সভ্যতার বিবর্তন

বর্তমান বিশ্বে একটি সভ্যতারই একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলছে। আধুনিক ইউরোপ থেকে উদগত এ সভ্যতা বিগত তিন-চার শ’ বছরে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সমকালীন পৃথিবীর রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই এ সভ্যতার দর্শনের ভিত্তিতে চলছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার করালগ্রাসে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) প্রায় সব ধর্মানুসারী মানুষেরই নিত্যদিনকার যাপিত জীবনব্যবস্থা বদলে দিয়ে অনেকাংশে এর মূল রূপ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

এ সভ্যতার প্রধান দু’টি উপকরণ হচ্ছে বস্তুবাদ ও ভোগবাদ। মানুষের ইন্দ্রিয়ের নাগালের বাইরে যা কিছু, এর স্বীকৃতি এখানে নিরঙ্কুশ উপেক্ষিত। অথচ মানুষের ইন্দ্রিয় ক্ষমতা মরীচিকার চোরাবালিতে আবদ্ধ। অ্যাঞ্জেলস তাই বলেছেন, ‘জড় পদার্থ’ বা ‘বস্তুই’ হলো স্বীকৃত সত্য। বিবেক যা মানুষের দৃষ্টিতে দৃশ্যমান নয়, ইন্দ্রিয়ও যার নাগাল পায় না, সেখানে প্রবৃত্তির দাসত্বই এদের অবাধ, ছন্নছাড়া ও লাগামহীন জীবনের পুতিগন্ধময় ক্লেদাক্ত ভাগাড়ে নিক্ষেপ করেছে। সেই সাথে অতিন্দ্রিয় যে বিষয়টি যোগ হয়েছে, সেটি হচ্ছে সংশয়বাদ বা দ্বন্দ্ববাদ তথা ডায়ালেক্টিজম। আর এই সংশয় হচ্ছে জীবন ও জগতের সৃষ্টি পরিচালনা ও বিনাশ সম্পর্কে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পেরে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে সাধনা ও গবেষণার মাধ্যমে জীবন চলার পথ বাছাই করবে। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ঈমান ও ইয়াকিন, ঠিক তার বিপরীত বিষয়টি।

খ্রিষ্টধর্মের বিকৃত রূপ থেকেই এ সংশয়ের জন্ম। সংশয় বুকে পুষে এ সভ্যতা কয়েক শ’ বছর পথ অতিক্রম করেছে। গির্জার অত্যন্ত প্রভাবশালী মূর্খ যাজকদের ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে কঠোর ও নিষ্ঠুর শাসনের নিষ্পেষণ থেকে আলোকিত জীবনে পদার্পণ করতে চতুর্দশ শতাব্দী থেকে ইউরোপীয় রেনেসাঁর স্রোত চলতে থাকে। এ সময় তারা সমাজ সংস্কারে ব্রতী হয়। কর্ডোভা, গ্রানাডা, সিসিলি, আন্দালুসিয়া, সেভিল কিংবা বাগদাদের মতো বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত খ্রিষ্টান ইউরোপীয় ছাত্রদের মনোজগতে এ উপলব্ধি বদ্ধমূলভাবে প্রোথিত হয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এ ধর্মের প্রয়োগ ও ব্যবহার একেবারেই অসার ও বিপজ্জনক।

কারণ, যাজকেরা তাদের বোধ-বিশ্বাসবিরোধী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো কথাই শুনতে ও বিরুদ্ধ মতবাদ সহ্য করতে প্রস্তুত ছিল না। এসব ক্ষেত্রে নিষ্ঠুর নির্মমতা ও কঠোরতার নীতি তারা অবলম্বন করত; যার নেপথ্যে প্রধানত দোহাই হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল ধর্ম। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, ইউরোপ ইনকুইজিশন কোর্ট নামে বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে গির্জা ও তার যাজকেরা কী পরিমাণ নৃশংসতায় মেতে উঠেছিল। পুরো পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর বেশ কিছু দশকজুড়ে অব্যাহত ছিল তাদের এই ধর্মভিত্তিক দুর্বৃত্তপনা। গির্জার নৃশংসতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত গণমানুষের ক্ষোভ জমতে থাকে। গির্জা তার শাসনক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত নয়; অন্য দিকে জ্ঞানীগুণী, শিক্ষিত শ্রেণী ও সমাজ সচেতন এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও গির্জার অশিক্ষিত মূর্খ যাজক শ্রেণীর হাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নয়, কারণ গির্জার যাজকেরা যেসব অদ্ভুত তত্ত্ব-তথ্য ধর্মের নামে, ধর্মের বিধান বলে চালিয়ে আসছিল, সেসব তত্ত্ব-তথ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক তা এখন আর গোপন নেই; বরং প্রতিদিনই গির্জার অজ্ঞানতা মানুষের কাছে উন্মোচিত হচ্ছে। বিপুল জনসমর্থিত ইউরোপীয় রেনেসাঁর অপ্রতিরোধ্য ঢলের প্রাবল্যে যাজকেরা যখন প্রায় একঘরে, এমন সময় শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্য থেকে সুচতুর কিছু ব্যক্তি মার্টিন লুথারের (১৪৮৩-১৫৪৬) নেতৃত্বে এ দ্বন্দ্ব অবসানে এগিয়ে এলেন। তারা একটি আপসের মাধ্যমে সাব্যস্ত করলেন, ধর্ম শুধু ব্যক্তির জীবনেই এর কতক মৌলনীতি চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

পাদ্রি-যাজকের লাগাম টেনে আনা হলো গির্জা পর্যন্ত। দুর্ভাগ্যবশত, আজকের দিনে মুসলিম সমাজে এমন একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’। চার্চের হাতে রাষ্ট্র ও সমাজের যত প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে, তা এখন থেকে থাকবে রাষ্ট্রের হাতে আর রাষ্ট্রের কর্ণধারের শপথ নেবেন চার্চের কাছে। এভাবেই খ্রিষ্টধর্মের প্রায়োগিক নাগপাশের ছোবল থেকে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো মানুষের জীবন। মুক্তবিহঙ্গের মতো মানুষ মুক্তচিত্তে সাধনা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করল পুরোদমে। বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রচিন্তক, সমাজতত্ত্ববিদ কিংবা অর্থনীতিবিদদের গবেষণা ও সাধনার প্রায়োগিক রসায়নের ভিত্তিতে রচিত হলো আধুনিক ইউরোপীয় সমাজ। সেকুলার মতবাদের আওতায় তাদের লেনদেন, চলাফেরা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষাদীক্ষা, বিচার-আচার তথা বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র পরিচালিত হতে লাগল। আর ধর্ম দূরীভূত হলো শুধু রেনেসিস্টদের দিয়ে নয়, যাজকদের ভ্রান্ত কর্মপ্রবাহের যোগান্তের মধ্য দিয়ে। অতএব, এ সত্য আজ অবলীলায় বলতে হয়, একটি সময়ের অনিবার্য দাবি মেটাতে বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্ববাদ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদেরই গর্ভজাত ফসল। আজকের পাশ্চাত্য সভ্যতা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং এর থেকে উৎসারিত বস্তুবাদ ও সংশয়বাদ কিংবা দ্বন্দ্ববাদ- এ তিনটি মতাদর্শের সমন্বয়ে রচিত একটি ধর্ম ও জীবনব্যবস্থা।

দুই.
সর্বশেষ ক্রুসেড শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করার পর তদানীন্তন ইউরোপীয় সমাজে এক প্রচণ্ড প্রতিশোধস্পৃহার সৃষ্টি হয়। আগেই উল্লেখ করেছি, ইতোমধ্যে তারা তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের পরিচালিত বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠগুলোয় জাগতিক জ্ঞানে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অন্য দিকে মুসলমানেরা হাজার বছরেরও বেশি সময় বিশ্ব শাসনের পর তাদের মধ্যে আলস্য ও ভোগবাদিতা পেয়ে বসেছে। আত্মকলহ ও আত্মঘাতী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মতো আত্মপ্রবঞ্চনায় বড় হয়ে রাজ্য পরিচালনায় তাদের নৈতিক শক্তি ও ভিত্তি দুটোই যথেষ্ট পরিমাণে নড়বড়ে। মুসলমানদের এ পৃথিবীতে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার রক্ষাকবচ পবিত্র কুরআনুল কারিমের গবেষণা ও অধ্যয়ন এবং সার্বিক জ্ঞানচর্চায় তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল অনীহা। তৎকালীন বিশ্বের মুসলমানদের জাতীয় জীবন যখন অনেকটাই ঘোর অমানিশায় তিমিরাচ্ছন্ন, ঠিক সেই ফোকরটির অন্বেষণ করে আসছিল বহুকাল ধরে পশ্চিমের খ্রিষ্ট সমাজ; এমন একটি সময় কাজে লাগানোর স্বর্ণালী সুযোগ গ্রহণ করল তারা ষোলআনাই। শীতার্ত ইউরোপ মহাদেশের তুলনায় মুসলিম জন-অধ্যুষিত এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বরাবরই খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ছিল এক অফুরন্ত ভাণ্ডার।

এক দিকে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা ও রাজ্য বিস্তার এবং অন্য দিকে মুসলিম দেশগুলোর ধনভাণ্ডারের হাতছানিতে উন্মত্ত পশ্চিমের খ্রিষ্ট সমাজ তাদের ছলচাতুরী ধুরন্ধরী বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে বণিক বেশে পদার্পণ করল ভারতীয় উপমহাদেশে। এমনিভাবে অন্তরের মূল দুরভিসন্ধিকে চেপে রেখে ডাচরা পাড়ি জমাল দূরপ্রাচ্যের দেশ ইন্দোনেশিয়া, স্পেন ও ফিলিপাইনে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার অনেক দেশ করতল করল ব্রিটিশ ও ফরাসিরা। পূর্ব আফ্রিকার দেশ লিবিয়া দখল করল ইতালি। এসব দেশের কোথাও বণিক বেশে, কোথাও চিকিৎসার নামে আবার কোথাও নানা ধরনের মিশনারি সেবাদানের চটকদার বুলি আওড়িয়ে এরা অনুপ্রবেশে সক্ষম হলো। দেশভেদে কোথাও প্রায় দুই শ’, কোথাও দেড় শ’ আবার কোথাও প্রায় শত বছর তাদের শাসনকাল স্থায়ী হলো। তাদের অধিকৃত দেশগুলোর বেশির ভাগই ছিল যেহেতু মুসলিম, তাই তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, তাহজিব-তামাদ্দুন, প্রশাসন, অর্থনীতি ও বিচারকার্য পরিচালনার মানদণ্ড ছিল কুরআন-সুন্নাহ, ইসলামি শরিয়া মোতাবেক। কিন্তু অনুপ্রবেশের অল্পকালের মধ্যে শাসকগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জন্য রবিঠাকুরের ভাষায়- ‘গণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা’ হিসেবে আবির্ভূত হলো।

