ৩৬ জনসহ মোট ২০৭ জন সংসদ সদস্য ৫৬ ঘণ্টা ১৪ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করা, ব্যাংক আমানতে বর্ধিত আবগারি শুল্ক ও সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দেন সংসদ সদস্যরা। ব্যাংক আমানতে বর্ধিত আবগারি শুল্কের প্রস্তাবে সংশোধনীসহ ভ্যাট আইন বাস্তবায়নও দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয় গত বুধবার। এ দুটিসহ কর প্রস্তাবে আরো কিছু সংশোধনী এনে অর্থবিল-২০১৭ বুধবারই জাতীয় সংসদে পাস হয়।
গতকাল পাস হওয়া জাতীয় বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর অর্থায়নে আরো ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সে হিসাবে মোট এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
এবারের বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বৈদেশিক উত্স থেকে। অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে আসবে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উেসর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উত্স থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় করার কর্তৃত্ব দিয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৭ গতকাল সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে পাস হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের জন্য সরকারের অনুমিত ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দানের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পাসের জন্য নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৭ সংসদে উত্থাপন করেন।

lobour অধিকারহীনতার তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশ

শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়নের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ১০টি দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি ভিয়েনাভিত্তিক ‘বৈশ্বিক শ্রম অধিকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন’ (আইটিইউসি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১০টি দেশের ক্রমানুসারে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে প্রথমেই স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। পুলিশের বর্বরতা, গণগ্রেফতার ও বৈষম্যকে বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের ওপর নির্যাতনের প্রধান দিক হিসেবে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
‘আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স ২০১৭’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের ওপর সরকার ও নিয়োগকর্তার চাপিয়ে দেয়া অব্যাহত ভোগান্তির কারণে বাংলাদেশ র‌্যাটিংয়ে ৫ পেয়েছে, যার অর্থ হলো- শ্রমিকদের ‘অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই’। আইটিইউসির মহাসচিব শারান বারো বলেন, “অনেক দেশেই করপোরেট স্বার্থের নিচে পড়ে আছে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার।”
নির্যাতনের উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে কলাম্বিয়া, মিশর, গুয়াতেমালা, কাজাখস্তান, ফিলিপিন্স, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

চিকিৎসায় অরাজক পরিস্থিতি ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে মাদকাসক্তিতে ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। অথচ চিকিৎসক আছেন মাত্র ২২০ জন। মাদকাসক্তির চিকিৎসায় অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তাঁরা এ কথা বলেন।

‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আয়োজকেরা জানান, মূল দিবস ২৬ জুন। ওই সময় ঈদের ছুটির কারণে অনুষ্ঠানের আয়োজন আগে করা হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, মাদকাসক্তি চিকিৎসায় দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। একটির পর একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। অনুমতি দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিকিৎসার নামে নানা অপরাধ হচ্ছে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে না নিলে বিপর্যয় নেমে আসবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা স্বাভাবিক উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ন্যস্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন, ‘চাইলেই মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেওয়া যাবে না। এর জন্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি জনমত গঠন করা দরকার।’

অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক মাদকাসক্তির চিকিৎসায় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করার দাবি জানান।

বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘মাদকাসক্তি রোগ, এটা কোনো অপরাধ নয়। তাই এই রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, মাদকাসক্তির চিকিৎসার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্ত হওয়ায় সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল উপস্থাপনায় ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যারা মাদক নেয়, তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের মাদকাসক্তি রোগ দেখা দেয়। জাতীয় পর্যায়ে কোনো জরিপ না থাকলেও দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্তি রোগে ভুগছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাদকাসক্তির চিকিৎসা দেওয়ার মতো চিকিৎসক আছেন ২২০ জন। তবে ইনস্টিটিউট থেকে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

অন্য উপস্থাপনায় একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকাসক্তির চিকিৎসায় ওষুধের দরকার হয়। এর চিকিৎসা শুধু চিকিৎসকদেরই করা উচিত। তিনি বলেন, ‘শুধু কাউন্সেলিং দিয়েই মাদকমুক্ত করা সম্ভব’, ‘সিগারেট কোনো মাদক নয়’, ‘মাদকাসক্তির চিকিৎসায় ওষুধ লাগে না’—সমাজে এ রকম নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো ফারুক আলম বলেন, ইনস্টিটিউটে যত মানসিক রোগী আসে, তার প্রায় ৩০ শতাংশ মাদকাসক্তির।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হেদায়তুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন  যুব বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি স্পেনে; প্রায় ৫৮%  সারা বিশ্বের ১৮০ কোটি যুবক-যুবতী কোনো কাজ করেন না দেশে ৯.১% তরুণ-তরুণী বেকার

