কর্মসংস্থান তৈরিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

কর্মসংস্থান তৈরিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

| আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ১৪:৩১ | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২০, ১৪:২১

করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্পে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঋণের ফলে এক লাখ নারীসহ কমপক্ষে আড়াই লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে আর বেসরকারি বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরসি টেমবোন বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীটি দারিদ্র্য নিরসন ও জনমিতির সুবিধার সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য অর্জনকে গভীরভাবে বিপদে ফেলেছে। এই প্রকল্পগুলি ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি বাড়ানোর সাথে সাথে আরও বেশি উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে জনগণ ও অর্থনীতিকে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।

৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ থেকে মূলধন নিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ (পিআরইডি) প্রকল্পর আওতায় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগ হবে। যেটা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়ার পার্কে হবে। যা প্রায় ১.৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। যার মধ্যে সফটওয়্যার পার্কে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ শতাংশ চাকরি নারীদের জন্য।

এ ছাড়া অর্থনীতি ও ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা বিষয়ক প্রকল্পে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যার ফলে সরকারী খাতের আইটি বিনিয়োগে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ লাখ তরুণকে আইটির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি নারীদের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করবে, ডিজিটাল এবং বিপর্যয়কর প্রযুক্তিতে এক লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেবে, এবং একটি ডিজিটাল নেতৃত্বের একাডেমী এবং শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র স্থাপন করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় আইটি সংস্থাগুলিকে প্রচার করতে সহায়তা করবে। মহামারী থেকে দুর্বলতাগুলি হ্রাস করতে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে, প্রকল্পটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং কৌশলগত শিল্পকে ডিজিটালাইজ করতে সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংক আজ এই দুটি প্রকল্প ঋণ ছাড়াও বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থায়নটি বাংলাদেশ, নারী, যুবক এবং অভিবাসী শ্রমিকসহ নাগরিকদের জন্য বৃহত্তর কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করবে বলে জানান বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে!

সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ পঙ্গু হন স্ট্রোকের কারণে। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্ট্রোক। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪ জনে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়লে স্ট্রোক রোগে আক্রান্তের হার ও মৃত্যু কমে আসবে।  

আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের আতা এলাহী খান মিলনায়তনে আয়োজিত বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের এক কর্মশালায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।সেখানে বক্তারা আরও বলেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসাসেবা। এজন্য হাসপাতালগুলোতে স্ট্রোক ইউনিট চালুর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় হাসপাতালেও স্ট্রোকের আলাদা কোনো ইউনিট নেই। যার ফলে রোগীরা সময়মত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ সময়মতো সেবা পেলে পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাঁচতেন সাধারণ মানুষ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে মায়ের মত। এখানে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না।  তবে এ হাসপাতালে স্ট্রোক ইউনিট নেই এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি।  ‍

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ক্যাথল্যাব চালু হয়েছে। এখান থেকে সাধারণ মানুষ বিশ্বমানের সেবা পাবেন।

কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালুর ফলে এনজিওগ্রাম পরীক্ষার পর রোগীদের নামমাত্র ফি নিয়ে রিং পরানো, পেস-মেকার স্থাপন, হার্টের ভাল্ব রিপেয়ারিংসহ প্রয়োজনে বাইপাস সার্জারি করা যাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ সেবা পাওয়ার ফলে রোগীদের ভোগান্তি ও খরচ অনেক কমে যাবে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনের প্রশংসা করে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, এই হাসপাতালের প্রভূত উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।  ব্রিগেডিয়ার নাসির একজন রোগীবান্ধব চিকিৎসক। অন্য পরিচালকদের যেসব বিষয়ে গুরুত্ব বুঝিয়েও আদায় করা যেত না, সেখানে তিনি এই হাসপাতালে ক্যাথল্যাব চালু করেছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষ সহজেই স্ট্রোকের সেবা পাবেন। তিনি আরও কিছুদিন থাকলে আমাদের এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার অনেক উপকার হতো।  তিনি বিদায় নিতে যাচ্ছেন। নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক এসেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি তিনিও এ হাসপাতালের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, আমি এ হাসপাতালে আরও কিছুদিন আছি। এখানকার কর্মরত চিকিৎসকদের খুব মিস করব। সাধারণ মানুষের সেবায় এ হাসপাতাল বিশেষ অবদান রেখেছে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসীত চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, ঢামেক হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, ঢামেক হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া ও আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফফর হোসাইন। অনুষ্ঠানে স্ট্রোক নিয়ে একটি বুকলেটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।