প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে Divine guidence বিদূরিত হলো এবং সেই স্থলে পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা নব্য জীবনবিধানের ভিত্তিতে এসব দেশের মানুষের জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালিত হতে লাগল। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মুসলমান যারাই এর বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, রাজন্যবর্গ তাদের প্রতি যাজকদের মতো পৈশাচিক দমননীতি অবলম্বন করল। দীর্ঘ শাসনের গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে মুসলমানদের অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে, অনেকে শাসককুলের সুবিধাভোগী হয়ে আবার অনেকে দ্বীন ইসলামকে সঠিকভাবে অনুধাবনের অনিচ্ছা কিংবা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে এক আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাহীন আত্মবিস্মৃত ভাগ্যহত জাতিতে পরিণত হলো। বিশ্বময় মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে তাদের প্রণীত জীবনব্যবস্থার প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য সৃষ্টি করতে এ জিনিসটিই চাচ্ছিল তৎকালীন পশ্চিমা রাজন্যবর্গ। উল্লেখ্য, তাদের এই মানসিকতা আজ পর্যন্ত অনুরূপ আছে। ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সেক্রেটারি অব কলোনিজ জর্জ গ্ল্যাডস্টোন প্রদত্ত এক ভাষণে এক জিলদ কুরআন শরিফ হাত উঁচিয়ে বলেন যে, ‘যত দিন মুসলমানদের মধ্যে এই কুরআন শরিফ থাকবে আমরা তাদের বশ করতে পারব না। হয় তাদের কাছ থেকে এটি আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে অথবা তারা যেন এর প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে আমাদের, তাদের প্রতি সে ব্যবস্থা করতে হবে।

দুঃখজনক সত্য, তাদের সেই আকাক্সক্ষা ও সাধনা দূরপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে সর্বপশ্চিমের মুসলিম নিবাস আলজেরিয়া, মরক্কো পর্যন্ত অনেকাংশেই বাস্তবায়ন হয়েছে। এসব দেশে মুসলমানদের মধ্য থেকে এমন অনেক শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রশাসকের আবির্ভাব হয়, যাদের অবস্থা সত্যিকার অর্থেই হয়ে ওঠে এমন- More catholic then Pope। সত্যিকার ইসলামের কথা যিনি বলেছেন, তিনি স্বজাতি শাসকের হাতে এমন অবর্ণনীয় ও অমানবিক নির্যাতন এবং কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, যা ইতঃপূর্বে তাদের আদর্শিক প্রভুরাও এতটা করেনি।

তিন.
শান্তির প্রত্যাশায় বিশ্ব আজ দিশেহারা। দু-দু’টি বিশ্বযুদ্ধ এবং সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙনের পর একক পরাশক্তির ঠাণ্ডা লড়াইয়ের অবসানে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা আপাতত টলে গেলেও একক পরাশক্তির দর্প-জুলুমের আরেক পাহাড় তৈরির উন্মত্ত প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। মোট কথা, এ সভ্যতা মানুষকে দুদণ্ড শান্তিতে বসবাস করতে দেয়নি। ইতঃপূর্বে ভোগবাদ ও পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে সৃষ্ট কমিউনিজম বিশ্বের সরলপ্রাণ ও শান্তিপ্রত্যাশী মানুষকে গত শতাব্দীর প্রায় ৭৫ বছর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ছেড়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা শক্তি অর্জনের আগে সমগ্র বিশ্ব ইসলামি সভ্যতার ছায়ায় প্রায় হাজার বছর পথ অতিক্রম করেছে। হাজার বছরেও পৃথিবীতে সঙ্কটের এত বড় আবর্ত সৃষ্টি হয়নি। তা ছাড়া বস্তুগত উন্নতির দিকনির্দেশনাও ইসলাম দিয়েছিল। তার ফলে বস্তুগত উন্নতির যে বুনিয়াদ সৃষ্টি করেছিল, তারই ভিত্তিতে আধুনিক সভ্যতা এতটা পথ অতিক্রম করতে পেরেছে। ইসলামের আওতায় সভ্যতার এ বিধ্বংসী রূপ ও মারণাস্ত্রের বাহার ছিল না।

তাই ইসলামই আধুনিক সভ্যতার উত্তরাধিকারী। মৃত্যু অবধারিত হলেও মৃত্যুর জন্যই মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। আর এ জন্য বেঁচে থাকার মেয়াদ যত স্বল্পই হোক না কেন, তার সার্থকতাই মৃত্যুকে সার্থক করে তোলে। এজন্যই ইসলাম বস্তুবাদী উন্নতির জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, বরং ইসলামের ঈমান ও ইয়াকিনের মধ্যে বস্তুবাদী উন্নতিকে মানবিক কল্যাণমুখী করার মন্ত্র নিহিত আছে। তাই ইসলামের অনুসারী পৃথিবীও এগিয়ে চলে। তুরস্কে ১৯২৩ সাল থেকে ৭২ বছর কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের চেতনায় জনগণকে গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের অন্তর থেকে ঈমানের অগ্নিকণা নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি।
ড. নাজিম উদ্দিন আরবাকান সে অগ্নিকণাকে অগ্নিশিখায় রূপান্তরিত করেছেন। রজব তাইয়েব এরদোগানের মতো একজন জ্ঞানী, সৎ, যোগ্য, সাহসী ও ধার্মিক ব্যক্তি আজ দু-দু’বারের গণরায়ে সে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

আশা করা যায়, তিনিই হবেন মুসলিম বিশ্বের সর্বপ্রধান নেতা। তিনি মুসলিম উম্মাহর আশা পূরণে ভূমিকা পালন করবেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার জনগণ ড. আনোয়ার ইব্রাহিমের মতো একজন ইসলামি সভ্যতার কর্ণধার এবং আধুনিক মালয়েশিয়ার অর্থনীতির বুনিয়াদ সৃষ্টিকারী বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিত্বের পক্ষে তাদের গণরায় দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ন-সুহার্ত গংদের মতো কঠোর সেকুলারদের শাসনের পর আজ সেখানে ৫০টিরও বেশি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিবর্তিত সভ্যতার এ হওয়া আজ সুদূর আফ্রিকার মিসর, তিউনিসিয়া ও মরক্কো পর্যন্ত দোলায়িত করছে। ১৯৯২ সালে আলজেরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট ৮০ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। তারপরও তাদের এই গণরায়কে চাপিয়ে রাখা হয়। সত্যের ধর্ম হলো একদিন তা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। মিথ্যা ঢাকা পড়ে। নজরুলের ভাষায়- ‘বাজেরে দামামা বাঁধরে আমামা/শির উঁচু করি মুসলমান এসেছে দাওয়াত নয়া জামানার/ভাঙা কেল্লায় উড়ে নিশান।’ কয়েক শ’ বছরের নিগ্রহের যাঁতাকলে পিষ্ট বিশ্বসমাজ আজ এ সত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে যে শত আঁধারের পর্দা পেরিয়ে রাঙা প্রভাত একদিন আসবেই। নারঙ্গী বনে সবুজ পাতা কাঁপতে কাঁপতেই নতুন দিনের সূচনা হবে।

আইনস্টাইনের ‘থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’ প্রমাণিত

আবার পরীক্ষায় পাশ। এবং দারুণ রেজাল্ট। ছাত্রের নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে সদ্য প্রকাশিত তথ্য জানাচ্ছে, ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরেও নক্ষত্রের আলো খবর দিচ্ছে আইনস্টাইনের ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’ অক্ষরে-অক্ষরে ঠিক।

১০২ বছর আগে প্রকাশিত তার তত্ত্বে বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন, প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় টান যে এলাকায় বিদ্যমান, সেখানে আলো প্রতি সেকেন্ডে কম তরঙ্গ সৃষ্টি করে ছড়াবে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলে ‘রেড শিফ্ট’। কারণ, প্রতি সেকেন্ডে কম তরঙ্গ সৃষ্টি করে ছড়ালে আলো লাল রঙের দিকে এগোয়।

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে উপস্থিত এবং সূর্যের চেয়ে ৪০ লাখ গুণ বেশি ভারী এক ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘এস-টু’ নামের এক তারা ঠিক ওই রকম ঘটনার সম্মুখীন কি-না, তা জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। ওদের নেতৃত্বে ছিলেন জার্মানির গার্শিং-এ অবস্থিত ‘ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ফিজিক্স’-এর বিজ্ঞানী রেইনহার্ড গেনজেল। জার্মানির তো বটেই, ফ্রান্স, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা এবং আয়ারল্যান্ডের কয়েক শ’ বিজ্ঞানী প্রায় তিন দশক ধরে ওই ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে ‘এস-টু’-র চলন লক্ষ করছিলেন চিলিতে অবস্থিত অবজারভেটরি থেকে।

গেনজেল আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ভারী ওই ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যখন ‘এস-টু’ ছুটছিল সেকেন্ডে ৭৬০০ কিলোমিটার বেগে, তখন তার আলো পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সে আলো লালের দিকে ঘেঁষে যাচ্ছে ঠিক ততটা পরিমাণে, যতটা ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’তে আইনস্টাইন অনুমান করেছিলেন।

পৃথিবীর চারপাশে যেহেতু প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় প্রভাব নেই, তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুঁজতে হয়েছিল এমন এক ব্ল্যাক হোল, যা সূর্যের তুলনায় অনেক ভারী। এমন ব্ল্যাক হোল যে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে আছে, তা বিজ্ঞানীরা জানেন। আর দরকার ছিল, এমন এক নক্ষত্রের, যা ও রকম ভারী ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যাবে। ‘এস-টু’ হল, সে রকমই এক তারা।

১৯৯০ সাল থেকে গবেষকেরা ওই তারার চলন লক্ষ্য করেছেন। দূর থেকে ব্ল্যাক হোলের কাছে এসে আবার দূরে চলে যাবে ‘এস-টু’। কাছে এবং দূরে, মহাকর্ষীয় টানের প্রভেদে কতটা বাড়ছে-কমছে, ‘এস-টু’ থেকে নির্গত আলোর লাল রঙের দিকে ঘেঁষা, তা পরীক্ষা করাই ছিল বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য।

এখনও শেষ হয়নি তাদের পরীক্ষা। চলবে আগামী মাসেও। তবে, ২৮ বছর ধরে পরীক্ষাতেও ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’ যখন সসম্মানে পাশ করেছে, তখন কি আর তা কোনো দিন ভুল প্রতিপন্ন হবে? গেনজেল এবং তার সতীর্থরা উড়িয়ে দিচ্ছেন তেমন সম্ভাবনা।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝড় আর আমাদের প্রস্তুতি

বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা কস শোয়াবের লেখা একটি বই ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’। বাংলায় এর নাম দেয়া যায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এ বইটি আমাদের অনেক ভাবাচ্ছে! প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সমাজও বদলাচ্ছে। পৃথিবী এক সময় আদিম সাম্যবাদী সমাজ ছিল। লাঙ্গল আবিষ্কার হলো, কৃষির প্রচলন ঘটল, সেখান থেকে এলো সামন্ততন্ত্র পৃথিবীকে চমক লাগানো জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন। লেখকের মতে, এসব প্রথম শিল্প বিপ্লব। তারপর বিদ্যুৎ, রেডিও, টেলিভিশন এসব দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব। তারপর ডিজিটাল যুগ ও ইন্টারনেট। এটা তৃতীয় শিল্প বিপ্লব। আবার বর্তমান সময়ের ফেসবুক, টুইটার অনেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ধরলেও অর্থনীতিবিদরা এসবকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সংস্কার বলে অভিহিত করেন।

২০২৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে কী কী নতুন বাস্তবতা দেখা দেবে, তার একটি তালিকা তিনি দিয়েছেন। তার মধ্যে কিছু হলো- ২০২৫ সালের মধ্যে শরীরে মোবাইল ফোন বসানো হবে। বর্তমানের প্রেসমেকারের মতোই অনেকটা। তাতে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কিন্তু ক্ষতি হবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের একাধিক ডিজিটাল ঠিকানা থাকবে, তাতে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাড়বে। তেমনি বাড়বে এ সংক্রান্ত অপরাধ, থাকবে চশমার সাথে ইন্টারনেট যুক্ত, পোশাকের সাথে ইন্টারনেট যুক্ত, ‘ইন্টারনেট অব থিংস।’ ইন্টারনেট অব থিংস’ সব জিনিসই ইন্টারনেট যুক্ত থাকবে। এমনকি গবাদিপশু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করবে।