১৯ আগস্ট ২০১৬, ০০:১৯
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের যুবসমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই হারে বেকার আছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক যুবসমাজের বেকারত্ব নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এ চিত্র উঠে এসেছে।
কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমশক্তি নিয়ে জরিপ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যুবক-যুবতী। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের যুব শ্রমশক্তি ধরে বিবিএস। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এ বয়সী ১৯ লাখ ৩৯ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ করেন না। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজও করার সুযোগ পান না, অথচ তাঁরা সব সময়ই কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেন।
এদিকে দেশের কর্মক্ষম যুবসমাজকে কাজে লাগাতে জাতীয় যুবনীতি, ২০১৬ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই যুবনীতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই জাতীয় যুবনীতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এ খসড়ার ওপর মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুব বেকারত্বের হার অনেক বেশিই। কেননা, বাকি যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই ছদ্মবেকার। অনেকেই টিউশনি করেন, কিন্তু বেকার হিসেবে ধরা হয় না। এতে যুবশক্তির উৎপাদনশীলতার পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, শ্রমবাজারে যে ধরনের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না শিক্ষাব্যবস্থা। জোগান ও চাহিদার গরমিল আছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে যুব বেকারত্ব বেশি এমন দেশের সংখ্যা অনেক। যেমন, ভারতের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ১০ দশমিক ৪ শতাংশই বেকার। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের পরই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে যুব বেকারত্ব পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফগানিস্তানে যুবকদের মধ্যে ২০ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার। আর শ্রীলঙ্কায় ১৯ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি নেপালে, এ হার মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভুটানে ১০ শতাংশ যুবক বেকার। এ তালিকায় মালদ্বীপ নেই।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৮০ কোটি যুবক-যুবতী কোনো কাজ করেন না। তাঁরা আবার পড়াশোনা কিংবা কোনো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। কিন্তু আগামী এক দশকে প্রায় ১০০ কোটি তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করবেন। বর্তমান শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষমতা অনুযায়ী মাত্র ৪০ শতাংশ তরুণ-তরুণী কাজ পাবেন। সুতরাং আগামী এক দশকে বিশ্বকে আরও ৬০০ কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ধনী দেশের তরুণ-তরুণীরাই বেশি বেকার। যুবসমাজের মধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেকার স্পেনে। এর মানে হলো, স্পেনে প্রতি ১০০ জন ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৫৮ জনই বেকার। গ্রিসে এই হার ৫৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপানে যুব বেকারত্ব তুলনামূলক কম; মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ।
বিশ্ব অর্থনীতির ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে পরিচিত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যুব বেকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। চীনে এই হার সাড়ে ১০ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া যুবক-যুবতীদের মধ্যে ফ্রান্সে ২৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, কানাডায় ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেকার।
আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি যুব বেকারত্ব দক্ষিণ আফ্রিকায়। আফ্রিকার অন্যতম এই ধনী দেশটিতে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ যুবক-যুবতীই বেকার। তবে আফ্রিকার আরেক দেশ রুয়ান্ডায় বিশ্বের সবচেয়ে কম যুব বেকারত্ব। দেশটির যুব বেকারত্বের হার দশমিক ৭ শতাংশ।

দেশে মোট বেকার ২৫ লাখ ৮৭ হাজার : পরিকল্পনামন্ত্রী
রিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২১ সালে দেশে ষষ্ঠ আদমশুমারি ও গৃহগণনার পরিকল্পনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য বেগম মাহজাবীন মোরশেদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী জানান, সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন।

সরকারি দলের সদস্য জাহান আরা বেগম সুরমার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৫-১৬ (কোয়ার্টারলি লেবার ফোর্স সার্ভে) এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮৭ হাজার জন।

সরকারি দলের সদস্য মাহফুজুর রহমানের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে শতভাগ দারিদ্র্য দূরীকরণ, সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিতসহ নিম্ন আয়ের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপুর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। বাসস

ইত্তেফাক/ইউবি

আইএলওর বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য নারীর কর্মহীনতায় ক্ষতি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে গত দুই দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে এ সময়ে এমন প্রবণতা দেখা যায়নি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের এ বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারলে সেটি এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মূল্য যোগ করবে। এই অর্থ বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের বাজেটের ৮০ গুণ।

এমন তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক শ্রম তহবিলের (আইএলও) ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক অগ্রগতি প্রতিবেদন—নারীদের অবস্থান ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের বৈষম্যের বিষয়টি এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বৈষম্য বৃদ্ধির ফলে নারীরা কাজ কম পাচ্ছেন। যেসব নারী কাজ পাচ্ছেন, তাঁরাও খুব মানসম্পন্ন কাজ পাচ্ছেন না। একই মানের কাজ করেও কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্য কিছুটা কমলেও দক্ষিণ এশিয়ায় চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। বিশ্বে মোট কর্মক্ষম পুরুষদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ কাজ করেন। আর কর্মক্ষম নারীর ৪৯ শতাংশ এখন কর্মক্ষেত্রে যুক্ত আছেন। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্যের পার্থক্য ২৬ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় এ পার্থক্য প্রায় ৫১ শতাংশীয় পয়েন্ট। এই অঞ্চলে কর্মক্ষম নারীদের মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ কাজ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ। পূর্ব এশিয়ায় নারীদের কাজের অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো। এই অঞ্চলে কর্মক্ষম নারীদের ৬১ শতাংশই কাজ করেন, যা বিশ্বের সব অঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

অর্থনীতির আকারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ২০টি দেশের জোট জি-২০–এর ২০১৪ সালের এক সম্মেলনে বিশ্বনেতারা কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেন। ওই বৈঠকে ২০২৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের সব অঞ্চলে এ পার্থক্য ২৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে বাড়তি ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার যোগ করবে। এর মধ্যে শুধু এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ হবে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাপী পুরুষের চেয়ে নারীদের বেকারত্বের হার বেশি বলেও আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আইএলওর হিসাবে ২০১৭ সালে বিশ্বে নারীদের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেকারত্বের গড় হার বেশি। আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম বলে মনে করে আইএলও।

অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে তা নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৮০ শতাংশ নারী শুধু ঘরে থাকার চেয়ে অর্থ উপার্জন করা যায় এমন কাজ করতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু ইচ্ছা থাকার পরেও ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম নারী এই অঞ্চলে কোনো কাজ পাচ্ছেন না।

আইএলওর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তোমোকো নিশিমোতো এ প্রসঙ্গে বলেন, যেসব কারণে নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করতে যাওয়া কঠিন, সেই প্রতিকূলতাগুলো এখনো এই অঞ্চলে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। নারীদের কাজে যাওয়ার জন্য পরিবারের মধ্যে ইতিবাচক ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২০ শতাংশ নারী সংসার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেন না। এই সমস্যার কারণে তাঁদের বাধ্য হয়ে অনেক সময় চাকরি ছাড়তে হয়। ২২ শতাংশ নারী কাজের কারণে নিজের ও পরিবারের যত্ন নিতে না পারায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন।

কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ জন্য নারীদের বিষয়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা ভেঙে ফেলার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নারীদের শিক্ষার পেছনে পরিবার ও রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানো, পারিশ্রমিকের বৈষম্য দূর করার মতো বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটির অন্যতম রচয়িতা স্টিভেন টবিনের মতে, বিশ্বের অনেক এলাকায় নারীর ঘরের বাইরে কাজ করাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এতে নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করাটা অনেক সময় কঠিন হয় পড়ে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নারীদের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। নারীর প্রতি এ ধরনের সামাজিক মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই এই বৈষম্য অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে? মুহম্মদ জাফর ইকবাল

. একটা দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার উপায় কী? জ্ঞানী-গুণী মানুষদের নিশ্চয়ই এটা বের করার নানা উপায় আছে। তারা অর্থনীতির দিকে তাকাবেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বিবেচনা করবেন, দুর্নীতির পরিমাপ করবেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যাচাই করবেন এবং আরও অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে একটা রায় দেবেন।

আসলে দেশ কেমন চলছে সেটা বের করা খুবই সহজ। দেশের একজন সংখ্যালঘু মানুষকে নিরিবিলি জিজ্ঞেস করবেন, ‘দেশটি কেমন চলছে?’ সেই সংখ্যালঘু মানুষটি যদি বলে, ‘দেশ ভালো চলছে। ’ তাহলে বুঝতে হবে দেশটি ভালো চলছে। আর সেই মানুষটি যদি ম্লান মুখে মাথা নেড়ে বলে, ‘দেশটি ভালো চলছে না’, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি আসলেই ভালো চলছে না। দেশে দশটা পদ্মা সেতু, এক ডজন স্যাটেলাইট আর ১০ হাজার ডলার পার ক্যাপিটা আয় হলেও যদি সংখ্যালঘু মানুষটি বলে দেশ ভালো নেই তাহলে বুঝতে হবে আসলেই দেশ ভালো নেই। (সংখ্যালঘু শব্দটি লিখতে আমার খুব সঙ্কোচ হয়, সবাই একই দেশের মানুষ এর মাঝে কেউ কেউ সংখ্যাগুরু কেউ কেউ সংখ্যালঘু সেটি আবার কেমন কথা? কিন্তু আমি যে কথাটি বলতে চাইছি সেটি বোঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না)। এখন যদি আমরা এই দেশের একজন হিন্দু, সাঁওতাল বা পাহাড়ি মানুষকে জিজ্ঞেস করি, দেশ কেমন চলছে তারা কী বলবে? নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবাইকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল। গাইবান্ধায় পুলিশেরা সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে পত্র-পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছে। সর্বশেষ হচ্ছে রাঙামাটিতে লংগদুর ঘটনা, পাহাড়ি মানুষদের বাড়ি জ্বালিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য যে মা তার সন্তানদের বুকে চেপে ধরে মাইলের পর মাইল পাহাড় অতিক্রম করে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে, রৌদ্রে পুড়েছে, অভুক্ত থেকে মশার কামড় খেয়ে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে চমকে চমকে উঠেছে আমি যদি তাকে বলি, বাংলাদেশ অনেক বড় সম্ভাবনার দেশ, এবার উন্নয়নের বাজেটই হয়েছে চার লাখ কোটি টাকার, পদ্মা ব্রিজের চল্লিশ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে, আগামী মাসে আমাদের নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হবে— সেই অসহায় মা কী আমার কথা শুনে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন না? তাকে কী আমি কোনোভাবে বোঝাতে পারব আমাদের অনেক কষ্ট করে, যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে পাওয়া দেশটি স্বপ্নের একটি দেশ? আমি তাকে কিংবা তার মতো অসংখ্য পাহাড়ি মানুষকে সেটি বোঝাতে পারব না। তাদের কাছে এই দেশটি হচ্ছে একটি বিভীষিকা, যেখানে প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষ এসে পুরোপুরি নিরাপরাধ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তাদের রক্ষা করার কেউ নেই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে এ ঘটনাগুলো ঘটতে দেয়। এ ঘটনাটি ঘটবে সেটি সবাই আঁচ করতে পারে তারপরও কেউ সেটা থামানোর চেষ্টা করে না। আমি নিজেকে এই পাহাড়ি মানুষদের জায়গায় বসিয়ে পুরো বিষয়টা কল্পনা করে আতঙ্কে শিউরে উঠেছি।
পৃথিবীতে অন্যায় কিংবা অপরাধ হয় না তা নয়। আমরা প্রতি মুহূর্তেই আমাদের চারপাশে এগুলো দেখছি। কিন্তু লংগদুর ঘটনাটা ভিন্ন। যুবলীগের এক কর্মীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কে মেরেছে ঠিকভাবে জানা নেই, প্রচার করা হলো দুজন চাকমা তরুণ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো পুরোপুরি নির্দোষ কিছু পাহাড়ি গ্রামবাসীকে। একজন দুজন ক্রুদ্ধ মানুষ নয়, হাজার হাজার সংগঠিত মানুষ পেট্রলের টিন আর ট্রাক্টর নিয়ে হাজির হলো। পেট্রল দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, ট্রাক্টর ব্যবহার করা হলো লুট করা মালপত্র বোঝাই করে নেওয়ার জন্য। বিচ্ছিন্ন একজন কিংবা দুজন মানুষ বাড়াবাড়ি কিছু একটা করে ফেলছে সেটি বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কয়েক হাজার মানুষ মিলে একটা ভয়ঙ্কর অন্যায় করার জন্য একত্র হয়েছে সেটা আমরা বিশ্বাস করি কেমন করে? কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে কারণ আমরা বার বার এ ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমরা কেমন করে এত হৃদয়হীন হয়ে গেলাম?