৫০ হাজার লোকের শহরে কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল লাগবে না। সব ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবে যেমন- চালকবিহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, বিটকয়েন ব্লকচেইন। বিকল্প টাকা। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা হবে। থ্রি-ডি প্রিন্টারের থেকে নেয়া যকৃত মানুষের শরীরে বসানো হবে। প্রথম মানব শিশু জন্ম নিবে, যার জিনোম কৃত্রিমভাবে উন্নতর করা হয়েছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে আগামী সাত বছরের মধ্যে পৃথিবীর হাজারও না ঘটা সব বিষয় ঘটতে যাচ্ছে। যার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় এখনই চলে এসেছে। আর এগুলো পরিবর্তন হলে আমাদের কি হবে? আমরা এখন পরিস্থিতিটা বুঝছি না।

আমাদের দেশে এখন আর গরু গাড়ি চালায় না হয়তো কিন্তু মানুষ এখনো রিকশা চালায়। সে দেশে গাড়ি চলবে ড্রাইভার ছাড়া, এটা কল্পনাতীত। পৃথিবীতে পোশাক শিল্পে যদি শ্রমিক না লাগে তাহলে সে কাজ বাংলাদেশ কেন করবে? আর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস প্রবাসী শ্রমিকদের আয়। আজ আমরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছি গ্যারেজ কিংবা কলকারখানায় কাজ করতে, তখন ওই কাজও তো যন্ত্র করবে। অটোমেশন সর্বত্র হবে। নির্মাণ খাতেও হবে। মানুষ কাজ হারাবে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে- ২০২৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে বেকারত্ব বাড়বে, সাথে একটি বিপর্যয়ের পক্ষে যাবে। যদি না আমরা এ বিষয় মাথায় রেখে অগ্রসর হই। আগাম প্রস্তুতি নিই। পরিকল্পনাবিদদের এ নিয়ে ভাবতে হবে। এ ঝড় মোকাবেলায় কিছু প্রদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে কিছু দেয়া হলো- দেশের প্রতিটি নাগরিককে দক্ষ ও শিক্ষিত করে তুলতে হবে।

আমাদের বিজ্ঞাননির্ভর উপযোগী শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষার এ জায়গাটা নিয়ে আমাদের ছাত্রদের অনেক দুশ্চিন্ত। প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, রাজনৈতিক কারণে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগ, ফাঁকি ও কোচিংবাণিজ্যে। এসব আমাদের শিক্ষাকে ধসে দিচ্ছে। আর আমাদের শিক্ষা গবেষকেরা এ নিয়ে ভাবতে চান না। অথচ এই মুহূর্তে এগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবা উচিত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝড়ের সাথে এগিয়ে যেতে হলো, আমাদেরকে বিজ্ঞানের আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং নির্ভর হতে হবে ইন্টারনেটভিত্তিক কাজে, বেকারদেরকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজে লাগাতে দক্ষতারও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন করতে হবে। তরুণদের মেধাকে পরিস্ফুটন করতে হবে। তাহলেই আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতিবাচক দিক থেকে বাঁচব এবং ঝড়োগতিতে এগিয়ে যেতে পারব। তাই বিষয়গুলোর প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কামনা করছি। হ
লেখক : ছাত্র, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজ, আইইআর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যারিয়ার কি ?

ক্যারিয়ার কি ?
জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসাবে মানুষ কোন না কোন কাজ করে থাকে। এই কাজ করার মাধ্যমেই মানুষ কোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে জীবিকার পথ হিসেবে তা বেছে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে পন্থাকে বেছে নেয় তাই মূলত তার ক্যারিয়ার যেমন একজন ডাক্তার তার জীবিকা হিসেবে ডাক্তারি করে থাকেন। এখানে ডাক্তারি করাটাকে তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। আর এজন্য তিনি কোন হাসপাতালে কাজ করেন। সুতরাং আরেকটি বিষয় এখানে চলে আসে যে, কাজ করা আর ক্যারিয়ার এ দুটি বিষয় পরষ্পর সম্পর্ক যুক্ত হলেও একই বিষয় নয়। মূলত মানুষ তার ক্যারিয়ার ঠিক করতে বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।

আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- একজন ছাত্র কোন একটি সাধারন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক করার পর হয়ত কোন প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি নিলেন। কিন্ত এ সময়ে তার ক্যারিয়ার কে মার্কেটিং বলাটা ঠিক হবে না। কারণ এক বছর পর তিনি হয়তো অন্য একটি কোম্পানীতে সেলস বা বিক্রয় বিভাগে অথবা হিসাবরক্ষণ বিভাগে চাকরি নিলেন। এভাবে কয়েক বছর কাজ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তিনি কোন বিভাগে নিজেকে দক্ষ করবেন এবং পরবর্তীকালে সে বিষয়েই নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করবেন বা সে বিষয়েই উচ্চপদ গ্রহণ করবেন। এ সময়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের একটি প্রথম এবং প্রধান ধাপ অতিক্রম করবেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ক্যারিয়ারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় পরবর্তীকালে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন পন্থা বা বিষয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যেতে পারে।

এ সিদ্ধান্ত নেয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তি যত শুরু থেকে তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন তিনি তত তাড়াতাড়ি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য যে বিষয়টি দরকার তা হলো, সাফল্য সম্পর্কে ধারণা থাকা।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ও দক্ষতা উন্নয়নের কৌশল

জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসাবে মানুষ কোন না কোন কাজ করে থাকে। এই কাজ করার মাধ্যমেই মানুষ কোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে জীবিকার পথ হিসেবে তা বেছে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে পন্থাকে বেছে নেয় তাই মূলত তার ক্যারিয়ার যেমন একজন ডাক্তার তার জীবিকা হিসেবে ডাক্তারি করে থাকেন। এখানে ডাক্তারি করাটাকে তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। আর এজন্য তিনি কোন হাসপাতালে কাজ করেন। সুতরাং আরেকটি বিষয় এখানে চলে আসে যে, কাজ করা আর ক্যারিয়ার এ দুটি বিষয় পরষ্পর সম্পর্ক যুক্ত হলেও একই বিষয় নয়। মূলত মানুষ তার ক্যারিয়ার ঠিক করতে বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।

আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- একজন ছাত্র কোন একটি সাধারন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক করার পর হয়ত কোন প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি নিলেন। কিন্ত এ সময়ে তার ক্যারিয়ার কে মার্কেটিং বলাটা ঠিক হবে না। কারণ এক বছর পর তিনি হয়তো অন্য একটি কোম্পানীতে সেলস বা বিক্রয় বিভাগে অথবা হিসাবরক্ষণ বিভাগে চাকরি নিলেন। এভাবে কয়েক বছর কাজ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তিনি কোন বিভাগে নিজেকে দক্ষ করবেন এবং পরবর্তীকালে সে বিষয়েই নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করবেন বা সে বিষয়েই উচ্চপদ গ্রহণ করবেন। এ সময়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের একটি প্রথম এবং প্রধান ধাপ অতিক্রম করবেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ক্যারিয়ারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় পরবর্তীকালে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন পন্থা বা বিষয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যেতে পারে।

এ সিদ্ধান্ত নেয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তি যত শুরু থেকে তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন তিনি তত তাড়াতাড়ি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য যে বিষয়টি দরকার তা হলো, সাফল্য সম্পর্কে ধারণা থাকা।
সাফল্য অর্জনে কী গুণাবলী থাকা উচিত:

o সাধারণ জ্ঞান
o নিজ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান
o আত্মপ্রত্যয়
o বুদ্ধিমত্তা
o কাজ করার দক্ষতা
o নেতৃত্ব
o ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার দক্ষতা
o সৃজনশীলতা
o আত্মবিশ্বাস
o যথাযথ বাচনভঙ্গি
o অন্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকা
o ভাগ্য
o উপরোক্ত গুণাবলী যারা অর্জন করেছেন তারাই সাফল্য লাভ করে থাকেন।

এই গুণগুল জন্মসূত্রে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।
নিজেকে জানুন, দেখুন তো আপনার মধ্যে এই গুণসমূহ আছে কিনা:
o সহমর্মিতা
o হাস্যরস
o সৌজন্যবোধ
o বিশ্বাস অর্জন- এর দক্ষতা

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা- এর জন্য অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। এজন্য যা করবেন:
o আপনার লক্ষ্যগুলি ঠিক করবেন
o লক্ষ্যগুলি কাগজে লিখবেন
o লক্ষ্যগুলি সুনির্দিষ্ট হতে হবে
o লক্ষ্যগুলি গুরুত্ব অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে
o প্রতিদিন লক্ষ্যগুলি স্মরণ করতে হবে
লক্ষ্য ঠিক করার জন্য S M A R T টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তার ব্যাখ্যা দেয়া হল:
S = Specific বা সুনির্দিষ্ট
M = Measurable বা পরিমাপযোগ্য
A = Achievable বা অর্জনযোগ্য
R = Realistic বা বাস্তবধর্মী
T = Timeframe বা সময়কাঠামো

সাফল্যের জন্য আরও যা জানতে হবে:

SEE Factors
S = Smile বা হাস্যময়
E = Eye Contact বা মনযোগ
E = Enthusiasm বা উদ্যোগ

আরও ৮ টি নির্দেশনা হল:

¤ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
¤ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা
¤ সময়ানুবর্তী হওয়া
¤ প্রস্তত থাকা
¤ নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা
¤ নিয়ন্ত্রণে রাখা
¤ সঠিকভাবে কাজ করা
¤ পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করা

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং সাফল্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। আপনাকে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনা জানতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে:
¤ আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন
¤ প্রতিটি কাজে এখন আপনি গড়ে কত সময় ব্যয় করছেন তা নিরূপণ/ ঠিক করুন
¤ প্রতিটি কাজে গড়ে কতটুকু সময় প্রয়োজন তা বের করুন
¤ প্রতিটি কাজে গড়ে আপনি কতটুকু সময় অতিরিক্ত ব্যয় করেন তা বের করুন
¤ এখন সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করবেন?

সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আগামীকাল আপনার করণীয় কাজগুলি একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন এবং তারপাশে কোন সময়ে তা করবেন তা লিখুন। আপনার হাতের অতিরিক্ত সময় অন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করুন।

ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের চাপের ব্যবস্থাপনা। আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি চাপ কমাতে না পারেন, তবে তা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা অনেক নেতিবাচক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছি, এর ফলে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। চাপ কমানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের যা করতে হবে:

¤ নিজের উপর বিশ্বাস রাখা
¤ নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলা
¤ সবকিছু সহজে গ্রহণ করা
¤ মাথা ঠান্ডা রাখা
¤ সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা
¤ নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখা

মেডিটেশন অনেক সময় আমাদের চাপ কমাতে পারে, তাই মেডিটেশন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন এর ব্যাপক চর্চা হচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগী হলে আপনি সহজেই আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন। কারণ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এর জন্য আপনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি অন্য কারো কাছ থেকে উপদেশ নিলেও নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন। কখনো অন্য কারো সিদ্ধান্ত যেন-আপনার ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়।

একটি ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্ত দক্ষতা বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতা, একটি দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুইটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক না। সাফল্য লাভ করার জন্য যত বেশী দক্ষতা অর্জন করা যায় ততই একটি সুন্দর ও সফল ক্যারিয়ার এর দিকে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কোন কোন দক্ষতা অবশ্যই উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যে দক্ষতাগুলি অবশ্যই উন্নয়ন করতে হবে তা হল:
¤ আইটি
¤ কমিউনিকেশন
¤ ব্যবস্থাপনা

কমিউনিকেশন দক্ষতা: আপনি কিভাবে অন্য একজন ব্যক্তির কাছে সুন্দরভাবে আপনাকে উপস্থাপনা করতে পারছেন, তাই হল আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা। অর্থাৎ আপনার কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহার এর মাধ্যমে আপনি আপনাকে কতটা আকর্ষণীয় করে তুলবেন অন্যদের কাছে।

¤ কমিউনিকেশন দক্ষতায় দক্ষ হতে হলে আপনাকে নিন্মোক্ত বিষয় গুলি চর্চা করতে হবে। যেমন- আপনার সাধারন জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবেন সব সময়।
¤ আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং বাচনভঙ্গির উন্নতি সাধন করার চেষ্টা করবেন। বাচনভঙ্গির উন্নয়নের জন্য উপস্থিত বক্তৃতা বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করা উচিত নিয়মিতভাবে। এমনকি বন্ধু-বান্ধব মিলে এই কাজটি করতে পারেন নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য।
¤ পোষাক- পরিচ্ছদের ব্যপারে যত্নবান হউন এবং যা আপনাকে মানায় এবং অন্যরা পছন্দ করে তা পরিধান করুন
¤ আপনার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ পরিহার করুন এবং হাতের নখ, চুলের খুশকি এবং অন্যান্য রোগ-জীবানু সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
¤ আয়নার সামনে অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলা চর্চা করুন এবং আঞ্চলিকতা যতটা পারুন পরিহার করুন।

ব্যবস্থাপনা দক্ষতা:

আপনার ক্যারিয়ার কে সুন্দর করতে ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনি দক্ষতা দেখাতে পারলে আপনি সহজে অন্যদের চোখে পড়বেন এবং আপনি ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হল:

¤ আপনাকে নেতৃত্বের গুনাবলী চর্চা করতে হবে। নেতা ভাবলেই নেতা হওয়া যায় না। তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নেতৃত্ব দেবার মানসিকতা থাকতে হবে।
¤ যে কোন কাজ হাতে নিলে তা সুন্দর ভাবে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে। মাঝ পথে কোন কাজ যদি কঠিন মনে করে ছেড়ে দেন, তাহলে বুঝবেন আপনার মধ্যে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব রয়েছে। কোন কাজ কঠিন মনে হলে চিন্তা করে বের করবেন কিভাবে তা অন্য উপায়ে সম্পন্ন করা যায়। কারা আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি।
¤ ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। এর পাশাপাশি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাও একটি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। আপনার সৌজন্যবোধ আপনাকে বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করবে।
¤ ভুল থেকে সঠিকটা শিক্ষা নেবার দক্ষতা থাকতে হবে। তার সাথে সাথে হাস্যরস বোধ আপনাকে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

আইটি দক্ষতা:

বর্তমান সময় আপনি যদি কম্পিউটার না জানেন, তাহলে আপনাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আবার তার মানে আপনি কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষিত হবেন তা নয়। আইটি দক্ষতা বলতে বোঝায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিঠি বা কোন ডকুমেন্ট লিখতে, সুন্দরভাবে প্রিন্ট করা জানতে হবে। জানতে হবে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনি ডাটা ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে একটি প্রেজেন্টেশন করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারও ভালভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি যদি কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার ও মেইনট্যানেন্স জানা থাকে তবে আপনি আইটি দক্ষতার প্রধান ধাপগুলো পূর্ণ করবেন।

সর্বশেষ বলা যায়, ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আপনি ওপরে উল্লেখিত দক্ষতাগুলির যতগুলি আয়ত্ব করতে পারবেন, আপনার সম্ভাবনা ততই উজ্জল হবে।

ক্যারিয়ার প্লানিং এর এই ভুলগুলো পরিহার করুন:

¤ আপনি যা ভাল পারেন তার সাথে আপনার পছন্দের পার্থক্য সৃষ্টি করা:
অনেকেই বলে আপনার গলা ভাল তাই বলে আপনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনি সারা জীবন আচার অনুষ্ঠানে গান গেয়ে কাটিয়ে দিবেন। এ সিদ্ধান্ত আপনার জন্য ভুল হতে পারে, যদি না আপনি এটা বিচার করেন যে পেশা হিসাবে গান গাওয়াটা উপভোগ করতে পারবেন কিনা। আপনি কোন ব্যপারে ভাল তার আগে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কি করতে পছন্দ করেন। আপনি যা করতে পছন্দ করেন তাতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ না হলেও পরিশ্রম ও সাধনার বলে আপনি তা অর্জন করতে পারেন।

¤ শখের সাথে পেশার পার্থক্য না করা
আপনি হয়ত দৌড়ানো, আইন, বইপড়া, এবং ঝুড়ি বানানো পছন্দ করেন। আপনি হয়ত ভাবছেন-এসবগুলো ক্ষেক্রকে একটি পেশায় আনা যায় কিনা। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। আপনার এরকম কিছু করতে হবে না। কোন একটি সাধারন পেশা আপনার সবগুলা শখ মেটাবে এরকম ভেবে বসাটা একটা বড় রকমের ভুল। মনে রাখবেন এর অর্থ এই নয় যে আপনি আপনার পেশাকে পছন্দ করছেন না। আপনি আসলে পেশার উপর আপনার শখকে গুরুত্ব দিচ্ছেন

¤ পেশার একটি দিকের সাথে অবস্থার সামগ্রিক পাথর্ক্য না করা
অনেক সময় কেউ কেউ কোন পেশা স্থির করার সময় এমন ভেবে বসেন যে তারা তেমন কিছু না করেই তা হয়ে যেতে পারবেন। যেমন-কেউ লিখতে পছন্দ করেন। লেখালেখির পেশার সুযোগগুলো না দেখেই ভেবে নিন যে একজন লেখক হয়ে যাবেন এটা ভুল। এমনও হতে পারে কেবল উপন্যাসিক, সাংবাদিক ও কপিরাইটারের মত লেখক হতে চাইছেন যখন এর স্থলে তিনি একজন মন্ত্রী, জনসংযোগ- সহকারী,সম্পাদক অথবা সরকারী লবিকারী হওয়ার চিন্তা করতে পারতেন।
কর্মক্ষেত্রে / জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে কি করা প্রয়োজন ?

সাফল্য অর্জনে কী গুণাবলী থাকা উচিত:
• সাধারণ জ্ঞান
• নিজ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান
• আত্মপ্রত্যয়
• বুদ্ধিমত্তা
• কাজ করার দক্ষতা
• নেতৃত্ব
• ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার দক্ষতা
• সৃজনশীলতা
• আত্মবিশ্বাস
• যথাযথ বাচনভঙ্গি
• অন্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকা
• ভাগ্য
উপরোক্ত গুণাবলী যারা অর্জন করেছেন তারাই সাফল্য লাভ করে থাকেন।
এই গুণগুলো জন্মসূত্রে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।

নিজেকে জানুন, দেখুন তো আপনার মধ্যে এই গুণসমূহ আছে কিনা:
• সহমর্মিতা
• হাস্যরস
• সৌজন্যবোধ
• বিশ্বাস অর্জন- এর দক্ষতা

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা- এর জন্য অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। এজন্য যা করবেন:
• আপনার লক্ষ্যগুলি ঠিক করবেন
• লক্ষ্যগুলি কাগজে লিখবেন
• লক্ষ্যগুলি সুনির্দিষ্ট হতে হবে
• লক্ষ্যগুলি গুরুত্ব অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে
• প্রতিদিন লক্ষ্যগুলি স্মরণ করতে হবে
লক্ষ্য ঠিক করার জন্য S M A R T টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তার ব্যাখ্যা দেয়া হল:
S = Specific বা সুনির্দিষ্ট
M = Measurable বা পরিমাপযোগ্য
A = Achievable বা অর্জনযোগ্য
R = Realistic বা বাস্তবধর্মী
T = Timeframe বা সময়কাঠামো

সাফল্যের জন্য আরও যা জানতে হবে:

SEE Factors
S = Smile বা হাস্যময়
E = Eye Contact বা মনযোগ
E = Enthusiasm বা উদ্যোগ

আরও ৮ টি নির্দেশনা হল:
• ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
• ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা
• সময়ানুবর্তী হওয়া
• প্রস্তত থাকা
• নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা
• নিয়ন্ত্রণে রাখা
• সঠিকভাবে কাজ করা
• পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করা
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং সাফল্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। আপনাকে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনা জানতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে:
• আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন
• প্রতিটি কাজে এখন আপনি গড়ে কত সময় ব্যয় করছেন তা নিরূপণ/ ঠিক করুন
• প্রতিটি কাজে গড়ে কতটুকু সময় প্রয়োজন তা বের করুন
• প্রতিটি কাজে গড়ে আপনি কতটুকু সময় অতিরিক্ত ব্যয় করেন তা বের করুন
• এখন সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করবেন?
সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আগামীকাল আপনার করণীয় কাজগুলি একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন এবং তারপাশে কোন সময়ে তা করবেন তা লিখুন। আপনার হাতের অতিরিক্ত সময় অন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করুন।

ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের চাপের ব্যবস্থাপনা:
আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি চাপ কমাতে না পারেন, তবে তা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা অনেক নেতিবাচক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছি, এর ফলে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। চাপ কমানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের যা করতে হবে:
• নিজের উপর বিশ্বাস রাখা
• নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলা
• সবকিছু সহজে গ্রহণ করা
• মাথা ঠান্ডা রাখা
• সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা
• নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখা
মেডিটেশন অনেক সময় আমাদের চাপ কমাতে পারে, তাই মেডিটেশন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন এর ব্যাপক চর্চা হচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগী হলে আপনি সহজেই আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন। কারণ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এর জন্য আপনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি অন্য কারো কাছ থেকে উপদেশ নিলেও নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন। কখনো অন্য কারো সিদ্ধান্ত যেন-আপনার ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়।
দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কি করা প্রয়োজন ?

একটি ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্ত দক্ষতা বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতা, একটি দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুইটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক না। সাফল্য লাভ করার জন্য যত বেশী দক্ষতা অর্জন করা যায় ততই একটি সুন্দর ও সফল ক্যারিয়ার এর দিকে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কোন কোন দক্ষতা অবশ্যই উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যে দক্ষতাগুলি অবশ্যই উন্নয়ন করতে হবে তা হল:
• আইটি
• কমিউনিকেশন
• ব্যবস্থাপনা
কমিউনিকেশন দক্ষতা: আপনি কিভাবে অন্য একজন ব্যক্তির কাছে সুন্দরভাবে আপনাকে উপস্থাপনা করতে পারছেন, তাই হল আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা। অর্থাৎ আপনার কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহার এর মাধ্যমে আপনি আপনাকে কতটা আকর্ষণীয় করে তুলবেন অন্যদের কাছে।
• কমিউনিকেশন দক্ষতায় দক্ষ হতে হলে আপনাকে নিন্মোক্ত বিষয় গুলি চর্চা করতে হবে। যেমন- আপনার সাধারন জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবেন সব সময়।
• আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং বাচনভঙ্গির উন্নতি সাধন করার চেষ্টা করবেন। বাচনভঙ্গির উন্নয়নের জন্য উপস্থিত বক্তৃতা বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করা উচিত নিয়মিতভাবে। এমনকি বন্ধু-বান্ধব মিলে এই কাজটি করতে পারেন নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য।
• পোষাক- পরিচ্ছদের ব্যপারে যত্নবান হউন এবং যা আপনাকে মানায় এবং অন্যরা পছন্দ করে তা পরিধান করুন
• আপনার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ পরিহার করুন এবং হাতের নখ, চুলের খুশকি এবং অন্যান্য রোগ-জীবানু সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
• আয়নার সামনে অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলা চর্চা করুন এবং আঞ্চলিকতা যতটা পারুন পরিহার করুন।
ব্যবস্থাপনা দক্ষতা:
আপনার ক্যারিয়ার কে সুন্দর করতে ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনি দক্ষতা দেখাতে পারলে আপনি সহজে অন্যদের চোখে পড়বেন এবং আপনি ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হল:
• আপনাকে নেতৃত্বের গুনাবলী চর্চা করতে হবে। নেতা ভাবলেই নেতা হওয়া যায় না। তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নেতৃত্ব দেবার মানসিকতা থাকতে হবে।
• যে কোন কাজ হাতে নিলে তা সুন্দর ভাবে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে। মাঝ পথে কোন কাজ যদি কঠিন মনে করে ছেড়ে দেন, তাহলে বুঝবেন আপনার মধ্যে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব রয়েছে। কোন কাজ কঠিন মনে হলে চিন্তা করে বের করবেন কিভাবে তা অন্য উপায়ে সম্পন্ন করা যায়। কারা আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি।
• ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হল সময় ব্যবস্থাপনা। এর পাশাপাশি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাও একটি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। আপনার সৌজন্যবোধ আপনাকে বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করবে।
• ভুল থেকে সঠিকটা শিক্ষা নেবার দক্ষতা থাকতে হবে। তার সাথে সাথে হাস্যরস বোধ আপনাকে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আইটি দক্ষতা:
বর্তমান সময় আপনি যদি কম্পিউটার না জানেন, তাহলে আপনাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আবার তার মানে আপনি কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষিত হবেন তা নয়। আইটি দক্ষতা বলতে বোঝায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিঠি বা কোন ডকুমেন্ট লিখতে, সুন্দরভাবে প্রিন্ট করা জানতে হবে। জানতে হবে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনি ডাটা ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে একটি প্রেজেন্টেশন করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারও ভালভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি যদি কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার ও মেইনট্যানেন্স জানা থাকে তবে আপনি আইটি দক্ষতার প্রধান ধাপগুলো পূর্ণ করবেন।

সর্বশেষ বলা যায়, ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য আপনি ওপরে উল্লেখিত দক্ষতাগুলির যতগুলি আয়ত্ব করতে পারবেন, আপনার সম্ভাবনা ততই উজ্জল হবে।
সাক্ষাৎকার / ইন্টারভিউ এর জন্য কোন কোন বিষয়ে প্রস্ততি প্রয়োজন ?

ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগদাতা চাকরি প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সর্ম্পকে অবগত হন। এই প্রক্রিয়া শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রার্থী তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনার মাধ্যমে নিজেকে পদের উপযুক্ত হিসেবে প্রমানের সুযোগ পান। সংশ্লিষ্ট পদ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজের জ্ঞান প্রকাশের একটা ভাল পদ্ধতি হচ্ছে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া।

নিয়োগদাতা প্রার্থীর মাঝে কি খোজেঁন
সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া মনস্তাত্বিক চাপপূর্ণ হতে পারে। কিন্ত এই চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য জানতে হবে যে নিয়োগদাতা কী খুজঁছেন তাই,
চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নানা ইতিহাস দিক সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
কোম্পানী, কোম্পানীর পণ্য এবং প্রত্যাশিত পদ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা থাকতে হবে।
আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কোম্পানীর চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
আপনাকে আত্মবিশ্বাসী এবং কোম্পানীতে আপনার কতটুকু অবদান রাখতে সক্ষম তা বোঝানোর সামর্থ থাকতে হবে।
আপনাকে পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

পূর্ব প্রস্ততি:
সাক্ষাৎকারের মনস্তাত্বিক চাপ কমানোর আর একটা উপায় হচ্ছে পূর্ব প্রস্ততি গ্রহণ। চাকরিদাতা আপনার জীবন বৃত্তান্ত পর্যালোচনা করে দেখবেন যে এতে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, লক্ষ্য ইত্যাদিও গুণাবলীর যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে কিনা। আপনাকে অনেক খোলামেলা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এবং এসব প্রশ্নের উত্তর যেন যথাযথ হয় তার প্রস্ততি নিতে হবে।
এছাড়া নিয়োগদাতা কিছু সাধারন প্রশ্ন করতে পারেন যার উত্তর সম্পর্কে আপনাকে পূর্ব হতেই ভাল ধারণা নিয়ে রাখতে হবে এবং উত্তরের মান উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্ত উত্তর মুখস্ত করবেন না। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে উত্তর যেন আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করে। ইন্টারভিউ এর সময় শুধু চাকরিদাতা একাই প্রশ্ন করবেন তা নয় আপনার কাছেও পাল্টা প্রশ্ন আশা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকেও পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে। যদি ইতোমধ্যে সব আলোচিত হয়েও থাকে তাহলেও অতিরিক্ত কিছু আলোচনায় আনতে হবে যাতে করে এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পদ ও প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে আপনার আগ্রহ ও জ্ঞানের পরিচয় দিতে পারেন। তবে সব প্রশ্ন চাকরি সংক্রান্ত হতে হবে।

সাক্ষাৎকার নির্দেশিকা:
• সাক্ষাৎকার এর কিছু আগে উপস্থিত হওয়া: সাক্ষাৎকারের ১৫ মিনিট আগে উপস্থিত হবেন। তবে চিন্তা করার সময় হাতে থাকবে। হাতের ঘাম মোছার সময় থাকবে এবং লবি থেকে কোম্পানীর চলতি তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনার নির্বাচকেরা দেখবেন, আপনার কাছে তাদের সময়ের দাম আছে।
• প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পূর্ব ধারণা: নির্বাচকদের সম্পর্কে জানতে হবে (পদবীসহ) যেমন-জনাব, ডাক্তার ইত্যাদি। কোম্পানীর মূল উৎপাদিত পণ্য ও সেবাসমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। কোম্পানীর গঠণ (বিভাগ, প্রধান, কোম্পানী ইত্যাদি) কোম্পানীর বর্তমান অবস্থা খবরাখবর, গ্রাহক এবং প্রতিদ্বন্দী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। এসব আপনি কোম্পানীর ওয়েবসাইট থেকে বার্ষিক রিপোর্ট বা কোম্পানীর পুস্তিকা থেকে জানতে পারেন।
• সব সময় জীবন বৃত্তান্ত সাথে রাখতে হবে: তা প্রমাণ করবে যে আপনি সাক্ষাতের জন্য প্রস্তত। এখান থেকে নির্বাচকরা প্রয়োজনীয় কোন কিছু নোট করতে পারবেন।
• জীবন বৃত্তান্ত এমন হবে যেন নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে: নিজের সমস্ত গুণাবলী এটার বিষয় হবে। নির্বাচকদের সামনে নিজেকে খুব সহজভাবে উপন্থাপন করতে হবে।
• বাচনভঙ্গী সর্ম্পকে সতর্কতা: নির্বাচকদের সামনে সতর্কতার সঙ্গে বসুন। যেন বসার স্থান একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে শোভন দুরত্ব থাকে। হাসি মুখে বসুন।
• বিব্রতবোধ না করা: নির্বাচকমন্ডলীও মানুষ। অতএব তারাও অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। মূলত নির্বাচকদের অস্বস্তি একটা ভাল দিক। এটা প্রমান করে আপনি ভালভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন। অশোভন কোন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- আঙ্গুল মোচড়ানো, কলম নাড়ানো, হাত-পা দোলানো।
• দৈহিক ভাষা গুরুত্বপূর্ণ: স্পষ্ট দৃষ্টি বিনিময় করা, উষ্ণ বা মৃদু হাস্যমুখ এবং করমর্দন সাহায্য করতে পারে আপনার বিব্রতবোধ কাটানোর জন্য । ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী ভাবমূর্তি উপস্থাপন করতে পারেন।
• নির্বাচকদের বিনোদনকারী হবেন না: সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের কাছে কৌতুকময় অথবা বিনোদনকারী হওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা না বলা: আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কিন্ত চাকরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দৈণ্যতা প্রকাশ করবেন না। সেক্ষেত্রে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কথা না বলাই ভাল।
• সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীর মত অনুসরন করা: সাক্ষাৎকারের উর্ধ্বে না যাওয়া, মূল বিষয়ের দু একটি প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পারতপক্ষে সাক্ষাৎকার গ্রহণ কারীর মতামত অনুসরন করা।
• ব্যক্তিগত ও অনুযারী প্রশ্ন সম্পর্কে সচেতন থাকা: এটা নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ওপর। অবশ্যই মেজাজমর্জির স্থিরতায় কিছু সাক্ষাৎকারদাতা এ সম্পর্কে সচেতন থাকেন, অতএব সচেতন হোন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন প্রশ্নগ্রলো। এতে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
• সুনির্দিষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা: খোলাখুলি ও সৎ হোন। কিন্ত অনভিজ্ঞতা ও দুর্বলতার জন্য কখনো ক্ষমাপ্রার্থী হবেন না। আপনি আত্মবিশ্বাসী হোন, তবে অতিমাত্রায় নয়। আপনি নবীন হতে পারেন চাকরিবাজারে, আপনি অনভিজ্ঞও হতে পারেন। আপনি কোন প্রকার বদঅভ্যাস বা অনভ্যাস দোষ অতীত কর্মচারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন না। ব্যক্তিস্বার্থে নয়, কোম্পানীর স্বার্থে নয়, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কোম্পানীর জন্য দক্ষতা অর্জন করবেন এটাই প্রকাশ করুন।
• অপেক্ষা করুন বেতন সম্পর্কে প্রশ্ন উপস্থাপনের জন্য: মূলত সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের বিষয় এটি। বেতন এবং তার লাভজনক দিকগুলো প্রথম সাক্ষাৎকার নাও থাকতে পারে। বেতনের গুরুত্ব সকলেরই জানা। এ প্রসঙ্গে আপনার অনুভূতি ব্যক্ত না করাই শ্রেয়। এটা হতে পারে সমঝোতার মাধ্যমে। যদি আপনার মতানুযায়ী বেতন প্রসঙ্গ আসে তবে বুঝতে হবে চাকরিদাতা আপনার কর্মেও আগ্রহ দেখছেন, নির্দিষ্ট অবস্থান এবং চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে।
• ঘাবড়ে যাবেন না: বলার পূর্বে চিন্তা করুন নিরবতা এবং সহনশীলতা আপনাকে সাহায্য করবে। সহনশীলভাবে সময় নিয়ে উপস্থাপন করুন। কারণ এটা দর্শনীয়। কর্মগ্রহীতারা আপনার মতামতকে ধৈর্য্য সহকারে শোনার এবং মত গ্রহণ করার জন্য ভাববার সময় দেবেন।
• নিশ্চিত করুন প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনি কী করতে পারবেন: এটার মানে হচ্ছে, আপনি আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন প্রতিষ্ঠানে / কোম্পনীতে। তবে বাণিজ্যিক গোপনীয়তা বা পূর্বপরিচিতি উল্লেখ না করাই ভালো। নিজস্ব দক্ষতা এবং উল্লেখযোগ্য কাজগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। নতুন সংকটকে দূর করার জন্য এবং যোগাযোগ সুষ্পষ্টকরণ, আত্মসম্পর্ক উন্নয়ন, নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করার জন্য প্রস্তত থাকুন।
• প্রস্তত করা উত্তর বা মুখস্ত বুলি না আওড়ানোই ভালো: অনেক কর্মপ্রার্থী কিছু প্রস্তত করা উত্তর সাক্ষৎকার প্রশ্ন বা উত্তরপত্র গাইডলাইন হাতে পেয়ে থাকেন, এটা ফলপ্রসূ নয়। যেমন-অনেকে বলেন, আমি মানুষের জন্য কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ব্যতিক্রমী কিছু বলতে চেষ্টা করুন।
• পূর্বের চাকরিদাতাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য না করা: পূর্বের কর্মকর্তা, কর্মচারী বা কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। তবে যা জানেন সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করুন।
• আপনার আচরনবিধি লক্ষ্য করুন: চাকরিদাতা আগ্রহভরে লক্ষ্য করেন তাদের প্রতি আপনার ব্যবহার স্পষ্ট কিনা। যদি আপনি আপনাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তবে তা সম্ভব। আপনার জ্ঞান যদি বিনয়ী বা নম্র আচরন লব্ধ হয় তবে তা উপস্থাপনে সহায়ক হবে।
• প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তত থাকা চাই: প্রায় প্রত্যেক চাকরিদাতা প্রশ্ন শোনার জন্য ইচ্ছে পোষন করে। তাই আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তত থাকতে হবে। তবে আপনার প্রশ্ন হতে হবে চাকরির ক্ষেত্র বা কোম্পানীভিত্তিক তথ্য নিয়ে। আপনার প্রশ্নের ভেতর দেরিতে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া, ছুটির আবেদন ইত্যাদি না থাকাই বাঞ্ছনীয়। এগুলো পরবর্তীকালে সময় নিয়ে করা যায়।
• টেলিফোনে সাক্ষাৎকার: যদি আপনি চাকরিপ্রাপ্তির জন্য অন্য দেশ বা শহরে আবেদন করেন তবে সেক্ষেত্রে টেলিফোনে প্রাথমিক সাক্ষাৎকারপর্ব সেরে নিতে পারেন। টেলিফোন সাক্ষাৎকারটি আপনাকে কোনো স্থির ধারণা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি না দিলেও যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হবে।
• দ্রুত চাকরির প্রস্তাব আশা না করাই ভালো: চাকরির সিদ্ধান্ত সাধারনত সাক্ষাৎকারের বেশ কিছুদিন পর বা সপ্তাহ কয়েক পর জানানো হয় তাই তাৎক্ষনিকভাবে আপনাকে কোন বেতন প্রস্তাব করা হলে চিন্তা করার জন্য ২/১ দিন সময় চেয়ে নিতে পারেন।
• সাক্ষাৎকার শেষে: সাক্ষাৎকার দীর্ঘায়িত করবেন না এবং দ্রুত শেষ করুন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ধন্যবাদের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার শেষ করুন।
• নিজের প্রতি স্বচ্ছ থাকুন: আপনি যা নন তা করবেন না। তাতে আপনার মৌলিকত্ব নষ্ট হতে পারে।
একটি ভাল সাক্ষাৎকারের জন্য করনীয় কি ?