২. আমরা জানি কিছু দিন আগেও আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী মানুষদের সম্পর্কে অনেক ধরনের অসম্মানজনক কথা লেখা থাকত। সচেতন মানুষরা একটি একটি করে বিষয়গুলো সবার চোখের সামনে এনেছেন তখন সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন তো আমরা করতেই পারি, এই পাঠ্যবইগুলো তো হেমিপজি অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, রুচিহীন, বুদ্ধিহীন মানুষরা লিখেন না। এই বইগুলো লিখেন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাবিদরা, লেখা শেষ হওয়ার পর সম্পাদনা করেন আরও গুরুত্বপূর্ণ মানুষরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। তাহলে পাঠ্যবইগুলোতে এরকম অবিশ্বাস্য সাম্প্রদায়িক কথা কেমন করে লেখা হয়, কেমন করে আদিবাসী মানুষদের এত অসম্মান করা হয়?

কারণটা আমরা অনুমান করতে পারি। আমরা যাদের বড় বড় শিক্ষিত মানুষ হিসেবে ধরে নিয়েছি তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে সংকীর্ণতা। যারা আমার মতো নয় তারা অন্যরকম, আর অন্যরকম মানেই অগ্রহণযোগ্য, অন্যরকম মানেই খারাপ, অন্যরকম মানেই নাক শিটকে তাকানো।

অথচ পুরো ব্যাপারটাই আসলে ঠিক তার বিপরীত। সারা জীবনে আমি যদি একটা বিষয়ই শিখে থাকি তাহলে সেটা হচ্ছে একটা উপলব্ধি যে, ‘বৈচিত্র্যই হচ্ছে সৌন্দর্য’। কোনো মানুষ কিংবা সম্প্রদায় যদি অন্যরকম হয়ে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে বৈচিত্র্য এবং সেই বৈচিত্র্যটুকুই সৌন্দর্য।

পৃথিবীতে অনেক সৌভাগ্যবান দেশ রয়েছে যেখানে অনেক দেশের অনেক মানুষ পাশাপাশি থাকেন। তারা দেখতে ভিন্ন, তাদের মুখের ভাষা ভিন্ন, তাদের কালচার ভিন্ন, ধর্ম ভিন্ন, খাবার কিংবা পোশাক ভিন্ন। আমরা সেদিক থেকে অনেক দুর্ভাগা, আমাদের দেশে মানুষের মাঝে সেই বৈচিত্র্য নেই। ঘর থেকে বের হয়ে আমরা যেদিকেই তাকাই সেদিকেই আমরা একই রকম মানুষ দেখতে পাই, তাদের মুখের ভাষা, চেহারা পোশাক কোনো কিছুতেই পার্থক্য নেই। আমাদের দেশের একটুখানি ভিন্ন ধরনের মানুষ হচ্ছেন সাঁওতাল কিংবা গারো মানুষ, পাহাড়ি মানুষ। এই মানুষগুলোকে আমাদের বুক আগলে রাখার কথা, অথচ আমরা তাদের অবহেলা করি!

আমাদের পরের প্রজন্মকে শেখাতে হবে পৃথিবীর সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্যে। সারা পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হচ্ছে ‘ডাইভারসিটি’। একটি দেশে যত বেশি ডাইভারসিটি সে দেশটি তত সম্ভাবনাময়। নতুন পৃথিবী আধুনিক পৃথিবী। আধুনিক পৃথিবীর মানুষরা একে অন্যের সঙ্গে বিভেদ করে না। শুধু যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে না তা নয়, গাছ, ফুল, পশুপাখি সবাই মিলে যে একটা বড় পৃথিবী এবং সবার যে পাশাপাশি বেঁচে থাকার অধিকার আছে, সেটিও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।

অথচ আমরা সবিস্ময়ে দেখতে পাই, একজন দুজন নয়, কয়েক হাজার মানুষ মারমুখী হয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধ সেই মানুষগুলো আমাদের থেকে একটু ভিন্ন।

৩. আমার শৈশবটি কেটেছে বাংলাদেশের নানা এলাকায়। বাবা পুলিশের অফিসার হিসেবে দুই তিন বছর পর পর নতুন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। সেই সুযোগে আমরা রাঙামাটি আর বান্দরবান এ দুই জায়গাতেও ছিলাম। বান্দরবানে আমি স্কুলে পড়েছি, আমাদের ক্লাসে বাঙালি ছেলেমেয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি ছেলেমেয়েরাও ছিল। তাদের অনেকে ভালো বাংলা বলতে পারত না, এখন অনুমান করি সে কারণে লেখাপড়াটা নিশ্চয়ই তাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ক্লাসের ভিতর লেখাপড়াটা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না, ক্লাস ছুটির পর বনে জঙ্গলে পাহাড়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানোতে আমাদের আগ্রহ ছিল বেশি। তাই ভালো বাংলা না জানলেও সেটা কোনো সমস্যা হতো না। ধর্ম, ভাষা, গায়ের রং শরীরের গঠন কিংবা কালচার ভিন্ন হলেও সব মানুষ যে একেবারে একই রকম সেটি আমি শিখেছি নিজের অভিজ্ঞতায়।

বান্দরবানের সেই স্কুলে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ শিক্ষক পেয়েছিলাম, যার কথা আমি কখনো ভুলিনি। আমি আমার নিজের শিক্ষক জীবনে তার শেখানো বিষয়গুলো এখনো ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং এখনো ম্যাজিকের মতো ফল পেয়ে যাচ্ছি।

আমাদের এই শিক্ষক ছিলেন একজন পাহাড়ি (সম্ভবত মারমা) মহিলা। পাহাড়ি পোশাকে ক্লাসে আসতেন। একজন মানুষকে বিচার করতে হলে কখনো তার চেহারা নিয়ে কথা বলতে হয় না কিন্তু অসৌজন্যমূলক হলেও আমাকে একটুখানি বলতে হচ্ছে— মধ্যবয়স্কা এই মহিলার গলগণ্ড রোগ ছিল বলে তাকে কোনো হিসেবে সুন্দরী বা আকর্ষণীয় বলার উপায় নেই। ভদ্রমহিলা এক দুটির বেশি বাংলা শব্দ জানতেন না। তিনি আমাদের ড্রয়িং টিচার ছিলেন কিন্তু ছবি আঁকতে পারতেন না, কোনো দিন চক হাতে বোর্ডে কিছু আঁকার চেষ্টা করেননি। কিন্তু তারপরও আমাদের ড্রয়িং ক্লাস নিতে কখনো তার কোনো অসুবিধা হতো না। ক্লাসে এসে তিনি বলতেন, ‘লাউ আঁকো’ কিংবা ‘বেগুন আঁকো’-এর বেশি কিছু বলছেন বলে মনে পড়ে না।

আমরা তখন লাউ কিংবা বেগুন আঁকতাম। আমাদের সবারই স্লেট-পেন্সিল ছিল, যাবতীয় শিল্পকর্ম সেখানেই করা হতো। ছেলেমেয়েরা লাউ কিংবা বেগুন এঁকে আমাদের ড্রয়িং টিচারের কাছে নিয়ে যেত। লাউয়ের এবং বেগুনের আঁকার আকৃতি দেখে তিনি বিভিন্ন মাত্রার উল্লাস প্রকাশ করতেন এবং চক দিয়ে স্লেটের কোনায় মার্ক দিতেন। কেউ চার, কেউ পাঁচ, কেউ ছয় কিংবা সাত। আমার ছবি আঁকার হাত ভালো ছিল তাই আমার লাউ কিংবা বেগুন দেখে তিনি উল্লসিত হয়ে ১০ দিয়ে দিলেন।

ড্রয়িং ক্লাস হতে লাগল, তিনি আমাদের শিল্পকর্মে নম্বর দিতে লাগলেন এবং আমরা আবিষ্কার করলাম তার দেওয়া নম্বরও বাড়তে শুরু করেছে। দশের বাধা অতিক্রম করে কেউ পনেরো কেউ সতেরো পেতে লাগল। কতর ভিতর পনেরো কিংবা সতেরো সেটা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন ছিল না। হয়তো প্রজাপতি আঁকতে দিয়েছেন, কেউ প্রজাপতি এঁকে নিয়ে গেছে এবং তাকে বাইশ দিয়েছেন। পরের জনের প্রজাপতি হয়তো আরও সুন্দর হয়েছে তাকে তিরিশ দিলেন এর পরের জন হয়তো পুরো চল্লিশ পেয়ে গেল!

আমরা সব ক্লাসেই লেখাপড়া করে আসছি কোথাও এরকম নম্বর পাইনি, একটা কলা এঁকে যখন নব্বই পেয়ে যাই তখন মনে হয় রাজ্য জয় করে ফেলেছি!