ভালো সাক্ষাৎকারের জন্য করণীয়:

সাক্ষাৎকারের পূর্বে:
• কোম্পানী সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান রাখা
• বিশেষত্ব কর্মচারীর সংখ্যা
• সাক্ষাৎকারের জন্য পোশাক নির্বাচন করা।
• নিদিষ্ট সময়ের পূর্বে পৌছে যাওয়া (১০/১৫ মিনিট আগে)
• দেরী হলে তা পূর্বে অবগত করা

অভ্যর্থণা কক্ষ
• ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করুন
• বিনয়ী হোন
• প্রস্তত থাকুন কোন বিবৃতির জন্য যা কোম্পানীর তথ্য প্রদান করে।

সাক্ষাৎকারের সময়
দৈহিক ভাষা সম্পর্কে সচেতনতা অবলম্বন করা। যেমন :-
• হাঁটুন পরিচ্ছন্নভাবে
• সাবলিল থাকুন
• বিনয়ী হোন
• ভালো অঙ্গস্থিতি রাখুন
• সুষ্পষ্ট দৃষ্টি বিনিময় করুন
• উষ্ণ করমর্দন করুন
• হাসিমুখে থাকুন
• মনোযোগ সহকারে প্রশ্নগুলো শুনুন এবং বলার পূর্বে ভেবে বলুন।

সাক্ষাৎকারের শেষে
• কাজটির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করুন
• প্রশ্ন করুন (যদি থাকে)
• নিশ্চিত হোন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য
• সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ধন্যবাদ জানান
• করমর্দন করুন

সাক্ষাৎকারের পরবর্তী পদক্ষেপ
• মূল্যায়ন করুন আপনি কেমন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কোথায় ভুল ছিল। কোনটা ভালো বলেছেন। কেন আপনার চাকরি হওয়া উচিত, কেন হওয়া উচিৎ নয় ? ইত্যাদি।
• সাক্ষাৎকারের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ পত্র প্রেরন
• সপ্তাহ খানেক পরে টেলিফোনে বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা।
ইন্টারভিউ প্রস্তুতির চেকলিস্ট

প্রতিটি ইন্টারভিউর আগে আপনি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন কি না তা পরখ করার জন্য নিচের চেকলিস্ট অনুসরণ করুন। যেমন-

একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য নিজের সম্পর্কে কমপক্ষে পাঁচটি গুণ আমার আছে।
হ্যা না

চাকরিটি প্রাপ্তিতে নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য আমি আমার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলো উপস্থাপন করতে পারব।
হ্যা না

আমার যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা আছে যা চাকরিটির জন্য আমাকে যোগ্য করে তোলে।
হ্যা না

আমার এমন কিছু শখ ও কর্মকান্ডের অভিজ্ঞতা আছে যা চাকরিটির জন্য আমাকে যোগ্য করতে সহায়তা করতে পারে।
হ্যা না

যদি আমাকে আমার “পার্সোনাল রেফারেন্স” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে আমি এমন তিনজনের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে পারবো যারা আমার রেফারেন্স হতে সম্মত আছে।
হ্যা না

ইন্টারভিউতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মার্জিত ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরেছি।
হ্যা না

আমি ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি কিছু প্রশ্ন তৈরী করেছি।
হ্যা না

ইন্টারভিউতে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি যথোপযুক্ত পরিবহন রুট ও পরিবহন নির্দিষ্ট করেছি।
হ্যা না

চেকলিস্ট আরো কোন অপশন যুক্ত করার থাকলে যুক্ত করতে পারেন। এরকম চেকলিস্টের কয়েকটি কপি তৈরী করে রাখুন যাতে সকল ইন্টারভিউর আগে তা ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারভিউ রোর্ডে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারলেই আপনি ভাবতে পারেন যে আপনার ক্যারিয়ার উন্নতির দিকে যাবে। সুতরাং ইন্টারভিউর জন্য সার্বক্ষণিক মানসিক ও প্রায়োগিক প্রস্তুতি রাখুন।

পেশা ব্যাপারটিকে পেশাদারিত্বের সাথেই নিতে হবে। আপনি যে কাজে দক্ষ সেই সংশ্লিষ্ট পেশা নেওয়ার উপরেই নির্ভর করছে আপনার এবং প্রতিষ্ঠানের বিকাশ। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পদে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ প্রার্থীকেই নিয়োগ দিয়ে থাকে।

অতএব চাকরি পাওয়ার ন্যূনতম শর্ত হলো এমন কোন পেশাদারী যোগ্যতা থাকা বাজারে যার কদর আছে। নিয়োগদাতা দেখতে চান আপনি আপনার কাজ বা দায়িত্বের প্রতি কতটা দক্ষ ও নিষ্ঠাবান হতে পারবেন। আপনার কাজের প্রতি সৃজনশীল মনোভাবও আপনার পেশঅদারীত্বের অংশ। সুতরাং নিয়োগদাতার কাছে নিজেকে যেমন পেশাদারী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা যায় এমনভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

আজকাল বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানই তার কাজ ভাগ করে দিতে চায় একজন বিশেষজ্ঞকে। তাই নিয়োগের বেলায় পেশাদারী যোগ্যতাকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। আগে ইংরেজীতে ভাল বলতে ও লিখতে পারলে জনসংযোগ অফিসার বা তথ্য অফিসারের চাকরি হয়ে যেত। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠান চায় পাবলিক রিলেশনের উপর ডিগ্রীধারী বা ডিপ্লোমা করা লোক। সুতরাং পেশাদারী মনোভাব ছাত্র থাকাকালিন সময়ে নেওয়া উচিৎ। লক্ষ্য রাখতে হবে নিজেকে কোন বিষয়ে কতটা দক্ষতা, বিশেষজ্ঞ ও আপগ্রেড করা যায়। নিজের লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান, সময়ানুবর্তী ও নিয়মানুবর্তী হওয়ার চর্চা করতে হবে। নিজেকে যতটা সম্ভব অফিসিয়াল বা ফর্মাল করে গড়ে তুলতে হবে। আগে সর্বস্ব হওয়াটা কোন ক্ষেত্রেই আপনার জন্য ভাল হবে না। উদাসীনতা তো নয়ই।

ইন্টারভিউতেও নিজের পেশাদারীর মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে হবে। ইন্টারভিউর আগে আবেদনপত্র ও বায়োডাটা তৈরী এবং প্রণয়নের ক্ষেত্রে ফর্মাল প্রসেসস মেনে চলতে হবে। ইন্টারভিউর ডাক পাওয়া মাত্রই ধন্যবাদপত্র পাঠিয়ে দিতে হবে, ইন্টারভিউর পরেও। ইন্টারভিউতে নিজেকে মার্জিত ও ফর্মালভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কোন প্রকার আবেগ বা উচ্ছাস প্রকাশ করা পেশাদারীত্বের লক্ষণ নয়। নিয়োগদাতার মনে নিজের একটা ভাল ইমপ্রেশন তৈরী করতে পারলেই আপনার নিয়োগ পাবার সম্ভাবনা বাড়বে। সুতরাং পেশাদারী হন।

দেশে চাকরি নেই এই ধারণা মনের মধ্যে পুষে রাখলে হতাশাই বাড়বে। দেশে চাকরির সুযোগ তৈরী হচ্ছে, তবে যুগটা প্রফেশনালিজমের একই সাথে প্রতিযোগিতারও। এখন নিজেকেই যত বেশি দক্ষ করে তোলা যাবে, নিজের সুযোগ সম্ভাবনা তত বাড়বে। সুতরাং মনমতো পেশায় প্রবেশ করতে হলে মুখোমুখি হতে হবে বড় একটা চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেকে তৈরী করতে হলে আগে থেকেই একজনকে স্থির করতে হবে তার লক্ষ্য কি এবং কিভাবে তাতে পৌঁছানো যাবে। অর্থাৎ প্রয়োজন মাফিক ও সময়োপযোগী “ক্যারিয়ার প্ল্যান”। তবে নিজেকে কোন গন্ডির মধ্যে রেখে দিলে হবে না। সংশ্লিষ্ট সবগুলো পথ খোলা রেখে লক্ষ্যের দিকে চলতে হবে, তাহলেই নিশ্চিত হবে আপনার ভবিষ্যত।
সাক্ষাৎকারে প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী

ইন্টারভিউ একজনের পর একজনের হতে পারে আবার কয়েকজনের সমন্বয়ে একটা প্যানেল সাক্ষাৎকারও হতে পারে। তাই আপনাকে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্ততি নিতে হবে।
• ইন্টারভিউ এর সময় নিয়োগদাতা আপনার জীবন বৃত্তান্ত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি কোম্পানীর জন্য নিজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারেন।
• সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে নিয়োগদাতা আপনাকে আর কিছু বলার আছে কিনা তা জানতে চাইতে পারেন। এক্ষেত্রে পূর্বে বাদ পড়েছে এমন বিষয় আলোচনা করে নিতে পারেন। সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ কী হবে তা খুঁজে বের করবেন এবং সবশেষে নিয়োগদাতাকে তার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাবেন।
• আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন। আপনার বক্তব্যে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের চাইতে চাকরির দক্ষতা যেন বেশী প্রাধান্য পায়। আপনার ক্যারিয়ারের বিকাশ সর্ম্পকে বলুন। পূর্ব চাকুরির অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন বা চাকরি বহিভূর্ত স্বপ্রণোদিত কর্মকান্ডর মাধ্যমে অর্জিত সাংগঠনিক দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করুন।
• আপনার সামর্থ কী ? কোন সমস্যার সুন্দর সমাধানের জন্য আপনি আপনার সামর্থ নিয়ে কথাবলতে পারেন। কিছু উদাহরন রপ্ত করুন যা প্রশ্ন উত্তরে সাহায্য করবে।
• আপনার দূর্বলতা কী ? এটা খুব কঠিন প্রশ্ন, যদিও সবসময় এটা জিজ্ঞেস করা হয় না। কিন্ত এ জাতীয় প্রশ্নের জন্য আপনাকে প্রস্তত থাকতে হবে। আপনি যদি আপনার মেজাজ, অলসতা বা ধৈর্য্যের দুর্বলতা নিজের ভিতরে রাখুন এবং তা অন্যের নিকট প্রকাশ করবেন না।
• চাকরিদাতা তার কোম্পানী সর্ম্পকে আপনার কোন প্রশ্ন আছে কি না তা জানতে চাইতে পারে। তাই এই বিষয়েও প্রস্ততি থাকতে হবে। আপনি কোম্পানীর প্রকৃতি, সাংগঠনিক কাঠামো অথবা উৎপাদিত পন্য সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন। আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন কোম্পানীর প্রশিক্ষন কর্মসূচী অথবা কাজের পরিবেশ সম্পর্কে।
• ১০ বছর পর আপনার পেশার অবস্থান কোথায় হবে ? এইরূপ প্রশ্নের উত্তরে এখানে খুব সাবধান থাকতে হবে। আপনার এমন মনোভাব থাকবে না যে, আপনি শুধুমাত্র ব্যবহৃত হচ্ছেন কোম্পানী বা অন্যের পেশার উন্নতি হিসেবে।নিজেকে কোম্পানীর ব্যবস্থাপক হিসেবে চিন্তা করে কোম্পানীর স্বার্থে কাজ করতে হবে। এখানে বলা যায় যে একজন তরুণ হিসাবরক্ষককে CPA Firm এর সাথে সাক্ষাৎকারের সময় এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন তিনি নিজেকে বড় কর্পোরেশনের মহা-হিসাবরক্ষক হিসেবে দেখেন। তার প্রশ্নের উত্তর অন্যভাবে বলা যায় প্রতিষ্ঠান তাকে প্রশিক্ষন ও সুযোগ দানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবে এবং সে চাকরি ছেড়ে দেবে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে। এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না তাকে চাকররি জন্য ডাকা হয়নি। প্রতিষ্ঠান জানে ৭৫% লোক আসে ১০ বছরের মধ্যে অন্যত্র সরে যেতে, কিন্ত প্রতিষ্ঠান চায় না কেউ চলে যাক।
• আপনার এমন দক্ষতা কি আছে যে, চাকরিদাতা কোম্পানী লাভবান হবে ? আপনি আপনার কি দক্ষতা উল্লেখ করতে পারেন যা যে কোন কোম্পানীর জন্য মূল্যবান। উদাহরনস্বরূপ : (১) দীর্ঘমেয়াদী Project পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সামর্থ্য (২) তথ্যবহুল উপাত্ত সংগঠিত করার সামর্থ্য (৩) জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সামর্থ্য অথবা দলের ভিতরে থেকে কাজ করার সামর্থ্য। যদি আপনার দক্ষতা কোন নির্দিষ্ট জন্য সঠিক না হয়, তবে উল্লেখ করতে হবে অন্য অবস্থানে থেকেও দ্রুত এগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারেন বা শিখতে পারেন কিনা। আবার নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নিয়েও নিজেকে প্রস্তত করতে পারেন।
• পূর্বের চাকরি আপনি কেন ছেড়েছিলেন ? প্রথমেই প্রাক্তন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবেন না। যেমন কথায় কথায় অভিযুত্ত করা হয় বা সে প্রাক্তন প্রতিষ্ঠানটি আশাপ্রদ অবস্থায় ছিল না। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলেও প্রাক্তন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে না। আপনি কথা বলতে পারেন প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতার অভাব নিয়ে। বলতে পারেন, আপনার কাজের দায়িত্ব, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য এর সাথে সামঞ্জস্য ছিল না। আপনার প্রয়োজন আরো প্রতিশ্রুতিশীল চাকরি অথবা অন্যকিছু যা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ববিরোধী নয়। যদি কোন কারনে চাকরি চলে যায়, তবে আপনি অবশ্যই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা বলবেন। যাই হোক মিথ্যা বলবেন না। আপনি যদি প্রাক্তন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলতে নাও চান তবে কিছুই না বলাই ভালো।
একটি সুন্দর জীবন বৃত্তান্ত তৈরীর উপায়

আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) হচ্ছে একজন সম্ভাব্য চাকুরিদাতার কাছে একজন চাকুরিপ্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন করার প্রাথমিক মাধ্যম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় চাকুরিপ্রার্থীরা তাদের জীবনবৃত্তান্ত সুন্দর এবং সঠিকভাবে তৈরী করার ব্যপারে গুরুত্ব প্রদান করে না। ফলশ্রুতিতে অনেক যোগ্য প্রার্থীই Interview তে ডাক পায় না এবং যোগ্যতা প্রমানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরীর আগে যে সকল বাস্তবতার দিকে নজর রাখবেন
¤ একজন চাকুরিদাতা গড়ে একটি জীবনবৃত্তান্ত-এর উপর ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় দেয় না। সুতরাং এটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত। তথ্যগুলোর উপস্থাপন হতে হবে সুস্পষ্ট। অপ্রয়োজনীয় বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিহার করতে হবে।
¤ একজন অনভিজ্ঞ/ সদ্য পাস করা চাকুরিপ্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত এক থেকে দুই পাতার বেশী হওয়া কোনভাবেই উচিৎ নয়।
¤ আপনার জীবনবৃত্তান্ত হচ্ছে আপনার নিজেকে বিপণন করার মাধ্যম। সুতরাং এটি হতে হবে আকর্ষণীয়। তবে চটকদার কোন কিছু যেমন রঙিন কাগজ বা রঙিন কালি ব্যবহার করবেন না। কোন কিছু Highlight করতে হলে সেটিকে Bold , italic বা underline করতে পারেন।
¤ মনে রাখবেন, আপনার জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে যদি কোন বানান ভুল বা ভাষাগত/ Grammatical ভুল থাকে তবে সম্ভাব্য চাকুরিদাতার আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা হবে। এটি প্রকাশ পাবে যে আপনি কোন কাজই নির্ভুল ভাবে করতে সক্ষম নন। সুতরাং একটি CV তৈরীর পর সেটি নিজে ভাল করে পড়ুন এবং শুদ্ধ ইংরেজী জানেন এমন ব্যক্তিকে দেখিয়ে নিন।
¤ যখন আপনি কোন নির্দিষ্ট চাকুরি বিজ্ঞপ্তির-এর বিপরীতে আবেদন করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত পাঠাবেন, তখন চেষ্টা করুন আপনার জীবনবৃত্তান্ত সেই চাকুরির চাহিদা অনুযায়ী তৈরী করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন চাকুরি বিজ্ঞপ্তি ভাল করে পড়া এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্বন্ধে কিছু গবেষণা করা। উদাহরণ স্বরুপ আপনি যদি জানেন যে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের যে কোন স্থানে নিয়োগ দিতে পারে, তাহলে আপনি আপনার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করতে পারেন আপনি বাংলাদেশের কোন কোন স্থানে পূর্বে অবস্থান করেছেন। অথবা কোন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমন কোন লোক খুঁজছে যার একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করতে হবে, সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ছাত্রজীবনের কোন সাংগঠনকারীর ভূমিকা উল্লেখ করেন তবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়োগকারীর কাছে আলাদা মূল্য পাবে।
¤ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার জীবনবৃত্তান্ত তে সঠিক তথ্য দিবেন। এমন কোন তথ্য দিবেন না যা আপনার সাক্ষাৎকারে ভুল প্রমানিত হতে পারে।

একটি জীবনবৃত্তান্তে (CV) যে তথ্যগুলো আপনি সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে
¤ শিরোনাম (Title)
¤ সার সংক্ষেপ (Career Summary) : অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য বেশী প্রয়োজন।
¤ ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য (Career objective): সদ্য পাশ করা চাকুরি প্রার্থীদের জন্য বেশী প্রয়োজন।
¤ চাকুরির অভিজ্ঞতা (Experience)
¤ শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education)
¤ অতিরিক্ত তথ্য (Additional Information)
¤ ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)
¤ রেফারেন্স (Reference)

শিরোনাম (Title)
জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই থাকবে আপনার পুরো নাম। এটা বোল্ড (bold) হবে এবং একটু বড় ফন্টে লিখতে হবে (ডাক নাম পরিহার করুন)। তার পর থাকবে আপনার ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা যেখানে আপনাকে চিঠি দিলে আপনি পাবেন), ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস। এই অংশটুকু পৃষ্ঠার উপরে মধ্যখানে থাকবে, যাতে তা প্রথমেই চোখে পরে।

Career সার সংক্ষেপ (Summary)
যে সকল ব্যক্তিদের ৪-৫ বছরের বেশী চাকরীর অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এটি বেশী প্রযোজ্য। এই অংশে আপনি সর্বোচ্চ ৬-৭ লাইনে উল্লেখ করুন আপনার পূর্ব চাকরীর অভিজ্ঞতার কর্মক্ষেত্রগুলো। আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার সাফল্যগুলো (Achievement) সংক্ষেপে তুলে ধরুন (যদি থাকে)।

Career Objective
এটি বেশী প্রযোজ্য সদ্য পাশ করা চাকুরি প্রার্থী ব অল্প অভিজ্ঞ (১-২ বছর) চাকুরি প্রার্থীদের জন্য। এই অংশে আপনি আপনার চাকুরিক্ষেত্রে বর্তমান লক্ষ্য (Immediate goal) উল্লেখ করুন এবং আপনার যোগ্যতা কিভাবে বিজ্ঞপ্তিত ( Advetised) চাকুরি বা যে প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন, তার প্রয়োজন মেটাতে পারে তার প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করুন।চাকুরির জন্য উপযুক্ত ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করুন। চাকুরি বিজ্ঞপ্তি বা কোম্পানির প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে Career Objective লেখা জরুরী। আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন তার ওপর গুরুত্বারোপ করুন, কোম্পানির কাছ থেকে আপনি কি আশা করছেন তার ওপর নয়।

Experience (কর্ম অভিজ্ঞতা)
অভিজ্ঞ পেশাজীবিদের জন্য এই অংশটি শিক্ষাগত যোগ্যতার আগেই আসা উচিৎ। সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে আগে শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education) এবং তার পরে experience আসা উচিৎ।

যে সকল তথ্য আপনার প্রতিটি পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে উল্লেখ করবেন সেগুলো হচ্ছে,
Organization name (প্রতিষ্ঠানের নাম)
Designation (পদবী)
Time period- From & To (সময়কাল)
Job responsibility (দায়িত্ব)
Special achievement (উল্লেখযোগ্য সাফল্য)