কাজেই আমাদের এই ড্রয়িং ক্লাসটা ছিল আনন্দময় একটা সময়। লাউ কলা প্রজাপতি শেষ করে তখন আমরা পশুপাখি আঁকতে শুরু করলাম। শুধু একটা গরু এঁকে একদিন আমি আটশত পঞ্চাশ পেয়ে গেলাম—আনন্দে উত্তেজনায় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমাদের ড্রয়িং টিচার ততদিনে বুঝে গেছেন আমি ভালো আঁকতে পারি এবং সে জন্য আমার প্রতি তাঁর এক ধরনের স্নেহ ছিল। প্রায় নিয়মিতভাবে আমি ক্লাসে সবসময় সবার চাইতে বেশি নম্বর পেয়ে আসছি।

একদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘বুডডিশ আঁকো’, শব্দটি আমি বুঝতে পারিনি, তখন অন্যরা বুঝিয়ে দিলো। ড্রয়িং টিচার বৌদ্ধমূর্তি আঁকতে বলেছেন। আমি তখন বিপদে পড়ে গেলাম। বান্দরবানের ক্যাং ঘরে নানারকম বৌদ্ধমূর্তি দেখে এসেছি কিন্তু তার ছবি আঁকার মতো খুঁটিনাটি লক্ষ্য করিনি। আমাদের ক্লাসে আরও একজন মারমা ছেলে ভালো ছবি আঁকত, সে অসাধারণ একটা বৌদ্ধমূর্তি এঁকে নিয়ে গেল এবং ড্রয়িং টিচার তাকে চৌদ্দশ নম্বর দিয়ে দিলেন। আমি বসে বসে মাথা চুলকে যাচ্ছি। আমার ড্রয়িং টিচারের তখন আমার জন্য মায়া হলো। মারমা ছেলেটির স্লেটটি আমার সামনে রেখে সেটা দেখে দেখে আঁকতে বললেন। আমি সেটা দেখে দেখে একটা বৌদ্ধমূর্তি আঁকলাম এবং আমিও চৌদ্দশ পেয়ে গেলাম!

এরপর এত বছর পার হয়ে গেছে আমি আমার এই ড্রয়িং টিচারের কথা ভুলিনি। তিনি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি দিয়ে গেছেন। সেটি হচ্ছে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে হয়! আমিও আমার সারাটি জীবন ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিয়ে আসার চেষ্টা করে আসছি এবং দেখে আসছি এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

এই মারমা ড্রয়িং টিচারের মতো নিশ্চয়ই একজন সাঁওতাল বৃদ্ধ কিংবা গারো যুবক রয়েছে যার কাছ থেকে আমার জীবনের কোনো একটি শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল— আমরা সেটা পাইনি। আমরা মানুষে মানুষে বিভাজন করে নিজেদের ভাষা ধর্ম কালচার নিয়ে অহংকার করে অন্যদের তাচ্ছিল্য করতে শিখিয়েছি। অবহেলা করতে শিখিয়েছি। আমরা যদি আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক মানুষ হতে চাই তাহলে সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে। হয়তো বাংলাদেশ কিছু দিনের মাঝে অনেক উন্নত হয়ে যাবে। আমাদের মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে যাবে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের প্রশ্ন ফাঁস হবে না, স্কুলে আনন্দময় পরিবেশে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে। নিজেদের অর্থে আমরা বিশাল বিশাল পদ্মব্রিজ তৈরি করব। কিন্তু যদি একটি পাহাড়ি শিশু তার মায়ের হাত ধরে আতঙ্কে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য জঙ্গলে ছুটে যেতে থাকে তাহলে কী আমাদের সব উন্নয়ন পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যাবে না?

দেশের একটি নাগরিককেও যদি আমরা সম্মান নিয়ে শান্তিতে নিজের ঘরে ঘুমানোর পরিবেশ তৈরি করে দিতে না পারি তাহলে বিশাল পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
– See more at: http://www.bd-pratidin.com/editorial/2017/06/16/240440#sthash.WdV7uinK.dpuf

কোরআন অধ্যয়ন ও প্রচারের গুরুত্ব

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন:

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সাথে আমরা প্রতিনিয়ত উদ্ভট ও হাস্যকর আচরণ করে যাচ্ছি। আরবদের কাছে আল কোরআন তো কোন দুর্বোদ্ধ গ্রন্থ ছিল না। তারা তো কোরআন তেলাওয়াত করে এর অর্থ সহজেই বুঝতে পারতেন। যার কারণে আল্লাহর রাসূল তাদেরকে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর জন্য অশেষ সওয়াব প্রাপ্তির কথা বলেছেন। কারণ, বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করার কারণে কোরআনের শিক্ষা তাদের হৃদয়পটে গাঁথা হয়ে যেত। আর ইসলামী জিন্দেগী যাপনের জন্য এর অপরিহার্য প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু আমরা যারা আরবি ভাষা জানি না তারা যদি কোরআনের অর্থ জানার চেষ্টা না করে শুধু তেলাওয়াত করি তাহলে আমাদের কোরআন পড়ার হক কতটুকু আদায় হবে তা কি ভেবে দেখা উচিত নয়? আল্লাহ আমাদেরকে কোরআন পড়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা কি কোরআনের শিক্ষাকে জানা ও বুঝার জন্য নয়? আমরা যদি কোরআনের শিক্ষাকে না জানি তাহলে কোরআন থেকে হেদায়াত নেয়া আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব হবে?

পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে জানা ও বুঝার কারণে দ্বীনের যে ধরনের বুঝ, যে ধরনের ঈমান ও উপলব্ধি তৈরি হওয়া সম্ভব তা কি অর্থ না জেনে তেলাওয়াতের মাধ্যমে, আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম সম্পর্কে বেখবর থাকার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব? মোটেই সম্ভব নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনই এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, জ্ঞানী আর মূর্খের উপলব্ধি সমান নয়। আর জ্ঞানীরাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে, তারাই হেদায়াত থেকে বেশি উপকৃত হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন :

‘এটা কি করে সম্ভব হতে পারে যে, যে ব্যক্তি তোমার আল্লাহর এই কিতাবকে, যা তিনি তোমার প্রতি নাযিল করেছেন, সত্য বলে জানে আর যে ব্যক্তি এ মহাসত্য সম্পর্কে অজ্ঞ-অন্ধ তারা দুজনই সমান হতে পারে? উপদেশ তো বুদ্ধিমান লোকেরাই কবুল করে থাকে।’ -[রা’দ : ২০]

সুবহানাল্লাহ! কী দুর্ভাগ্য আমাদের! আল কোরআনের এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও আজ আমরা উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করেছি! আল্লাহর কথার চেয়ে আজ আমরা তথাকথিত মুরুব্বিদের কথাকেই যেন বেশি প্রাধান্য দিয়ে চলেছি। আল্লাহ বলছেন জানো, জানতে চেষ্টা কর! আর মুরুব্বি/বুযুর্গ রূপী আযাযিল ওয়াসওয়াসা দিয়ে বলছে খবরদার, কোরআনের অর্থ জানার চেষ্টা ক’রো না, শুধু তেলাওয়াত কর, শুধু তেলাওয়াত…!

শুধুই তেলাওয়াত? আর কিছুর প্রয়োজন নেই? কোরআন কেন পাঠানো হয়েছে তা জানারও কোন প্রয়োজন নেই? চিন্তা-ভাবনারও প্রয়োজন নেই? মহাগ্রন্থ আল কোরআন এসেছে কি শুধু না বুঝে তেলাওয়াতের জন্য? কিন্তু কোরআন যিনি পাঠিয়েছেন সেই পরওয়ার দিগার এ সম্পর্কে কী বলছেন :

‘এ কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, এটি বরকতপূর্ণ। এতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং নিষিদ্ধ সীমা পরিহার করে চল। তবেই তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে।’-[আল আনআম : ১৫৫]

‘(হে নবী!) এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন বুদ্ধিমান লোকেরা একে গভীর ভাবে অধ্যয়ন ও চিন্তা-ভাবনা করে।’ -[আস সোয়াদ : ২৯]

‘তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাক্সক্ষা ছাড়া আল্লাহর কিতাবের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছু নেই।’ -[আল বাকারা : ৭৮]

‘আমি তোমার প্রতি আমার জিকির (আল কোরআন) অবতীর্ণ করেছি, যাতে লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বর্ণনা করতে পারো, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।’

আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। আমরা প্রতিদিন, প্রতি ওয়াক্তে অত্যন্ত তাযিমের সাথে কোরআন তেলাওয়াত করি কিন্তু ভুলে একবারও আমাদের জানতে ইচ্ছে করে না এই পবিত্র বাণী গুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন কী বলেছেন। আর ঠিক এ কারণেই নিরক্ষর লোকদের মতই আমরা আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে আন্দাজ-অনুমান, ধারণা-কল্পনা নির্ভর আকিদা-বিশ্বাস লালন করছি আর মিথ্যা আকাক্সক্ষার আশ্রয় নিয়ে অজ্ঞতা ও মূর্খতার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। মানসিক এই বৈকল্যের কারণেই আজ আমাদের চিন্তা-চেতনাও হয়ে গেছে পঙ্গু ও নি¯প্রাণ। এ কারণেই আমাদের ঈমান আজ চেতনাহীন। আল্লাহর কালাম আল কোরআনের মর্যাদা আজ ভুলুণ্ঠিত।কেননা, বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহর হুকুম আজ সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী বেশে নেই। আল্লাহর হুকুম আজ মানুষের হুকুমের অধীন! আল্লাহর আইন আজ মানুষের আইনের অধীন! কোরআন এসেছে শাসন করার জন্য, শাসিত হওয়ার জন্য নয়। অথচ এ সম্পর্কে আজ আমাদের কোন চেতনাই নেই। আমাদের অন্তর আজ এতটাই মরে গেছে যে, এই কঠিন অন্তরের মধ্যে বোমা মারলেও যেন আর সম্বিত ফিরে আসবে না। অথচ আল্লাহ বলেছেন:

‘আমি যদি এই কোরআনকে কোন পাহাড়ের উপরও নাযিল করতাম, তাহলেও তুমি দেখতে যে, সে পাহাড় আল্লাহর ভয়ে কেমন বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে! এই দৃষ্টান্ত গুলো আমি এ জন্য দেই, যেন লোকেরা নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে।’-[আল হাশর : ২১]

চলবে-

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি কি মাদকের অভিশাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব?

মাদকদ্রব্য
যে সব দ্রব্য সেবনে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা আনয়ন করে বা কোনো ক্ষেত্রে স্নায়ুর উত্তেজনা সৃষ্টি করে বা ব্যথা উপশম করে তাই হলো মাদকদ্রব্য। যখন কোনো ব্যক্তি এসব দ্রব্য সেবন ছাড়া চলতে পারে না অর্থাৎ এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন ঐ ব্যক্তিকে আমরা মাদকাসক্ত বলে থাকি। কোনো কিছুর প্রতি প্রবল আকর্ষণকে আসক্তি বলে। এ আকর্ষণ অভ্যাসজনিত। আসক্তি বিষয়টি আজকের নয়। মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই এ আশক্তির শুরু। এ আশক্তির জন্য পৃথিবীর আদি মানব স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। আজ সমাজ সংসার থেকে মানুষ অকালে।
মানুষের মাদকাসক্ত হওয়ার বহুবিধ কারণ

(১) মাদক দ্রব্যের প্রতি কৌতূহল, (২) বেকারত্ব আর্থিক অনটন ও জীবনের প্রতি হতাশা, (৩) বন্ধু-বান্ধব সঙ্গীদের প্রভাব, (৪) নতুন অভিজ্ঞতা লাভের আশা, (৫) নৈতিক শিার অভাব, (৬) মাদক দ্রব্যের সহজ লভ্যতা, (৭) পারিবারিক কলহ ও অশান্তি, (৮) পরিবারে মাদক দ্রব্যের ব্যবহার, (৯) পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব, (১০) মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, (১১) কৈশর ও যৌবনে বেপরোয়া মনোভাব, (১২) সহজ আনন্দ লাভের বাসনা, (১৩) সর্বপরি ধর্মীয় জ্ঞান ও অনুশাসনের অভাব।
কুফল

মাদকাসক্তি একটি মারাত্মক মরণ ব্যাধি। মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে মানুষের বহুবিধ ক্ষতি হয়ে থাকেঃ
(১) মানসিক উত্তেজনা, চরম অবসাদ, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অসংলগ্ন ব্যবহার, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি দেখা যায়।
(২) শারীরিক রোগ, রক্ত দূষণ, কর্ম দতা হ্রাস, শরীরে খিচুনী হয়, বমি বমি হয়, বুদ্ধি লোপ পায়, অনিদ্রা, পেটে ব্যথা, ক্ষুধা মন্দা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা যায়।
(৩) সামাজিক ভাবে জীবনের প্রতি হতাশা, কাজে অনীহা, পারিবারিক অশান্তি ওঃ অপরাধ প্রবণতা, সমাজে ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়।
(৪) আর্থিকভাবে সর্বশান্ত পরিবার পরিজনকে অনটনে ফেলা, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি প্রবণতা বৃদ্ধি, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে হাত পাতা, শেষ বয়সে অতি কষ্টে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন।
করনীয়

মাদক দ্রব্যের ছোবলে গোটা দেশ আজ আক্রান্ত। এর ভয়াবহ পরিণতি দেখে প্রশাসন বিচলিত, অভিভাবকরা আতঙ্কিত, চিকিৎসকরা দিশেহারা। মাদক আসক্তদের জন্য খোলা হয়েছে “এ্যান্টি ড্রাগ সেল” দেশের হেরোইন চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর আইন রয়েছে। তারপরও মাদক আসক্তির পরিমাণ উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য পাড়ায় পাড়ায় গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাছাড়াও মাদকাসক্তির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন-(১) নৈতিকতার কার্যক্রম প্রসার করা, (২) চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, (৩) বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, (৪) সামাজিক আন্দোলন হিসাবে গ্রহণ করা, (৫) মাদকদ্রব্যের সহজ লভ্যতা রোধ করা, (৬) মাদক বিরোধী আইন প্রতিষ্ঠা করা, (৭) মাদকদ্রব্যের কুফল সবার কাছে তুলে ধরা, (৮) পারিবারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, (৯) বব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে গণসচেতন করে গড়ে তোলা, (১০) খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগ করা, (১১) সেবনকারীদের প্রশিণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দতা বৃদ্ধি করা, (১২) মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় রোধ করা, (১৩) পাঠ্যসূচিতে মাদক সেবনের ভয়াবহতা তুলে ধরা, (১৪) মাদক দ্রব্য প্রতিরোধ দিবস জাতীয় ভাবে পালন করা।
নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা

সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু এদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে মাত্র চারটি। এগুলোতে মোট শয্যা সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে চিকিৎসক সংকটে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট খুলনার ময়লাপোতার নিরাময় কেন্দ্র প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ। ঢাকার তেজগাঁওয়ে ৪০ শয্যার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন সাতজন। রাজশাহীর উপশহর ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের নিরাময় কেন্দ্রে শয্যা আছে পাঁচটি করে, চিকিৎসক আছেন একজন করে। নেই আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি। এসব থেকেই বোঝা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি কেন্দ্রগুলোর মাদকাসক্ত চিকিৎসার করুণ অবস্থা। অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে বেসরকারিভাবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে তিন শতাধিক। এগুলোর মধ্যে ঢাকার ছয়টিসহ মোট ৫৪টির মতো কেন্দ্রের অনুমোদন (লাইসেন্স) রয়েছে। বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার জন্য আবাসিক এলাকার পাকা বাড়ি বা ভবনে অবস্থিত, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ হতে হবে। একজন রোগীর জন্য কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকতে হবে। অন্যদিকে প্রতি ১০ বেডের জন্য পৃথক একটি টয়লেট, বাথরুম, বিশুদ্ধ পানি অন্যান্য সুব্যবস্থা এবং খণ্ডকালীন বা সার্বক্ষণিক একজন মনঃচিকিৎসক, সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার, দু’জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবনরক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্রাদি থাকতে হবে। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তির রক্ত, কফ, মলমূত্র ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা থাকতে হবে। কেন্দ্রে একক বা দলগত পরামর্শক এবং মানসিক বিনোদনের জন্য অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন ও কাউন্সেলিংয়ের জন্য ২০ জনের উপযোগী একটি শ্রেণীকক্ষ থাকা অন্যতম। কিন্তু বেশিভাগ নিরাময় কেন্দ্র মানছে এ নিয়ম।