আপনি যদি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে কাজ করে থাকেন, তাহলে আলাদা আলাদা ভাবে তা উল্লেখ করুন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি প্রথমেই উল্লেখ করবেন আপনার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা most recent experience), তার পরে এক এক করে Chronological Order -এ একটির পর একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন যা শেষ হবে আপনার সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতা দিয়ে।
আপনার খুব কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম সময়ের অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভাল। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে আপনার List of experience এর মধ্যে যাতে খুব বেশী Time gap না থাকে।

Education & Training (শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ)
আগেই বলা হয়েছে যে এই অংশটি সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞদের জন্য Experience অংশের আগেই আসা উচিৎ। Education অংশে আপনি আপনার ডিগ্রিগুলোর নাম উল্লেখ করবেন এবং নিম্নে বর্ণিত তথ্য প্রদান করবেন।
ডিগ্রির নাম (যেমন: SSC, HSC, BCOM)
কোর্স সময়কাল (কবে থেকে কবে)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বোর্ডের নাম।
পরীক্ষার বছর এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রকাশের সময়।
ফলাফল/Result এবং যদি উল্লেখযোগ্য সাফল্য (যেমন: মেধাতালিকায় স্থান) থাকে তবে তার উল্লেখ করতে হবে।
Experience-এর মতো এক্ষেত্রেও আপনি আপনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ডিগ্রির উল্লেখ আগে করবেন এবং তার পর পর্যায়ক্রমিক ভাবে বাকিগুলো উল্লেখ করবেন।
লক্ষ্য রাখবেন আপনার কোন ডিগ্রির চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ না হয়ে থাকলে সেই ডিগ্রির উল্লেখ করার সময় ব্র্যাকেটে “Appeared” উল্লেখ করবেন। কোন কোর্সে অধ্যায়নরত থাকলে Ongoing উল্লেখ করুন। কোন ডিগ্রির ক্ষেত্রে আপনার Result যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তবে কোন Result-ই উল্লেখ করার দরকার নেই। মনে রাখবেন একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ করা ও অন্যটি উল্লেখ না করা দৃষ্টিকটু।
আপনি যদি কোন বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং যদি তা আপনার কাজের যোগ্যতার সহায়ক বলে মনে করেন তবে তা উল্লেখ করবেন। সেক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, Topics, প্রতিষ্ঠানের সময় (Duration) তারিখ উল্লেখ করবেন।
প্রশিক্ষণের তালিকা আপনি Education অংশের নীচে দিতে পারেন।

অতিরিক্ত তথ্য / Additional Information
যে সকল তথ্য উপরে উল্লেখিত অংশগুলোর মধ্যে পড়ে না কিন্তু চাকরির সাথে সম্পর্কিত তা এ বিভাগে বর্ণনা করুন।
¤ পেশাগত অর্জন / Professional Achievement
¤ পদক/ সম্মাননা/ Award
¤ ভাষাগত দক্ষতা / Language Literacy
¤ কম্পিউটারে দক্ষতা / Computer Skills.
¤ লাইসেন্স,সরকারি পরিচয়পত্র, প্রকাশিত লেখা ও স্বত্বাধিকার
¤ স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড ইত্যাদি

ব্যক্তিগত তথ্য / Personal Information
এই অংশে পিতামাতা, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, যে সকল দেশ আপনি ভ্রমণ করেছেন, শখ ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

রেফারেন্স (Reference)
খেয়াল রাখবেন Reference অংশে আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না। আপনাকে আপনার ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখেছে এমন ব্যক্তিকেই আপনি Reference হিসাবে উল্লেখ করবেন। অবশ্যই যাদেরকে Reference দিবেন তাদের ফোন নাম্বার, ঠিকানা এবং ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করবেন। সাধারণত Reference হিসাবে সর্বোচ্চ ২-৩ জনের নাম উল্লেখ করাই শ্রেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনি যাদেরকে Reference হিসাবে উল্লেখ করেছেন সে সকল ব্যক্তিকে আপনার আগে থেকে জানাতে হবে যে আপনি তাদের Reference হিসাবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV)-তে উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষকের দায়, শিক্ষকতার দায়

পাকিস্তানি স্বৈরশাসনকালে, বিশেষত ষাটের দশকে মত প্রকাশ ও লেখালেখির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর নানা হয়রানি করা হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি থেকে আইয়ুব-মোনেম খানের এনএসএফের আক্রমণ—সবই হয়েছে। এর কারণেই বদরুদ্দীন উমর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করে বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন শিক্ষক শামসুজ্জোহা। এই ষাটের দশকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবু মাহমুদ এনএসএফ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে প্রতিরোধের ধারা স্তব্ধ হয়নি। ১৯৭১-এ তাই বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও আলবদরদের অন্যতম মিশন।

সত্তরের দশকের শেষ দিকে আমি যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; সে সময় খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে পাশের সেনানিবাসের সদস্যদের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। পরে তার সূত্র ধরে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রকে ভয়ংকরভাবে আহত করেছিলেন। সামরিক শাসনের মধ্যেও এর প্রতিবাদে তৎকালীন শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট শুরু করেছিল এবং সম্মিলিত পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান সামরিক প্রশাসক দুঃখ প্রকাশ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করায় পরিস্থিতি শান্ত হয়েছিল। আশির দশকের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ছিলেন ফজলুল হালিম চৌধুরী। সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। এর প্রতিবাদে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আত্মমর্যাদা ও মেরুদণ্ড শক্ত—এসব ভূমিকাই তো স্বাভাবিক। শিক্ষকদের তো এই ভূমিকাই নেওয়ার কথা।

গত কয়েক বছরে সারা দেশে কত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে সরকারি ছাত্রসংগঠনের হাতে নাজেহাল হয়েছে, তার হিসাব নেই। সর্বশেষ হাতুড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীর পা ভেঙেও তাদের উত্তেজনা থামেনি। আশির দশকে শুনতাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাসেও পাঠ্য বিষয় নিয়ে বাধা দিচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বর্তমানে ছাত্রলীগ শুধু এনএসএফ নয়, এই শিবিরেরও উত্তরসূরির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সরকার ছাড়াও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তথাকথিত কতিপয় শিক্ষক, আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগ হাত-পা ভাঙছে, পুলিশ আক্রমণকারীর বদলে ক্ষতবিক্ষত শিক্ষার্থীকে আটক করছে, আদালত তাঁদেরই রিমান্ডে পাঠাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (নামের কলঙ্ক) নিজেদের নানাবিধ লোভ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন, তাঁদের প্রতি ধিক্কার এখন চারদিকে।

২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা হাটহাজারী থানায় ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়’ প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থানা সক্রিয় হয়ে তা গ্রহণ করেছে। এই নেতা এর আগেও শহরে গৃহকর আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। এই নেতা নিজ দলের আরেক নেতা হত্যা ও টেন্ডার–সন্ত্রাসে জোড়া খুনের মামলার অন্যতম আসামি বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। এই ব্যক্তিই ১৭ জুলাই শিক্ষক মাইদুল ইসলাম ও আর রাজীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষক মাইদুল প্রক্টরের কাছে আবেদন করলেও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না করায় তিনি ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ২৬ জুলাই শিক্ষক আর রাজীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডভন্ড করবার উসকানি দেওয়ার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও এসবই সত্যি!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেন অবসর গ্রহণ করেছেন কয়েক বছর আগে। শিক্ষক হিসেবে তাঁর আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও শ্রম সম্পর্কে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা অকুণ্ঠ। ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের এক সমাবেশে তাঁর দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করে যে অপপ্রচার চলছে, দুর্ভাগ্যবশত তার নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। অধ্যাপক আকমল হোসেন এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আকমল হোসেন বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘… আমার বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন সংগ্রাম করেছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধিকারের প্রশ্নটি বেগবান করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। …তিনি সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু তাঁর নামেই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। …অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর রাজনীতিক জীবনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার থাকবে না জাতীয় যে বক্তব্য ছাত্রলীগের কর্মীদের কারও কারও মুখে প্রকাশ পেয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করতে আমি আমার বক্তব্যের এ অংশে গুরুত্বারোপ করেছিলাম। …’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অধ্যাপক আকমল হোসেনের এই ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি কী পড়িয়েছেন, তা অনুসন্ধানের হুমকি দিয়েছে। একে হুমকি না বলে একটি ভালো প্রস্তাব হিসেবে আমি বিবেচনা করতে চাই। পাবলিক বা সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, সেহেতু শিক্ষকদের বিষয়ে জানার অধিকার জনগণের আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্রই জনগণের সামনে উপস্থিত করা দরকার—নিয়োগ কীভাবে হচ্ছে, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা কী কী কোর্স পড়াচ্ছেন, ক্লাসের সংখ্যা এবং তার গুণগত মান, দেশ-বিদেশে সেমিনার ও সম্মেলনে ভূমিকা, গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশনা, শিক্ষকতা-সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন, যে সমাজ তাঁর জীবিকা নির্বাহ করছে, তার প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন ইত্যাদি সবকিছুরই তথ্য প্রকাশ দরকার। উপাচার্য, প্রক্টরসহ যাঁরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের ভূমিকারও খতিয়ান দরকার।

ভিসি প্রধানত শিক্ষক, তিনি ষাটের দশকের মতো ‘ওপরের’ আদেশ পালনে বাধ্য ডিসি বা ওসি নন, এ অবস্থা নিশ্চিত করতেই মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে ’৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় আইন করা হয়েছিল। এতে শিক্ষকদের স্বাধীন ভূমিকা নিশ্চিত করারও কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে এসবের বিপরীতেই ক্ষমতার আস্ফালন দেখছি আমরা। শিক্ষকতা মানে নতুন চিন্তা, নতুন জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্র তৈরি, সেখানে সমালোচনা-প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবিজ্ঞান বা মানবিক বিষয়গুলোতে যে বহুমত ধারণ না করলে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না, এমনকি ল্যাবরেটরি বিজ্ঞানের বিষয়ও যে প্রশ্ন তোলা ছাড়া সংশয় এবং নতুন অনুসন্ধানের তাড়না ছাড়া বিকাশ লাভ করে না, তার উপলব্ধি যদি কারও না থাকে, তাঁদের শিক্ষকতায় আসা উচিত নয়।

স্বাধীন অবস্থানের কারণেই সমাজের অন্যায়, সরকারের ভুল বা জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত, নীতি বা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষদের সামনের সারিতে থাকার কথা শিক্ষকদের। আর সরকার গণতান্ত্রিক হলে সমালোচনা আর প্রশ্নকেই তাদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা। কারণ, তেলবাজ বা তোষামোদকারীদের ওপর ভর করে নিজেদের ভুল সংশোধন করা যায় না, নিজেদের বিকাশ ঘটানো যায় না। পরিণতমনস্ক কোনো ব্যক্তি এই পথে যায় না।

সরকারের কাছে শিক্ষকদের কোনো দায় নেই। সরকার শিক্ষকদের বেতন দেয় সুতরাং তার কথা শুনতে হবে, এর চেয়ে বড় ভুল কমই আছে। শিক্ষকদের বেতন আসে জনগণের কাছ থেকে, সে জন্য শিক্ষকদের দায় জনগণের প্রতি, দায় জ্ঞানের প্রতি, সত্যের প্রতি। যে শিক্ষকেরা নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন, তাঁদের পক্ষে তাই সামাজিক দায়িত্ব বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকা কঠিন। শিক্ষার্থীসহ সমাজের আক্রান্ত বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব। সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।